#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব-১৪(১)
#আরাদ্ধা_সাদাত_খান
– তোমাকে আমি প্রথমে এতিমখানায় দেখেছিলাম।রোজার মাসে একদিন বাচ্চাদেরকে নিয়ে ইফতারের উদ্দ্যেশ্যে গিয়েছিলাম।সেখানে দেখলাম একটা খুব মিষ্টি একটা মেয়ে আনমনে বারান্দায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।তুমি খুবই আদুরে ছিলে যা এখন পরিপূর্ণ নারী হওয়ার পরও তোমার চেহারায় লেপ্টে আছে। আসমা আপাকে জিজ্ঞেস করলাম,তোমার ব্যাপারে সব বলল।সাথে এটাও জানালো এই বছর তুমি এতিমখানা থেকে চলে যাবে।আর তুমি নাকি পড়াশোনায় প্রচন্ড ব্রাইট। আমার বাবার বাড়ি রাজশাহী হওয়ায় আমি প্রচুর রাজশাহী যেতাম।তখন আমার বাবা মা দুজনই ছিলেন।সময় পেলেই চলে যেতাম।আর ওই এতিমখানায় আমরা বরাবরই একটা বড় এমাউন্টের ডোনেশন দিতাম। মূলত আব্বা দিতেন। তিনি গত হওয়ার পর থেকে আমি আর ভাই দেই।যেটাই হোক, আসমা আপা এটাও বললেন তুমি নাকি বরাবরই একা থাকতে পছন্দ করো।কারো সাথে মিশো না।সেদিন আমি পরিচয় হতে গিয়েছিলাম আর একটা সালাম দিয়েছিলে খালি।ঠিকমতো তাকাও ও নাই।কিন্তু কোনো এক কারনে তোমাকে আমার মনে ধরে গেলো।তোমার খোঁজখবর নিতাম।আব্বা মারা যাওয়ার পর মা আমার সাথে থাকতেন। তাই আর রাজশাহী যেতাম না।এতিমখানার সাথে যোগাযোগ কমে গেলো।এরপর একদিন শুনলাম তুমি নাকি স্কলারশিপ নিয়ে বাহিরে চলে গেছো।আমার মনে হলো আমি মনে মনে যে নিয়ত করেছিলাম তা আর পূরণ হবে না।কিন্তু সবই খোদার ইচ্ছায় হয়।তুমি যে দেশে ফিরবে সেটা আসমা আপা জানালেন।আমি মিসেস রহমান কে প্রস্তাব দিলাম।হুট করে সব ঘটে গেলো।আমার ইচ্ছা পূরণ হলো।আরাদ্ধা আমাকে সব সময় ওর রুমমেটের কথা বলতো।সাথে সায়নের নামে বিচারও দিতো।সায়নকে ঝাড়ার পরও সে তার সাথে ঝগড়া করা ছাড়ে নাই।সেই মেয়েটা যে তুমি সেটা আমাকে আরাদ্ধা তোমাদের বিয়ের পরেরদিন জানালো।তারপর থেকেই আমার কেমন অপরাধবোধ হচ্ছে।
এতটুকু বলে জয়া থামলেন।রূপন্তীর মাথাটা নিচু করে কপালে একটা চুমু খেয়ে বললে,
– হুট করে এভাবে বিয়ে হওয়ায় তোমাদের বনিবনাটা না হওয়াই স্বাভাবিক। তবুও আমি বলবো তোমরা চেষ্টা করো।তবুও যদি আমার ছেলে ঘাওড়ামি করে, তাহলে তুমি সরে এসো।তাহলে আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবো।
রূপন্তীর চোখ ততক্ষনে অশ্রুসিক্ত হয়ে চকচক করছে। জয়া বেগম আদুরে কণ্ঠে বলল,
– কেঁদো না মা।সত্যি বললে তুমি সায়নের চেয়ে ভালো মানুষ অবশ্যই ডিজার্ভ করো।তবুও একটু চেষ্টা করো।বললাম না আমার ছেলে ঘাওড়া!তবে সে একবার যদি কিছু আকড়ে ধরতে পারে, শেষ পর্যন্ত সেটা সযত্নে আগলে রাখে।
রূপন্তী আর কিছু বলল না।তারা এতক্ষন রূপন্তীর ডাইনিং রুমের সাথে লাগোয়া একটা ছাদ আছে,সেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো। জয়া মূলত কয়েকটা গাছ লাগিয়ে দিয়েছেন সেখানে।রূপন্তী দুপুরে হাসপাতাল থেকে এসে মাকে কাজ করতে দেখলো।এরপর নিজেও হাত লাগালো।কাজের ফাঁকেই এতগুলো কথা হলো।
ওনারা আজ বিকেলে চলে যাবে।সায়ন একেবারে বিদায় দিয়ে সকালেই চলে গেছে। রূপন্তী এসেছে বিদায় জানাতে।বিকেলে আবার যাবে।
দুপুরের খাওয়া দাওয়ার মাঝেই সায়ন চলে আসলো।সে ছুটি নিয়ে চলে এসেছে। আর যাবে না।
বিকেলের দিকে তারিফ সাহেবরা চলে গেলেন।রূপন্তীর মনটা খারাপ হয়ে গেলো।রুহির জন্য সবচেয়ে খারাপ লাগলো।হাসপাতালে যাওয়ার কথা থাকলেও আর গেলো না।রেডি হলো মার্কেটে যাওয়ার জন্য। তাকে দেখে সায়নও বলল সাথে যাবে। তার নাকি শার্ট কেনা লাগবে।
দুজনে মিলে গাড়িতে উঠার পর রূপন্তী জিজ্ঞেস করলো,
– আরিশা যোগাযোগ করেছে তোর সাথে?
– হ্যা। আমি কল একবার ধরে ব্লকলিস্টে ফেলে দিয়েছি। মেসেজ ও সিন করি নাই।দেখা করতে চায়। কিন্তু আমি চাই না।দূর্বল হয়ে পড়বো।কিন্তু কোনো বেইমানকে আর ফিরিয়ে আনতে চাইনা।
রূপন্তী মনে মনে হাসলো।কি সুন্দর বউয়ের কাছে বলছে দেখা হলে আবার দূর্বল হয়ে পড়বে।আহারে কপাল!
মলে ঢুকে মাত্র নিচ তলা ঘুরছে, তখনই কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে সায়নকে জড়িয়ে ধরলো।আকস্মিক ঘটনায় সায়ন, রূপন্তী দুজনই বেকুব হয়ে গেলেও মেয়েটাকে চিনতে ভুল করলো না।
আরিশা!!!!!!
সায়ন তাকে না দেখতে চাইলেও কপালের দোষে দেখা হয়ে গেলো।
আরিশা খুবই অস্থির হয়ে বলল,
– তোমাকে আমি কতদিন ধরে খুঁজছি। সায়ন, আমার জীবন পুরোটা উলোটা পালোট হয়ে যাচ্ছে। আমার সাথে আসো।অনেক কথা আছে।
বলে সায়নকে সাথে নিয়ে মুহুর্তের মাঝে অদৃশ্য হয়ে গেলো। রূপন্তী সেখানেই বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে রইলো।সে সংসার বাঁচানোর চেষ্টা কি করবে, তার আগেই তো সব ডুবে গেলো!
#চলবে।
#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব-১৪(২)
#আরাদ্ধা_সাদাত_খান
দরজার সামনে আরাদ্ধাকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন টিপতে দেখে অবাক হলো রূপন্তী। গতকালই না দেখা হল?আজ আবার কি হয়েছে?
আরাদ্ধা রূপন্তীকে দেখতেই শ্রাগ করে উঠলো,
– বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে না দেখে দরজাটা খুল।বিশ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি।আর তোর ফোন কই?কল দিতে দিতে পাগল হয়ে গেছি।
রূপন্তী কোনোমতে গলা ঝেড়ে বলল,
– ফোন মনে হয় সাইলেন্ট,খেয়াল করি নাই।
বাসায় ঢুকে আরাদ্ধাকে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।সায়ন যাওয়ার পর সে কেনাকাটা করে তারপর এসেছে।এখন রাত আটটা বাজে।সায়ন এখনো আসেনি।কি জানি পুরনো প্রেমিকাকে ফিরে পেয়ে ঘোরাঘুরি শুরু করলো নাকি!
আরাদ্ধাকে বিছানায় বসিয়ে সে আগে ফ্রেশ হয়ে আসলো।তারপর নিজেও আরাম করে বসে জিজ্ঞেস করলো,
– হঠাৎ এলি যে?এমনেই নাকি কোনো কাজে?
-তোর জামাইকে সাইজ করতে আসছি।
– কেন?
আরাদ্ধার বিরক্তির সুরে বলল,
– আরেহ,এই আরিশাটা একদম জ্বালিয়ে মেরে ফেললো।তার নাকি সায়নকে খুব দরকার!আমি বারবার বললাম সায়ন সবেমাত্র বিয়ে করেছে, এখন নতুন বউকে নিয়ে ব্যাস্ত। সে সেটা শুনলোই না।সায়ন নাকি ওর জীবন-মরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আসলাম তোর জামাইকে ভালোমতো বুঝিয়ে যেতে।সে যেনো কোনোভাবেই আরিশার সাথে যোগাযোগ না করে।কখন আসবে ও? আর তুই বা এই অসময়ে হাতে ব্যাগ পত্র নিয়ে কোথা থেকে এলি?
রূপন্তী নিজের দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলল
– এবার এসে এতিমখানার একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে।খুবই সুইট একটা মেয়ে!এ বছর বেড়িয়ে আসতে হবে।আমাকে খুব রিকুয়েষ্ট করলো আমি যাতে তাকে কোনো একটা কাজ খুঁজে দেই৷ নারায়নগঞ্জের একটা গার্মেন্টসে কথা হয়েছে। সেখানে ঢুকিয়ে দিবো।ন্যাশনাল ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে একটা গার্লস হোস্টেল উঠিয়ে দিবো।আমি সামনের মাস থেকে ওইদিকের একটা হসপিটালে বসবো প্রতি শনিবার।মাঝে মধ্যে দেখা করে আসবো।ওকে এই মাসের শেষে নিয়ে আসবো।মূলত ওর জন্যই কিছু কেনাকাটা করেছি।
– ওহ!সায়ন কখন আসে?
রূপন্তী একটু চুপ থেকে বলল,
– ও তো আরিশার সাথে।
আরাদ্ধা লাফিয়ে উঠে বলল,
– মানে কি?!ওকে আমি গতকাল ফোনেও বারবার মানা করে দিয়েছি,তবুও?
-আরিশা মনে হয় যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলো।কিন্তু সায়নের ভাষ্যমতে সে নাকি রেস্পন্স করে নাই।
রূপন্তী তারপর শপিংমলের কাহিনী বলল।সব শুনে আরাদ্ধা এবার ঠান্ডা গলায় বলল,
– এজন্য চোখ মুখ এমন ফুলে লাল হয়ে আছে?
রূপন্তী ধরা খেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।আরাদ্ধাও আর কিছু বলল না।ফোন বের করে সায়নকে কল করলো।চারবারের একবারেও ধরলো না।আরাদ্ধ বিড়বিড় করতে করতে বলল,
– জামাই বউ দুইটা একই রকম হয়েছে!
রূপন্তী সেটা শুনতে পেলো।কিছু বলল না।উঠে গেলো চা বানানোর উদ্দ্যেশ্যে।
.
সায়ন আসলো নয়টার সময়।মুখটা থমথমে। সে সরাসরি রূপন্তীর রুমে এসে ওয়াশরুমে ঢুজে দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে দিলো।পুরো ব্যাপারটা বাকি দুইজনের মাথার উপর দিয়ে গেলো।তারা এটাই বুঝলো না রাগটা কার উপর দেখালো।এর মাঝেই সায়ন বাথরুম থেকে চিৎকার দিয়ে বলল,
– রূপ, আমার লাগেজ থেকে একটা টিশার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে আয়।
রূপন্তীও সুযোগের সৎ ব্যাবহার করলে।ভেঙিয়ে উত্তর দিলো,
– এহ! টিশার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে আয়!পারবো না।আমি কি তোর চাকর?
সাথে সাথে সায়নের উত্তর এলো,
– তোর সামনে টাওয়াল পড়ে বের হলে আমার কিংবা তোর, কারোরই গুনাহ হবে না।কিন্তু সাথেরটার হবে।আমি চাইনা আমার বোন তোর জন্য গুনাহের ভাগীদার হোক।নিজের বেস্টির কেয়ার করলে আমার জামা কাপড় এনে দে।
দুজনের কেউই কিছু বলার পেলো না আর।রূপন্তী উঠে গিয়ে জামা কাপড় এনে দিলো।তারপর গেলো সায়নের জন্য চা আনতে।এর মাঝেই সায়ন বেরিয়ে আসলো।তারপর ধুপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।রূপন্তী তখন চা এনে দিলো।
পরিবেশ একটু স্বাভাবিক হওয়ার অর আরাদ্ধা সায়নের দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
– তোকে এত বার বলার পরও তুই আরিশার সাথে গেলি কেন?এতক্ষন নিশ্চয়ই ওর সাথে ইটিশপিটিশ করে এসেছিস?!
সায়ন তড়াক করে লাফিয়ে বসলো।রাগে তার চেহার লাল হয়ে গেছে।সে চেতে গিয়ে বলল,
– খবরদার ওই শাঁকচুন্নির নাম নিবি না।
রূপন্তী ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
– কেন কী হয়েছে?
সায়ন ফোস করে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল,
– শালি’র জামাই আজ আরেকটু হলে আমাকে মেরে ফেলতো।
আরাদ্ধা ভেংচি কেটে বলল,
– তো ফেলবে না?ব্যাটার বউরে নিয়ে ঘুরছিস। তোরে তো খুন করে ফেলা উচিৎ।
– কিন্তু আমি তো কিছু করি নাই।
– তুই গেলি কেন?আর আরিশাই বা এত পাগল হয়ে গেছে কেন?
– কারন ওর সংসারে আগুন লাগিয়েছে।ওর ভাষ্যমতে আগুনটা নাকি আমি লাগিয়েছি।।
আরাদ্ধা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
– কীভাবে?
সায়ন এবার একটু মিইয়ে গেলো।তারপর আমতা আমতা করতে করতে বলল,
– আসলে আমদের ফোর্থ লাভ এনিভার্সেরিতে আমি ওকে একটা কাবিননামা দিয়েছিলাম।অরিজিনাল না। আমি প্রিন্ট করিয়েছিলাম।সেখানে আমাদের সাইনও আছে। সেটা ওর জামাই কিছুদিন আগে খুঁজে পেয়েছে।তারপর থেকেই ওর সংসারে আগুন ধরে গেছে। আমাকে এজন্য খুঁজছিলো।আজ আমাকে পাওয়ার পর ধরে বেঁধে জামাইয়ের কাছে নিয়ে গিয়েছিলো।বহুত কষ্টে তাকে বুঝিয়েছি।
রূপন্তী শুরুতেই ‘লাভ এনিভার্সেরু’ শুনে চা মুখে নিয়ে বিষম খেয়েছিলো কিন্তু কাশতে ভুলে গিয়েছিলো।এখন পুরো কাহিনী শুনে সে এক দবা কেশে নিলো।আরাদ্ধা স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো।
টিক টিক করে সেকেন্ডের কাটা পাচ বার যেতেই পুরো ঘর রিনিঝিনি হাসিতে ভরে উঠলো।ওরা দুজন পারে না হাসতে হাসতে ফ্লোরে গড়াগড়ি খায়।
সায়ন আর কি করবে?! অসহায় চোখে মেয়ে দুইটার দিকে তাকিয়ে রইলো।
#চলবে।
#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব-১৫
#আরাদ্ধা_সাদাত_খান
আরাদ্ধাকে খেয়ে যাওয়ার জন্য বললেও সে রাজি হলোনা।তার জামাই তার জন্য অপেক্ষা করছে,তাকে বাসায় যেতেই হবে।রূপন্তী কিংবা সায়ন আর জোরাজুরি করলো না।আরাদ্ধা চলে যাওয়ার পর দরজা লাগিয়ে এসে সায়নকে তখনো নিজের বিছানায় বসে থাকতে দেখলো রূপন্তী।বসে বসে ফোন টিপছে।রূপন্তী তখন গলা ঝেড়ে জিজ্ঞেস করলো,
– খাবি না?
– হুম খাবো।
– আয় তাহলে।
রূপন্তী খাবার বাড়ার মাঝেই সায়ন এসে বসলো।দুজনেই বেশ তৃপ্তি নিয়ে খেলো।সায়ন খাবারের শেষ ভাগ খেতে খেতে বলল,
– তুই রান্না ভালো পারিস। যাক একটা ভালো গুণ পাওয়া গেলো।
রূপন্তী উত্তরে কিছু না বলে বিড়বিড় করে বলল,
– খুঁজে দেখলেই আরো গুন পাবি।কিন্ত তুই তো আমাকে ভালোমতো খেয়ালও করিস না।
সায়ন ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,” কিছু বললি?”
রূপন্তী মাথা নাড়লো।
খাওয়া শেষে সব গুছিয়ে রুমে এলো।তার পড়া শুরু করতে হবে।সেটার খোঁজ খবর নেওয়ার জন্যই ল্যাপটপ হাতে নিয়ে বিছানায় বসলো।ঠিক সেই মুহুর্তেই সায়ন ওর রুমে আসলো।রূপন্তীর ওর দিকে তাকাতেই কোনো একটা কারনে হাসি পেয়ে গেলো।বেচারা কি ধরাটাই না খেলো।সায়ন ওর দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকাতেই ও হাসতে হাসতে বলল,
– তুই প্লিজ আমার সামনে আসিস না। তোকে দেখলেই আমার তোর বেকুবির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে আর হাসি পাচ্ছে।
সায়ন বিরক্তিকর চেহারা নিয়ে ওর সামনে আসে বসলো।তারপর কাছ থেকে ল্যাপটপটা নিয়ে স্ক্রল করতে করতে বলল,
– কালকে কোনো একটা জরুরি কথা বলতে চেয়েছিলি।এখন ফটাফট বলে দে কি জরুরি কথা।
রূপন্তীর হাসি থেমে গেলো। হুট করেই চুপ হয়ে গেলো।সায়ন একটু অবাক হলো।ওর দিকে তাকিয়ে আবার বলল,
– বল?
রূপন্তী একটু ইতস্তত করে নিচু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
– তুই কি ভেবেছিস?
– কি নিয়ে?
রূপন্তী তখন সরাসরি সায়নের দিকে তাকালো।চোখের দৃষ্টি শক্ত করে জিজ্ঞেস করলো,
– আমাদের সম্পর্কটা নিয়ে।
এবার সায়নও গম্ভীর হয়ে গেলো।কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,
– তুই কি চাস?
রূপন্তী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
– আমার চাওয়া না চাওয়া দিয়ে যায় আসে না।আমি বরাবরই অন্যের কথায় চলেছি।শুধুমাত্র পড়াশোনার ক্ষেত্রে নিজে শক্ত ছিলাম বলে আজ আমি মুক্ত। কিন্তু তোর সাথে সম্পর্কটাকে তো অস্বীকার করতে পারবো না।তাই তুই যদি মেনে নিতে চাস আমার সমস্যা নেই,যদি ছেড়ে দিতে চাস সেটাতেও আমার সমস্যা নেই।ইটস অল আপ টু ইউ।
সায়ন কিছু একটা ভাবলো।তারপর বলল,
– দেখ, সেপারেশন এমনেও পাঁচ মাসের আগে হবে না।এই কয়দিন আমাদের একসাথেই থাকতে হবে।আপাতত যেভাবে চলছে চলতে দে।তবে তুই যদি ভালো কাউকে পেয়ে যাস,দেন ইউ ক্যান ডেট হিম।কারন আপাতত আমি সেপারেশনের নিয়তেই আছি।
কথাগুলো শেষ করে রূপন্তীর দিকে তাকালো।চেহারাটা কি একটু মলিন হয়ে গেছে?
ল্যাপটপ রেখে উঠে দাঁড়ালো সে।রুম থেকে বের হওয়ার আগে বলে গেল,
– তোর প্রতি কখনোই আমার অন্যরকম ফিলিংস আসে নাই।তোর এটিটিউডের জন্য তোকে খুব বিরক্ত লাগতো আমার।এজন্য তোকে প্রচুর বুলি করতাম।আর এখন সেসব ব্যাপার না থাকলেও আমাদের সম্পর্ক থেকে আমার মনে হয়, উই আর মোর লাইকলি টু বি ব্রাদার্স, নট হাজবেন্ড-ওয়াইফ। সো বেটার তুই আমার কাছ থেকে এসব এক্সপেক্ট না করিস তো।
শেষের কথাটা স্পষ্ট ভাবে নিজের মানে বুঝিয়ে দিলো।সায়ন চলে যাওয়ার পরও রূপন্তী একইভাবে বসে রইলো।চোখগুলো জ্বলছে। তবে চোখে পানি আসতে দিলো না।বুকের মাঝের দহনটাকে সেখানেই চেপে রাখলো।উঠে সব ঠিক করে লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়লো।ঘুমানোর চেষ্টা করার সময় ঠিক ঠিক মনের আক্ষেপ বেরিয়ে আসলো।তার ভেতরটা যেনো হাহাকার করে বলছে,
– একটু চেষ্টা করে দেখলেও পারতি সায়ন। বেশি না,সামান্য ভালোবাসা পেলেই আমি জীবনটা কাটিয়ে ফেলতে পারতাম।
পরমুহুর্তেই সে নিজেকে নিজে তিরষ্কার জনালো,
– ও বুঝে গেছে যে তুই ওর প্রতি দূর্বল।সেজন্যই ওর কাছে থেকে এক্সপেক্ট করতে মানা করেছে। ও তোকে চায় না রে মেয়ে, চায় না!
ভারী বুক নিয়ে অনেক্ষন ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করলেও পারলো না।শেষমেশ না পারতে উঠে বসলো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত দেড়টা বাজে।পা টিপে টিপে নিজের রুম থেকে বের হলো।চারিদিকে সব নীরব।আস্তে আস্তে ছেলেটার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।লক ঘুরিয়ে চেক করলো খোলা নাকি বন্ধ।আস্তে আস্তে ঘুরাতেই বুঝতে পারলো খোলা।দরজাটা হাল্কা ফাঁকা করলো।বাহিরের স্ট্রিট লাইটের আবছা আলোয় দেখতে পেলো লম্বা শরীরটা বিছানায় এলানো।কানে এলো ভারি নিশ্বাসের শব্দ। আস্তে আস্তে রুমে ঢুকে বিছানার পাশে দাঁড়ালো।কি শান্তির ঘুম!
যেই কাজের লোভে এসেছে সেটা করেই ফেললো।কপালের এলোমেলো চুল গুলো শরীয়ে হাত বুলালো।তারপর টুপ করে গভীর স্পর্শে একটা চুমু খেলো।নাকের ডগায়ও ছোট্ট করে চুমু খেলো।মন্ত্রমুগ্ধের মতো মুখটার দিক তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন।তারপর যেভাবে দম বন্ধ করে এসেছিলো, সেভাবে আবার বেরিয়ে এলো।নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো,যদি একটু ঘুমাতে পারে সেই আশায়!
.
তিনদিন পর সায়ন বসে বসে পেশেন্টের ফাইল চেক করছে,সেই সময় রূপন্তী এলো।হাতে ল্যাপটপ। এসে ল্যাপটপটা সায়নের সামনে রাখলো।সায়ন স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো অনেকগুলো গাড়ির মডেল দেখা যাচ্ছে।প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে রূপন্তীর দিকে তাকাতেই বলল,
– কোন মডেলটা ভালো হবে?
– কেন?
– কিনবো।
সায়ন হা করে ওর দিকে তাকালো।তারপর জিজ্ঞেস করলো,
– তুই গাড়ি কিনবি?
– হুম।
-টাকা আছে?
– হুম, কিছু আছে। তাছাড়া লোন নিবো।
– কিন্তু তোর তো গাড়ি লাগে না।তোর হসপিটালও তো বাসার পাশেই।
– হ্যা। কিন্তু আমি এখন থেকে প্রতি শনিবার ঢাকার বাইরে যাবো।নারায়নগঞ্জের একটা হাসপাতালে বসবো।
সায়ন মিনিটখানেক কিছু একটা ভাবলো।তারপর ল্যাপটপটা পাশে সরিয়ে রেখে বলল,
– আমার গাড়ি নিয়ে যাইস।
রূপন্তী আপত্তি করে বলল,
– সেটা কিভাবে সম্ভব?তোর তো লাগে। তাছাড়া সেপারেশনের পর তো লাগবেই।
সায়ন কাজে মনযোগ দিয়ে বলল,
– পরেরটা পরে দেখা যাবে।টাকা জমাতে থাক ততদিন। এখন জ্বালাস না আমাকে।ভাগ!
অগত্যা রূপন্তী নীরবে প্রস্থান করলো।
.
সায়ন আর রূপন্তীর বিয়ে হয়েছে আগস্ট মাসের সাত তারিখ।চোখের পলকে মাসের শেষ দিন চলে এলো।এই কয়দিন তার ব্যাস্ত ছিলো নিজেদের পড়াশোনা, ঝগড়াঝাটি,খুনশুটি নিয়ে। তবে রূপন্তী ইদানীং খুব কম লাগে সায়নের সাথে। সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো লাগে সায়নের প্রতি রূপন্তীর কেয়ার।সব একদম হাতের কাছে এনে দেয় মেয়েটা।।
রূপন্তী আজ ভোরেই রাজশাহী গেছে। ফিরতে ফিরতে আগামীকাল রাত হবে।সায়ন আজ পুরা একা।রাতে বাসায় এসে ডিনার করার সময় রূপন্তীর অভাব বোধ করলো।তাও মেয়েটা রান্না করে খাবার ফ্রিজে রেখে গেছে বলে রক্ষা। ওভেনে গরম করে তা খেয়ে নিলো।
আসল ধাক্কাটা খেলো সে ঘুমানোর সময়। যখন সে অনুভব করলো কপালে মিষ্টি স্পর্শটা ছাড়া এবং নরম হাতের ছোয়া ছাড়া তার ঘুম আসবে না।
উঠে বসলো।প্রচন্ড অস্থির লাগছে বেয়াদব মেয়েটা তার সব অভ্যাস বদলে দিয়েছে।বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। নিকোটিনের ধোয়া উড়াতে উড়াতে গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত হলো।নিজেকে প্রশ্ন করলো,
– আমি কি নিজের গোড়ামিতে অটল থাকতে বেশি বেশি করে ফেলছি?!
নিজেই নিজেকে উত্তর দিলো,
– না।
সাথে সাথে মস্তিষ্ক প্রশ্ন করলো,
– তবে তুমি মাঝরাতে বিছানায় শুয়ে ঘুমানোর বদলে অস্থির হয়ে বারন্দায় দাঁড়িয়ে ধোয়া উড়াচ্ছো কেন?
#চলবে।