এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা ২ পর্ব-৭০+৭১+৭২

0
1346

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা সিজন ২
৭০.
#WriterঃMousumi_Akter

–নিকশ কালো অন্ধকার আমাবস্যার রাত, মন খারাপে রুমের লাইট অফ করে দুই হাঁটুর মাঝে মাথা গুজে কাঁদছি।সকালেই আম্মুর কাছে চলে যাবো সিদ্ধান্ত নিয়েছি।বিহান আমার অভিমানের কারণ আর খোজে না এখন।রাগ করে খেয়েছি কিনা জানতেও চায় না এখন। থাকবোই না আর ওর সাথে, দরকার নেই আমার ডাক্তার হওয়ার।আমি আর লেখাপড়া ই করবো না।কোনদিন উনার সাথে আর কথা বলবো না আমি।কেনো কথা বলবো, উনি আর ভালবাসে না আমায়।অন লাইনে আছে অথচ আমাকে একটা মেসেজ দেওয়ার ই সময় নেই।রুমের লাইট অন করে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম।মামা আর মামির সাথে আমিও চলে যাবো।ব্যাগ গুছিয়ে ফ্লোরে রেখে ওয়াশ রুমে গেলাম, অপেক্ষা করছি ভোর হওয়ার জন্য।ওয়াশ রুম থেকে চোখে মুখে পানি দিয়ে বেরিয়ে দেখি এপ্রোণের পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে বিহান।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত চার টা বাজে।বিহানের দিকে তাকিয়ে ভীষণ অবাক হয়ে গেলাম আমি এখন এখানে কিভাবে এলো।ও না হসপিটালে ছিলো।আমি বিহান কে দেখে মাথা নিচু করে বিহান কে ক্রস করে বেলকনির দিকে পা বাড়াতেই বিহান আমার পথ আটকে দাঁড়ালো।আবার ও বিহান কে পাস কাটিয়ে অন্য দিক দিয়ে যেতেই বিহান আবার ও আমার পথ আটকে দাঁড়ালো।বিহানের মুখে কোনো কথা নেই তবে ভীষণ গম্ভীর মুডে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।চোখে মুখে ভীষণ গম্ভীরতা।আমার দিকে গম্ভীর মুডে তাকিয়ে হাতের গ্লাভস খুলছে। বিহান গ্লাভস পরে, এপ্রোণ পরেই আজ বাসায় চলে এসছে কেনো?ও তো গ্লাভস পরে কখনো বাসায় আসে না।গ্লাভস খুলে, এপ্রোণ খুলে ফ্লোরে ফেললো।হাতের বুড়ি আঙুল কপালে চালিয়ে গম্ভীর চিন্তায় তাকিয়ে আছে আমার দিকে।ঘন ঘন কয়েক টা শ্বাস নিয়ে বিছানার উপর বসলো।শরীর এলিয়ে দিতে কিছুটা পেছনের দিকে হেলে ফ্যান চালিয়ে বসলো।যেনো ভীষণ ক্লান্তি দূর করছে।শার্টের দুইটা বোতাম খুলে বেশ আয়েশী ভাবে উপরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে কিছুটা হেলে যাওয়ার মতো।প্রতিটা ঘন নিঃশ্বাসে যেনো কান্তি রেখা কিছুটা করে কমছে।আমার চোখ দিয়ে পড়ছে অঝরে পানি।এরপর বিহান আমার দিকে তাকিয়ে সোজা হয়ে বসলো।ফ্লোরে রাখা ব্যাগের দিকে নজর গেলো।বিহান বিছানা ছেড়ে উঠে এসে ব্যাগের কাছে নিচু হয়ে বসে ব্যাগ টা খুলে দেখলো আমার জিনিসপত্র।বিহান উঠে দাঁড়িয়ে বুকে হাত বেধে স্ট্রং হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

“এই ব্যাগ কিসের দিয়া।?খুব সন্দিহান ভাবে বললো।”

আমি কোনো উত্তর দিলাম না।

বিহান আবার দাঁতে দাঁত চেপে ভীষণ রেগে বললো,

“আমি কিছু জানতে চেয়েছি ড্যামেড আনসার মি।”

বিহানের কথা পুরা রুমে বাজছে।এত জোরে বলেছে কথাটা।ভয়ে আমার হৃদপিন্ড কেঁপে উঠলো খুব জোরে।ভয়ে দুই হাত দুই কানে চেপে ধরলাম জোরে।থরথর করে কাঁপছি আমি।বিহান প্রচন্ড রেগে আছে।ওর দিকে তাকানোর সাহস টুকু পাচ্ছি না।বিয়ের পর একদিন ও এভাবে রেগে যেতে দেখিনি ওকে।এখন ই মনে হচ্ছে আমাকে ফিনিশ করে ফেলবে বিহান।এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে কোথাও লুকিয়ে পড়ি বিহানের নজরের আড়ালে।বিহান এতটা ভয়ানক ভাবে রেগে যেতে পারে আমি ভাবতেই পারি নি।আমাকে ভয়ে চুপসে যেতে দেখে আমার দুই হাতের কব্জি খুব শক্ত ভাবে চেপে ধরলো রাগে ফুসতে ফুসতে ।এখনি মনে হয় আমার কচি হাতের হাড় গুড়ো গুড়ো হয়ে যাবে।বিহান ওর শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চেপে ধরলো।রাগে কাঁপছে বিহান, ভয়ানক রাগ তার চোখে, এই রাগের সামনে এখন যায় আসবে চূর্ণ বিচুর্ণ হয়ে যাবে।বিহান আমার দুই হাত চেপে ধরে ওয়ালের সাথে খুব জোরে চেপে ধরে বললো,

“হোয়াট ইজ ইওর প্রব্লেম। আরও জোরে বললো হোয়াট ইজ ইওর প্রব্লেম ড্যামেড।”

আমি কুকিয়ে উঠলাম ব্যাথায়।ফুঁপিয়ে আহ শব্দ করে কেঁদে দিলাম।ব্যাথায় সহ্য করতে পারছি না যন্ত্রণায়।বিহান এতটা জোরের সাথে চেপে ধরেছে দুই হাত যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে।আমাকে কাঁদতে দেখে ছেড়ে দিলেন,

ওয়ালে নিজের হাত ঘুষি মেরে, ব্যাগ লাথি মেরে বললেন,

“ফারজানা কে কি মেসেজ করেছো?আনসার নি!”

-আমি ভয়ে কিছুই বলতে পারছি না।শুধু কাঁদছি।

উনি আবার চিল্লায়ে বললেন,

“ছেড়ে যেতে চাও আমায়!ছেড়ে যেতে চাও।” দুবার উচ্চারণ করলেন কথাটা।

এবার আমার কাঁন্নার সুর আরো বেড়ে গেলো।আমি আরো জোরে কেঁদে দিলাম।

গভীর চিন্তায় হাত চালিয়ে দিলেন চুলের মধ্য।উনি এবার চুলের মধ্য হাত চালাতে চালাতে বললেন,

“আমি চিল্লাবো,আমি রেগে যাবো,আমি ধমকাবো,আমি মারবো,আমি বকবো,যা খুশি তাই বলবো কিন্তু দিয়া তুমি কান খুলে শুনে রাখো তুমি আমায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতেও পারবে না।আন্ডারস্টান্ড।আমার রাইট আছে সম্পূর্ণ রাইট আছে তোমাকে বকার।তাই বলে তুমি আমায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববে।এটা তোমার মাথায় আসে কিভাবে দিয়া। আমার সাথে রাগ হোক ঝগড়া হোক তুফান হয়ে যাক তোমার, যা কিছু হয়ে যাক তুমি আমাকে ছেড়ে যাওয়া তো অনেক পরের কথা এমন ভয়ানক কিছু ভাবতেও পারবে না।আই নিড ইউ এভরিসেকেন্ড দিয়া।আই নিড ইউ এভরিমোমেন্ট।যে তুমি আমায় ছেড়ে যাবে তুমি জানোনা তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই।কেউ নেই দিয়া আমার হৃদয়ে তুমি ছাড়া।তুমি ছাড়া সব কিছু শুণ্য হাহাকার মরুভূমি আমার পৃথিবী। আমি কয়েক দিন না খেয়ে থাকতে পারবো,বিলাশবহুল জীবন ছাড়া থাকতে পারবো তবুও তুমি ছাড়া থাকতে পারবো না।তুমি ছাড়া আমার অক্সিজেন বন্ধ হয়ে যায় তুমি বোঝো না।মাঝে মাঝে তোমাকে বকে নিজেকে স্বান্তনা দেই আমি বিকজ তুমি আমার আপণজন।কথা গুলো বলতে বলতে আমাকে টেনে ধরে জড়িয়ে ধরলেন বুকের সাথে।উনিও কেঁদে দিয়ে বললেন, আই লাভ ইউ পিচ্চি, লাভ ইউ সো মাছ,আই লাভ ইউ মোর দ্যান মাই ওন লাইফ দিয়া।”

উনাকে এমন করতে দেখে আমার কাঁন্নার মাত্রা আরো বেড়ে গেলো।কত আবেগ আর ভালবাসা জড়ানো ছিলো কথা গুলোতে।

উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

“লাইফের সব থেকে খারাপ সিসুয়েশন এ পড়েছিলাম আজ আমি।চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।আমার ক্যারিয়ারের বদনাম হয়ে যেতো আজ দিয়া।আমার হাতে একজন রুগির জীবন যাচ্ছিলো।একটা মানুষের জীবনের দায় যখন আমার উপর পড়লো আমি তোমায় বুঝাতে পারবো না যে মানসিক ভাবে কি ঝড় যাচ্ছিলো আমার উপর দিয়ে।আম্মুকে ফোন দিয়ে বললাম,আম্মু আমার জন্য দোয়া করো।আম্মু বললো, আমার ছেলে কখনো হারবে না বাবা।তোমার আম্মুর দোয়া সব সময় আছে।আজ এক পেশেন্ট এর সার্জারী ছিলো।আমার ওষুধ চেঞ্জ করে প্রেয়সী নিজের ইচ্ছামতো ওষুধ দিয়েছিলো।আমি বুঝেছি আমার ক্যারিয়ারের বদনাম করতে এমন করেছে।কিন্তু ও চালাকি করে কথা ঘুরিয়েছে।রাগে আমি আজ আবার ও প্রেয়সীর গায়ে হাত তুলেছি।হসপিটালের সব ডাক্তার ই জানে আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনা।এসব ঝামেলায় মাথা ঠিক ছিলো না।আমি হাইয়ার অথোরিটির কাছে অভিযোগ দিয়েছি প্রেয়সীর নামে।পরে আমি সঠিক ট্রিটমেন্ট করে সুস্থ করে সার্জারী করেছি।বাসা থেকে বেরিয়ে আমার কেবিনে গিয়ে ভেবেছি তোমায় ফোন দিবো দেখি চার্জ নেই।চার্জে দিয়ে সার্জারী তে গেছি।গুরুত্বপূর্ণ সার্জারী থাকায় প্রায় সারারাত লেগেছে সার্জারী তে।আজকের সার্জারী অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো আমার জন্য।তবে আমি পেরেছি চ্যালেঞ্জ এ জয়ী হতে।সার্জারী শেষে ফোন হাতে নিতেই ফারজানা আমাকে তোমার মেসেজ দেখালো।তুমি কি লিখেছো আপু আপনি আপনার বিহান স্যার কে বলে দিয়েন আমি বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছি।নেট অন করেই দেখি তোমার স্টাটাস।আমার মাথা হ্যাং হয়ে গেছিলো প্রায়।গ্লাভস না খুলেই বাসায় ছুটে এসেছি।ফোনে চার্য না থাকায় তোমায় জানাতে পারিনি আমি বাসায় ফিরতে পারবো না।সরি দিয়া প্লিজ মাফ করে দাও।আসলেই আমার অনেক রিয়্যাক্ট করা হয়ে গিয়েছে।এমন আর হবে না পিচ্চি।”

আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,

“আমাকে আগে কেনো বললেন না।আপনার সাথে এসব হয়েছে।আমি ভেবেছি ওই সুন্দরী ফারজানা আর সানজি কে কি আপনার ভালো লেগে গেলো।আবার হোয়াটস এপ এ কি সব দিতে বলেন।আবার সারারাত বাসায় আসেন নি।আমি কত কি ভেবে বসে আছি।আমি ভেবেছি আপনি আমাকে ভুলে গিয়েছেন।আপনি সামান্য একটু চেঞ্জ হলে আমার কেমন যেনো সব উলট পালট লাগে।আপনি জানেন না আপনাকে ঘিরেই আমার সব ভালো থাকা।”

“বললাম তো সরি,এমন ভয়ানক অন্যায় আমার আর হবে না।বাট তুমি কিভাবে ভাবলে আমি ফারজানা বা সানজি কে পছন্দ করবো।”

“কারণ ওই ফারজানা কে দেখি আপনার সাথে কেমন করে যেনো কথা বলে।আর ওরা খুব সুন্দরী। ”

“ওরা কি তোমার থেকেও সুন্দরী। ”

“এমন ভাবে বলছেন যেনো আমি সুন্দরী। ”

“একদিন বলেছিনা আমার চোখ দিয়ে দেখলেই বুঝতে আমার চোখে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নারী।ফারজানা আর সানজি কি আসলেই সুন্দরী দিয়া।”

“হুম খুব ই।”

“আমি তো কখনো খেয়াল করে দেখিনি।এইবার দেখতে হবে তাহলে।”

“না আপনি দেখবেন না।আপনার আশে পাশে কোনো মেয়ে দেখলেই আমার খুব জ্বলে।”

“আমার হৃদয়েশ্বরী তুমি দিয়া।দিয়ার বিহানের হার্ট কোনো ফুটপাতের দোকান নয় যে কেউ ইজিলি প্রবেশ করতে পারবে।অনেক কড়া সিকিউরিটি দেওয়া সেখানে।দিয়া নামক ভালবাসার পাখির বসবাস। ”

আমি কেঁদেই যাচ্ছি।আমাকে কাঁদতে দেখে বিহান বললো,

“এখনো কাঁদবে?আচ্ছা আমি অন্যায় করেছি আমার শাস্তি পাওয়া উচিত রাইট।কি শাস্তি দিতে চাও বলো।”

“যা বলবো তাই শুনতে হবে কিন্তু।”

“আচ্ছা বলো কি শাস্তি।”

“সাতদিন ছুটি নিতে হবে আপনাকে।আপনি অনেক দিন হয়ে গিয়েছে সব সময় বিজি থাকেন।আমাকে একটুও সময় দেন না।সাত দিন আমাকে সময় দিতে হবে।”

“আচ্ছা মঞ্জুর।এইবার কি মাফ করেছো।”

“করেছি।”

“এইবার জলদি খাইয়ে দাও আমাকে।তোমার নরম হাতে খাবার খেলে সব ক্লান্তি দূর হবে।”

–বিহান ফ্রেশ হয়ে এলে খাবার নিয়ে এলাম।বিহানের গালে তুলে খাবার খাইয়ে দিচ্ছি।বিহান খাবার খেতে খেতে বলছে তুমি কেনো এতো অবুঝ দিয়া।আমার উপর কি ভরসা নেই।কেঁদে কেঁদে নিজেকে কষ্ট দিয়েছো।চোখের পানি তোমার পড়ে ভয়ানক যন্ত্রণা আমার অনুভব হয়।

বিহানের বুকে মাথা রেখে রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম।সব কষ্ট যেনো বিহানের বুকে মাথা দিয়ে বিলীন হয়ে গেলো।

বিহান সাতদিনের ছুটু নিয়েছে।মামা মামি দুই দিন থেকে চলে গেলো।রিয়া আর বিভোর ভাই এর সাথে মামা মামির সব কিছু ঠিক হয়ে গেলো।বিহানের ল্যাপটপে বসে বসে মুভি দেখছি আমি আর রিয়া।এরই মাঝে বিভোর ভাই এসে টেনে টেনে ডাকছেন রিয়াকে,

— বউউউউউউউউউ।বউউউউউউউউউউউউ কোথায় হারিয়ে গেলে।

রিয়ার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলাম আমি।এ কেমন ডাকরে বাবা।রিয়া তেড়ে গিয়ে বললো,

–ষাড়ের মতো ডাকা হচ্ছে কেনো শুনি।

–আমার ঘুম পাচ্ছে রিয়া।

–তা নিষেধ করেছে কেউ।

–তোমাকে নিয়ে ঘুমোবো।

–আপনার ঘুম কি আমি ঘুমিয়ে দিবো।

–আহা! শিশুটা।

–আমাকে কি নদীর শিশুক এর মতো লাগে।

–আরে না বেবিটা। বাংলায় শিশুটা বললাম।

–দিয়া আমি আসছি।আজ তোর ভাইয়ের কপালে আছে।

–যা যা আমার ভাই রোমান্টিক মুডে আছে।

চলবে,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা সিজন ২
৭১.
#WriterঃMousumi_Akter

পাশের রুমে শুরু হয়েছে গৃহযুদ্ধ যে যুদ্ধ শুনে হাসতে হাসতে মরে যেতে মন চাইছে আমার।আমি হেসেই যাচ্ছি।বিহান ওয়াশ রুমে কাপড় ক্লিন করছে আর বলছে পাগল হয়ে গেলে এত হাসছো কেনো?আমি মুভি দেখা ছেড়ে ওয়াশ রুমের দরজায় গেলাম।বিহান থ্রি -কোয়ার্টার পরে দুই বালতি কাপড় পরিষ্কার করছে।বিহান কে ইশারা দিয়ে বললাম শুনুন ওপাশে কি হচ্ছে।বিহান বেশ ধমকের সুরে বললো তোমাকে না কতবার বলেছি ওদের ঘরে কান দিবা না তুমি।কে শোনে কার কথা আমি গাল চেপে হেসে এসে আবার বিছানায় বসলাম।রিয়া আর বিভোর ভাই এর ভীষণ মারামারি শুরু হয়ে গিয়েছে।।সম্ভবত বিভোর ভাই রিয়াকে চুমু দিতে গিয়েছে আর বিভোর ভাই এর দাঁড়ির খোচা তে রিয়া ব্যাথা পেয়েছে।কেননা বার বার শোনা যাচ্ছে ভদ্রলোকের মতো দাঁড়ি গোফ যেনো বড় রাখা হয় এত ঢং করে কাটা না হয় আর।পরের বার আমাকে কিস দিতে আসলে এমন দাজ্জাল মার্কা দাঁড়ি গোফ নিয়ে আর আসবেন না।উহু আমার নরম তুলতুলে গাল এবার ই গেছে।

‘বিভোর ভাই বলছেন,কি বলো আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলে এই বয়সে দাঁড়ি রাখলে কেমন দেখাবে।আমাকে তো বুড়ো বুড়ো লাগবে।’

‘ঢং দেখে বাঁচিনা। বুইড়া বেটা বলে কি।এখন কি আর হ্যান্ডসাম আছেন আপনি।’

‘তাহলে কি বুড়ো হয়েছি।’

‘তাই ছাড়া কি ওয়েট আপনার ফোন নাম্বার আমি এক্ষুণি বুইড়া বেটা দিয়ে সেভ রাখবো।শুনুন আপনি বুড়ো হয়ে গিয়েছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।দাঁড়ি রাখার কোনো বয়স নেই,সুন্নত হলো দাঁড়ি রাখা। স্টাইল দিয়ে মেয়ে পটিয়ে বেড়াতে হবে না আর আপনাকে।বিয়ে করেছেন ভালো হবেনে কবে।’

‘একটা কিস দিতে গিয়ে কি কি শুনলাম বাবা।বউ নাকি রিণা খান কিছুই বুঝলাম না।’

‘কি বললেন আমি রিনা খান।অসভ্য পুরুষ আপনি।কোনো কথা নয় দাঁড়ি রাখবেন তাই রাখবেন।’

‘এখনো ছেলে মেয়ে হলো না আমাকে বুড়ো বানিয়ে দিলে।ছেলে মেয়ে হলে কি আর আমাকে পাত্তা দিবে।’

‘বুড়ো কে বুড়ো বললে আপত্তি কোথায় বুঝলাম না।আহারে কচি খোকা যেনো।আপনার মতো ফাজিলের ছেলে হলে আপনার মতো ফাজিল না হয় তাই ভাবছি।’

‘আমার ছেলে হলে মানুষ বুঝবে বাপ কা বেটা।চবাপ বেটা বেড়াবো মানুষ বলবে দুই হিরো।ছেলে যেখানে প্রেম করবে মানে আমার হবু বিয়াইন এর সাথে একটু ভাব টাব ও নিতে পারবো।ভেবেই নিজেকে আরো হ্যান্ডসাম ভাবে সাজাতে মন চাইছে।’

‘বাচ্চা কি আপনি নিবেন।মানে আপনার পেটে হবে।’

‘কেনো তোমার পেটে।’

‘যদি ক্ষমতা থাকে না নিজের পেটে একটা বাচ্চা নিয়ে দেখান।লুচু কোথাকার ছেলের শ্বাশুড়ির সাথে এখন থেকেই লুতুপুতুর চিন্তা।যান আগে এখানে থেকে।আমি আলাদা ঘুমোবো।ডোন্ট টাচ মি।’

‘আরে আরে সরি সরি।বিয়াইন ফিয়াইন ওসব মিথ্যা কথা।আমার বউউউউ ছাড়া দুনয়নে কিচ্ছুই ভালো লাগে না আমার।’

‘তাই নাকি।’

‘কসম তাই।একটু রাগালাম তোমাকে।’

‘ওকে ফাইন আপনি সাকসেস আমি রেগেছি।এখন আবার কথা ঘুরাচ্ছেন কেনো?’

ফিক করে হেসে যাচ্ছি আমি।তাদের ঝগড়া আমি সব সময় খুব ইনজয় করি।আমার মনে তাদের মতো বেষ্ট জুটি আর হতে পারে না।বিহান কে মেহেদি আনতে বলেছিলাম,এনেও রেখেছে।হাতে মেহেদী নিয়ে বসে আছি।সাদা নখ হঠাত মনে চাইছে মেহেদী লাগাতে।খাটে পা ঝুলিয়ে বসে আছে আর পা দুলাচ্ছি সাথে গুনগুন করে গান গাইছি লা লালা লা লালালা।বিহান ছাদে সমস্ত কাপড় মেলে দিয়ে রুমে এসে খাটের নিচে বসলো আমার পায়ের কাছে।আমি বিহান কে বসতে দেখে বললাম একি আপনি নিচে বসছেন কেনো।বিহান নিচ থেকে মায়াবী চোখ তুলে আমার দিকে তাকালো।ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি। বিহান আমার হাত থেকে মেহেদী টা নিয়ে টিউব খুলে পায়ের নখে মেহেদী লাগিয়ে দিলো।আমি হঠাত বিহানের এমন কান্ডে বেশ অবাক।আমার হাত দুটো বিহানের হাতের মধ্য নিয়ে হাতের নখে মেহেদী লাগিয়ে দিলো।মেহেদী লাগাতে লাগাতে বললো,দিয়া তোমার হাতের নখ গুলো অনেক ভালো লাগে আমার জানো।কেমন গোল গোল নখ সাদা ধবধবে।আমি বিহান কে বললাম,আপনার নখ আমার থেকে অনেক বেশী সাদা আর সুন্দর।আচ্ছা এত সুন্দর কেনো আপনার নখ বলবেন। বিহান নিঃশব্দে হেসে বললো,কি সব বাচ্চাদের মতো প্রশ্ন করো তুমি।পনেরো মিনিট পরে টিস্যু দিয়ে মেহেদী মুছে দিলো বিহান।টকটকে কালার হয়েছে।বিহান আমার হাতে চুমু দিয়ে বললো,যে রং বিহান লাগিয়েছে সেটা তো সুন্দর হতেই হবে।যে হাতে বিহানের স্পর্শ রং লেগেছে সে হাতে নিঃসন্দেহে ভালো রং হবার কথা তাইনা মিসেস বিহান।আমি হাসলাম বিহানের কথা শুনে।হাতের নখ একটু বড় দেখে নেইল কাটার দিয়ে নখ কেটে দিলো।আমি একটু আপত্তি করলাম বা হাতের বড় নখ না কাটার জন্য।বিহান একটু বড় রেখে কেটে দিলো আর বললো নখ রাখতে নেই পুচকি এতে জীবানু থাকু প্রচুর।বিহানের কোলের উপর আমার দু পা নিয়ে পায়ের নখ ও কেটে দিলো।বিহান কে বললাম,এত কিছুই তো করে দিলেন একটু নেইলপালিশ লাগিয়ে দিবেন।বিহান কসমেটিক্স বক্স থেকে নেল পালিস নিয়ে হাতে পায়ে নেল পালিশ পরিয়ে দিলো।এ সাত দিনে প্রতিদিন গোসল করিয়ে দিয়েছে কাপড় ধুয়ে দিয়েছে,খাইয়ে দিয়েছে রোজ আমাকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে,চুলে শ্যাম্পু করিয়ে দিয়েছে।

এভাবেই কেটে গেলো আরো দুইটা বছর।সময় এগিয়ে গেলো আরো অনেক দূর।কিন্তু আমি আজ ও সেই নতুন বিহানের কাছে।একদম ই নতুন যেনো সদ্য বিবাহিতা বউ বিহানের।রোজ বাসায় আসার সময় কিছু না কিছু আনছেই আমার জন্য।আমার মন ভালো রাখতে ভীষণ বিজি বিহান।।রমজান মাসের শুরু হলো।ইউটিউবে ইফতারির রেসিপি দেখছি বসে বসে রিয়া আর আমি।নড়াইল থেকে তোহা আপু,মেহু আপু,তিয়াস ভাই, ভাইয়া সবাই ঘুরতে এসছে ঢাকা সাথে আয়রা কি নিয়ে এসছে।রমজান তারা ঢাকায় কাটাবে।ঈদের সময় এক সাথে নড়াইল ফিরবো।অনেক দিন সব কাজিনেরা এক জায়গা হই না।এবার শুরু হলো আবার কাজিনদের আড্ডার চাঁদের হাট।এখন আমরা বিশাল বড় ফ্লাট নিয়েছি চার টা বেড রুমের।কারণ কেউ না কেউ ঢাকায় বেড়াতে আসে ই সব সময়।এক্সটার রুমের প্র‍য়োজন আমাদের সব সময়।মামি আর আম্মু এক জায়গা বসে ভিডিও কল দিয়েছে।মামি বলছেন,

–দিয়া কেমন আছিস রে মা।

–ভালো আছি মামি।তুমি?

–চোখ মুখ শুকিয়ে গিয়েছে কেনো?

–জানিনা তো।গরমের জন্য মনে হয়।

–লেবুর সরবত খাবি রেগুলার।

–সেতো খাচ্ছি ই মামি চিন্তা করোনা।আম্মু বাবার শরীর কেমন।

–আছে ভালোই এইতো রমজানের পর ঢাকায় নিয়ে যাবো তোমার বাবাকে।

–হ্যাঁ আম্মু বিহান বলছিলো বাবার অপারেশন এর কথা।

–দিয়া তোর ভাইয়াদের কাছে গ্রাম থেকে খুজে খুজে ১০০ টা মুরগির ডিম আর শাক পাতা, ছোট মাছ পাঠিয়েছি।ডিম ফ্রিজে রাখিস বিহান,বিভোর, রিয়া সবাই খাস।আর রিয়ার জন্য রিয়ার আম্মু ড্রেস পাঠিয়েছে।তোর বড় মামিও রিয়ার জন্য শাড়ি পাঠিয়েছে।

–আর আমার জন্য?

–আর কত দিয়া?আমি বিহান কে নিষেধ করেছি আর যেনো কোন কিছু না কেনে।তোমার আলমারি দেখে মাথা ঘুরায় আমার।তোমার ছেলে মেয়ে ও তো পরে পারবে না।

–আম্মু রিয়ার কি আমার থেকে কম আছে।

–রিয়ার নতুন বিয়ে হয়েছে।রিয়াকে তো দিতেই হবে।

–বুঝলান আমি বুড়ি হয়েছি।

–সাইড থেকে মামি বললো,দিয়া তোর শ্বাশুড়ি কি মরে গেছে।আমি তোর জন্য পাঠিয়েছি।দেখিস পিঠা গুলা নষ্ট না হয়ে যায়।

আচ্ছা মামি আবার ফোন দিবো। ভাইয়ারা চলে এসছে।হই হুল্লোড় করতে করতে ভাইয়াদের আগমন ঘটলো।বিহান আর বিভোর ভাই বাজারে গিয়েছে।মেহু আপুর সাথে অনেক দিন পরে দেখা। তোহা আপু আর মেহু আপু রিয়া আর আমাকে জড়িয়ে ধরলো।ওদের সবাইকে বসতে দিলাম।রান্না আগেই করে রেখেছিলাম।এর ই মাঝে বিহান আর বিভোর ভাই ও চলে এলো।সবাই এক সাথে খাবার খেতে খেতে গল্প করছি।রিয়া আয়রা কে খাইয়ে দিচ্ছে।খাওয়ার মাঝেই তিয়াস ভাইয়া বলে উঠলো মেহু আজ বাস থেকে এক টাকলা বেটার মাথার উপর বমি করে দিয়েছে।কি জানি বেঁচে আছে কিনা বেচারা।তোহা আপু চেচিয়ে বললো,এক্ষুণি বমির কথা মনে করাতে হলো তাইনা?মেহু আপু বললো এইবার তোমার মাথায় করবো সিওর।রিয়া মেহু আপুর দিকে তাকিয়ে বললো,আসলেই নাকি আপু,ঘটনা কি সত্য।মেহু আপু বললো হ রে বইন ঘটনা সত্য।খাওয়া শেষে বসে আছি সবাই রিয়াদের রুমে।আমার ফোন খুজে পাচ্ছি না। ফোন টা মাত্রই রেখেছি।বিহান বললো,এমন ভাবে খুজছো যেনো জান হারিয়ে গিয়েছে।আবির ভাইয়া বললো,মেয়েদের ইদানিং বয়ফ্রেন্ডের থেকে ফোন ই বেশী প্রিয় ভাই।বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।ভাইয়া নিশ্চয়ই মেহু আপুকে ঠেস টা মারলো।মেহু আপু মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে।বিহান বললো আচ্ছা আমি ফোন দিচ্ছি দেখো কোথায় বাজে ফোন।বিহান ফোন দিলেই তোহা আপুর হাঁটুর নিচে ফোন বেজে উঠলো।তোহা আপু আমার ফোনটা উঁচু করে ধরে বিশাল জোরে খিলখিলিয়ে হেসে দিলো।সবার এটেনশন এখন তোহা আপুর দিকে।

তোহা আপু ফোন উঁচু করে বললো, “বউ ভক্তলোক টা কে?”

তিয়াস ভাইয়া বললো কে আবার বিভোর ভাই নিশ্চয়ই।

তোহা আপু ভ্রু নাচিয়ে বললো,”
আরে না না বিভোর ভাই না।কি ব্যাপার বিহান ভাই আপনি তাইলে বউভক্তলোক,দিয়ার ফোনে বিহান ভাই এর নাম্বার বউভক্তলোক দিয়ে সেভ করা।”

বিহান কপালের চামড়া কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।বুঝতে বাকি রইলো না বিহান আমাকে অশনি সংকেত দিচ্ছে।কারণ বিহান এর নাম্বার আমি বউভক্তলোক দিয়ে দুই দিন আগেই সেভ করেছিলাম।

চলবে,,,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা সিজন ২
৭২.এক্সট্রা পার্ট
#WriterঃMousumi_Akter

“বউভক্ত লোক যদি কেউ হয়ে থাকে সেটা হলাম আমি।একমাত্র আমি বুঝেছিস তোরা।এই বিভোর ছাড়া কেউ বউ ভক্ত হতে পারেনা।আমি আমার বউ ছাড়া দুনিয়ার কিছুই বুঝি না।আমার বউ ই হলো আমার সব।তাছাড়া আমি এটা বিশ্বাস করিনা যে আমার থেকে কেউ বউ বেশী ভালবাসে।”

বিভোর ভাই ডান হাত উঁচু করে লাফিয়ে উঠে এমন কথা বলে উঠলেন।আমাদের সবার মনোযোগ বিভোর ভাই এর দিকে গেলো।সবাই বিভোর ভাই এর দিকে চক্ষু চড়ক গাছের মতো করে তাকিয়ে রইলাম।রিয়া চোখ রাঙিয়ে রাগে খিটমিটিয়ে বলে উঠলো,

“নির্লজ্জ কোথাকার।আপনার কাছে জানতে চেয়েছে কেউ।”

রিয়া মনে হয় লজ্জায় এক্ষুণি স্টোক করবে।বিভোর ভাইকে দাঁত দিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে আর খটমট করে যাচ্ছে।

ভাইয়া বললো,

“ভাইরে ভাই থাম তুই।তুই যে কি পরিমান বউ ভক্ত সে আমরা ভালো করেই জানি।হোয়াটস এপ এর প্রফাইলে রিয়ার ছবি।ফেসবুকের প্রফাইলে রিয়ার ছবি।চারদিকে বউ এর ছড়াছড়ি।তুই বিয়ে না করলে জাতি জানতেই পারতো না বউ নিয়ে কিভাবে আদিক্ষেতা করতে হয়।”

তিয়াস ভাই বললো,

“আরে ভাই মাঝে মাঝে তো বুঝেই উঠতে পারিনা বিভোর ভাই এর আইডি ছেলে না মহিলার আইডি।আই এম সো কনফিউজড সামটাইম।সেদিন আমার এক ফ্রেন্ড রিয়ার ছবি দেখে ক্রাশ খেয়ে মরার কায়দা প্রায়।আমি বললাম ভাই তুই কি মান সম্মান ডোবাবি।মানুষ তোকে গে বলে ডাকবে। ওটা আমার মামাতো ভাই এর আইডি।বেচারার কি অবস্থা। ”

বিভোর ভাই বললেন,

“তা তিয়াস আমি মাঝে মাঝে ভালবেসে বউ এর ছবি দেই তোর মতো তো মোটা মহিলাদের পিক দেই না।আর আবির বিয়ে তো ঠিক হয়েছে বিয়ে করবা।তুমি কি করবা তা জাতি জেনে গিয়েছে।।”

তিয়াস ভাই একটু মুড নিয়েই বললো,

“দেখুন বিভোর ভাই আমি কিন্তু আপনার সুমুন্দি হই।তাই আদবের সাথে সম্মান দিয়ে কথা বলুন।রিয়া কিন্তু আমার ছোট বোন।তাছাড়া আপনার আর বিহান ভাই এর উচিত কিন্তু আমাকে সম্মান দিয়ে তিয়াস ভাইয়া বলে ডাকা।”

বিভোর ভাই এর চেপে রাখা হাসি এবার বেরিয়ে এলো।অট্টহাসিতে গড়িয়ে গেলো।হাসির জন্য ঠিকভাবে কথা ই বলতে পারছে না। হাসিতে সবার ই পেট ফেটে যাবার উপক্রম।অবশেষে বললো,

“ভাইরে ভাই এত সম্মান তুই কি হজম করতে পারবি।দে পা দে আগে সালাম করে নেই।মুরুব্বি বলে কথা।”

“তিয়াস ভাই সাথে সাথে দু পা এগিয়ে দিয়ে বললো, ওকে দিলাম।”

“ওয়াক থু পায়ে সাবান লাগাস না কতদিন ঠিক নেই।যা ওয়াশরুম গিয়ে সাবান দিয়ে পরিষ্কার হয়ে আয়।”

“আপনি বাটপার আগেই জানতাম বিভোর ভাই।তিয়াস ভাই কলার ঝেড়ে বললেন,কোনো মহিলা টয়িলা না আমার এ বাসার নিচ তলায় গালে তিল দেওয়া একটা মেয়ে ঝাক্কাস পছন্দ হইছে।কাজিনদের কাছে রিকুয়েষ্ট আমার প্রেম টা করায় দাও প্লিজ।”

“রিয়া বললো, বাড়িওয়ালার মেয়ে।যাক এইবার কাজের কাজ করেছেন।”

“আসলেই ঢাকা শহরে একটা শ্বশুর বাড়ি থাকা প্রয়োজন।না হলে মেহু তোহা তোরা ফকিরের মতো এসে ঘুরিস এর বাসায় ওর বাসায়।এখন থেকে বলতে পারবি ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি।”

“তোহা আপু বললো,গাছে কাঠাল আর গোঁফে তেল।”

“মেহু আপু বললো,গাইস একটা কথা এত কিছুর চক্করে বিহান ভাই এর বউভক্তলোকের কাহিনী অজানা থেকে গেলো।সবার এটেনশন সেদিকে দেওয়া উচিত।”

“মেহু আপুকে চোখ রাঙিয়ে বললাম, আবার ওই চ্যাপ্টার তুলছো ক্যানো ঘোড়ারডিম।বিহান আমাকে কুচি কুচি করে কাটবে রুমে গিয়ে।”

“মেহু আপু বললো,নো নো দিয়া ওসবে কাজ হবে না।আমরা জানতে চাই।আচ্ছা বিহান ভাই আপনি কি আসলেই বউভক্তলোক।”

বিহানের চোখ মুখের দৃশ্য পাল্টে গেলো এক সেকেন্ডের মাঝে।আমার এখন গান চাইতে মন চাইছে সম্পর্ক বদলে গেলো একটি পলকে।না মানে বিহানের চোখের পলকের যা ভাব। তাতে আমার এটাই মনে হচ্ছে।বিহান যে ভাবে তাকিয়ে আছে রাগে ওর চোখ ছোট ছোট হয়ে গেলো।উনার ভয়ঙ্কর চাহনির মানে দিয়া একবার রুমে চলো তোমার আজ খবর আছে।

তোহা আপু লাফিয়ে উঠলো আর বললো,

“এটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার বিহান ভাই কিভাবে বউ ভক্ত হতে পারে।আমার কিছুতেই এটা বিশ্বাস হচ্ছে না।বিহান ভাই কিছু বলুন।মনে করেন এটা একটা ইন্টারভিউ আপনার।”

বিহান ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,”কি বলবো আমি।”

“আরে বলুন না কেমন বউভক্তলোক আপনি?দিয়ার কথায় ওঠা বসা করেন বুঝি।”

বিহান আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো,

“বউ ভালবাসার জিনিস ভালবাসি। ভক্ত টক্ত বুঝি না ওসব।”

বিহানের অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।এসব প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে চাইছে।বিহান কখনোই এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি নাহ।বা কাউকে বলেও না এসব ব্যপারে।

বিভোর ভাই বললেন,

“বিহান কিভাবে বউভক্ত হতে পারে।জীবনে ফেসবুকে দিয়ার ছবি দিয়েছে কখনো।”

“মন খারাপ করে বললাম,তাই দেখুন।আমাকে একটু ও পাত্তা দেয় না।আসলেই ভালবাসে না।”

বিহান ভ্রু উঁচিয়ে তাকালো আমার দিকে।জিভ দিয়ে নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে নিয়ে বললো,

“তো এতে প্রমানিত হলো আমি ভালবাসি না।”

“তাই ছাড়া কি।”

“আমি কি বিভোর এর মতো ননসেন্স নিজের বউ অন্যকে দেখাবো।অন্যরা দেখবে আর নজর দিবে।এত বোকা আমি না গাইস।”

“বিভোর ভাই বললেন,বিহান কিন্তু বাঁশটা আমাকেই দিয়ে দিলো।মেনে নিতে পারছি না আমি ভাই।”

আমরা কাজিনরা একজায়গা হলে আড্ডার কমতি থাকে না। সারাক্ষণ চলতেই থাকে এটা।বিহান আমাকে ইশারা দিলো রুমে যাওয়ার জন্য।এইরে আমাকে ডাকছে কেনো।রুমে গিয়ে কি বলবে আমাকে।আমি তো যাবো না যাবো না করছি।বিহানের জোরাজোরিতে গেলাম।রুমে যেতেই বিহান আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো।

“–আমি বললাম,কি কি হয়েছে।”

“–আমি বউভক্ত লোক।”

“–তো কি।”

“–তাই বলে ফোনে সেভ করবে।”

“এমনি করেছিলাম।”

“–তো ভয় পাচ্ছো কেনো?আমি তো সত্যি বউ পাগল।আমি কতটা বউ ভক্ত নাউ ইউ রিয়েলাইজ ইট।”

“–কি সমস্যা আপনার।কি করতে চাইছেন।বাইরে কিন্তু ভাইয়ারা আছে।”

“–বিহান আমার কাছে এগিয়ে এসে কোমর জড়িয়ে ধরে আমাকে এক ঝটকায় কাছে টেনে নিয়ে বললো,ওরা ওদিকে বিজি আছে, এখন কি হবে তোমার।”

“–একটা হাই ছেড়ে বললাম,কি আর হবে যা রোজ হয় তাই হবে।”

“–রোজ হয়?সন্দিহান ভাবে তাকিয়ে বললেন। আমি তো রোজ কিছু করি না।”

“–আপনি শুধু কথা ঘুরান কেনো বলুন তো।রোজ চোখ রাঙান বকা দেন।এইসব ই তো করেন।”

“–আমিও তো সেটাই বললাম।তার মানে তুমি ওইটা ভাবছো?..”

“–কি ওইটা ওইটা করছেন।এত অসভ্য হচ্ছেন দিন দিন।”

“–বয়স হচ্ছে তো তাই।বয়সের সাথে সাথে ভালবাসা বাড়ে বুঝেছো পিচ্চি বালিকা।”

সময় যাচ্ছে দিন এগোচ্ছে।এগোচ্ছে আমাদের পথ চলা।রোজা শেষের দিকে।ঈদের আগের দিন আমরা সবাই ছুটলাম নড়াইলে।আমার স্বপ্নের শহর নড়াইল।শহর ছেড়ে গ্রামে ঈদ করতে আসার মতো আনন্দ নেই।একদল ভালবাসার মানুষের সাথে ছুটলাম গ্রামে ঈদ করতে।শুধু ঈদ ই নয়।মেহু আপু আর ভাইয়ার বিয়ে ও ঠিক হয়েছে।ভাইয়া ইতালি চলে যাবে তার আগেই মেহু আপুকে বিয়ে করে রেখে যাবে।ভাইয়ার বিয়ে আর ঈদ আনন্দ দুইটায় এক সাথে কাটাবো।বিহান বাবাকে বলে ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করেছে।রিয়ার মতো বাড়াবাড়ি করেনি।কেননা একবার বাড়াবাড়ি করে দেখেছে ফলাফল বিপরিত ছাড়া কিছুই হবে না।ঢাকা থেকে বিয়ের শপিং করলাম।কয়েক ঘন্টা জার্নি করে নড়াইল পৌছালাম।বিভা আপু পুচকু দুলাভাই সবাই এসেছে।এত জার্নি শেষে ও কারো এনার্জি কমে নি।সন্ধ্যায় মেহেদী লাগানোর প্রতিযোগিতা চলছে।আমি ক্লান্ত মেহেদী লাগাতে ভালো লাগছে না।উঠানে চেয়ার নিয়ে বসে মেহেদী লাগাচ্ছে সবাই।আর আড্ডা দিচ্ছে।আমি মামির হাতে খাবার খেয়ে বিছানায় সুয়ে আছি।বিহান ব্রিজে গিয়েছে পরিচিত মানুষদের সাথে গল্প করে বেড়াচ্ছে।রাত এগারোটায় বাসায় এসছে বিহান।সবার মেহেদী লাগানো শেষ।যার যার জায়গা সুয়ে পড়েছে।রুমে এসে আমাকে ঘুমোতে দেখে আমাকে আর ডাকলো না।জার্নি করে সবাই ক্লান্ত তাই আর কাউকে না ডেকে নিজেই বাসার সামনের দোকানে গেলো।ঈদের আগের দিন পুরা শহরে লাইটিং হয়।সারারাত ই জেগে থাকে সবাই।বিহান মেহেদী একটা কিনে এনে ঘুমন্ত আমার দুই হাতে মেহেদী লাগিয়ে ৫ মিনিট পরে আবার মুছে দিলো।সাড়ে এগারোটার দিকে আমার ঘুম ভাংলো।মনে মনে ভাবছি একবারে বারোটায় বিছানা ছেড়ে উঠে বিহান কে ঈদ মোবারক জানাবো।বিহান মনে হচ্ছে কার রিপোর্ট দেখছে।এখানে এসেও ডাক্তারি করছে।মনে হয় আশে পাশের কেউ রিপোর্ট দিয়েছে। চোখ বুজে ঘুমের ভান ধরে পড়ে আছি।বিহান বারোটা বাজার দুই মিনিট আগে আমার পাশে এসে সুয়ে পড়লো।আমি পূর্বদিকে মুখ করে কাত হয়ে সুয়ে আছি।বিহান পশ্চিমপাশে এসে সুয়ে আমার পেটের উপর দিয়ে হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।উন্মুক্ত পেটে ওর হাতের স্পর্শ পেতেই শিউরে উঠলাম আমি।চোখ আরো জোরে খিচে বন্ধ করে রাখলাম।বারোটা বাজতে একমিনিট আগেই বিহান ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে চুমু দিলো।আমার শরীর অবস হয়ে বল শূন্য হয়ে আসছে।বারোটা বাজতেই বিহান আর একটু জড়সড় ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো,ঈদ মোবারক বউ।ইস এত প্লান করেও বলতে পারলাম না আগে।বিহানের দিকে এবার ঘুরে সুয়ে বিহান কে বললাম ঈদ মোবারক। বিহানের বুকে একটা চুমু দিয়ে বললাম,আই লাভ ইউ বিহান। বিহান আমাকে আরো একটু ক্লোজ ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো তোমাকে জড়িয়ে না ধরলে বুকের মাঝে কি যেনো খালি খালি লাগে।আর চুমু না দিলে আমি অসুস্থ হয়ে যায়।বিহান কে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললাম,চুমু না দিলে বুঝি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে।বিহান আমার গালে, চোখে,মুখে অজস্র চুমু দিতে দিতে বললো,ঘুম ঘুম কন্ঠে কথা বলে কি আমাকে শেষ করে দিতে চাও।আর একটা কথা বললে কিন্তু অনর্থ হয়ে যাবে।লজ্জায় মাথা নুইয়ে বিহানের বুকে মুখ গুজে রইলাম বুঝতে পারলাম ও কি বলতে চাইছে।আর এদিকে ওর পাগলামি বেড়েই চলেছে।এটা শুধু আজ নয় হাজার ক্লান্ত থাকলেও ও আমাকে ঘুমোনোর সময় কয়েক হাজার চুমু দিবেই।আমার ও অভ্যাস হয়ে গিয়েছে আমিও সহ্য করি ওর এই পাগলামি আর ভালবাসা।

চলবে,