এই ভালো এই খারাপ পর্ব-১১

0
208

#এই_ভালো_এই_খারাপ
#পর্ব_১১
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

মফিজ সাহেব চলে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু আজলান না যেতে বলায় আর কিছু বলে উঠার সাহস করেনি। ওই ব্যাটার হালচাল বুঝে উঠা দুষ্কর। আবার কখন কি বলতে কি বলে বসে।

রমলা চাচীর সাথে হাতে হাত মিলিয়ে আয়জা রান্নাবান্না করছে। আগে করতো না। ভাবি অসুস্থ থাকায় এখন তাকে কাজকর্ম করতে হয়। তিথি এসে আচারের বৈয়াম দিয়ে বলল,

” এটা তোমার। তোমার ভাইয়া এনেছে। নাও, পরিমিত খাবে। বেশি খাবে না। ”

আয়জা খুশি হলো। বলল,

” তু্মি খাচ্ছ নাকি? সুগন্ধিটা দারুণ। ”

তিথি গালের ভেতর বরই বিচি কটরমটর করতে করতে বলল,

” হ্যা। আমার জামাই আনছে। আমি খাব না, তো কে খাবে? ”

বলেই আম্বিয়া বেগমের দিকে আঁড়চোখে তাকালেন। রমলা চাচী হাসলো। তিথি তাকে আচার দিল একটা ছোট বয়ামে করে। বলল,

” তোমার মেয়েকে দিও। বেশি দিইনি। ওসব বেশি খাওয়া ভালো না। পরিমিত খেতে হয়। বুঝলে?”

রমলা চাচী বলল,

” তোমার জন্য আনছে তুমি খাও। সবাইরে দেওয়ার কি দরকার? ”

” কি যে বলো না। নাও নাও। লজ্জা পেওনা। সবাইকে তো দিচ্ছি না। শুধু তোমাকে দিচ্ছি আমার ভাগ থেকে। শ্বশুর আব্বাকেও দেব যদি খেতে চায় তবে। ”

আয়জা হাসতে লাগলো। ভাবির কথা শুনে সে না হেসে পারেনা। আম্বিয়া বেগম এতক্ষণ চুপচাপ শুনছিলেন। বললেন,

” দেখেছিস রমু আজকাল বউয়ের জন্য আচার-টাচারও আনে!”

রমলা চাচী হেসে বলল, ” তাই তো দেখছি ভাবি। ”

তিথি কপাল কুঁচকে ফেললো। এক হাত কোমরে রেখে বললো,

” এমন হারামি তো জীবনে দেখিনি। তোমার মেয়ের জন্যও আনছে সেটা দেখছো না? শুধু আমার জন্য আনছে সেটা চোখে পড়লো? তোমার মনটা দেখছি হিংসায় ভরা শ্বাশুমা। ”

আম্বিয়া বেগম খুন্তি হাতে নিয়ে বললেন,

” আমি কি তোরে গালি দিছি? তুই পকপক করছিস কেন? ”

তিথি বলল,

” তুমি তখন থেকে কোণা চোখে তাকাচ্ছ দেখে আমি সব বুঝে গিয়েছি। তোমার কইলজ্যা ফেটে যাচ্ছে ও আমার জন্য আচার আনছে বলে।”

আম্বিয়া বেগম খুন্তি নেড়ে বললেন,

” যা তো যাহ এখান থেকে। তোর মতো খানকির সাথে কথা বলার সময় নেই। ”

তিথি আঙুল থেকে আচার চেটেপুটে খেয়ে বলল,

” আমারও অত সময় নেই। আমার জামাই বাড়ি আসছে অনেকদিন পর। আমি তার কাছে যাই। শোনো রমলা চাচী, আমার জামাই আমারে দেখতে পারলে এটা কারো সহ্য হয় না। এজন্যই বদনজর লাগে। ”

রমলা চাচী ঠোঁট টিপে নিঃশব্দে হাসলেন।
আম্বিয়া বেগম তিরস্কার করে বললেন,

” তুই এতদিন কি কি করছিস সব বললে তোরে বের কইরা দিবো বাড়ি থেইকা। ”

তিথি ক্ষেপে তাকিয়ে রইলো। কিছু বললো না।
আম্বিয়া বেগম পাতিলে খুন্তি নাড়তে নাড়তে বললেন,

” তুই এক পোয়াতি হইছোস! বাচ্চা পেটে ধরে তোর এক দাম বাড়ছে! বাপরে বাপ। এর আগে পোয়াতি আর কেউ হয়নাই। শুধু তুই হইছোস। তোরে কিছু বলাও যায় না। তোর যা মুখ। ”

তিথি মুখ মোচড় দিয়ে বেসিনের হাত ধুতে লাগলো। আয়জা বলল, ” মা এভাবে কথা বলছো দেখলে ভাইয়া কি ভাববে?”

আম্বিয়া বেগম রেগে গিয়ে বললেন,

” কি ভাববে? পোলা আমার। ওকে আমি পেটে ধরছি। ও আমাকে ভালো করে চেনে। ”

তিথি বলল, ” শোনো শ্বাশুমা তোমার সাথে ঝগড়া করার কোনো মুড নেই আমার। আমাকে আমার জামাই ডাকতেছে। ”

বলেই ঝামটি মেরে চলে গেল। আয়জা আর রমলা হাসি হো হো করে হেসে উঠলো। আম্বিয়া বেগম বিড়বিড়িয়ে বললেন,

” আমার একটামাত্র ছেলে! তার কপালে এমন পাগল জুটে গেল কেমনে কে জানে? ”

তিথি ড্রয়িং রুমে চলে গেল। আফতাব শেখ আর মফিজ সাহেবকে প্লেটে করে আচার খেতে দিল। আফতাব শেখ বললেন,

” এসব তুমি খাও। আমাদের দেওয়ার কি দরকার?”

মফিজ সাহেব বললেন, ” তাই তো। এসব তোর জিনিস। তুই খা। আমাদের ওসব খাওয়ার রুচি নেই। ”

তিথি প্লেটের আচারগুলো বয়ামে ঢেলে দিল।
তারপর বয়ামের ঢাকনা ঘুরাতে ঘুরাতে উপরে চলে গেল। আজলান তার স্যুটকেসটা ধুচ্ছিলো। তিথির বড়ো বিরক্ত লাগে। এতবড় স্যুটকেসটাও ধুতে হবে এতরাত্রে? সে বললো,

” তোমার মায়ের জন্য একটা আচারের বয়াম আনোনি কেন? ”

আজলান কপাল কুঁচকে চেয়ে বললো,

” কেন? ”

” তোমার মা আমাকে এভাবে এভাবে দেখছে তুমি আচার এনেছ শুনে। ”

বলেই কোণাচোখে অভিনয় করে দেখালো। আজলান বলল,

” তুমি কিছু বলেছ? ”

” বলেছি আমার জামাই আমার জন্য আচার আনছে তোমার কি সমস্যা? ”

আজলানের দাঁত কটমট করে উঠলো। তিথি তার দিকে না তাকিয়ে বলে গেল,

” আসলে শ্বাশুড়িদের এই এক সমস্যা। ছেলের বউয়ের খুশি সহ্য করতে পারে না। ”

আজলান বলল,

” মাকে আর কি বলেছ তুমি? ”

তিথি বললো, ” কি আর বলব? বলেছি তোমার কইলজ্যা ফেটে যাচ্ছে না? ও আমার জন্য আচার আনছে তাই?”

আজলান বলল, ” আউট। ”

তিথি চমকে উঠে বলল, ” অ্যাহ? ”

আজলান বলল,

” বাংলায় বলতে হবে? ”

তিথির মুখখানায় অন্ধকার নেমে এল। কন্ঠস্বরও ঝিমিয়ে এল। বলল,

” ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া বউ তো আনোনাই যে ইংলিশ বুঝবে। ”

আজলান বলল,

” ওকে ফাইন। বাংলায় বলছি। ঘর থেকে বেরোও।”

তিথি বলল,

” আমার কি দোষ? ”

আজলান গর্জে বলল, ” সেটা যতদিন না বুঝে উঠতে পারবে ততদিন দূরে থাকো। ”

তিথি ঘর থেকে বের হলো। তারপর বলল,

” তুমি একটা মাম্মাস বয়। ”

আজলান বলে উঠলো, ” হোয়াট? ”

তিথি নিজ থেকে দরজাটা টেনে দিয়ে বলল,

” মানে মা ভক্ত। রাগ কমে গেলে ডেকো। আমি তার আগে আসবো না। ”

আজলান চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো সদ্য ধোয়া স্যুটকেসটা হাতে নিয়ে। রাগে ফুঁসছে সে। তিথি পুনরায় দরজা খুললো। বলল,

” আব্বার সাথে বসে ভাত খেও কেমন? আব্বা খুশি হবে খুব। তোমার মায়ের সাথে আমি আজ থেকে আর কোনো কথা বলব না, ঝগড়া তো দূর। কসম।”

আজলান কোনো উত্তর না দিয়ে মুখটা বেজার করে দাঁড়িয়ে রইলো। তিথি বলল,

” ওভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। তুমি আমার আব্বার সাথে বসে না খেলে আমি তোমার মায়ের সাথে আরও বেশি বেশি ঝগড়া করবো। তুমি আমাকে ঘর থেকে বের দিলেও সমস্যা নেই। সব আমার বাচ্চা দেখতেছে। ও সুদে-আসলে শোধ নেবে। ছাড় নেই। ”

বলেই দরজাটা টেনে দিয়ে চলে গেল।

_________

রাতে তিথির একদম খেতে ইচ্ছে করে না। এতদিন শ্বাশুড়ি আর ননদকে ফাঁকি দিতে পারলেও ফাটাকেষ্ঠকে ফাঁকি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রথম প্রথম সে অনেক খেতে পারতো, বমি হতো খুব। এখন বমি কমে এসেছে কিন্তু খেতে ইচ্ছে করে না। শুধু টুকটাক এটা ওটা খেতে ইচ্ছে হয়। মাছ মাংসে একদম বিতৃষ্ণা চলে এসেছে। শুধু ভর্তা দিয়ে কচলে কচলে ভাত খেতে ইচ্ছে করে।

শ্বশুর আব্বা বাজার থেকে থানকুনি পাতা কিনে এনেছিলো। তিথি সেগুলো বেছে ফ্রিজে রেখে দিয়েছিলো। রোজ সেখান থেকে কয়েকটা নিয়ে পোঁড়া মরিচ, আর পেঁয়াজ মেখে মেখে ভাত খেয়েছে। আজ রমলা চাচীকে বলে পেঁয়াজ আর মরিচ ভেজে রেখেছে। কাঁচা পেঁয়াজ খেতে পছন্দ করেনা আজলান শেখ, কেউ খাচ্ছে সেটাও পছন্দ করেনা। তিথি তো ভয়ে খায় না। তাকে আবার আদরটাদর করবে না।

মফিজ সাহেবের জন্য আজ রাতের খাবারের আয়োজন একটু তাড়াতাড়ি করা হয়েছে। উনি চলে যাবেন তাই। টেবিলে হরেক রকমের রান্না দেখে উনি বললেন,

” এত কষ্ট করে এত আয়োজনের কি দরকার ছিল? ”

তিথি কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে বললো,

” তুমি কি প্রতিদিন খাচ্ছ এই বাড়িতে? এত ঢং না দেখিয়ে যা খেতে ইচ্ছে করে খাও। ”

আফতাব শেখ বললেন,

” বৌমা তুমি বেড়ে দাও তোমার আব্বাকে। আর হ্যা, তোমার বর কি আজ নীচে নামবে? যদি নামে তাহলে বলো যেন একটু তাড়াতাড়ি নেমে আসে। বাড়িতে কুটুম এসেছে। কুটুমের সাথে একসাথে বসে খেতে হয়। ”

তিথি বললো, ” ওসব জ্ঞান বউয়ের মুখে মানায় না। ওসব শিক্ষাদীক্ষা মায়ে বাপে দেয়, বউ না। এমনিতেই আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে রাগে। সেখানে আমি আর জ্ঞান দিলে আব্বার হাতে আমাকে ধরিয়ে দিয়ে বলবে আপনার মেয়ে আপনি নিয়ে যান। ”

হেসে উঠলো আফতাব শেখ। মফিজ সাহেব মেয়েকে চুপ থাকার জন্য ইশারা করছেন কিন্তু মেয়ে উনার দিকে তাকাচ্ছে না। আয়জা এসে মফিজ সাহেবকে বললো,

” আঙ্কেল যেটা খেতে ইচ্ছে করে নিয়ে খান। আপনার মেয়ের বাড়িতেই তো এসেছেন। ”

মফিজ সাহেব বিড়বিড়িয়ে বললেন,

” আমার মেয়েকে সেকেন্ডে সেকেন্ডে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে আবার বলা হচ্ছে এটা আমার মেয়ের বাড়ি!”

তিথি বলল, ” এই ননদিনী ফাটাকেষ্ঠ ভাত খেতে আসবে কি আসবে না জিজ্ঞেস করে আসো তো। ”

আয়জা বলল, ” ভাইয়াকে বলব তুমি ফাটাকেষ্ঠ ডেকেছ? ”

তিথি হাসলো। বলল,

” তাড়াতাড়ি যাও। আব্বাকে চলে যেতে হবে। ”

তিথি মফিজ সাহেবের কানের কাছে গিয়ে বললো,

” আব্বা তোমার জামাই এলে খাওয়ার সময় কোনো কথা বলিওনা। শ্বশুর আব্বা বললেও না। আমি বেশি কথা বলি বলে আমার সাথে খেতে বসে না। বুঝলে? ”

মফিজ সাহেব মাথা নাড়লেন।

আজলান যখন খেতে এল তখন আফতাব শেখ বললেন, ” বৌমা তোমার মা এলে উনাকে কয়েকদিন তোমার সাথে রেখে তারপর তুমিও চলে যেও উনার সাথে। কয়েকদিন বাপের বাড়িতে থাকলে তোমার ভালো লাগবে। ”

তিথি হাসলো। কিন্তু কিছু বললো না। আজলান চামচ দিয়ে ভাত বাড়তে লাগলো চুপচাপ। মফিজ সাহেব তার হাতের নখগুলো লক্ষ করছিলেন। কাটা নখগুলো সাদা ঝকঝকে একদম ভাতের মতো। জামাই রক্তশূন্যতায় ভুগছে নাকি? চোখতুলে উনার দিকে তাকাতেই মনে হলো উনার হৃদপিণ্ডটা তড়াক করে লাফিয়ে উঠেছে।
বাবা শ্বশুর দুজনকে ভাত বেড়ে দিয়ে আজলান তিথিকে ইশারা করলো তরিতরকারি আর মাছ মাংস তুলে দিতে। তিথি চুপচাপ বেড়ে দিল।

মফিজ সাহেব বললেন,

” আর দিস না মা। অত খেতে পারবো না। ”

তিথি শাসিয়ে বলল, ” কতবার বলেছি ফাটাকেষ্ঠ খেতে এলে কথা বলবে না। ”

বলেই বড়বড় চোখ করে আজলানের দিকে তাকালো। আফতাব শেখ বিষম খেলেন। আজলান কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিল। তিথি আজলানকে মাছ তুলে দিতে যেতেই আজলান হাত রাখলো না দেয়ার জন্য। তিথি তার হাতের উপরে মাছের টুকরোটা দিয়ে দিল। রমলা চাচী বললেন,
” হায়হায় এটা কি হলো? ”

তিথি দাঁত দিয়ে নখ কুটতে কুটতে আজলানের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। আজলান টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু টেনে নিয়ে হাতের উপরটা মুছে নিল। মফিজ সাহেব মনে মনে আওড়ালেন,

” মেয়েটা কোনো কাজের না। তোর মায়ের মতো হতে পারলি না পাগল? বাপের মতো বলদ হতে হলো তোকে? ”

তিথি আর কোনো বাড়াবাড়ি করলো না।

আজলান মফিজ সাহেবের পাতে গরুর সলিড কষা মাংস তুলে দিচ্ছিলো। তিথি চুপ থাকতে পারলো না। বলে উঠলো,

” আরেহ আরেহ আমার আব্বা নরম নরম চর্বিগুলো খেতে পছন্দ করে। গমের বস্তার মতো মাংসগুলো খেতে অনেক সময় লাগবে। দাঁতগুলো সব পোকাদের খাইয়েছে। এখন কোনোকিছু চিবিয়ে খেতে পারেনা। তুমি ওসব তুলে দিওনা। ”

আজলানের চাহনি দেখে একেবারে চুপসে গেল সে। রমলা চাচী তা দেখে এগিয়ে এসে বললো,

” ওগুলো শক্ত না বউ। নরম আছে। খেতে পারবে।”

আজলান চোখ সরিয়ে নিল। তিথির নাকের পাতা কেঁপে উঠলো। রান্নাঘরে চুপচাপ হেঁটে চলে গেল সে। রমলা চাচী এসে বললো,

” বউ মন খারাপ করছো কেন? ”

তিথি বললো, ” আমি আমার আব্বার সাথে চলে যাবো চাচী। ”

” এমা কেন? কি হলো আবার? ”

তিথি রেগে বলল,

” আমাকে বের করে দেয়ার আগে আমি নিজেই বের হয়ে গেলে ভালো হবে না? ”

রমলা চাচী বললো,

” জানিনা বাপু। ”

আম্বিয়া বেগম এসে রান্নাঘর থেকে বাটি গেলেন। তিথিকে আঁড়চোখে দেখলেন কিন্তু কিছু বললেন না। তিথি বিড়বিড় করে বললো,

” এই বুড়ির বদনজর লাগছে আমাদের উপর। ”

মফিজ সাহেব যাওয়ার সময় তিথি ভীষণ কাঁদলো। বাবা চলে যাচ্ছে সেই কষ্টে নয় তার জন্য অপেক্ষা করা শাস্তির ভয়ে। মফিজ সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বললেন,

” কাল তোর মাকে নিয়ে আসবো। ”

আজলান বললো, ” চলুন। আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি। ”

মফিজ সাহেব বললেন, ” আমি যেতে পারবো বাপ। তুমি অনেক জার্নি করে আসছো সন্ধ্যায়। আরাম করো। ”

আজলান বললো, ” চলুন। আমারও কাজ আছে কিছু।”

তিথি তাকে ভেস্ট স্যুট হাতে নিয়ে বেরোতে দেখে ভয় পেয়ে গেল। আজ রাতে কি আর বাড়ি ফিরবে না? গাড়ির কাছে বহুকষ্টে ছুটে এসে আজলানকে শুনিয়ে শুনিয়ে মফিজ সাহেবকে বলল,

” আব্বা আম্মাকে নিয়ে সময়মতো এসো কেমন? আর তোমার জামাইকে সময়মতো বাড়ি পাঠিয়ে দিও। ”

আজলান গাড়ির হর্ন বাজালো। তিথি বললো,

” আব্বা আব্বা শোনো না, কাল আম্মাকে ওই শাড়িটা পড়ে আসতে বলিও। আমাদের কলপাড়ে যে মটু বিলাইটা পায়খানা করে আম্মাকে রাগিয়ে দিত ওটার গায়ের রঙের শাড়িটা। লাল কমলা রঙের শাড়ি পড়ে এলে কিন্তু বাড়িতে ঢুকতে দেব না। যদি তুষার না আসতে চায় ওকে বলবে তোর দুলাভাই এখন ভালো হয়ে গেছে। ”

শেষের কথাটা একটু ছোট করে বললো সে। আজলান গাড়ি ছেড়ে দিল। তিথি বললো,

“সবখানে ভিলেনগিরি দেখাবে শালা মদন। ”

______

আজলান বাড়ি ফিরে দেখলো তিথি ঝাল ঝাল শুঁটকি ভর্তা দিয়ে ভাত মেখে তৃপ্তির সাথে খাচ্ছে। নাকমুখ ঘেমে উঠেছে ঝালে। আজলানকে খেয়াল করেনি সে। ভাতগুলো দলা মেখে মেখে সাজিয়ে রেখে একটা একটা মুখে পুরছে। সবাই খেয়েদেয়ে উঠে গেছে ও এখনো খাওয়া শেষ করতে পারেনি। আজলানকে ঘরে যেতে দেখে দ্রুত খাওয়া শেষ করলো। ঘরে গিয়ে ব্রাশ করে হাতমুখ ধুয়ে ফেললো। হাত শুঁকে দেখলো। না শুঁটকির গন্ধ লাগছে না।

আজলান তার ভেজা কাপড়চোপড় গুলো ছাদ থেকে নিয়ে ঘরে এল। তিথি তাকে দেখামাত্রই বললো,

” আর কোনোদিন ফাটাকেষ্ঠ ডাকবো না, জীবনেও তোমার পাতে কিছু তুলে দেব না, খাওয়ার সময় দাঁতের পোকামাকড়ের কথা তুলবো না। ”

আজলান জবাব দিল না। তিথি বলল,

” কথা বলছো না কেন গো? আমার ব্যাথা শুরু হচ্ছে তুমি কিছু তো বলো। ”

আজলান বললো, ” বিছানা ঠিকঠাক করে রেখেছি। চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়ো। ”

তিথি শুয়ে শুয়ে আজলানের কাজ দেখতে লাগলো।
আজলান শুয়ে পড়তেই তিথি ওর হাতটা পেটের উপর টেনে নিল। বিগত দিনগুলোতে সে পেটের ব্যাথায় কেঁদেছে। আজ কাঁদেনি কারণ আজ বাবু ভালো হয়ে গিয়েছে। কারণ তার বাপ তার মাকে রেগেমেগে হলেও অনেকদিন পর অনেকক্ষণ ধরে আদর করেছে।

চলমান….