এক ফালি প্রণয় পর্ব-৩৪

0
3

#এক_ফালি_প্রণয়|৩৪|
#শার্লিন_হাসান

রোদ এবং আদ্রিশ উভয়ই খান বাড়ীতে এসেছে। রাত্রি তাঁদের দু’জনকে দেখে কিছুটা অবাক হয়। মনের মধ্যে ভয় জেঁকে বসে আজকে বুঝি বাড়ী ছেড়ে দিতে হবে? তাহাফ খান ভাইয়ের মেয়েকে দেখে একগাল হেঁসে ভেতরে নিয়ে আসে। রাত্রি তাঁদের কান্ড দেখছে। আদ্রিশের সাথে তাহাফ খানের একটা ভালো সম্পর্ক আছে। তবে ভাইয়ের মৃ’ত্যুতে নিজের হাত থাকায় বেশী কিছু বলার সাহস পায় না তাহাফ খান। আদ্রিশ সোফায় বসে। রুশা এসে রোদের সাথে কথা বলে। আদ্রিশ ঠান্ডা মাথায় তাহাফ খানকে জিজ্ঞেস করে, ” আমি যদি ভুল না হই তাহলে তীর্থ খানের মৃ’ত্যুর পেছনে আপনার ও হাত আছে।”

“পুরোনো কথা কেন তুলছো আদ্রিশ?”

“আপনার কাছে পুরান মনে হতে পারে তবে যার হারিয়েছে সে বুঝে।”

“আমি দোষী তবে দোষ স্বীকার করে যদি আমার জেল ও হয় তাহলে এর সাথে জড়িয়ে থাকা প্রত্যেকটা মানুষের মুখোশ ও সামনে আসুক।”

“মানে?”

“মানেটা অন্যদিন বলবো আদ্রিশ। আপাতত তুমি সত্যিটা নিতে পারবে না।”

রোদ আদ্রিশের দিকে তাকায়। সত্যিটা সে নিজেও জানে তবে আদ্রিশকে বলছে না ভয় হচ্ছে। সেদিনের মতো রোদ আদ্রিশ তেমন কথা বাড়ায়না। রোদের ইচ্ছে নেই তাদের বাড়ী থেকে বিদায় করতে। তারা ক্ষমা চাইলে হয়ত যাওয়ার কথা বলবে না। তবে তার বাবা মায়ের খু’নিদের শাস্তি চাই। গাড়ীতে তেমম একটা কথা হয়নি দু’জনের। আদ্রিশ বেশ চিন্তায় আছে এসবের পেছমে তার বাবার হাত নেই তো? কোন ভাবে জড়িয়ো নেই তো? রাগ অভিমান ঠিক আছে। তবে সে তার বাবাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।

পূর্ণর বিয়ের প্রস্তুতি চলছে পুরো দমে। শরীফ শিকদার অফিসের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখছে। আজকাল নিজের টাক আর পূর্ণর ক্ষোভ নিয়ে বেশী ভয়ে আছেন তিনি। কখন, কীভাবে টাক পাটিয়ে দেবে কেউ টের ও পাবে না। এমনিতে এই ছেলে টাক নিয়ে থ্রেট দিয়েছে। পূর্ণ বেশ চিল মুডে আছে। তবে শরীফ শিকদারকে একটা সারপ্রাইজ দিতে হবে সেটাও সবার সামনে। সব ভুল ধারণা ভে’ঙে যাবে সবার।

তূর্ণ দূরত্ব গুছিয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হলেও সিনথি কেমন জেনো নড়ছড়ে। আগের মতো না! আগে যেমন একটা টান কাজ করতো তূর্ণর জন্য সেটা আজকাল করে না। যেটা তূর্ণকে পোড়ায়! ভীষণ রকমের। কেন পোড়ায় সেটা জানা নেই। তবে দূরত্ব যাই হোক সিনথি নিজের দায়িত্ব সুন্দর ভাবে পালন করে।

সময়টা সন্ধ্যা। সবাই মিলে বিয়ের শপিং নিয়ে পরিকল্পনা করছে। তূর্ণ ও ছিলো সেখানে। তাঁদের সবকিছু আগের মতো কিছুটা স্বাভাবিক পর্যায় নেমে আসছে। সাইখা ইসলাম রোদকে কল দেয়। আগামী কালকে যাতে চলে আসে আদ্রিশ কে নিয়ে। রোদ আসবে আদ্রিশ আসবে কীনা সন্দেহ।

তূর্ণ অপেক্ষা করছে কখন সিনথি রুমে যাবে। কিন্তু মেয়েটা জেনো নড়ছেই না। তূর্ণকে পাত্তাই দিচ্ছে না বলতে গেলে। তূর্ণর প্রশ্নের জবাব চাই।

একবারে রাতের ডিনার সেরে সিনথি তূর্ণ রুমে যায়। তূর্ণ দরজাটা কিছিটা জোরেই আটকায়। সিনথি বুঝে লোকটা রেগে আছে। তূর্ণ সোফায় বসতে,বসতে শুধায়, “মিস আনাহিতা রাহমান সিনথি আপনার কী আমার সাথে থাকতে ভালো লাগছে না?”

“আমি কিছু বলিনি।”

“আপনার ভাব ভঙ্গি এমনটাই বুঝাচ্ছে।”

“আরে এমনিতে। আপনার মুভ অন হলে ডাক দিয়েন এংন ঘুমাবো।”

কথাটা বলে সিনথি বেডে বসে পড়ে। তূর্ণ থমথমে গলায় জবাব দেয়, “বেশী হয়ে যাচ্ছে না?”

“জ্বলে?”

“জ্বলবে কেন আজব?”

“না এমনিতে! কিছু না। সমস্যা নেই ঠিক হয়ে যাবে সব।”

“হয়েছে ঠিক। আপনি নিজেই এখন ঠিক নেই।”

“কী করেছি আমি।”

“আমাদের জীবনের নতুন অধ্যায়ের প্রথম রাতে আপনি আবদার করেছিলেন। আজকাল দূরে সরে যাচ্ছেন সিনথি।”

“কী আবদার?”

“আমাকে রাগাবেন না প্লিজ।”

সিনথির মনে পড়ে। সে বলেছিলো তূর্ণর বুকে মাথা রেখে ঘুমাবে। প্রথম কয়েকমাস সেটা হলেও রিসেন্ট মাসে আলাদা সে। তূর্ণর থেকে বেশ দূরত্বে ঘুমায়। বেচারার পোড়াচ্ছে ভাবতে সিনথির হাসি পেলো। সিনথিকে চুপ থাকতে দেখে তূর্ণ কেমন অধৈর্য হয়ে পড়ে। পুনরায় বলে, “কিছু বলেছি আমি।”

“তো?”

“এখন থেকে আপনি আমার বুকে ঘুমাবেন। একদম দূরত্ব দেখাতে আসলে…

” কী করবেন?”

ব্রু কুঁচকায় সিনথি। তূর্ণ নিজেকে সংযত রেখে বলে, “কিছু না।”

★★★

ব্যাগ গোছাচ্ছে রোদ। মামী বলেছে যাওয়ার ইচ্ছে না থাকলোও পূর্ণ তাকে থ্রেট দিয়ে বিয়েতে নেওয়াচ্ছে। আদ্রিশ কেমন চুপচাপ। রোদ বিষয়টা পাত্তা দেয়না। থাকুক একটু শোকে। ল্যাপটপ রেখে রোদকে ডেকে কাছে নেয় রোদ। নিজের পাশে বসিয়ে রোদের গাড়ে নিজের থুতনও রাখে। রোদ কিছিটা নড়েচড়ে বসে জিজ্ঞেস করে, “কী হয়েছে?”

“আগামী কালকে শিওর যাবা?”

“হ্যাঁ!”

“আচ্ছা তোমায় কিছু জিজ্ঞেস করবো ঠিকঠাক উত্তর দিবা।”

“বলুন?”

“আলতাফ পারভেজ চৌধুরী আমার বাবা। উনি নিশ্চয়ই আংকেল আন্টি, পূর্ণর বাবার মৃত্যুর সাথে জড়িত?”

“হয়ত…

” তুমি শিওর রোদ?”

“আমি নিজেই সাক্ষী। পারলে আপনার বাবাকে জিজ্ঞেস করিয়েন। পূর্ণ ভাই জানতে পারলে মে’রে ফেলবে উনাকে।”

“তাহলে তাহাফ খান, আলতাফ পারভেজ চৌধুরী এবং শরীফ শিকদার তারা সব এক জোট?”

“হ্যাঁ!”

আদ্রিশ কিছু বলেনা। রোদ উঠে বেডে যায়।

★★★

সকাল,সকাল ড্রয়িং রুমে নাস্তা করতে বসেছে চৌধুরী পরিবার। আলতাফ পারভেজ চৌধুরী রোদের দিকে ফিরেও তাকান না। বিয়ের অনেকদিন গড়াচ্ছে তবে তারা কেউই কারোর সাথে একটা বাক্য উচ্চারণ করেনি। আদ্রিশের নজর আসে বিষয়টা তবে কিছু বলেনা। ফারিহা চৌধুরী রোদকে নিয়ে বেশ আহ্লাদ করে যেটা দেখে আলতাফ পারভেজ চৌধুরীর রাগ উঠে৷ ভয়ে কিছু বলতে পারেননা। ছেলে,বউ দু’জনই রোদের পক্ষে।

“এতো রাগ রেখে কী হবে? মেয়েটার তো দোষ নেই।”
কথাটা মাথায় আসতে আলতাফ পারভেজ চৌধুরী শুধায়, “তাহসিনা আজকে শিকদার বাড়ী যাবে?”

সবাই বেশ অবাক হয়। রোদ ভদ্রতার সহিত জবাব দেয়, “হ্যাঁ যাবো।”

“আদ্রিশ যাবে?”

সবার নজর আদ্রিশের দিকে। আদ্রিশ থমথমে গলায় জবাব দেয়, “বিয়ের দিন যাবো হয়ত।”

“ঠিক আছে তাহলে তাহসিনাকে শিকদার বাড়ীর গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ে তুমি অফিস যেও।”

নাস্তা শেষ করে রেডি হয় রোদ। ফারিহা চৌধুরীর সাথে আলিঙ্গন করে বিদায় নিয়ে আদ্রিশের সাথে গাড়ীতে বসে সে। এখনো আদ্রিশের মুখটা গম্ভীর হয়ে আছে। রোদের ভালো লাগছে না। তারউপর চার-পাঁচ দিন তাঁদের দেখা হবে না। কী জানি সামনে কী অপেক্ষা করছে।

শিকদার বাড়ীর গেটের সামনে রোদকে নামিয়ে দেয় আদ্রিশ। কোন প্রকার বাক্যব্যয় না করে গাড়ী ঘুরিয়ে চলে যায়। রোদের রাগ হয় বেশ। নিজের বাপের সাথের অভিমান কেন তার সাথে দেখাতে যাবে?

শিশা,তিশার সাথেই ভেতরে প্রবেশ করে রোদ। শারমিন আঞ্জুম এবং সাইখা ইসলাম তাকে জড়িয়ে ধরে। তূর্ণ অফিসের জন্য রেডি হয়ে এসেছে। পূর্ণ সোফায় বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। সিনথিকে ডেকে পুনরায় রুমে যায় তূর্ণ। হাতের কাজটা শেষ করে সিনথি নিজেও রুমে যায়। তূর্ণ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে তার জন্য। সিনথি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “অপেক্ষা করছেন কেন?”

“কেন আপনি জানেন না বাইরে যাওয়ার সময় বউয়ের কপালে চুমু দিয়ে যেতে হয়।”

“আপনার ভালোবাসা চলে এসেছে।”

“আপনি বড্ড ফাজিল সিনথি। আমায় খোঁচা না দিয়ে হয়না?”

“এমনিতে! কিছু না।”
কথাটা বলে সিনথি তূর্ণর সামনে দাঁড়ায়। তূর্ণ সিনথির কপালে চুমু দিতে সিনথি পা উচু করে তূর্ণর ঠোঁটে চুমু খায়। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, “এটা ফিডব্যাক দিলাম।”

“আচ্ছা নিজের খেয়াল রাখবেন আমি আসি।”

“আমাকে তুমি করে বলতে হবে নাহলে রুমে জায়গা হবে না।”

“চেষ্টা করবো।”
কথাটা বলে তূর্ণ মুচকি হাসে। সিনথি তূর্ণর পেছন,পেছন বেড়িয়ে আসে। শরীফ শিকদার,শূন্য সহ তারা দুজন একসাথে বেড়িয়ে পড়ে অফিসের জন্য।

বিকেলে অরিনদের বাসায় যাবে গুটি কয়েক লোক। পূর্ণর বিয়ে হবে তার দলের সদস্যরা জেনেছে। সবাই বেশ এক্সাইটেড। বিয়েটাও ধুমধাম করেই হবে।

হাতের কাজ শেষ করে পূর্ণ আদ্রিশের অফিসে যায়। আলতাফ পারভেজ চৌধুরী, শরীফ শিকদার এবং তাহাফ খানকে জেলে না দেওয়া অব্দি তার শান্তি নেই। মোটামুটি পুরোনো সব খুঁচিয়ে জানা শেষ। তীর্থ খান এবং তার ফুফির মৃ’ত্যুর কেসটা পুনরায় শুরু হয়েছে। তাঁদের তিনজনের মুখ থেকে আসল সত্যিটা বের করতে পারলেই হলো। আদ্রিশ বেশ মন মলিন হয়ে বসে আছে। অসময়ে পূর্ণকে দেখে অবাক হয়না। হয়ত শিকদার বাড়ীতে যাওয়ার জন্য বলবে। আদ্রিশের ধারনায় জল ঢেলে দিয়ে পূর্ণ বেশ তেজী স্বরে বলে, “চৌধুরীর ছেলে এবার কী ন্যায় বিচারের পথে হাঁটবে নাকী বাবার পক্ষ নিবে?”

“অবশ্যই ন্যায় বিচার। একদিকে আমার অর্ধাঙ্গিনী অন্যদিকে পিতা। আমার জীবনে তাঁদের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে কিছু বলতে চাই না। অন্যায় করেছে শাস্তি তো পেতে হবে।”

“ভাগ্যিস বলেছি জেলে দেবো। আজিম পুরের ক’বরস্থানের কথা বলিনি।”

“ব্রো কুল! আমি আছি তোমার সাথে।”

#চলবে