একমুঠো রোদ্দুর পর্ব-৩২ এবং শেষ পর্ব

0
15

#একমুঠো_রোদ্দুর
#অন্তিম_পর্ব
#আদওয়া_ইবশার

শ্যামা বরণ গায়ে টুকটুকে লাল বেনারসি জড়িয়ে হতবিহ্বত হয়ে বসে আছে অতসী। বাইরে শোরগোল শোনা যাচ্ছে। কাজী সাহেব দুই পক্ষের সাথে কথা বলে বিয়ের পূর্ব প্রস্তুতি সব সেড়ে নিচ্ছে। আর অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই হয়তো ‘কবুল’ ছোট্ট এই শব্দটা মুখে তিনবার উচ্চারণ করে হয়ে যাবে সে কারো মেয়ে থেকে কারো স্ত্রী। অথচ সব কিছুই এখনো কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে সকাল থেকে একের পর এক ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সব বাস্তব। কিভাবেই বা বিশ্বাস হবে? আর কিভাবেই এই ঘোর থেকে বের হবে অতসী? সকাল পযর্ন্ত তো সব কিছুই স্বাভাবিক ছিল। গতকাল বাবার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়র ছেলের জন্য পাত্রী হিসেবে তাকে দেখতে আসার কথা ছিল। এও কথা ছিল ছেলের মেয়ে পছন্দ হলেই তাৎক্ষণিকভাবে বিয়েটা সেড়ে ফেলবে। বাবার এক কথায় বাধ্য মেয়ের মতো অতসীও প্রস্তুত ছিল সব কিছুর জন্য। নিজেকে যত্ন নিয়ে সাজিয়েছিল পাত্রপক্ষের সামনে যাবার জন্য। কিন্তু এরপর, এরপরই সবকিছুই কেমন একটু একটু করে অস্বাভাবিক হতে শুরু করল। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার পরও পাত্রপক্ষ আসলনা। রাতে ফোন করে জানানো হলো পাত্রের না কী কোনো এক মেয়ের সাথে গভীর প্রেমের সম্পর্ক। পৃথিবী উল্টে গেলেও ঐ মেয়ে ব্যতীত অন্য কোনো মেয়েকে বউ করবেনা সে। বাবা অবশ্য এই কথা শুনে ভীষণ চটেছিল। ছেলের অন্য জায়গায় সম্পর্ক, এটা না জেনেই কেন তাদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখল? বিয়েটা কী ছেলেখেলা না কি? মেজাজ চটে গেলেও খালেদ সাহেব পুরোনো আত্মীয়র মান রাখতে গিয়ে কঠিন সুরে কোনো প্রতিবাদ করতে পারেনি। শুধু মেয়ের মাথায় হাত রেখে আশ্বাস দিয়েছিল এই বলে,

“একদম মন খারাপ করিসনা মা। এক মাসের ভিতর এর থেকেও যোগ্য পাত্রের সাথে আমি তোর বিয়ে দিব। দেখিয়ে দিব ওদের আমার মেয়ে কোনো ফেলনা না।”

অতসী তখন বাবার কথায় মুখ ফুটে কিছু না বললেও মনে মনে খুব হেসেছিল। প্রকৃতপক্ষে এই সম্বন্ধে তার মন থেকে কোনো সাই ছিলনা। নির্লজ্জ মনটা কেন জানি বারবার শুধু একটা মানুষের দিকেই ঘুরে যাচ্ছিল। সেই মানুষটা আর কেউ নই। জীবনের প্রথম যে পাত্রের সামনে সে ভোতা মুখ করে দাঁড়িয়েছিল এবং পাত্রের মুখের উপর ভোতা মুখেই বিয়েতে অমত পোষণ করেছিল, সেই তাহমিদ সারোয়ার দিহান নামের অতি অভদ্র, নাক উঁচু,কথায় কথায় অন্যকে অপমান করে আনন্দ পাওয়া বদ লোকটাই মনের কোঠায় উঁকি দিচ্ছিল। কী যে এক অদ্ভূত অনুভূতি, অদ্ভূত যন্ত্রণা! সেই অদ্ভূত যন্ত্রণায় ছটফট করেই পুরোটা রাত নির্ঘুম কাটিয়ে সকাল সকাল গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসের বাহানায় বাড়ি থেকে পালিয়ে ভার্সিটির পথ ধরেছিল অতসী। ভয় ছিল মনে, মা যদি তার চোখ-মুখ দেখে মনের এই অদ্ভুত দোলাচলের কথা জেনে যায়! অতসীর মনের খবর জানার ক্ষমতা গোটা পৃথিবী জুড়ে আর কারো না থাকলেও শিউলি বেগমের ঠিক আছে। হয়তো তিনি মা বলেই সন্তানের মুখ দেখে মনের খবর পড়ে ফেলার মতো আধ্যাত্মিক ক্ষমতাটা ওনার আছে। সেই আধ্যাত্মিক ক্ষমতাবলে শিউলি বেগম যদি অতসীর তখনের মনের খবর জেনে যেতো তবে আর মায়ের সামনে মুখ দেখানোর কোনো রাস্তা থাকতনা অতসীর। সেই ভয়েই বাড়ি থেকে এক প্রকার পালিয়ে ভার্সিটিতে ঘাপটি মেরে বসেছিল অতসী। কিন্তু সেখানেও টিকতে পারেনি বেশিক্ষণ। কোনোমতে ঘন্টা পার হতে না হতেই খালেদ সাহেব ফোন করে জরুরী ভিত্তিতে বাড়ি ফেরার আদেশ জারি করেন। বাবার আদেশ শিরধার্য মেনে বাড়ি ফিরতেই দ্বিতীয় ঝটকাটা খায় অতসী যখন দেখতে পায় দৃষ্টি,রক্তিম, সাদেক সাহেব, দিলশান আরা ড্রয়িং রুমে বসে বাবার সাথে জম্পেশ গল্পের আসর জমিয়েছে। তাদের পাশেই আবার পা থেকে মাথা অবধি পুরোটাই গা জ্বালানো ভাবে মুড়িয়ে গম্ভীর মুখে বসে দিহান। ঠিক এর পর থেকেই একের পর একটা ঝটকা লেগেই ছিল অতসীর জন্য। কিছুক্ষণ পরেই জানতে পারে দ্বিতীয়বারের মতো আজ তারা আবার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। এবং এবার দিহান নিজে বাবা-মা’কে বলে নিয়ে এসেছে। উক্ত প্রস্তাবে দুই পক্ষের সকলেই যখন সম্মতি দিয়ে দেয় ঠিক তখনই বেঁকে বসে অতসী। হতবম্ভ ভাব কাটিয়ে তড়িৎ বলে ওঠে,

“সবাই রাজি থাকলেও আমি এই বিয়েতে রাজি না।”

অতসীর এহেন নাকচ শুনে সকলেই যখন সমস্বরে কারণ জানতে চায়, ঠিক তখন আবারও বোবা বনে যায় অতসী। কাঁচুমাচু মুখ করে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে এক পলক দিহানের বিরক্তিতে কুঁচকে রাখা মুখের দিকে তাকায়। লম্বা একটা নিঃশ্বাস টেনে মনে সাহস জুগিয়ে বলে দেয় তার এই প্রস্তাব নাকচ করার মূল কারণ,

“প্রেম করবে একজনের সাথে আবার বিয়ে করবে আরেকজনকে! পাত্রের অভাবে অকালে মরে গেলেও আমি এমন ক্যারেক্টারলেস ছেলের সাথে বিয়েতে রাজি হবনা।”

অতসীর এহেন অভিযোগে উপস্থিত প্রতিটা মানুষ এমনভাবে চমকায় যেন ড্রয়িংরুমে কেউ ছোটখাট একটা বোমা ফাটিয়েছে। নিজের বিরুদ্ধে আনিত এমন তরতাজা অভিযোগ শুনে দিহান সাথে সাথে ভড়কে গিয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। উপস্থিত প্রত্যেকের বিস্মিত মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে ফের কটমটিয়ে তাকায় অতসীর দিকে। স্থান,কাল ভুলে ধমকে ওঠে,

“এই মেয়ে! মুখ সামলে কথা বলবে। কার বিরুদ্ধে কি বলছো ভেবে বলছো? আমি প্রেম করি অথচ আমিই জানিনা! মাথায় কী গ্যাস্ট্রিক হয়েছে? হলে বলো আমার কাছে এর দারুণ চিকিৎসা আছে। দেয়ালে ঘাড় ধরে সজোরে এক বারি দিলেই মাথার গ্যাস্ট্রিক সব বাপ বাপ করে পালাবে।”

অতসী যারপরনাই অবাক দিহানের এমন কথার ধরণ দেখে। সাহস কত ছেলেটার! শিকদার মঞ্জিল, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল যখন যেখানে যেভাবে পেরেছে এই ছেলে তার সাথে সর্বদা এমন বাজে আচরণ করেছে। তাই বলে আজ তার বাড়িতে দাঁড়িয়ে তারই বাবা-মায়ের সামনে এভাবে ধমকাবে? এতো সাহস পায় কোথায় এই লোক? এক মুহূর্তের জন্য অতসী নিজেও বড়োদের অস্তিত্ব ভুলে তুখোর ঝগড়াটে মেয়ের মতো নাক ফুলিয়ে কড়া সুরে বলে,

“চোরের মায়ের বড়ো গলা একেই বলে। মুখ সামলে আমি না, আপনি কথা বলবেন। আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমাকে ধমকানোর সাহস কে দিয়েছে আপনাকে?”

“বেয়াদবি করলে শুধু ধমকানো কেন? কানের নিচে ঠাটিয়ে দুটো থাপ্পড় দেওয়ার সাহসও এই দিহানের বুকে আছে। বেয়াদবি, অসভ্যতা আর মিথ্যাচার একদম সহ্য হয়না আমার।”

“মিথ্যাচার কে করেছে? আমি! প্রেমিকাকে বগলদাবা করে নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন, তার হাতের রান্না খেয়ে লুতুপুতু প্রশংসায় অন্য মানুষের কান ঝালাপালা করবেন, আবার দিনশেষে অস্বীকার যাবেন প্রেম করেননা বলে!আপনি তো দেখি চরম লেভেলের ধোকাবাজ লোক! গিরগিটির থেকেও দ্রুত রং পাল্টে ফেলার ক্ষমতা আছে আপনার।”

রেগেমেগে দিহান ফের কিছু বলতে চেয়েও থেমে যায়। কিছু একটা ভেবে রাগ ভুলে কন্ঠে অগাধ বিস্ময় নিয়ে জানতে চায়,

“কার কথা বলছো তুমি? বাই এনি চান্স, মিলিকে কেন্দ্র করে আমার উপর এমন অভিযোগ আনোনি তো তুমি?”

জোরপূর্বক হাসার ভঙ্গিমায় অতসী বলে,

“আহা! অবশেষে মনে পরল বুঝি প্রেমিকার নাম! বাই দ্যা ওয়ে, মিলি ছাড়াও আরও ডজনখানেক প্রেমিকা আছে না কী!যার জন্য আপনি কনফিউজড যে আমি কাকে কেন্দ্র করে এই অভিযোগ করেছি।”

অতসী কাকে নিয়ে দিহানকে সন্দেহ করছে এটা বুঝতে এবার আর কারো বেগ পেতে হয়না। সবটা বুঝতে পেরে দিহান কিছু বলার আগেই দৃষ্টি দুজনকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

” আরে বোকা মেয়ে, তুমি যাকে নিয়ে আমার ভাইকে সন্দেহ করছো সে অলরেডি এক বাচ্চার মা। তার থেকেও বড়ো কথা মিলি হিন্দু ধর্মের মেয়ে। মিতালী সাহাকে তো চেনো! মিতালী সাহার মেয়েই মিলি। দিহান আর সে একই ডিপার্টমেন্টে কাজ করাই দুজনের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এছাড়া আর কিছুই না।”

এতোদিনের লালিত ধারণা এভাবে মিথ্যে প্রমাণিত হওয়াই থমথম খেয়ে যায় অতসী। হতবিহ্বল হয়ে কতক্ষণ ঠাই দাঁড়িয়ে থেকে লজ্জায় মাথা নত করে নেয়। ইচ্ছে করে এক ছুটে পালিয়ে গিয়ে এই লজ্জা, অস্বস্তি থেকে রেহাই পেতে। কিন্তু যা বেয়াদবি করার এতোক্ষন তো করেই ফেলেছে, এখন আবার অভদ্রের মতো পালিয়ে গিয়ে বেয়াদবির চূড়ান্ত ঘটাতে মন সাই দেয়না। অস্বস্তিতে গাঁট হয়ে লজ্জিত, অবনত স্বরে বলে,

“দুঃখিত। আমি আসলে বুঝতে পারিনি।”

নিরবে এতোক্ষন দুজনের ঝগড়া দেখতে থাকা দিলশান আরা ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন,

“মাঝে মাঝে তোমাদের দুটোর ঘাড়ে যে কোনো ইবলিশ শয়তান ভর করে আল্লাহ ভালো জানে। যাইহোক, এবার বলো আমার ছেলের সাথে বিয়েতে আর কোনো আপত্তি নেই তো তোমার? তোমরা এ যুগের ছেলে-মেয়ে যথেষ্ট স্মার্ট। তাই কথাটা সরাসরিই জানতে চাইছি।আশা করি তুমিও কোনো ভনিতা ছাড়াই সরাসরি মনের কথায় বলবে।”

যতটা স্মার্ট হলে এভাবে পাত্র পক্ষের সামনে, বাবা-মায়ের সামনে অকপটে বিয়ের জন্য রাজি এই কথাটা স্বীকার করা যায় এই যুগের মেয়ে হয়েও এতোটা স্মার্ট অতসী এখনো হয়ে উঠতে পারেনি। তাই লজ্জায় তখনও অবনত মস্তকে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে। দিহান আড়চোখে অতসীর নিরব মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে ওঠে,

“থাক মা! বাদ দাও। রাজি না থাকলে এভাবে জোর করে কাউকে রাজি করাতে হবেনা। সবার সব চাওয়া কী আর সবসময় পূর্ণতা পায়? ভেবে নাও তোমার এই চাওয়ায় ভুল ছিল তাই পছন্দের মেয়েকে পুত্রবধূ করতে পারোনি। অন্য জায়গায় মেয়ে দেখো। দরকার পরলে আরও হাজারটা মেয়ে দেখব। সেই হাজারের মাঝে একটাও কী তোমার পছন্দ হবেনা!”

বলতে বলতে বসা থেকে পূণরায় ওঠে দাঁড়ায় দিহান। অতসী তড়িৎ লজ্জা ভুলে মাথা তুলে তাকায়। ফট করে বলে ওঠে,

“আমি রাজি।”

সাথে সাথে দিহানের ঠোঁটের কোণে বিশ্ব জয়ের হাসি ফুটে ওঠে। দৃষ্টি শব্দ করে হেসে টিপ্পনি কেটে বলে,

“বাবাহ! এতো তাড়াতাড়ি মত পাল্টে গেল? কে যেন একটু আগেই বলছিলো দুনিয়ায় ছেলের অকাল পরলেও আমার ভাইয়ের মতো ক্যারেক্টারলেস ছেলের সাথে বিয়েতে রাজি হবেনা?”

সাথে সাথে ছোট-বড়ো সকলের মাঝে হাসির হিরিক পরে যায়। পূণরায় লজ্জায় জড়োসড়ো হয় অতসী। এবার আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হয়না তার পক্ষে। পালিয়ে বাঁচে লজ্জা থেকে।

বড়োরা সবাই মিলে যখন বিয়ের দিন-রাতিখ ঠিক করতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই হুট করে দিহান বলে বসে বিয়েটা সে আজ এই মুহূর্তেই সেড়ে ফেলতে চায়। সাদেক, দিলশান আরা, দৃষ্টি, রক্তিম তার এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে নারাজ হয়ে তাকে হাজারবার বুঝানোর চেষ্টা করলেও দিহান মানতে নারাজ। সে আজ এই মুহুর্তে বিয়ে করবে মানে করবেই। অন্যথায় আর কখনো তার সামনে যেন কেউ বিয়ের কথা না তুলে। দিহানের এমন সিদ্ধান্তে অতসীর বাবা প্রথমে অমত পোষণ করলেও শেষ পযর্ন্ত যখন সাদেক সাহেব কথা দেয়, বিয়ে আজ হলেও অতসীকে আজকেই উঠিয়ে নিবেনা। পরবর্তীতে দিন-তারিখ ঠিক করে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমেই তারা বউ উঠিয়ে নিবে, তখন খালেদ সাহেবও রাজি হয়। সেই অল্প সময়ের মাঝেই দিহান রক্তিমকে নিয়ে বাইরে গিয়ে অতসীর জন্য টুকটুকে একটা লাল বেনারসি সহ টুকটাক প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে নিয়ে আসে। শিউলি বেগম যখন দিহানের কিনে আনা জিনিস গুলো নিয়ে অতসীর সামনে গিয়ে বলেন, আজকেই তার বিয়ে সেই সময় থেকেই সে এক ঘোরের মাঝে আছে অতসী। যে ঘোর থেকে এখনো বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে।

রোদসীকে রক্তিমের কোলে দিয়ে একমাত্র ভাইয়ের হবু স্ত্রীকে সাজানোর দায়িত্বটা নিজ হাতে তুলে নেয় দৃষ্টি। মনের মাধুরী মিশিয়ে অল্প সময়ের মাঝেই নব বধূর রূপে অতসীর শ্যামা বরণ দেহটাকে অপরূপ সাজে সজ্জিত করে ড্রয়িং রুমে নিয়ে দিহানের পাশে বসিয়ে দেয়। আড় চোখে একপলক দিহান অতসীর পানে তাকিয়ে ফের নজর হটিয়ে অন্যদিকে ফিরে চুপিচুপি অতসীর কানে কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,

” এতোদিন শুধু শুনেছি বাসরঘরে বিড়াল মারে। সেই বিড়াল মারার লোভ সামলাতে না পেরেই বিয়েটা আজকেই সেড়ে ফেলার এতো তাড়া আমার। বি রেডি, সুইটহার্ট! একটু পরেই কিন্তু দুজনে মিলে একসাথে বিড়াল মারার মিশনে নামব।”

কানের কাছে আচড়ে পরা অপ্রিয় হয়েই অদ্ভূত প্রিয় মানুষটার উষ্ণ নিঃশ্বাস, ভরাট স্বরের ফিসফিসানো আওয়াজ আর কথার ধরণ নিমিষেই কাঁপন ধরায় অতসীর সর্বাঙ্গে। অজানা এক ভয়, লজ্জায় আর অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস করে ওঠে। দুহাতে খামচে ধরে শাড়ির আঁচল। খেয় হারিয়ে নাম না নাজা অদ্ভূত এক অনুভূতির দোলাচলে ভাসতে ভাসতেই সম্মুখিন হয় দীর্ঘ প্রতিক্ষার সেই মুহূর্তের। ঘোমটার আড়ালে থাকা সজ্জিত কাঁপা চোখ দুটো মেলে তাকাতেই দেখতে পায় উৎসুক কয়েক জোড়া নজর তার দিকেই তাকিয়ে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় কবুল শোনার। সব কিছু ছাপিয়ে হুট করেই বুকের ভিতরটা হাহাকার করে ওঠে অতসীর। চোখ দুটো আষাঢ়ের জলে টইটুম্বর দীঘির ন্যায় টলমলে হয়। কবুল শব্দটা উচ্চারণ করলেই তো তার পুরো জীবনটা বদলে যাবে। পর হয়ে যাবে বাবা-মা। আপন ভিটে, আপন মানুষ সব ছেড়ে চলে যেতে হবে তাকে সম্পূর্ণ অচেনা অজানা এক মানুষের হাত ধরে একদম অপরিচিত একটা পরিবেশে। এই যন্ত্রণা যে কতটা ভয়াবহ তা একটা মেয়ে ব্যতিত আর কারো বোঝার ক্ষমতা নেই। মনের দুঃখটাকে মনে চেপে না রেখে অতসী কাঁদে। কান্না রূপে চোখের পানিতে ঝরিয়ে দেয় বুকে চেপে থাকা কষ্ট গুলোকে। একমাত্র মেয়ের কান্না দেখে আড়ালে দাঁড়িয়ে শিউলী বেগম মুখে আঁচল চেপে বোবা কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। খালেল সাহেবের চোখ দুটোও ঝাপসা হয়। তবে অবাধ্য অশ্রুকণা গুলোকে শাসিয়ে গাল বেয়ে গড়িয়ে পরা থেকে বিরত রাখেন। গভীর একটা নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে এসে মেয়ের মাথায় স্নেহের হাত রাখেন। বাবার দিকে জল ভরা চোখে তাকিয়ে থেকেই অতসী সকলের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কাঁপা সুরে বলে, “কবুল।” পরপর তিনবার কবুল বলার পরই সকলে এক সুরে আলহামদুলিল্লাহ বলে নজর দেয় দিহানের দিকে। দিহান চোখ তুলে সকলের উৎসুক মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে গড়গড় করে উচ্চস্বরে পরপর তিনবার কবুল বলে দেয়। সাদেক সাহেব ছেলের এহেন নির্লজ্জতা দেখে চোখ পাকিয়ে তাকায়। কিছুটা নিকটে এসে কন্ঠ খাঁদে নামিয়ে কঠিন সুরে বলেন,

“তোর মতো নির্লজ্জ আমি বাপ জন্মে দেখিনি। কবুল বলতে বলেছে তাই বলে এভাবে এক নিঃশ্বাসে বলে দিবি? খুব তো লাফাতি এতোদিন বিয়ে করবনা বলে! আজ তবে এতো তাড়া কিসের?”

বাবার কথায় নির্লজ্জের মতোই হাসে দিহান। হেসে হেসেই জবাব দেয়,

“রাত হয়ে যাচ্ছে তো বাবা! তোমার পুত্রবধূ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবেনা?”

অতিষ্ঠ ভঙ্গিতে সাদেক সাহেব মাথা নাড়িয়ে সরে যায় সেখান থেকে। বাবা, ভাইয়ের এমন কান্ড দেখে দৃষ্টি মুখ লুকিয়ে হাসে। নজর ঘুরিয়ে তাকায় পাশেই গম্ভীর মুখে রোদসীকে বুকে আগলে নিয়ে বসে থাকা রক্তিমের দিকে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে ডাকে,

“শুনছেন!”

“বলো।” ভরাট স্বরে সামনের দিকে তাকিয়েই জবাব দেয় রক্তিম। দৃষ্টি ভীষণ আহ্লাদী সুরে আবদার করে,

“আমার না আবার বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে। আবার আপনার নামে কবুল পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। চলুন না আবার বিয়ে করি আমরা!”

বউয়ের এহেন ছেলেমানুষি আবদারে খুব বাজেভাবে চোখ-মুখ কুঁচকে নেয় রক্তিম। বিরক্তি নজরে তাকিয়ে বলে,

“বুড়ো বয়সে কী পাগলে পেয়েছে? দুই বাচ্চার মা হয়ে এখনো বিয়ের শখ মিটেনি?”

“মিটবে কিভাবে? বউ সেজেছিলাম আমি? দিয়েছিলেন বেনারসি কিনে? বাপের টাকায় কেনা সাদামাটা একটা থ্রি-পিস পরেই তো আসতে বাধ্য হয়েছিলাম আপনার বাড়িতে।”

কন্ঠে ভীষণ অভিমান জড়িয়ে জবাব দেয় দৃষ্টি। প্রিয় তমার অভিমান বুঝতে পেরেও রক্তিম কোনো পতিক্রিয়া দেখায়না। এক বিন্দু চেষ্টা করেনা অভিমানী স্ত্রীর অভিমান ভাঙানোর। যা দেখে দৃষ্টির অভিমান আকাশ ছুঁই।

__________

শীতের রুক্ষতা বিদায় নিয়েছে। বসন্তের আগমনে প্রকৃতি ফিরে পেয়েছে নব যৌবন। পাতাঝরা গাছের দিকে তাকালে চোখ ঝলসে যায় শিমুল,পলাশের আগুন ঝরা রূপের মোহে। ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ানো মধু লোভী ভ্রমরের গুঞ্জন আর দখিনা হাওয়ার সাথে ভেসে আসা মিষ্টি সুভাষ সর্বত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তা। ঝিম ধরানো অলস দুপুরে কুকিলের মিষ্টি সুরের কুহুতানে মন যেন হারিয়ে যায় ভিন্ন এক জগতে। সবুজ মাঠের উপর ছড়িয়ে থাকা ঘাসগুলো বয়ে আসা হাওয়ার স্পর্শে দুলে উঠে গান গায়। কোথাও দূরে বুনো ফুলের বাগানে খেলা করছে একজোড়া প্রজাপতি।তাদের রঙিন ডানা যেন প্রকৃতির ক্যানভাসে আঁকা এক মোহনীয় চিত্রকর্ম।

রোদ্রিক স্বভাবে যতটা ছটফটে ছিল রোদসী হয়েছে তার সম্পূর্ণ বিপরীত। মেয়েটা এমনিতে একদম শান্ত। ছোট্ট আদুরে মুখটাই সর্বদা হাসি লেপ্টে থাকে। তবে বিপত্তি ঘটে ঘুম ভাঙার পর। দিন আর রাত নেই। যখনই ঘুম থেকে উঠবে তখনই কেঁদেকেটে পুরো বাড়ি মাথায় করে রাখবে। আজও বারোটার দিকে ঘুমিয়েছিল রোদসী। মেয়েকে বিছানার মাঝখানে শুইয়ে দুইপাশে কোলবালিস রেখে দুপুরের রান্নাটা সেড়ে নিচ্ছেল দৃষ্টি। ঘন্টা গড়াতে না গড়াতেই রান্নাঘরে থেকেই শুনতে পায় মেয়ের কান্নার আওয়াজ। দৈবাৎ রান্না ফেলে ছুটে যায় দৃষ্টি। কোলে নিয়ে মৃদু দোল খাওয়াতে খাওয়াতে বিভিন্ন আদুরে কথায় থামাতে চায় মেয়ের কান্না। কিন্তু মায়ের আদুরে ডাক ছোট্ট রোদসীর কান অব্দি পৌঁছালে তো! সে ব্যস্ত তার আপন ভঙ্গিতে চোখ-মুখ খিঁচিয়ে গলা ফাটিয়ে কাঁদতে। এর মাঝেই আবার বেজে ওঠে কলিং বেল। রেহানা বেগম তখন যোহরের নামাজে দাঁড়িয়েছে। ইতি গিয়েছে অহির স্কুলের প্যারেন্ট’স মিটিংয়ে। আর কাকলির মা! সে তো সেই। কোনোমতে দৃষ্টিকে তরকারির জন্য সবজি কেটেকুটে দিয়ে ফড়িং এর মতোই উড়াল দিয়েছে। এবার সে ক্ষিদেয় পেটে টান পরার আগ পযর্ন্ত এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরে ঘুরে পুরো কলনির খবর প্রচার করবে।দৃষ্টি পরে যায় মহা বিপাকে। কী করবে এখন সে? মেয়ের কান্না থামাবে না কী দরজা খুলে এই ভর দুপুরে কে এসেছে দেখবে? কোনো উপায় না পেয়ে শেষমেশ অধীর হয়ে কাঁদতে থাকা মেয়েকে কোলে নিয়েই এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে। দেখতে পায় রক্তিমের অফিসের দৃষ্টির পরিচিত একজন স্টাফ একটা বক্স হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে। জিজ্ঞাসু নজরে দৃষ্টি তাকাতেই অমায়িক হেসে বক্সটা বাড়িয়ে দিয়ে লোকটা জানায়,

“স্যার পাঠিয়েছেন ম্যাম।”

“কি এতে?”

“তা তো আমি জানিনা। স্যার বলল এটা আপনাকে দিয়ে যেতে তাই নিয়ে এলাম।”

দৃষ্টি ভাবে হয়তো অফিসের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফাইলটাইল বোধহয় হবে এতে। সেই ভেবেই লোকটাকে রিকোয়েস্ট করে কষ্ট করে যেন বক্সটা রক্তিমের স্টাডি রুমে রেখে যায়। কথামতো লোকটা বিনয়ী ভাবে কাজ সেড়ে চলে যেতেই দৃষ্টি পূণরায় ব্যস্ত হয় মেয়েকে সামলাতে।রেহানা বেগমের নামাজ শেষ হলে রোদসীকে ওনার কোলে রেখে সে নিজেও গোসল সেড়ে নামাজ পড়ে খেয়েদেয়ে আবার ব্যস্ত হয়ে পরে সংসারিক কাজে। বেমালুম ভুলে বসে বক্সটার কথা। সন্ধ্যার পর কাজ থেকে অবসর মিলতেই মনে পরে সেই কথা। রোদসী তখন ব্যস্ত পালা বদল করে দাদি আর ফুপির কোলে চড়তে। এই ফাঁকে দৃষ্টি রক্তিমের স্টাডি রুমে গিয়ে বক্সটা কতক্ষণ খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে।কী আছে এর ভিতর? খুলে দেখবে! খুললে আবার যদি বদ লোকটা এসে তার উপর চ্যাঁচামেচি করে? খুলবে না কি খুলবেনা, দুটানাই ভোগে শেষ পযর্ন্ত কৌতূহল দমাতে না পেরে খুলেই ফেলে। বক্সের ভিতর আবার আলাদা আলাদা কত গুলো প্যাকেট। উপরে ছোট্ট একটা কাগজ ভাজ করে রাখা। কপাল কুঁচকে কাগজটা হাতে নিয়ে ভাজ খুলতেই দেখতে পায় রক্তিমের হাতের গুটি গুটি অক্ষরে লেখা, “রোদসীর আম্মুর জন্য।” মানে তার জন্য এগুলো পাঠিয়েছে রক্তিম? কী আছে এতে? সারপ্রাইজ গিফট! এজন্যই বোধহয় নিজের হাতে না দিয়ে ঐ লোকের মাধ্যমে পাঠিয়েছে। বিয়ের এতো বছর পর তবে সাহেবের সুবুদ্ধির উদয় হলো বুঝি? মনে পরল বউকে সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা? আনন্দ, উত্তেজনায় মৃদু মৃদু কাঁপছে বুকটা। তর সইছেনা প্যাকেট গুলোর ভিতর কী আছে দেখার জন্য। একে একে সব গুলো প্যাকেট খুলতেই দৃষ্টি অবাধ বিস্ময়ে, অত্যাধিক আনন্দে জমে যায়। একটা টুকটুকে লাল বেনারসি শাড়ি, খুবই সিম্পল অথচ ভীষণ নজরকাড়া একটা গলার হার, এক জোড়া ঝুমকা, এক জোড়া বালা সাথে আরও কিছু গোল্পপ্লেট চুড়ি, একটা কাচা বেলি ফুলের গাজরা, আর এক জোড়া নূপুর। অবাক নজরে জিনিস গুলো দেখতে দেখতে ভীষণ আবেগি হয়ে ওঠে দৃষ্টি। প্রাপ্তির খুশিতে ছলছল হয় চোখ দুটো। কাঁপা হাতে বেনারসির ভাজ খুলতেই বেরিয়ে আসে আরেকটা চিরকুট। যেটায় লেখা,

“ঐদিন বললেনা, বউ সাজার খুব ইচ্ছে! সেদিনের পর থেকেই আমার নির্লোভ মনটাও ভীষণ লোভী হয়ে ওঠেছে। আমার হৃদমোহিনীকে বউ রূপে দেখার তীব্র তৃষ্ণা জেগেছে দুচোখে। আজ এই বসন্তের মন কেমন করা দিনে বউ সাজে নিজেকে সাজাবে? শুধুই আমার জন্য। আমি দুচোখ ভরে দেখব আমার সুখের রানীকে। অপলক তাকিয়ে দেখব ঠিক ততক্ষণ, যতক্ষণ পযর্ন্ত তৃষ্ণার্ত চোখ দুটোর তৃষ্ণা না মিটে, লোভী মনটার লোভ না ফুরোই।”

ঝাপসা চোখে দৃষ্টি চিরকুটটা দেখে। বারবার দেখে বারবার পড়ে। পরপর শাড়িটা গভীর আবেশে বুকে জড়িয়ে ধরে প্রাপ্তির উচ্ছাসে মৃদু কাঁপতে থাকা সুরে বিরবির করে,

“আমার প্রাপ্তির শূণ্য ঝুলিটা আজ পরিপূর্ণ।এই এক জীবনে আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই আপনার থেকে।”

_______

পরিশিষ্ট্য:

নিশুথী রাতের গভীরে ঢাকা পরেছে যান্ত্রিক শহরতলীর কোলাহল। রূপালী জোছনার থৈ থৈ আলোয় এক অদ্ভুত স্নিগ্ধতায় ভরে উঠেছে চারপাশ। বসন্তের হালকা বাতাসে দূর হতে ভেসে আসছে বাহারী ফুলের মিষ্টি গন্ধ। জোছনার নরম আলো গায়ে মাখিয়ে রক্তিম-দৃষ্টি হাঁটছে পাশাপাশি। দূর আকাশের নিটোল চাঁদটাও যেন সঙ্গী হতে চাইছে তাদের। দৃষ্টি সেজেছে। মনের মাধুরী মিশিয়ে নিজেকে রাঙিয়ে তুলেছে বধূ রূপে। লাল বেনারসিতে তার মুখে ছড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত মায়াবী দীপ্তি। ঠোঁটের কোণে লাজুক হাসি। সরল চাহনি তারাখচিত আকাশপানে। অদূর আকাশে নজর রেখেও দৃষ্টি খুব করে অনুভব করে পায়ে পা মিলিয়ে পাশাপাশি হাঁটতে থাকা খ্যাতমান পাষাণ পুরুষটার মুগ্ধ নজর তার পানেই। তথাকথিত সেই হৃদয়হীন পুরুষটার বুকের বা-পাশে প্রিয়তমা স্ত্রীর এই নবরূপ এক অদ্ভুত শিহরণ জাগিয়ে তুলেছে। ঠোঁটের কোণের লাজুক হাসিটা দিশাহারা করছে বারবার। মাথাচারা দিয়ে উঠছে কিছু লাগামহীন চাওয়া-পাওয়া। বেসামাল অনুভূতির যন্ত্রণায় ছটফটিয়ে উঠছে তনুমন। শব্দহীন পায়ে হাঁটতে হাঁটতেই নিজের বলিষ্ঠ হাতের মুঠোয় যত্ন করে ধরে রাখা দৃষ্টির পেলব হাতে অল্প বল প্রয়োগ করে রক্তিম। তৎক্ষণাৎ থেমে যায় দৃষ্টির চলন্ত পা জোড়া। প্রিয়তম অর্ধাঙ্গের প্রতি এক অব্যক্ত টানের পূর্ণ স্পন্দনে স্পন্দিত হয় হৃদয়। শরীর জুড়ে এক অদ্ভুত কম্পন সৃষ্টি হয় রক্তিমের মাদকতা মেশানো মুগ্ধ চাহনির তোপে। রক্তিম আকন্ঠ ডুবে যায় তার হৃদয় রাজ্যের হৃদমোহিনীর ঐশ্বরিক রূপের মোহে। ভীষণ যত্ন করে আর একটু মিশিয়ে নেয় নিজের সাথে। ঘুচিয়ে দেয় দুজনের মাঝে থাকা অবশিষ্ট দূরত্বটুকু। আকুল হয়ে ডাকে,

“দৃষ্টি!”

রক্তিমের কন্ঠে মিশে থাকা এই আকুলতা তীব্রভাবে ঝঙ্কার তুলে দৃষ্টির তনুমনে। ভালোবাসা নামক স্বর্গ সুখের অনুভূতিতে ভারী হয়ে আসে নিঃশ্বাস। উত্তাল সমুদ্রের ফেনিল ঢেউয়ের ন্যায় বুকের ভিতর আচড়ে পরে এক অসহ্যকর সুখ সুখ অনুভূতি। নিভু নিভু স্বরে কোনোমতে উচ্চারণ করে,

“হু!”

ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি নিয়ে রক্তিম তাকিয়ে দেখে তার হৃদয়চারিনীর এই অস্থিরতা। কন্ঠে গভীর প্রেম মিশিয়ে বলে,

“রক্তিম শিকদার নামক এক পুরুষের পাথুরে হৃদয়ে লুকায়িত সমস্ত ভালোবাসা দেনমোহর ধার্য করিয়া উক্ত পুরুষ আপনাকে তার ভালোবাসার স্বর্গরাজ্যের একচ্ছত্র রানী বানানোর প্রস্তাব রাখিয়াছে। আপনি কী সেই প্রস্তাবে রাজি আছেন? রাজি থাকলে বলুন কবুল।”

নব্য প্রেমে পরা কিশোরীর ন্যায় দৃষ্টি তখন এক রাশ ভালো লাগা, ভালোবাসা আর লজ্জালু অনুভূতিতে লুটুপুটি খেয়ে আরক্তিম মুখটা লুকাতে ব্যস্ত হয় রক্তিম নামক পাষাণ পুরুষের বক্ষপিঞ্জরে। সেভাবেই অনুভূতির জোয়ারে হারিয়ে যেতে যেতে লাজুক স্বরে শুধায়,

“কবুল।”

সমাপ্ত