এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা ২ পর্ব-২৪+২৫

0
1516

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন ২)
২৪.
#WriterঃMousumi_Akter

“আপনি আমাকে বিরক্ত করেন এ কথা স্যার কে বলাতে আপনার মান সম্মান কেনো যাবে বিহান ভাই।বিরক্ত এর সাথে মান সম্মান এর কি কানেকশন একটু বলবেন।”

“বিকজ স্যার এর ও ওয়াইফ আছে।স্যার ও একজন পুরুষ মানুষ। বিরক্ত জিনিস টা প্রতিটা পুরুষ মানুষ ই করে।নিজের বউ কে বিরক্ত করাটাই পুরুষ মানুষের মূখ্য উদ্দেশ্য। তাই স্যার এই বিরক্ত এর বিশাল বড় মানে খুজে বের করেছেন।”

কথাগুলো বলেই উনি জিভ দিয়ে নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুলে হাত চালিয়ে চুল উপরের দিকে তুলে দিলেন।

“আমি খানিক টা অবাক হয়েই বললাম,ওম্মা বলেন কি স্যার ও কি আপনার মতোই তার ওয়াইফ কে বিরক্ত করেন বিহান ভাই।কিন্ত স্যারের ওয়াইফ কে দেখে মনে হয় উনি কতই না হ্যাপি আছেন স্যারের সাথে।ইস পরীর মতো সুন্দর আন্টিটার পুরো জীবন টা এভাবে অত্যাচারে ধ্বংস হয়েছে।এতটা অসুখী আন্টি ভাবতেই পারছি না আমি।এ ধরনের রাক্ষস টাইপ পুরুষ দের পৃথিবীতে জন্মনেওয়া টায় উচিত নয়।এরা পারে আমাদের মতো ফুটফুটে বাচ্চা মেয়েদের লাইফ হেল করতে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে পাওয়ার দিলে এদের বাথরুমে আটকে রেখে দিতাম একমাস।এক কথায় এরা কোনো পুরুষ হওয়ার ও যোগ্য নয়।আন্টির জীবন টা কত কষ্টের আজ আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি”

–হঠাত উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি ক্ষিপ্ত নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন?চোখ এ রাগের ছড়াছড়ি,চোয়াল শক্ত করে দুই প্যান্টের পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছেন আমার দিকে তাকিয়ে।ভয়ংকর ভাবে রাগী চোখে আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন।রাগে ফুঁসে আছেন,গলার শিরা ও ভেষে উঠেছে।যতটা সময় যাচ্ছে উনার চোখ ততটায় অগ্নিরুপ ধারণ করছে।উনাকে হঠাত এমন রেগে যেতে দেখে হৃদপিন্ড থর থর করে কাঁপছে আমার।উনার যে রাগ এক্ষুণি কি করে বসবেন সেটার আইডিয়া ও নেই।হাত পা কাঁপাকাপি শুরু করেছে অলরেডি।

–উনি দাঁতে দাঁত চেপে চোয়াল শক্ত করে বললেন,এত সময় কথা গুলো কি স্যার কে শুনালি না ইনডিরেক্ট আমাকে বললি।

-আ,আ,আপনাকে কেনো বলতে যাবো বিহান ভাই।

–খুব কষ্ট তোর তাইনা?খুব কষ্ট।

–আমি বার বার ঢোক গিলছি,আর জিভ দিয়ে দুই ঠোঁট ভিজাচ্ছি।সমস্ত শরীর কাঁপছে ভয়ে।উনি তো ভয়ানক রকমের রেগে গিয়েছেন।তখন তো বলতে বলতে অনেক বেশী ই বলে ফেলেছি।টের ই পাই নি উনি বিষয় টা ধরে ফেলবেন।

–কি প্রুভ করতে চাস?আমার মতো অত্যাচারী মানুষ এ দুনিয়াতে আর নেই।আমি কতটা খারাপ সেটাই ঘুরিয়ে পেচিয়ে বোঝালি।খুব কথা শিখেছিস তাইনা?খুউউব?

–খাট থেকে এক লাফ দিয়ে নেমে দৌড় দিতে গিয়েই পায়ে ব্যাথা পেয়ে বারান্দায় পড়ে গেলাম চিৎ হয়ে।

–উনি রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখেন আমি কোলা ব্যাঙের মতো ফ্লোরে পড়ে আছি।

–উনি আগের রুপেই তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।আগের মতোই রেগে বললেন,খুব আরাম তাইনা?আরামে সুয়ে আছিস আর ভাবছিস কেউ এসে কোলে করে তুলে রুমে নিয়ে যবে।এক মিনিটে ওঠ তোর সাথে হিসাব আছে আমার।আজ আমি বই পড়বো না।

–উঠতে গিয়েই ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম,কোমরে আর পায়ে লাফ দেওয়ার জন্য পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি।উঠার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি।আমার চোখ মুখে ব্যাথার কষ্ট স্পষ্ট।

–উনি আবার বললেন,খুব বেশী বেয়াদব হলে যা হয় আরকি।অসভ্য দের মতো লাফ দেওয়ার কি খুব প্রয়োজন ছিলো।যদি বড় রকম কিছু হয়ে যেতো।নিজের ইচ্ছায় লাফ দিয়েছিস নিজেই ওঠে আয়।

–আমাকে একটু হেল্প করুন প্লিজ।আমি একটু উঠতে পারছি না।

–আমি কোনো ভাবে হেল্প করবো না।নিজেই উঠে আয়।

–আচ্ছা এক কাজ করুন না তাহলে?আমার ফোন থেকে সাইমনের নাম্বার টা বের করুণ না।সাইমন যে বলুন দিয়া পড়ে গিয়েছে।ও ছুটে এসে আমাকে কোলে তুলে উঠাবে।তাও খুব আদরের সাথে।

–উনি পাশে থাকা ফুল দানিতে রাগে খুব জোরে একটা লাথি মেরে দিলেন।সাথে সাথে ফুল দানি ভেঙে তার মাটি ছড়িয়ে গেলো ফ্লোরে।কি আছে সাইমনের মাঝে দিয়া।আমি না বলেছি কোনো ছেলের নাম মুখে উচ্চারণ করবি না।কোনো ছেলে তোকে স্পর্শ করবে সেটা তুই আমার সামনে বলছিস।এমন কোনো হাত আমি আস্ত রাখবো না যা তোকে স্পর্শ করতে পারে।উনি পাশের আরেক টা ফুলদানি তে লাথি মেরে বললেন,আজ সব কিছু তছনছ করে ফেলবো।সাইমন তাইনা?সাইমন কে খুব ভাল লাগে।সারাক্ষণ মুখে সাইমন এর নাম।সমস্যা কি তোর দিয়া।রাগে ফুসতে ফুসতে আমাকে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় রাগে রাগে খুব জোরে ফেললেন আর বললেন সাইমন তাইনা?সাইমন এর নাম্বার ফোনে সেভ থাকে।হাউ স্ট্রেইঞ্জ।

–আমি ব্যাথায় এবার একটু শব্দ করেই কেঁদে দিলাম।ব্যাথার থেকে ভয়েই কেঁদে দিলাম আমি।আমাকে কাঁদতে দেখে সাথে সাথে ব্যাস্ত হয়ে বললেন,এই দিয়া তুই কি সত্যি ব্যাথা পেয়েছিস।উফফফ গড।উনি আমার পা টেনে দিতে দিতে বললেন অনেক ব্যাথা পেয়েছিস।এত জোরে লাফ দেওয়ার ছিলো কি?তুই কি আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিবি না।তুই জানিস তোর কিছু হলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।তার উপর আবার আমাকে রাগিয়ে দিস।

–আমি অবাক হয়ে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছি রেগে থেকেও আবার কেয়ার করছেন।অদ্ভুত না মানুষ টা।উনি আমার পা টেনে দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ মৌন রইলেন।

–উনাকে স্বাভাবিক দেখে বললাম স্যার কি সত্যি বিরক্ত করেন বিহান ভাই।বোঝাই যাচ্ছে উনার রাগের মাত্রা পায়ের ব্যাথার জন্য কমে গিয়েছে।

–হুম করে তবে তুই যেটা ভাবছিস সেটা নয় অন্য কিছু।

–অন্যকিছুটা কি?

–আমার কি এখন করে দেখানো লাগবে?ননসেন্স মহিলা।রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে আজ তার নোবেল টা তোকে ছুড়ে মারতো।কেননা এই বিশ্বে তোর মতো ষ্টুপিড একটাও নেই।

আমি আর কোনো কথা ই বাড়ালাম না।কিছুক্ষণ পরে এসে মামি বললেন দিয়া বিহান কি তোকে মেরেছে।আমি হেসে বললাম না মামি আমি পড়ে গিয়েছি।মামি বললেন মিথ্যা বলছিস না তো।এইসব ভাঙাচুরা করেছে,এই ছেলে নিজের রাগের জন্য কি বিপদ ঘটাবে কবে আল্লাহ জানে।ভেবেছিলাম বিয়ের পরে ভাল হয়ে যাবে।কিন্তু না,এখন দেখছি ওর ছেলে মেয়ে না হলে ভাল হবে না।মামির কথায় বেশ লজ্জা পেলাম আমি।

পরের দিন বিকালে মুখ পেচার মতো করে পায়চারী করে বেড়াচ্ছি।মাথায় খুব শয়তানি বুদ্ধি চেপেছে।বিহান ভাই কে একটু নাজেহাল করতে হবে।হবে মানে হবেই।নিজে নিজে হাজার টা বুদ্ধি বের করছি কোন বুদ্ধিটা প্রয়োগ করলে বেটার হবে সেটাই ভেবে চলেছি।বিহান ভাই কে দেখলাম কালো জিন্স,বাদামী গেঞ্জি লং হাতা, চোখে খয়েরী ফ্রেমের চশমা দিয়ে বেরিয়েছেন।মনে হয় বিভোর ভাই আর উনি বাইরে কোথাও আড্ডা দিতে যাচ্ছেন।

–বিভোর ভাই কালো জিন্স,কালো গেঞ্জি পরে বেরিয়ে আমাকে বললেন এই দিয়া দেখ তো আমায় কেমন লাগছে।

–আসলেই বিভোর ভাই দেখতে খুব ই সুন্দর।
একদম ই হিরো লাগছে বিভোর ভাই।শুধু হিরো বললে ভুল হবে।আপনাকে মারাত্মক সুন্দর লাগছে।

–বিহান ভাই বললেন,ওই পাড়ার মফিজ যদি দিয়ার কাছে জিজ্ঞেস করে আমাকে কেমন লাগছে দিয়া বলবে কোথায় শাহরুখ খান আপনার এ রুপ যেনো সাক্ষাত রোমিও।

–বিরক্ত হয়ে বললাম,দেখেছেন বিভোর ভাই উনার কেমন জ্বলে।

–হিংসে করে বুঝিস তো।হাই স্কুলে থাকতে ওর একটা প্রেমিকা আমি ভাগিয়ে নিয়েছিলাম।

–বিহান ভাই ভ্রু উচিয়ে বললেন সিরিয়াসলি,আমার আবার প্রেমিকা ছিলো।

–কেনো অনামিকা।

–সে আমার কে?

–ওই যে গালে বিশাল এক তিল ছিলো।

–আমি কি তোর মতো মেয়েদের কোথায় কি খেয়াল করি নাকি।

–দিয়া জানে তার বিভোর ভাই কেমন বুঝেছিস।তোর না বললেও চলবে।

–আমি দুঃখি দুঃখি ভাবে বললাম,বিভোর ভাই দেখলেন আপনাকে সুন্দর বলেছি বলে আমাকে বললো আমি নাকি সবাইকে সুন্দর বলি।

–উনি ভ্রু কুচকে বললেন,সুন্দর তো লাগছে না, তাহলে বললি কেনো?

–অন্য কারো কাছে জিজ্ঞেস করেই দেখেন।

–ওকে বিভোর তোর ফোন দে।বিহান ভাই রিয়াকে ভিডিও কল দিয়ে বললেন,
আচ্ছা রিয়া দেখো তো বিভোর কে কেমন লাগছে, একদম ই বিশ্রি লাগছে তাইনা রিয়া।

–আমি চেচিয়ে বললাম,এই রিয়া উনার কথায় সায় দিবি না।আমার ভাই কে অনেক সুন্দর লাগছে।

–রিয়া বললো,উনার থেকে মফিজ কেও সুন্দর লাগে বেশী।

–বিহান ভাই বললেন,যে বিভোর কে সুন্দর বলবে তার চোখ তুলে গরুর চোখ লাগিয়ে দেওয়া উচিত।

আমি আর একটা কথাও বললাম না রাগে।
হঠাত দেখি বিভোর ভাই গান তুলেছেন,
Love u my darling love do something something..

রিয়ার ওপাশ থেকে কাকিমনি বলছে,তোকে গান শোনাচ্ছে কে?সারাদিন পর এখন বই নিয়ে বসছিস তাও আবার ফোন চেপে যাচ্ছিস।ছেলেটা কে?তুই কি কারো সাথে রিলেশন এ আছিস।এত রোমান্টিক ভাবে তোকে কে গান শোনাচ্ছে।এখন কি তোর প্রেম করার বয়স।আমার অত ফাউ টাকা নেই রিয়া।এইবার রেজাল্ট টা দেখে তোমার বাবাকে জানাবো যেনো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেয়।দেখি কার সাথে কথা বলছো ফোন টা দাও।

বিভোর ভাই দ্রুত বললেন,বিহান ফোন টা ধর।

বিহান ভাই ওপাশে কারো সাথে ফোনে কথা বলছিলেন।

বিহান ভাই ফোন হাতে নিতেই কাকিমনি বিহান ভাই কে দেখে ভীষণ অবাক।বিহান ভাই মারাত্মক রিয়াকশন এর সাথে তাকালেন বিভোর ভাই এর দিকে।

চলবে,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন২)
২৫.
#WriterঃMousumi_Akter

–বিহান ভাই এর কন্ঠে গান মানে রাতের আকাশে সূর্য দেখার মতো।কাকিমনির মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে গানটা বিহান ভাই গেয়েছেন।এটা কাকিমনির জীবনের সব থেকে বড় ইতিহাস হয়ে গেলো।কাকিমনি আর বিহান ভাই ভিডিও কলে মুখোমুখি। দুজনের মুখ ই ফ্যাকাসে হয়ে আছে।বিভোর ভাই যে বিহান ভাই কে এইভাবে ফাঁসিয়ে দিবেন ভাবতেই পারিনি আমি।বিহান ভাই যে কি পরিমান অস্বস্তিতে পড়েছেন তা বলার বাইরে।ভয়ানক এক বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছেন বিভোর ভাই এর দিকে।বিহান ভাই এর লাইফে এই প্রথম এমন কোনো ঘটনা।
বিভোর ভাই যেনো কিছুই জানেন না,উনি আকাশ পানে তাকিয়ে বলছেন আকাশে কি মেঘ জমেছে বিহান নাকি কুয়াশা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।আমি মুখে হাত দিয়ে মুখ চেপে হেসে যাচ্ছি।কাকিমণি আশ্চর্যজনক ভঙ্গির মাঝে হেসে দিয়ে বললেন বিহান তুমি?আমি ভেবেছি রিয়াকে কে গান শোনাচ্ছে।কিছু মনে করোনা বাবা। আমি আসলে বুঝতে পারিনি।তাছাড়া তুমি তো কখনো গান গাও না তাই ভাল একটা বুঝে উঠতে পারিনি।কাকিমনি রিয়াকে চোখ রাঙানি দিয়ে বললেন তা আগে বলবি না বিহান ফোন দিয়েছে।এই মেয়েকে আসলে কি খাইয়ে মানুষ করছি তাই জানিনা।সে এখন তোর দুলাভাই হয়,শালীকে গান টান শোনাতেই পারে। শালী, দুলাভাই এর মাঝে চাচী শ্বাশুড়ির বা হাত দেওয়াটা কি খুব ভাল দেখায়।নে ফোন নে কথা বল আর ওদের আসতে বল।বিহান টা সত্যি বিয়ের পর অনেক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।

–কাকিমনি চলে গেলে রিয়া বিহান ভাই এর রাগি মুড দেখে বললেন,বিহান ভাই দেখেছেন কি শয়*তান ছেলে। সব দোষ ওই বিভোরের।আমার কোনো দোষ নেই কিন্তু।বিহান ভাই ফোন টা কেটে দিয়ে বিভোর ভাই এর দিকে তাকালেন।বিভোর ভাই যেনো কিছুই জানেন না।না জানার ভাব ধরে বললেন আচ্ছা বিহান হঠাত রেগে গেলি কেনো?কি সমস্যা ভাই।অনামিকার জন্য পরাণ পুড়তেছে।
আমি খুব জোরে হেসে দিতেই উনি ভয়ানক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন আমার দিকে।আমি আবার হাসি থামিয়ে দিলাম।জোর করে কি হাসি থামানো যায়।যখনি ভাবি আমি হাসবো না হাসলে বিপদ তখন ই হাসতে হাসতে মরে যায় আমি।এক মিনিট দম বন্ধ করে হাসি থামিয়ে রাখার পরেই আবার বোমা ফাটার মতো পেট ফেটে ভীষণ জোরে হাসি বেরোলো আমার।আমি হেসেই যাচ্ছি ভীষণ জোরে হাসি।ভূবন কাঁপানো হাসি।আমার হাসি দেখে বিভোর ভাই ও যোগ দিলেন হাসিতে।বার বার হাসি থামানোর চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই পারছিনা।সিরিয়াস মুহুর্তে হাসির রোগ টা বরাবর ই আমার আছে।যত হাসি থামানোর চেষ্টা করছি ততই হাসি আরো জোরে বাইরে বেরিয়ে আসছে।আর বিহান ভাই তত বেশী আগুন হচ্ছেন রাগে।কপালের চামড়া ভাজ করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।অতঃপর কি ভাবছেন রাগে জানিনা।বিভোর ভাইকে বললেন ফোন পাবিনা সাতদিন।দেখ আমি কি কি করি ফোন দিয়ে বলেই ফোন নিয়ে রাস্তার দিকে চলে গেলেন। বিভোর ভাই ও আমার ফোন দে, ফোন দে করতে করতে পেছন পেছন ছুটলো।

–সন্ধ্যার খানিক টা আগেই বিভা আপু আমাকে বললো এই দিয়া সন্ধ্যার পর আমার সাথে একটু কুরিয়ার অফিসে যেতে হবে। আম্মুকে বলেছি আম্মু বললো বিভোর কে বলতে কিন্তু দেখ বিভোর ফোন ই তুলছে না।আমি হাসতে হাসতে বললাম জানো বিভা আপু কি হয়েছে বলেই তখনকার সব ঘটনা খুলে বললাম।বিভা আপুও ভীষণ হাসলো।আসলে এটা হাসির ই ঘটনা ছিলো।বিভা আপু বললো দিয়া রেডি হয়ে নে কিছুক্ষণ পরেই বেরোবো কিন্তু।আপুকে কে বললাম আচ্ছা ঠিক আছে আপু।

–মামিকে দেখলাম, পায়রা গুলোকে খেতে দিচ্ছে।ইয়া বড় পায়রার খোপ রাখা।৫০ টার মতো পায়রা হবে।মামি শখ করেই পায়রা পেলেছে।আমি মামির হাত থেকে এক মুঠো গম নিয়ে পায়রার খোপের ভিতরে ছুড়ে মারলাম।পায়রা গুলো খাবার পেয়ে বাক বাকুম করছে আর খাচ্ছে।মা পায়রা গুলো খাবার নিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছে।মা সন্তানের এই ভালবাসা সব জায়গা ই সুন্দর দেখতে।মামিকে বললাম মামি বিভা আপু তো বাইরে যেতে বলছে আপুর সাথে।মামি বললেন,এই অসময়ে গেলে বিহান রাগ করবে।ও রাস্তায় ই আছে যাওয়ার সময় দেখা হবে তারপর ভীষণ বকাঝকা না শুরু করে।এর ই মাঝে বিভা আপু এসে বললো, এই দিয়া থাক যাওয়া লাগবে না বিহান কে ফোন দিয়ে বলেছিলাম আমি আর দিয়া একটু বাজারে আসছি।বিহান বললো,আপু আমি তোমার জিনিস এনে দিচ্ছি তোমাকে কষ্ট করে যাওয়া লাগবে না।রাস্তা থেকে এসে আমার ফোন নিয়ে গিয়েছে। মনে মনে ভাবলাম আমি যাবো এটা শুনেই কি উনি বিভা আপুর জিনিস আনতে গেলেন।কি একটা অবস্থা বিভা আপু টের ও পেলো না।

–মারুফা খালা অনেক দিন ধরে ধরেছে গ্রামে তার মেয়ের বিয়েতে আমাদের যেতেই হবে। যেতে হবে মানে যেতেই হবে।বিহান ভাই গ্রামে যাবেন না তার একটাই কারণ বিয়ে বাড়ি।বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য আমার মন কত উতালা অথচ উনি আমাকে যেতেই দিবেন না নিজেও যাবেন না।কেননা বিয়ে বাড়িতে অনেক মানুষ হয় সেটা উনার একটুও পছন্দ না।মারুফা খালার অনুরোধ বিহান ভাই ফেলতেও পারেন নি উনি আছেন খুব অসস্তিতে।তাও বলে দিয়েছেন বিয়ের দিন যাবেন জাস্ট খেয়ে চলে আসবেন।মারুফা খালা এ বাড়ি নিজের মতো সামলে রাখেন তাই উনার মেয়ের বিয়েতে মামা মামি কেউ না গিয়ে পারেন নি।বিয়ের দুই দিন আগে বড় মামা বড় মামি ছোট মামা ছোট মামি আর বিভা আপু চলে গিয়েছে। বিভোর ভাই যেতে পারেন নি তার ফোন আটকে আছে বিহান ভাই এর কাছে।এখনের মানুষ একদিন না খেয়ে থাকতে পারলেও ফোন ছাড়া থাকতে পারে না তাই বিহান ভাই বিভোর ভাইকে এই ভয়ানক শাস্তি টায় দিলেন।বিহান ভাই এর মন গলানো একটুও সোজা নয় উনি ফোন দিবেন না মানে দিবেন ই না।ফাঁকা বাড়িটায় ওই রাক্ষস মানবের সাথে একা একা বসবাস করতে হবে ভাবতেই কেমন লাগছে আমার।কি হবে এখন আমার।

–মামিরা মারুফা খালার বাড়িতে যাওয়ার দু’ঘন্টা পর ই বিহান কে তার এক ফ্রিলান্সার ক্লাইন্ট ফোন দিয়েছে।তারা নড়াইল ই এসছে কয়েক জন এস. এম. সুলতানের বাড়ি পরিদর্শনের জন্য।ইন্ডিয়া থেকে এসছে নড়াইল তাদের এক আত্মীয়ের বাসায়।তাদের খুব শখ বিহান ভাই এর বড়ি দেখার।বিহান ভাই বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন এখন রান্না হবে কিভাবে।বিভোর ভাই বেশ ভালোই রান্না পারেন।বিহান ভাই বিভোর ভাই বলে দিয়েছেন যদি রান্নায় হেল্প করে তবেই ফোন পাবে তার আগে নয়।বিহান ভাই আর বিভোর ভাই রান্নায় মনোযোগ দিয়েছেন।

–বিহান ভাই আমাকে বললেন,নামেই বিবাহিত মহিলা। আসলে মহিলা নয় তুই হচ্ছিস মহিলা আক্তার পুরুষ। একটা কাজ ও তো ঠিক ভাবে পারিস না তুই।ভাগ্য ভালো আম্মুর এই নিষ্পাপ ছেলের বউ তুই তা হলে তোর কপালে দুঃখ ছিলো।বাই এনি চান্স তোর দাদা,কাকা, বাপ এদের কোয়ালিটির অত্যাচারী জামাই জুটতো তাহলে দেখা যেতো দিয়া আর দিয়া নেই রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো পাগল দের মতো অবস্থা।

–আপনার সমস্যা টা কোথায় বিহান ভাই?আপনি আমার বংশের মানুষ টেনে এনে কি শান্তি পান।ওরা আপনার কি করেছে।আমি যেনো আর কোনদিন দেখি না আপনি আমার বংশের মানুষের টান এনেছেন।

–সত্য কথা বললে এত গায়ে লাগে কেনো?

–আপনার ছেলে মেয়ে হলে আমি কিভাবে তাদের বলি শুধু একবার দেইখেন।বলবো তোর জাতের মতো হইছোস।

–আলহামদুলিল্লাহ তাই যেনো হয়।আমার জাতের মতো হলে ছেলে মেয়ে হবে হীরার ক্ষনি।যেনো ওর মায়ের জাতের মতো না হয়।তাহলে আর মান সম্মান থাকবে না।

–ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কি আমাকেই অপমান করলেন?উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,মহিলা আক্তার পুরুষ বললেন কেনো?

–উনি ডিমের কড়াই আমার সামনে দিয়ে বললেন,খোসা ছড়িয়ে দে একটুও যেনো না ওঠে।প্রায় প্রায় দেখি গেঞ্জি পরিস।মানুষ মহিলা পরিস পুরুষের গেঞ্জি তাহলে তো তাই হলো তাইনা?

–ফ্লোরে টুল নিয়ে বসে ডিমের খোসা ছড়াচ্ছি উনি গিয়েছেন বাইরে,বিভোর ভাই গান গাইছেন আর খুন্তি চালাচ্ছেন।আমি পড়েছি মহা বিপদে বিভোর ভাই এর সাথে গল্প করতে করতে ডিমের সাদা অংশ সব খোসার সাথে উঠে গিয়েছে শুধু কুসুম অবশিষ্ট আছে।কি হবে এখন আমার।

চলবে,