এক ফালি প্রণয় পর্ব-০২

0
16

#এক_ফালি_প্রণয়|২|
#শার্লিন_হাসান

“কী দেখলি তো? বললাম না তূর্ণ ভাইয়ের থেকে পূর্ণ ভাই এক ধাপ উপরে।”

“হ্যাঁ বুঝলাম।”

“হ্যাঁ রে বোকা মেয়ে। এভাবেই আস্তে,আস্তে আমার ভাইয়ের মন জয় করবি। তারপর তোকে আমার ভাবী বানিয়ে শিকদার বাড়ীতেই রেখে দেবো। দূরে যেতে দেবো না।”

“অন্য কেউ হলে ভেবে দেখতাম। বাট পূর্ণ ভাই জীবনেও না।”

“দেখবি এই পূর্ণ ভাইয়ের প্রেমেই হাবুডুবু খেয়ে ডুবে গেছিস।”

“রোদ ওতোটাও আবেগী না।”

“প্রেম কিন্তু বলে কয়ে আসে না জীবনে।”

“আসলেও তাড়িয়ে দেবো।”

রোদের কথায় তিশা হাসে। সে তো দুষ্টুমি করেছে। জানে রোদের দ্বারা সম্ভব না আর তার ভাই তো জীবনেও না। অসম্ভব ব্যপার নিয়ে মজা করতে ভালোই লাগে। যেটা কোনদিন সম্ভব হবে না।

শারমিন আঞ্জুমের ডাকে সবাই এক গুচ্ছে খাবার টেবিলে যায়। পূর্ণ,তূর্ণ,শূন্য থেকে শুরু করে রোদ,তিশা,শিশা ও আছে। আজকে পূর্ণর মন ফুরফুরে। সবাই একসাথে খেতে বসে। তূর্ণ তদারকি করছে খাবারের। তবে পূর্ণর করলা ছাড়া হয়না। প্রতিদিন লান্স অথবা ডিনারে তার করলা ভাজি চাই। নাহলে তাঁদের কাজিন মহলে কেউই করলা পছন্দ করে না। খেতে বসেও, তিশা,শিশা,শূন্য,রোদ তারা কথা বলছে। তখন পূর্ণ ধমকে বলে, “খাবার খেতে বসে কিসের এতো কথা তোদের? চুপচাপ খাবার খেয়ে রুমে গিয়ে বসে কথা বলবি।”

“করলা ভাজি খেতে না খেতে তেঁতো গিরি শুরু হয়ে গেছে।”
মাঝখান দিয়ে রোদ কথাটা মেরে দেয়। বাকীরা খুশি হয়ে রোদকে বাহবা দিলেও তূর্ণ শব্দ করে হেসে দেয়। পূর্ণ রোদের দিকে কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। তাতে রোদ ফিরেও তাকায় না। আশেপাশে তাকায়,নিজের প্লেটের দিকে তাকায়। রোদ পূর্ণর কঠোর দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে, বিষয়টা নোট করেছে পূর্ণ। বাকীরা তাঁদের মতো গল্প করতে থাকে। পূর্ণ পুনরায় শুধায়, ” আমি যে কিছু বলেছি কারোর কানে যায়নি? আমার সাথে খেতে বসলে কোন কথা বলা যাবে না।”

তখন তূর্ণ বলে, “তোর তো খাওয়া শেষ। যা রুমে গিয়ে ঘুমা। ওরা কথা বলবেই এটা ওদের অভ্যাস।”

“ভাইয়া তুই ও? নিশ্চয়ই এরা ঘুষ দিয়ে ওদের দলে টেনে নিয়েছে।”

“আহা ঘুষ দেওয়া লাগে নাকী? একটা মিষ্টি হাসিই তো যথেষ্ট।”

“কার মিষ্টি হাসি?”

ব্রু কুঁচকায় পূর্ণ তখন তূর্ণ বলে, “ওদের চারজনের।”

“ওহহ্!”

“তুই কী ভেবেছিস?”

“না কিছু না।”

*********

একটা সুন্দর সকালে রোদ ছাঁদে পা রাখতে কানে ভেসে আসে কিছু কথা। ছাঁদের এক কোণে দাঁড়িয়ে পূর্ণ কারোর সাথে কলে কথা বলছে। তাও খুবই মিষ্টি সুরে। পূর্ণর মিষ্টি সুরের কথা রোদের কাছে অবিশ্বাস্য লাগলো। তাতে তার কী? সে তো এসেছে ঠান্ডা বাতাস আর সকালের শহরটা দেখতে। লোকের তেমন সমাগম নেই। রোদ ছাঁদে পা বাড়ায়।

” দেখো তুমি এখনো ছোট। বয়স কম, বুঝদার ও কম। এখন তোমার পড়াশোনা করার সময়। আর তোমার যখন প্রেম,বিয়ের সঠিক সময় হবে তখন আমিই ছেলে খুঁজে দিবো তোমায়। অযথা আমায় জ্বালিয়ে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। আমি ইমপ্রেস হবো না।”

কথাটা বলে কল রেখে রোদের কাছে যায় পূর্ণ। পেছন থেকে গম্ভীর কন্ঠে শুধায়, “রোদ শোন?”

রোদ ঘুরে তাকাতে পূর্ণ বলে, “আমাকে কেমন লাগছে বলো তো?”

পূর্ণর কথায় রোদ ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে, “পূর্ণর মতো লাগছে।”

“পাগ’ল মেয়ে আমিই তো পূর্ণ।”

“তো?”

“আমায় কেমন লাগছে?”

“ভাল..লো।”

“সুন্দর ভাবে ভালো করে দেখে বলো?”

রোদ পূর্ণর চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। পূর্ণর ঠোঁটে হাসি জুলছে। রোদ কিছুই বুঝতে পারছে না। হুট করে কী হলো পূর্ণর? যে রোদের আশেপাশে ও ঘেঁষে না সেই এখন আসে নিজ থেকে কথা বলতে। তখন পূর্ণ ধৈর্য হারা হয়ে বলে, “কী মেয়েরে তুই? জীবনে ছেলে দেখিসনি? একটা কথা বলতে এতো সময় লাগে? ধুর! তিশাকে ডেকে আন তো?”

“ও ঘুমাচ্ছে।”

“আচ্ছা বলতো আমি প্রেমিক মেটারিয়াল নাকী হাজবেন্ড মেটেরিয়াল?”

“আমি জানি না। আমি আসছি।”

কথাটা বলে রোদ চলে আসে। পূর্ণ তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। মেজাজ টা গরম হয়ে যায় তার। সে কী এখন বিয়ে করবে নাকী? তূর্ণই তো বিয়ে করলো না। আর প্রেম করবে নাকী? সে একজন সদ্য নতুন মেয়র। মেয়েরা লাইন মারছে তাই নিজেকে একটু যাচাই-বাছাইয় করার জন্য রোদকে জিজ্ঞেস করলো। বাকীরা হলে পঁচাইতো তাকে। জানে রোদ কিছু বলবে না তাই তো আগ বাড়িয়ে কথা বলতে গিয়েছে। নয়তো পূর্ণর বয়ে গেছে।

রেডি হয়ে সকালের নাস্তা করতে,করতে পূর্ণর ছেলেপেলেরা কয়েকজন হাজির হয় তার বাড়ীতে। পূর্ণ সাদা পান্জাবির হাতা গোটাতে,গোটাতে বেড়িয়ে পড়ে।
নিসাধের দখল করা জায়গাটায় যায় পূর্ণ। জায়গার আসল মালিক ও আসে। পূর্ণকে দেখে বেশ খুশি হোন শাহীন আহমেদ। পূর্ণ তাকে আশ্বাস দিয়ে বলে, ” চিন্তা করবেন না। এখানে বিল্ডিং উঠিয়ে দিবো আমি। আপনি সেটার দোকান ভাড়া দিতে পারবেন। অন্যরাও কাজ করার সুযোগ পাবে।”

লোকটার চোখেমুখে খুশির জ্বলক দেখে পূর্ণ মুচকি হাসে। সেখানের কাজ শেষ করে পূর্ণরা একটা নিরিবিলি জায়গায় যায়। তখন তিশার কল আসে। রিসিভ করতে ওপাশ থেকে উত্তেজিত স্বরে তিশা বলে, “ভাইয়া তাড়াতাড়ি আসো। আজকে তূর্ণ ভাই আমাদের ট্রিট দিবে।”

“কেনো ট্রিট দিবে?”

“আরে আসো। সুখবর আছে।”

“কোথায় আসবো?’

” আরে আমাদের ভার্সিটির পাশের রেস্টুরেন্টে।”

“আসছি।”

পূর্ণ বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। আজকে তার ভাইকে পেয়েছে এই সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবে না। সবসময় তো তার টাকা গুলো মা’রা দেয়। পূর্ণ যেতে,যেতে দেখে বাকীরা সবাই হাজির। এমন ভাবে অপেক্ষা করছে জেনো পূর্ণ তাদের ট্রিট দিবে। তূর্ণ নিজেও এমন ভাবে বসে আছে জেনো তার টাকাগুলো আজকে যাবে না। যাবে পূর্ণর টাকা। ওদের ভাবসাব পূর্ণর সন্দেহ জনক লাগে। তখন শূন্য বলে,
” ওয়েল কাম, এতোক্ষণ তোমার অপেক্ষায় ছিলাম আমরা।”

“খাবার অর্ডার দিচ্ছিস বা কেনো? আজকে কিন্তু বেশী বেশী। তূর্ণ ভাইকে পেয়েছি সুযোগ ছাড়া যাবে না।”

তখন তূর্ণ পূর্ণর পিঠে চাপড় মেরে বলে, “সে নাহয় দেওয়া যাবে। আগে রিলেক্স হয়ে বোস।”

তিশা,শূন্য মিলে সব অর্ডার দেয়। অল্পস্বল্প গল্প করার মাঝে তাদের খাবার আসে। খাওয়ার শেষ পর্যায় আসতে রোদের গলায় খাবার আটকে যায়। তিশা তাকে নিয়ে বাইরে যায়। তূর্ণ তখন শূন্যকে আদেশ করে বলে, “যা তো দেখ ওর কী হয়েছে? বসে আছিস কেনো?”
তূর্ণর কথার সাথে,সাথে শূন্য চলে যায়।

তখন পূর্ণ বলে, ” কী আর হবে? এক্সট্রা ঢং। এই মেয়েটার ঢংয়ের শেষ নেই।”

“মুখ সামলে পূর্ণ।”

“তো এর থেকে আর কী ভালো ভাবে বলবো আমি? এই মেয়েটা আমার বাবার খু’নি।”

“পূর্ণ বাচ্চা হইয়ো না। তুমি মনে হয় তোমার স্ট্যটাস ভুলে গেছ। ফুফির কোম্পানির মালিক রোদ। যেটা আমরা সামলাচ্ছি।”

“তোহ্?”

“তো কী আবার? তুমি ওর সাথে বা’জে বিহেভ করবে না।”

“তোমার কাছে বাবার থেকে ওই মেয়েটা বেশী ইমফরটেন্ট? ”

“আমি কখন বললাম?”

“তাহলে বাবার খু’নির প্রতি তোমার দরদ আসে কোথা থেকে?”

“সেসব অতীত। দেখ এই মেয়েটার পেছনেও ওর ভাইরা পরে আছে। শুধু প্রোপার্টি আর কোম্পানি নিজেদের নামে করার জন্য।”

“তাতে আমার কী?”

“ওকে ফাইন। তুমি আর কখনো রোদ নিয়ে মাথা ঘামাবো না। ও ম’রে গেলেও কোন মন্তব্য করার দরকার নেই তোমার।”

“ওকে যদি কেউ আমার সামনে খু’ন ও করে তবুও আমি বাঁধা দিবো না।”

“ওকে ফাইন।”

দুই ভাইয়ের তর্কাতর্কির মাঝে তিশা রোদকে নিয়ে আসে। মেয়েটা চোখমুখ লাল হয়ে আছে। পূর্ণ রোদকে আসতে দেখে উঠে চলে যায়। তূর্ণ বিল পে করে দেয়। তিশা,রোদ,শূন্য তাকিয়ে আছে তাঁদের কান্ডে। তারা তো প্লান করে এসেছে। আজকে পূর্ণর টাকা লস করবে। কিন্তু পুরোটাই উল্টো হলো। বাকীরা বাইরে আসতে,আসতে পূর্ণ চলেও গেছে। আর কেউই কিছু বলেনি। গাড়ীতে বসতে তূর্ণ শিকদার ভিলার দিকে রওনা হয়। তখন তিশা তূর্ণকে বলে, “পূর্ণ ভাইয়ের আবার কী হলো?”

“ওর কথা ছাড়ো তিশা। ও এমনই! ওকে সত্যি আমি বুঝতে পারিনা।”

কেউই কথার আগা মাথা বুঝেনি। সেজন্য কথাও বাড়ায়নি। বাড়ীতে এসে পূর্ণ তার রুমে এসির পয়েন্ট বাড়িয়ে বসে থাকে। রাগে তার শরীর কাঁপছে। এই মূহুর্তে রোদকে কষিয়ে কয়টা থাপ্পড় মারতে পারলে হয়ত রাগ কমে যেতো । রুম জুড়ে পায়চারি করছে পূর্ণ। এই রোদে নামের থাকা কোম্পানি আর প্রোপার্টি রোদকে দিয়ে বাড়ী থেকে বিদায় করে দিলেই তো হয়। মেয়েটা থাকা মানে আরেকটা রিস্ক। কখন তার বংশের মানুষ এসে হামলে পড়ে। প্রোপার্টি নিয়ে চলে গেলে, তার গুলো যা খুশি হোক। তাতে পূর্ণর যায় আসে না।

হাজারে চিন্তা ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খায় পূর্ণর। পরক্ষণে মনে পড়ে তার বাবাকে দেওয়া কথা। পূর্ণর মাথায় আপনা আপনি হাত চলে যায়। তূর্ণ সে তার দায়িত্ব পালন করছে কঠোর ভাবে। পূর্ণ তার ছিটেফোঁটা তে ও নেই। আর কেনই বা রোদকে নিয়ে মাথা ঘামাবে? সে তো তার মৃ’ত বাবার খু’নি। অথচ এই বাবাই রোদকে আগলে রাখার,দায়িত্ব নেওয়ার,সুখ দুঃখে পাশে থাকার জন্য বলে গেছে।

#চলবে