এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা ২ পর্ব-২৮+২৯+৩০

0
1526

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা (সিজন ২)
২৮.
#WriterঃMousumi_Akter

সময় টা গরমকাল,চারদিকে ভ্যাপসা গরম।চারদিকে গ্রীস্মের ভীষণ উত্তাপে হাঁপিয়ে উঠেছে প্রকৃতি। মাঠ ঘাট নদী-নালা শুকিয়ে খা খা করছে পানির অভাবে রাস্তাঘাটে ধুলাবালির ছড়াছড়ি।কেটে গেছে ছয় ছয় টা মাস।বিগত ছয়মাসে বিহান ভাই একবার ও নড়াইলে আসেন নি।এ শহর কি আর তাকে টানছে না।সে তো বলে এ শহরের টানে সে ঢাকা থাকতেই পারে নাহ।আসবেই বা কি করে তার তো ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম চলছিলো।তার ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম শেষ হয়ে রেজাল্ট ও বেরিয়েছে।ঢাকা মেডিকেল এ টপ করেছেন বিহান ভাই।আমিও সেকেন্ড ইয়ারে উঠে গিয়েছি।সময় টা বেশ খানিক এগিয়ে গিয়েছে।বিহান ভাই এর এমন সাফল্য পরিবারের সবাই অনেক বেশী খুশি।বিহান ভাই এর থেকে ফ্যামিলির সবাই যেনো আরো বেশী খুশি।বিহান ভাই এর রেজাল্ট যে এমন টায় হবে সেটা সবার ই ধারণা ছিলো।কিন্তু বিহান ভাই এর এ নিয়ে তেমন মাথাব্যাথা নেই।কেননা,তার এমন প্রাপ্তি এ প্রথমবার নয় তার জন্মের পর থেকেই প্রত্যেকবার ই এমন কিছু করেছেন।বহুকাল পর উনি নড়াইল আসছেন আজ।উনার এই ভীষণ ভালো রেজাল্ট এ আমার মনে হয় কিছু একটা গিফট করা উচিত।কিন্তু উনি কি গ্রহন করবেন।উনার যে মারাত্মক চয়েজ। দেখা গেলো বললো,হাউ ডিজগাস্টিং ইওর চয়েজ দিয়া।আমি পরবো এত সস্তা আর বাজে কালারের ড্রেস তুই এটা ভাবলি কিভাবে দিয়া।এটা দিয়ে বরং সর্দি মুছিস সেটাই উত্তম হবে।তাছাড়া আরো কত কি বলবেন তার ঠিক ও নেই।উনি বদলেছেন,উনার বিহ্যাভ সব কিছুই বদলে গিয়েছে কিন্তু আমার সাথে সেই ছোট বেলার মতোই থেকে গিয়েছেন।কি সমস্যা আমার সাথে উনার।উনি বলে দিয়েছেন আমাকে খবরদার বদলে যেতে বলবি না দিয়া।আমি বদলে গেলে তুই সহ্য ও করতে পারবি না।তাই আমাকে ফোর্স করবি না বদলে যেতে।

ফোন টা হাতের কাছে পাচ্ছি না।রাখলাম কোথায় সেটাও জানিনা।ইদানিং কি হয়েছে আমার। সব কিছুই শুধু ভুলে যাচ্ছি।বিহান ভাই জানলে বলবে আমাকে পাবনা পাঠাতে হবে।ফোন খুজেও কোথাও পাচ্ছি না,এই ফোনের কি হাত পা গজিয়েছে আমি সেটাই ভাবছি। তা না হলে কোথায় গেলো এই বিরক্তিকর ফোন।এই ফোন আজ পাইলে ওর খবর আছে।অনেকক্ষণ খুজতে খুজতে দেখলাম ড্রেসিন টেবিলের উপর সাজুগুজুর বক্সের উপর ই আছে।রাগে রাগে ইয়া বড় একটা আছাড় দেওয়ার সিধান্ত নিয়েও দমে গেলাম।ফোন ভেঙে ফেললে কোথায় পাবো ফোন।এটা ফোন না হয়ে অন্য কিছু হলে এর আজ সিওর ই খবর ছিলো।

–রিয়ার নাম্বার বের করে রিয়াকে কল দিলাম।

–রিয়া ফোন তুলে বললো হ্যাঁ দিয়া বল।

–বলছি একটু রেডি হয়ে রাস্তায় আয় তো রিয়া।

–কোথায় যাবি?

–একটা জিনিস কিনবো?এসে বলছি।

ফোন কেটে মামিকে বলে রাস্তায় এসে দেখি রিয়া দাঁড়িয়ে আছে।আমি আর রিয়া দুজনে রওনা হলাম।হুট করেই মেহু আপুর সাথে দেখা হলো।মেহু আমাদের দেখে ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বললো কি ব্যাপার মিসেস ডাক্তার আর ডাক্তারের শালী দুজনে মিলে কোথায় যাওয়া হচ্ছে চুপি চুপি।

–আপুকে বললাম একটু শপিং এ যাচ্ছি আপু তুমি যাবে?

–এখন দেখা হলো তাই।না হলে তো আমাকে ছাড়ায় যেতে দুজনে।

–বেশী কাজ নেই আপু তাই আর তোমাকে বলি নি।

–এইযে বিশিষ্ট নামকরা ডাক্তারের বউ,আমাদের কিন্তু আজ চিকেন ফ্রাই,আর স্পেশাল নুডুলস খাওয়াতে হবে।

–চোখ ড্যাব ড্যাব করে বললাম,টাকা নেই আপু আমার কাছে।আমি গরিব।

–দেখ রিয়া কি চিটার।এত কিপটা কবে হলি রে দিয়া তুই।বিহান ভাই তোকে টাকা দেয় না এটা জীবনেও বিলিভ করবো না।

–আসলেই দেয় না আপু।তাকে ভাই ডাকলে সে নাকি কিছুই দিবে নাহ।তাছাড়া বলে দিয়েছে আমি যেনো আদবের সাথে যা লাগে তাই যেনো চেয়ে নেই।আমি কেনো চাইতে যাবো বলোতো।তবে বিভোর ভাই এর কাছে টাকা পাঠায় মাঝে মধ্য না
নেওয়ার এক্টিং করি ঠিক ই আসলে আমি টাকা মনে মনে চাই।ভাবি যে এভাবে সেধে তো দিতেই পারে।

–রিয়া আর মেহু আপু বললো সবাই কি আর বিহান ভাই রে দিয়া।কিছু ছেলে এই সুযোগে না দেওয়ার অজুহাত খোজে।
বিভোর ভাই আপনি আর এখানেও?

তিনজনে শপিং মলে গিয়ে বিহান ভাই এর জন্য শার্ট খুজছি।কয়েকশ শার্ট খুজেও মনের মতো পেলাম না।এর ই মাঝে দেখি বিভোর ভাই।বিভোর ভাই থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট খুজছেন।গরমে বিভোর ভাই এ ধরনের প্যান্ট ই পরে থাকেন।

রিয়া আর বিভোর ভাই ঘুরতে ঘুরতে দুজনের সাথে বিশাল এক ধাক্কা খেলো।দুজন দুজন কে দেখে বেশ অবাক হয়ে যায়।বিভোর ভাই ভুত দেখার মতো চমকে গিয়ে বললেন,

–রিয়া তুমি এখানে?

–যেখানে যাবো আপনাকে কি থাকতেই হবে বিভোর ভাই।আপনি ছাড়া এমন দিন কানা হাতি কেউ নেই যে আমার মতো একটা বড় সড় মেয়েকে দিন দুপুরে ধাক্কা মেরে ফেলে দিবে।

–দেখো রিয়া আমি কিন্তু বেশ বুঝতে পারছি যে তুমি ইচ্ছা করেই আমাকে ধাক্কা টা মেরেছো।আমি হয়তো তোমাকে দেখিনি এ কথা সত্য হতে পারে কিন্তু তুমি আমাকে দেখো নি এটা মানতে পারছি না।তোমার ইচ্ছায় ছিলো আমার উপর পড়ার।

–একদম বাজে কথা বললে গলা টিপে দিবো কিন্তু?দেখুন মানুষ জন কিভাবে হাসছে।ছিঃছি আমার জীবনে এত মারাত্মক লজ্জা আমি পাই নি।

–ভাজ্ঞিস রিয়া তুমি আমার উপর পড়েছো অন্য কেউ হলে কি হতো ভাবো?

–আমি আপনার উপর নয় আপনি বরং আমার উপর পড়েছেন।উঠুন বলছি উঠুন আগে।নায়ক রিয়াজের মতো কি আজীবন পড়ে থাকতে চান নাকি?

–চোখ টিপে বললেন আমি তো সেটাই চাই রিয়া।যদি তোমার আপত্তি না থাকে।

–উঠুন আগে।
এই মহিলাদের শপিং মলে আপনার কি হে?

–এই যে বিশেষ এক ধরনের মহিলা এই শপিং মলের কোথায় লেখা আছে যে এটা মহিলাদের মল।এখানে ছেলে মেয়ে উভয়ের ড্রেস পাওয়া যায়।বরং এই দোকেন ছেলেদের জিনিস পাওয়া যায় তুমি এখানে কেনো?আমার জন্য আন্ডারওয়্যার কিনতে এসেছো বুঝি।

–ছিঃনির্লজ্জ একটা।মুখে কি কিছু আটকায় না আপনার।

দুজনে উঠে একটু স্বাভাবিক হয়ে নিয়ে একটা কসমেটিক্স এর দোকানে সামনে দাঁড়ালো দুজনে।

–আচ্ছা বাবাহ সরি!এনি ওয়ে রিয়া এই কফি কালারের ড্রেসে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।ট্রাস্ট মি!ভীষণ সুন্দর লাগছে আমি চোখ সরাতেই পারছি না রিয়া।

-কি ব্যাপার বিভোর ভাই!মতলব কি?আজ আমার এত প্রশংসা এ যেনো অতি প্রশংসা।আকাশে কি আজ দিনের বেলা পূর্ণিমার বিশাল চাঁদ উঠেছে নাকি।

–হুপ!আমি সারাজীবন ই তোমার প্রতি ক্রাশড।বাট তুমি বুঝেও না বোঝার ভান করো কেনো বলোতো।

–বাসা থেকে ভেবেই বেরিয়েছেন যে আজ আমাকে লেকফুল করেই ছাড়বেন।আমার সাথে এসব বলে লাভ নেই।

–আমার চোখের দিকে তাকাও রিয়া কি মনে হয় তোমার।এই চোখ কি বলতে চাই তুমি কি বুঝো না।

–এই চোখ তো ভীষণ দুষ্টু ছোট বেলা থেকেই দেখছি।

–আই লাইক ইউ রিয়া এন্ড আই লাভ ইউ রিয়া,রিয়েলি লাভ ইউ রিয়া।তুমি কেনো বুঝো না রিয়া তোমাকে ভাল লাগে আমার।আমি জানি এটা তুমি বুঝো।

–আপনি তো এমন সবাই কে বলেন।

–আমি প্রমিজ করছি কারো সাথে ফান করবো না তোমার মতো করেই চলবো।যা বলবে তাই।

–রিলেটিভ এর মাঝে রিলেশন টিলেশন করার ইচ্ছা নেই।

–রিলেটিভ তো কি হয়েছে।মানুষ কি করেনা।

–দেখুন আমি করবো না ব্যাস।

–ফ্যামিলি নিয়ে ভাবছো,আমি ম্যানেজ করবো।

— আপাতত কিছুই ভাবছি না।সরুণ দিয়া আর মেহু আপু খুজবে।

–খুজুক তার আগে একটা জিনিস দেখায়।

–রেশমি চুড়ি দেন তো ভাই।

–কি কালার ভাইয়া।

–লাল,নীল,সাদা,কালো,সবুজ।

–কার জন্য এসব বিভোর ভাই?

–তোমার?

–আপনি দিলে নিবো ক্যানো?

–কিছু ভেবে নিয়ে নাও।

–কি ভাববো আপনাকে,বয়েই গেছে।

–প্লিজ রিয়া,রিকুয়েষ্ট করছি।জীবনে কিছুই দেওয়ার সাহস পায় নি।এইটা ফিরিয়ে দিও না।

দোকানদার বললও,ভাই যখন রিকুয়েষ্ট করছে নিন না।

–কাউকে বলবেন নাতো আমাকে চুড়ি দিয়েছেন, ক্ষেপাবে আমাকে।

–প্রমিজ বলবো না।বাট পরে ছবি দিও।

–আচ্ছা দিবো,বাই।

–মেহু আপু বললো,রিয়া তোর হাতে কি চুড়ি।কত করে নিলো রে ডজন।

–রিয়া হেসে বললো ৬০ টাকা।

–আমাকে একট দে রিয়া,এত চুড়ি কি করবি।

–না আপু এখান থেকে দেওয়া যাবে না।দোকানে ভরপুর আছে।

–কেনো স্পেশাল কিছু আছে এতে।

–আছে তো বটেই।

–পুরা মল খুজে বিহান ভাই এর জন্য একটা এ্যাশ কালারের শার্ট কিনলাম।উনার কি পছন্দ হবে সেই ভেবে আরো ঘেমে যাচ্ছি।

–ওই দিকে মেহু আপু কার জন্য যেনো শার্ট খুজে চলেছে।আপুকে বললাম কার জন্য কিনবা আপু?

–আপু হেসে বললো ফ্রেন্ডের জন্মদিন তো তাই।

কেনাকাটা শেষ করে বাসায় ফিরে এলাম।বাসায় এসে ভাল ভাবে শার্টটা মেলে ভাবছি উনার কি সত্যি পছন্দ হবে নাকি ছুড়ে ফেলবে।এই প্রথমবার তাকে ভেবে কিছু কেনা আমার।

চলবে,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন২)
২৯.
#WriterঃMousumi_Akter

–ঘড়িতে ঠিক ঠিক সময় ৬ঃ৩০ মিনিট।মাত্রই সন্ধ্যা নেমেছে শহরে,অলিতে গলিতে জ্বলে উঠেছে কৃত্রিম আলোকরশ্মি।ক্রমশ চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। দিনের আলো অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে।ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ও শুরু হয়েছে।বিহান ভাই এর জন্য কিনে আনা শার্ট নিয়ে পায়চারী করেই যাচ্ছি একবার রুমের এপাশ আরেকবার রুমের ওপাস।নিচে থেকে মামি ডাকছেন,দিয়া আবির এসছে। সব ঘরের লাইট অন করে ছাদ থেকে কাপড় গুলো এনে রান্নাঘরে আয়।ভাইয়ার কথা শুনে রুমের লাইট অন করে ছুটে এলাম নিচে।

–ভাইয়াকে দেখে বেশ অবাক হয়ে গেলাম আমি।হুবহু এমন ই একটি শার্ট আজ মেহু আপু কিনেছে তার ফ্রেন্ডের জন্য।সেই শার্ট টা সেইম টু সেইম এমন ই ছিলো।চোখ ডলাডলি করে ভাল ভাবে দেখি হ্যাঁ তেমন ই তো লাগছে সেই শার্টের মতো।

–ভাইয়া আমাকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো কি দেখছিস দিয়া।

–আমি বললাম ভাইয়া কবে কিনলে শার্ট?

— ভাইয়া নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে নিয়ে বললো কেমন লাগছে আমায় দিয়া।

–আমার ভাইয়া লাখে একটা ছেলে তাকে কি আর খারাপ লাগে।বললে না কবে কিনলে।

–ওই একটা ফ্রেন্ড গিফট করেছে।

কি আশ্চর্য ব্যাপার!ভাইয়াকেও গিফট করেছে।হতেই পারে দোকানে তো আর একটায় ছিলো না শার্ট।অন্যকেউ ও কিনতে পারে।

–আমি দুষ্টুমি করতে বললাম,ছেলে না মেয়ে ফ্রেন্ড ভাইয়া।

–ভাইয়া হেসে দিলো কিন্তু উত্তর দিলো না।

ভাইয়া মামির সাথে কথা বলে বেরিয়ে গেলো।

মামির সাথে হাতের হাত রান্নায় সাহায্য করছি আমি।মাগরিবের আজান দিলে মামি নামাজে চলে গেলে আমি সব খাবার ডায়নিং এ সাজিয়ে দিলাম।মামি নামাজ শেষ করে দ্রুত আবার নিচে চলে এলো।সব কিছু গোছগাছ হয়ে গেলে মামাকে ফোন দিয়ে বললো বেশী করে ছোট মাছ নিয়ে আসতে। রাতেই মাছ কেটে রাখবে সকালে রান্নার জন্য।

–ওই দিকে বিভোর ভাই বাজারে ছোটাছুটি করে চলেছে।বিভা আপু আর তার হাজবেন্ড এসেছে তাছাড়া বিহান ভাই এর জন্য ও রান্না করছেন বড় মামি।আমাদের কাজ গোছানো শেষ হলে আমি বড় মামির পিছ পিছ ঘুরছি আর এটা ওটা মুখে দিয়ে খাচ্ছি।বড় মামি মাঝে মাঝে মজা করে বলেন, কি ব্যাপার বৌমা আজ এত খুশি খুশি লাগছে যে।লজ্জা তো পেয়েছি মারাত্মক পরিমণে সেটা ঠিক,তবে লজ্জা ভেতরে আটকে মামিকে বললাম আমাকে বৌমা টৌমা বলবে না মোটেও মামি।মামি এক গাল হাসলেন আমার কথা শুনে।এখানে এসছি বিহান ভাই কত দূর এসছেন সে খবর নিতে।সরাসরি তো আর কাউকে বলতে পারছি না।এইদিকে যে নিজে ফোন করবো তাও ভীষণ লজ্জা লাগছে।বিভোর ভাই ব্যাস্তভাবে কোথা থেকে এসে বললেন আম্মু আমি রাস্তায় যাচ্ছি বিহান কে এগিয়ে আনতে।মামি বললেন,বিহান কত দূরে এসেছে বিভোর।বিভোর ভাই বললেন,আম্মু চৌরাস্তায় চলে এসেছে।

চৌরাস্তায় মানে আর ১০ মিনিটে উনি চলে আসবেন।আমি এক পা দু’পা করে নিজের রুমে চলে গেলাম।আজ উনি আসবেন বলেই ভীষণ লজ্জা লাগছে আমার।মন আর কান দুটোই রাস্তায় আছে। যে কোনো মুহুর্তে উনার আগমন ঘটবে।মন চাচ্ছে একটা শাড়ি পরতে কিন্তু বিভা আপু আর দুলাভাই আমাকে ভীষণ লজ্জা দিবে যে উনি এসছেন বলে আমি সেজেছি।
রুম দিয়ে পায়চারী করতে করতে হঠাত বাইকের শব্দ কানে এলো।শব্দ টা ধীরে ধীরে এ বাড়ির দিকে এগোচ্ছে।আর আমার বুকের ধুকপুক আওয়াজ ও বেড়ে চলেছে।

আমি এক ছুটে বারান্দায় এসে দেখি উঠানে কালো রঙের বাইক টা থামিয়ে মাথা থেকে হেলমেট টা খুলে এলো মেলো চুল গুলোর মধ্য হাত চালিয়ে ঠিক করছেন।পরনে ব্লু জিন্স,গায়ে ছাই রঙা শার্ট, পায়ে আজ জুতা নেই সিম্পল চটি।বাইকে বসেই আড়চোখে একবার বারান্দার দিকে নজর দিলেন উনি।চোখে চোখ পড়তেই লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলাম আমি।চুল ঠিক ঠিক করতে করতে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন সোজা দোতলার বারান্দায়।যেখানে দাঁড়িয়ে আছি আমি।এত মানুষের ভীড়ে উনার চোখ জোড়া কি আমাকেউ খুজছে।

বড় মামা, ছোট মামা, মামিরা সবাই এগিয়ে গেলো দুলাভাই আমাকে ডেকেই চলেছেন নিচে আসার জন্য।বিভা আপু ও ডেকে চলেছে কিন্তু আমি লজ্জায় নিচেই এলাম না।বিহান ভাই সবার সাথে কুশল বিনিময় করছেন।বিভোর ভাইয়ের বাবা বললেন,কিরে বাপ গাড়ি থাকতে এত কষ্ট করে বাইকে আসিস কেনো?কষ্ট হয়ে যায় না তোর।বিহান ভাই হেসে বললেন,কাকু আমার গাড়ি ভাল লাগে না এই বাইক ই ভীষণ প্রিয় আমার।বড় মামি বললেন,বিহান বাবা আমি কিন্তু তোমার জন্য রান্না করেছি, রেস্ট নিয়ে চলে এসো।বড় মামা বললেন,তুমি কি পাগল হয়ে গিয়েছো ছেলেটা মাত্র এসছে এখন আবার তোমার ঘরে যাবে, তুমি ভাত তরকারী পাঠিয়ে দাও।বিহান ভাই বললেন, কোনো ব্যাপার নাহ কাকু লং টাইমের জন্য এসছি প্রতিদিন ই তোমাদের সাথেই খাবো।আজ রাতে আর খাওয়ার ইচ্ছে নেই পথে এক ফ্রেন্ডের মা জোর করে খাইয়ে দিয়েছে।এইদিকে দুলাভাই ডেকে চলেছেন,শালাবউ কোথায় তুমি দেখে যাও কে এসছে।মনে মনে বলছি দুলাভাই আপনার না খবর আছে তাও ভীষণ খবর।বার বার আমার নাম ধরে ডেকে আমার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন।

আমার মামা বাড়ি আর পাঁচ টা ফ্যামিলির মতো নয়।এ বাড়িতে মাত্র দুটো ছেলে বিহান ভাই আর বিভোর ভাই আর একটায় মেয়ে বিভা আপু।তিন ছেলে মেয়েকে কেউ কখনো আলাদা করে দেখেই নি। তাদের দেখে মনে হয় আপন তিন ভাই বোন।চেহাররা ও ভীষণ মিল।দুই মামির এমন ভাব দেখে মনে হয় যেনো তারা দুই বোন।এই দুই মামির জন্য এই পরিবারে এত শান্তি।বিহান ভাই আর বিভোর ভাই দুইজন দুইজনের কলিজার থেকে প্রিয়।সারাক্ষণ দুজন দুজন কে পঁচাবে কিন্তু দুজন এক সাথে ছাড়া থাকতে পারে না।তাদের সাথে যুক্ত আছি আমি আর ভাইয়া।ভাইয়া আর আমিও এ বাড়ির ছেলে মেয়ে।এ বাড়িতে যা কিছু করা হয় ভাইয়া আর আমি বাদ যায়।ভাইয়া আর বিহান ভাই বিভোর ভাই প্রায় এক ই বয়সী ভীষণ ভাব তিনজনের।মানুষ বলে তিন জমজ।

–বিহান ভাই সবার সাথে কথা শেষ করে নিচে থেকেই হাত মুখ ধুয়ে উপরে উঠতে উঠতে বললেন,আম্মু ভীষণ ক্লান্ত আমি এক্ষুনি ঘুমিয়ে যাবো।আজ আর খাবো না।

–মামি বললেন,কিছুই খাবি না।

–বিহান ভাই না বলে উপরে চলে এলো।

উনাকে রুমে ঢুকতে দেখেই গোছানো আলনা গোছানোর ভান করছি।

–দরজার পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকে ব্যাগ টা ফ্লোরে রাখলেন।চোখে মুখে হাতে পায়ে পানি চিক চিক করছে,গায়ের শার্ট ঘামে ভিজে লেপ্টে আছে পিঠের সাথে।উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন,কি ব্যাপার কাজের নেয়ে ছকিনা দেখছি কাজে খুব ই বিজি আছে নিচে যে এত ডাকাডাকি হলো কাজের জন্য যাওয়া হলো না বুঝি।কথা বলতে বলতে আমার গায়ের ওড়না টেনে নিয়ে হাত পা মুছতে শুরু করলেন।

–আমি দ্রুত কোথাও ওড়না না পেয়ে ওনার জন্য কেনা শার্ট দ্রুত গায়ে জড়িয়ে বললাম,এটা কি নতুন অসভ্যতা শিখেছেন গায়ের ওড়না দিয়ে হাত পা মুছছেন।

“আমার কথার উত্তর না দিয়ে বললেন,নিচে যাওয়া হলো না কেনো ভ্রু উচিয়ে?”

“উনার দিকে না তাকিয়ে আলনার দিকে তাকিয়ে বললাম আলনা গোছাচ্ছি তো তাই যেতে পারিনি।না হলে তো এসে বলবেন আমি পিচা*শ ঘর গোছায় না।”

“উনি পা মুছতে মুছতে বললেন,সিরিয়াসলি আর কত বেয়াদব হলে তুই ভাল হবি।না মানে তোর বেয়াদবির লিমিট কোন পর্যন্ত।”

“এসেই শুরু করেছেন।গত ছয়মাসের অত্যাচার এখন করবেন নাকি।সারা রাস্তা কি ভাবতে ভাবতে এসেছেন যে আমাকে এসে এসব বলবে।”

“এত চটে যাওয়ার কারণ কি বেয়াদব মহিলা।”

“একটা মেয়ের গায়ের ওড়না টেনে বলছেন চটে যাওয়ার কারণ কি?”

“তুই তো মহিলা,অসভ্য বেয়াদব ধুরন্ধর বিবাহিত পাপী মহিলা।নিজেকে মেয়ে দাবি করিস কোন লজিকে?”

“মেয়ে আর মহিলা কি আলাদা।”

“এটাও জানিস না, অশিক্ষিত মহিলা।ভালো বই না পড়ে সারাদিন উপন্যাস পড়লে যা হয় আরকি।”

“ওড়না নিলেন কেনো?”

“বউ এর ওড়না নিয়েছি,এতে এত রাগের কি আছে।আমার সামনে কিছু পরলেই বা কি না পরলেই বা কি।তুই চাইলে এই গরমে আমার সামনে বিকিনি পরতেও পারিস, আই ডোন্ট মাইন্ড।তাছাড়া আমার বউ এর ওড়না আমি নিয়েছি তোর বাপের কি বুঝলাম নাহ।”

“আমাকে আবার বউ ও ভাবেন আপনি?তা কোথায় আপনার সে শ্বশুরের মেয়ে।স্যাকা ট্যাকা দিছে নাকি।কথা টা খোঁচা দিতেই বললাম কেননা আমার সন্দেহ উনি আমাকেই শ্বশুর মেয়ে মনে করেন।”

“তো ভাবিনি কবে?বিয়ে করেছি বউ ছাড়া কি কাকিমা ভাববো নাকি।আমি স্যাকা খেয়েছি তাই নাকি, কিভাবে খায় সেটা পানি দিয়ে গুলিয়ে নাকি পান্তা ভাতে।”

“দেখুন আপনি এসেই কতগুলো আজে বাজে কথা বলেছেন আমাকে পাপি,অসভ্য,বেয়দব, অশিক্ষিত।তা আজ কি পাপি টা নতুন যোগ করলেন বিহান ভাই।”

“তুই তো মহাপাপী বলেই ভ্রু কুচকে এক প্যান্টের পকেটে হাত গুজে দাঁড়ালেন আমার সামনে।ভ্রু নাচিয়ে বললেন কি বুঝিস নিতো?অকে আমি বুঝাচ্ছি তোকে।
প্রথমত স্বামিকে ভাই বলে ডাকিস।তারপর স্বামির সাথে এতদিন পরে দেখা একটা সালাম ও দিস নি।আবার আলনা গোছানোর নামে মিথ্যা বলেছিস তাও আবার নিজের স্বামির সাথে।তাছাড়া স্বামির কোনো সেবাযত্ন করিস না আরো মুখে মুখে তর্ক করে বেয়াদবি করিস।
আগের যুগের মহিলারা কিভাবে স্বামির সেবা যত্ন করতো জানিস।দাদী নানীদের দেখেও কিছু শিখিস নি।শিখবি কিভাবে তোর দাদি তো আর তোর দাদার সেবা যত্ন করে নি।শোন আমি বলছি স্বামিরা বাড়িতে আসলে দৌড়ে গিয়ে পানি এগিয়ে দিতো কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করতো।এমন কি হাতে লাঠি ধরিয়ে দিয়ে বলতো আমার অন্যায় হলে মারুন স্বামি।সারারাত স্বামির পা টিপতো।”

“বাবাহ এত ভক্তি করতো?লাঠি এগিয়ে দিতো।আর আগের যুগের স্বামিরা বুঝি কিছু করতো না।”

“হুম করতো তো দায়িত্ব নিয়ে বউ কে ১৮-২০ বছর প্রেগন্যান্ট রাখতো। এটা ছিলো তাদের বিশেষ ট্যালেন্ট। ”

“এক ভাবে ১৮-২০ বছর প্রেগন্যান্ট। ”

“এটাও বুঝিস নি গাধী,আগের মহিলাদের কম হলেও ১৫-১৬ টা করে বাচ্চা হতো তার বেশী ছাড়া কম হয় নি।তোর দাদির উনিশ টা ছেলে মেয়ে থেকে এখন ৪ টা আছে।আমিও ভাবছি তোর দাদার রুলস ফলো করবো ১৯ টা সন্তানের মা বানাবো তোকে।”

আমি ভীষণ ভাবে রেগে উনার দিকে তাকালাম।মানে এই মানুষ টা এত লজিক কোথায় পায়।এর মাথায় এত এত কথা কিভাবে আসে।

চলবে,,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন২)
৩০.
#WriterঃMousumi_Akter

“দিয়া স্বামির আদেশ ঠিকঠাকভাবে পালন না করলে আর স্বামির সেবাযত্ন না করলে জীবনেও জান্নাত পাবি নাহ।কিহ ভাবছিস তো এটা আমি বানিয়ে বানিয়ে বলছি তো সবার কাছে জিজ্ঞেস করে দেখ।এখনো সময় আছে দিয়া আমার সেবাযত্ন কর।আসলে আমি তোর ভালো চায় তাইতো তোকে ভাল বুদ্ধি দিচ্ছি।আমার পিচ্চি বউটা এমন পাপ করবে আমি কি আর তা হতে দিতে পারি।”

“তা এখন আমাকে কি করতে হবে বিহান ভাই?আসলে এসব কেনো বলছেন আসল কাহিনী কি?”

“সারাদিন বাইক চালিয়ে পা হাত শরীর প্রচুর ব্যাথা হয়েছে একটু টিপে দিবি।”

“পারবো না আমি।”

“দে না দিয়া এমন করিস কেনো?ছোট্ট আগুল গুলো দিয়ে চুলের মধ্য দিয়ে একটু চুল টেনে দে মাথা ধরেছে আমার।”

“পারবো না একটুও।”

“একটু দিলে কি হয় দিয়া।এমন করিস কেনো?”

“মোটেও পারবো না অনেক বাজে কথা বলেছেন আমাকে আপনি।”

“উনি তীক্ষ্ণ ভাবে দেখলাম আমার দিকে তাকিয়ে আছেন? কি দেখছেন কি সেটাই তো বুঝতে পারছি না।”

“আমার গায়ের উপর থেকে ছো মেরে শার্ট টা নিয়ে উনার বা হাত থেকে ওড়না টা আমার দিকে ছুড়ে মারলেন।”

“শার্ট টা নিতে নিতে বললেন,শুনলাম পুরা শহর তন্ন তন্ন করে ফেলছিস বয়ফ্রেন্ডের জন্য শার্ট কিনতেছিস।এই নাকি সেই শার্ট ওয়াও যাক তোর চয়েজ এর উন্নতি হয়েছে আর শার্ট টাও মারাত্মক সুন্দর হয়েছে।তা এত সুন্দর শার্ট তোর ওইসব পাতিশিয়ালের মতো বয়ফ্রেন্ডের গায়ে তো মানাবে না।শুধু শুধু টাকা নষ্ট করেছিস।এসব মানায় আমার গায়ে বুঝেছিস।কি আমার কথা শুধু গিলছিস বিলিভ হচ্ছে না জানি।ওকে তাহলে পরেই দেখায়।
শার্টের বোতাম খুলে আমার কেনা টা পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন হাউ হ্যান্ডসাম ইওর হাব্বি দিয়া। নিজেকে দেখে ভীষণ বিস্মিত হচ্ছি ছেলেটা এত হ্যান্ডসাম কিভাবে হতে পারে।”

উনার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে রইলাম আমি।উনি কিসব বলছেন আর বয়ফ্রেন্ড ই বা কে?

“কি ব্যাপার ওভাবে পেত্নির মতো তাকিয়ে কি ভাবছিস? তোর বয়ফ্রেন্ড কে কি উপহার দিবি।পুরাণ মার্কেট থেকে লেডিস প্যান্ট কিনে দিস।”

“আপনাকে বলেছি নাকি বয়ফ্রেন্ডের জন্য কিনেছি।”

“সে তুই যার জন্যই কিনিস এটা মানিয়েছে ভালো আমার গায়ে। এটা আমি গায়ে দিয়েই ঘুমোচ্ছি যেনো রাতে খুলে নিস না।”

“এখন ঘুমোবেন। ”

“হ্যাঁ তার আগে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাকি আছে করতে হবে?”

“কি কাজ আছে আপনার।”

উনি আলমারি খুলে সমস্ত ভাজ করা কাপড় সোফার উপর ভাজ ভেঙে ফেলতে শুরু করলেন।আলনার সমস্ত কাপড় টেনে টেনে সোফায় রাখলেন।আমি চোখ ড্যাব ড্যাব করে দেখছি উনি আসলে কি করতে চাইছেন টা কি।উনি এসব ভাজ করা কাপড় সব এলোমেলো করছেন কেনো?সমস্ত কাপড় এলোমেলো করার পর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

–আচ্ছা দিয়া আমি ভীষণ ক্লান্ত ঘুমোচ্ছি।তুই আলনা গোছাতে থাক।

কি আশ্চর্য বিহেভ উনার।গোছানো জিনিস নষ্ট করে বলছেন আবার গোছাতে।

–আমি খানিক টা চটে গিয়ে বললাম গোছানো আলনা নষ্ট করলেন কেনো?আর আলমারির কাপড় ফেললেন কেনো সব।

–কারণ গোছানো আলনা নিয়ে মিথ্যা বলেছিস যে তুই আলনা গোছাচ্ছিলি।

–তাই আপনি আলমারির সমস্ত ভাজ করা কাপড় ভাজ ভেঙে এলোমেলো করবেন।

–ইয়েস যাতে ফিউচারে আমি আসলে তরতর করে নিচে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকিস।আর আলনা গোছানোর নামে মিথ্যা না বলিস ওকে। আমি কেমন সেটা চিনতে এখনো অনেক বাকি আছে তোর।ঘুমোচ্ছি আমি স্ট্যান্ড ফ্যান চালিয়ে দে।উফফ নড়াইলে এত গরম ক্যানো এসি লাগাতে হবে দেখছি।

–এরই মাঝে উনার ফোনের ভাইব্রেশন বেজে উঠলো।প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে কানে দিয়ে বললেন,হ্যাঁ আবির বল আসলি না কেনো বাড়িতে।

–ফোনের ওপাশ থেকে ভাইয়া বলছে,গেছিলাম তো তুই আসার খানিক টা আগেই। কাল বাসায় আসবি কখন তাই বল।

–যাবো ভাই।তার আগে ট্রিট দে গার্লফ্রেন্ডের দেওয়া শার্ট পরেছিস এই উপলক্ষে ট্রিট চাই আমার।

–তোকে তো ছবি পাঠিয়েছিলাম কেমন লাগছে ভাই।

–ভাই সেরা মানে সেরা লাগছে।ওর আসলেই চয়েজ আছে।তোকে কোনটা পরলে ভাল মানাবে বুঝে গিয়েছে।

–আর বলিস না দিয়া কেমন সন্দিহান ভাবে তাকাচ্ছিলো।আমি তো ধরাই খেয়ে যাচ্ছিলাম।

–তোর বোন সিআইডি ভাই।

–হাহাহাহা এখন রাখি তাহলে ঘুমো।

–আচ্ছা।

–আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,ভাইয়া কি প্রেম করছে বিহান ভাই।

–উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন তো প্রব্লেম কি করতেই পারে।

–কার সাথে করছে?মেয়েটা কেমন।দেখতে কেমন?

–দেখতে কেমন এটা জিজ্ঞেস করলি কেনো?রুপ কি ধুয়ে ধুয়ে খাবি।হাউ চিপ মেন্টালিটি।

–দেখুন আমি ওভাবে ভেবে বলি নি।এমনি জিজ্ঞেস করেছি।মেয়েটা কে।

–তোর পেট পাতলা তাই তোকে বলা যাবেনা।সবাইকে বলে বেড়াবি।দেখা গেলো কাল সকালে মোড়ে মোড়ে এই নিউজ টা পাওয়া গেলো।

–কি বললেন, আমার পেট পাতলা।আমি কবে কথা লাগিয়ে বেড়িয়েছি বলেন।

–তোকে আমি আবিরের রিলেশন এর কথা বলি তুই এক্ষুনি রিয়াকে জানাবি,আর রিয়া বিভোর কে।

–সেতো রিয়া আমার বেষ্টি তাই।

–আবির ও আমার বেষ্টু ওকে পেট পাতলা মহিলা।গুড নাইট।

উনি কি আশ্চর্যজনক একটা মানুষ। মিথ্যা বলেছি বলে সেই কাজ করিয়েই ছাড়বেন।আবার ভাইয়া কার সাথে রিলেশন করছে সেটাও বললো না।

আলমারি গোছাতে গিয়ে দেখি ড্রয়ারের মাঝে একটা শুকানো গোলাপ সাথে আর একটা কড়ি। গোলাপ টা শুকিয়ে গিয়েছে।সেই কত বছর আগের সেই গোলাপ।সেই ছোট বেলায় আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি,সেদিন ছিলো মুসল ধারে বৃষ্টি।একুশে ফেব্রুয়ারী ছিলো সেদিন।সকালে ভোরে স্টেডিয়াম মাঠে যাচ্ছিলাম আমরা।আমার ছিলো লাল শাড়ি যার পাড় ছিলো সবুজ।বিহান ভাই এর পরণে ছিলো লাল পাঞ্জাবী।উনি আমার হাতে একটা ফ্লাগ আর মাথায় পরিয়ে দিয়েছিলেন রাবার এর পতাকা আকা লাল সবুজের ব্যাড়। তাছাড়া আমার হাতে এই গোলাপ টা দিয়েছিলেন।আমি সেদিন বলেছিলাম এই কড়ি টা ফুটলেও অনেক ভাল লাগতো বিহান ভাই দেখতে।উনি সেদিন বলেছিলেন, দিয়া এই কড়িটা একদিন ফুটবে সুবাস ছড়াবে এই বড় ফুলটায়।এই বড় ফুল টা হলো পুরুষ ফুল মানে আমি আর এই কড়িটা আমার পুচকি প্রেয়সী বুঝেছিস কিছু।তখন এসব কথার কিছুই বুঝতাম না আমি।সেই ফুল টা আমি হাতে নিয়ে উনাকে আবার দিয়েও দিয়েছিলাম সেটা আজ ও যত্ন করে রেখে দিয়েছেন।কত যত্নশীল মানুষ উনি ভাবা যায়।

সমস্ত কাপর ভাজ করে আলনা গুছিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলাম।ফ্যানের বাতাসে কপালের চুল গুলো উড়ছে আমার কেনা শার্ট টা সত্যি সুন্দর মানিয়েছে উনাকে।যাক আমার আর বলা লাগেনি যে এটা আপনার জন্যই আনা।ডিম লাইটের কৃত্রিম আলোতে এই সুন্দর পুরুষ টাকে আরো বেশী সুন্দর লাগছে।এজ জনম দেখলেও মন ভরবে না।

উনার ফোন টা হাতে নিয়ে স্ক্রল করছি সারাদিন কি দেখেন উনি ফোনের মধ্য।এর আগে সেইভাবে উনার ফোন আমি খেয়াল ই করিনি।উনার ডিসপ্লেতে আমার চুড়ি পরা হাতের ছবির মতো লাগছে।হাত টা দেখতে আমার মতোই লাগছে।কিন্তু আমি তো কখনো এ ছবি উঠাইনি।তাহলে কিভাবে উনি আমার হাতের ছবি উঠালেন।নাকি অন্য কারো ছবি। এটা উনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার এটা নিয়ে প্রশ্ন করাও ঠিক হবেনা বলে মনে হচ্ছে।কি করবো একদম ই ঘুম পাচ্ছে না।কয়েক টা কসমেটিক্স এর পেইজ সার্চ করলাম।উনার ফোন দিয়েই কত গুলো কসমেটিক্স অর্ডার করে দিলাম।

–পেইজ থেকে রিপ্লে এলো কি চাই বলুন স্যার!

–আমার স্যাডো বক্স,আর বার্বি ডল আর্ট করা গেঞ্জি আর অরেঞ্জ কালার লিপিস্টিক লাগবে।

–এগুলো কিন্তু মেয়েদের জিনিস স্যার।

–অদ্ভুত আমি কি মেয়ে ছাড়া ছেলে।

–না আইডির নাম ছেলে তো তাই।আগের দিন একজন এমন ভুল করেছিলো তাই জিজ্ঞেস করে নিলাম।

–না আমি মেয়ে।

–সিওর তো।

–হ্যাঁ আমি ছেলে আর আমার এটাই লাগবে।আমি এগুলোই ইউজ করবো।আমি টাকা দিয়ে কিনবো ছেলে হয়ে পরতে পারলে আপনার সমস্যা কোথায়?আপনারা টাকা পেলেই হলো।এত প্রশ্ন করেন কেনো?আমি বিহান আমি মেয়েদের লিপিস্টিক,স্যাডো, গেঞ্জি এইগুলা পরি। আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন।আশ্চর্য।

ফোনটা রেখে গায়ের গাউন চেঞ্জ করে একটা গেঞ্জি পরে ঘুমিয়ে গেলাম।

সকাল টা শুভ নাকি অশুভ হবে কিজানি।

চলবে,,