#এক_মুঠো_অনুভূতি💖
লেখিকা- তাহসীন নাওয়ার রীতি
পর্ব:০৫
ক্লাসে বসে আছে ওহি আর জাইমা। স্যারের দিকে দৃষ্টি রেখে ওহি ফিসফিস করে জাইমাকে বলে উঠে,
–দাদু বাড়ি থেকে দুদিন পর চলে আসবি বলে আজ সাতদিন পর ভার্সিটি আসলি। আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম আংকেল হয়তো তোর বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।
জাইমা মুচকি হেসে স্যারের দিকে তাকিয়েই,
–বিয়ে দিলে তো ভালোই হতো, পড়ালেখার দ্যা-ইন্ড হয়ে যেতো। কিন্ত বিয়ে দিচ্ছে না। অনেক দিন পর দাদুর কাছে গিয়েছি তো তাই দাদু আসতেই দিতে চাইছিলো না।
ওহি একনজর জাইমার দিকে তাকিয়ে আবার স্যারের কথায় মনোযোগ দেয়।
ক্লাস শেষে সবাই বের হতে নিবে তখন আফরা আর কয়েকজন মেয়ে তাদের ক্লাসে প্রবেশ করে,
–একটু বসো সবাই। তোমাদের সাথে কথা আছে।
আফরার কথা মতো সবাই যার যার সিটে বসে পড়ে।
–আগে নিজের পরিচয় দিয়ে নেই, যদিও জানি তোমরা কম বেশি সবাই আমাকে চেনো। আমার নাম আফরা। এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ার। আর ও হলো ইশা, আমার ফ্রেন্ড। যাই হোক, তোমারা জানোই ভার্সিটির সকল ফাংশনের দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাকে আর আশ্বিনকে। এবারও তোমাদের নবীন বরণের দায়িত্ব আমাদের দেওয়া হয়েছে। তো, নবীন বরণ নিয়েই কিছু কথা তোমাদের বলি।
ওহি এতোক্ষণ হা করে আফরার বলা কথাগুলো শুনছিলো। জাইমা একবার ওহির দিকে তাকিয়ে তার মুখ বন্ধ করে দিয়ে,
-মুখ বন্ধ রাখ, মশা ঢুকে যাবে।
–আপুটা এতো সুন্দর কেনো জাইমা? দেখ কি সুন্দর করে কথাগুলো বলছে।
–হুম। শুধু সুন্দর না, আফরা আপু অদ্ভুত সুন্দরী। ভার্সিটিতে আপুর মতো সুন্দর কেউ আছে কিনা আমার সন্দেহ আছে।
–আমারও তাই মনে হয়।
–জানিস, আফরা আপু আশ্বিন ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড? তারা সেই কিন্ডারগার্ডেন থেকে একসাথে পড়ছে। তাদের মাঝে বন্ধুত্বের বন্ডিং কিন্তু অনেক স্ট্রং।
জাইমার কথায় ওহি একবার তার দিকে তাকিয়ে আবার আফরার দিকে তাকায়।
–আমরা প্রতি বছর নবীন বরণের অনুষ্ঠান অনেক বড় করে আয়োজন করার চেষ্টা করি। কেননা, হাসান স্যার বলেন নবীনরা হলো আমাদের ভবিষ্যত। আজ আমরা যেই নবীনদের উৎসবমুখর পরিবেশে নিজেদের মাঝে আপন করে নিচ্ছি, ভবিষ্যতে তারাও আমাদের মতো করে তাদের নবীনদের জন্য এভাবে বড় আয়োজন করে বরণ করে নিবে। এর ফলে, সিনিয়র আর জুনিয়রদের মাঝে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হবে।
এক সপ্তাহ পর তোমাদের নবীন বরণ। তোমরা যদি কেউ নাচ গান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাম দিতে চাও তবে ক্লাস শেষে আমার সাথে যোগাযোগ করবে।
আফরা কথাগুলো বলে মুচকি হেসে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতেই ওহি এক ছুঁটে তার কাছে এসে,
–আফরা আপু!
আফরা ডাক শোনে পিছনে ফিরে,
–কিছু বলবে ওহি?
আফরার মুখে নিজের নাম শুনে ওহি অবাক হয়ে,
–আপনি আমার নাম জানেন?
–আশ্বিন আর রোদ্দুরের কাছে শুনেছি তোমার কথা। এছাড়াও তোমার সাথে সেদিন ভার্সিটির ছাদে দেখা হয়েছিলো। মনে আছে?
–ওহ! জি মনে পড়েছে। আপু আমি আর জাইমা মিলে গানে নাম দিতে চাই। সেদিন রাফিন ভাইয়া বলেছিলেন উনার কাছে নাম দেওয়ার জন্য। কিন্তু জাইমা এতোদিন ক্লাসে না আসায় আমি নাম দিতে পারিনি।
আফরা কিছুটা অবাক হয়ে,
–রাফিন তোমাকে বলেছে নাচ গানে নাম দেওয়ার কথা?
–জি আপু।
–ওহ! ঠিক আছে। তুমি ক্লাস শেষে অডিটোরিয়ামে চলে এসো। আর আমাকে তুমি করেই ডাকবে, আপনি করে বলতে হবে না।
–ঠিক আছে আপু।
আফরা মুচকি হেসে চলে যেতেই ওহি জাইমার কাছে চলে আসে।
ক্লাস শেষে ক্যান্টিন থেকে অডিটোরিয়ামের দিকেই যাচ্ছিল ওহি আর জাইমা। হুট করে রোহান আর মিতু তাদের পথ আগলে দাঁড়ায়।
–কি খবর চশমিশ? ভালোই তো, সেদিন আশ্বিন ভাইকে বলে আমাদের শাস্তির ব্যবস্থা করেছো। তোমার জন্যই এই এক সপ্তাহ আমার ক্লাস মিস দিতে হয়েছে।
মিতু ওহির সামনের এসে,
–তুমি ভেবো না। আশ্বিন ভাইয়াকে বলে তুমি আমাদের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছো। এর ফল তোমাকে পেতে হবে। কথাটা মনে রেখো।
মিতুর কথায় ওহি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে,
–জানতাম আপনারা এতো সহজে ভালো হবেন না। তবে এটা ভুল বলেছেন, আমি কাউকে বলে আপনাদের শাস্তির ব্যবস্থা করিনি। কারন, আপনাদের শিক্ষা দিতে আমার কাউকে প্রয়োজন নেই। আমি একাই যথেষ্ট আছি।
ওহির কথায় রোহান আর মিতু একসাথে হেসে উঠে,
–তুমি আমাদের ভয় দেখাচ্ছো চশমিশ?
–ভয় দেখাচ্ছি কি না, এটা তো সময় হলেই দেখা যাবে। আমাকে দূর্বল ভেবে ভুল করবেন না রোহান ভাইয়া।
–ঠিক আছে, দেখা যাবে। তুমি কি করতে পারো।
রোহান কথাটা বলে মিতুকে নিয়ে চলে যায়। জাইমা ওহির দিকে তাকিয়ে,
–এতোকিছু হয়ে যাওয়ার পরও আমাদের পিছু ছাড়ছে না কেনো তারা? অসহ্য!
–এর একটা ব্যবস্থা করা এখন জরুরী হয়ে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই তাদের বুঝিয়ে দিবো ওহি আসলে কি।
ওহি কথাটা বলে জাইমার সাথে অডিটোরিয়ামে চলে আসে।
আশ্বিন রোদ্দুর আর আফরা মিলে অনুষ্ঠানের সব জরুরী হিসাব পত্র দেখছিলো। ওহি আর জাইমা আফরার কাছে আসতেই আশ্বিন মাথা তুলে একবার ওহির দিকে তাকায়। আফরা তাদের দেখে মুচকি হেসে,
–এসেছো তোমরা? আমি তোমাদের নাম লিখে দিয়েছি। যেহেতু অনুষ্ঠানের আর বেশি সময় নেই তাই তোমাদের প্রতিদিন ক্লাস শেষে দু’ঘন্টা করে প্র্যাক্টিস করতে হবে।
আশ্বিন আফরার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে,
–নাম দিয়েছিস মানে? এই চশমা, তুমি কি সত্যিই নাচে নাম দিয়েছো নাকি?
ওহি আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে,
–নাহ, আমি আর জাইমা মিলে গানে নাম দিয়েছি।
–গান? গান পারো তুমি?
ওহি রেগে আশ্বিনকে কিছু বলতে যাবে তখন আফরা বলে উঠে,
–আশ্বিন, বিরক্ত করিস না তো মেয়েটাকে। ওহি শখ করে গানে নাম দিয়েছে, তোর এতে কি সমস্যা?
আফরার কথায় আশ্বিন কিছু না বলে ওহির দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দেয়।
এদিকে, রোদ্দুর জাইমার দিকে তাকিয়ে,
–কোন গান গাইবে তোমরা?
–এখনো সিলেক্ট করিনি ভাইয়া।
জাইমার কথায় রোদ্দুর মুচকি হাসে। আশ্বিন একবার ওহির দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে হিসাবের খাতাটা খুলে,
–রোদ্দুর তুইও না, আসলেই। এই পিচ্চি চশমা, “আমাদের দেশটা স্বপ্নপরি” ছাড়া আর কি গাইবে।
আশ্বিনের কথায় জাইমা সহ বাকিরা একসাথে হেসে উঠে। ওহি রেগে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,
–আপু দেখেছো তুমি, উনি আমাকে নিয়ে কিভাবে মজা করছে।
আফরা আলতো করে আশ্বিনকে ধাক্কা দিয়ে,
–থামবি তুই? ওর কথায় কিছু মনে করো না ওহি। আমাদের গান শেখানোর জন্য ম্যাডাম আছে। উনি তোমাদের গান সিলেক্ট করে দিবে। এসো পরিচয় করিয়ে দেই তোমাদের।
ওহি আশ্বিনের দিকে একটু রাগী ভাবে তাকিয়ে আফরার সাথে যেতে নিতেই পেছন থেকে কেউ একজন তাকে ডেকে উঠে। ওহি পিছনে ফিরে মুচকি হেসে,
–রাফিন ভাইয়া!
ওহি কথাটা বলেই রাফিনের দিকে চলে যায়।
এদিকে ওহির মুখে রাফিনের নাম শুনে আশ্বিন খাতা থেকে মুখ তুলে পিছনে ফিরে দেখে ওহি আর রাফিন একসাথে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে কথা বলছে। আশ্বিনের মতো রোদ্দুরও একবার সেদিকে তাকিয়ে,
–হ্যাঁ! কি দেখছি আমি? প্লিজ কেউ আমাকে বলো আমি ভুল দেখছি। মানে রাফিন ওহির সাথে কথা বলছে! তাও নিজ থেকে?
আফরা আর জাইমা রোদ্দুরের পাশে বসে। আফরা রোদ্দুরের কথায় সায় দিয়ে,
–ঠিকই দেখছিস তুই। বাই দ্য ওয়ে, রাফিন নাকি নিজ থেকেই ওহিকে বলেছিলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাম দেওয়ার জন্য।
আফরার কথায় রোদ্দুর চোখ বড় বড় করে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে আফরার দিকে ফিরে তাকায়। এদিকে, আশ্বিন এক ধ্যানে ওহি আর রাফিনের দিকেই তাকিয়ে আছে।
–যাক ভালোই। খুশি হলাম তুমি গানে নাম দিয়েছো শুনে।
–আমি আসলে দুঃখিত, সেদিন আপনাকে বলার পর এতোদিন দেখা করতে পারিনি।
–আরে ব্যাপার না। এখন তো প্রতিদিনই দেখা হচ্ছে।
–হুম। আচ্ছা ভাইয়া, আমি আপনার সাথে একটু পর কথা বলছি আসলে আমরা গান সিলেক্ট করবো।
–ওহ। ঠিক আছে। বাই।
ওহি রাফিনের থেকে বিদায় নিয়ে আশ্বিনদের সামনে আসতেই আফরা তাদের নিয়ে স্টেজের কাছে চলে যায়। আশ্বিন সেদিকে একবার তাকিয়ে আবার খাতায় নিজের কাজ করতে শুরু করে।
কিছুক্ষণ পর স্টেজ থেকে মন কেড়ে নেওয়ার মতো একটি গানের সুর শুনে আশ্বিন সামনে ফিরে দেখে ওহি আপনমনে গান গাইছে। ওহির গান শুনে আশ্বিন অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠে,
–পিচ্চি তো ভালোই গান গায়। হুহ, দেখে বোঝা যায় না তার গানের কণ্ঠ এতটা সুন্দর।
আশ্বিন নিজের অজান্তেই একমনে ওহির দিকে তাকিয়ে তাকে দেখে যাচ্ছে। এদিকে রোদ্দুর সেই কখন থেকে আশ্বিনের সাথে কথা বলছে। কিন্তু আশ্বিনের কোন প্রতিক্রিয়া না পেয়ে তার দিকে ফিরে দেখে আশ্বিন অবাক চোখে ওহির গান গাওয়া দেখে যাচ্ছে। রোদ্দুর কিছুক্ষণ ব্যাপারটা খেয়াল করে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে,
”আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি,
আর মুগ্ধ এ চোখে চেয়ে থেকেছি…”
রোদ্দুরের কথায় আশ্বিনের হুশ ফিরতেই সে রাগী ভাবে রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে,
–কি বলছিস তুই পাগলের মতো।
–বুঝি বন্ধু, বুঝি। আমার চোখ ফাঁকি দেওয়া কি এতোই সোজা নাকি? নিজের চোখে সব কিছুই দেখছি আমি।
–হুম, এই জন্যই এখনো হিসাবে কোথায় ভুল করেছিস এটা খুঁজে পাচ্ছিস না। বেশি কথা না বলে নিজের কাজে মনোযোগ’দে।
রোদ্দুর আশ্বিনের কথায় হাসতে হাসতে খাতার দিকে ফিরে কাজ শুরু করে। আশ্বিন রোদ্দুরের থেকে চোখ সরিয়ে আড়চোখে একবার ওহির দিকে তাকিয়ে নিজের খাতায় লিখতে শুরু করে।
–চলবে(ইনশাআল্লাহ)
((আসসালামু আলাইকুম। ভুল ত্রুটি ক্ষমা চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ))