এক‌দিন বিকা‌লে সকাল হ‌য়ে‌ছি‌লো পর্ব-৪৬

0
568

#এক‌দিন_বিকা‌লে_সকাল_হ‌য়ে‌ছি‌লো
লে‌খিকা: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব:৪৬

আমি তোমা‌কে ভা‌লোবা‌সি রো‌মিসা। খুব ভা‌লোবা‌সি ছো‌টো পা‌খি। তু‌মি আমায় আমার ম‌তো ক‌রে ভা‌লোবা‌সো তো ছো‌টো পা‌খি? হয়‌তো এখন ভা‌লোবা‌সো কিন্তু স‌ত্যিটা জানার পরও কী ভালোবাস‌বে আমায়? না‌কি ঘৃণা কর‌বে? রো‌মিসা তোমার ভাই‌য়ের প্র‌তি, তোমার প‌রিবা‌রের প্র‌তি ক্ষোপ আমার এক‌দি‌নে জন্ম হয়নি। অনেক অনেক টাকার মা‌লিক হওয়ার স্বপ্নও আমি এক‌দিন দে‌খি‌নি। তোমার প‌রিবার দেখ‌তে বাধ্য ক‌রি‌য়ে‌ছে। আজ হয়‌তো আমি রাযীন কিংবা ওর বে‌বি‌কে মার‌তে চাইতাম না। শশী ভা‌বিও হয়‌তো জে‌লে থাকত না। আমা‌দের সবার কা‌হিনী অন্যরকম হ‌তো। সব‌কিছু সুন্দর পরিপা‌টি থাকত। হয়‌তো তু‌মি ঘৃণা কর‌বে, সে ভয়টা আমি পেতাম না। রো‌মিসা তার জন্য তোমার প‌রিবারই দায়ী!

জা‌নো রো‌মিসা, ‌ছে‌া‌টোবেলা থে‌কে সবসময় দে‌খে আস‌ছি, রাযীন সবসময় বেস্ট জি‌নিসটা পে‌য়ে‌ছে। হোক সেটা খেলনা, কাপড় কিংবা বাইক। আত্মীয়-স্বজ‌নের ম‌ধ্যেও সবসময় রাযীন রাযীন শু‌নে আস‌ছি। আমি দেখ‌তে এত সুন্দর হওয়া স‌ত্ত্বেও সবাই সব জায়গায় রাযীন‌কে প্রধান্য দিত! তার প্রধান কারণ ছি‌লো, তোমা‌দের বাবার কো‌টি কো‌টি টাকা। তেলা মাথায় তেল দেওয়া যাকে ব‌লে। এটা নি‌য়ে আমি সবসময় হিনমন্যতায় ভুগতাম।

তু‌মি জা‌নো রো‌মিসা, তোমার ভাই রাযীন, এসএস‌সি পাশ কর‌তে না কর‌তেই তোমার বাবা ওকে দা‌মি বাইক, গাড়ি কি‌নে দিয়ে‌ছি‌লো। রাযীন রোজ সেসবে চ‌ড়ে ক‌লে‌জে যেত। ওর বন্ধুরা ওকে মাথায় ক‌রে রাখত, আমার খুব খারাপ লাগত। বয়‌সে আমি রাযী‌নের চে‌য়ে এক বছ‌রের ছো‌টো হ‌লেও আমরা এক ক‌লে‌জে পড়তাম। ও সে‌কেন্ড ইয়ার, আমি ফাস্ট ইয়া‌রে। অনেক চাইবার পর আমার বাবা আমা‌কে মোটামু‌টি দামের একটা বাইক কি‌নে দি‌য়ে‌ছি‌লেন। বাইকটার দাম একেবা‌রেও কম নয়। আমি সে‌দিন প্রচন্ড খু‌শি ছিলাম। বাইক পাবার আন‌ন্দে খু‌শি হ‌য়ে বন্ধু‌দের দেখা‌তে গি‌য়ে‌ছিলাম। কিন্তু তখনই রাযীন তার নতুন দা‌মি গা‌ড়ি নি‌য়ে উপ‌স্থিত হয়েছি‌লো। সে‌দিন আমার বন্ধুরা আমা‌কে অনেক বিদ্রুপ ক‌রে‌ছি‌লো। য‌দিও এসব বিষ‌য়ে রাযীন কিছুই জানত না। তবুও ও কেন সবসময় এত শো-অফ কর‌তো? ওর অ‌নেক আ‌ছে, ওকে ফাইন, নি‌জের কা‌ছে থাক। তা শো-অফ ক‌রে অন্য‌দের কষ্ট বাড়া‌নোর কী দরকার ছি‌লো?

সে‌দিন থে‌কে আমি ঠিক করলাম, আমার অনেক টাকা চাই। এত টাকা যা দি‌য়ে সুখ কেনা যায়। সব‌চে‌য়ে বে‌শি খারাপ তো সে‌দিন লে‌গেছি‌লো যে‌দিন এলাকার পিক‌নি‌কে তোমার মা‌কে সব‌চে‌য়ে বি‌শেষ স্থান দেওয়া হ‌য়ে‌ছি‌লো আর আমার মাকে কেউ পাত্তাও দেয়‌নি। তি‌নি এক কর্ণা‌রে মুখ ভার ক‌রে ব‌সে ছি‌লেন। বা‌ড়ি ফি‌রে তি‌নি সে‌দিন খুব কান্না ক‌রে‌ছি‌লেন। সে‌দিন থে‌কে আমি ভে‌বে নি‌য়ে‌ছিলাম রায়হান রহমা‌নের সব সম্প‌ত্তি আমার চাই।

‌তোমার প‌রিবার হয়‌তো ডায়‌রেক্ট আমা‌দের কো‌নো ক্ষ‌তি বা অপমান করেনি। কিন্তু ইনডায়‌রেক্টলি আমা‌দের অনেক ক্ষ‌তি ক‌রে‌ছো। অনেক অপমান ক‌রে‌ছো তোমরা। প‌দে প‌দে তোমা‌দের জন্য আমরা অপদস্ত হ‌য়ে‌ছি। সেই শোধটা যে না তুল‌লেই না।

অ‌র্কের বিড়ালা‌ক্ষী দি‌য়ে অশ্রু গ‌ড়ি‌য়ে পড়‌ছে। ওর কান্নাটাও এত সুন্দর লাগ‌ছে যা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব না। ছে‌লেদের কাঁদ‌তে নেই। আর তারা কাঁদ‌লেও তা‌দের এত সুন্দর দেখ‌তেই নেই। অর্ক ভাব‌ছে, কীভা‌বে রো‌মিসা‌কে ভা‌লো‌বে‌সে ফেলল। ম‌নে ম‌নে বলল,
‘জা‌নো রো‌মিসা তোমা‌কে প্রথ‌মে আমি ঠিকই ট্রাপ করে‌ছিলাম। আমি বুঝ‌তে পারতাম তু‌মি আমা‌কে পছন্দ ক‌রো। সেই সু‌যোগটা নিলাম। তুমি আমা‌কে পছন্দ না ক‌র‌লে আমার প্ল্যানটা অন্যভা‌বে সফল কর‌তে হ‌তো। যা আমার জন্য বেশ কষ্টদায়ক হতো। কিন্তু আমা‌কে ভা‌লো‌বে‌সে তু‌মি সে কষ্টটা ক‌মি‌য়ে দি‌লে, আমার প‌রিকল্পনা বাস্তবায়ন কর‌তে সহজ তু‌মিই ক‌রে দি‌য়ে‌ছো।
‌কিন্তু প্রথ‌মে তোমা‌কে ভা‌লো না বাস‌লেও কীভা‌বে যে‌নো আমার ম্যা‌চিওর মনটা তোমার কি‌শোরী মনের কা‌ছে হে‌রে গেল। হে‌রে গেলাম তোমার উচ্ছ্বল, চঞ্চল ভা‌লোবাসার কা‌ছে। আমি প্রচন্ড ম্যা‌চিওর হওয়ার পরও তোমার চঞ্চলতায় নি‌জে‌কে কি‌শোর ম‌নে হয়। আমিও তোমার সাথে তোমার ম‌তো ছো‌টো হ‌য়ে যাই। তোমা‌কে ভা‌লো লা‌গে, তোমার কথা, তোমার স্পর্শ, তোমার চাহনী সব‌কিছু আমা‌কে বারংবার মুগ্ধ ক‌রে। তোমার সা‌থে থা‌কলে নি‌জে‌কে হালকা লা‌গে। ম‌নে হয় পৃ‌থিবীটা সুন্দর। তখন ম‌নে হয় না, টাকা জীব‌নের জন্য অত জ‌রু‌রি। আমি তোমা‌কে বড্ড বে‌শি ভা‌লোবা‌সি রো‌মিসা। কিন্তু ইদা‌নিং আমার বড্ড ভয় হয়! তোমা‌কে হারা‌নোর ভয়! এ ভয় আমা‌কে আষ্টে পি‌ষ্টে জ‌ড়ি‌য়ে রা‌খে। তোমা‌কে ভা‌লো না বাস‌লে আমার ভয়টা হ‌তো না। আমার প‌রিকল্পনায় গড়বড় হ‌তো না। আমার মনটা দুর্বল হ‌তো না। কেন আমার মনটা অবাধ্য হ‌য়ে তোমা‌কে স‌ত্যি স‌ত্যি ভা‌লো‌বে‌সে ফেলল?’

অ‌র্কের চোখ থে‌কে অঝোর ধারায় জল ঝ‌রেই যা‌চ্ছে। সুমী অর্কের কাঁ‌ধে হাত রে‌খে বলল,
‘ভাই কাঁদ‌লে তো‌কে অসম্ভব সুন্দর লা‌গে। তোর ধূসর, সাদা, ঘোলা‌টে চো‌খের ম‌নি থে‌কে যখন পা‌নি প‌ড়ে তখন অনবদ্য লা‌গে। আর তুই কাঁদ‌ছিস কেন? প্র‌তি‌শোধ তো নি‌চ্ছিস?’
‌অর্ক চোখ মু‌ছে বলল,
‘এত এত খারাপ কাজ কর‌তে আমার মো‌টেও ভা‌লো লাগ‌ছে না। অবশ্য এত‌দিন খারাপ লা‌গে‌ওনি। বিশ্বাস কর আপু একটুও খারাপ লা‌গে‌নি। কিন্তু যে‌দিন থে‌কে বুঝ‌তে পারলাম রো‌মিসা‌কে স‌ত্যি স‌ত্যি ভা‌লো‌বে‌সে ফে‌লে‌ছি, সে‌দিন থে‌কে আমার খারাপ লাগ‌ছে। যার কার‌ণে আমার প্ল্যা‌নেও গড়বড় হ‌চ্ছে। ভা‌লোবাসা ভা‌লোনারে আপু। বড্ড সর্বনাশা এ ভা‌লোবাসা।’

সুমী দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে বলল,
‘এখন তোর পি‌ছি‌য়ে যাওয়ার কো‌নো সু‌যোগ নেই। তুই এমন স্থা‌নে এসে প‌ড়ে‌ছিস, যে না পিছ‌নে যে‌তে পার‌বি না স‌রে আস‌তে পার‌বি। তো‌কে সাম‌নেই এগো‌তে হ‌বে।’
‘জা‌নি। আচ্ছা আপু রো‌মিসা ক‌’দিন যাবত আমা‌কে ইগ‌নোর কেন কর‌ছে? আমার সা‌থে ঠিকভা‌বে কথা বল‌ছে না কেন?’
‘উঠ‌তি বয়সী কি‌শোরী ও। হয়‌তো কো‌নো কার‌ণে অভিমান ক‌রে‌ছে। তুই দেখা ক‌রে মান ভাঙা।’
‘হ্যাঁ।’

অর্ক, রো‌মিসা‌কে কল করল। অর্কের নাম্বার দে‌খেই রো‌মিসার কান্না পে‌য়ে গেল। সা‌থে রা‌গ হ‌লো প্রচন্ড। কিন্তু এখন ও অর্কের উপর রাগ ঝাড়‌তে পার‌বে না। রাযী‌নের কড়া বারন আছে। তাই রাযী‌নের কথা ভে‌বে রো‌মিসা চুপ থাক‌লেও, অর্ক‌কে ইগ‌নোর না ক‌রে থাক‌তে পারল না। অ‌র্কের সা‌থে কথা বল‌তে গে‌লেই ভিতর থে‌কে রাগ, কান্না সব একসা‌থে বে‌ড়ি‌য়ে আসে। ক‌ষ্টের কার‌ণে বেফাঁস কিছু না ব‌লে ফে‌লে তা ভে‌বে অর্ক‌কে ইগ‌নোর কর‌ছে রো‌মিসা। রো‌মিসা ‌নি‌জের ফোনটা আছাড় মে‌রে ভে‌ঙে ফেলল।

তারপর কান্নায় ভে‌ঙে প‌ড়ে নিজে নি‌জে বলল,
‘‌কেন কর‌লে অর্ক, এমন? কেন আমার কি‌শোরী মনটা‌কে নি‌য়ে খেল‌লে? আমি তো ভা‌লোবাসার কিছুই বুঝতাম না। শুধু তোমা‌কে ভা‌লো লাগ‌তো আমার। তু‌মিই ভা‌লোবাসা শিখা‌লে। বাবা-মা যেমন, ছো‌টো বাচ্চা‌দের অ আ শিখায়, তু‌মি তেমন আমা‌কে ভা‌লোবাসা প্রথম থে‌কে শিখা‌লে। ভা‌লোবাসার অনুভূ‌তি অনুভব করা‌লে আর আজ সেই তোমার জঘণ্য রূপটা দেখ‌তে পার‌ছি না একদম! তু‌মি দেখ‌তে যতটা সুন্দর তোমার ভিতরটা ততটাই জঘণ্য! আমি তোমার ভিত‌রের এ ঘৃণ্য রূপটা একদম নি‌তে পার‌ছি না। একদম না।’
কল কে‌টে যাওয়ায় অর্ক, সু‌মি‌কে বলল,
‘আপা আমি একটু রো‌মিসার সা‌থে দেখা ক‌রে আসি। তোরা ক‌’দিন আছিস ফ‌রিদপু‌রে?’
‘আ‌ছি ক’‌দিন।’
‘আচ্ছা। তুই মা‌য়ের কা‌ছে যা। আমি একটু আস‌ছি।’

অর্ক একগুচ্ছ সাদা র‌ঙের গোলাপ নি‌য়ে, রো‌মিসাদের বা‌ড়ি আসল। মিতু, অর্ক‌কে দে‌খে খু‌শি হ‌য়ে বলল,
‘‌কি‌রে আজ পথ ভু‌লে এ বা‌ড়ি আস‌লি না‌কি?’
‘কী যে ব‌লো না ছো‌টোমা। হবু শ্বশুর বা‌ড়ি বারবার আসা কী উচিত হ‌বে? তাই আসি না।’
‌মিতু, অর্কের কান টে‌নে বলল,
‘‌তোর শ্বশুর বা‌ড়ি প‌রে, আগে এটা তোর ছো‌টো আব্বুর বা‌ড়ি।’
‘তা অবশ্য ঠিক।’
অর্ক এদিক ওদিক তা‌কি‌য়ে রো‌মিসা‌কে খুঁজ‌তে লাগল। মিতু সেটা বুঝ‌তে পে‌রে বলল,
‘‌রো‌মিসা ছা‌দে। তো‌দের কি ঝগড়া হ‌য়ে‌ছে?’
‘না তো। কেন?’
‘ক’‌দিন যাবত দেখ‌ছি ঠিকম‌তো খা‌চ্ছে না, ক‌লেজ যা‌চ্ছে না, সবসময় মন মরা হ‌য়ে ব‌সে থা‌কে।’
‘আচ্ছা আমি দেখ‌ছি।’
অর্ক ফুলগু‌লো মিতুর দি‌কে বা‌ড়ি‌য়ে বলল,
‘‌ছো‌টো মা তোমার জন্য।’
‌মিতু হে‌সে বলল,
‘যার জন্য এনেছিস তা‌কেই গি‌য়ে দে।’
অর্ক সি‌ড়ি দি‌য়ে সোজা ছা‌দে উঠে গেল।

রাযী‌নের বাসার সহকর্মী সনিয়া ছা‌দে যে‌তে নি‌লে মিত‌ু বলল,
‘স‌নিয়া ওদি‌কে যাস‌নে। অর্ক, রো‌মিসা ছা‌দে। ওরা কিছুক্ষণ নি‌জে‌দের ম‌তো সময় কাটাক।’
স‌নিয়া বলল,
‘আচ্ছা আম্মা।’
স‌নিয়া, রাযী‌ন‌দের বাসার কা‌জের লোক হ‌লেও সবাই ওকে খুব স্নেহ ক‌রে। স‌নিয়া‌ মিতু‌কে আম্মা ব‌লেই ডা‌কে। স‌নিয়া বলল,
‘আম্মা রাযীন ভাই, রো‌মিসা আপাও খুব সুন্দর আপনার ম‌তো চেহারা পে‌য়ে‌ছে। আব্বাজান তো শ্যামলা। অর্ক ভাইর বাবাও শ্যামলা, মা-ও শ্যামলা তাহ‌লে অর্ক ভাই কার ম‌তো এত সুন্দর হ‌য়ে‌ছে? পোলা মানুষ এত সুন্দর হ‌তে পা‌রে আমি তাকে না দেখ‌লে জানতাম না।’
‌মিতু হে‌সে বলল,
‘অর্ক চেহারা সুরত ওর মা‌য়ের ম‌তো পে‌লেও গা‌য়ে‌র রঙ পায়‌নি। অর্কর মা শ্যামলা হ‌লেও খুব মি‌ষ্টি দেখ‌তে। কিন্তু অর্ক গা‌য়ের রঙ পে‌য়ে‌ছে ওর না‌নির। এমন‌কি চোখও তার ম‌তো বিড়ালাক্ষী। অর্কর না‌নি বেঁ‌চে নেই নয়তো তো‌কে দেখা‌তে পারতাম সৌন্দর্য কা‌কে ব‌লে? মা‌নে কো‌নো মে‌য়ে এত সুন্দর হ‌তে পা‌রে! তার চোখদু‌টো ছি‌লো জাদুর ম‌তো। চো‌খের ম‌নি বিড়া‌লের চো‌খের ম‌তো ধূসর ঘোলা‌টে। অর্ক হুবহু তার ম‌তো হ‌য়ে‌ছে। ত‌বে অর্কের মা ওর নানার ম‌তো হ‌য়ে‌ছে। অর্কের, না‌নি‌কে আগুন সুন্দরী বলা যেত। হ্যাঁ অর্কর না‌নির পর আ‌মি সুন্দর মে‌য়ে দে‌খে‌ছি শশী‌র ভাই‌য়ের বউ রেনু‌কে।’
স‌নিয়া বলল,
‘ওহ।’

অর্ক ছা‌দে উঠে দেখল রো‌মিসা ছা‌দের পা‌শে দা‌ড়ি‌য়ে দিগন্ত পা‌নে তা‌কি‌য়ে আছে। অর্ক, রো‌মিসা‌কে পিছন দি‌য়ে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে সাম‌নে ফুল গু‌লো ধ‌রে বলল,
‘আমার ছো‌টো পাখিটার কী হ‌য়ে‌ছে? মন খারাপ কেন?’
‌রো‌মিসা খা‌নিক চমকা‌লেও অর্ক‌কে দে‌খে খা‌নিকসময় চুপ থে‌কে, ওর বু‌কে ম‌ুখ গুজল। ম‌নে ম‌নে বলল,
‘‌তোমা‌কে ঘৃণা ক‌রি! তোমা‌কে ঘৃণা ক‌রি! তোমা‌কে ঘৃণা ক‌রি! তবুও কেন তোমায় এত ভা‌লোবা‌সি? তবুও কেন তোমার হৃদস্পন্দন আমার এত ভা‌লো লা‌গে?’
অর্ক রো‌মিসার কপা‌লে চু‌মো এঁকে বলল,
‘কী হয়ে‌ছে?’
‌রো‌মিসা, অর্কের ঠোঁ‌টে আঙুল দি‌য়ে বলল,
‘হুস। চুপ থা‌কো। আমা‌কে একটু তোমার হৃদস্পন্দন শুন‌তে দাও।’

অর্ক মি‌ষ্টি হে‌সে গভীরভা‌বে জ‌ড়ি‌য়ে ধরল রো‌মিসা‌কে। রো‌মিসা আরও শক্ত ক‌রে অর্ক‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে ম‌নে ম‌নে বলল,
‘এটাই হয়‌তো তোমা‌কে আমার শেষ জ‌ড়ি‌য়ে ধরা। এটাই হয়ত শেষ বার তোমা‌র হৃদস্পন শোনা।’
‌রো‌মিসা, অর্কের চো‌খের দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘মাথাটা একটু নিচু ক‌রো।’
অর্ক মাথা নিচু কর‌ল। রো‌মিসা তার ছোট্ট হাত দু‌টো দি‌য়ে অর্কের দুই গা‌লে হাত রে‌খে অর্কের ঠোঁ‌টে ভা‌লোবাসার ছোট্ট একটা পরশ দি‌লো। রো‌মিসার এমন সাহ‌সে অর্ক ভয়াবহ চমকে গেল। তারপরও নি‌জে‌কে স্বাভা‌বিক ক‌রে বলল,
‘হ‌লো না, হ‌লো না, একদম হ‌লো না।’
‌রো‌মিসা হালকা হে‌সে বলল,
‘‌কেন?’
‘কথা ছি‌লো তোমার আঠা‌রোতম জন্ম‌দি‌নে এই ছোট্ট উপহারটা আমি তোমা‌কে দিব। গতমা‌সে সে‌কেন্ড‌ ইয়া‌রে উঠলা। আর পাঁচমাস পর তোমার আঠা‌রো বছর হ‌তো। আমা‌দের তো কথা ছি‌লো এই বি‌শেষ চুমোটা সে‌দিন হ‌বে।’
‌রো‌মিসা স্মিত হে‌সে বলল,
‘‌হোকনা কিছু কাজ একটু আগে। ক্ষ‌তি কি তা‌তে?’
অর্ক হে‌সে বলল,
‘বাহ্ খারাপ ব‌লো‌নি।’
অর্ক ‌নিচু হ‌য়ে এবার গভীরভা‌বে রো‌মিসার ঠোঁট স্পর্শ করল। রো‌মিসার চোখ বে‌য়ে অশ্রু গ‌ড়ি‌য়ে পড়ল। ম‌নে ম‌নে বলল,
‘‌তোমায় পাওয়া হ‌বে না। হ‌বে না তোমায় ছুঁ‌য়ে দেখা। এ জীব‌নে প্রেম আর আস‌বে না। তু‌মিই প্রথম, তুম‌িই শেষ হ‌য়ে থাক‌বে আজীবন। তোমার এ স্পর্শটু‌কোর স্মৃ‌তিই আমার রঙহীন জীব‌নে, রঙীন বসন্ত হ‌য়ে র‌য়ে যা‌বে।’

‌কিছুসময় পর অর্ক বলল,
‘‌দিস ইজ দ্যা বেস্ট মো‌মেন্ট ইন মাই লাইফ ছো‌টোপা‌খি।’
হালকা হাসল রো‌মিসা। রো‌মিসা বলল,
‘অর্ক তু‌মি কী কখনও আমা‌কে কো‌নো মিথ্যা কথা ব‌লে‌ছো?’
অর্ক খানিকটা চমকা‌লো, ভয়ও পে‌লো খুব। তারপর রো‌মিসা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘‌ছো‌টোপা‌খি আমি জীব‌নে বহু মিথ্যা ব‌লে‌ছি, অনেক অন্যায় ক‌রে‌ছি, কিন্তু একটা বিষ‌য়ে মিথ্যা ব‌লি‌নি, আমি তোমা‌কে ভা‌লোবা‌সি, খুব ভা‌লোবা‌সি। নি‌জের চে‌য়েও বে‌শি, সবার চে‌য়ে বে‌শি ভা‌লোবা‌সি। আমার জীব‌নে, আমার মা-বাবা যেমন ধ্রুব স‌ত্যি তেমনি তু‌মি স‌ত্যি। তোমার প্র‌তি আমার ভা‌লোবাসা তেমন স‌ত্যি।
‌রো‌মিসা কিছুই বলল না, শুধু অর্কের বু‌কে মাথা রে‌খে নিঃশ‌ব্দে চো‌খের জল ফেলল।

৬১!!
‌শিহাব যখন রাযীন-শশীর ফ্ল্যা‌টে পৌঁছা‌লো তখন রাত দশটা। ওরা তালা খু‌লে ভেত‌রে প্র‌বেশ ক‌রে ডাক্তার সা‌হিন‌কে কল করল। ডাক্তার সা‌হিন, রাযী‌নের কা‌ছে এসে মিতু‌কে বলল,
‘আ‌ন্টি, রাযীন‌কে কিছু চেকা‌পের জন্য নি‌তে হ‌বে।’
মিতু বলল,
‘আ‌মি আসব?’
‘নাহ্। আপনার না আসাই বেটার।’
‘আচ্ছা তাহ‌লে তু‌মি নি‌য়ে যাও।’

‌থেরা‌পি রু‌মে গি‌য়ে রাযীন ডাক্তার সা‌হি‌নের ফোন থে‌কে শিহাব‌কে কল করল। শিহাব কল রি‌সিভ ক‌রে বলল,
‘রাযীন আমি আর মারুফ সা‌হেবকে নি‌য়ে তোমা‌দের ফ্ল্যা‌টে ঢুকে‌ছি। কী করব ব‌লো?’
রাযীন একটা দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে বলল,
‘ভাইয়া আমা‌দের খাবার রুমে যান সেখা‌নে নীল র‌ঙের বড় একটা থ্রি‌ডি পেই‌ন্টিং আছে। সেখা‌নে একটা মা‌ছের ছ‌বি।’
‘হ্যাঁ পে‌য়ে‌ছি।’
‘এবার মাছের চো‌খের দি‌কে তাকান।’
‘‌সেখা‌নে কী আছে?’
‌’পে‌ইন্টিংটা খু‌লে তার চোখ বরাবর পিছ‌নের দিকটা দেখুন।’
মারুফ সেটার পিছ‌নে দে‌খে বলল,
‘এটাতো একটা হি‌ডেন ক্যা‌মেরা।’
রাযীন বলল,
‘‌জি। আরেকটা আমাদের একেবা‌রে সাম‌নের রু‌মে ফু‌লের থ্রিডি পে‌ইন্টিং এর ফু‌লের মাঝ বরাবর। আরেকটা রান্নাঘ‌রের কাবা‌টে, কিছু প্রজাপতি পেই‌ন্টিং আছে, সেখা‌নে সবুজ র‌ঙের একটা প্রজাপ‌তি আছে সেটায়।’

মারুফ সবগু‌লো ক্যা‌মেরা নি‌য়ে বলল,
‘আর কোথাও আছে ক্যা‌মেরা?’
রাযীন বলল,
‘‌জি না।’
মারুফ বলল,
‘‌বেডরু‌মে নেই?’
রাযীন বলল,
‘‌বেড রু‌মে ক্যা‌মেরা লা‌গি‌য়ে কি আমি আমার আর আমার ওয়াই‌ফের এমএমএস বানা‌বো?’
‌শিহাব, মারুফ দুজ‌নেই হাসল। রাযীন বলল,
‘ওগু‌লো নি‌য়ে কাল সোজা ফ‌রিদপুর চ‌লে আসুন। তারপর ফো‌টেজ দেখব। দে‌খি কো‌নো প্রমাণ পাই কিনা? শিহাব ভাই, রা‌তে ফির‌তে তো পার‌বেন না। বেটার হয়, সকা‌লের প্রথম ফ্ল্যাই‌টে চ‌লে আস‌লে।’
‌শিহাব বলল,
‘হ্যাঁ সেটাই আসব।’

‌রাযী‌নের কল কে‌টে শিহাব বলল,
‘আমার থাকার জন্য কো‌নো হো‌টেল বুক কর‌তে হ‌বে।’
মারুফ বলল,
‘তার প্র‌য়োজন নেই। আপ‌নি আমার বাসায় থাক‌বেন। আগেই একটা কথা ব‌লে রা‌খি, আমার বাসায় গে‌লে আপ‌নি ছো‌টেখা‌টো একটা ধাক্কা খাবার জন্য প্রস্তুত থাক‌বেন।’
‌শিহাব বেশ অবাক হ‌য়ে বলল,
‘মা‌নে?’
ম‌ারুফ হে‌সে বলল,
‘ভয় পা‌বেন না। রিলাক্স! আগে চলুন তারপর দেখ‌তে পার‌বেন।’

আধাঘন্টা পর মারুফ ওর বাসায় পে‌ৗঁছালো। মারুফ ক‌লিং বেল টি‌পে শিহা‌বের দি‌কে তা‌কি‌য়ে ঠোঁট টি‌পে হে‌সে বলল,
‘‌শিহাব সা‌হেব, বি রে‌ডি!’
দরজা খোলার পর সাম‌নের রমনী‌কে দে‌খে শিহাব স‌ত্যি বড়সর ধাক্কা খে‌লো। মুখ থে‌কে অস্ফূট শ‌ব্দে বে‌রি‌য়ে আসল,
‘শশী।’
মারুফ হে‌সে বলল,
‘কী শিহাব সা‌হেব চম‌কে গে‌লেন তো! এ আপনার বোন শশী নয়, আমার স্ত্রী উর্মি। দু’জনার ম‌ধ্যে দূর দূর পর্যন্ত র‌ক্তের কো‌নো সম্পর্ক নেই, দু’জনার বয়‌সের পার্থক্যও বিস্তর তবুও দুজন দেখ‌তে অনেকটাই একরকম। আমার ম‌নে হয় শশী আর উর্মির চেহারায় ৮০% মি‌লে যা‌বে। কী ব‌লেন?’
‌শিহাব অবাক হ‌য়ে বলল,
‘এক মুহূ‌র্তের জন্য আমার ম‌নে হ‌য়ে‌ছি‌লো আপ‌নি আমার বোন শশী।’
উ‌র্মি হে‌সে বলল,
‘‌ভিত‌রে আসুন ভাই। তারপর বা‌কি কথা বলবেন।’

‌শিহাব এতটাই বি‌স্মিত ছি‌লো যে কী বল‌বে সেটাই ভে‌বে পা‌চ্ছে না।’
উ‌র্মি, মারুফ‌কে বলল,
‘মারুফ, ভাইয়া‌কে রু‌ম দে‌খি‌য়ে দাও। তারপর ফ্রেশ হ‌য়ে খে‌তে আসো।’
‌মারুফ, শিহাব‌কে রু‌মে ‌নি‌য়ে গি‌য়ে বলল,
‘‌শিহাব সা‌হেব, ফ্রেশ হ‌য়ে খাবার রুমে আসুন। আপনার সব কন‌ফিউশন দূর ক‌রে দিব।’
‌শিহাব মনে ম‌নে বলল,
‘এমন অদ্ভুত কো-ইন‌সি‌ডেন্সও হয়? জানা ছি‌লো না। শুধু শু‌নে‌ছিলাম পৃ‌থিবী‌তে একরকম দেখ‌তে সাতজন লোক থা‌কে কিন্তু আজ তার প্রমাণও পেলাম। ত‌বে শশীর থে‌কে উর্মির কিছু‌দিক আলাদা। যেমন উর্মির ভ্রুর উপর একটা তিল আছে শশীর নেই। তার কো‌নো গজদন্ত নেই। কিন্তু শশীর ডানপা‌শে একটা গজদাঁত‌ আছে। শশী হাস‌লে ওর ডান দি‌কের গজদাঁতটার কার‌ণে ওর হা‌সিটা অসম্ভব মি‌ষ্টি দেখায়। উর্মি হাস‌লেও মি‌ষ্টি লা‌গে ত‌বে আর পাঁচটা সাধারণ মে‌য়ের ম‌তো। আমা‌দের শশী হাস‌লে পৃ‌থিবী‌তে সব‌চে‌য়ে বে‌শি মি‌ষ্টি লা‌গে। আমার বো‌নের ম‌তো মি‌ষ্টি মে‌য়ে পৃ‌থিবী‌তে কেউ নেই। কেউ না।’

‌শিহাব ফ্রেশ হ‌য়ে খাবার রুমে আস‌ল। উর্মি শিহাব‌কে খাবার দি‌তে দি‌তে বলল,
‘জা‌নেন ভাইয়া, এক‌দিন মারুফ এসে বলল, তোমার জন্য একটা অবাক করা সারপ্রাইজ আছে। তারপর আমাকে শশীর ছ‌বি দেখাল। আমি ছ‌বি দে‌খে প্রথ‌মে বললাম, এটা তো আমারই ছ‌বি, এটা দে‌খে অবাক হওয়ার কী আছে? মারুফ ব‌লে‌ছি‌লো, ভা‌লো ক‌রে দে‌খো তারপর ব‌লো। তারপর মারুফ আমা‌কে একটা ভি‌ডিও দেখা‌লো। আমি ভা‌লো ক‌রে দে‌খে বললাম, আরে মে‌য়েটা তো জেলে। আমি তো কখনও জে‌লে যাইনি। মারুফ এ কে? তা‌রপর মারুফ, শশীর সম্প‌র্কে সব বিস্তা‌রিত সব ব‌লে‌ছি‌লো আমা‌কে। মারুফ নি‌জেও মানত না যে, শশী কো‌নো অন্যায় ক‌রে‌ছে? তারপর আমিও মারুফ‌কে বারবার বলতাম শশীর প‌ক্ষে প্রমাণ খুঁজ‌তে।’
‌শিহাব মৃদু হে‌সে বলল,
‘ধন্যবাদ বোন।’
উর্মি হাসল। তখন ওদের মে‌য়ে ঢেউ এসে বলল,
‘আপ‌নি কি আমার মামা?’
‌শিহাব হে‌সে বলল,
‘হ্যাঁ। স‌রি সোনা আ‌মি জানতাম না এ বাসায় একটা ছোট্ট পরী আছে, জান‌লে তোমার জন্য অনেক চক‌লেট নি‌য়ে আসতাম।’
মারুফ হে‌সে বলল,
‘ওর চক‌লেট খাওয়া বারণ। দাঁত সব পোকায় খে‌য়ে‌ছে।’
‌ঢেউ মুখ ভার করে বলল,
‘বাবা পঁচা।’

সবাই হাসল। খাবার পর শিহাব বলল,
‘চ‌লেন ক্যা‌মেরাগু‌লো থে‌কে ম্যা‌মো‌রি বের ক‌রে দেখি কো‌নো প্রমাণ পাই কিনা?’
মারুফ বলল,
‘চলুন।’
ওরা ম্যামোরি বের ক‌রে ল্যাপট‌পে চালু করল। শিহাব বলল,
‘প্রথ‌মে খাবার রু‌মের, ঘটনার দি‌নের ভি‌ডিও দে‌খি কী বলেন?’
‘হ্যাঁ ঠিক। যে‌হেতু খাবা‌রে বিষ ছি‌লো।’
ওরা ভি‌ডিও প্লে ক‌রে ঘটনার দিনের তা‌রিখ পর্যন্ত গেল। তারপর প্লে কর‌তেই দু’জন লজ্জায় লাল হ‌য়ে গেল। কারণ তখন রাযীন, শশী‌কে পিছন থে‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে কথা বল‌ছে, আর শশী‌কে ছো‌টো আদর দি‌চ্ছে।’

‌শিহাব ভি‌ডিওটা স্কিপ ক‌রে বলল,
‘রান্না ঘ‌রের ভি‌ডিও চালু করুন।’
ওরা রান্নাঘ‌রের ভি‌ডিও চালু ক‌রে ঘটনার আগের দিন চ‌লে গেল। দেখল রাযীন রান্না কর‌ছে আর শশী রান্না পা‌শে ব‌সে পা দোলা‌চ্ছে। শিহাব টান‌তে চাই‌লে মারুফ হে‌সে বলল,
‘আরে এখা‌নে মে‌বি রোমা‌ন্টিক কিছু নাই, আপনার বোন জামাই কি কি রান্না কর‌ছে দে‌খি। রাযীন ওর রান্না করা তরকা‌রিটা, চাম‌চে ক‌রে শশীর ম‌ু‌খে দি‌লো। শশী হা‌তের ইশার‌ায় বলল,
‘দারুণ হ‌য়ে‌ছে। তারপর চামচটা রাযী‌নের মু‌খে ধর‌তে চাই‌লে রাযীন চামচটা হা‌তে নি‌য়ে নি‌চে রে‌খে শশী কা‌ছে এসে, ওর ঠোঁ‌টের কো‌নে লে‌গে থাকা খাবারটা নিজ ঠোঁট দি‌য়ে নি‌লো। শিহাব প্রচন্ড লজ্জা পে‌য়ে এবার ভি‌ডিও না সোজা ল্যাপটপই বন্ধ ক‌রে বলল,
‘ভাই বাদ দেন, রাযী‌নের ক্যা‌মেরা রাযীনই জা‌নে কোথায় কি আছে? ও-ই দেখ‌বে।’
মারুফ শব্দ ক‌রে হে‌সে বলল,
‘আপনার বোন এবং রাযীন সা‌হেব দেখ‌ছি বেশ রোমা‌ন্টিক!’
‌শিহাব হে‌সে বলল,
‘দুজনারই বয়স অনেক কম। তারউপর নতুন বি‌য়ে হ‌য়ে‌ছে। রাযীন, শশী‌ একে অপর‌কে প্রচন্ড ভা‌লোবা‌সে, ফ্ল্যা‌টে দু’জন সবসময় একা থা‌কে, তো ওরা রোমান্স কর‌বে না তো কারা কর‌বে?’
মারুফ হে‌সে বলল,
‘তা অবশ্য ঠিক। দু’জনারই বয়স খুব কম।’
‌শিহাব দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে বল‌ল,
‘হ্যাঁ। আর দু’জ‌নেই এত ছো‌টো বয়‌সে কত বড় বড় সমস্যা সম্মুখীন হ‌চ্ছে। আল্লাহ ওদের জল‌দি মি‌লি‌য়ে দিক। এতটু‌কো বয়সেই দু’জন দু’জন‌কে কত গভীরভা‌বে ভা‌লোবাসে! ম‌নে হয় একে অপর‌কে ছাড়া অপ‌রিপূর্ণ! কী অগাত বিশ্বাস একে অপ‌রের প্র‌তি!’
মারুফ বলল,
‘হ্যাঁ আমিও এটা খেয়াল ক‌রে‌ছি।’

চল‌বে….