#উষসী_হাসবে_বলে (২৭)
লিখা- Sidratul Muntaz
ইয়ামিনকে পাশ কাটিয়ে কেবিনে ঢুকে গেলেন মুশফিক সাহেব। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলেন,” ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি। কালকের মধ্যেই রিলিজ দেওয়া হবে মা। সারাদিন কিছু খাসনি। এখন এই স্যুপটা খেয়েনে।”
” খেতে ইচ্ছে করছে না তো বাবা!”
” কিন্তু খেতে হবেই। আমি খাইয়ে দিচ্ছি আয়।”
মুশফিক আয়োজন করে বসলেন মেয়েকে স্যুপ খাওয়ানোর জন্য। কি পরম স্নেহে তিনি মেয়ের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন। তাঁর চেহারার অবস্থা বিধ্বস্ত। একমাত্র আদরের মেয়ের চিন্তায় অস্থির তাঁর মন। উষসী হঠাৎই খুব করে একজন বাবার অভাববোধ করল। মাত্র আটবছর বয়সে তার বাবা মা’রা গেছিলেন। সেই থেকে উষসী হারিয়েছে মাথার উপর ছত্র ছায়াটাকে।
উষসীর চোখ ভিজে এলো। বুকের ভেতরটা খুব শূন্য লাগছে। এই পৃথিবীতে বাবা-মায়ের বিকল্প কেউ নেই। ইয়ামিন কাছে এসে উষসীর হাত ধরল। ফিসফিস করে বলল, “চলো এখান থেকে।”
ইয়ামিন হাত ধরে টেনে বাহিরে নিয়ে যাচ্ছে। উষসী পেছনে তাকাল। ফাবিয়াহও চেয়ে আছে তাদের দিকেই। মেয়েটার চোখমুখ অন্ধকার। উষসী বিড়বিড় করে বলল,” যে মেয়ে নিজের বাবাকে ঠকাতে পারে, সে সবাইকেই ঠকাতে পারে।”
ইয়ামিন বাহিরে এসেই প্রশ্ন করল,” কি কথা বলছিলে তোমরা? ক্যান ইউ প্লিজ এক্সপ্লেইন?”
” আপনি কিছু শুনেননি?”
ইয়ামিন আন্দাজের ভঙ্গিতে বলল,” শুধু এটাই শুনেছি যে তুমি আমার আর ফাবিয়াহর বিয়ের রাস্তা ক্লিয়ার করে দিয়েছো। এর মানে কি?”
উষসী চোখ নামিয়ে নিল। একটু সময় নিয়ে বলল,” ঠিকই শুনেছেন তাহলে। আমার জন্যই এই সবকিছু হয়েছে।”
” তুমি নিজেকে কেন ব্লেইম দিচ্ছো? ”
” কারণ আমিই দোষী। ওই ছবিগুলো আমি তুলেছিলাম।”
ইয়ামিনের মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল। উষসী মাথা নিচু করে সবটা স্বীকার করল। সুইজারল্যান্ড যাওয়ার আগে শম্পাকে ছবিগুলো দিয়েছিল সে। বাকি সমস্ত কাজ করেছেন শম্পার দুলাভাই! তার জন্যই আজ এতোকিছু হচ্ছে। ইয়ামিন ভেবেই পেল না কি বলবে! কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে থেকে জিজ্ঞেস করল, ” তুমি এটা কেন করলে?”
উষসীর চোখে জল। মাথা নুইয়ে রেখে সেই জল আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে বলল,” আমি বুঝতে পারিনি এই সামান্য কারণে এতোকিছু হয়ে যাবে।”
ইয়ামিন এবার আরও হতাশ হলো। গাঢ় বিস্ময় নিয়ে বলল,” এর মানে কোনো কারণ নেই? শুধু আমার উপর রাগ থেকে এই বেহুদা কাজটা করেছো?”
উষসী আড়ষ্ট গলায় বলল,” আমি পরে শম্পাকে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু ও শোনেনি…”
উষসীর গলা বুজে আসে। ভীষণভাবে অনুতপ্ত সে। তার একটা ভুলের মাশুল ইয়ামিনকে দিতে হবে জঘন্য উপায়ে। এই মুহূর্তে ইয়ামিনের চোখের দিকে তাকানোর সাহসটাও তার নেই। নিচু হতে হতে একেবারে মাটির সাথে মিশে যেতে মন চাইছে!
ইয়ামিন গম্ভীর গলায় বলল,” তোমার জন্য একটা নিষ্পাপ মেয়ের জীবন যেতে নিচ্ছিল উষসী। যদি ফাবিয়াহর কিছু হয়ে যেতো? ভাবতে পারছো কাজটা কত ইনফেরিয়র?”
উষসী ছলছল চোখে বলল,” কিন্তু ফাবিয়াহর কিছু হয়নি।”
ইয়ামিন দেয়ালে চাপড় মে’রে বলল,” যদি হয়ে যেতো?”
উষসী হালকা কেঁপে উঠল। তারপর তেজ নিয়ে বলল,” কিছুই হতো না ওর। আপনার কি মনে হয় না এই বিষয়টা খুব সামান্য? এই জন্য আত্ম’হত্যা করার কোনো কারণ নেই। ও এসব নাটক করছে। যাতে আপনি ওকে বিয়ে করতে রাজি হোন।”
ইয়ামিন কটমট করে তাকিয়ে রইল। সে যেন উষসীকে চিনতেই পারছে না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ক্ষীপ্ত স্বরে বলল,” তোমার কাছে এই ব্যাপারটা এখনও সামান্যই মনে হচ্ছে? যদি সত্যিই আমাদের বিয়ে হতো তাহলে এটা সামান্য ব্যাপার হতো। কিন্তু আমি তো ওকে বিয়ে করব না! তার মানে এই ব্যাপারটা মোটেও সামান্য নয়৷ এই একটা স্ক্যান্ডালের জন্য মেয়েটার জীবনে কত প্রভাব পড়বে তুমি জানো?”
উষসী কান্নারোধ করে বলল,” আই এম স্যরি!”
” সবকিছু স্যরি বললেই শেষ হয়ে যায় না উষসী। তুমি একটা মেয়ের স্বাভাবিক জীবন নষ্ট করে দিয়েছো।”
উষসী মুখে হাত চেপে কাঁদতে লাগল। ইয়ামিন হতাশ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে দেয়াল থেকে হাত নামিয়ে নিল। তারপর টলমল পায়ে চলে যেতে লাগল। তার আর কিছুই বলার নেই!
উষসী পেছন থেকে ডাকল। বেদনায় কাতর হয়ে বলল,” এখন কি করবেন আপনি? এই ভুলের মাশুল দিতে বিয়ে করবেন ফাবিয়াহকে?”
ইয়ামিন একটু থামল। পেছনে ঘুরে মেঘের মতো গম্ভীর গলায় বলল,” আমি কেন মাশুল দিবো? ভুল তুমি করেছো। তাই মাশুল তোমাকে দিতে হবে।”
উষসী অবুঝের মতো তাকিয়ে রইল। ইয়ামিন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সামনে হাঁটতে লাগল। দ্বিধা নিয়ে ক্ষণকাল দাঁড়িয়ে রইল উষসী। তারপর সব দ্বিধা ঝেড়ে ইয়ামিনের পিছু নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। লিফটের কাছে এসে থামল ইয়ামিন। দরজা খোলা মাত্রই সে ভেতরে ঢুকে গেল। উষসীও তার সাথে ঢুকল।
কেউ কথা বলছে না। ইয়ামিন মুখ বন্ধ রেখেছে রাগে, অভিমানে। আর উষসী কথা বলতে পারছে না দ্বিধায়, সাহসের অভাবে। হাসপাতাল থেকে দু’জন একসাথেই বের হলো। পার্কিং লট থেকে গাড়ি নিল ইয়ামিন। উষসী নিশ্চুপ হয়ে তার পাশে বসল। প্রধান সড়কে এসেই ইয়ামিন স্টেয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে কথা শুরু করল,” আমি আর বাড়িতে ফিরছি না। ”
উষসী কোনো প্রশ্ন করবে নাকি বুঝতে পারল না। ইয়ামিন কেন বাড়ি ফিরবে না তা সে জানে! বাবার সাথে ঝগড়া করে ঘর ছেড়েছে। কিন্তু সে এবার কোথায় থাকবে? মাথার প্রশ্ন ঠোঁটে এনে উচ্চারণ করল,” তাহলে কোথায় যাবেন?”
” গাজীপুরেই থাকবো। কোনো হোটেল বা রিসোর্টে। ”
” ও।”
” বাবা আমাকে প্রেশার ক্রিয়েট করবে বিয়ের জন্য। কিছুদিন গেলে মাও শুরু করবে। হয়তো বাধ্য হয়ে তখন বিয়েটা আমাকে করতেই হবে।”
উষসী চোখ বড় করে তাকাল। ইয়ামিনের দৃষ্টি সামনে। কি নির্লিপ্তভাবে বিষাক্ত কথাগুলো বলছে সে! উষসীর হৃদয়ে দহন শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে।
ইয়ামিন সহজভাবে বলল,” কিন্তু এটা আমি চাইছি না। এই বিয়ে বন্ধ করার দু’টো অপশন আছে। প্রথমটা হলো এব্রোডে চলে যাওয়া। ছয়-সাত বছর পর ফিরে আসব যাতে ততদিনে সবাই সবকিছু ভুলে যায়। আর দ্বিতীয়টা হলো তোমাকে বিয়ে করা।”
শেষ কথাটুকু শুনে উষসী অসীম শান্তি অনুভব করল। স্নিগ্ধ অনুভূতিতে শীতল হয়ে উঠল তার মন। মৃদু হাসল সে।
ইয়ামিন খরখরে কঠিন গলায় বলল,” কিন্তু সেজন্য বাবা-মায়ের সাথে আমার সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। আমি সব রকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। কিন্তু তুমি কি করবে?”
উষসী বিভ্রান্ত হয়ে তাকাল,” আমি কি করব মানে?”
” তোমারও তো ফ্যামিলি আছে। আমাকে বিয়ে করার জন্য তুমি কি পারবে তাদের ছেড়ে আসতে?”
উষসী হতচকিত। তার বিস্ময় কাটছেই না। মাথা ঝিমঝিম করছে। এটা নিশ্চয়ই কোনো দুঃস্বপ্ন। ইয়ামিন সড়কের এক পাশে এনে গাড়িটা থামাল। তারপর উষসীর মুখের দিকে চেয়ে অসম্ভব শান্ত গলায় বলল,” জবাব দাও। এটা ছাড়া অন্যকোনো উপায় নেই একসাথে থাকার। তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং এখনি। আমিও আমার ফ্যামিলি এভয়েড করতে যাচ্ছি শুধু তোমার জন্য। আর তুমি পারবে না?”
উষসী তাকিয়ে আছে তখনও। গলার কাঁটাগুলো আবার জড়ো হয়েছে। জীভটাকে ভারী মনে হচ্ছে ভীষণ। ইয়ামিন থমথমে গলায় বলল,”আর যদি না পারো, তাহলে ভুলে যাও এই দুইদিনের অনুভূতি।”
মাথায় যেন বজ্রপাত হলো। ‘দুইদিনের অনুভূতি’ এই কথাটা এতো সহজে বলতে পারল ইয়ামিন? উষসী অনেকটা সময় নিয়ে নিজেকে সামলালো। তারপর খুব ধীরে ধীরে বলল,” আমি আগেও বলেছিলাম, সবকিছু ছেড়ে আসার মতোই ভালোবাসি আপনাকে। কিন্তু পরিবারের সাথে বেঈমানি করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আর আপনিও আমাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে সবাইকে মানিয়েই বিয়েটা করবেন। তাহলে কেন এসব কথা বলছেন? আমাকে শাস্তি দিতে চাইছেন?”
” তুমি যদি এটাকে শাস্তি ভাবো, তাহলে শাস্তিই।” ইয়ামিনের অকপট জবাব।
উষসী ক্রুদ্ধ ভঙ্গিতে বলল,” আসল কথা কি জানেন?আমার ফ্যামিলিকে ফেইস করার সাহস আপনার নেই। তৃষাণ ভাইয়ের সামনে গিয়ে আমাকে চাওয়ার মতো দুঃসাহসিক কাজ আপনি কখনোই করতে পারবেন না। সেজন্যই ভালোবাসার দোহাই দিয়ে আমাকে বলছেন সবাইকে ছেড়ে আসতে, তাই না? কিন্তু আমি এটা করব না। আপনার মতো কাওয়ার্ড- এর জন্য আমি আমার ফ্যামিলি ছাড়তে পারব না!”
” গেট লস্ট!”
উষসী হতভম্ব হয়ে শুধাল,” মানে?”
” চলে যাও এখান থেকে।”
স্তব্ধীভূত, বিমূঢ় হয়ে কিয়ৎক্ষণ চেয়ে রইল উষসী। ইয়ামিনের চোয়াল শক্ত, দৃষ্টি র’ক্তিম। অসম্ভব ক্রোধে মৃদু কাঁপছে তার ঠোঁট। সে সত্যিই উষসীকে বের হয়ে যেতে বলছে! সটান করে গাড়ির দরজাটা খুলল উষসী। তারপর একটা কথা না বলেই বের হয়ে এলো।
কিছুদূর যেতেই মুখে হাত চেপে ফুপিয়ে উঠল সে। জীবনের প্রথম বি’চ্ছেদের যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়ে উঠল তার মন। ভালোবাসা হা’রানোর বেদনা যে এতো তীব্র হতে পারে তা জানা ছিল না আগে! উদ্দেশ্যহীনভাবেই হাঁটতে লাগল। কোথায় যাচ্ছে সে জানে না। শুধু জানে, আজকের পর থেকে সবকিছু বদলে গেছে। জীবনের প্রথম প্রেম তাকে ভ’য়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করেছে। সে পুড়ছে। যন্ত্রণার তীব্র আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে! তাদের কয়েকটা দিনের গভীর ভালোবাসা খুব সহজেই শেষ হয়ে গেল আজ।
চলবে
#উষসী_হাসবে_বলে (২৮)
লিখা- Sidratul Muntaz
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ছাতা নেই সাথে। সে এলোমেলো পায়ে হাঁটছে মাঝরাস্তায়৷ একজন রিকশাচালক তখন থেকে পিছু নিয়েছে।
” ম্যাডাম, উইঠা পড়েন। বৃষ্টি বাড়তাছে।”
উষসী কড়া স্বরে বলল” আমি উঠব না। আপনাকে কয়বার বলতে হবে? চলে যান এখান থেকে।”
” ভিইজা যাইতাছেন তো ম্যাডাম। কোনো টাকা লাগব না। আপনি খালি ওঠেন।”
এই প্রথম কোনো রিকশাচালকের মুখে এমন কথা শোনা গেল৷ ভাড়া নাকি লাগবে না। আর লোকটা ম্যাডাম ম্যাডাম কেন ডাকছে? বৃষ্টির মধ্যে রিকশাচালকদের দাম বেড়ে হয়ে হয় আকাশ ছোঁয়া। সচরাচর রিকশাও পাওয়া যায় না। সেখানে এই ভদ্রলোক পিছুই ছাড়ছে না কোনোভাবে। এমনকি বিনা পয়সায় নিয়ে যেতে চাইছে।
বোঝাই যায় বেটা কুমতলবি। উষসী ম’রে গেলেও এর রিকশায় উঠবে না।
সে ভিজে ভিজেই হাঁটতে লাগল। পুরোটা রাস্তা রিকশাওয়ালা তার পিছু ছাড়ল না। নানান কথা বলে তাকে বিরক্ত করতে লাগল আর রিকশায় ওঠার জন্য অনুরোধ করছিল। উষসী ভ’য়ে চুপসে রইল৷ অন্ধকার রাস্তায় বেশি মানুষ নেই। তাই রিকশাওয়ালার সাথে ঝামেলা করার সাহস তার হয়নি। কিন্তু বাড়ির সামনে এসে সে ঠিকই ঘুরে রিকশাওয়ালাকে একটা চ’ড় মেরে দিল।
রিকশাচালক চড় খেয়ে বোকার মতো তাকিয়ে আছে। উষসী ঝাঁজালো গলায় বলল,” রাস্তায় একা পেয়ে মেয়েদের এভাবেই উত্যক্ত করিস? শালা, আর কখনও যদি আমার আশেপাশে তোকে দেখি তাহলে একদম জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়ব। ব্লাডি পারভার্ট! ”
উষসী এক দৌড়ে বাড়িতে ঢুকে গেল। তার চরম মেজাজ খারাপ হয়েছে। এমনিতেও মাথা ঠিক নেই তার উপর রিকশাওয়ালার অ’ত্যাচার একটুও সহ্য হচ্ছিল না। সেজন্যই এতো রাগ উঠে গেছে। কিন্তু বেচারাকে চ’ড় মারা কি ঠিক হলো? পুরো রাস্তা তো উষসীকে পাহারা দিয়েই নিয়ে এসেছে। খারাপ কোনো ইঙ্গিতও করেনি। মনে হয় তার উদ্দেশ্য খারাপ ছিল না। অবশ্য সুযোগের অভাবে সবাই ভালো মানুষ।
অল্পবয়স্ক রিকশাচালক অসহায় ভঙ্গিতে গালে হাত রেখে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। তারপর ধীরে ধীরে রিকশা ঘুরিয়ে দ্বিতীয় গলির কাছে এসে একটা প্রাইভেট কারের সামনে থামল। ইয়ামিন রাগান্বিত স্বরে বলল,” ইডিয়ট, একটা মেয়েকে রিকশায় তুলতে পারলে না? তোমার জন্য সারা রাস্তা ভিজে ভিজে গেল ও।”
রিকশাচালক করুণ স্বরে বলল,” কি করতাম স্যার? এতো কইলাম তাও উঠল না। বিনা পয়সায় পৌঁছায় দিমু কইলাম, তাও শুনল না। উলটা যাওয়ার আগে আমারে এক চওয়ার মাইরা গেল। এইখানে আমার কি দুষ?”
ইয়ামিন বিদ্বিষ্ট হয়ে দম ছাড়ল। হঠাৎ ফাঁকা রাস্তায় রিকশাচালককে দেখেই হয়তো ভ’য় পেয়ে গেছে উষসী৷ তাই রিকশায় ওঠেনি। এটাই তো স্বাভাবিক। মেয়েটা এতো জেদি কেন? ইয়ামিন না হয় রাগ করে বলেছে গাড়ি থেকে নেমে যেতে। তাই বলে সে সত্যি নেমে যাবে? একবারও পেছনে ফিরে তাকাবে না? আর এভাবেই হেঁটে হেঁটে বাড়ি চলে যাবে? একটা রিকশা পর্যন্ত নিবে না?আশ্চর্য মেয়ে!
ভিজে জপজপে শরীর নিয়ে উষসীকে ঢুকতে দেখে উষ্ণতা জোরে একটা চিৎকার দিল। তার এক চিৎকারেই লিভিংরুমে জড়ো হয়ে গেল সবাই। তৃষাণ প্রায় হন্তদন্ত অবস্থায় ছুটে এলো। উষ্ণতার এখন সাতমাস চলে। খুব সাবধানে থাকতে হয় তাকে। সেজন্য সে একটু ‘উঁহু’ উচ্চারণ করলেও সবাই আতঙ্কিত হয়ে ছুটে আসে। উষসীকে দেখে সবাই অবাক হলো।
যুঁথি বেগম বললেন” ভিজলি কিভাবে মা? হেঁটে এসেছিস নাকি? একটা ট্যাক্সি নিয়ে এলেই তো হতো।”
ডোনা প্রশ্ন করলেন,” এতোক্ষণ ছিলি কোথায়?”
উষ্ণতা বলল,” যদি ঠান্ডা লেগে যেতো? এভাবে বৃষ্টিতে ভেজার কোনো মানে হয়?”
কারো কথার জবাব দিল না উষসী। পাশ কাটানো গলায় বলল,” আমার খুব শীত লাগছে। আমি একটু রুমে যাচ্ছি।”
সে ত্বরিতে হেঁটে যেতে নিলেই তৃষাণ বলল,” ফ্রেশ হয়ে আমার সাথে দেখা করবে উষু।”
উষসী হেসে সম্মতি প্রদান করল,” ঠিকাছে ভাইয়া।”
গাজীপুরে একটা রিসোর্ট বুক করেছে ইয়ামিন। আজরাতে ওখানেই থাকবে সে। অলস ভঙ্গিতে ড্রাইভ করছে। গন্তব্যে পৌঁছাতে আরও একঘণ্টা সময় লাগবে। উষসীর কথা ভেবেই মন বেচাল হয়ে উঠছে তার। কেমন ভিজে ভিজে বাড়ি গেল মেয়েটা। জ্বর-টর এসে যায় যদি? ইয়ামিন সমস্ত ইগো ঝেড়ে ফেলে দিল। তারপর ফোন করল উষসীর নাম্বারে।
গোসল সেড়ে মাত্র বিছানায় বসেছে উষসী। তখনি মোবাইলটা বেজে ওঠে তার। সে ফোন কেটে দিল। রাগে শরীর চিড়বিড় করে উঠল ইয়ামিনের। সে স্যরি বলার জন্য ফোন করেছিল। অথচ উষসী কে’টে দিল! এতো ইগো কিসের? ঠিকাছে ইয়ামিনও আর ফোন করবে না। সে মোবাইল ছুঁড়ে ফেলে রাখল।
রাত সাড়ে আটটা। দুই কাপ কফি বানিয়ে উষসী বারান্দায় এসে বসল। তৃষান কার্ণিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল। উষসী আন্তরিক হেসে বলল,” ভাইয়া,তোমার জন্য কফি।”
” থ্যাংকস।” তৃষাণের কণ্ঠ অসম্ভব গম্ভীর। উষসী একটু বিব্রত হলো। তৃষাণ সচরাচর রেগে না থাকলে তার সাথে গম্ভীর হয়ে কথা বলে না। আজ কি সিরিয়াস কিছু বলবে? উষসী বুঝতে পারছে না।
সে কফিতে চুমুক দিয়ে অনেকটা উৎকণ্ঠা নিয়ে জানতে চাইল,” ইম্পোর্ট্যান্ট কিছু বলবে ভাইয়া? হঠাৎ এভাবে ডাকলে যে?”
” সারাদিন কি করছিলে আজ?”
প্রথম প্রশ্নেই আটকে গেল উষসী। তৃষাণের চোখের দিকে চেয়ে মিথ্যা বলতে তার একটু অসুবিধাই হয়! কোনমতে নিজেকে ধাতস্থ করল। তারপর জবাব দিল সহাস্যে,” আসলে ভার্সিটির পর একটু প্রীতিদের বাসায় ছিলাম৷ ও অসুস্থ তো। একটু দেখা করতে…”
” মাও সেটাই বলেছে। ”
উষসী হাঁফ ছাড়ল। যাক, মা এর কথা নিশ্চয়ই তৃষাণ অবিশ্বাস করবে না। কিন্তু পর মুহূর্তেই সে আবার বলল,” আমি প্রীতিকে ফোন করেছিলাম একটু আগে। সে তো বলল সে ভালো আছে। আজ ভার্সিটিতেও গিয়েছে। আর আজকে নাকি তোমাকে ফার্স্ট ক্লাসেই বের করে দেওয়া হয়েছিল? তারপর ওর সাথে তোমার আর একবারও দেখা হয়নি।”
উষসীর আত্মা ছলাৎ করে উঠল। মুখ থেকে কফি ছিটকে খানিকটা পড়ল গায়ে। সে এতো বেশি অপ্রস্তুত হলো যে কাশতেই লাগল। তৃষাণ একটা টিস্যু পেপার এনে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে উষসীর দিকে এগিয়ে দিল।
উষসী জড়সড় হয়ে বলল,” আই এম স্যরি ভাইয়া। আসলে ঠান্ডা লেগে গেছে মনে হয়। বৃষ্টিতে ভেজার কারণে।”
তৃষাণ থমথমে মুখে আবারও একই প্রশ্ন করল,” আমার কথার জবাব দাও উষু। তুমি এতোক্ষণ কোথায় ছিলে?”
উষসী অসহায়ের মতো তাকাল। আজকের দিনটা তার জন্য চ’রম অশুভ। একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে। কার মুখ দেখে উঠেছিল সকালে?
তৃষাণ কিছুক্ষণ উত্তরের অপেক্ষায় উষসীর দিকে চেয়ে রইল৷ তারপর নিজেই বলতে লাগল,” আজ লাঞ্চ টাইমে একজন আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল। তাকে তুমি ভালোমতো চেনো। তার নাম ইয়ামিন ইব্রাহীম।”
উষসী আরও এক দফা বিষম খেল। কাশতে কাশতে তার চোখ লাল হয়ে গেছে। সে সব অন্ধকার দেখতে পাচ্ছে হঠাৎ। তৃষাণ জানতে চাইল,” ওর সাথে তোমার কিভাবে পরিচয়?”
উষসী থম মেরে তাকিয়ে আছে। তৃষাণ তার মুখের সামনে তুরি বাজিয়ে ডাকল,” উষু?”
” হু?” সম্বিৎ ফিরল উষসীর।
তৃষাণ দরাজ গলায় বলল,” আমার কথা শুনতে পাচ্ছো?”
তুমুল গতিতে মাথা নাড়ল উষসী। তারপর তড়িঘড়ি করে বলল,” বিশ্বাস করো তেমন কোনো পরিচয় নেই। সুইজারল্যান্ডে আমাদের দেখা হয়েছিল। উনি প্রিয়ন্তি আপুর বিয়েতে গান গেয়েছিলেন। ওভাবেই পরিচয় আর কি।”
” শুধু এইটুকুই?”
উষসী পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল,” হ্যাঁ। এইটুকুই। আর কি হবে? উনার মতো মানুষের সাথে কি আমার আর কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে?”
অযথাই হাসার ভাণ করল উষসী। মিথ্যা কথাগুলো তার জীভে আটকে যাচ্ছে। হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। ইচ্ছে করছে ছুটে পালিয়ে যেতে। কিন্তু তৃষাণের কঠিন দৃষ্টি দেখে নিজেকে সামলালো। ভ’য়ে নিভু নিভু করছে মন। এবারের মতো বাঁচলেই হয়। তৃষাণ তাকে এভাবে কেন জেঁকে ধরল? সে কি কিছু বুঝে গেছে?
তৃষাণ শীতল গলায় বলল,” তাহলে ইয়ামিন ইব্রাহীম আমাকে কেন বলল যে সে তোমাকে বিয়ে করতে চায়?”
এই পর্যায়ে উষসীর হাত থেকে কফির মগটা পড়ে ভেঙেই গেল ফট করে। সে বরফের মতো জমে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ইয়ামিনের এতোবড় কলিজা? তার মানে আজ সে সত্যি তৃষাণের মুখোমুখি হতেই অফিসে গিয়েছিল! অথচ উষসীকে ব্যাপারটা বলেওনি… কি বিচ্ছু!
উষসীকে মূর্তির মতো স্তব্ধ বনে যেতে দেখে তৃষাণ তার মুখের কাছে তুরি বাজাল পুনরায়। উষসী থতমত খেয়ে বলল,” আমি তো এই ব্যাপারে কিছুই জানতাম না ভাইয়া।”
” তাহলে সে আমার অফিসে এসে এসব কথা বলার সাহস কিভাবে পেল?”
” জানি না। তুমি কি বলেছো তাকে?”
তৃষাণ একটা গভীর নিশ্বাস ত্যাগ করল। লাঞ্চ আওয়ার চলছিল তখন অফিসে। সব স্টাফরা ক্যান্টিনে গেছে। তৃষাণ তার রুমে একা। এমন সময় তার এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এসে বলল,” স্যার, আপনার সঙ্গে একজন দেখা করতে এসেছেন।”
তৃষাণ খাওয়ার সময় কারো সাথে দেখা করে না। বিরক্ত ভঙ্গিতে বলল,” এখন না, পরে আসতে বলো।”
” স্যার, উনি একজন নামকরা সিংগার! আর বলছেন ব্যাপারটা নাকি ভেরি মাচ ইম্পর্ট্যান্ট।”
তৃষাণের বেশ কৌতুহল হলো। একজন সিংগার তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। আবার বলছেন ভেরি মাচ ইম্পর্ট্যান্ট! কি হতে পারে? সে রুমালে মুখ মুছতে মুছতে বলল,” ঠিকাছে আসতে বলো।”
মিনিট বাদেই ভেতরে ঢুকল সানগ্লাস পরিহিত লম্বা, ফরসা, সৌম্য দর্শন এক তরুণ। তৃষাণ অবাক হয়ে তাকাল। মুখটা পরিচিত। মনে হয় আসলেই খুব বিখ্যাত কেউ। সে উঠে দাঁড়াল। বেশ বিনয়ের ভঙ্গিতে বলল,” ওয়েলকাম।”
ইয়ামিন আন্তরিক হেসে হাত বাড়িয়ে করমর্দন সাড়ল। প্রশ্ন করল সুমিষ্ট গলায়,” আমাকে চিনেছেন ভাইয়া?”
তৃষাণ বিভ্রান্ত হয়ে বলল,” আমাদের কি আগে কোথাও দেখা হয়েছিল? স্যরি বাট মনে করতে পারছি না।”
ইয়ামিন হাসিমুখে চেয়ারে বসল। মাথা নেড়ে বলল,” হয়েছিল। কিন্তু সেটা অনেক বছর আগের কথা।”
তৃষাণ মনে করতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে হাসল। নিজেও চেয়ারে বসতে বসতে বলল,” আচ্ছা,তাই নাকি?”
” আমি প্রিয়ন্তি আপুর কাজিন।”
” ওহ, আই সী। তোমাকে কি তাহলে প্রিয়ন্তি পাঠিয়েছে?তুমি করেই বলছি কারণ প্রিয়ন্তি আমার ছোটবোন। আর তুমি ওকে আপু বলছো মানে আমারও ছোট।”
” হ্যাঁ তবে আমাকে প্রিয়ন্তি আপু পাঠায়নি। আমি নিজের ইচ্ছায় এসেছি। কারণ আপনার সাথে আমার ভীষণ জরুরী দরকার।”
” হ্যাঁ, বলো তাহলে শুনি। তার আগে তোমার নামটাই তো জানা হলো না।”
ইয়ামিন এক আঙুলের সাহায্যে ভ্রু’টা একটু চুলকে বলল,” এখনি নাম বলতে চাইছি না। তাহলে হয়তো আপনি আমার কথাও শুনবেন না। এখনি বের করে দিবেন।”
তৃষাণ আশ্চর্য হয়ে বলল,” কেন?”
ইয়ামিন তার শুকনো ঠোঁট ভেজাল। অপ্রস্তুত স্বরে বলল,” আমি ইয়ামিন ইব্রাহীম।”
নামটা তৃষাণের কানে আটকে গেল। পুরো আড়াই মিনিট লেগে গেল তার ব্যাপারটা বুঝতে। ‘ইয়ামিন ইব্রাহীম!’ সবিস্ময়ে উচ্চারণ করল তৃষাণ।
ইয়ামিন নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,”এবার মনে হয় আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন।”
আচমকাই খুব গম্ভীর হয়ে গেল তৃষাণ। পাথরের মতো শক্ত দেখাল তার চেহারা। রুক্ষ মেজাজে বলল,”হুম। চিনেছি।”
তারপর জিজ্ঞেস করল রুক্ষ গলায়,” কি চাই? আমার সাথে তোমার কি জরুরী কথা?”
ইয়ামিন বড় করে শ্বাস নিল। অসীম সাহস নিয়ে সরাসরিই বলল,” আমি উষসীকে ভালোবাসি। বিয়ে করতে চাই।”
তৃষাণ প্রচন্ড অবাক৷ ইয়ামিন আরও পরিষ্কার গলায় বলল,” আমাকে বাসা থেকে বিয়ের জন্য প্রেশার দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু উষসীকে ছাড়া আমার পক্ষে অন্যকাউকে এক্সেপ্ট করা সম্ভব না৷ আর উষসী বলেছে তার কাছে আপনার অনুমতি ইম্পর্ট্যান্ট। তাই আমি আপনার কাছে এসেছি। আপনার অনুমতির জন্য।”
” তুমি কি আমার সাথে ইয়ার্কি করছো?”
” না বরং লাইফে প্রথমবার আমি কোনো বিষয় নিয়ে অনেক বেশি সিরিয়াস হয়ে কারো থেকে অনুমতি চাইতে এসেছি।”
” তুমি কিভাবে ভাবলে যে আমি এর অনুমতি দিবো?”
” আপনি অনুমতি দিবেন কি-না সেটা আপনার ব্যাপার। আমার কাজ আপনার মুখোমুখি হওয়া।”
তৃষাণ চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে গেল। ধৈর্য্যচ্যুত হয়ে গর্জন করে উঠল,” তোমার সাহস কিভাবে হলো?”
ইয়ামিনও উঠে দাঁড়াল। নির্বিকার গলায় বলল,” উষসী আমার সাহস। ওর খুশির জন্য আমি আরও অনেক বেশি সাহস দেখাতে পারি।”
” আচ্ছা, তাই? ঠিকাছে। আজ পরীক্ষা করব তাহলে। চলো আমার সাথে।”
তারপরেই তৃষাণ ইয়ামিনকে নিয়ে ছাদে যায়। ইয়ামিন কোনো প্রশ্ন ছাড়াই তার সঙ্গে আসে। তৃষাণ ছাদে পৌঁছে তার বাহুতে হাত রেখে বলল,” যদি এখান থেকে তোমাকে ফেলে দেওয়া হয় তাহলে বাঁচার কোনো চান্স নেই। মানুষ ভাববে সু’ইসাইড করেছো।”
ইয়ামিন অবাক হয়ে বলল,” কিন্তু আপনি আমাকে ফেলবেন কেন?”
তৃষাণ চোয়াল শক্ত করে বলল,” এটা একটা ওয়ার্নিং ইয়ামিন ইব্রাহীম। নেক্সট টাইম যদি উষুর নাম তোমার মুখে শুনি তাহলে আমি গ্যারান্টি দিতে পারছি না যে কি করব।”
উষসীর শিরদাঁড়া শিরশিরিয়ে উঠল। সে কাঁপা কণ্ঠে বলল,” তুমি কি সত্যিই উনার সাথে এমন করবে ভাইয়া?”
তৃষাণ উষসীর দিকে চাইল, মৃদু হাসল। তারপর তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,” সেটা তোমার উপর নির্ভর করছে উষুমনি। যদি তুমি আমাকে সত্যি বলে থাকো তাহলে ভ’য় পাওয়ার কোনো দরকার নেই।”
উষসী বহু কষ্টে মাথা নাড়ল। এই মুহূর্তে তাদের সম্পর্কের কথা স্বীকার করে ইয়ামিনকে বিপদে ফেলার মানেই হয় না। তাই কিছু বলতে পারল না। কিন্তু তার এতো অস্থির কেন লাগছে? ঘরে এসে ইয়ামিনের নাম্বারে ডায়াল করল কয়েকবার। কিন্তু তার ফোন সুইচড অফ। কি আশ্চর্য!
উষসীর ভীষণ খারাপ লাগছে। অযথাই ইয়ামিনকে কড়া কথা শুনিয়েছিল সে। অথচ বেচারা তার জন্য তৃষাণের মুখোমুখি হয়েছে। না জানি কত অপমান সহ্য করেছে! আজরাতে ইয়ামিনের কাছে মাফ না চাইলে তার ঘুম আসবে না!
চলবে