#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন ২)
৭৭+৭৮
#WriterঃMousumi_Akter
Saari raat aahein bharta..
Pal pal yaadon me marta..
Maane na meri mann mera..
Thode thode hosh madhoshi si hai
Neend behoshi si hai.
Jaane kuch bhi na man mera..
Kabhi mera tha par ab begana hai ye
Deewana deewana samjhe na ho…
Kabhi chup chup rahe
Kabhi gaaya yeh kare
Bin poochhe teri taarife sunaya yeh kare
Hai koi Haqiqat tu ya koi fasana hai
Kuch jaane agar to itna ke
Yeh tera deewana hai re
Mann mera, maane na mann mera
Deewana deewana samjhe na ho…
–দূর দূরন্ত থেকে ভেষে আসছে গানটা কোথাও থেকে হয়তো।হয়তো কেউ বক্সে গান চালাচ্ছে।গানের সুর কেমন যেনো মন কেড়ে নিচ্ছে।গানের এই সুরটা কানে যেতেই মস্তিষ্ক নাড়া দিয়ে উঠলো।চোখে পাতা মেলে তাকালাম।আমার এক হাতে স্যালাইন চলছে, অন্য হাত ধরে বিহান আমার হাতের উপর কখন কাত হয়ে পড়েছে।মনে হচ্ছে সারারাত ঘুম হয়নি বিহানের।আমি হাত একটুও নাড়াচাড়া দিলাম না কারণ যদি ওর ঘুম ভেঙে যায়।দুইদিন হসপিটালে এডমিট আছি,প্রেসার বেড়ে যাওয়াতে অপারেশন করে নি।বিহানের মধ্যআঙুলে হঠাত তাকিয়ে অন্যরকম এক ভাললাগার অনুভূতি সৃষ্টি হলো মনে।ইংলিশ অক্ষরে বেশ মোটা করে কালো কালি দিয়ে Diya লেখা।ফর্সা আঙুলে কালো কালির লেখাটা বেশ সুন্দর লাগছে দেখতে।আমি বিহানের হাত ধরে খানিক টা এগিয়ে এনে চুমু দিলাম।এটা বোধহয় কাল রাতে করেছে বসে বসে।কেবিনের অন্য পাশের বেডে বিভোর ভাই আর বড় মামি ঘুমোচ্ছে।আম্মু আর মামি বোধ হয় দরজার বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বলছে।আমার ঠোঁটের স্পর্শ নিজের আঙুলে পেয়ে বিহান সাথে সাথে চোখ মেলে তাকালো।তাকিয়েই নির্মল হাসি দিলো আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।ঘুমহীন ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছি আমি।শার্টের দুইটা বোতাম খোলা ক্লান্ত চাহনি আমাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে।
বিহান আমার মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
“কষ্ট হচ্ছে? “কথাটার মাঝে কত কেয়ার।
আমার গালে বিহানের হাত চেপে ধরে বললাম,
“অনেক কষ্ট হচ্ছে।”
বিহান একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
“সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আছি না।কি জুনিয়র তোমার মাম্মা কে কষ্ট দিচ্ছো কেনো?তুমি হাত পা ছোড়াছুড়ি করলে মাম্মা কষ্ট পাচ্ছে তো বাবা।তুমি কি জানো তোমার মাম্মা ইজ দ্যা বেষ্ট মাম্মা।তোমার জন্য কত যুদ্ধ করছে দেখো।আমার থেকেও তোমাকে বেশী ভালবাসে।”
সহসায় চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো দু’ফোঁটা পানি।কাঁন্না চেপে বললাম,
“আমার তো আমার জন্য কষ্ট হচ্ছে না।কষ্ট হচ্ছে আপনার জন্য।নিজের সব থেকে প্রিয় মানুষ টা কে কেউ মৃত্যুপথযাত্রী দেখলে তার কতটা কষ্ট হয় আমি বুঝি।”
“তুমি আমাকে কত বোঝো দিয়া।আমার এই জীবনের সব থেকে বড় প্রাপ্তি তুমি।”
এরই মাঝে রিয়া, তিয়াস ভাইয়া খাবার নিয়ে এলো বাসা থেকে।সবাই খাবার খাচ্ছে।
–আর আমি সুয়ে সুয়ে ভাবছি আমি কত লাকি।চারদিক থেকে পরিপূর্ণ আমার জীবন।আমার পেটে আমার সন্তানের অস্তিত্ব আমি সম্পূর্ণ বুঝতে পারছি।ও বাইরে আসার জন্য ছটফট করছে, হাত পা ছোড়াছুড়ি করছে, ওর হাত পা ছোড়াছুড়িতে আমার পেইন ক্রমশ বাড়ছিলো।মাস পুরার আগেই লেবার পেইন শুরু হলো আমার।এমন টায় হওয়ার কথা ছিলো, ডাক্তার আগে থেকেই বলে রেখেছিলো সাত মাসের পরে যেকোনো সময়ে খারাপ কিছু হতে পারে।আমি শুধু প্রার্থনা করছি আমার সন্তান যেনো সুস্থ ভাবে পৃথিবীতে আসতে পারে।এত কষ্ট সহ্য করেও ওকে আমার ভেতরে ক্যারি করলাম আমার এই কষ্ট যেনো বিফলে না যায়।জানিনা আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে হয়তো আমার সন্তানের মুখ আমার দেখা হবে না,বিহানের হাতে হাত রেখে হয়তো পথ চলাও আর হবে না।আমি না থাকলে কি হবে বিহানের।যেখানে সবাইকে বুঝাচ্ছি আমার কোনো চিন্তা হচ্ছে না কিন্তু ভেতরে ভেতরে চিন্তায় দূর্বল হয়ে যাচ্ছি আমি।আমাকে ঘিরে আমার পরিবারের সবাই বসে আছে।চোখে কাঁন্না নিয়েও হাসার চেষ্টা করছে সবাই।সবাই আমাকে বলছে আমার কিছু হবে না সাহস রাখতে মনে।আমিও সবার কথায় মাথা নাড়িয়ে বললাম হুম।
আম্মুর থেকে আমার বাবা যেনো বেশী ভেঙে পড়েছেন।আমার ফ্যামিলির সবাই এখন হসপিটালে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে।বিভোর ভাই এর মা বাবা,বিভা আপু তাদের বেবি দুলাভাই।রিয়ার মা বাবা আয়রা,তোহা আপুর মা বাবা তিয়াস ভাইয়া, রুশা আপু,মেহু আপুর মা বাবা সবাই ই উপস্হিত।বিহান ভীষণ বিজি ডাক্তার দের নিয়ে মিটিং করেই যাচ্ছে।ওটি রেডি করা হয়ে গিয়েছে।আমাকে এখন ওটির দিকে নিয়ে যাওয়া হবে।আম্মু মামা-মামি দোয়া পড়ে আমার গায়ে ফু দিয়ে দিলেন।বিহান গম্ভীর ভাবে দাঁড়িয়ে আছে,ভেঙে পড়েছে পুরাপুরি।মামাকে বলছে,বাবা আমি কিভাবে দিয়ার সার্জারী করবো এত কঠিন কাজ আমি কিভাবে করবো।এই প্রথমবার ডাক্তার বিহান ভয় পাচ্ছে বাবা।মামা হেসে বললেন,ডোন্ট ওরি বেটা কিচ্ছু হবে না।আমরা আছি আমাদের দোয়া আছে সৃষ্টিকর্তা ভালো করবে বাবা।
স্ট্রেচারে করে আমাকে ওটির দিকে যখন নেওয়া হচ্ছে তখন ভীষণ কাঁন্না পাচ্ছিলো আমার।আমার আম্মু বাবা আর মামির হাত ধরে কেঁদে দিলাম।মামি আর আম্মুকে বললাম,আমার কিছু হলে আমার সন্তান কে তোমরা দেখো প্লিজ।আম্মু তখন খুব জোরে উচ্চস্বরে কেঁদে দিলো।কাঁদতে কাঁদতে বললো,আমার মেয়ের জন্য আমি চিন্তায় ঘুমোতে পারিনা আর আমার মেয়ে তার সন্তানের জন্য নিজের জীবনের কথা ভাবলো না।ফুপ্পি বললো,নারীরা এমন ই ভাবি।নিজের সন্তান ই তাদের কাছে সব প্রাণের থেকে প্রিয়।একসাথে দুই দুইটা সার্জারী হবে।সিজার অপর দিকে হার্ট সার্জারী।হার্ট সার্জারী বিহানের থেকে বেষ্ট কেউ পারে না যেখানে সব ডাক্তার দের ভরসা বিহানের উপর সেখানে বিহান ভেঙে পড়েছিলো। বিহান বলছিলো আমার স্ত্রীর শরীরে অস্ত্রোপচার আমি করতে পারবো না।আমার হাত কাঁপবে।ওর শরীরের র*ক্ত আমি দেখতে পারবো না।আসলেই এটা অনেকটায় অসম্ভব ব্যাপার ছিলো বিহানের পক্ষে।তখন বিহানের প্রফেসর বললো,তুমি না পারলে কেউ পারবেনা।তুমিই পারবে।ওটিতে তোমার স্ত্রী নয় একজন অনাগত সন্তানের মা যাকে তোমার বাঁচাতে হবে।একজন স্ত্রী যার স্বামী তাকে ছাড়া বাকিটা পথ চলতে পারবে না।এতগুলা মানুষের মুখে হাসি তোমাকে ফোটাতেই হবে।বি স্ট্রং ইয়াং ম্যান।ওটিতে আমাকে যখন রাখা হলো তখন কেউ ছিলো না রুমে।শুধুমাত্র বিহান ছিলো এপ্রোণ পরে দাঁড়িয়ে।বিহান ওটির জন্য প্রস্তুত ওর পোশাক দেখেই বোঝা যাচ্ছে।ওটিতে প্রবেশ করার পর আমার মাথা কেমন চক্কর দিচ্ছিলো।চিন্তায় মাথা পাগল হয়ে যাচ্ছিলো বিহানের ওই অসহায় মুখ আমি সহ্য করতে পারছিলাম না।বিহান আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
বিহান আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো
‘কি হয়েছে শ্যামাপাখি।’
‘আমার খুব ভয় করছে বিহান।’
‘কিসের ভয়।’
‘তোমাকে ছেড়ে যাবার ভয়।’
‘ভয় তো আমি পাচ্ছি পাগলি।আমি কিভাবে তোমার শরীরে।আগে যদি জানতাম এমন কঠিন দিন আসবে আমার জীবনে আমি কখনো ডাক্তারি পড়তাম না।আমি পারবো না দিয়া, কিছুতেই না।’
‘এভাবে পেশেন্ট এর সামনে কাঁদতে নেই ডাক্তার।তুমি না ডাক্তার।কিসের ভয় পাচ্ছো?আমাদের সন্তানের জন্য পারতেই হবে।’
‘তুমি বুঝছো না আমি কিসের ভয় পাচ্ছি।’
‘আমি সব বুঝছি,তুমি ভয় পাচ্ছো কেনো?যদি আমি মরেই যায় আমাদের যখন আবার জন্ম হবে আমরা তখন আবার এক হবো।যতবার জন্ম হবে তোমার আর আমার ই দেখা হবে বুঝেছো।তাই আমি হারাবো না।’
‘আমাকে কি বাচ্চা পেয়েছো।সিনেমার কয়েক লাইন বলে বোঝাচ্ছো।আমরা একটায় জনম পায় দিয়া,পরজন্ম বলে কিছু নেই।আমাকে তাই এসব বুঝ দিও না প্লিজ।এই জনমেই আমার তোমাকে চাই।’
‘ওকে তাহলে আরেক টা বিয়ে করে নিয়েন।’
‘এমন সিরিয়াস জায়গা এসে তুমি মজা করছো দিয়া।বুঝতে পারছো আমার মনের অবস্থা। ‘
‘আপনি না ভীষণ পাগল জানেন।মানুষ একসাথে কত গুলা বিয়ে করে প্রেম করে তাদের কি খারাপ লাগেনা।আপনি আমার সামান্য কিছু হলেই চিন্তা করেন।’
বিহান আমার হাত শক্তভাবে চেপে ধরে চুমু দিয়ে বললো,
‘আমি পরকাল এখনো দেখিনি,কতটা ভয়ানক হতে পারে সেটার অনুমান করতে পারি কিন্তু সেখানে কি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য সেটা জানিনা।আমি একটা জনম পেয়েছি আর আমি জানি এই জনম শেষ হলে একবার মৃত্যু হয়ে গেলে দ্বীতীয় কোনো জনম আর পাবো না।আমাদের জীবন ওয়ান টাইম অফারের মতো।একবার গেলে আর ফিরে আসবে না।যে কথা নাটকের পাতায় মানায় সেকথা জীবনের পাতায় মানায় না, যে এই জনমে না পেলে পরজনমে পাবো।মৃত্যুর পরে কেউ কি ফিরে এসে বলেছে সে পরজনম পেয়েছে।আমি পরকালে বিশ্বাসী কিন্তু পরজনমে বিশ্বাসী নই।তাই কাউকে ভালবাসলে এই জনমেই ভীষণ ভালবাসতে হবে।এই জনমেই কাছে রাখতে হবে,পরম মায়ায় আগলে।এই জনমের প্রতিটা সেকেন্ড এর মূল্যায়ন করতে হবে।যে সেকেন্ড টা সরে যাচ্ছে সেটা আমাদের জীবনের আয়ু থেকে কমে যাচ্ছে।জীবনের এই মূল্যবান সময় অহেতুক কারণে নষ্ট না করে নিজের একান্ত কাছের মানুষগুলোর জন্য ব্যয় করাটায় উত্তম। জীবন হোক মা -বাবা,স্ত্রী সন্তানের জন্য।এই জনমেই একটা মানুষকে ভীষণ ভালবেসে ভালবাসার পবিত্রতা রক্ষা করা উচিত।দিন শেষে ভীষণ মানসিক শান্তি মিলবে।মানুষ আমাকে নিয়ে কি ভাববে সেটা ফ্যাক্ট নয়,আমি যদি একাধিক মানুষের সাথে নিজের জীবন জড়িয়ে মানুষ কে ঠকায় এতে মানুষের নিন্দার থেকে আমার বিবেক আমাকে বেশী ধীক্কার জানাবে।আমার বিবেক আমার মানসিক শান্তি কেড়ে নিবে।গভীর রাতের নিস্তব্ধতা আমাকে বারবার মনে করাবে আমি কতটা নিকৃষ্ট কাজ করেছি,হাজার সুখ -শান্তি থাকা সত্ত্বেও মানসিক অশান্তি সব শান্তি কেড়ে নিবে।তাই ভালবাসা হোক পবিত্রতার,প্রেম হোক পবিত্রতার।বারবার বিভিন্ন মানুষের ভালবাসাটা কোনো গর্বের কথা নয়,একজনকে শতভাবে ভালবাসা টায় হলো ভালবাসা।তুমি কি জানো শ্যামাপাখি একটা মানুষের প্রেমে জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়াটায় স্বার্থক প্রেমের লক্ষণ।আমার এই জীবনে আমি স্বার্থক।’
বিহানের মুখের কথা গুলো যেনো পবিত্র ভালবাসার বার্তা।এমন মানুষ ছাড়া কিভাবে থাকবো আমি।বিহান কে বললাম,
‘আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবেন প্লিজ।’
বিহান আমার দিকে ঝুঁকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিলো।
আমি বিহানের বুকে মুখ গুজে বললাম,
‘আমি অনেক জালিয়েছি তোমায় বিহান।আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আমি তোমাকে ভীষণ ভালবাসি বিহান।আমি জীবন হোক আর মৃত্যু তোমায় ছাড়া থাকতে পারবো না।ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার।আই লাভ ইউ বিহান।’
‘বিহান আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,আমি সাকসেস হবো দিয়া।তোমার কিছুই হবে না।আজ আমি সাকসেস না হলে এটাই আমার শেষ সার্জারী হবে।’
বিহান কখন স্যালাইন এর মাঝে অজ্ঞান এর ইনজেকশন মিশিয়ে দিলো জানিনা।আর কিছুই মনে নেই আমার।ধীরে ধীরে বিহানের মুখটা ঘোলাটে হতে লাগলো।আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে গেলাম আমি।
–হঠাত মনে হলো আমি পাহাড় থেকে পড়ে যাচ্ছি।বিহানের থেকে আমার হাত ছুটে গিয়েছে।উঁচু পাহাড় থেকে পড়ে যেতেই চিৎকার দিয়ে উঠলাম বিহান বাঁচাও আমায়।ঠিক তখন ই ছুটে যাওয়া হাত খুজে পেলো আশ্রয়স্হল।আমি বিহান আমার হাত শক্তভাবে চেপে ধরে বললো দিয়া।
চোখ খুলে দেখলাম আইসিইউ এর মাঝে আমি।তখন বুঝলাম আমার জ্ঞান ফিরে এসছে।জ্ঞান ফেরার পর দেখলাম আমার হাত ধরে বসে কাঁদছে বিহান।দু’চোখ রক্ত জবার ন্যায় ফুলে আছে।আমার আঙুল যখন রেসপন্স করছিলো বিহান আমার কপালে চুমু দিয়ে বললো, দিয়া ঠিক আছো তুমি।বিহান বাচ্চাদের মতো আরো জোরে হুহু করে কেঁদে দিলো।আমার হাত জড়সড় ভাবে ধরে চুমু দিচ্ছিলো।বিহান কেমন পাগলামো করছে।আমি চোখ খুলেই বললাম,
“আমার কি সার্জারী হয়ে গিয়েছে?”
“থ্যাংক্স আল্লাহ তুমি আমার দিয়াকে সুস্থ করে দিয়েছো।”
যখন দেখলাম হাত পা নাড়াতে পারছি না তখন বুঝলাম আমার সাজারী শেষ হয়েছে।বিহান কে বললাম,
“আমার বেবি কোথায় বিহান।”
বিহান আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“তুমি ঠিক আছো দিয়া। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো জানো।আমি কত ভয় পেয়ে গেছিলাম।তুমি কোনো রেসপন্স করছিলে না।এত দেরি করলে কেনো রেসপন্স করতে।আমার মাথা কাজ করছিলো না।কতবার আল্লাহ কে ডেকেছি জানো।”
“আমাদের সন্তান ও ঠিক আছে বিহান।”
বিহান হেসে বললো,” ও ঠিক আছে পিচ্চি।”
বিহান মামিকে ডাকলো.
“আম্মু।ভেতরে এসো।”
মামির কোলে সাদা টাওয়ালে প্যাচানো র* ক্তের দলার মতো উড়ামুড়া করছে মাথাভর্তি চুল আমাদের সন্তানের।মেয়ে হয়েছে আমাদের।দেখেই হেসে দিলাম আমি।আমার কষ্টের প্রাপ্তি আমার সামনে ছিলো।মামি আমার পাশে সুইয়ে দিলো।আমি নড়তে পারছিলাম না।কাটা জায়গার ক্ষত কাঁচা ছিলো।মামি আর আম্মু দুজনে আমার মেয়েকে খাওয়ার জন্য হেল্প করছিলো।সব কষ্ট ওর মুখ দেখতেই বিলীন হয়ে গেলো।সুস্থ হওয়ার পর্যন্ত হসপিটালে ই থাকলাম।বিহান সারাক্ষণ মেয়ে আর আমি নিয়েই পড়ে থাকে।একবার আম্মু ঢাকায় আসে,আম্মু গেলে মামি আসে।মেয়ের বয়স দুই মাস নিয়ে ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা দিলাম।বিহান মেয়ে কোলে নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করে আর আমি পরীক্ষা দেওয়ার ফাঁকে এসে মেয়েকে খাইয়ে যায়।পাশ ও করলাম।রিয়া আর আমার ইনটার্ণশীপ ও শেষ হলো।দুজনেই বড় ডাক্তার হলাম।একই হসপিটালে এখন রিয়া আমি বিহান জব করি।বিহান মেয়ের নাম সকাল রাখলো।
–পড়ন্ত বিকাল গোধুলী লগ্ন।রিয়া আর বিভোর ভাই এর কোলে সকাল।ওরা সকাল কে উচুতে তুলছে আর নামাচ্ছে।আর সকাল খিলখিলিয়ে হাসছে।আমি আর বিহান বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছি আর ওদের দুষ্টুমি দেখছি।রিয়া দু’মাসের প্রেগন্যান্ট। রিয়া আর বিভোর ভাই এর কোল জুড়ে সন্তান আসবে ভেবেই ভাল লাগছে।রিয়া প্রমাণ করে দিলো ভালবাসার কাছে যোগ্যতা কোনো ব্যাপার নয়।দুজন মানুষের মনের মিল থাকলে টাকা পয়সা,যোগ্যতা, চেহারা কিছুই ম্যাটার করে না।বিহান নিজের কফি রেখে আমার কফি খাওয়া শুরু করলো।ভ্রু নাচিয়ে বললাম,কাহিনী কী?সে উত্তর দিলো এক সাথে খেলে ভালবাসা বাড়ে।
–এরই মাঝে কলিং বেল চাপছে কেউ।খুশি খালাকে বললাম দরজা খুলে দিতে।খুশি খালা কে নড়াইল থেকে নিয়ে এসছি।খালা দরজা খুলতেই আয়রা ছুটে এলো।দিয়াপু পুচকে কোথায়?
–আয়রা কে দেখে আমি ভীষণ অবাক হলাম।বিহান বললো,আয়রা তুমি?কার সাথে এলে।
–আব্বুর সাথে।
–কাকু এসছে?
—-হ্যাঁ
আমি আর বিহান দুজন দুজনের দিকে তাকালাম।
আয়রা ছুটে গিয়ে সকাল কে কোলে নিলো।
কাকু ভেতরে প্রবেশ করলো।বিহানের কাছে হাত জোর করে মাফ চাইলো।বিভোর ভাই কে বললো,বাবা বিভোর আমাকে মাফ করে দাও।আমি ভুল করেছিলাম।আসলে যোগ্যতা দিয়ে কিছুই হয়না।ভালো মানুষ ই আসল। মানুষের মন ই আসল।আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম।রিয়ার হাত ধরে ও কাঁদলো কাকু।
রিয়া আর বিভোর ভাই ভীষণ লজ্জিত হলো।
রিয়া কাঁদতে কাঁদতে বললো,সরি বাবা, আমাকে ক্ষমা করে দাও তুমি।কাকুর পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলো রিয়া আর বিভোর ভাই।কাকু ওদের বুকে টেনে নিলো।ঠিক এই দিনটার অপেক্ষা করছিলাম কতদিন।
চলবে,,