উন্মুক্ত লাইব্রেরী পর্ব-২৭+২৮

0
80

#উন্মুক্ত_লাইব্রেরী
লেখা – আয্যাহ সূচনা

২৭.

সারাটা রাত ছটফট করেছে এই মানুষটা।যেনো কোনো জ্বরে আক্রান্ত অবোধ শিশু। তরপিয়ে উঠে প্রায়শই।কি জ্বালা তার?অনেক কষ্টে আছে বুঝি?বুক কেঁপে উঠছে বারবার অন্বেষার।কান্না পাচ্ছে ভীষণ।

নির্ভয়ে বাহুতে মাথা পেতে শুয়ে থাকা মানুষটার শান্তির ঘুমটাও মনে হচ্ছে অনেকটা বিষাদ ঘেরা।নিজেকে ভীষণ শক্ত মনে হলো আজ।কতবার বর্ণকে বলেছে এই সময়টুকুতে,

“আমি আছি তোমার সাথে”

এই বাক্যে অন্বেষা নিজেও শক্তি পেয়েছে।কতটুকু সামর্থের প্রয়োজন হয় আপন কাউকে সুখে রাখতে?অনেক কম।

বর্ণ ঘুমায়।মুখ ফ্যাকাশে।কালচে আভা যুক্ত। অন্বেষা হাত বুলায় পরম যত্নে।হাসলো খানিক। বুঝলোও বটে।এই সত্তার পেছনে অনেককিছু লুকানো।হুট করে বর্ণ নড়েচড়ে উঠেছে।ঠিকভাবে শুতে পারছে না বোধহয়। ঘাড় পেছনে নিয়ে অর্ধ ঘুমে উঠে বসে।নিজের মতো করেই শুয়ে পড়লো নিজ জায়গায়। অন্বেষাও উঠে লাইট নিভিয়ে দেয়।বর্ণের ছড়িয়ে রাখা হাতে মাথা পেতেছে।

বর্ণ আন্দাজ করতে পারলে বিড়বিড় করে বলে উঠে,

“জ্বালাইও না”

অন্বেষার ঠোঁটে পুনর্বার হাসি ফুটলো।শীতল মৌসুমে উষ্ণতা খুঁজতে লাগলো বর্ণের বক্ষে।বর্ণের বিরক্তি তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি।কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,

“তুমি একাকীত্বকে বেছে নিয়েছো।আর আমি তোমাকে”

মস্তিষ্ক জ্বলে উঠলো বর্ণের।সে যেনো ঘুমিয়েও নির্ঘুম ছিলো।ঝটপট চোখ মেলে। আঁধারে আচ্ছন্ন চোখ চেয়ে রয় কিছুক্ষন।পাশেই অন্বেষা।জেগে আছে নিশ্চয়ই।তবে চুপচাপ।বর্ণ একহাত তাকে আকস্মিক শক্ত করে বুকে টেনে নিয়ে বললো,

“কি চাও কি?আমারে পাগল বানায় ছাড়বা?কেন অশান্তি করো?”

থতমত খেয়ে থাকা অন্বেষা চমকায় এরূপ প্রশ্নে।জবাব দিলো,

“আমি কোনো অশান্তি করিনা।”

যেমনভাবে টেনে নিয়েছিল একইভাবে সরিয়ে দিলো। কিছুসময়ের ব্যবধানে অনুভব করলো অন্বেষা।তার মুখোমুখি আরো একটি মুখ অবয়ব। নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে মুখে।আরো কিছু সময় ব্যয় করে কপালে কপাল ঠেকে। অন্বেষা সংকুচিত হলো। ভাগ্যিস তমাসাবৃত।নাহয় বর্ণের সহিত এরূপ ঘনিষ্ঠতায় নিশ্চিত অক্কা পেতো। আঁধারে চোখ নামায় অন্বেষা।একহাত বর্ণের বুকের বামদিকে ঠেকিয়ে দূরত্ব বজায় রেখেছে একে অপরের সাথে।

নিস্তব্ধ বর্ণের দিকে কম্পিত কণ্ঠে বলে উঠলো,

“তোমার বুক কাপছে বর্ণ।কিসের ঝড় এটা?”

“হুউউম?……জানি না”

“বলো আমায়?”

“ভাল্লাগেনা”

“কি করলে ভালো লাগবে?”

ঘোরমিশ্রিত কন্ঠ বর্ণের।যেনো মাতাল সে।ধীরেধীরে জবাব দিচ্ছে।সময় নিয়ে।জবাব দিলো,

“তুমি জাইনা কি করবা?আমি তোমার কে?”

নিজের উপর সন্দেহ হয় মাঝেমধ্যে অন্বেষার।নিজেকেই গিরগিটি বলে আখ্যা দেয়।নিজেই কাছে চলে যায় আবার নিজেই লজ্জায় মরে।অদ্ভুত!লাজ শরমের মাথা খেয়ে আবারো মুচকি হাসলো।হেসে কোনো দ্বিধা ছাড়াই জবাব দিলো,

“আমি তোমার একমাত্র অর্ধাঙ্গিনী।যার সাথে তুমি তোমার মনের অজান্তেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যাচ্ছ।”

বর্ণ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।জবাব দেয়,

“গেলাম নাহয়”

অন্বেষা কিছুটা অবাক হয়।চোখ গোল করে চাইলো।কিন্তু বর্ণের কৃষ্ণাভ মুখখানা অস্পষ্ট।কিছুটা নির্লজ্জ হয়ে হাত এগিয়ে জড়িয়ে ধরলো তাকে।বলে উঠলো,

“জানো বর্ণ তুমি একটা বাচ্চা।আমার মাঝেমধ্যে মনে হয় আমি তোমার গার্জিয়ান।”

মৃদু নিঃশ্বাসের শব্দে বোঝা গেলো বর্ণ হাসছে। অন্বেষা মাথা নামিয়ে বুকে মুখ গুঁজে।বর্ণ যেনো সায় দিলো তাকে।কোমর জড়িয়ে টেনে নেয় নিজের সঙ্গে।অনুভব করছে অন্বেষা। ধড়ফড় করতে থাকা বর্ণের হৃদপিণ্ড। নিঃশব্দের প্রহর পেরিয়ে বললো,

“অতীত ভুলে যাও।আমি তোমার বর্তমান সুন্দর করতে চাই।”

“কেমনে?”

“ভালোবেসে”

“আমারে ভালোবাসা লস প্রজেক্ট।”

“উহু!”

মধ্যে মধ্যে দুজনার মাঝে অদ্ভুত শীতল নিস্তব্ধতা বয়ে যাচ্ছে।অনুভবের নীরবতা।কিন্তু অন্বেষার মন আনচান করে।চাইছে বর্ণ কথা বলুক তার সাথে।এই নিশিরাত কাটুক একে অপরের সাথে অহেতুক আলাপনে। অন্বেষার না বলা কথাগুলো শুনুক বর্ণ।তার বুকের আর্তনাদ অন্বেষার কাছে হাজির করুক।

অন্বেষা আবদার করে বসলো,

“আমার লাল বেনারসিতে বউ সাজার শখ।তুমি চাকরি পেলে আমায় কিনে দিবে কিন্তু”

বর্ণ জবাব দিলো না। অন্বেষা অপেক্ষা করে কিয়ৎক্ষণ।তারপর বুকে ধাক্কা দিয়ে পূনরায় প্রশ্ন করে,

“দিবে না?”

“দিমু দিমু! ঘুমাও”

“আমার সাথে নীরবে কিছু সময় কথা বললে কি হয়?”

“শব্দের অপচয়”

অন্বেষা মুখ কুচকে নিলো।বারবার একই প্রশ্ন আসে মাথায়।লোকটা কি কোনোভাবে শুধরাবে না?পরপর আবার চিন্তা এলো না শুধরালেই ভালো।এই বর্ণের মাঝে অন্যরকম ভালো লাগা আছে।আপাতত বর্ণকে বদলানোর চিন্তা সম্পূর্ণ বয়কট।তবে কথা বন্ধ হবে না।কোনো না কোনো প্রশ্ন করে আলাপ দীর্ঘায়িত করবে অন্বেষা।

সামান্য মাথা উঁচু করে প্রশ্ন করলো,

“আমাকে ইগনোর করো কেনো?”

বর্ণ ভারী গলায় জবাব দেয়,

“ভাল্লাগে না তোমারে”

কপট রাগ দেখিয়ে নড়েচড়ে উঠে অন্বেষা।রীতিমতো রাগ দেখিয়ে বললো,

“তাহলে কাকে ভালো লাগে হ্যাঁ? ঐযে ওই মেয়েটাকে?”

বর্ণ আঁধারে মুচকি হাসে।কোন মেয়ের কথা বলছে সেটা বোধগম্যতার বাহিরে নয়।অনুভব করলো স্বস্তি পাচ্ছে।সেই সন্ধ্যায় যে তান্ডব ঘটিয়ে এসেছে?যে তুফান উঠেছিলো সেই তুফান পুরোটাই শান্ত এই মুহূর্তে।হালকা অনুভব করছে বর্ণ।

“ওই মাইয়াটারে আসলেই ভাল্লাগে। বিয়া করতে মন চায়।আদর করতেও মন চা…..”

বাক্য পূর্ণ করার আগেই অন্বেষার হাত সজোরে আঘাত হানে বর্ণের বুকে।সরে যেতে চেয়েও পারছে না।মাথা টগবগ করতে শুরু করলো। হিংসায় জ্বলে পুড়ে অন্বেষা বলে উঠে,

“হাত পা ভেঙে গুড়িয়ে দিবো তোমার।আমাকে অবলা ভেবেছো?সাহস কি করে হয় ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়েকে বিয়ে করার কথা ভাবার?আদর করতে ইচ্ছে হয় তাই না?….চোখ দুটো উপড়ে ফেলবো।হাতের কব্জি কেটে দিবো।”

বর্ণ অন্বেষার উদ্দেশ্যে মেকি হাসি হেসে বলে উঠে,

“খুব ডরাইলাম!”

“তুমি ওই মেয়ের সাথে কথা বলবে না।”

“কমু”

রাগ এর পারদ ধীরে ধীরে উপরে উঠছে।তাকে ক্ষেপানো হচ্ছে জানা স্বত্বেও রেগে বারুদ হয়ে উঠছে অন্বেষা।

“তাহলে….তাহলে আমিও ওই জনির সাথে কথা বলবো।ওর হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়াবো।”

আলোহীন কক্ষেও বর্ণ হুট করে অন্বেষার গাল চেপে ধরলো।আচমকা আক্রমণে বিমূঢ় হয়ে পড়ে অন্বেষা।বর্ণ দাঁত চিবিয়ে বলে উঠলো,

“একবার বাইর করছো এই কথা মুখ দিয়া। দ্বিতীয়বার জানি না হুনি।কসম খোদার!জানে মাইরা ফালামু।”

ব্যথা অনুভব করতে থাকা অন্বেষা সেই অবস্থায় বলে উঠলো,

“আর তোমার বেলায়?”

গাল ছেড়ে দেয় বর্ণ।জ্বলজ্বল করা চোখ জোড়া কিছুটা দৃষ্টিগোচর হয় অন্বেষার।রাগী সুরে বর্ণ বলে,

“ওর বাপ দুই বাড়ির মালিক।আমারে এই মাইয়া বিয়ার প্রস্তাব দিছিলো।ওই সময় চাইলেই ওরে বিয়া করতে পারতাম।ঘর জামাই হইয়া থাকতাম এসির তলে। আরামে আয়েশে।আমার এত কুড়কুড়ানী থাকলে তোরে নিয়া এই খুপড়ি ঘরে অন্ধকারে পইড়া থাকতাম না।…..শেষ ওয়ার্নিং দিতাছি অন্বেষা। জনি অথবা অন্য কোনো পোলার ঘ্রাণও যদি আশপাশ থিকা পাই রামদা দিয়ে কোপামু!”

_______

একটি নতুন দিন।মায়া নগরে প্রাচুর্যপূর্ণ প্রভাত।সূর্যের দীপ্তিতে ঝলকিত পথপ্রান্তর।রুক্ষ বাতাসের স্রোতে উড়ে চলেছে ধূলিকণা।কর্মব্যস্ত মানুষ যেন প্রবাহিত নদীর বহমান ধারার মত।তাদের গল্প আছে।নগরীর প্রতিটি কোণ যেন এক মহাকাব্যের অমোঘ পঙক্তি।অথৈ সমুদ্রে ভাসমান নৌকার মতো জীবন।

আজ অন্বেষার কিনে দেওয়া সোয়েটারটা গায়ে ছড়িয়েছে বর্ণ। অন্বেষা তার পূর্বেই বেরিয়েছে নিজের কাজে।নিজেকে দেখার সুযোগটাও হলো না।ঘরে আয়না নেই।ইচ্ছে হলো নিজেকে পরিপাটি করার।চুল আঁচড়ে নিলো সুন্দরভাবে। গোঁফে আঙ্গুল চালিয়ে দুদিকে সামান্য পেঁচিয়ে বেরিয়ে পড়লো।

“বুকে হাত রাইখা ক বর্ণ।বউয়ের প্রেমে পড়ছোস না?”

জীবনের সাহায্য আর বারবাবে অনুরোধে অবশেষে দুজনেই চাকরি হয়েছে।বেতন মোটামুটি চলার মতো একটি পর্যায়ে বর্ণ।তারপরও মেনে নিলো। ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো’ এই ভেবে।

টঙের দোকানে খানিক বিব্রত দেখালো বর্ণকে।চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে জীবনের প্রশ্নের জবাবে শুধু মাথা দোলায়।যার অর্থ দাঁড়ায়,

“না”

জীবন হেসে উঠে।বর্ণ কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। আজ পরিপাটি নতুন কাপড়ে সাহেবের মত লাগছে তাকে। জীবন টিপ্পনী কেটে প্রশ্ন করে,

“তোরে তোর পুরান ঢাকার জমিনের কসম। ক বউরে ভাল্লাগে না?”

“হাঙ্গা একটা করছি।ভালা না লাগলেও কিছু করার নাই।”

“আছেতো!ছাইড়া দে।ধাক্কা দিয়া বাইর কইরা দে ঘর থিকা।শান্তিতে থাকবি”

আকস্মিক বর্ণের কণ্ঠে পরিবর্তন আসে।মুখের হাবভাব পরিবর্তন হয়।চরম বিরক্ত হয়ে তৎক্ষনাৎ উত্তর দিয়ে উঠলো,

“আজাইরা আজাইরা কথা কইবি না একদম।”

অকস্মাৎ হো হো করে হেসে উঠলো জীবন।বর্ণ স্বচ্ছ চায়ের কাপ হাতে ধরে জীবনের মুখপানে চাইলো।অর্থ বুঝতে পারছে না এই হাসির।অন্যদিকে জীবন,জায়গামতো আঘাত করায় বেজায় খুশি।বর্ণের বাহু চাপড়ে বললো,

“চালায় যা।তোর যন্ত্রপাতি সব ঠিক থাকলে দেরি করিস না।মিনি সাইজের বর্ণরে দুনিয়াতে আনার ব্যবস্থা কর।তারপর বাপ পোলা মিল্যা রংবাজী করবি। পুরান ঢাকা কাঁপাবি”

_______

বর্ণ গতরাতের বিষয়টা নিয়ে রেগে আছে কিছুটা।ঘরে এসে একটা শব্দও বের করেনি মুখ থেকে। অন্বেষার মনে প্রশ্ন ‘বোবা হয়ে গেলো নাতো?’। প্যাঁচার মতো মুখ করে বসে আছে বিছানার একপাশে।আজ অন্বেষার ফোনে হাত দেয় নি।নিজের বাটন ফোনটা নিয়েই গুতোগুতি শুরু করে।সেখানে কিছুই নেই।তারপরও।

অন্বেষা এগিয়ে এলো চায়ের কাপ নিয়ে।সাথে দুটো টোস্ট বিস্কুট।বর্ণের সামনে রেখে তার মুখ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলে,

“দোষ কি শুধু আমার একার? তুমিওতো ওই মেয়ের কথা বলে আমাকে রাগিয়েছো”

বর্ণ তাকে থামিয়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে হাত তুলে।চায়ের কাপ অন্যহাতে তুলে জবাবহীন বসে রইলো। অন্বেষা থামবার পাত্রী নয়।আবার বললো,

“ঢং করবে না।তোমাকে এসব মানায় না।নিজের বউয়ের সামনে অন্য মেয়ের কথা তুললে কোনো দোষ নেই।আমি বললেই দোষ!”

বর্ণ রাগী চোখজোড়া তুলে।কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বলে উঠে,

“কোনটা ফাইজলামি আর কোনটা সিরিয়াস বুঝার মত জ্ঞান যদি তোমার না থাকে তাইলে তোমার পড়ালেখার কোনো দাম নাই।আমার মত অশিক্ষিত হওয়া ভালা”

বর্ণ দ্রুত চা শেষ করে উঠে দাঁড়ালো।গোসল করা উচিত।অস্থির লাগছে।শার্ট খুলতে উদ্যত হয়।অন্বেষার কি যেনো হলো।মত বদলে এক মুহুর্ত সময় নেয় না যেনো।

অনেকদিন যাবত চেপে রাখা কথাগুলো হুট করে আলোচনার বিপরীতে বলে উঠে,

“আমাকে তোমার ঢাল হতে দিবে?”

বর্ণ হাত চালানো থামিয়ে দিলো।জিজ্ঞাসু নয়ন তার। বুঝেনি অন্বেষার কথার মানে। পরনের শার্টের বোতাম আধ খোলা।বর্ণ প্রশ্ন করে,

“কথা বুঝি নাই। ড্রামাটিক কথাবার্তা কম বুঝি”

অন্বেষা এগিয়ে এলো।বর্ণকে চমকে দিয়ে সন্তর্পনে বুকে মাথা এলিয়ে দেয়।বর্ণ কিছুটা অবাক হলো।বরাবরের মতো ভালোবাসা জিনিসটা কমই হজম হয়।কিন্তু কিছু বললো না।অন্বেষা জবাব শীতল স্রোতের ন্যায় বলে উঠলো,

“এই পৃথিবীতে বিবাহিত সফল যত নারী আছে তাদের পেছনে কার হাত জানো?…. হুহ!তুমি জানবে কি করে?তুমিতো এই জগত সংসারের নও।সেই সকল নারীর সফলতার পেছনে একজন দায়িত্বশীল, সু-বিবেক সম্পন্ন পুরুষের হাত থাকে।”

“আবার জ্ঞান বিতরণ শুরু!হঠাৎ এসব বালের কথা কেন জুড়লা? গাঁজা খাইছো?”

অন্বেষা গুরত্বহীনভাবে নিজের কথা বলে যায়,

“আমি দেখতাম আর ভাবতাম”

অন্বেষার কথা কেটে বর্ণ প্রশ্ন করে,

“কি ভাবতা হেডা?”

অর্ধ উন্মুক্ত বুকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্বেষা বললো,

“ভাবতাম যে এই পুরুষগুলোর পেছনে কে আছে? হ্যাঁ বাবা মায়ের অবদান আছে ঠিক।কিন্তু সেই নারীকে এগিয়ে যেতে যে সাহায্য করে তাকেও কি কেউ সাহায্য করে?”

ভারী প্রশ্ন করলো অন্বেষা।বর্ণের মস্তিষ্ক এর জবাব খুঁজতে তোড়জোড় শুরু করলো।উত্তর যদিও না বোধক আসছে তারপরও যুক্তি খুঁজতে চাইলো বর্ণ।পাচ্ছে না তবে। অন্বেষা হালকা মাথা তুলে বললো,

“কি?কোনো জবাব নেইতো?”

“উহু”

“জবাব হলো করেনা।কারণ এই সমাজে আয়ের দায়িত্বটা শুধু পুরুষের। নারী আয় করলেও সিংহভাগ যায় পুরুষের কামাই থেকে।”

“হ কি করমু তাইলে আমি?এসব কেন কইতাছো?”

“আমি চাই ঠিক আমার প্রথম কথাটাকে উল্টো করে দেখাতে।যদি পুরুষ নারীকে তার ঘরে এনে তার সমস্ত চাহিদা পূরণ করতে পারে?তার পড়ালেখা,তার দায়িত্ব,তার ইচ্ছা,তার স্বপ্ন,তার সফলতার ভাগীদার হতে পারে তাহলে নারী কেনো পারবে না তার শখের পুরুষের সব দায়িত্ব নিতে?”

মাথার উপর দিয়ে গেলো বর্ণের।প্রশ্ন করলো,

“কি কইতাছো এগুলি?আমি কি তোমার শখের পুরুষ?…..আমার মাথায় কিচ্ছু ঢুকেনা বাল!”

বর্ণ সবই বুঝে।তবে বুঝতে দিতে চায় না।অন্বেষা মুখ তুলে।বর্ণের দিকে চেয়ে বললো,

“সহজ ভাষায় বুঝাই।একজন স্বামীর দায়িত্ব আমি পালন করবো।তোমার ইচ্ছে,স্বপ্ন আমার সাধ্যের মধ্যে আমি পূরণ করবো।যেদিন অব্দি তুমি সফল না হও সেইদিন অব্দি তোমার সব চাহিদা আর দায়িত্ব আমি পালন করবো।আবার বলছি সাধ্যের মধ্যে।কেনো শুধু স্বামীরাই? বউরা পারেনা তার স্বামীর ঢাল হতে?যদি তুমি কোনোদিনও না সফল হও তাহলে মৃত্যুর আগ অব্দি পালন করবো সব কর্তব্য।আমার কিছুই নেই বর্ণ।তুমি,আমি নিঃস্ব।শুধু একে অপরের ভরসার কাঁধ ছাড়া আর আমাদের ভালোবাসা ছাড়া।তোমাকে নিয়ে আমার যত আহ্লাদ আছে সব পূরণ করতে দাও।আমি তোমার চেয়ে বেশি আয় করি বলে কখনো তোমাকে কাপুরুষের খোটা দিবো না।কোনোদিন টাকার দাপট দেখাবো না।এই খুপড়ি দালান আমাদের আলাদা জগত।এই জগতে বাহিরের সমাজের সাথে কোনো সংযোগ নেই।ওরা জানবে যা কখনো আমাদের মধ্যকার কোনোকিছু।ওরা থাকুক ওদের চিরাচরিত নিয়মে।আমাদের সংসারে আমাদের আলাদা নিয়ম। কেউ ছোট কেউ বড় না।আমরা দুজন মিলেমিশে সমান”

অন্বেষা পূনরায় কাতর কন্ঠে বললো,

“আমি অজান্তেই ভালোবাসি তোমাকে।অনেকদিন যাবত চাইছিলাম বলতে।পারিনি।ভয় ছিলো।নিজের মানুষের কাছেই প্রত্যাখানের ভয়।”

প্রথমবার অন্বেষার কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনেছে।এক মুহূর্তের জন্য অন্যমনস্ক হয়নি বর্ণ।কেনো হৃদয় নিংড়ানো মনে হলো অন্বেষার শব্দ মেলা? অন্বেষার চোখের কোনে পানি জমেছে।বর্ণের রুক্ষ গালে দুহাত রেখে বললো,

“তোমার বুকের ভিতরের হাহাকার আমার অজানা নয়।আমি জানি এক উত্তাল ঝড় চেপে আছো অনেক বছর যাবত।চাইলেই শক্তিহীন করতে পারো এই ঝড়কে।”

বর্ণ বলে, “ঝড় আছিলো মনে হয়…”

“এখন?”

“জানি নাহ”

“এখনও আছে বর্ণ”

“ছাদে যাইবা?”

অবাক হয়েছিল অন্বেষা।কথার জবাব না দিয়ে ছাদে নিয়ে এলো। অদ্ভুত হওয়ার সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে বর্ণ আগেই।আবারো সেই সিঁড়ি চড়ার যুদ্ধ শেষে ছাদে এসে হাজির দুজনে।রেলিংয়ে উঠে বসেছে বর্ণ।

গোলাকৃতির চাঁদের দিকে চেয়ে বলতে লাগলো,

“আম্মাতো মইরা গেছে অনেক আগেই। আব্বা!…..বাল!মানে আমার মায়ের জামাই তিনদিনের মাথায় আরেক বেটি ঘরে তুলছিলো।এই বেডিরে আমার আম্মা থাকাকালীনই বিয়া করছিলো।আম্মা জানতো।কিন্তু চুপ কইরা থাকতো।গরীব ঘরের মাইয়া আছিলো যে।ওই ঘরে একটা পোলাও আছিলো।আমারতো তহন বুঝার বয়স আছিলো না।দিন যায় আমিও মা পাইলাম।কিন্তু…..ওইসব বাদ!তেরো বছর বয়সে চুরি করছিলাম।নতুন মায়ের সোনার গয়না। মানে চুরিটা এমন যে আমি জানতাম না যে আমি চুরি করছি। হাইস্যকর না!কিন্তু সোনার গয়নাগুলি আমার ইস্কুলের ব্যাগ থিকা পাইলো।কেমনে পাইলো জানি না।এরপর ধীরে ধীরে আরো চুরি হইলো।আমার মায়ের জামাইর বেল্টের বারি খাইয়া জানতাম সব নাকি আমি চুরি করছি।তারপর একদিন জানলাম আমি নাকি নতুন মায়ের বইনের মাইয়ার লগে নোংরামি করবার চাইছি।তহন আমার উনিশ আঠারো।ইন্টার দিয়া ভার্সিটিতে ভর্তি হইছিলাম।”

অন্বেষা বর্ণের থেমে যাওয়া দেখে প্রশ্ন করলো,

“তারপর?”

“আমার পিঠে দাগ আছে। রডের বারি পড়ছিলো।শালার ভাই জ্বালায় লাইছিলো পুরা পিঠটা আমার।এরপর বাড়ি থিকা বাইর করলো।এরপর থিকা ফিরা তাকায় দেহি নাই।ওরা আমারে বাঘের মত ডরায়।আমার সামনে এহনও গলা উঁচা করার সাহস পায়না।আমি এদিকে জিতা গেছি।আমারে আবার ওই বাড়িতে নিতে চাইছিলো।আমি ওগো বাড়ির গেটে মুইতা থুইয়া আইছি।ধুচি না ওই জানোয়ার এর ট্যাকা!সম্পদ!কিন্তু ওরা যে আমারে ডরায়?এটা আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া।”

উচুঁতে বসে থাকা বর্ণকে আকস্মিক জড়িয়ে ধরলো অন্বেষা।কথাগুলো শুনে নিজেকে সামলাতে পারছে না।কিন্তু বর্ণ তাল সামলায় কোনো রকম।মৃদু চেঁচিয়ে বলে,

“আরেহ ছেড়ি পইড়া যামুতো!”

“কে ছিলো তোমার বাবা?”

বর্ণ এক বুক ভর্তি নিঃশ্বাস ফেলে।চোখ যায় আসমানে।জবাব এলো,

“হাআআআহ! মোকলেস মাতবর”

চলবে……

#উন্মুক্ত_লাইব্রেরী
লেখা – আয্যাহ সূচনা

২৮.

পৌষের অন্তিম প্রহরে পুরান ঢাকার অলিন্দে সাকরাইনের উচ্ছ্বাসে জাগ্রত হয়েছে কালের গৌরবময় স্মৃতিরাজি। আকাশে ওড়া ঘুড়ির সূক্ষ্ম সুতোর বাঁধনে অঙ্কিত এই রঙিন ক্যানভাস।প্রাচীনতার শ্যামলিমায় আচ্ছাদিত। সন্ধ্যায় আতশবাজির অপার রঙিন বিস্ফোরণ। এ যেন এক আলোকচ্ছটায় মিশিয়ে দেয় ঐতিহাসিক গাথা। প্রতিটি ঘরের ছাদে ফুটে ওঠে ঐতিহ্যের সুধা।বয়ে আনে প্রজন্মান্তরের অন্তঃসলিলা স্মৃতিধারার নিবিড় স্পর্শ।

পুরান ঢাকার মানুষ উৎসবে আজ বিভোর। ছেলেরা ঘুড়ির সুতো বাঁধতে ব্যস্ত আর কেউ রং মাখাচ্ছে সুতোয়। এ যেনো কোনো আনন্দের প্লাবন।বাড়ির ছাদে ছাদে জমেছে বৈচিত্র্যের পসরা।ঘরের গিন্নীরাও বসে নেই।নানান পদের পিঠা তৈরি এবং খোশগল্পে সেজেছে তাদের আড্ডাখানা।

বর্ণ বিশাল ব্যস্ত।এই ঠান্ডায় গোসল সেরে তৈরি।গতকালের আলাপ দীর্ঘ করতে চায়নি সে।বিরক্ত হচ্ছিলো ভীষণ।অন্বেষাকে ডেকে বললো,

“যাইবা না?”

অন্বেষা অবাক সুরে প্রশ্ন করে, “কোথায়?”

“আরেহ মিয়া আজকা সাকরাইন। ঘুড্ডি উড়ামু। প্রতিযোগিতা আছে।জিতলে নগদ দশ হাজার ট্যাকা।”

অন্বেষা উৎসুক হয়ে বললো, “ বাহ! বেশতো।”

“বেশ বুশ বাদ দিয়া রেডি হও।”

অন্বেষা আর কথা বাড়ায়নি।এক এক করে কাপড় বের করে খুঁজে নিয়েছে একটি সাদা রঙের কামিজ তার সাথে লাল রঙের ওড়না।দ্রুত গোসলখানায় গিয়ে কাপড় পরিবর্তন করে ফিরে এলো।নাটাই নিয়ে ব্যস্ত থাকা বর্ণের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“চলো”

বর্ণ মুখ তুলে চায়।এত দ্রুত কাপড় বদলে হাজির হওয়াটা অবাক করছে তাকে।মুখে কোনো সাজসজ্জা নেই।শুধু কাপড় পরিবর্তন করেছে।বর্ণ তেমন মাথা ঘামালো না সেটি নিয়ে। গুরুত্বহীন ভঙ্গিতে শুধু বললো,

“শাল লও।বাইরে ঠান্ডা অনেক।”

বর্ণের কথামত খুঁজে খুঁজে পুরোনো একটি শাল বের করে গায়ে জড়ায়।দুজনেই বেরিয়েছে। সাব্বিরদের পাশের বাড়ির ছাদে ঘুড়ি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।

অন্বেষার হাত ধরে উপরে আসতেই আরেক ছাদে দেখা মিললো জনির।তার পাশের ছাদে সাদিয়াও রয়েছে।পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হওয়ার পূর্বেই বর্ণকে পাশে এনে অন্বেষা বললো,

“দেখো বর্ণ।যা হওয়ার অতীতে হয়ে গেছে।আমার মনে হয় ক্ষ্যান্ত দিয়ে দাও।অমানুষের সাথে মুখ নষ্ট করতে নেই।”

বর্ণ ডান দিকের ভ্রু উঁচু করে সন্দিহান গলায় প্রশ্ন করে,

“ক্ষ্যান্ত দিমু?”

অন্বেষা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দিলো,

“যে নিজের রক্তের মূল্য দিতে পারেনা তাদের দিয়ে তুমি ভালো কিছু আশা করো?ওরা খারাপ।তোমার খারাপ করতে এক মুহুর্ত ভাববে না।তোমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে যার বাঁধে নি তখন এখনও তার কিছুই আসবে যাবে না।……কিন্তু আমি? আমার তুমি ছাড়া কেউ নেই।”

মানতে নারাজ ছিলো বর্ণ। অন্বেষা যা যা বলবে সবটাই নাকচ করার চিন্তা পোষণ করে রেখেছিল।শেষ কথাটায় দমে গেলো। অন্বেষা আবার বললো,

“ওরা তোমার কোনো ক্ষতি করে ফেললে আমার কি হবে?আমার জন্য অন্তত!”

বর্ণ ভাবলেশহীন জবাব দিলো,

“এতদিন কিছু করতে পারে নাই এহনও পারবো না।আমি যদি আমার হক চায়া বই মোকলেস মাতবরের গুষ্টি রাস্তায় নামবো।”

অন্বেষা দুদিকে মাথা দুলিয়ে বলে,

“দরকার নেই ওসব ছাইপাঁশ সম্পদের।আগুন দাও ওসবে।আমরা আমাদের মত দিব্যি থাকবো।”

মাঝেমধ্যেই অন্বেষার কথার জবাব দিতে ইচ্ছে হয়।কখনো দীর্ঘ সংলাপে যেতে ইচ্ছে হয়।কিন্তু কোথাও কোনো এক বাঁধা আছে।নিজেকে পুরোপুরি রূপে উন্মুক্ত করতে পারেনি বর্ণ।তবে করছে!করতে চাইছে। অন্বেষার ভালোবাসার খোলামেলা আহ্বান তাকে ভাবায় মাঝেমধ্যে।কিছুক্ষন চেয়ে রইলো।পরপর চোখ নামিয়ে নেয়।ঠান্ডা নিবারণের জন্য একপাশে আগুন জ্বালানো হয়েছে। অন্বেষাকে চেয়ার টেনে সেখানে বসিয়ে দিলো। বললো,

“এদিক ওদিক ঘুরাফিরা করবা না।চোখে চোখে থাকো”

শুরু হলো ঘুড়ি উৎসব। বিকেলের প্রহর নেমেছে আকাশ জুড়ে।আর রং বেরঙের ঘুড়ির মেলা।যেনো কোনো ক্যানভাসে ইচ্ছেমত রং ছড়াচ্ছে লোকে।

অন্বেষা বর্ণের দিকে চাইলো।খুব প্রিয় তার ঘুড়ি উড়ানো।ব্যস্ততা আর উত্তেজনা সেটারই জানান দিচ্ছে।এত কিছুর মাঝেও চোখে চোখ পড়েছে।মাথা উঁচু করে ঘুড়ির দিকে সম্পুর্ণ মনোযোগ রাখলেও অন্বেষা রয়নি গুরুত্বহীন।তার দিকেই খেয়াল দিচ্ছে ঘুরে ঘুরে।

সাব্বিরকে ডাকলো বর্ণ।পকেটে বিশ টাকা ছিলো।সেটি সাব্বিরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিচু গলায় বললো,

“তোর ভাবিরে এক কাপ চা আইনা দে”

সাব্বির বন্ধুর হাতে নাটাই ধরিয়ে দৌঁড়ে গেলো।যেই গতিতে গিয়েছে সেই গতিতে ফিরেও এসেছে। অন্বেষার হাতে চা ধরিয়ে বললো,

“ভাবিইইইইই চা খান”

অন্বেষা ফিক করে হেসে ফেলে এরূপ সুরেলা ডাকে। সাব্বিরের কান টেনে বলে,

“আপু থেকে ভাবি?”

“হ ভাবি কারণ ভাই কইছে তোর ভাবির লেইগা চা নিয়া আয়।এরমানে আমগো রিশতা সেট।আমি আপনি দেওর ভাবি।”

অন্যদিকে বিগত চার বছরের ন্যায় বর্ণ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী।এবার যেনো তার চেয়ে বেশি খুশি অন্বেষা।লাফিয়ে উঠে তালি বাজিয়ে খুশি প্রকাশ করে।চায়ের কাপটা অর্ধ খেয়ে পাশেই রেখে দিয়েছে।আর দরকার নেই।অন্যদিকে বর্ণ হতবিহ্বল।খানিক লজ্জাবোধ করছে।কেনো সেটার উত্তর জানা নেই।মাথার পেছনে হাত রেখে মাথা নুয়ে সরে আসলো।

প্রতিযোগিতায় জিতে যাওয়া টাকা নিয়ে পকেটে গুঁজে বললো,

“আহো তোমারে বাড়িতে দিয়া আহি।”

“আরেকটু থাকি?” প্রতুত্তরে বলে উঠে অন্বেষা।

বর্ণ সরাসরি বলে উঠে,

“না এদিকে ডিজে পার্টি হইবো একটু পর।অনেক মানুষের ভিড় হইবো।”

“এটাইতো ভালো।আমি দেখবো সবকিছু।কত মজা হবে”

বর্ণ ভ্রু কুটি করে জবাব দেয়,

“পোলা মানুষের মেলে থাকা লাগবো না এতো।বাড়ির ছাদে উইঠা দেইখো।”

সেই মুহূর্তে সাব্বির দৌঁড়ে আসে।একটি কাগজের প্যাকেট এগিয়ে বললো,

“ভাবি এই নেন।”

বর্ণ জানতে চাইলো, “এগুলি কি ব্যাটা?”

“ভাইজান পিঠা।পুলি পিঠা আছে আবার ভাপা পিঠাও আছে।সবাই খাইতাছে আপনারা খালি মুখে যাইবেন গা?আমি আপনাগো লেইগা আলাদা প্যাকেটে কইরা আনছি।”

বর্ণ বাঁকা হেসে সাব্বিরের চুলে হাত বুলায়। পরক্ষণেই বললো,

“ওরে একটু বাড়ি পর্যন্ত দিয়া আয়।আমার একটু কাম আছে।…..আর হুন সন্ধ্যার দিকে মোল্লা হোটেলের সামনে খাড়াবি।”

“আচ্ছা ভাই”

কোথায় যাচ্ছে?কেনো যাচ্ছে প্রশ্নটাও করতে পারলো না অন্বেষা।এখন বর্ণের বাহিরে যাওয়ার কথা নয়।তার কাজ শুরু হবে আগামী মাস থেকে।প্রশ্ন করার পূর্বেই এক পলক চেয়ে ফুড়ুৎ বর্ণ।ঝড়ের গতিতে এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে লাফিয়ে নিচে চলে গেলো।

অন্বেষা দুষ্টুমির ভঙ্গিতে সাব্বিরের উদ্দেশ্যে বললো,

“তোমার ভাই মনে হয় আগে বানর ছিলো”

“হ ভাবি খালি ফাল পাড়ে”

__________

হলদে বাতির টিম টিম আলোয় অন্বেষা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বর্ণের প্রতীক্ষায়। শীতের ম্লানতা গ্রাস করেছে পরিবেশকে।কম্পন অঙ্গে।রাত নয়টায় এসে ঘড়ির কাঁটা থমকেছে।সেই গোধূলি লগ্নে বর্ণ বেরিয়েছিলো। কোথায় গেছে জানা নেই।এখনও সে বাড়ি ফেরেনি। ফোনে ব্যালেন্স নেই যে জিজ্ঞেস করবে।বিরক্ত হলো অন্বেষা।এতটা হেঁয়ালি করলে হয়?ঘরে যে একজন তার জন্য অপেক্ষায় আছে সেটা মনে আছে?

চারিদিকে ব্যাপক কোলাহল। আতশবাজি প্রদর্শনীতে আকাশ।গান বাজনার আওয়াজ।হৃদয়ে ব্যাকুলতা আর প্রতীক্ষার দাহ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অল্পতে ভীত হয়ে উঠে অন্বেষা।বর্ণের ব্যাপারে আজকাল বেশীই ভীত।প্রতিটি মুহূর্তে শীতের হিমেল বাতাসও স্বস্তি দিচ্ছে না।

ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে আসার পাঁচ মিনিটের মাথায় পায়ের ধুপধাপ আওয়াজ ভেসে এলো।বর্ণ ফিরেছে।হাতে ব্যাগ। এসেই বলল,

“সাব্বির ছেমড়াটা আমারে রাস্তায় আধা ঘন্টা অপেক্ষা করাইলো। শ্যাহ!”

অন্বেষা প্রশ্ন করার পূর্বেই বর্ণ বলে উঠলো,

“বাজার আনছি।মুরগি রাইখা আইছি আফজাল চাচার ফ্রিজে।এইযে চাইল, ডাইল আর কিছু মশলাপাতি।সবজি কিনি নাই।নষ্ট হইয়া যায় যদি?টাকা রাখলাম বিছনার তলে।সবজি কিনা লইও।”

বর্ণের মাঝে নবীন উৎসাহের ঝিলিক দেখা দিলো। গভীর আগ্রহ প্রকাশ করছে সাংসারিক বিষয়ে।এই অভূতপূর্ব কৌতূহলে অন্বেষা খানিক চমকিত চোখে চেয়ে আছে।বর্ণ এগিয়ে আসে। অন্বেষার বাহু ঝাঁকিয়ে বলে,

“কিরে কালনাগিনী!আমারে সংসারের জঞ্জালে ফাঁসায় ভাল্লাগতাছে না অনেক?”

অন্বেষার ঠোঁটে হাসি ছড়িয়ে পড়ে।কথা সত্য! বেয়াড়া বর্ণ সংসারী হচ্ছে।হতে চেষ্টা করছে।বর্ণের বাহু চাপড়ে বললো,

“আম প্রাউড অফ ইউ মায় ম্যান!”

“বাল বড় বড় বাল!”

“অসভ্য!”

অন্বেষা বাজারের ব্যাগ তুলে ঘুরে হাঁটতে শুরু করলে বর্ণ আকস্মিক হাত টেনে তাকে পূর্বের স্থানে ফিরিয়ে আনলো।বিছানায় রাখা আরো একটি ব্যাগ অন্বেষার হাতে ধরিয়ে বাজারের ব্যাগ পাশে রেখে দেয়। অদ্ভুত শান্ত গলায় বললো,

“ছেড়ি মানুষের উপর আমি ভরসা করিনা।কোনদিন খোটা দিয়া বয়।”

অন্বেষা অবাক সুরে প্রশ্ন করলো, “কি?”

বর্ণ চোখ দিয়ে ইশারা করলো ব্যাগটির দিকে।খুলে দেখার জন্য ইঙ্গিত করে।অবাক অন্বেষা ধীর হাতে ব্যাগটি খুলে দেখে।লাল টকটকে একটি বেনারসি শাড়ি বেরিয়ে এলো। আশ্চর্যের চরম সীমায় আপাতত অন্বেষা।একবার বর্ণের দিকে আরেকবার শাড়ির দিকে দৃষ্টি বদল করছে। চরম বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলো,

“তোমার মনে ছিলো?”

লাল বেনারসিতে বউ সাজবার শখ।কথাটি অক্ষরে অক্ষরে মনে রেখেছে বর্ণ। অন্বেষার এই ব্যাকুল নয়ন দেখে থতমত খেয়ে যায় বর্ণ।ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,

“আমার স্মৃতি শক্তি ভালো।এহন ঢং কইরো না। দেহো শাড়ি ভাল্লাগছে নাকি?ফুটপাত থিকা চুরি কইরা আনছি।”

এই খুনসুঁটিতে মেতে থাকা সংসারটা যেনো ভালো লাগার আস্তানা। জাঁকজমকহীন সুখ এখানে।ধীরেধীরে বোধহয় বর্ণও উপলব্ধি করতে পারছে।তাই ঝুঁকছে এখানে।দায়িত্ব নেওয়ার যথাযথ চেষ্টা করছে।

অন্বেষাকে ভীষণ খুশি দেখালো। তড়িঘড়ি করে শাড়িটি খুলে দেখে। বলে অতি আগ্রহী সুরে,

“এই আমি এটা এখন পড়ি?”

বিনিময়ে শুধু মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলো বর্ণ। বললো না তেমন কিছুই। সে যে অগোচরে নিজের মনের মধ্যে চেপে রাখা পাথর সরালো।নিজেকে মনে হচ্ছিলো অন্বেষার ঘাড়ে চেপে থাকা এক অকর্মা বোঝা। অন্বেষা চলে যাওয়ার পর বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়।মলিন মুখ আর নেতানো নেত্র তুলে তাকায় আসমানের দিকে।ভাবে, ‘ কত দ্রুত গতিতে পরিবর্তিত হয় জীবনের রং।যেখানে এক ঘোলাটে ভবিষ্যত ছিলো তার,সেখানে এখন এক উজ্জ্বল আলো জ্বলজ্বল করে।’

“দেখো কেমন লাগছে আমাকে?”

চন্দ্রের কাছ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আনলো বর্ণ।এক আগ্রহের প্রাচুর্যে পূর্ণ কণ্ঠে। অন্বেষার রক্ত লাল রঙে সাজানো বদনে দৃষ্টি স্থির হয়। অন্বেষার ঠোঁটে চওড়া হাসি।এগিয়ে এসে বললো,

“এই আমাকে কয়টা ছবি তুলে দিবে?আমি স্মৃতি হিসেবে রাখবো।”

বর্ণের নজর নীরব;চঞ্চল। অন্বেষার অম্লান হাসি। স্নিগ্ধতার ছড়াছড়ি সর্বত্র।আকস্মিক নিজেকে হালকা অনুভব করলো বর্ণ। উদ্ভাসিত মুখপানে চেয়ে হিম সুরে জিজ্ঞাসা করলো,

“অল্পতে এত খুশি কেন তুমি?”

কণ্ঠের গাম্ভীর্যে হাসি মিলিয়ে আসে অন্বেষার। অধরজোড়া কিঞ্চিত ফাঁকা হয়ে আছে।এটি বর্ণের স্বাভাবিক কন্ঠ নয়। অপ্রস্তুতভাবে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করে বললো,

“অল্প কোথায়?….. এতো আমার জন্য….অনেক বেশি কিছু”

নিরুত্তর রয় বর্ণ। নিস্তব্ধতায় মিশে কদম ফেলে একেবারে কাছাকাছি এসে হাজির হলো।অদ্ভুত গভীর দৃষ্টিপাত করে অন্বেষার দিকে।সাহস করে চোখ তুলে অন্বেষা।বিভোর চক্ষুযুগল।যেনো কোনো স্বপ্নীল ঘোরের আভাস দিচ্ছে।শুকনো ঢোক গিলে চোখের পলক নামিয়ে নামিয়ে ফেলে।

বর্ণ আরো এগিয়ে এসে অবলীলায় আঁচল অন্বেষার মাথায় টেনে দেয়।
খাদে নামানো এক মোহগ্রস্ত কন্ঠ তার কানে ঝংকার তুলে,

“এবার সুন্দর লাগতাছে…..”

অন্বেষা আরো একটু জড়োসড়ো হয়ে পড়ে।এই মুহূর্তে লজ্জা গ্রাস করছে পুরোটাই।খুব উৎসাহ নিয়ে শাড়িটি পরনে জড়িয়েছিল।

দূরত্ব ঘুচিয়ে অন্বেষাকে নিজের বুকের সাথে জাপটে ধরেছে বর্ণ মুহূর্তেই। ধড়ফড়িয়ে উঠলো অন্বেষা। বর্ণের বুকে দুহাত রেখে পুরোপুরি সংকুচিত হয়ে গেলো।

“এক মন চায় এই ঠোঁটজোড়া ছুঁয়ে নাস্তানাবুদ হই।….আর…”

“আর?”

প্রশ্নটি করেও তৎক্ষনাৎ ঠোঁট কামড়ে ধরে অন্বেষা।গভীর কণ্ঠে জবাব আসে,

“আরেক মন সতর্ক করলো এই মাইয়া তোরে সারাজীবন প্রেম উত্তাপে জ্বালাইবো, পুড়াইবো।একদম ভস্ম কইরা দিবো”

অদ্ভুত এক সাহস সঞ্চিত হয় মনে।এই লোকটাকে সম্পূর্ণরূপে চাই তার। পড়ুক তার প্রেমে।ভস্ম হোক।শুধু তার হয়েই থাকুক।তেজি চোখজোড়া তুলে কম্পিত কণ্ঠে বলে উঠে,

“প্রেমে পুড়তে রাজি নাকি নারাজ?”

“পুড়তে পুড়তে খাঁটি সোনা হওয়া লাভ না লস?”

অস্থিরতা বাড়তে শুরু করে অন্বেষার।নিজের মনের উপরই কোনো নিয়ন্ত্রন নেই।অন্তর এই মুহূর্তে তাগাদা দিচ্ছে পালাবার।নয়তো বর্ণের এই রূপ তাকেই ঝলসে দিবে।এলোমেলো ভাবে বললো,

“বিরাট লস।দেখি আমি…..”

“ঠিক…আমার জীবনটাই লসের ঘানি টানতাছে।”

অন্বেষা ব্যাকুল নয়নে জানতে চায়,

“এখন উপায়?”

“উপায় নাই…. দিলাম ঝাঁপ আগুনে…”

বলে অন্বেষার অধরোষ্ঠ আঁকড়ে ধরে শক্তপোক্তভাবে।অধরের সন্নিধানে ছুঁয়ে যায় নিবিড় উন্মেষ।এক অধীরতম স্পন্দনের নিনাদ।তবে চারিদিক নিঃশব্দ। এ যেনো কোনো নীরবতার মহাকাব্য। বিরল এই স্পর্শে আকাঙ্ক্ষার কঠোর অভিলাষ জাগছে বিবর্ণের ধূসর হৃদগহ্বরে।ক্ষ্যান্ত দিলো মিনিট খানেক বাদে। অন্বেষাকে মনে হলো জ্ঞানশূন্য। দেহভার ছেড়ে দিয়েছে পুরোপুরি।

আকুল কন্ঠ তার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,

“আমার….বুক ধড়ফড় করতাছে অন্বেষা!”

অন্বেষা শুনেও যেনো শুনলো না। সান্নিধ্যে হারিয়ে চলেছে নিজেকেই। কিভাবে ভরসার কাঁধ পেতে দিবে? অন্বেষাকে দ্রুত জড়িয়ে ধরলো।নিজেকে শান্ত করা উচিত বলে মনে হলো।প্রশ্ন করলো,

“তোমার কি খারাপ লাগতাছে?”

অন্বেষা চুপ রইলো কিছু সময়।এক সমুদ্রসম ব্যাকুলতা।প্রকাশ করবে কি করে?শুধু মাথা দুলিয়ে না বোধক জবাবটাই আসলো এই মুহূর্তে।

শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আরো একটুখানি।এভাবে দাঁড়িয়ে পা ঝিমঝিম করছে অন্বেষার।মুখ ফুটে বলার মত অবস্থা নেই।বর্ণ অনুভব করলো শার্ট ভিজে যাচ্ছে তার।বুঝতে বাকি নেই এসব যে চোখের জল। বিচলিত কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,

“কি?….. কাঁন্দো কেন?…আমি কি ভুল….”

বর্ণকে দুহাতে পেঁচিয়ে ধরে অন্বেষা ক্রন্দনরত কণ্ঠে বলে উঠে,

“ভালোবাসি।”

“কিহ?”

“আমি…বিবর্ণকে তার নিজস্ব রূপেই ভালোবাসি”

স্পষ্ট শুনতে পেলো বর্ণ। মাথা তুলে সোজা হয়।দুহাতে অন্বেষার মুখ তুলে চাইলো তার দিকে। অন্বেষার কান্নার জোর বেড়ে গেলো যেনো। নাক মুছ কুচকে বললো,

“তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিবে?….ফিরিয়ে দিলে আমি কার কাছে যাবো?আমিতো চাই একটা ছোট সুখের সংসার।আমাদের দুজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।কেনো এমন করো বলোতো?আমার অনুভূতির দাম নেই। ভালোবাসতে পারো না আমাকে?কেনো পারো না?বলো?”

ফুলে উঠেছে নাক আর চোখ।বর্ণ হাসলো।চুপচাপ শান্ত থেকে ডান গালে চুমু খেয়ে বললো,

“নাহ পারিনা”

অভিমানের পাল্লা ভারি হলো। জেদি কণ্ঠে অন্বেষা প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“তাহলে বিয়ে করেছো কেনো?আমি চলে যাবো…”

বর্ণ হেসে প্রশ্ন করে,

“কই যাইবা?আমার জানা মতে তোমার বাপের বাড়িও নাই”

অন্বেষা কাঁদতে কাঁদতে বললো,

“জানি না!যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাবো।এমন লোকের সংসার আমি করবো না। ঢং করে শুধু! আস্ত নাটকবাজ!”

“তুমি আসলে অনেক ধুরন্ধর একটা ছেমড়ি বুঝছো! শাড়ি পিন্দা আমারে ভুলায় ফুসলায় কাছে টানার ফন্দি করছো।এইযে এহন পিছলায় গেলাম!সকালে ঠান্ডা পানি দিয়া গোসল করার দোষ জানি আমার ঘাড়ে না চাপে কইলাম!”

শূন্যে ভাসমান অন্বেষা।খানিক বাদে পিঠ ঠেকলো শক্ত শয্যায়।উষ্ণ আলিঙ্গনের মত্ত হতে শুরু করে। অধীর চুম্বন আঁচড় কেঁটে যাচ্ছে দেহাবয়বে।যেনো বিবর্ণের স্নিগ্ধতার সুর। তার নতুন পাগলপ্রায় চরিত্রের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।তার প্রণয়ের তলে একান্ত প্রেমের সমাহার।উন্মাদনা ছড়াচ্ছে অব্যক্ত অনুভূতিরগুলো। অন্বেষার ঘোরে ডুবে পাগলামি করছে।গ্লানির অতীত যেনো একেবারেই নিঃশেষ।উষ্ণতার কোলে খুঁজে পাওয়া সুরভিত সম্পূর্ণতা।প্রেমের উৎসবে সমবেত অন্তরের অন্তরাল।প্রেমের স্বর্গীয় এই নীরবতা প্রকৃতির ন্যায় হিম শীতল।ঠান্ডা পবন বারান্দা বেয়ে সম্পূর্ণ ঘর জুড়ে বিচরণ করছে।অবাক হয়ে চোখ বুজে শুধু অনুভব করলো অন্বেষা।বর্ণের চুলের গভীরে হাত ডুবিয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু ঝড়ায়। দীর্ঘশ্বাসের সহিত পূর্ণতাকে নির্বিকার চিত্তে ধারণ করছে।

শক্তিহীন অন্বেষা মনে মনে বলে উঠলো,

“বর্ণ পাগল….পুরোটাই পাগল…”

শৈত্যপ্রবাহ বইছে।বাহিরে কুয়াশার চাদরে ঢাকা সবটাই। বিদঘুটে অন্ধকার ঘরের মাঝে।বর্ণ কিছুটা ঘোর থেকে টেনে বের করে আনলো।এক কোণে অবহেলায় পড়ে থাকা লাল শাড়িটি সরিয়ে নিলো তৎক্ষনাৎ।জমিনে লুটোপুটি খাওয়া শার্ট তুলে গায়ে জড়িয়েছে।ভোর রাত্তিরে বুকে জড়িয়ে নিলো কুঁকড়ে যাওয়া অন্বেষাকে।নিজ হাতে তার মোটা সোয়েটার অর্ধজ্ঞান অন্বেষার গায়ে জড়িয়ে দিলো।ঢুকরে কান্নার আওয়াজ ভাসলে হুমকি আসে বর্ণের তরফ থেকে,

“কাঁনলে ধাক্কা দিয়া ফালায় দিমু।ঘুমাও চুপচাপ। সারাটা রাইত যন্ত্রণা করছো!একটা সেকেন্ডের লেইগা শান্তি পাই নাই।এটা বলে সুখী বিবাহিত জীবন আমার!”

জোরে জোরে নাক টানলো অন্বেষা।বর্ণ পরাজয় বরণ করলো মুহূর্তেই। অন্বেষার গায়ে ভালোভাবে কম্বল টেনে বুকে আঁকড়ে ধরে বললো,

“আচ্ছা ধমকামু না। জড়ায় ধইরা রাখছি। ঘুমাও।”

চলবে……