এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা ২ পর্ব-৪৩+৪৪+৪৫

0
1592

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন২)
৪৩.
#WriterরঃMousumi_Akter

–ঘড়িতে সময় ঠিক চার টা বাজে।সূর্য এখনো পূর্ণ তাপে উত্তপ্ত আছে।ভ্যাপসা গরম,দিনের সময় টা যেনো রাতের থেকে দ্বীগুন বেশী।বিহান ভাই হঠাত যেনো কোথাও নিখোজ।আমি সারাবাড়ি খুজে চলেছি কোথাও পাচ্ছিনা।ফোন ও তুলছেন না।কোথায় গিয়েছেন উনি।অপেক্ষার মতো ভয়ানক যন্ত্রণা কি আর কোনো কিছুতে আছে এই পৃথিবীতে। সেই অপেক্ষা যদি আবার প্রিয় মানুষের মুখের বিশেষ কিছু শোনার জন্য হয়ে থাকে।সারাদিন কয়েক লাখ বার ঘড়ি দেখেছি।কয়েক যুগের সমান ছিলো আজকের দিন টা।

বিভোর ভাই বাইক নিয়ে কোথাও বের হচ্ছেন।বিভোর ভাই কে ডেকে বললাম,

‘বিভোর ভাই বিহান ভাই কোথায় কিছু জানেন?’

‘দিয়া তুই এত ছটফট করছিস কেনো?আর এত ঘাবড়ে আছিস কেনো?কি হয়েছে আবার কি শরীর খারাপ করছে বোন।’

‘না না বিভোর ভাই আমি একদম ই ঠিক আছি।আসলে গরমে খুব খারাপ লাগছে।’

‘দিয়া প্রচুর গরম তার উপর তোর শরীর ঠিক নেই।যা গিয়ে ফ্যানের নিচে গিয়ে সুয়ে পড়।’

‘বিহান ভাই কে প্রয়োজন ছিলো।ঃ

‘প্রাইভেট কিছু না হলে আমাকে বলতে পারিস। কিছু আনতে হবে কি?’

‘না”না এমনিই।’

‘আচ্ছা আমি বিহান কে দেখছি কোথায়? বাট আমার একটা কাজ করে দিতে হবে।’

‘কি কাজ বিভোর ভাই।’

‘প্লিজ বোন আমি না তোর ভাই।আমাকে রিয়ার সাথে রিলেশন করিয়ে দে প্লিজ।আমার ভীষণ ভালো লাগে রিয়াকে।বাট রিয়া আমাকে খারাপ মনে করে।ওর ধারণা আমি ফ্লার্টিং এর প্রিন্সিপাল। ‘

‘আপনারা কি রিলেশন এ নেই বিভোর ভাই।’

‘রিলেশন তোর বোন আমায় চান্স ই দিতে চাইছে না।সে রিলেটিভ এর মাঝে রিলেশন করবে না।’

‘আমার আর বিহান ভাই এর ধারণা আপনারা রিলেশন এ আছেন।রিলেশন এ নেই তাহলে রিয়া আপনাকে এত খোজে কেনো?আপনার নামে বিশাল এক লাভ লেটার লিখেছে কেনো?’

‘রিয়া আমার জন্য লাভ লেটার।’

‘নো চিন্তা বিভোর ভাই।আপনার প্রেম খুব শিঘ্রই হয়ে যাবে।’

বিভোর ভাই বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।ফোনে টুংটাং সাউন্ড হলো।মেসেজের টোন ছিলো।মেসেজ টা ওপেন করেই দেখলাম বিহান ভাই এর মেসেজ।

‘দিয়া সন্ধ্যার একটু আগেই বাসা থেকে বের হবি।বাড়ির গেইটে একটা ইজি বাইক থাকবে সোজা উঠে চিত্রা রিসোর্ট এ চলে আসবি।’

চিত্রা রিসোর্ট বাসা থেকে পাঁচ মিনিটের রাস্তা মাত্র।বিহান ভাই ওখানে কেনো যেতে বললেন।যদিও অনুমান করতে পারছি বিশেষ কিছু নিশ্চয়ই আছে।

–রুমে এসে আলমারির সমস্ত শাড়ি মেলেও বুঝে উঠতে পারলাম না কোন শাড়ীটা পরা উচিত।বিছানা জুড়ে শাড়ীর সমাহার।সব শাড়ি বিছানায় ফেলেছি আলমারি থেকে বের করে।কোনটা রেখে কোনটা পরবো একটুও বুঝতে পারছি না।পাঁচবার শাড়ী পরে আবার খুলে রাখলাম।আমাকে কোন সাজে উনার কাছে ভাল লাগবে সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।মাথায় কিছুই ঢুকছে না।জীবনে প্রথমবার কিছু পরা নিয়ে এত টেনশন আমার।লাল শাড়ীর দিকে চোখ পড়লো আমার।ভালবাসার প্রকাশ মানুষ লাল গোলাপ দিয়ে শুরু করে আই থিংক লাল শাড়ী পরাটায় বেটার হবে।কিন্তু উনি তো লাল কালার পছন্দ করেন না।এসব কালারের কিছুই পরেন না।আজ কি পছন্দ হবে।অনেক ভেবে চিনতে সুন্দর করে লাল শাড়ী পরে,দুহাত ভরে লাল কাঁচের চুড়ি পরলাম।খোপা করে মাথায় লাল গাজরা দিলাম।গাড় লাল লিপিস্টিক,চোখে কাজল দিয়ে মনের মতো করে সেজে নিলাম।সন্ধ্যার খানিক টা আগেই ফোন নিয়ে বেরিয়ে গেলাম।

‘নিচে যেতেই মামি বললো,দিয়া তোকে তো কোনদিন এত সাজগোজ করতে দেখিনি।অনেক সুন্দর লাগছে কোথায় যাচ্ছিস দিয়া।’

‘তোমার ছেলের সাথে যাচ্ছি।যেতে বলেছে।মামিকে কথাটা বলতে বেশ লজ্জা লাগছে আমার।’

‘আচ্ছা যা!তবে আকাশে তো মেঘ।ছাতা টা নিয়ে যা।’

‘আবার কি বৃষ্টি নামবে মামি।’

‘এ সময়ে তো প্রতিদিন ই বৃষ্টি হচ্ছে।এই রোদ এই মেঘ এটা হতেই থাকে এ সময়ে।’

–মামিকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।গেটের সামনে অটো ও এসে গিয়েছে।অটো ওয়ালা আমাকে দেখেই বললো ভাবী আমাকে পাঠিয়েছে বিহান ভাই উঠুন।পাশের বাসার ই অটো চালক উনি।অটো থেকে নেমে ভাড়া দিতেই উনি বললো দেওয়া লাগবে না ভাই দিয়েছেন।জিজ্ঞেস করলাম কত দিয়েছে।ড্রাইভার বললো,একশ টাকা।মনে মনে বললাম,দশ টাকার রাস্তা একশ টাকা দিয়েছে টাকা কি বেশী হয়ে গিয়েছে।

অটো থেকে নেমে রিসোর্টের দিকে পা বাড়ালাম।রিসোর্টের পরিবেশ আজ যেনো অন্যরকম লাগছে।

“রিসোর্টে ঢুকতেই দুটো ছেলে বললো ভাবি কেমন আছেন?”

“এত বড় দুইটা ছেলের মুখে ভাবি ডাক শুনে বেশ লজ্জা পেলাম।সন্দিহান ভাবে প্রশ্ন করলাম আপনারা..”

–ছেলে দুইটা হেসে বললো,বিহান এর ফ্রেন্ড আমরা।ওয়েলকাম ভাবি, আপনার জন্য এত সময় অপেক্ষা করছিলাম।সামনেই আছে বিহান এগিয়ে যান ভাবিজি।
সামনে আরো কয়েক জন ছেলে।চিকন সরু রাস্তার দুই সাইডে কয়েক জন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে, সবার হাতে একটা করে রশী।আমি ঢুকতেই তারা রশী ঝাকি দিতে শুরু করলো মাথার উপর থাকা নেট এর ভিতর থেকে পড়তে শুরু করলো ফুলের পাপরি।বেশ অবাক হয়ে আমি উপর দিকে তাকিয়ে দেখি শুধু লাল গোলাপের পাপড়ি অজস্র পরিমানে ঝরে পড়ছে।দু ‘হাত দিয়ে ফুলের পাপড়ি ধরার চেষ্টা করছি।
সামনে যত এগোচ্ছি ততটাই ফুলের বৃষ্টি এগিয়ে যাচ্ছে।আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না এটা বাস্তব নাকি কোনো স্বপ্ন।আনন্দে উল্লাসিত হয়ে হাসছি আমি।জীবনে এত খুশী কখনোই হই নি আমি।বরাবর আমি বৃষ্টিবিলাসী সেটা যদি হয় ফুলের বৃষ্টি এর থেকে বেশী সারপ্রাইজ আমার জীবনে আর কিছুই হতে পারে না।রাস্তা জুড়ে ফুলে ফুলে ভরে আছে।আমি পেছনে একবআর চোখ বুলিয়ে আনন্দে ভীষণ ভাবে উল্লাসিত হলাম।খানিক টা সামনে যেতেই লাল পাঞ্জাবী পরে পেছনে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন বিহান ভাই।উনি লাল পাঞ্জাবী পরেছেন ভীষণ অবাক ব্যাপার।সুন্দরের একটুও কমতি লাগছে না উনাকে।উনি যে পোশাক ই পরে কেনো যেনো মনে হয় এটাই পারফেক্ট পোশাক উনার জন্য।
ছেলে গুলো এগিয়ে এসে বললো,বিহান সব ঠিকভাবে হয়েছে তো।বিহান ভাই হেসে উত্তর দিলেন ধন্যবাদ ভাই তোদের সবাইকে।আমাকে এইভাবে সাহায্য করার জন্য।তোদের জন্য তাকে আমি সারপ্রাইজ দিতে পেরেছি।

‘ওকে ভাই আমরা গেলাম।ভাবিজির সাথে সময় পার কর।আমরা এখন কাবাবে হাড্ডি হতে চাইনা।’

উনার চোখের ইশারায় ছেলে গুলো চলে গেলো।

–ধরনীতে মাত্রই সন্ধ্যা নেমেছে।মনে হচ্ছে এই সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা করেছি কয়েক জনম।দু-ঠোঁটের মাঝে কিঞ্চিত ফাঁকা, ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বিহান ভাই।মাথার উপর ঘোলাটে মেঘ চাঁদ কে ছেয়ে ফেলেছে,হালকা বাতাস শুরু হয়েছে।বাতাসে উনার চুল গুলো কপালে এসে পড়ছে।পাতলা চুল গুলো ঝিরিঝিরি করে উড়ে চলেছে ভারী মিষ্টি লাগছে দেখতে।ধীর পায়ে এগিয়ে এলেন আমার কাছে।এমন সুন্দর মুহুর্তে কিভাবে কথা বলা শুরু করবো দুজনের কেউ বুঝতে পারছি না।দুজনের নিষ্পলক চাহনি দুজনের দিকে।

বিহান ভাই পেছন থেকে হাত টা সামনে নিয়ে এলেন।বিশাল এক গুচ্ছ লাল গোলাপের তোড়া।গোলাপের তোড়া এক হাতে রেখে আরেক হাত দিয়ে খোপা করা চুল আর গাজরা খুলে দিলেন।সাথে সাথে চুল গুলো গাড় বেয়ে নিচে পড়লো।এলোমেলো বাতাসে চুল উড়ে চলেছে,সাথে শাড়ীর আঁচল ও উড়ে চলেছে।উনি এক নজরে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।দুজন মানব মানবী দাঁড়িয়ে আছে খোলা আকাশের নিচে তাদের ভালবাসার সাক্ষী হিসাবে কি প্রকৃতির এত উথলতা। শাড়ির আঁচল নৌকার বাদাম এর মতো উড়ে উনার মুখে পড়লো।উনি আস্তে করে আঁচল টা সরিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন আমার সামনে।আনন্দ শরীর কাঁপছে আমার।চোখে মুখে আনন্দের উচ্ছাস।

এক গুচ্ছো গোলাপ আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,

“শ্যামাপাখি আমি জানিনা কিভাবে ইমপ্রেস করে কথা বলতে হয়,কিভাবে কথা বললে একটা মেয়েকে ভালবাসা বোঝানো যায়।আমার একটা হাত টেনে নিয়ে উনার হার্টবিট বরাবর ধরে বললেন,দেখো কেমন বেড়ে গিয়েছে আমার হার্টবিট কত দ্রুত রেসপন্স করছে।জীবনে প্রথমবার আমার হার্টবিট এত দ্রুত রেসপন্স করছে।যদি ভুল কিছু বলে ফেলি আমাকে ক্ষমা করে দিও প্লিজ,আমার বলায় অনেক ভুল থাকবে জানি।দীর্ঘদিনের জমানো তোমাকে ঘিরে অনুভূতি গুলো প্রকাশ করতে চাই শ্যামাপাখি আজ।সেই ছোটবেলা আমি তখন প্রেম ভালবাসা বুঝতাম না এটা ঠিক তবে ছোট বেলা থেকেই রাগ,ইগো,জেদ অনেক বেশী আমার।ছোট বেলা থেকেই মেয়েমানুষ থেকে যথেষ্ট দূরে থেকেছি আমি এককথায় ভাল লাগতো না মেয়েদের সঙ্গ।আমার বয়স তখন সাত বছর ফুপ্পি অসুস্থ ছিলো তখন।আমি আবির আর বিভোর উঠান থেকে কাঁন্নার আওয়াজ শুনতে পাই।আম্মু বললো ফুপ্পি আমাদের জন্য বোন কিনে এনেছে।আমি ঘরে ছুটে গেলাম বোন দেখতে।তখন মনে হয়েছিলো কিনে এনেছে আমাদের রক্তের তো কেউ না বোন বলবো না কখনো।বোন ভাবতাম ই না।তোমাকে প্রথমবার দেখেছিলাম সেই সদ্য শিশু অবস্থায়।আমার কোলে ও তুলে দিয়েছিলো তোমাকে।আমি কি ভাগ্যবান তাইনা আমার অর্ধাঙ্গীনী পৃথিবীতে আমার জন্য এসেই তার কাঁন্নায় আমাকে জানান দিয়েছিলো সে এসছে।তখন এসব তো বুঝতাম না তবে এখন এইসব ই মনে করি আমি।ভীষণ ভাল লাগে আমার এটা ভেবে সেই প্রথমদিন ই তোমাকে কোলে নিয়েছিলাম আমি।ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম আমাকে বোঝানোর জন্য বলা হয়েছিলো কিনে এনেছে। একটা বয়সের পর বুঝতে পারলাম বাচ্চা আসলে কেউ কিনে নাহ।ভেবেই হেসেছি কতবার।আমার সাথে মিল রেখেই নাম রাখা হলো দিহান দিয়া।আমার এই হাতের উপর বড় হয়েছো তুমি।কোলে নেওয়ার জন্য ছুটে যেতাম।আসতেই চাইতাম না ফুপ্পির মেয়ে কোলে নেওয়ার জন্য।দিন দিন তুমি বড় হতে শুরু করলে।যদিও ছোট বেলার সব স্মৃতি মনে নেই,তবে একেবারে যে সব ভুলে গেছি তাও নয়।আমি জানিনা কেনো ছোট বেলা থেকে আমার যেনো কেনো তোমাকেই বিরক্ত করতে ভাল লাগতো।যখন আধো কথা শিখলে আমি বুলি শিখাতাম তোমাকে,বাড়ির সবাই শিখাতো।যখন তোমার চার বছর বয়স যা বললে চেতে যেতে সেটাই বেশী বলতাম।তুমি চেতে যেতে খুব ব্যাপার টা আমাকে বেশ মুগ্ধ করতো।আমার মুড অফ হলেই ভাবতাম যায় পিচ্চিকে একটু ক্ষেপিয়ে আসি।আমি খুব আনন্দ পেতাম তোমাকে রাগিয়ে দিয়ে।ডেকে বলতাম এই পিচ্চি থাপ্পড় খাবি আয় তাহলে কাছে আয়।সাঁতার শিখাতাম তোমাকে আমি আর আবির।তুমি বুঝতে শেখার পর থেকে এমন করতে করতে অভ্যাস হয়ে গেছিলো।এক কথায় তুমি আমার অভ্যাস দিয়া, ভয়ংকর রকমের অভ্যাস।যে অভ্যাস মিশে গিয়েছে আমার রক্তে শিরায় শিরায়।যেমন রাত হলে সূর্য ডুবে যায়,চন্দ্র ওঠে,আবার রাতের আঁধার কেটে গেলে সূর্য ওঠে প্রকৃতির এমন নিয়মের মতোই তুমি যেনো রোজকার রুটিন হয়ে গেলে আমার জীবনে।এর মানে বুঝি ভালবাসা ছিলো আমি সেটা ভেবে দেখিনি।তুমি চোখের সামনে না থাকলে ভেতরে ছটফট করতো ভীষণ যন্ত্রণা করতো কেনো করতো জানিনা।প্রেমের ভীষণ সর্বনাশ ভেতরে ভেতরে কিভাবে হয়ে গেছিলো বুঝতেই পারিনি।আমি কখনো এমন কোনো দিন, সময়,বলতে পারবো না যে সময় থেকেই তোমাকে আমার অস্তিত্ব মনে হয় বা ভালবাসি।কবে কখন কিছুই জানিনা।তুমি বউ সেজে এসে বলতে বিহান ভাই বর বউ খেলবেন আপনি আমার বর আমি আপনার বউ।আমি একটা ধমক লাগিয়ে দিতাম।দিয়া তুমি বেত লাফাতে আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতাম,স্কার্ট পরে সারাবাড়ি ছুটতে আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতাম,এক গাল হেসে সবার সাথে গল্প করতে মুগ্ধ হয়ে দেখতাম।আমি সেই ছোটবেলা থেকেই মুগ্ধ তোমার প্রতি।মুগ্ধতার প্রতিমা তুমি দিয়া।এত মুগ্ধতা সৃষ্টিকর্তা তোমার মাঝে কেনো দিয়েছে বলতে পারো?”

“উনি আমার মাঝে কি মুগ্ধতা দেখেছেন সেটা তো জানিনা।তবে আমি ভীষণ মুগ্ধ আজ উনার কথা শুনে।এর থেকেও কি উত্তম আর কিছু হতে পারে ভালবাসা প্রকাশের ধরণ।ভীষণ লাজুকতা নিয়ে বললাম,আপনার চারপাশে তো অনেক সুন্দর মেয়ে আছে তাদের থেকেও কি বেশী মুগ্ধতা আমার মাঝে।শুনেছি প্রেম নাকি কোন মোহ।মোহ কেটে গেলে ছেলেদের ভালবাসা ফুরিয়ে যায়।আপনার ক্ষেত্রে এমন ব্যাতিক্রম কেনো বিহান ভাই।”

“উনি হালকা হেসে বললেন,মোহ কি দিয়া।আমি তো তোমার বিশেষ কোনো কিছু দেখে প্রেমে পড়িনি মোহ কেটে যাবে।

আমি তোমাকে তেল চিপচিপে চুলে দেখেছি,শ্যাম্পু করা চুলে দেখেছি,শীত কালে ফাঁটা ঠোঁটে ও দেখেছি,আবার লিপিস্টিকে রাঙানো ঠোঁটে ও দেখেছি,গরমে ঘেমে তৈলাক্ত মুখে দেখেছি,আবার মেকাপ করা মুখেও দেখেছি,তোমাকে দেখেছি খোলা চুলে, আবার কখনো দেখেছি বেনী করা চুলে, দেখেছি ঘুম থেকে উঠে ফোলা চোখে দাঁড়াতে,আবার কাজল দেওয়া চোখেও দেখেছি।বাসায় পুরণো কাপড়ে দেখেছি,আবার ভীষণ গরজিয়াস ড্রেসেও দেখেছি,সব সময় গোছানো তুমি টাকে দেখিনি,এলোমেলো তুমিটাকেই বেশী দেখেছি।আমার চোখের সামনেই বড় হয়েছো তুমি।তোমাকে সব রূপেই দেখেছি আমি দিয়া।তোমার সাজগোজ হীন রূপে,মেকাপ হীন রুপে কেমন লাগে সেটা দেখে দেখে অভ্যাস্ত আমি।তোমাকে কখন কেমন লাগে সব ই মুখস্থ আমার।তাহলে কিসের মোহ কাটবে আমার।এই সাধারণ তুমিটার মায়ায় পড়েছি আমি।এ মায় কাটিয়ে উঠতে গেলে যে আমাকে নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হবে।এই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নারী আমার তোমাকে মনে হয়।কারণ তুমি পাশে থাকলেই পৃথিবীর সব সুখ আমার ভেতরে বিরাজ করে।আমার জীবনের সুখপাখি টাকে মনের ভেতর ভীষণ যত্নে লালন পালন করেছি আমি।
তুমি সেই নারী নও দিয়া যার বিশেষ কোনো সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে ভালবেসেছি।তোমাকে ভালবাসার জন্য বিশেষ একটা কারণ ও দেখাতে পারবো না দিয়া।আমি শুধু এই টুকু জানি আমি তোমাকে ভালবাসি দিয়া,ভীষণ ভালবাসি যাকে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ভালবেসে যাবো।তুমি আমার পাশে থাকলে ভীষণ শান্তি পায় আমি,মানসিক শান্তি।তুমি আমার জীবনের সেই একজন নারী যাকে আমি নিজের অস্তিত্বের সাথে মিশিয়ে নিয়েছি।আমি ফিলিংস প্রকাশ করতে পারি না হয়তো,রাগী জেদী হাত জোর করছি আমাকে মানিয়ে নাও প্লিজ।আমার জীবনের সমস্ত অন্যায় ক্ষমা করে তোমার জীবনে গ্রহন করে নাও।আই লাভ ইউ দিয়া,ভালবাসি তোমাকে।তুমি আমার শ্যামাপাখি,তুমি আমার পিচ্চি,তুমি আমার শ্বশুরের মেয়ে।কখনো ছেড়ে যেও না আমায়।”

“ভালবাসি কথাটা শুনে কেঁপে উঠলাম আমি।উনার দুই ঠোঁটে উচ্চারিত ভালবাসি কথাটি সাধারণ কোনো কথা ছিলো না।বিশেষ কিছু তো ছিলোই ওই কথাতে।আনন্দে আমি বাকরুদ্ধ।আমার পৃথিবী রঙ্ধনুর সাত রঙের মতো রাঙিয়ে গেলো। এত মাধুর্য ভরা কথার কি উত্তর দিবো আমি।
নিমিষেই ঝরে পড়লো আকাশ থেকে বৃষ্টি।এলোমেলো বাতাস,ঝিরিঝিরি বৃষ্টি,সাথে প্রিয় মানুষের মুখে উচ্চারিত ধ্বনি ভালবাসি।বার বার আমার কানে এই কথাটি বেজে চলেছে।সন্ধ্যা টা নিমিষেই এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় পরিণত হলো।”

উনি আমার পা উনার হাঁটুর উপর তুলে দুই আঙুলে দুইটা আঙ্গুট পরিয়ে দিলেন। বাম পায়ে বাধা কালো সুতার নিচে একটা পায়েল পরিয়ে দিয়ে ওষ্টর স্পর্শ দিলেন আর বললেন,ঘর্নায়মান এই সন্ধ্যার অপরূপ সৌন্দর্য সাথে বৃষ্টি,এই বৃষ্টিস্নাত তোমাকে জানায় শুভেচ্ছা দিয়া।আমার জীবনে আসার জন্য সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।

উনার ওষ্টের ছোয়ার তরঙ্গের ন্যায় ঢেউ খেলে গেলো আমার শরীরে।লজ্জায় দুই’হাতে মুখ ঢেকে ছুটে পালালাম।রিমঝিম বৃষ্টিতে আমার পেছনে উনি ছুটে চলেছেন আর ডাকছেন, দিয়া দাঁড়াও আমার আরো কিছু বলার আছে।দিয়া দাঁড়াও বলছি।আমি আনন্দে ছুটে চলেছি,পৃথিবীর সব লজ্জা যেনো আমার উপর ভর করেছে।কোন ভাবেই উনার দিকে তাকাতে পারছি না।খানিক টা দূরে গিয়ে হাঁপিয়ে গেলাম।ফুলের দিকে তাকিয়ে আবার ও লজ্জায় মুখ ঢাকলাম।ইস!কি লজ্জা।

“হঠাত উনি পেছন থেকে এসে আমার কোমর জড়িয়ে ধরলেন।আচমকা ভীষণ কেঁপে উঠলাম।উনি আমার কানের কাছে ফিস ফিস করে বললেন,এই বৃষ্টি ভীষণ পছন্দ তাইনা তোমার?”

“মাথা ঝাকিয়ে উত্তর দিলাম হুম।”

“তোমার প্রিয় বৃষ্টির মতোই কি আমিও তোমার প্রিয়।কত দিন অপেক্ষা করছিলাম,ফোনে ওয়েদার চেক করছিলাম।যে সন্ধ্যায় বৃষ্টি হবে তোমার সাথে বৃষ্টিবিলাস করবো।বৃষ্টিবিলাস করতেই আজকের দিনটা পছন্দ করা।”

ক্রমশ শুরু হলো বৃষ্টি। দুই একবার মেঘের গর্জন ও শোনা যাচ্ছে।হঠাত মেঘের গর্জনে কেঁপে উঠে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।বিহান ভাই দুই হাতে আমাকে আকড়ে ধরলেন।কিছু সময় পরে এক ঝটকায় আমাকে কোলে তুলে রিসোর্টের একটা ঘরে নিয়ে গেলেন।টিনের চালের এই ঘরের চারপাশ খোলা যেখানে বসে সবাই গল্প করে।টিনের চালে ঝুম বৃষ্টির শব্দ।আমি হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ধরছি।আরেক বার ভেজার জন্য বাইরে বের হতে গেলেই বিহান ভাই হাত টেনে ধরে বললেন এই যে বৃষ্টিবিলাসী আমাকেও একটু সময় দিন। শুধু বৃষ্টিতে ভিজলে হবে।লজ্জায় আবার ও মুখ ঢাকলাম আমি।উনি মুখ থেকে সরিয়ে নিয়ে উনার সম্পূর্ণ কাছে টেনে নিয়ে ওষ্ঠের সাথে ওষ্ট ছুইয়ে গভীর চুম্বনে ডুব দিলেন।বাইরে এই ভীষণ বৃষ্টি ই কি তবে এই দুজন মানব মানবীর ভালবাসা গভীর করতে আগমন ঘটিয়েছে।

চলবে,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা (সিজন ২)
৪৪.
#WriterঃMousumi_Akter

–বৃষ্টির সাথে প্রেমের যেনো এক গভীর সম্পর্ক আছে।বৃষ্টিতেই মানব মানবীর মনে জাগ্রত হয় সুপ্ত ভালবাসা।বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় ভালবাসা যেনো আলিঙ্গন করেছে আমাদের উপরে।উনার ওষ্টের ছোঁয়ায় ভয়ংকর এক অনুভূতির সৃষ্টি হলো আমার শরীরে।মানুষ টা কি স্হির ভাবে দাঁড়িয়ে আছে আমার দিকে তাকিয়ে।নিষ্পলক তার মায়াবী চোখের শিতল চাহনি।ভাষা চোখ,ঘন পাপড়ি, ভিজে উনাকে ভীষণ স্নিগ্ধ লাগছে।এই মুহুর্তে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দর পুরুষ টি তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
লজ্জায় আমার ভেতরে শুরু হলো ভীষণ তুফান।ইস মুখ দেখাবো কিভাবে এখন উনাকে।ভালবাসার মানুষ প্রথমবার স্পর্শ করলে এমন ভয়ানক অনুভূতির সৃষ্টি হয় আগে জানা ছিলো না আমার।এই তুফান আমাকে ভাষিয়ে নিয়ে যাক দূরে কোথাও,না হলে এই মাটি আমাকে তার ভেতরে নিয়ে যাক।উনার এই নিষ্পালক চাহনির লজ্জা থেকে বাঁচতে চাই আমি।শরীর কাঁপছে, ভীষণ ভাবে কাঁপছে এটা কি অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো আমার শরীরে।বাইরে বিদ্যুৎ এর তরঙ্গ ও এত জোরে বইছে না যতটা উনার শিহরণ আমার শরীরে বইছে।

গোলাকৃতির এই টিনসেটের ঘরে কৃত্রিম আলো জলছে লাল নীল হলুদ রঙের।উনার থুতনিতে উনার হাত বাঁধানো নিষ্পলক তাকিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে হেসে যাচ্ছে।স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি উনার চোখে মুখে স্পষ্ট ক্লিয়ার ভেষে উঠেছে।আমি তৎক্ষনিক অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম।দুইহাতে মুখ ঢাকলাম।

উনি এক পা দু’পা করে আবার এগোচ্ছেন আমার দিকে।বুকের মাঝে হাতুড়ির বাড়ি সেকেন্ডে সেকেন্ডে বেড়ে চলেছে।উনি আমার পেছনে আসতেই উনার তপ্ত উষ্ণ নিঃশ্বাস উপচে পড়লো আমার ঘাড়ে।উনার অবয়ব বুঝতে পারলাম আমি।

‘এসে দাঁড়িয়ে বললেন,এভাবে আমার থেকে পালালে কেনো শ্যামাপাখি।লজ্জা পেয়েছো?’

‘লজ্জায় কাঁপতে কাঁপতে বললাম,কাছে আসবেন না।’

‘উনি দুই হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে থুতনি ঠেকিয়ে আবার ও চুম্বন দিলেন ঘাড়ে।কানের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে ফিস ফিস কন্ঠে বললেন,কাছে না আসলে বাঁচবো কিভাবে শ্যামাঙ্গিনী। ‘

–এই ফিস ফিস কন্ঠে বিশেষ কিছু তো আছেই।কাছে না আসলে বাঁচবো কিভাবে কথাটা সোজা মনে এসে বিঁধলো।কি ভয়ংকর নেশা জড়ানো কন্ঠে বললেন।
ভাল লাগা আর লজ্জা দুটোই ভীষণ ভাবে ভর করেছে আমার ভেতরে।

কিছু বলার মতো ভাষা নেই আমার।

‘আমাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে আবার ও কানের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে ফিসফিস করে প্রশ্ন করলেন,এই চুম্বনে লজ্জা পাচ্ছো জানি।কিন্তু তোমার কি খারাপ লাগছে।তাহলে ছেড়ে দিবো এক্ষুণি।আমার বউ লজ্জা পাক ভীষণ লজ্জা পাক।তার শরীর জুড়ে লাজুকতা খেলা করুক, আমার ভালবাসার স্পর্শে তোমার লাজুকতা না আসলে অনুভূতিরা পূর্ণতা পাবে কিভাবে।তোমার এই ভীষণ সুন্দর রুপে,লাজুকতার সাথে,ভাললাগা আর ভালবাসার মিশ্রণে আমার ভেতরের পুরুষ আত্মার দফারফা হয়ে যাচ্ছে।’

নিমিষেই অনুভব করলাম,উনার স্পর্শ সত্যি লজ্জা দিচ্ছে আমায়,তবে এক বিন্দুও খারাপ লাগছে না।বরং এক অজানা,অচেনা নতুন অনুভূতির সাথে পরিচয় হলো।আমার ভেতরে এক ভীষণ ভাল লাগার অনুভূতি জাগ্রত করলেন উনি।এটা কি ছিলো,কি ছিলো ওই স্পর্শে।কি হচ্ছে কিছুই জানিনা।নারী অস্তিত্বের সব টায় ছেড়ে দিলাম উনার উপরে।

‘উনি আমাকে সামনের দিকে ঘুরিয়ে ধরে বললেন,দেখো আমায়।একবার তাকাও।তুমি না দেখলে জীবন ই বৃথা যাবে।আমার গালে উনার দুইহাত।’

‘লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে বললাম,বাড়ি যাবো।”

‘উনি আমার মুখে ফু দিয়ে বললেন,রোজ তো বাড়ি ই থাকো আজ না হয় এখানেই থাকো।’

‘উনাকে ধাক্কা মেরে আবার ছুটলাম আমি।ছুটে কোথায় পালাবো জানিনা।পেছনে একবার ফিরে বললাম,আমি বোটে উঠছি আপনি আসুন।’

এই রিসোর্ট টা নদীর পাড়ে।রিসোর্টের কয়েকটা বোট আছে নদীতে।বোটে চড়ে নদী পার হয়ে মানুষ রিসোর্টে যাতায়াত করে।কারণ বোটে যাতায়াত করতে অন্য একটা মজা আছে।চিত্রা নদীর ভীষণ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় এই বোটে চড়লে।নদী থেকে রিসোর্ট টা ভারী সুন্দর দেখায়।রিসোর্ট এর পাশেই ফুলের বাগান।এখানে মানব মানবী একান্তে সময় কাটাতে এসে ফুল উপহার দেয়।তাইতো বিশাল ফুলের সম্রাজ্য আছে পাশেই।রিসোর্ট থেকে নিচে নেমেই আরেকবার সারপ্রাইজড হলাম আমি।এখনো ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে,একটা কয়েকটা বোটের মাঝে একটা বোট তাজা ফুলে ভীষণ সুন্দর ভাবে সাজানো।সম্পূর্ণ বোট জুড়ে লাল টকটকে গোলাপের সমাহার।বোটের উপরে নৌকায় টাঙানো বাদামের মতো করে কিছু একটা।ফুল দিয়ে সাজানো বলে আন্দাজ করা যাচ্ছে না কি।তবে সেখানে লেখা তাজা গোলাপে মোটা আকৃতিতে দিয়া লেখা।নিমিষেই দুই ঠোঁট ফাকা হয়ে গেলো আমার।কারণ এতটাই সারপ্রাইজ হলাম যে অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে আছি আমি।দুই হাত মুখে দিয়ে অবাকের সম্পূর্ণতা প্রকাশ করলাম।খুশিতে বোটে গিয়ে বসলাম।বোটের মাঝে একটা লাইট জ্বলছে যার জন্য সব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।বোটের মাঝে ফুলের পাপড়িতে লাভ আকৃতি করা।সেখানে লেখা বিহান+দিয়া।আমি বোটে দাঁড়িয়ে দুই হাত মেলে ডানা মেলে আকাশ পানে তাকালাম।এ কি স্বপ্ন নাকি সত্যি।ভালবাসার মানুষ টা সব কিছুই যেনো ম্যাজিকের মতো করে দিলো।বৃষ্টিতে প্রতিটা ফুলে ফুলে বিন্দু বিন্দু পানি জমেছে।কিছুক্ষণের মাঝেই বিহান ভাই বোটে আসলেন।আমাকে উঁচু করে ধরলেন আকাশ পানে।ভীষণ আনন্দে আকাশে ছড়িয়ে দিলাম ভালবাসার ডানা।

‘বিহান ভাই বললেন,দিয়া খুশি হয়েছো।’

‘আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম,জীবনে এত খুশী আমি আগে কখনো হই নি। ‘

‘এখন থেকে প্রতিটা দিন ই তোমার জীবনে খুশি এনে দিবো।আই প্রমিজ।’

বোটে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটালাম আনমনে দুজনে।জীবনের শ্রেষ্ঠ অনুভূতি গুলো প্রকাশ করতে পারলাম।শ্রেষ্ঠ সময় পার করলাম দুজনের জীবনের।ভালবাসাময় এই সন্ধ্যা ভ্যালেন্টাইন্স সন্ধ্যা হয়ে থেকে যাবে চিরকাল আমাদের দুজনের মনে।উনি আমার কোলে মাথা রেখে বেশ কিছু সময় সস্তির নিঃশ্বাস নিলেন।

কয়েক ঘন্টা ভিজে বেশ ঠান্ডা অনুভব হলো।রাত একটার দিকে বাসায় ফিরলাম দুজনে।ভিজে একবারে চুপসে গিয়েছি দুজনে।রাত যত গভীর হয় বৃষ্টির মাত্রা তত বাড়তে থাকে। গরমের উত্তাপ এখন কমে গিয়েছে।বাসায় এসে চেঞ্জ করে কালো প্লাজু আর গোলাপি কামিজ পরলাম।রুমের সব জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে গিয়েছিলাম এখন এলোমেলো রুম দেখেই কাঁন্না পাচ্ছে।এই ঠান্ডায় মন চাইছে এক্ষুণি ঘুমিয়ে পড়ি।বেশ ঘুম ঘুম ও পাচ্ছে।কসমেটিক্স এর বক্সে সব কসমেটিক্স রেখে বাকি জিনিস গোছাতে শুরু করলাম।কিছুক্ষণ পরে বিহান ভাই সাদা ট্রাউজার আর সাদা গেঞ্জি পরে বেরিয়ে এলেন চুলের পানি ঝাড়তে ঝাড়তে।

আমাকে শাড়ি গোছাতে দেখে দুষ্টু হাসি দিয়ে বললেন,

“কি এখন কি আবার শাড়ি পরে আরেকবার ও রোমান্স হবে নাকি মিসেস বিহান।ওয়াও কিতনি রোমান্টিক মেরা পত্নি।”

“তড়িঘরি করে বললাম, আরে নাহ নাহ আমি যাওয়ার সময় এগুলো রেখে গেছিলাম।তাই এখন গোছাচ্ছি।”

‘বুঝি বুঝি সব ই বুঝি।কি আজিব কথা। ‘

‘শাড়ি একটা ভাজ করতে করতেই বললাম,আজিব কথা কই পেলেন বিহান ভাই।’

‘উনি ট্রাউজারের পকেটে হাত গুজে বললেন,আবার বিহান ভাই।সারাজীবন কি এই ভাই ডাকার অত্যাচার সহ্য করতে হবে আমাকে।’

‘কাজিন বিয়ে করেছেন এটুকু অত্যাচার তো সহ্য করতেই হবে তাইনা?’

‘আজকের বিশেষ মোমেন্ট এ আমি এক সেকেন্ড সময় অন্য কোনো ভাবে নষ্ট করতে চাই না।কাল থেকে এসব কথার উত্তর দিবো।এসব গোছগাছ ও কাল হবে ওকে।’

মানে কি কাল থেকে আবার বিরক্তিকর কথা বলবে নাকি উনি।গিরগিটির খালাতো ভাই নাকি উনি।উনাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই।

‘না না আমার শাড়ি গুছিয়ে না রাখলে রাতে ঘুম হবে না বুঝেছেন।’

‘আমার ও তো বউ ছাড়া ঘুম আসবে না। কি করা যায়।ওকে আমি তোমাকে হেল্প করছি।’

‘কি হেল্প।’

‘শাড়ি চুড়ি গুছিয়ে দিচ্ছি।’

কি আশ্চর্য ব্যাপার উনি সত্যি আমার সাথে সাথে শাড়ি গোছাতে শুরু করলেন।এই ছেলেটা মেয়েদের জিনিস গোছাচ্ছে ভাবা যায়।

‘মজা করে বললাম,বিহান ভাই আপনার মতো রাগী পুরুষ মহিলাদের জিনিস গোছাচ্ছে ভাবা যায়।’

‘এই রাগি ছেলেটাকে বরফ বানিয়ে দিয়েছে শ্বশুরের মেয়ে বুঝলে।তোমাকে দেখলেই কেমন রোমান্টিক ফিল হয় আগেও অনেকবার হয়েছে আমি প্রকাশ করিনি এই আরকি।সব দোষ তোমার।’

‘আমার দোষ কেনো?’

‘বিকজ অন্য কাউকে দেখলে এমন তো হয় না।তোমাকে দেখলেই হয়।গুগলে সার্চ করেছিলে কিভাবে মামাতো ভাইকে বশ করতে হয়।ইউ আর সাকসেস দিয়া। আমাকে বশিকরণ করতে সফল তুমি।এত দিন বিরক্ত সহ্য করেছো এখন রোমান্টিক অত্যাচার সহ্য করতে হবে।’

‘সেতো একবার করলাম ই আর কি?’

‘ওইটা ছিলো জাস্ট ট্রেইলার সুইটহার্ট। সিনেমা তো আভি বাকি হে।’

‘অত বড় পূর্ণদৈর্ঘ সিনেমার পরেও বলছেন সিনেমা বাকি আছে।’

‘হুম একটা মাত্র বউ ওইটুকু সিনেমায় কি হয়।”

উনার এই আধ্যাতিক কথার কোনো উত্তর দিয়ে চুপচাপ কাজ করছি।

উনি আবার প্রশ্ন করলেন,

‘ইয়ে দিয়া একটা প্রশ্ন ছিলো?’

‘হ্যা বলুন।’

‘আমার মতো এত্ত হ্যান্ডসাম একটা ছেলে তোমার আশে পাশে ঘুরতো।আমার সাথে রোমান্স করতে মন চাইতো না তোমার।কত্ত হ্যান্ডসাম আমি নিজেকে দেখছি আর প্রাউড ফিল করছি।’

‘না জীবনেও না।আমার এমন কখনো মনে হয় নি।
নিজের প্রশংসা যে মানুষ কিভাবে করে আপনাকে না দেখলে তো বুঝতাম ই না।আমি তো জানি আপনি সুন্দর তাই বলে এইভাবে নিজের প্রশংসা করবেন।আপনার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে আসলেই যেনো পৃথিবীর সেরা সুন্দর মানুষ আপনি।’

উনি হাসলেন খুব।আগে কখনো এত হাসতে দেখিনি উনাকে।উনি হাসলে এতটা সুন্দর লাগে কেনো।

এতক্ষণে বিছানার সব কাপড় গোছানো হয়ে গিয়েছে।উনি দরজা লাগিয়ে আমাকে এক টানে বিছানায় নিয়ে বললেন,কথা অনেক হয়েছে বেবি গার্ল এখন ঘুমোও।

ঘুমোবো বাট এইভাবে ধরে রাখলে কিভাবে ঘুমোবো।

কিভাবে ধরলাম।শুধু একটু জড়িয়ে ধরেছি আর তো কিছুই না।কপালে চুমু দিয়ে বললেন,রোজ এইভাবে ঘুমোবো,তোমার তপ্ত নিঃশ্বাসে অভ্যস্ত হবো।

এই প্রথম একটা রাত উনাকে এইভাবে আলিঙ্গন করে ঘুমোলাম।আমাকে বুকে জড়িয়ে বললেন,”ভালবাসা ময় জীবনের শুভেচ্ছা শ্যামাপাখি।”আমিও নিশ্চিন্তে উনার বুকে মাথা রেখে ঘুমোলাম।

চলবে,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন ২)
৪৫.
#WriterঃMousumi_Akter

–পৃথিবীর সর্বোত্তম সুন্দর মুগ্ধতাম সকাল আজ আমার জন্য।আমার জীবনে কেটে যাওয়া অন্য সব সকালে এতটা ভালো অনুভূতি আমার কখনোই হয়নি।জীবন টা সত্যি উপভোর করার মতো যদি পারমানেন্ট একটা মানুষ থাকে।কালকের কথা ভেবেই ভীষণ লজ্জা লাগছে,বেশী লজ্জা লাগছে সেই গভীর চুম্বনের কথা ভেবে।নিমিষেই লজ্জারা ভীড় করলো আমার আঙিনায়,সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়লো লাজুকতার ছোঁয়া।চোখ মেলে তাকিয়ে লজ্জার মাত্র কয়েক হাজার গুন বেড়ে গিয়েছে।উনি খালি গায়ে কেনো?রাতে তো খালি গায়ে ছিলেন না।ঘুমের মাঝে আবার কিছু হয় নিতো।ওহ মাই গড।আমি কি কিছুই টের পেলাম নাহ।না না উনিতো অমন মানুষ নন,ছিঃকি সব ভাবছি।উনার বুক বরাবর আমার মাথা ঠেকানো,ঠোঁট মুখ উনার বুকে গুজে আছি, নিঃশ্বাস উনার বুকে গিয়ে আচড়ে পড়ছে।আমার চুল গুলো খোলা, উনি দুইহাতে জড়িয়ে রেখেছেন আমাকে।গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন উনি।এই মানুষটা সব কিছু যেনো কেমন স্পেশাল ভাবে উপস্হাপন করতে পারে।কপাল অনেক ভাল না হলে কি উনাকে জীবনসঙ্গী হিসাবে পেয়েছি।আমি ঘুমন্ত মানুষ টাকে মন ভরে দেখছি।

এরই মাঝে বিহান ভাই এর ফোনের রিংটোনে ভাবনা কেটে গেলো আমার।ফোন একভাবে বেজেই যাচ্ছে।মনে হচ্ছে ইমারজেন্সি কিছু, না হলে এত সকালে কেউ এত বার কল দিবে কেনো।ফোনটা বিহান ভাই এর পিঠের নিচে পড়ে আছে।উনার বড় ফোন তো ড্রেসিন টেবিলে এই বাটন ফোনে আবার কে ফোন দিচ্ছে।উনার পিঠের নিচ থেকে কোনরকম ফোনটা হাতে নিতেই উনি ফোনটা আমার হাত থেকে ছো মেরে নিয়ে আবার জড়িয়ে ধরলেন আমাকে।হঠাত করে কেঁপে উঠলাম আমি,উনি জেগে গেলেন কখন।চোখ আগের মতোই অফ করে আছেন উনি,অথচ উনি সজাগ ই আছেন।

“আমি শুকনো কাশি দিয়ে বললাম,ইয়ে আপনার ফোন বাজছে ধরুণ। ইমারজেন্সি কিছু হবে হয়তো।”

“উনি আরো একটু জোরে জড়িয়ে ধরে বললেন,এই মুহুর্তে তোমার থেকে বেশী ইমারজেন্সি কিছুই তো দেখছি না।চোখ অফ রেখেই কথাটা বললেন।”

“ঘুম থেকে উঠেই উনার মতলব কি?ধরার ধরণ টাও অন্যরকম।এত লজ্জা দিতে পারে উনি।লজ্জা পাচ্ছি জেনেও এমন করছেন। অসভ্য মানুষ একটা।ছোটার চেষ্টা করছি আর বলছি,দেখুন ছাড়ুন আগে আমাকে।”

“উহু! এত নড়ছো কেনো শ্যামাপাখি। ”

“নিজেকে ছাড়ানার চেষ্টা করছি। এত শক্ত পক্ত ভাবে ধরেছেন নড়তেই পারছি না।”

“চেষ্টা করো দেখো পারো কিনা?আমার থেকে ছুটে যাওয়া কি এতই সোজা বালিকা।আমি বিশ্ব প্রেমিক দের মতো রাতের পর রাত জেগে প্রেমের কবিতা লিখিনি,শহরে শহরে প্রেমের কার্ফু জারী করিনি।ফেসবুকে রোজ স্টাটাস দেই নি।সোজাসুজি বিয়ে করে নিয়েছি।কিভাবে শ্বশুরের মেয়ের উষ্ণ নিঃশ্বাস রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে অনুভব করতে পারি সেই চেষ্টায় করেছি।যদি বিয়ে না করতাম তাহলে কি রোজ সকালে এই মুখ টা দেখার সৌভাগ্য হতো আমার।ইঞ্জিনিয়ার এর কি সাহস ভাবা যায়।আমার বউ বিয়ে করার প্লান করেছিলো।যার ভাবনায় আমার জীবনের এত সময় নষ্ট হয়েছে তাকে অন্য কেউ ছিনিয়ে নিয়ে যাবে ভাবতেই কয়েকরাত ঘুম হয়নি আমার।আমার জীবনে লেখাপড়া আমি সব থেকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছি, জীবনের সব থেকে বেশী সময় লেখাপড়ার পেছনে ব্যয় করেছি, আর এই লেখাপড়ার থেকেও বেশী সময় আমি তোমার পেছনে ব্যয় করেছি।”

“আমার পেছনে আপনি কবে সময় ব্যয় করলেন।”

“সে জানে আমার মস্তিষ্ক,আমার পাগলটে মন।আনমনে তোমাকে ভেবে কেটেছে আমার অজস্র সময়।তখন ই বুঝতাম তোমাকে কতটা প্রয়োজন আমার।আর যার জন্য এত সময় ব্যয় করলাম অন্য কেউ তাকে নিয়ে যাবে।”

“আপনার ফোন আবার বাজছে।
আপনি কথা বলুন,আমি ওয়াশরুম যাবো।”

“ওকে চলো আমিও যাচ্ছি।”

“হোয়াট।”

“কেনো এত হট তুমি?কাল এত রোমান্স করেছি বলে।কোনো ব্যাপার নাহ আজ ও হবে।”

“আমি হট মট বলিনি,ছাড়ুন আগে ফাজিল কোথাকার।”

এরই মাঝে বিহান ভাই এর ফোন আবার বেজে উঠলো।

‘আমি বললাম,ধরুণ ফোন।’

‘না পরে ধরবো।’

ফোনে প্রেয়সী নামে কারো ফোন বেজে চলেছে।

‘প্রেয়সী,উনি কে?কার নাম প্রেয়সী দিয়ে সেভ রেখেছেন।আর এতবার ই বা কল দিচ্ছে কেনো?’

‘কুল দিয়া!আগে দেখে নেই তোমার প্রেসার বেড়ে গিয়েছে কিনা?’

‘আগে বলুন কে আপনার প্রেয়সী।’

‘আমার প্রেয়সী, প্রিয়তমা সবই তো আম্মুর বউমা।’

মুখ ভার করে তাকিয়ে রইলাম আমি।

‘তোমার মুখ এমন হয়ে গেলো কেনো?মনে হচ্ছে অন্ধকার নেমেছে।’

‘আপনি কার নাম্বার প্রেয়সী দিয়ে সেভ রেখেছেন আগে সেটা বলুন।’

‘আচ্ছা বাবা শোনো ওর নাম ই প্রেয়সী।আমি কি দিয়ে সেভ করবো বলো।আমার প্রেয়সী হতে যাবে কেনো কেউ বলোতো।’

‘ওহ তাহলে কল ধরুণ।আর লাউডে দিন।’

‘বউ তো নয় যেনো সিসি ক্যামেরা।’

উনি বেশ একটু বিরক্ত হয়েই ফোনটা রিসিভ করে বললেন,

‘কি সমস্যা প্রেয়সী এতবার কল দিচ্ছিস কেনো?’

‘আমার ফোন ধরছিলিনা কেনো?’

‘ইমারজেন্সি মনে হয় নি তাই।’

‘আমি ইমারজেন্সি কিছু বলতেই ফোন দিয়েছিলাম।’

‘আই এম নট ইন্টারেস্টেড প্রেয়সী।’

‘কাল আমার ফোন ধরিস নি কেনো?’

‘কাল আমি আমার লাইফের বেষ্ট মোমেন্ট সেলিব্রেশন করেছি।কারো কল ই ধরা হয়নি।’

‘কি ছিলো সেটা।’

‘আমি ব্যাক্তিগত বিষয় শেয়ার করতে চাইছি না।’

‘তুই এইভাবে কথা বলছিস কেনো?’

‘বিকজ তুই হুদাই কল দিয়েছিস তাই।’

‘আমাকে এতটা ইগনোর করছিস কেনো বিহান।’

‘হোয়াট দ্যা হেল।আমি কেনো ইগনোর করতে যাবো।’

‘ইগনোর ছাড়া কি।তুই বাড়ি যাওয়ার পর তিনটা রিপ্লে দিয়েছিস।’

‘যে তিনটা দেওয়ার প্রয়োজন মনে হয়েছে দিয়েছি।অযাচিত মেসেজের রিপ্লাই আমি কবে দিয়েছি প্রেয়সী।’

‘কেনো বিহান,আমাকে এতটা ইগনোর করিস।কাল সারারাত ঘুম হয় নি আমার ছটফট করেছি আমি।তুই জানিস না তুই কথা না বললে ঘুম হয় না আমার।’

বিহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে পড়লেন এইবার।রাগে সাপের মতো ফুঁশ ফুঁশ করছি আমি।আবার ভীষণ কাঁন্না ও পাচ্ছে।বিহান ভাই রিতীমতো ভয় পেয়ে গেলেন।কি করবেন বুঝতে পারছেন না।তবে এটা বুঝলেন আমি মাইন্ড তো করেছি,সাথে মন ও খারাপ করেছি।

‘বিহান ভাই তড়িঘড়ি করে বললেন,লাস্ট বার বলছি আই এম ম্যারেড প্রেয়সী।বন্ধুত্ব নষ্ট হোক সেটা চাইছি না আমি।আমার বউ এইগুলা ভাল ভাবে নিবে না।’

‘আমার থেকে পালাতে মিথ্যা বলছিস তুই।’

‘যেটা মনে চাই ভেবে নে।রাখলাম।’

‘কি সমস্যা বিহান। তুই কেনো আমাকে বুঝিস না।’

‘এককথা বারবার বলতে বিরক্ত লাগে আমার।’

‘আমরা ফ্রেন্ডরা মিলে পাশ করার পর যে একটা ট্যুর দিতে চেয়েছিলাম ভুলে গেলি।’

‘আমি আমার পুরা ছুটি কাজিনদের সাথে কাটাতে চাই।’

‘কাজিনদের সাথে তো সময় অনেক কাটালি।’

‘সারাজীবন কাটাতে চাই।কাজিনদের সাথে থাকলে অনেক হ্যাপি থাকি আমি।’

‘তুই নাকি তোর কাজিন কে লাভ করিস।’

‘ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন।’

আমি এক ঝটকায় উনার থেকে উঠে গেলাম।

‘বিহান ভাই ফোন কেটে আমার হাত টেনে ধরে বললেন,দিয়া শোন না রাগ করিস কেনো?তুই করে বললে আবার রাগ করিস না।তুই বলতে ভাল লাগে আমার মাঝে মাঝে।’

‘যা ইচ্ছা বলুন আমার হাত ছাড়ুন আপনি?আমার সাথে আর কথা বলবেন না আপনি।’

‘আমি আবার কি করলাম।’

‘ঢাকায় ওই প্রেয়সীর সাথে কি না কি করেন আমি কি জানি নাকি।আমি কি থাকি ওখানে।’

‘উনি ভ্রু উচিয়ে বললেন,ইস রে কেমন টমেটো হয়ে গিয়েছে তোর গাল।’

‘এইসব বলে কোনো লাভ হবে না,যান যান সারারাত আপনার জন্য যার ঘুম হয়নি তার ঘুম পাড়ান।’

‘একটা থাপ্পড় দিবো,ফাজিল মহিলা।আমার কি দোষ, আমি তো বললাম ই আমি ম্যারেড।নিজের প্রিয় জিনিস রাগ করে হলেও অন্য কারো কাছে দেওয়ার কথা বলতে নেই।কাছে আয় একটু আদর করি রাগ কমে যাবে।’

‘আপনি আমার কাছেই আর আসবেন না।’

‘কাছে না আসলে বাঁচবো কিভাবে রাগপরী।অক্সিজেন বন্ধ হয়ে যাবে আমার।’

আমি উনার হাত ঝাড়ি দিয়ে চলে যেতেই,উনি কেমন কুকিয়ে উঠে বললেন,দিয়া আমার কেমন শ্বাস কষ্ট হচ্ছে।মনে হয় বাঁচবো না আর।উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছেন।উনার চোখে মুখে কষ্টের অবয়ব।উনি তো অসুস্থ হলেও কখনো প্রকাশ করেন না।নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট পাচ্ছেন না হলে এমন করবেন কেনো।

‘আমি দ্রুত উনার দুই গালে হাত দিয়ে বললাম কি হয়েছে আপনার।হঠাত এমন শ্বাস কষ্ট হচ্ছে আপনার।কি হলো আপনার।কেঁদে আমার অবস্থা একাকার।উনি যেনো কেমন নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছেন।আমি কেঁদে বলছি প্লিজ উঠুন না,এক্ষুণি তো ঠিক ছিলেন হঠাত কি হলো।চলুন ডাক্তারের কাছে চলুন।’

‘উনি হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন,আমি একদম ই নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।ডাক্তারের কাছে নিতে নিতে হয়তো বাঁচবো না।আমার মুখে অক্সিজেন গেলে একটু ভাল লাগতো,আমি হয়তো সুস্থ হতাম।’

‘ব্যাস্ত হয়ে বললাম,কোথায় পাবো এখন অক্সিজেন হসপিটাল না গেলে।’

‘উনি বললেন,তোমার মুখ দিয়ে হাওয়া দিলেই সুস্থ হয়ে যেতাম।তোমার মুখ আমার মুখে দিয়ে হাওয়া দাও অক্সিজেন এর মতো লাগবে।’

‘আমি এক সেকেন্ড সময় নষ্ট না করে আমার মুখ দিয়ে উনার মুখে হাওয়া দিতে শুরু করলাম।’

‘নিমিষেই উনার চোখ মুখ স্বাভাবিক হয়ে গেলো আমার চোখের পানি উনার চোখে মুখে পড়তেই উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে গালে মুখে আলতো ভাবে চুমু দিয়ে বললেন,কত ইনোসেন্ট তুমি দিয়া।কাছে আর আসবে না নাকি।তোমাকে কাছে আনাটা কত সহজ দেখেছো।আমার কি কোনকালে শ্বাসকষ্ট ছিলো গাধী।দেখলাম আমার কষ্ট দেখলে তোমার কেমন লাগে।’

কি সাংঘাতিক মানুষ। আমাকে রিতীমত ভয় দেখিয়ে আমাকে দিয়ে কিসব করালেন।কি ভয়ানক লজ্জাটায় না পেলাম।

‘উনার বুকে আস্তে কিল দিতে দিতে বললাম চিটার একটা।আমাকে ভয় দেখানো হয়েছে।’

‘প্রসঙ্গ যেখানে বউ এর আদর পাবার চিটিং একটু করায় যায়।’

লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলাম আমি।চোখ বিছানার চাদরের দিকে।

‘এই যে আমার ফোন চেক করো।আগে দেখো সব মেসেজ।তারপর ভুল বুঝো কেমন।’

উনার দুইটা ফোন চেক করেই তেমন কিছুই পেলাম না আমি।প্রেয়সীর মেসেজ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে বিহান ভাইকে ভালবাসে।কিন্তু বিহান ভাই সতর্ক ভাবে এড়িয়ে গিয়েছেন।উনাকে ভুল বুঝলে অন্যায় হবে।

আমাকে চুপ থাকতে দেখে বললেন,

–তুমি আমার জন্য কষ্ট পাও সেটা আমি হতে দিবো না।আমার মনের দরজায় তুমি ছাড়া কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ।

এরই মাঝে দরজায় কড়া নাড়লো কেউ।আমি উঠে চুল ঠিক করলাম দ্রুত।

আর বিহান ভাই দ্রুত শার্ট গায়ে দিয়ে বোতাম লাগাতে লাগাতে দরজা খুললেন।

দরজায় দাঁড়িয়ে আছে নানী।

আমি বললাম,

–কি হয়েছে নানী?

–ধর এইটা কি দেখ।

–কে দিলো।আর কি এটা।

–আমি আনিয়েছি।দেখ বাচ্চা হবে কিনা।এই মেশিন এর নাম কি তা জানিনা।

–বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে বললাম হোয়াট কি এটা।

–উনি গাল চেপে হেসে বললেন,ইউরিন টেস্টের কীট।

–আমি উনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম,ধরূন আপনার ইউরিন টেস্ট করুণ।

–উনি আমার কথা শুনে এক গাল হেসে দিলেন।

–উনার হাসি দেখে নানী আশ্চর্য বনে গেলেন।

চলবে,,