#এক_ফালি_প্রণয়|২২|
#শার্লিন_হাসান
“আমার প্রাক্তন হলো কীভাবে? তার সাথে কী আমার ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো? উঁহু! তাকে আমি ভালোবেসেছি, ভালোবাসার সম্পর্ক গড়িনি।”
“যেই লাউ সেই কদু।”
“না বুঝলে কথা বলবি না।”
তেজী স্বরে বলে তূর্ণ। শূন্য আর কথা বাড়ায়না। সকালের নাস্তা শেষ করে রোদ,মেহের,তিশা তারা সিনথিকে নিয়ে তৈরী হতে চলে যায়। আজকে ওদের বৌভাতের অনুষ্ঠান।
সিনথি শাওয়ার নিয়ে বের হতে তূর্ণ রুমে প্রবেশ করে। তূর্ণর এমন আগমনে সিনথি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। গায়ে তার ওরনা নেই। তূর্ণ দৃষ্টি নিচের দিকে স্থির করে শুধায়, “টেবিলের উপর আমার ফোনটা একটু যদি দিতেন।”
“আপনি করে বলছেন কেন? তুমি করে বললে ফোন পবেন নাহলে নাই।”
“আপনার দিতে হবে না আমি নিয়ে নিচ্ছি।”
“এখন বোনেরা চলে আসবে। দেখুন আমাদের এভাবে দেখলে ভাববে আপনি আদর করতে এসেছেন। ছিহ রাত পড়ে আছে আর আপনি দিনের বেলায়….
“মুখ সামলে কথা বলুন।”
কথাটা বলে তূর্ণ নিজেই ফোন নিয়ে বেরিয়ে যায়। সিনথি সোফায় বসে,বসে তূর্ণকে বকেই যাচ্ছে। তার বরটা এমন কেন? তাকে কেমন এড়িয়ে চলে?
কিছুক্ষণ পর মেহের আর তিশা আসে সিনথির কাছে। সিনথির গোমড়া মুখ দেখে তিশা জিজ্ঞেস করে, “ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছে?”
“আরে না। এমনিতে!”
প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য সিনথি পুনরায় শুধায়, “চলো রেডি হবো।”
রোদ আসতে তারা তিনজন সিনথিকে শাড়ী পড়তে,সাজতে হেল্প করে। সিনথিকে রুমে বসিয়ে দিয়ে নিজেরাও তৈরী হতে চলে যায়।
পূর্ণ তূর্ণকে তৈরী হওয়ার জন্য পাঠিয়েছে। বাকীটা সে সামলে নিবে। রুমে প্রবেশ করতে দেখে সিনথি বসে আছে। তূর্ণ নিঃশব্দে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
বাইরে দৃষ্টিপাত করছে সিনথি। তূর্ণ কেমন জেনো? আচ্ছা তূর্ণর কী কোন বিষয়ে প্রব্লেম আছে? মুখটা এমন করে রাখে জেনো তাকে জোর করে ধরে বেঁধে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। কথার মধ্যে এক্সট্রা তেজ তো থাকবেই।
রুমে কেউ কারোর সাথে কথা বলেনি। বাইরে আসার পরেও কেউ কারোর দিকে ফিরেও তাকায়নি। জেনো মূহুর্তে সাপে নেউলে সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেছে। পাহাড় সমান ইগো নিয়ে তারা নিজেদের মতো করে সবার সাথে কথা বলছে। ভাগ্যিস বিয়ে দিয়েছে ইগো দেখালেও সমস্যা নেই। দিন শেষে একে অপরের জন্য থেকে যেতে হবে। যদি প্রেম হতো তাহলে দুই মিনিট ও টিকতো না।
সিনথিদের পরিবারের মেহমানদের সাথে তূর্ণ, পূর্ণ কথা বলছে। পাভেল তার বেয়াইনদের সাথে ফান করছে। ফটোশুট, খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ হতে সিনথির সাথে যাওয়ার জন্য তূর্ণকে বলা হয়। পূর্ণর মুখের উপর না করে দেয় তূর্ণ। সে যাবে না ওই ত্যাড়া, ঝগড়ুটে মেয়ের সাথে্। তখন পূর্ণ বলে, “না গেলে খারাপ দেখায়। দেখো আজীবন আবার না খোঁটা শোনতে হয়।”
“মা যে কী দেখে ওই ঝগড়ুটে মেয়েকে আমার বউ করার ইচ্ছে পোষণ করলো। ও আমার পিওর উল্টা। কেমনে কী ভাই?”
“চলো তো!”
পূর্ণ তূর্ণকে টেনে নিয়ে যায়। সিনথি দাঁড়িয়ে, দাঁড়িয়ে তূর্ণর মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছে। ভুলবশত তূর্ণ, সিনথির চোখাচোখি হতে সিনথি মুখ বাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। তূর্ণর মাথায় জেনো দপ করে আগুন ধরে যায়। ভাগ্যিস কেউ দেখেনি মুখ বাকানোর সীন।
তূর্ণ, সিনথি এবং মেহমানদের বিদায় দিয়ে বাড়ীতে আসে সবাই। মাইশা,পাভেল তারা সবাই চলে যাবে সন্ধ্যায়। এদিকটা অবসর হতে বাকীরা মিলে আড্ডা দিতে বসেছে। তখন শূন্য বলে, “আজকে সিনথি ভাবী তূর্ণ ভাইকে যে মুখ বাঁকিয়েছে। তোমরা কেউ দেখলে হাতে,হাসতে সেখানে লুটিয়ে পড়তে।”
“কীভাবে মুখ বাকিয়েছে শূন্য ভাই?”
মেহেরের কথায় শূন্য সিনথিকে কপি করে মুখ বাকায়। তাতে একবার হাসির রোল পড়ে যায়। তখন পূর্ণ বলে, “তোমার অভিনয় হয়নি। সিনথি ভাবী একরকম ভাবে মুখ বাকায়। তারটা নোবেল প্রাপ্ত!”
★★★★
সিনথিরা বাসায় এসেছে সন্ধ্যা নাগাদ। আফিয়া ইসলাম মেয়ের জামাইকে আপ্পায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সিনথি রুমে এসে চেন্জ করে থ্রি-পিস কায়ায় জড়িয়ে নেয়। তূর্ণ বসে আছে। তার সাথে তার শালিকারা ফান করেছে। কিন্তু তূর্ণর এসবে মনোযোগ নেই। তূর্ণকে আনমনা দেখে লারা শুধায়, “জিজু দেখি আমাদের বোনকে দেখার জন্য ব্যকুল। রিসিপশনে দেখেননি বউকে?”
“ওকে দেখার জন্য না। আমার একটা কল করতে হবে।”
“তাহলে সিনথির রুমে চলে যান।”
কথাটা বলে লারা রুম দেখিয়ে দেয়। তূর্ণ উঠে সিনথির রুমের দিকে যায়। দরজার দিয়ে ঢুকার সময় সিনথি অপরপাশ থেকে তাড়াহুড়ো আসছিলো, যার ফলস্বরূপ দুজনের জোরে ধাক্কা লাগে। ধাক্কা খেয়ে রুমে প্রবেশ করে দরজা লক করে দেয় তূর্ণ। সিনথি নিজের কাঁধ ঢলছে।
“দেখেশুনে চলতে পারেন না? নাকী এখনোও দোষটা আমাকেই দিবেন যে আমার জন্য ধাক্কা খেয়েছেন?”
“আপনাকে কে বলেছে দৌড় দিতে?”
“আপনাকে কে বলেছে এই মূহুর্তে প্রবেশ করতে। আমি বের হলে তারপর নাহয় রুমে প্রবেশ করতেন। ঝগড়া ও হতো না, আপনিও শান্তিতে থাকতে পারতেন।”
তূর্ণ জবাব দেয়না। সে ফোন হাতে সোজা বেলকনিতে চলে যায়। সিনথি কন্ঠে দ্বিগুণ তেজ নিয়ে বলে, “এমন জামাইয়ের ভাত আমি খাবো না। ডিভোর্স দিয়ে দিবো।”
তূর্ণ কথাটা শেষ করে রুমে প্রবেশ করে। সিনথি খাটের উপর বসে আছে মুখ গোমড়া করে। তখন তূর্ণ তার সামনে একটা টুল এনে বসে। সিনথির এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে শীতল কন্ঠে বলে, “দেখুন সিনথি মাত্র তো বিয়েটা হয়েছে। আমাকে একটু সময় দিন সব ঠিক করে নেওয়ার জন্য। আই প্রমিস আমার সব ঠিক হলে আপনায় আর ইগনোর করবো না।”
“আপনার কী হয়েছে?”
“কিছু হয়নি! যদি থেকে যান তাহলে একসময় হলেও সব বলবো আপনায়।”
“ঠিক আছে।”
“আচ্ছা স্যরি।”
“ইট’স ওকে।”
তূর্ণ উঠে দাঁড়ায়। ফোনটা খাটের উপর রেখেই সে চেঞ্জ করতে চলে যায়। সিনথি লিভিং রুমে এসেছে। তখন তার এক কাজিন, লিয়ানা বলে, “কীই জিজু কেমন ভালোবাসা দিলো? এমাহ সে কী তাড়া তার বউকে দেখার জন্য।”
“লজ্জা করেনা আমার মতো ছোট মেয়েকে এসব বলতে।”
“এ্যাই ছোট মেয়ে হলে বিয়ে দিলো কেন তোকে?”
“আমার শখ বিয়ে করার, তাই শখ পূরণ করতে বিয়ে দিয়েছে।”
“জামাই ভালো তো সখি?”
লারার কথায় সিনথি মেঝেতে দৃষ্টি স্থির করে। কন্ঠে জড়তা নিয়ে বলে, ” সে ভালো! আমার জামাইকে দেখলে কী খারাপ মনে হয়?”
“সেটা না! কেমন জেনো অন্যমনস্ক উনি। তোর সাথেও কী সেম?”
“কোথায় অন্য মনস্ক ভাই? পরনারীতে ওনার আবার এলার্জি আছে নাহলে আমার সাথে সব ঠিকঠাকই আছে।”
কথাটা শেষ করে সিনথি চলে যায় কিচেনে।
★★★
রোদের আজকাল কারোর সঙ্গে নিজেকে হাসিখুশি মনে হয়। ওই সঙ্গটা পূর্ণর সঙ্গ! আজব! পূর্ণর সাথে এতো তাড়াতাড়ি ভাব জমাটা উচিত হয়নি বোধহয়। এখন অব্দি পূর্ণর মনোভাব কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি রোদ। কিন্তু মনটা যে বড়ই অবাধ্য। রোদ নিজেকে ধাতস্থ করে। মনকে কঠিন ভাবে শাসায়। “রোদ পূর্ণ হয়ত তোর ভালো চায় না। আর ভালো চাইলেও তোকে চায় না। ওকে ভালোবাসার কোন মানে হয়না! ওর প্রতি নিজের অনুভূতি আনার ও কোন মানে হয়না।”
তখন তিশা আসে রোদের রুমে। তাকে নিয়ে ছাঁদের দিকে যায়। দু’জনে কথা বলছে এরই মাঝে আগমন ঘটে পূর্ণর। তিশা ফোনে ব্যস্ত হতে, রোদ পূর্ণর কথা শুরু হয়ে যায়। কথার কথা পূর্ণ বলে বসে, “আচ্ছা রোদ কখনো যদি শোন তোমার ইন্ডাস্ট্রি বাঁচানোর জন্য কিংবা তোমাকে বাঁচানোর জন্য কেউ তোমায় ঠকালো তাহলে কী তুমি তাঁকে ভুল বুঝবে?”
“এমাহ্! এটা কেমন কথা? আমাকে বাঁচানোর জন্য আমায় ঠকাবে কীভাবে?”
“সে তুমি বুঝবে না। তবে হ্যাঁ তুমি ভীষণ ভালো এবং লয়্যাল একজন মেয়ে। সহজে তোমার প্রেমে পড়াই যায় তবে তোমাকে বলবো ভুল কাউকে মনে স্থান দিও না। ভালো থাকতে পারবে না।”
“রোদ ছোট না সব বুঝে।”
“বুঝেশুনে আবার আগুনে পা দিও না। ঝলসে যাবে পা, সহ্য করতে পারবে না। তখন তোমার পুড়ে যাওয়া পায়ের ক্ষতটা দেখতে আসার মতো পরিস্থিতি হয়ত আমার থাকবে না।”
পূর্ণর কথাগুলো রোদ আমলে নেয়নি। সে ভালো করেই চিনে পূর্ণকে। মানুষকে কনফিউজড করে নিজেকে রহস্যমানব করে রাখতে তার ভালো লাগে। রোদ হাসে! পূর্ণ রোদের হাসিতে দৃষ্টি স্থির করে। পূর্ণর কল আসতে সাইডে চলে আসে সে।
রোদ তিশাকে নিয়ে ছাঁদ ত্যাগ করে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে,নামতে তিশা বলে, ” রোদ প্রেমে পড়লি নাকী?”
“কার প্রেমে?”
“আমার ভাইয়ের।”
“আরে না!”
“শোন, প্রেম কখন কার প্রতি হয়,কার সাথে হয় বলা যায় না। এটার কন্ট্রোল করার ক্ষমতা হয়ত সৃষ্টিকর্তা আমাদের দেয়নি। যে কোন মূহুর্তে যে কাউকে ভালো লাগতে পারে। এমনকি তাকে মনে স্থান দিতে তখন ওতো ভাবা লাগে না কারণ আমরা তার প্রেমে পড়েছি তো!”
“ওই রকম কিছু না।”
“তুই চেঞ্জড রোদ। শুধু তুই না পূর্ণ ভাই,তূর্ণ ভাই ও চেঞ্জড।”
#চলবে
#এক_ফালি_প্রণয়|২৩|
#শার্লিন_হাসান
(সারপ্রাইজ)
এরই মাঝে কেটে যায় বেশ কয়েকদিন। পূর্ণ পার্টি অফিসে মিটিং ছিলো সেটা শেষ করে বের হয়৷ ঠিক সেই মূহুর্তে তার ফোনে একটা কল আসে। পূর্ণ তড়িঘড়ি কল রিসিভ করে। অপরপাশের ব্যক্তির থেকে পাওয়া খবর শুনে হতভম্ব হয়ে ছুটে পার্টি অফিসে। আলাদা রুমের ড্রয়ার থেকে রিলভারে বুলেট গুলো সেটআপ করে বাইরে আসে। ড্রাইভারকে বলে গাড়ী বের করতে অফিসের দিকে যাবে পূর্ণ।
শরীফ শিকদার টিস্যু দিয়ে ঘাম মুছছে। আজকে পূর্ণ তাকে খু’ন না করলেও কিছু একটা তো করবেই এটা নিশ্চিত। নিজের খারাপ মতলব গুলোর কথা মনে পড়ে। তাহসিনা খানম ইন্ডাস্ট্রি নিজের নামে করার জন্য পূর্ণ কে ব্যবহার করেছে শরীফ শিকদার। শিকদার ইন্ডাস্ট্রির বিজন্যাস পার্টনার ছিলো রহমান ইন্ডাস্ট্রি যেটা কিছুক্ষণ আগে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। খবরে হেডলাইন হচ্ছে! হুমকির মুখে পড়েছে শিকদার ইন্ডাস্ট্রি। যেহেতু পার্টনার ছিলো। রহমান ইন্ডাস্ট্রি থেকে দেশে ড্রাগস পাচার করা হতো। বড়,বড় মালবাহী গাড়ীর সাথে ড্রাগস লোকেশনে,লোকশনে পৌছাত। শিকদার ইন্ডাস্ট্রি তে ও কয়েকমাস এটা গোপনে চালিয়েছিলো শরীফ শিকদার। পূর্ণ কোনভাবে এটার খবর পেয়েছে। তখন শরীফ শিকদার শর্ত দিয়েছে খানম ইন্ডাস্ট্রির ওনার তাকে করা হলে ড্রাগসের ব্যপারে কাউকে বলবে না। নাহলে পূর্ণ, তূর্ণকে ফাঁসিয়ে দিবে। কারণ সে খানম ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্বে আছে। তার সমস্যা হবে না।
শিকদার ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ গলে কয়েক কোটি টাকা লস হয়ে যাবে। ভাবতে ঘাম ছুটে যায় শরীফ শিকদারের। কিন্তু পূর্ণর হাতে খু’ন হওয়ার আগে রোদকে খু’ন করতে পারলে সে শান্তি পেতো।
অফিসে এসে সোজা শরীফ শিকদারের রুমে যায় পূর্ণ। ওয়াইফাই কানেকশন,সিসিক্যামেরা অফ করে দেয় শরীফ শিকদারের রুমের। পূর্ণকে দেখে শরীফ শিকদার কিছুটা আন্দাজ করে। তূর্ণ এবং শূন্যকে আসতে বলে তার রুমে। পূর্ণ দরজা লক করে শরীফ শিকদারের সামনে যায়। চেয়ারে বসে থাকা শরীফ শিকদারের কলার চেপে ধরে বলে, ” আজকের মতো ভুলে গেলাম আপনি আমার মৃ’ত বাবার ছোট ভাই সম্পর্কে আমার চাচা। খানম ইন্ডাস্ট্রি চাই না আপনার? ওটা স্বপ্ন দেখুন! ভেবেছিলাম কিছু একটা করবো কিন্তু এই মূহুর্তে লা’থি মেরে এই ইন্ডাস্ট্রির বাইরে আপনায় ছুঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।”
“পূর্ণ….
বলার সাথে,সাথে পূর্ণ রিভলভারটা মুখে ধরে শরীফ শিকদারের। যার ফলস্বরূপ কোন কথাই বলতে পারছেন না তিনি। চোখ বড়,বড় করে পূর্ণর রেগে যাওয়া চেহারার দিলে তাকিয়ে আছে।
” শরীফ শিকদার! আপনার করা প্লানের কথা যদি পরিবারের কেউ জানতে পারে তাহলে কী হবে জানেন? এক ভাই রোদের জন্য প্রাণ দিলো আরেক ভাই সেই রোদকে মারা’র জন্য আমায় ইউস করলো।”
কথাটা বলে পূর্ণ রিলভার শরীফ শিকদারের মুখ থেকে সরিয়ে কপাল বরারবর রাখে।
দরজায় নক করে তূর্ণ, শূন্য। পূর্ণ রিলভারটা পকেটে ঢুকিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে দরজা খুলে দেয়। তূর্ণ শরীফ শিকদারের কাছে যায়। ওনার অবস্থা খুন একটা ভালো না।
“চাচ্চু আমাদের ইন্ডাস্ট্রির কিছুই হবে না। পুলিশ চেক করলে করবে! আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে তো ড্রাগস পাচার বা ড্রাগসের সাথে জড়িত না।”
শরীফ শিকদার কথা বলেন না। পূর্ণ চেয়ারে বসতে,বসতে বলে, “সময় খুব বেশী দূরে নেই। হয়ত এই ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হবে নাহয় লোভি মানুষ সাড়ে তিনহাত মাটির নিচে স্থায়ী বাড়ীতে প্রবেশ করবে।”
তখন শূন্য বলে, “মানে বুঝলাম না পূর্ণ ভাই। আজকে না তোমার কী কাজ পড়েছিলো কোন এলাকায়। এখানে কেন তুমি? ”
“রহমান ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ করে দিয়েছে। খবরে হেডলাইন হচ্ছে! আমি কীভাবে এলাকা উন্নয়নের কাজে ব্যস্ত থাকতে পারি বলো? মেয়র থেকে পদত্যাগ করলে আমার কিছু যাবে আসবে না। কিন্তু আমার বাবার তিলে,তিলে গড়া ইন্ডাস্ট্রি এক নিমিষে ছুড়মার হয়ে গেলে আমি কীভাবে ঠিক থাকবো?”
“রোদের উচিত নিজের ইন্ডাস্ট্রির দেখভাল করার।”
শূন্যের কথায় তূর্ণ বলে, “আমি রোদের সাথে কথা বলবো। ওর আরেকটু চালাক হওয়া দরকার।”
“শোনো! ও অল্পবয়সে বাবা মা দুজনকে হারিয়েছে। মামাকে হারিয়েছে আবার তার বাড়ী,ইন্ডাস্ট্রির পেছনে কিছু লোভী মানুষ পড়েছে। অল্প বয়সে অনেকটাই ঝড় গিয়েছে ওর উপর। যাই হোক রোদের ইন্ডাস্ট্রি রোদ দেখভাল করবে এখন থেকে। আর আমরা তো আছি।”
★★★
“মেয়র সাহেব দেখা করতে পারবেন?”
ফোনের অপরপাশ থেকে মিষ্টি বাচ্চা কন্ঠস্বর ভেসে আসে পূর্ণর কানে। ঘড়িতে সময় দেখে পূর্ণ। বিকেল চারটা বাজছে। মন মেজাজ ভালো নেই তার। তবুও মেয়েটা অনেকদিন ধরে দেখা করার কথা বলছে। পূর্ণ জবাব দেয়, “ক্যাফে আসতে পারবে?”
“পারবো।”
“আমি যাচ্ছি তুমি আসো।”
গাড়ী ঘুরিয়ে ক্যাফের দিকে যায় পূর্ণ। কিছুক্ষণ বসে থেকে কোল্ড কফি অর্ডার দেয়। মেয়েটা যে কীভাবে তার খোঁজ পেলো আর হুট কটে হৃদয়ে অধিপত্যে বিস্তার করলো পূর্ণ নিজেও জানে। আজকাল ভালো লাগা,মন খারাপটা এই মেয়েটার মাঝে পুষে নেয়। আসলেই কখনো কার কাছে হৃদয় আটকে যায় বলা যায় না। পূর্ণ মনে এক দন্ড শান্তি নেই তবুও মন টানলো এই অষ্টাদশী রমণীর সাথে দেখা করার জন্য।
কালো থ্রি-পিস পরিহিতা অষ্টাদশী রমণী প্রবেশ করে ক্যাফে। পূর্ণকে চিনতে তার একদম ভুল হয়নি। পূর্ণ এই প্রথম মেয়েটাকে সামনাসামনি দেখেছে। পূর্ণকে দেখে
অরিন মুচকি হেঁসে সামনের চেয়ার টেনে বসে। অরিনকে দেখে পূর্ণ শুধায়, “এক্সাম শেষ?”
“দুইদিন আগে শেষ হয়েছে।”
“হুম সেজন্য বুঝি দেখা করার এতো তাড়া?”
“আপনি চিন্তিত?”
“কিছু না। তা বলো তোমার কী অবস্থা?”
“আপাতত বলতে পারছি না।”
“কেন?”
ব্রু কুঁচকায় পূর্ণ তখন অরিন হেঁসে বলে, ” আগে মেয়রকে আঁচলে বাঁধি।”
“তুমি এখনো ছোট অরি।”
“কিসের ছোট? এইচএসসি এক্সাম দিয়েছি। বয়স আঠারো হয়েছে এবার তো বিয়ে করা দরকার।”
“আচ্ছা করবো বিয়ে। সবে মাত্র এক্সাম দিয়েছো তুমি!”
“হুহ্! আপনার তো বিয়ের বয়স পেড়িয়ে যাচ্ছে। পরে বাচ্চা কাচ্চা হলে বুড়ো বাপ পাবে।”
“এতো বাচাল কেন তুমি? কী থেকে কই নিয়ে যাচ্ছো।”
ধমকে বলে পূর্ণ তখন অরিন বলে,
“আচ্ছা মেয়র সাহেব আমায় ব্লাকে কেমন মানিয়েছে?”
“সুন্দর!”
অরিন ‘ধন্যবাদ’ বলে। তাঁদের কফি আসতে দু’জন কফির দিকে ধ্যান দেয়। অরিন সামনে বসে থাকা শ্যামপুরুষের মুখের দিকে তাকায়। গায়ের সাদা পান্জাবিটা শরীরে লেপ্টে আছে। বোধহয় খুব ক্লান্ত! অরিন বেশী সময় ন’ষ্ট করে না। কফিটা শেষ করে বলে, “আচ্ছা আপনি টায়ার্ড বাড়ী গিয়ে রেস্ট নিন। আমরা এখন উঠি।”
“ঠিক আছে।”
পূর্ণ বিল পে করে অরিনকে নিয়ে ক্যাফের বাইরে আসে। অরিনের দিকে তাকিয়ে বলে, “অরি চলো তোমায় নামিয়ে দিই।”
দু’জনে বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা হয়। অরিনকে তাঁদের বাসার মোড়ে নামিয়ে দিয়ে অপজিটের রাস্তায় গাড়ী প্রবেশ করায় পূর্ণ। পকেটে তার রিলভারটা এখনো আছে। ভাগ্যিস মেয়েটা দেখেনি। নাহলে কথায়,কথায় গু’ন্ডা বলতো। এমনিতে কম বলে না। মুচকি হাসে পূর্ণ।
★★★
তূর্ণ বাড়ী এসেছে কিছুক্ষণ আগে। সিনথি তাকে কোল্ড ড্রিং এগিয়ে দেয়। শূন্য শরীফ শিকদারকে নিয়ে হসপিটালে আছে। সাইখা ইসলাম তিশাকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য চলে যায়। তারা যাওয়ার পেছন দিয়ে পূর্ণ বাড়ী আসে। তখন তূর্ণ সিনথিকে বলে পূর্ণর জন্য ঠান্ডা পানি এনে দিতে।
সোফায় বসে আছে রোদ। সিনথির সাথে কথা বলছিলো এতোক্ষণ তূর্ণ আসায় সিনথি কাজে লেগে পড়ে। পূর্ণ পানির বোতল হাতে নিয়ে রুমে চলে যায়। সবার আগে রিভলভারটা সেইভ জায়গায় রেখে দেয়।
রোদ, শারমিন আঞ্জুম সহ খবর দেখেছে। শিকদার ইন্ডাস্ট্রির বিজন্যাস পার্টনার রহমান’দের ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মূলত ড্রাগসের জন্য। এই নিয়ে বেশ চিন্তায় থাকলেও তূর্ণ,পূর্ণ আসার পর তাঁদের মুখ দেখে চিন্তা কেটে গেছে। জেনো কিছুই হয়নি আর না হবে। কত দোয়া করেন শারমিন আঞ্জুম। তার হাসবেন্ডের স্বপ্ন যেটা তার ছেলেরা পরিচালনা করে।
সিনথি তূর্ণর পেছন,পেছন রুমে আসে। তূর্ণর মন ভালো নেই। কিন্তু তার মায়ের সামনে সেটা প্রকাশ করেনি। সিনথি কিছুটা আন্দাজ করে। তূর্ণকে জিজ্ঞেস করে, “কোন সমস্যা হয়েছে?”
“না কিছু হয়নি। তুমি খাবার রেডি করো একটু পর চাচ্চু,শূন্য আসবে। পূর্ণ ও ক্ষুধার্ত।”
সিনথি আর কথা বাড়ায়না। সে আবার বলতে গেলে এক লাইন বেশী বলে ফেলে তখন তূর্ণ আবার ধমক দিবে। লিভিং রুমে আসতে দেখে রোদ এবং শারমিন আঞ্জুম খাবার রেডি করছে। পূর্ণ চেয়ারে বসেছে। সিনথি তখন বলে, “ছোট চাচ্চু আর শূন্য ভাইয়া আসবে না?”
“জানি না।”
কন্ঠে তেজ বৃদ্ধি করে কথাটা বলে পূর্ণ। চোখেমুখে তার রাগ স্পষ্ট। রোদ ব্রু কুঁচকায় পূর্ণর দিকে।
“কিছু কী হয়েছে আজকে?”
রোদ বলে। তখন পূর্ণ রোদের দিকে তাকায়। চোখেমুখে কৌতূহল তার। পূর্ণ শুধায়, “অনেক কিছুই হয়েছে। বলো তুমি কোনটা জানতে চাও?”
“অপশন গুলো বলে আমি চয়েজ করছি।”
কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলে রোদ। পূর্ণ জবাব দেয়না। লিভিং রুম জুড়ে পূর্ণ নিরবতা গ্রাস করেছে। তূর্ণ আসতে দেখে সবাই চুপ। তখন আবার কল আসে। শারমিন আঞ্জুম কল রিসিভ করতে সাইখা ইসলাম জানায়, “শরীফ শিকদারকে হসপিটালে এডমিট করানো হয়েছে।”
কারণ জানতে চাইলে তেমন কিছুই জানাতে পারেনি সাইখা ইসলাম। পূর্ণ বিড়বিড় করে বলে, “নির্ঘাত ডক্টরকে টাকা ঘুষ দিয়ে হসপিটালে ভর্তি হয়েছে। বুঝাতে হবে না ইন্ডাস্ট্রি বন্ধের পথে সেটা শুনে তার মিনি হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।”
#চলবে