#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৬
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
মাহি চোখ পিটপিট করে চারপাশে তাকালো হসপিটাল দেখে চমকে উঠলো। সে হসপিটালে কেনো? সামনে তাকিয়ে দেখলো একটা ছেলে বসে আছে, পিছনে আরো দুইটা ছেলে দাঁড়িয়ে কি যেনো বলছে।
মাহি বলে উঠলো, ” এই এই আপনারা আমাকে হসপিটাল কেনো এনেছেন? এই আপনাদের আবার আমার কিডনির বিক্রি করে আইফোন কিনার ধান্ধা নেই তো!!
সামনে বসে থাকা ছেলেটা মাহির দিকে এগিয়ে আসলো,” এই যে মিস আপনি ঠিক আছেন তো? নাকি রাস্তার কিনারায় ধাক্কা খেয়ে বাংলা সিনেমার মতো সব ভুলে গেছেন!তাই সব বাংলা সিনেমার নাইকাদের মতো উল্টা পাল্টা বলছেন!?
মাহির এবার নিজেই বেআক্কেল হয়ে গেলো আসলেই তো!!
মাহি মনে করার চেষ্টা করছে আসলে ওই সময় হয়েছিলোটা কি?, ” হ্যাঁ আমি তো রাস্তার মাঝখানে ছিলাম। তারপর একটা গাড়ি আমার দিকে আসতে ছিলো। আমি চোখ বন্ধ করে নেই গাড়িটা আসার আগেই কেউ আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়,আর আমি গিয়ে রাস্তার কিনারায় পরে যাই।তারপর এখানে কিভাবে আসলাম?
ছেলেটি বলে উঠলো, ” আসলে মিস আমরা চার বন্ধু ভার্সিটি থেকে বের হয়ে দেখি একটা মেয়ে রাস্তার মাঝখানে বসে আছে আর একটা গাড়ি ওর দিকেই আসছে।তখন আমার ফ্রেন্ড গিয়ে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। কিন্তু আপনার মাথা রাস্তার কিনারায় লেগে একটু কেটে যায়।আর আপনি অতিরিক্ত ভয়ে জ্ঞান হারান।
মাহি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠে আপনার কোন বন্ধু? উনি ঠিক আছে তো?
~হে ও ঠিক আছে। এতোক্ষন তো এখানেই ছিলো। একটু আগে বাহিরে গেলো এখনি চলে আসবে।
ছেলেটা বলতে বলতে আরেকটা ছেলে কেবিনে ঢুকলো,
~মাহিন মেয়েটার কি জ্ঞান ফিরেছে?
মাহি বুঝলো এতোক্ষন যেই ভাইয়াটার সাথে কথা বলতে ছিলো ওই ভাইয়াটার নাম “মাহিন”।
মাহিনঃ হুম জ্ঞান ফিরেছে। বলে মাহির দিকে ইশারা করলো।
মাহি সামনে তাকিয়ে দেখলো একটা ছেলে দেখতে মাশাল্লাহ। মাহি মনে মনে ভাবছে। মাহির দেখা দুইটা ছেলে এতো সুন্দর কি করে হয়। এক তার রুদ্র ভাই আর দ্বিতীয় এই ছেলে(কতো সুন্দর চোখ, মেয়েদের মতো গোলাপি ঠোঁট, কপালের উপর ছড়িয়ে আছে সিল্কি চুল,ডান ভ্রুটার নিচে তিলটা যেনো মুখের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে,শ্যামবর্ন গায়ের রং টায় যেনো আরো বেশি মানিয়েছে ছেলেটাকে।)
মাহিকে এভাবে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সামনের ছেলেটা তার বন্ধু কে বলে উঠলো, ” দেখ তো মাহিন আমাকে কি আজকে একটু বেশি সুন্দর লাগছে “?
মাহিন ছেলেটা মুখটিপে হেসে বলে উঠলো, ” মেবি আজকে বেশিই সুন্দর লাগছে। না হলে এতো গুলো ছেলে থাকতে তোর দিকেই কেনো ডেবডেব করে তাকিয়ে আছে।
মাহিনের কথা শুনে পিছনের ছেলে গুলোও হাসাহাসি শুরু করলো।
মাহির লজ্জায় কান গরম হয়ে গেছে। মাহি মনে মনে বলছে,” আল্লাহ মাটি দু’ভাগ করো, আমি মুখটা ডাকবার জন্য একটা জায়গা পাই।ছি কিভাবে ডেবডেব করে তাকিয়ে ছিলাম। আমাকে এখন নিশ্চয়ই লুচু মেয়ে ভাবছে। সুন্দর ছেলে দেখলেই হা করে তাকিয়ে থাকে নিশ্চয়ই এইসব আমাকে নিয়ে ভাবছে। আবার নিজেই নিজেকে শান্তনা দিলো এটা ভেবে, ভালো করেছি তাকিয়েছি ছেলে মানুষ কেনো সুন্দর হতে যাবে। সুন্দর হয়েছে বলেই তো তাকিয়েছি।”
ছেলেটা মাহিকে বলে উঠলো, ” মিস আপনি ঠিক আছেন? ”
মাহিঃ জ্বি আমি ঠিক আছি।আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে বাঁচানোর জন্য। ”
~প্লিজ ধন্যবাদ দিবেন না। এটা আমাদের সবারই দায়িত্ব। আর একটা মানুষ বিপদে পড়লে আরেক জন এগিয়ে আসবে এটাই তো নিয়ম তাই না?”
ছেলেটার ফোন বেজে উঠলো।
মাহিন ভাইয়াটা আবার বলে উঠলো, ” আপু আপনার নামটা যদি বলতেন?”
~আমার নাম মেহরিন ইসলাম মাহি।
মাহিনঃ খুব সুন্দর নাম।আমার নাম মাহিন।আর ওরা দুজন ফাহাদ আর রবি।আর আপনাকে যে বাঁচালো তার নাম ফায়াজ।
মাহি চোখ ঘুরিয়ে আবার ফায়াজ ছেলেটার দিকে তাকালো। কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলছে।
ফায়াজ মাহিনের সামনে এসে বললো,” আমাদের এখনি বের হতে হবে চল।তারপর মাহির দিকে তাকিয়ে বললো, সাবধানে চলাফেরা করবেন।আজ তো পরিচিত হতে পারলাম না। অন্য কোনো দিন দেখা হলে অবশ্যই পরিচিত হবো। আজ আসি বাসা থেকে কল এসেছে। আপনিকি একা যেতে পারবেন নাকি আপনার বাসায় দিয়ে আসবো।
মাহি বলে উঠলো, ” না সমস্যা নেই আমি যেতে পারবো।”
ফায়াজঃ ওকে তাহলে আমরা আসি, সাবধানে যাবেন।
ফায়াজ তার বন্ধুদের নিয়ে চলে যাওয়ার পর মাহিও নিজ বাসার উদ্দেশ্য বের হলো হসপিটাল থেকে।
——
রাত এখন বেশি না হলেও রাত একটার কাটা ছুইছুই।ছাদের কিনার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আকাশের তাঁরা শুনতে ভেস্ত এক রমনী।হটাৎ তার পাশে কারো উপস্থিতি অনুভব করলো। পাশে তাকিয়ে দেখে আবির দুইটা কফির কাপ হাতে নিয়ে এসে রমনীর পাশে দাড়িয়েছে।
~আবির ভাই তুমি এতো রাতে!!ঘুমাওনি এখনো?
আবিরঃ তুই কি করছিস শুনি। রাত তো একটা ছুঁইছুঁই কিন্তু তুই এতো রাতে ছাঁদে কি করছিস?আচ্ছা তোর কি ভূত পেত্নীর ভয় নেই?
~ভাইয়া ভূত বলতে কিছুই নেই।এগুলো তুমি বিশ্বাস করো!!?
~হুম ভূত বলতে কিছু নেই আর পেত্নী তো তুই নিজেই।
~ভাইয়া একদম পেত্নী বলবা না!!
আবির একটা কফির মগ নূরের দিকে বাড়িয়ে দিলো।
~তুমি আগে থেকে জানতে আমি ছাঁদে তাই না?
আবিরঃ তেমন কিছু না। রুমে ভালো লাগছিলো না তাই ভাবলাম ছাঁদ থেকে ঘুরে আসা যাক।ছাঁদে এসে দেখি তুই দাঁড়িয়ে আছিস তাই ভাবলাম দুই মগ কফির সাথে রাতের আড্ডা দেওয়া যায়।
নূরঃ ভালো করেছো।
আবিরঃ তোর কি মন খারাপ?
নূর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, “না”
আবিরঃ তাহলে গিটার পাশে কেনো?
নূর কিছু বললো না। কারন সে যানে তার পাশের মানুষটাকে কিছু বলা লাগে না। এমনিতেই মুখ দেখলে বুঝে যায়।এটা কেই পুলিশের পাওয়ার বলে মনে হয়। মুখ দেখে আন্দাজ করে ওরা আসামি ধরে ফেলতে পারে।
~নূর একটা গান শুনবি?
নূর জানে তার আবির ভাই এখন তার মন ভালো করার মিশনে নেমে যাবে।
নূর গিটার টা আবিরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,” শুরু করো!!”
আবির গিটারে টুংটাং শব্দ তুলে গেয়ে উঠলো,
তোর মন খারাপের দেশে…
যাবো প্রেমের খেয়ায় বেশে…
তোর মনটা ভালো করে..
দেবো অনেক ভালোবেসে…
ডাকলে কাছে আসিস…
পারলে একটু হাসিস…
বুকটা রাখিস পেতে ভালোবাসা নিতে…
সব অভিমান ভেঙে দেবো..
তোর কাছে এসে….
তোর মন খারাপের দেশে…
যাবো প্রেমের খেয়ায় বেশে…
তোর মনটা ভালো করে দেবো অনেক ভালোবেসে….
~ভাইয়া তুমি কি যানো।তুমি অনেক সুন্দর গান গাও।পুলিশ না হয়ে সিংগার হলেই পারতে।
আবিরঃ তোর হিটলার চাচ্চু সেই সুযোগ দিলো কই।
আবার চারপাশ নিশ্চুপ হয়ে গেলো ।
আবির বলে উঠলো, ” নূর আমাদের জীবনে এমন কিছু মানুষ আসবে। যারা প্রতি নিয়তও আমাদের ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করবে।বার বার ওরা আমাদের দূর্বলতায় আঘাত করার চেষ্টা করবে।ওরা চাইবেই আমরা ওদের করা আঘাতে ভেঙে পড়ি,দুর্বল হয়ে পড়ি,আমাদের জীবন জাহান্নামে পরিনত হোক।কিন্তু আমাদের ভেঙে পরলে চলবে না। জীবন যুদ্ধে মানুষ সব সময় জয়ী হয় না, কিছু কিছু সময় হারের মাঝেই জয়ের আনন্দ খুঁজে নিতে হয়। এটা মনে রাখবে যা হবে বা হচ্ছে সব উপর ওয়ালার ইচ্ছায় হচ্ছে। উনি যা করেন তার বান্দার ভালোর জন্যই করেন।তুমি ভেঙে না পরে বার বার নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করো।ওরা নিজেরায় এক সময় ক্লান্ত হয়ে থেমে যাবে।আর তুমি যদি প্রথমেই হেরে যাও,ভেঙে পরো তাহলে ওরা মাথায় চরে বসবে।সবাই যে আমাদের ভালোবাসবে এমন কোনো কথা নেই।কিছু মানুষ তোমাকে হিংসা করবে,ঘৃণা করবে,কখনোই তোমার ভালো চাইবে না।আবার অনেকেই তোমাকে খুব ভালোবাসবে,ভালো রাখার চেষ্টা করবে,কারো বেঁচে থাকার কারন হয়ে যাবে তুমি। মরিচিকার পিছনে সময় নষ্ট না করে। নিজের লাইফের দিকে ফোকাস করো।নিজেকে এমন ভাবে তৈরি করো যে ছেড়ে গেছে সে যেনো এক সময় তার নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য নিজেই আফসোস করে।চোখের দেখা মানুষ সবাই আপন হয় না।সবাই যে তোমাকে ভালোবাসবে এমন কোনো কথা নেই,আমাদের দেখো পুলিশ কারো কাছে ফেরেশতার মতো আবার কারো কাছে দু’চোখের বিষ।বলে আবির ভাই হেঁসে ফেললো। রাতের অন্ধকারে হাসির আওয়াজ যেনো চারপাশ রিনঝিন শব্দ করে তুললো।
নূর মুগ্ধ হয়ে আবিরের কথা গুলো শুনলো।কতো সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলো। আসলে আবির ভাই চমৎকার একজন মানুষ।
আবির আবার বলে উঠলো, ” অনেক রাত হয়েছে রুমে যাও”..
নূর কিছু বলতে গিয়েও বললো না। পিছন ফিরে হাঁটা শুরু করলো, উদ্দেশ্য মাহির রুমে যাবে।হঠাৎ নূর কিছু একটা মনে হতেই থেমে গেলো।ফিছনে ফিরে বলে উঠলো, ” আবির ভাই শাড়িটা কি তুমি দিয়েছো?”
আবির চমকে উঠলো কেউ তো দেখেনি নূর বুঝলো কিভাবে!!?
আবির বলে উঠলো, ” প্রথম বেতন পেয়েছি ভাবলাম সবাইকে গিফট দেওয়া যায়। তাই সবার জন্য গিফট কিনে আসার সময় শাড়িটা পছন্দ হলো।মনে হলো শাড়িটা তোর সাথে খুব মানাবে তাই নিয়ে আসলাম।”
নূর এমনি তেই শাড়ি পাগল। শাড়ি খুব পছন্দ। খুশি হয়ে বলে উঠলো,” আসলেই খুব সুন্দর শাড়িটা ভাইয়া।”
——
মাহি নিজের রুমে মন খারাপ করে বসে আছে আর ভাবছে শো পিছ টা কোথায় পরতে পারে।হয়তো রাস্তায় পরে গেছে ধাক্কা দেওয়ার কারনে। মন খারাপ করে ভাবছে কাল আবার সেই দোকানটায় যাবে আবার এমন একটা শো পিছ কিনে রুদ্র ভাইয়াকে দিবে।(একি রকম শো পিছ আরেকটা ছিলো। রুদ্র রাগ করে চলে যাওয়ার পর মাহির খুব খারাপ লাগে। দোকানদার কে জিজ্ঞেস করে আর এমন শো পিছ আছে কি না?। দোকানদার বলে আরো একটা আছে।তারপরে মাহি ওটা কিনে নেয় উদ্দেশ্য বাড়িতে এসে রুদ্র ভাইকে এটা দিয়ে চমকে দিবে। কিন্তু বাসায় এসে দেখে বেগে শো পিছ নেই।)
বাসায় আসার পর মাহিকে দেখে আনিতা বেগম আঁতকে ওঠেন। মাহিকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করেন কি হয়েছে?
মাহি সব খুলে বললো।ওর আম্মু ছেলে গুলোর জন্য অনেক দোয়া করেন। আজ ওদের জন্য উনি নিজের মেয়েকে ফিরে পেয়েছেন। না হলে আজ কি হতো ভেবেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো উনার।
নূর এসে মাহির দরজায় টুকা দিলো।
মাহি দরজা খুলে দেখে নূর দারিয়ে আছে।
মাহিঃ ভেতরে আয়!
নূরঃ আপু কি হয়েছে বল তো? কোন ছেলের কথা বলতে ছিলো আম্মু? দেখতে কেমন?
চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।