#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩০
‘কাজী অফিস’ দোতলায় বড়ো করে ‘টুলেট’ টানানো। সিএনজি গাড়িটা তার পাশ ঘেঁষে থামল। অপূর্ব ভাই গাড়ি থেকে নামলেন। রাস্তার পাশে আরও দুইজন পুরুষ ও একজন নারী দাঁড়িয়ে আছি। অপূর্ব ভাইকে দেখে তারা তিনজনে এগিয়ে এলেন। একজনের নাম জাহাঙ্গীর, যিনি এসিস্ট্যান্ট। আরেক অপূর্ব ভাইয়ের বন্ধু, নিলয়। আরেকজন নার্স পাপড়ি। সালাম বিনিময় করে পাপড়ি বলে, “স্যার আপনার কথা মতো আমরা সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। কাজী ঠিক করা আছে। আপনি গেলেই বিয়ে পড়ানো শুরু হবে।”
অপূর্ব ভাই মাথা নাড়লেন। বোঝা গেল, তিনি নিজেই ফোন করে তাদের আসতে বলেছেন। অপূর্ব ভাই আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তোকে কি এখন দাওয়াত দিয়ে গাড়ি থেকে নামতে বলতে হবে? নেমে আয়।”
‘নেমে আয়’ শব্দ টা ধমকের সুরে উচ্চারণ করলেন। কেঁপে উঠলাম আমি। ইতস্তত নিয়ে গাড়ি থেকে নামলাম। পায়েল আপুও নামলেন সাথে।
“এসেছিস, আমি তো ভেবেছি আমন্ত্রণ দিয়ে আনতে হবে।” অপূর্ব ভাইয়ের কথায় চোখ মুখ কুঁচকে এলো। সকলের সামনে আমাকে ব্যঙ্গ করছে। মনে আমার বিয়ে পড়ানোর কথাটা ঘুরছে। সন্দিহান গলায় বললাম, “অপূর্ব ভাই আমরা কার বিয়েতে এসেছি?”
“আমাদের। তোর আর আমার। এই মুহূর্তে, এই কাজী অফিসে বিয়ে করব আমরা। আর বাকিরা সাক্ষী থাকবে।”
“না..!” বলে চিৎকার করে উঠলাম আমি। অপূর্ব ভাই সহ বাকিরা ভ্রু কুঁচকে ফেলল। ভ্রু কুঁচকে বললেন, “না কি?”
“আমি আপনাকে বিয়ে করব না।”
“কেন?”
“আমি কোনো বুড়াকে বিয়ে করতে পারব না।”
“আমি বুড়া?” (কৌতুহলী কণ্ঠ অপূর্ব ভাইয়ের)
“না-তো কী? আমার বয়স ১৬ পেরিয়ে পড়ে ১৭ তে পড়েছে। আর আপনার বয়স ৩৫ বছর। প্রায় আমার চেয়ে দ্বিগুণ। আমি গিয়ে করব বাইশ বছর বয়সী তরুণদের। বুড়া বিয়ে করতে পারব না।” আমার জবাবে সবাই মিটমিট করে হাসছে। অপূর্ব ভাইয়ের বি/ষ দৃষ্টিতে সবাই চুপসে গেল। অপূর্ব ভাই রাগান্বিত গলায় বললেন, “ঠিক আছে আমাকে বিয়ে করতে হবে না। কু/কু/রের পেটে ঘিঁ সহ্য হয় না। তোরও ডাক্তার সহ্য হবে না। (জাহাঙ্গীর সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলেন) দেখেন তো রাস্তায় কোনো রিকশা ওয়ালা পান কি-না? ওকে তো ভালো কেউ বিয়ে করবে না। ওর জন্য রিকশা ওয়ালা যথেষ্ট।”
তিনটা লাফ দিয়ে পেছনে চলে গেলাম। তেজ দেখিয়ে বললাম, “আইছে রিকশা ওয়ালা। রিকশা ওয়ালা তো দূরের কথা। আমি বিয়েই করব না।”
“ঢাকাতে থাকতে হলে তোকে বিয়ে করতেই হবে।”
“না।”
“হম। নাহলে মিহির তোকে নিয়ে যাবে। তুই ভেবে দেখ কী করবি। আর কখনো মামা বাড়ির সাথে তোর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। এখন থেকে নিয়েই সোজা বিয়ে দিয়ে দিবে।” অপূর্ব ভাইয়ের কথাতে ভীত হলাম আমি। নতজানু হয়ে বিয়েতে সায় দিলাম। ভেতরে প্রবেশ করলাম। কাজী সাহেব বসেই ছিলেন। একশো এক টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে সম্পন্ন হলো। ‘কবুল’ শব্দ উচ্চারণ করতেই আধ ঘণ্টা লেগেছে। আমার পক্ষের সাক্ষী হিসেবে ছিল, নিলয় ও পায়েল আপু। অপূর্ব ভাইয়ের সাক্ষী হিসেবে ছিল জাহাঙ্গীর ও পাপড়ি।
বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে আমরা দুজনে অপূর্ব ভাইয়ের ফ্লাটের উদ্দেশ্য গেলাম। পায়েল আপু পাপড়ির সাথে তার বাড়িতে গেলেন।
__
চৌদ্দ তলার সেই এপার্টমেন্টে আধ ঘণ্টা আগে পৌঁছেছি আমরা। ফ্লাটের রঙ উজ্জ্বল। পোড়া ঘরে নতুন রঙ করেছে। পরণের জীর্ণ পোশাক বদলে অপূর্ব ভাইয়ের ট্রাউজার আর টি শার্ট জড়িয়েছি। আমি বের হতেই অপূর্ব ভাই গিয়েছেন ওয়াশরুমে। ‘ওয়াটার প্রুফ’ ফোন হওয়াতে তেমন ক্ষ/তি হয়নি তার মুঠোফোনের। দিব্যি চলছে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে লাজুক হাসি দিচ্ছি আমি। নাকের ডগা রক্তিম হয়ে আছে। নিজের দিকে তাকাতেই লজ্জা মাখা। বউ বউ লাগছে আমাকে। অপূর্ব ভাইয়ের বউ। থুক্কু। অপূর্ব আহসানের বউ। অপূর্ব ভাইয়ের ফোন বেজে উঠল। পরপর দুইবার বাজতেই ফোনের কাছে গেলাম। ‘প্রয়াস’ নামটা দেখেই ভ্রু কুঁচকে এলো। ইতস্তত করে রিসিভ করলাম। স্ক্রিনে ভেসে উঠল তুরের ছবি। চমকে উঠলাম আমি।
ওপাশ থেকে তুর বলছে, “আরু, এই গরু। কথা না বলে হা করে আছিস কেন?”
“এই তোকে ফোনে কীভাবে দেখা যাচ্ছে রে?”
“এটা হচ্ছে ভিডিও কল। তোরে যেমন আমি দেখতে পারব, তুইও পারবি।”
“ওহ্। (চুপ থেকে বললাম)
এটা কার ফোন তুর?”
“তোর দুলাভাইয়ের।”
“প্রয়াস ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ে হয়ে গেছে তুর?”
“হম। কতবার ভাইয়াকে ফোন দিলাম। রিসিভ করল না।”
“তোর ভাইয়া ওয়াশরুমে আছে। এখন আমার সাথে কথা বল। বিয়ের পর তোদের সংসার কেমন চলছে? প্রয়াস ভাই যত্ন টত্ন নিচ্ছে?”
“তা আর বলতে? ভেবেছিলাম, টিপা শ/য়/তা/ন। কিন্তু না, ভালোই আছে। তোকে একটা সিগরেট বলি? প্রয়াস আমাকে চুমু দিয়েছে। আমাকে কোলে নিয়ে ঘুরেছে। বউ বলে ডাকে। আমি তো লজ্জায় ম/রেই যাই। কী দুষ্টু দুষ্টু কথা বলে।” বলেই তুর লজ্জা পাওয়ার মতো অভিনয় করল। দরজা খোলার শব্দ পেলাম। আড়চোখে ওয়াশরুমের দিকে তাকালাম আমি। অপূর্ব ভাই বেরিয়ে এসেছেন। বিয়ে হয়েছে দুই ঘণ্টা হয়েছে প্রায়, কই আমার সাথে তো দুষ্টু দুষ্টু কথা বলেনা তিনি। দু’গালে হাত রেখে বললাম, “কী কী করেছে বল না?”
“আমার লজ্জা করে।”
“ঢং জামাইয়ের কাছে করিস। আমি তোর বোন লাগি।”
“বিয়েতে ভারী লাল টুকটুকে একটা শাড়ি দিয়েছে। ২০ জন লোক গিয়ে আমাকে নিয়ে এসেছে। বাসর ঘরে আমি মুখ ফুলিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করেছি। পুষ্প দিয়ে সজ্জিত ছিল ঘরটা। সে এসে নিজের পাঞ্জাবিটা খুলে। একদিকে আমি তখন ভয়ে কাঁপছিলাম, অন্যদিকে লজ্জায় নতজানু হয়ে ছিলাম। আমার পাশে বসে সে। তারপরে আমার মাথার ঘোমটা সরিয়ে বিনীত সুরে সালাম দেয়। কাঁপা কাঁপা গলায় সালাম নিয়ে তার ন/গ্ন বুকের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। দুধের গ্লাসটা এগিয়ে দিলেন। তারপরে…
বাকি কথা বলার পূর্বেই অপূর্ব ভাই ফোনটা ছিনিয়ে নিলেন। লাইন বিচ্ছিন্ন করে ফোনটা মুঠোয় নিয়ে নিলেন। তিনিও আজ টি শার্ট পারেননি। বুকের লোমগুলোতে পানির বিন্দু জমে আছে। আমারও লজ্জা করছে। অপূর্ব ভাই আয়না থেকে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন, “লজ্জাবতী লতার মতো লতিয়ে আছিস কেন? লজ্জা করছে না?”
“না!”
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩১
অপূর্ব ভাই রান্না বসিয়েছেন। ফোনটা নিয়ে গেছেন সাথে। ফোন ব্যবহার করার উপায় নেই। আমি টিভি দেখছি। রান্নার অনুষ্ঠান চলছে। আজকের রান্নার রেসিপি চিকেন বিরিয়ানি। আমি মনোযোগ সহকারে দেখছি। বর্তমানে আমি অপূর্ব ভাইয়ের সহধর্মিণী। তাকে রান্না করে খাওয়ানোর দায়িত্ব আমার হাতে। আমি রান্নার অনুষ্ঠান দেখতে ব্যস্ত। অপূর্ব ভাই রান্না শেষ করে খাবার পরিবেশন করতে ব্যস্ত হলেন। আলু ভাজি রান্না করেছেন। উঁচু গলায় আমাকে ডাকলেন, “আরু খেতে আয়, খেয়ে ওষুধ খেয়ে ঘুমা। তাড়াতাড়ি আয়।”
টিভি অন রেখেই ছুটে গেলাম অপূর্ব ভাইয়ের নিকট গেলাম। চেয়ার টেনে বসলাম। পরোটা বানিয়েছেন। দেখেই বিরক্ত লাগল। শুকনো খাবার খেলে আমার গলা শুকিয়ে যায়। কষ্ট হয়। আমি কিছুটা মন খারাপ করে বললাম, “অপূর্ব ভাই আপনি এমন খাবার কেন বানিয়েছেন? আমি এইসব খেতে পারি না।”
অপূর্ব ভাই পানি পান করতে করতে বললেন, “ঘরে কিছু নেই। তুই কোন জায়গার মহারানী যে, এতোরাতে তোর জন্য দোকান খোলা রাখবে? তোর ভাগ্য ভালো ঘরে আটা ছিল। চুপচাপ খেয়ে ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়। পরোটা/ রুটি খেলে পানির তৃষ্ণা লাগে। অতিরিক্ত পানি পান করলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।”
নতজানু হয়ে পরোটা মুখে তুললাম। কোনোমতে একটা পরোটা শেষ করে এক গ্লাস পানি খেয়ে ঘরে গেলাম। ঘরের ভেতরে মশারা পায়চারি করছে। মশারী টাঙিয়ে নিলাম অতঃপর ফ্যান ছেড়ে শুয়ে গেলাম। গরমের মাঝেও আমার কাঁথা লাগে ঘুমাতে। আমি আশেপাশে তাকিয়ে কাঁথা না পেয়ে বিছানার চাদর তুলে গায়ে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করলাম।
মাঝরাতে অপূর্ব ভাই ঘুম থেকে তুললেন। নিভু নিভু দৃষ্টিতে অপূর্ব ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ঘুম জড়ানো গলায় বললাম, “গরমের ভেতরে ডাকছেন কেন আশ্চর্য! ফ্যান বন্ধ করেছেন কেন? ফ্যান ছেড়ে দিন।”
অপূর্ব ভাই চাদর টেনে সরিয়ে দিলেন। বিরক্তিকর কণ্ঠে বলেন, “ওষুধ খেয়ে আমার ঘুমিয়ে পড়। (আমার ভাবাবেগ না পেয়ে পুনরায় বলেন) কী-রে, উঠবি?”
“না, আপনি ফ্যান চালু করেন। মামি, ও মামি তোমার ছেলেকে এখান থেকে নিয়ে যাও। তিনি আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না।” এবার অপূর্ব ভাই বেজায় বিরক্ত হলেন। হাত ধরে টেনে উঠিয়ে নিলেন। নিজহাতে পানি মুখে তুলে দিলেন। ওষুধ মুখে দিয়ে চেপে ধরলেন ওষ্ঠদ্বয়। আমি ঢোক গিলে অপূর্ব ভাইয়ের কাঁধে মাথা রাখলাম। ঘুম জড়ানো গলায় বললাম, “অপূর্ব ভাই আমি আপনার কথা শুনেছি, এবার আপনি আমার কথা শুনেন। প্লীজ ফ্যান ছাড়ুন। আমার পোশাক ঘামে ভিজে গেছে।”
“বিদ্যুৎ নেই, আমি হাওয়া করছি। তুই ঘুমানোর চেষ্টা কর।” বলেই পরণের ট্রাউজার খানিকটা উঁচু করতেই হকচকিয়ে উঠলাম আমি। হতবুদ্ধি হয়ে বললাম, “কী করছেন টা কী?”
নিচে নামানোর চেষ্টা করলাম। অপূর্ব ভাই শান্তনা দিয়ে বললেন, “রিলেক্স আরু। এখানে তুই আর আমি ছাড়া কেউ নেই। এই ঘরে কারো আসার সম্ভাবনা নেই। সুইচ অফ করে দিয়েছি। বিদ্যুৎ আসলে আলো জ্বলবে না। তাছাড়া আমি তোর স্বামী। স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা কর।”
অপূর্ব ভাইয়ের মুখটা অন্ধকারে দেখতে পেলাম না, তবে স্বস্তি বোধ করলাম। তিনি মিথ্যা বলেন না। বিদ্যুৎ তো নেই, দেখার উপায়ও নেই। হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে অগোছালো হয়ে শুয়ে পড়লাম বিছানায়। অপূর্ব ভাই মোটা কাগজ দিয়ে হাওয়া করতে করতে নিজেও আমার পাশে শুয়ে পড়লেন।
গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে সূর্য্যি মামা উঁকি দিয়েছেন। গরমটা কমে গেছে। মাথার উপরে ফ্যান চলছে, বুঝতে পারলাম বিদ্যুৎ এসেছে।
অপূর্ব ভাই চেম্বারে গেছেন। আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি। ঘুম ভেঙেছে আধ ঘণ্টা পূর্বে। বিছানায় শুয়ে বিদায় অনুষ্ঠান করা আমার নিত্যদিনের অভ্যাস। পুরোনো অভ্যাসটা বদলাবে না। দরজাটা খোলা, অপূর্ব ভাই যাওয়ার পূর্বে বেশ কয়েকবার বলেছেন, দরজায় লক করতে। আলসেমির কারণে উঠতে ইচ্ছা করেনি। বাজার নেই। অপূর্ব ভাই যাওয়ার পূর্বে পরোটা আর ডিম করে রেখেছেন সকালের নাস্তা হিসেবে। আমি গ্ৰামের মানুষ, মামা বাড়ি, দাদা বাড়িতে আমি পান্তা খেতাম। ভেতরটা একদম ঠান্ডা হয়ে যেতো। তাছাড়া কালকে পরোটা খেয়ে আমার অবস্থা নাজেহাল। অসম্ভব! এটা খাবো না।
বিছানা ছেড়ে উঠলাম। আগের বারের মতো অপূর্ব ভাইয়ের ব্যবহার করা ব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলাম। তুলোর মতো ব্রাশ তার। অতঃপর রান্নাঘরে গেলাম। চাল ধুয়ে চুলাতে দিতাম। চালের সাথে দুটো আলু সিদ্ধ দিলাম। আগুন জ্বেলে ড্রয়িং রুমে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে টেলিভিশন দেখতে বসলাম। দীর্ঘক্ষণ পেরিয়ে গেল। আমি রান্নাঘরের দিকে গেলাম না। হঠাৎ লক্ষ্য হলো। চমকে উঠলাম। রিমোট বিছানায় রেখে ছুটে গেলাম রান্নাঘরে। ভাতের পানি পরে চুলার চারপাশে কালো হয়ে গেছে। ভাতও পড়ে আছে। নরম হয়ে গেছে। হতভম্ব হলাম। তড়িগড়ি করে মার্ক ফেলার উদ্দেশ্যে ভাতের পাতিল ধরতেই ছ্যাকা লাগল হাতে। ফুঁ দিলাম। উপায়হীন হয়ে ট্যাবের নিচে হাত রাখলাম। চোখের পানি পড়ছে অনবরত। অন্যহাত দিয়ে চুলোটা বন্ধ করে দিলাম। ছ্যাকা খাওয়া হাতে ভাত গড়া দিলাম। লবণের ছিটা দিলাম। মামিকে দিতে দেখেছি। ডান হাতে ছ্যাকা খেয়েছি। অপূর্ব ভাই এক গাদা জামা কাপড় ধুয়ে রাখতে বলেছেন। একহাত দিয়ে জামা কাপড় ধুয়ে নিলাম। বারান্দায় মেলে দিলাম জামা কাপড়। পুনরায় ঘরে এসে বসলাম। ড্রয়ার খুঁজতে ব্যস্ত হলাম। কোথাও কোনো মেডিসিন বক্স দেখতে পারছি না। অন্যদিকে না খেয়ে থাকার অভ্যাস আমার নেই। অপূর্ব ভাইয়ের বানানো পরোটা আর ডিম খেতে বসলাম।
খ্যাঁচ খ্যাঁচ শব্দ শুনতে পেলাম। এক টুকরো মুখে দিয়ে দরজার দিকে তাকালাম। অপূর্ব ভাই এসেছেন। ডানহাতটা পেছনে লুকিয়ে ফেললাম। স্মিত হেসে বললাম, “আপনি এত তাড়াতাড়ি এসেছেন? বললেন না, আসতে দেরি হবে। পাঁচটা বাজবে।”
অপূর্ব ভাই ভ্রু কুঁচকে বললেন, “এত তাড়াতাড়ি কোথায়? পাঁচটা পঞ্চাশ বাজে। (আমার হাতের দিকে তাকিয়ে বললেন) সকালের খাবার এখন খাচ্ছিস?”
আমি দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম। পাঁচটা বেজে একান্ন মিনিট। কিন্তু আমি তো একটু আগে ঘুম থেকে উঠেছি। মৃদু স্বরে বললাম, “এত তাড়াতাড়ি পাঁচটা বাজল কীভাবে?”
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]