#একঝাঁক_জোনাকি
#ইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ১৪
মনে হয় মচকে গেছে।এত অসাবধান হলে হয়?ইশ কি লাল হয়ে গেছে!দেখেই মনে হচ্ছে অনেক ব্যাথা হচ্ছে নিশ্চয়ই! আমাকে ফোন দিয়ে জানাবেন না?তাহলেই তো আমি এসে নিয়ে যাই!এত বোকা কেন আপনি?সবসময় নিজের সমস্যা নিজেই সলভ করতে চান!”
নিহানের বলা কথা শুনে অনিমা মাথা নিচু করে বসে রইল।আসলেই তো?নিহানকে ফোন দিলেই তো পারতো।ইশ!কেন মাথায় আসলো না?
অনিমা বসা থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু এবারও ব্যর্থ। ভেবেছিল ব্যথা হয়তোবা একটু কমেছে।নিহান বিরক্ত হয়ে অনিমাকে বলল ছাতাটা ধরতে।অনিমা ছাতাটা হাতে নিতেই নিহান একটা কান্ড করে বসল।অনিমাকে কোলে তুলে নিল নিহান।অনিমা অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে।চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেছে।মনে হচ্ছে এক্ষুনি চক্ষুকোটর থেকে চোখ দুটো বেরিয়ে আসবে।নিহান বুঝতে পারলো অনিমার রিয়েকশন।কিন্তু এখন তার কিছুই করার নেই।অনিমা এমন একটা সিচুয়েশনে ফেলে দিয়েছে কোলে তাকে নিতেই হতো।হাঁটতে হাঁটতেই নিহান বলল,
“ছাতাটা ভালো করে ধরুন মিস অনিমা।প্রায় অর্ধেক ভিজে গেছি।জ্বর উঠলে কি আপনি সেবা করবেন আমার?অবশ্য আমার এতে অসুবিধা নেই।”
নিহানের কথায় অনিমার হুস আসলো।ছাতাটা দুজনের মাথায় ভালো করে ধরল।নিহানকে পিছনের দিকে যেতে দেখে অনিমা বলল,
“কোথায় যাচ্ছেন?বাসা তো সামনের দিকে।”
“বাসায় নিয়ে গেলে আপনার পা নিশ্চয়ই ঠিক হবে না!”
“মানে?”
“হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।চেক করে দেখা লাগবে হাড় ভেংগেছে কিংবা কোন ক্ষতি হয়েছে কিনা!”
অনিমা অবাক হয়ে বলল,
“সামান্য পা মচকানোর জন্য আপনি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন?চেকাপ করাবেন?”
“অবশ্যই!আমি কোন রিস্ক নিতে চাচ্ছি না।”
“কিন্তু…”
অনিমা কথাটা শেষ করতে পারলো না।আশেপাশে তাকাতেই দেখলো সবাই তাকিয়ে আছে।কেও কেও হাসছে।অনিমার কথা বন্ধ হয়ে গেল।অনিমাকে চুপ হতে দেখে নিহানের ভ্রু কুচকে এলো।হঠাত কথা বন্ধ হবার কোন কারনই খোঁজে পেলো না।একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে ভেবে নিহানও কোন কথা বাড়ালো না।
.
.
অনিমার সব চেকাপ শেষে ডাক্তার বললেন,
“পায়ে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।মেডিসিন দিচ্ছি ব্যাথাটা কমার জন্য। আর দুই তিনদিনের মধ্যে পা এমনেও ভালো হয়ে যাবে।হাঁটতে পারবে আগের মধ্যে। টেনশম করিস না।বাই দা ওয়ে,একটা কুয়েশ্চন আস্ক করি?”
“হুম?”
“উনি কি আমাদের ভাবি?”
নিহান একবার অনিমার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়্র বলল,
“হয়নি!কয়দিন পর হবে।”
“দাওয়াত দিস কিন্তু…”
“অবশ্যই! যেতে পারি?”
“হুম।”
অনিমাকে সিটে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে পরল।
“আপনাকে বলেছিলাম তেমন কিছুই হয়নি।সামান্য এই বিষয় নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবার দরকার নেই।শুনলেন না আমার কথা!”
নিহান গাড়ি চালাতে চালাতে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“সিউর হয়ে নিলাম।এতে তো কোন অসুবিধা নেই তাই না?”
অনিমা কোন উত্তর দিলো না।সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো।এই লোককে যতোই কথা বলুক না কেন এন্সার দিবেই।সবসময় যেন রেডি থাকে উনার কাছে।তাই শুধু শুধু কথা বলে এনার্জি লস করার কোন ইচ্ছা নাই অনিমার।
বাসার কাছে আসতেই নিহান আবার অনিমাকে কোলে তুলে নিলো।সিড়ি বেয়ে উঠছিলো হঠাত দেখা হলো ভাড়িওয়ালা আন্টির সাথে।
“কি হয়েছে ওর?”
“আর বলবেন না পা মচকে ফেলেছে।”
“বলো কি?”
“দুইদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে।আসি? ”
অনিমার লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল।কেন যে খেয়াল করে হাঁটলো না। তাহলেই তো এভাবে পা মচকে নিহানের কোলে উঠে যাওয়া লাগতো না!
“হ্যা অবশ্যই।”
নিহান যেতেই ভাড়িওয়ালী মনে মনে বলল,
“আহা!কি মহাব্বত!”
এর মধ্যেই রফিক সাহেব এসে বললেন,
“কি হলো?এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?কখন থেকে নিচে দাঁড়িয়ে আছি!”
“নতুন ভাড়াটিয়াদের চিনো?কয়েকদিন আগে যে নতুম দম্পতি উঠলো?”
“হ্যা।কিছুক্ষন আগেই তো দেখলাম।কেন বলতো?”
“অই ছেলের বউয়ের পা মচকে গেছে।”
“তো?”
“সেজন্য বউকে কোলে নিয়ে ৫ তলা বেয়ে উঠতাছে।যাতে বউয়ের কোন কষ্ট না হয়!আর তুমি?বুড়া হয়ে গেলাম একদিনও কোলে নাও নাই!”
বউয়ের কথা শুনে রফিক মিয়া হাসতে লাগলেন।
“হাসছো কেন?হাসির কি বলছি আমি?”
হাসতে হাসতে বললেন,
“অই মেয়ের সাথে নিজের তুলনা করতাছো?তোমারে কোলে নিলে তো আমি কবেই কোমড় ভেংগে বিছানায় পরে থাকতাম।অই মেয়ে তোমার মতো এত মোটা?”
“কিহ?আমি মোটা?অই মেয়ে খুব সুন্দর।মেয়ের বডি ফিগারও দেখে ফেলছো?”
“আরে কথা কই থেকে কই নিয়ে যাচ্ছো?আমি কখন বললাম ওর বডি ফিগার দেখছি আমি?আমি তো চোখের দেখাতে বললাম অই মেয়ে তোমার মতো মোটা না!আচ্ছা বাদ দাও!চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
“তোর যাওয়া তুই যা!পারলে চিকন মেয়ে নিয়ে যা!”
বলেই সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।স্ত্রীর যাবার দিকে রফিক সাহেব হা করে তাকিয়ে রইলেন।কি থেকে কি হলো সব মাথার উপর দিয়ে গেছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিচের টং দোকানে গিয়ে বসলেন।এখন বাসায় গেলে মাইর একটা মাটিতে পরবে না!
.
.
মাহির টিফিন বক্সটা খুলে ভ্রু কুচকে অনিমাকে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি আপেলের খোসা ছিলে খান কেন?”
“আপেলের খোসা ভালো লাগে না।”
“কিন্তু খোসায় তো….”
“অনেক ভিটামিন তাই তো?কিন্তু আমার কেন জানি খেলে ঘাস চাবাচ্ছি বলে মনে হয় তাই খাই না।”
মাহির একটা আপেলের টুকরা মুখে নিয়ে কামড় দিতেই হেসে বলল,
“বাহ!খোসা ছাড়া তো আপেল খেতে ভালোই লাগে!”
অনিমাও হেসে বলল,
“হুম!এইজন্যই খাই।একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”
মাহির মুখে থাকা আপেল চিবুতে চিবুতে বলল,
“হুম! ”
“তোমার মা এমন কেন?মানে তোমাকে কয়েকটা ছেলে মারলো। কিন্তু আন্টি কিছুই বললেন না!…”
“আম্মু চায়না আমি কোন ঝামেলায় জড়াই।”
“অহ আচ্ছা।”
“হুম!আসলে আমার আব্বু একটা বেসরকারি চাকরি করেন।সেজন্য কয়েক মাস পরপরই আব্বুর ট্রান্সফার হওয়া লাগে।যার কারনে এই পর্যন্ত অনেক শহরই আমার ঘুরা হয়ে গেছে।এই শহরেও বেশি দিন থাকতে পারব না সেটা জানি।আর এই অল্প সময়ের মধ্যে কারোর সাথে ঝামেলা করে তো লাভ নেই। তাই আম্মু আমাকে দুরে রাখতে চান।”
“হুম!বুঝতে পেরেছি।”
.
.
নিহান বাসায় ঢুকে অনিমাকে খাটে বসালো।সকালেই খাট দিয়ে গেছে।সামনে থাকা চেয়ারে বসল একটু রেস্ট নেওয়ার জন্য।
“আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”
“হুম করুন।”
“আপনি অফিসে যে ফলের টিফিন বক্সটা রেখে গিয়েছিলেন সেখানে আপেল ছিলো।”
“হ্যা!তো?আপনি আপেল পছন্দ করেন না?”
“হ্যা করি।তবে আপেলগুলার খোসা ছিলানো ছিল।আপনি জানলেন কি করে আমি আপেলের খোসা ছিলে আপেল খাই?”
অনিমার কথা শুনে নিহানের শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম।এখন অনিমাকে কি বলবে সে?
“কি হলো কিছু বলছেন না যে?”
“আব ইয়ে মানে…কে যেন ফোন করেছে।আমি একটু রিসিভ করে আসি।”
বলেই চেয়ার থেকে উঠে বাইরে বেরিয়ে গেলো।
“কিন্তু আমি তো কোন মোবাইলের আওয়াজ শুনি নি!”
ততক্ষনে নিহান ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে।১০ মিনিট পর নিহান ফিরে আসল হাতে খাবার নিয়ে।যেহেতু এখন অনিমা রান্না করতে পারবে না।পায়ের জন্য। খাবারটা সাইডে রাখতে অনিমা বলল,
“আপনি কিন্তু আমাকে কোন এন্সার দেন নি।”
“কোনটার?”
“আপেলের!”
“আসলে আপেলগুলার গায়ে অনেক দাগ ছিল।তাই ছিলে দিয়েছি।”
“অহ আচ্ছা।”
“হুম!খাবার কি এখন খাবেন?”
“নাহ! একটু পরে খাব।”
“আপনাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চাচ্ছি।”
‘একটু আগেই তো গেলাম!”
“এই ডাক্তার না।আপনার আল্ট্রসনোগ্রাফি করার দরকার।বেবির কি অবস্তা সেটা জানাটাও দরকার।তাই।”
“আচ্ছা।কবে যাবেন?”
“আপনার পা টা ঠিক হলেই….”
“ঠিক আছে।”
.
.
২ দিন পর,
আল্ট্রাসনোগ্রাফি শেষে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে হাঁটছিলো।নিহান খুশি বাচ্চা ঠিক আছে শুনে।ঠিকভাবে বেড়ে উঠছে।কোন অসুবিধা হচ্ছে না শুনে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।কিছুদুর খুশি মনে হাঁটতে হঠাত সামনে তাকাতেই দেখল…..
চলবে….