#এক_মুঠো_বুনোপ্রেম
পর্ব ৭
#জান্নাতুল_মাওয়া_লিজা
( সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ও পূর্ণ মনস্কদের জন্য)
আরাধ্যার সব থেকে প্রিয় বান্ধবী আর্শি, আর আর্শির আরাধ্যা। অনেক ছোটো থেকেই দুজনের মেলামেশা। আরাধ্যার কিছু হলে, না বললেও আর্শি বহু কিছুই বুঝে যায়। আর্শি বুঝলো যে, বান্ধবী তার মর্মে মর্মে পুড়ে মরছে। তবে তার এ দহন পোড়ন দুনিয়ার আগুনে নয় বরং মনের আগুনে। আরাধ্যার মনে প্রেমের আগুন লেগেছে! তবে এ আগুন ফাগুন হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই বরং এ আগুন আগ্নেয়গিরি হয়ে পুড়িয়ে মারছে তার বান্ধবীকে। পূর্ণ বন্ধু হিসেবে আরাধ্যাকে খাপে খাপ দিলেও, আরাধ্যা যখন পূর্ণর প্রতি দুর্বল হয়ে গেছে, তখন সেটা বুঝতে পেরে, ছেলেটা একদম দূরে সরে গেছে।
আর্শি কিছু না শুনেও এটুকু আঁচ করে নিতে পারলো, কিন্তু সে যে এটা বুঝতে পেরেছে, এ ব্যাপারটা সবার কাছে চেপে গেলো সে।
আর্শি মনে মনে ভাবলো ওদের দুজনকে কাছাকাছি ঠেলার জন্য কিছু একটা করা উচিত। কোনো একটা প্ল্যান বের করা উচিত। রাতে ফোনে অগ্র ও নিহুর সাথে এ বিষয়ে ভিড়িও কলে আলাপ আলোচনা করবে বলে সে ঠিক করলো।
সব ক্লাশ ও ল্যাব শেষ করে আর্শির ফ্রেন্ড সার্কেল বসেছে ধানমন্ডি সাতাশ এর লেক সার্কেলে। মেঘলা আবহাওয়া, জোরে বাতাস বইছে, হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি ও ঝড় শুরু হতে পারে। এরকম আবহাওয়ায় বরাবরই ওরা ধানমন্ডি লেকের চত্ত্বরে বসে ক্ষানিক সময় লেকের বাতাস খায়। সদলবলে একটা চত্ত্বরে লেকের পানিতে পা ডুবিয়ে বসলো সবাই। আর্শি, আরাধ্যা, পূর্ণ, নিহু ও অগ্র। দশ কি পনেরো মিনিট এখানে থাকা হবে। তারপর বৃষ্টি নামলেই সোজা বাড়ি। আর আর্শির লেজের মতো এষ তো সেখানে রয়েছেই। আর্শিকে এষ যেনো চোখেও হারাতে দেবে না।
এষের উপস্থিতি ওর অন্য বন্ধুদের আড্ডায় বিরক্তি আনতে পারে ভেবে এষ বসেছে ওদের ঠিক বিপরীতে মানে রাস্তার বিপরীতে একটা রেস্টুরেন্টে। গত ছয় মাস যাবত এষকে এভাবে দেখে দেখে সবাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
সবাই বসতে না বসতেই নিহুর ফোনে নেহালের কল এলো । নিহু কল কেটে দিয়ে ” শীট! ব্লাডি রাসকেল” উচ্চারন করলো।
বিরক্ত হয়ে হোয়াটস অ্যাপে ম্যাসেস চেক করতে করতে বললো,
“সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম আর ইডিয়ট টা সকাল ছয়টা থেকে এ পর্যন্ত একশ সাতষট্টি টা ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছে হোয়াটস অ্যাপে! আর কল তো আছেই। জানে আমি ক্লাশে, তার পরো!”
আর্শি নিহুর চোখে তাকিয়ে তাকে বললো,
” ভালোই তো! কত কেয়ার করে তোর! নিজেও তো ব্যস্ত, তার পরো? একবার রিসিভ করেই দেখ না! ”
নিহু সরাসরিই বলে দিলো,
” আই ডোন্ট ওয়ান্ট দিজ টাইপ অব কেয়ার এনিমোর। আই রিয়েলি ওয়ান্ট ব্রেক আপ! ওর মতো অসহ্য একটাকে আমি আর চালিয়ে নিতে পারছি না! এত বেশি বেশি কেয়ারের আধিক্য আমার ভালো লাগে নাহ!”
অগ্র টিপ্পনী কেটে বললো,
” বল ডিভোর্স দিবি! কিসের ব্রেক আপ টেক আপ?”
নিহু চেতে গিয়ে বললো,
“শা*লা আমার নামে রিউমার ছড়িয়েছে! আর তোরাও… বুঝিস না! আমার কি ঐ ঐরাবতের সাথে বিয়ে হয়েছে যে, ডিভোর্স দিতে হবে!”
ঐরাবত নামটা শুনে সবাই হেসে গড়িয়ে গেলো।
আরাধ্যা তখনো চুপ! সে মাটির দিকে মুখ করে রয়েছে।
অগ্র বলতে লাগলো,
” চারদিকে সবাই স্যাটেল হচ্ছে না হয় ব্রেক আপ করছে, আমার এমন একজন জীবনেও আসবে না, যার সাথে আমি ইচ্ছে হলেই ব্রেক আপ করতে পারবো আর ইচ্ছে হলেই আবার স্যাটেল! ”
পূর্ণ বলে উঠলো,
” এত প্রেম বিয়ে করে স্যাটেল হয়ে বংশ বাড়িয়ে কি লাভ? নিজেই একটা বান্দর! আর বান্দর জন্ম দিয়ে কি হবে? তার চেয়ে দেখ আমি কত ভালো আছি, চিরকুমার সংঘের সদস্য হয়ে, সারা জীবন ভার্জিনিটি ধরে রাখা এটাও অনেই বড় কিছু”
পূর্ণ কথাটা মূলত আরাধ্যা কেই শুনিয়ে বললো, আরাধ্যাও বুঝতে পেরে মুখ আরো মলিন করলো।
আর্শি খিলখিলিয়ে উঠে পূর্ন কে বললো,
” সেলিবেসি সমাজ কায়েম করেই বা কি হবে? মরে গেলে কেউ একজন তো থাকা উচিত, শোক করার জন্য?”
বলেই অগ্রকে আবার বলে উঠলো,
” চল অগ্র তোর একটা রিলেশন করিয়ে দেই, অতি সুন্দরী একটা হট মেয়ে আছে আমার কাছে!”
অগ্র নিজের বুকে হাত দিয়ে অতি আবেগ নিয়ে বললো,
” আর্শি রে! আমার সাথে কোনো ভাওতাবাজী নয়, আমাকে আবার ট্রাপে ফেলবি না তো তুই! আমি একটা পিওর রিলেশনশিপ চাই!”
আর্শি অগ্রের হাত ছুঁয়ে বললো,
” আই প্রমিস, কোনো ট্রাপ নয়! আমারই কাজিন, এষের ছোটোবোন নাম কায়া!”
অগ্র হেসে হেসে বললো,
” ও কায়া, কায়া, তুই বাড়াইস না আমার মায়া!…. তবে এষ মানবে?”
শেষ বাক্যটা বেশ ভয়ে বললো অগ্র।
আর্শি বললো,
” এষ না মানলে ওর সাথে ব্রেক আপ! আর এই মেয়ে দারুন লক্ষী একটা মেয়ে, টুয়েলভ স্ট্যান্ডার্ড এ পড়ে, সেন্স অব হিউমার ও দারুন! এমন সব কথা বলে যে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দিবি!”
বলেই কায়ার একটা পিক তার ফোন খুলে দেখালো।
কায়ার ছবি দেখে অগ্র টাসকি খেলো।
” শি ইজ সো এলিগেন্ট, সো গর্জিয়াস, সো বিউটিফুল, যাস্ট লুকিং লাইক আ ওয়াও!”
বলে গাল ফুলালো অগ্র।
” তুই আগে আমাকে এর সন্ধান দিলি না কেনো ইভিল! ”
আর্শি হেসে বললো,
” আগে দিলেই বা তুই কি করতি? ”
অগ্র লাফাতে লাফাতে বললো,
” ব্যাঙ্গের মতো লাফাতে লাফাতে আম্রিকা চলে যাইতাম ওর কাছে!”
সবাই একযোগে হেসে উঠলো ওর কথা শুনে।
.
.
নতুন প্রেমে থাকে নতুন উদ্দিপনা, নতুন উন্মত্ততা!
আর্শির তেমনি হচ্ছে, রাতে সব মেডিসিন গুলো এমনকি ঘুমের ঔষধ( ডক্টর বসাকের পরামর্শ অনুযায়ী) খেয়ে ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়েও শুধু এষের নগ্ন বুকটা ওর চোখে ভেসে আসছে। অনেকটা সময় চোখ বন্ধ করে শুয়েও ঘুম এলোনা ওর।
ভাবতে লাগলো, যার বুকে লোম যত বেশি তার নাকি তত মায়া মমতা! এষের ফর্সা ধবধবে বুকে কালো পশমে ভর্তি, সেজন্যই ওর বুকে এতো ভালোবাসা! আর তার জিম করা পেটানো পেশিবহুল দেহ! ইশ! কি আকর্ষণীয়, কি আকর্ষনীয়!
চোখ বন্ধ করে এসব ভাবতে ভাবতেই সেখানে কারো উপস্থিতি সে বুঝতে পারলো।
আর্শি চোখ খুলতেই দেখে এষ! আর্শি বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে উঠে বসে চেঁচিয়ে বললো,
” হোয়াট দ্যা হেল! আরেহ! আরে! তুই এখানে?”
এষ কথাটাকে গ্রাহ্য না করে বিশাল ফেনা তুলে দাঁত ব্রাশ করতে লাগলো। তখনো পরনে একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর সারা গা উদাম।
আর্শি এভাবে নিজের রুমে এষকে দেখে রীতিমতো টাস্কি খাওয়ার উপক্রম। এষ ওয়াশরুমে চলে গেলো ব্রাশের ফেনা ফেলার জন্য।
আর্শি ওর পেছন পেছন ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো। আর বলতে লাগলো,
” আমি জানি যে, তুই একটা হোস্টেলে থাকিস, আবার মাঝে মাঝে বিভিন্ন ফোর স্টার হোটেলেও থাকিস! ”
বেসিনের সামনে এষ তখন ব্রাশের থুথু ফেলছিলো।
এষ আর্শির মাথাটা এক আঙ্গুল দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো,
” সর! সর! আমার থুথু তোর গায়ে ছিঁটে যাবে। দাঁত ব্রাশ করেছিস তুই?”
আর্শি এষের কথার জবাব না দিয়ে বললো,
” আমি জানি, রাতে আমাকে লেকচার গুলো বুঝিয়ে দিয়ে তুই এখান থেকে মানে আমাদের বাসা থেকে চলে গেছিস, আর তুই এখানে হাফপ্যান্ট পড়ে দাঁতব্রাশ করছিস, মানে কি?”
এষ আর্শিকে হাতের ঈশারায় থামিয়ে আগে কয়েকটা কুলি করে নিলো, তারপর মুখ টাওয়েল দিয়ে মুছতে মুছতে বললো,
” আমি এখানেই থাকি, কোনো হোটেল টোটেলে নয়! প্রতি রাতেই…”
আর্শি চোখ কপালে তুলে বললো,
” মানে?”
” মানে, তুই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আমি রাতে তোর ব্যালকনিতে চুপি চুপি আসি, তারপর ঘুমাই, এখানে থাই গ্লাস ট্রান্সপারেন্ট, ওই গ্লাসের মধ্যে দিয়ে আমি সারা রাত তোকে দেখি!”
” আর ইউ ক্রেজি এষ! সারা রাত আমাকে দেখিস, তুই? আনবিলিভ এবল, কবে থেকে?”
” সেই ছয় মাস আগে থেকেই?”
” সারা রাত আমার রুমের পাশেই থাকিস আর তুই আমাকে কিছু করিস টরিস নি তো আবার?”
” হুম! করেছি তো, করবো না ক্যান? ঐ যে তোরে একদিন…!
” আমারে একদিন কি? কি করছিস?”
আর্শি তার গলা উঁচালো।
তুই একদিন পাতলা একটা নাইটি পড়ে শুইছিলি না, সেদিন তোরে… ”
শুধু এটুকু বলতেই এষের পিঠে আর্শি বেদম দেওয়া শুরু করলো।
মারের চোটে এষ বেঁকে গেলো।
” মরলাম রে! আর মারিস না রে! আমাকে মারলে তোর বাচ্চার বাপও মরে যাবে! ”
” বাচ্চার বাপ মানে?”
” মানে আমি তোর বাচ্চার বাপ! ঐদিন তুই ঘুমিয়েছিলি আর আমি তোকে প্রেগু করে দিয়েছি…”
বলেই এষ আর্শির মার থেকে বাঁচতে দিলো এক দৌড়। আর্শিও এষের পিছুপিছু এক দৌড়। এষ দৌড়ে গিয়ে পড়লো এক বিনব্যাগের উপর। আর্শিও ওকে অনুসরন করে গিয়ে পড়লো সেই একই ব্যাগের উপর। নিজের শরীরের উপর আর্শি পড়ে গিয়েছে দেখে এষ আর নিজেকে আটকাতে পারলো না। আর্শিকে বুকের সাথে আগলে ধরে চুম্বনে ভরিয়ে দিলো তার প্রিয়তমার সমগ্র মুখমন্ডল।
(চলবে)