#একি_বন্ধনে_জড়ালে_গো_বন্ধু
#পার্ট_১৫
#কাজী_সানজিদা_আফরিন_মারজিয়া
লঞ্চ থেকে যখন নামে তখন শেষরাত। গাড়িঘোড়া পাওয়া দুষ্কর। তাও শাহরিয়ার ঘুমন্ত চালকদের জাগিয়ে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে দুটো ভ্যান নিলো বাড়ি অব্দি যাওয়ার জন্য।
পুষ্পি বলল, “এখানে বসবো কেমন করে, আর যাবই বা কেমন করে? পরে যাব না?”
শাহরিয়ার ফিক করে হেসে দিল। পুষ্পি বিরক্ত হয়ে মনে মনে ভাবে, ‘মানলাম মানুষটার হাসি সুন্দর। তাই বলে কারণে অকারণে বেহুদা হাসবে? আশ্চর্য!’
শাহরিয়ার হাস্যজ্বল মুখে ভ্যানে ব্যাগগুলো উঠাতে উঠাতে বলে, “তোমার এমন জলজ্যান্ত স্বামী থাকতে, কিসের দুশ্চিন্তা সুন্দরীতমা? আগলে রেখে দিব না?”
পুষ্পি আড়চোখে আশপাশে তাকায়, কেউ দেখল কি-না, শুনল কি-না! কেউ দেখার কিংবা শোনার উপায় নেই। শাফিন বাকি সদস্যদের নিয়ে এক ভ্যানে আগে চলে গিয়েছে। পেছনে মালামাল নিয়ে পুষ্পি আর শাহরিয়ার রইল। গ্রামের রাত জনমানব শুন্য প্রায়। পুষ্পি সতর্কতার সহিত বলল, “ইশশ! এত আজেবাজে কথা বলেন আপনি! মুখে একদমই লাগাম নেই।”
শাহরিয়ার আরো রসিকতা করে বলে, “যা-ই বলিনা কেন, নিজের বউকেই তো বলছি, অন্যকাউকে বলছি না। লাগাম টানার প্রশ্নই আসে না। দিল খুলে দিলের কথা কইতে হয়, বউ আমার।”
এখানেই খান্ত হয় না। ভ্যানওয়ালা মামাকে সালিশ মেনে বলে, “কি কও মামা? ঠিক বলছি না? বউয়ের কাছে সাতখুন মাফ হইতে হয় না?”
ভ্যানওয়ালা মামা শাহরিয়ারের উপযুক্ত সালিশ-ই হলো। শতভাগ সম্মতির সহিত বললে, “একছের হাছা কইছেন মামু।”
পুষ্পি লাজে মরে, “ভ্যানওয়ালা মামাকে টানার কি প্রয়োজন ছিল আবার? বেশরম পুরুষ মানুষ। মহা যন্ত্রণা!”
শাহরিয়ার পুষ্পিকে ভ্যানের একপাশে বসতে সাহায্য করে। পুষ্পি খুব অস্বস্তি নিয়ে বসে। শাহরিয়ার আশ্বাস দেয়। তারপর নিজে অন্যপাশে বসে। পুষ্পির হাত ধরে থাকে।
কাঁচাপাকা রাস্তা। দুপাশে ঘন বন। ভ্যানে লাগানো ছোট্ট একটা লাইটের আলোর সহায়তায় ভ্যানওয়ালা মামা রাস্তার দিক নির্নয় করে চলছে ধীর গতিতে। ফিনফিনে শীত, ধূসর কুয়াশা ভেদ করে এগিয়ে চলে একটা ক্ষুদ্র যানবাহন।
শাফিনদের ভ্যান ততক্ষণে নাগালের বাহিরে। বাগানের ভেতর থেকে নাম না জানা অসংখ্য পোকামাকড়ের ডাক ভেসে আসে। পুষ্পির ভ্যান ভ্রমণটা ভালো লাগছে সেই সাথে ভয়ও লাগছে। তাও সে চুপ করে থাকে। কোনো বাক্য ব্যায় করে শাহরিয়ারের বেফাঁস কথার আক্রমণে পরতে চায় না। কিন্তু শাহরিয়া কি আর পুষ্পির কথার অপেক্ষায় বসে থাকে? সে নিজেই নিজের ঝুলিতে অসংখ্য কথা জমিয়ে রাখে। সময় হলেই একের পর এক কথা বের করে আনে। নিজ থেকে জানতে চাইল, “ভয় লাগছে?”
পুষ্পি অহংকারের সহিত বলে, “মোটেও না। ভয় পাব কেন? আপনার মতো ভীতু নাকি আমি?”
ভ্যানওয়ালা মামা মৃদুমন্দ হাসে। যদিও দুজনের কেউ সেই হাসি দেখতে পায় না। তবে সে এই দম্পতির খুনসুটি উপভোগ করছে।
কথায় আছে না? অহংকার পতনের মূল। পুষ্পির দাম্ভিকতার পতন ঘটল অতি শীঘ্রই। পায়ে কি লাগল কে জানে। সে আর্তনাদ করে বলল, “ভ্যান থামান, ভ্যান থামান।”
শাহরিয়ার জানতে চাইল, “কেন?”
পুষ্পি কাদুকাদু হয়ে বলল, “কেন মানে? আপনি তো আপনার একমাত্র বউয়ের মরনকালেও ‘কেন কেন’ করবেন! পায়ে কি কামড়াল যেন।”
পুষ্পির কথার ধরণ মজার শুনালেও শাহরিয়ার এটা সিরিয়াসলিই নিল। বন-জঙ্গলের রাস্তা ভালো মন্দ বলা যায় না। তাই দ্রুত ভ্যান থামাতে বলে। ভ্যান থামতেই বৈদ্যুতিক গতিতে নেমে পুষ্পির পাশে যায়। মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট মেরে দেখতে চায় কোথায় কি। যা দেখতে পায় তা দেখে একটু হাসি পেলেও মনে প্রশান্তি বয়ে যায়। বনজঙ্গলের রাত, যা কিছু হয়ে যেতে পারত। এতটা নিশ্চিতে পা ঝুলিয়ে বসে যাওয়া ঠিক নয় বুঝতে পারল।
পা থেকে লাল পিঁপড়াটা ছাড়িয়ে পুষ্পির সামনে ধরল। পুষ্পি এবারও লাজে রাঙা হলো। ইশ এত ভীতু!
শাহরিয়ার বলল, “জনাবা? আপনি অনুগ্রহ করিয়া আপনার পা দুখানা উপরে উঠাইয়া বসুন৷ আপনার ঝুলন্ত পা আমায় দুশ্চিন্তায় মারিবে।”
পুষ্পি মৃদুমন্দ হেসে বাধ্য-রমনীর মতো স্বামীর আদেশ মান্য করল। শাহরিয়ারও নিশ্চিন্তে বসল।
এই প্রথম বোধহয় ভ্যানওয়ালা মামা শাহরিয়ারের যত্ন উপলব্ধি করতে পারে। খানিক ইতস্তত করেই জানতে চায়, “মামু মামিরে মেলা ভালো পান, না? মেলা যতন করেন।”
শাহরিয়ার গৌরবের সহিত বলে, “আমার আহ্লাদের বউ, মামা। যতন না করে উপায় কই?”
এরপরের রাস্তাটা পিনপতন নিরবতায় অতিবাহিত হয়। খুটখুট আওয়াজ তুলে একটি প্রণয়ংকিত যানবাহন এগিয়ে চলে, সেই সাথে এগিয়ে চলে একগুচ্ছ কুয়াশায় মাখামাখি প্রণয়াসক্ত দুটো প্রাণ।
ভ্যান দুটো যখন শাফিনদের বাড়ি পৌছায় তখন ভোর হবে হবে ভাব। আকাশের বুক পকেটে তখনও নিগূঢ় ঘুমে নিমজ্জিত তেজস্বী সূয্যিকন্যা।
পাখির কলরবে মাতোয়ারা হয়ে উঠতে চাচ্ছে প্রকৃতি। গৃহপালিত হাস-মুরগী তাদের ঘর হতে মুক্ত করা আকুল আবেদন জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। মোরগের কঠর ডাকে জেগে উঠার প্রস্তুতি নেয় কিছু নরম প্রাণ। সুমধুর ফজরের আযানের অপেক্ষায় কিছু আল্লাহ ভীরু প্রাণ।
এই কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরবেলাটা পুষ্পি মন-প্রাণ-চোখ উজাড় করে দেখে। নাকে, ঠোঁটে আর চোখে এসে লাগা ভোরের শিশির ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেয়। এত সুন্দর আল্লাহর সকাল। এত মিষ্টি আর প্রেমময় এই ভোর!
শাহরিয়ারদের আশ্চর্য করতেই বুঝি শাফিনের মা-বাবা অর্থাৎ শাহরিয়ার আর মুনমুনের মামা-মামী বেড়িয়ে আসে। মধ্যবয়সী দুজন সুন্দর মানুষ যেন শহর হতে আগত নিজ রক্তকে সাদরে অভ্যর্থনা জানাতেই সারারাত নির্ঘুম কিংবা আধোঘুম-আধোজাগরণে কাটিয়েছে।
সাবেরী খাতুনের আমোদ ছিল দেখার মতো। তিনি ভাই আর ভাবীকে প্রচন্ড আদরে জড়িয়ে ধরে। ভাবি তো তার বড়ো বোনের মতো। আর ভাই? সে তো এ জগতে তার প্রধান গার্জিয়ান। ভাইয়ের অতি আদরের বোন সে। এই মিলন মেলাতেও সকলের চোখ ছলছল করে ওঠে। আসমানের বুকচিতে বেড়িয়ে আসা তেজী সূয্যিটা অঙ্গে এসে লাগে, লাগে মননেও। কি পরিতৃপ্ত মনোরম মিলন।
শাফিন বাদে ছোট তিন সদস্য বড়োদের কদমবুসি করে। শাহরিয়ারের আর মুনমুনের চাইতেও বেশি আকর্ষণ আর আদর কাড়ে পুষ্পি। কারণ বউ হয়ে তার প্রথম সাক্ষাৎ।
সূর্যের প্রথম সংস্পর্শে এক মিলন মেলা বয়ে যায় সুন্দর সকালে। এরপর সকলে বাড়ির ভেতরে যায়। সারা রাত প্রায় নির্ঘুম কাটিয়ে সকলে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। শাহরিয়ারের মামী আছমা সবাইকে এক এক করে রুম দেখিয়ে দেয়। দখিনা বাতাসের শীতল হাওয়া দোল খায় যেই রুমটায় সেটা বরাদ্দ হলো পুষ্পি আর শাহরিয়ারের জন্য।
রুম পেয়েই শাহরিয়ার শুয়ে পড়ল। লঞ্চে সবাই একটু একটু ঘুমালেও সে পুরোপুরি নির্ঘুম রাত যাবন করেছে৷ পুষ্পিকে বকেঝকে ঘুম পারিয়েছে কিন্তু সে হেঁটে-বসে রাত কাটিয়ে দিয়েছে। আরামদায়ক পরিবেশ পেয়ে তার শরীর আর একটুখানিও অপেক্ষা করতে নারাজ ছিল। ঘুমাতে ঘুমাতে শুধু বলল, “পুষ্প? আসো, ঘুমাও তুমিও।”
গ্রামের মানুষজন সব জাগতে শুরু করেছে ততক্ষণে। চারদিকে খুটখাট আওয়াজ। মুসল্লীরা ফজরের নামাজ কায়েম করতে বের হচ্ছে একে একে। বাড়ির বয়স্করা উঠে হাস-মুরগি ছাড়ছে, কেউবা ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ অফুটন্ত ফুল জগতের সমস্ত সৌন্দর্য নিয়ে ফুটে উঠছে। এই সুন্দর সকালটা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে ইচ্ছে হলো না পুষ্পির। কিন্তু তাও নতুন পরিবেশে হুট করেই নিজের ইচ্ছেকে প্রশ্রয় দিতে পারে না সে। অনিচ্ছা সহিত কিছুক্ষণ শুলো। ঘুমন্ত শাহরিয়ারের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল৷ পুষ্পির মাথা ম্যাসেজ করার কৌশল মানুষটা বড্ড পছন্দ করে। ভাবতে ভাবতেই মৃদু হাসির রেখা ফুটে ওঠে মেয়েটার মুখে। তারপর ঠিক ওভাবেই, শাহরিয়ার কপালে হাত রেখে, নিজের অজান্তে ঘুমিয়ে পড়ে।
পুষ্পির ঘুম ভাঙে বুক চিতিয়ে বেড়িয়ে আসা আলো ঝলমলে সকালের হৈহৈ আওয়াজে। শাহরিয়ার তখনও ঘুমে। আওয়াজটা আসছে রান্নাঘর থেকে। পুষ্পি ফ্রেশ হয়ে অস্বস্তি নিয়ে সেদিকে যায়। গিয়ে দেখতে পায়, সাবেরী খাতুন, আসমা সহ আরো অনেক অচেনা মানুষ মিলে পিঠাপুলি বানাচ্ছে। শীতের অতিথি সকাল, আর পিঠাপুলি হবে না তা কি করে হয়!
পুষ্পি গিয়ে সালাম দিতেই সবার নজর ওর দিকে পড়ল। পাড়াপ্রতিবেশিরা একে একে ফিসফিসে উঠল, “শাহরিয়ার বউ নি গো হে?” “মাশাআল্লাহ, মেলা সুন্দর।” “ফুলের লাহান একছের।” “মোগো শাহরিয়ারের লগে মেলা মানাইছে।” “হে ছ্যামড়া কই? ওহনও ঘুমাইবো? খালা-মামীগো লগে দেহা-সাক্ষাত দিব না, নাকি?”
ভিন্ন জনের ভিন্ন ভিন্ন কথায় দিশেহারা পুষ্পি। সে কেবল হেসে হেসে মথা নাড়ছে। অতি দ্রুত আঞ্চলিক ভাষায় বলা কথাগুলোর বেশিরভাগেরই ভসবার্থ ধরতে পারছে না সে। একজন বলল, “বহ মা, বহ। খাড়াইয়া আছো কা? আহারে, সরম পাইতাছো? সরমের কিছু নাই, আমরা তোমার শাশুড়ীর লাহানই।”
আরেকজন বলল, “নতুন বউ মনেহয় আমরা গেরামের মানুষ দেইখা বইতে পছন্দ হইতাছে না। আমরা হইলাম কালাকুলা মানুষ!”
পুষ্পি যা বুঝল তাতেই জবাব দিল, “না, না, একদমই তা না। পছন্দ হবে না কেন? আপনারা তো আমার মায়ের সমতুল্যই।”
গর্বে বুকটা ভরে উঠল সাবেরী খাতুনের। কি দারুনভাবে সকল সুন্দর-অসুন্দর কথাগুলো সাদরে গ্রহণ করতে পারে মেয়েটা৷ ঠ্যাশ মেরে কথা বলা মহিলাটাও কিঞ্চিৎ অবাকই হলো বোধহয়। পুষ্পির দোষ ধরার খায়েশটা অপূর্ণ রয়ে যাওয়ায় খানিক অখুশিও হলো বৈ কি!
সাবেরী খাতুন সবাইকে যে কথাটা বলেন, এবারও তার ব্যতিক্রম করলেন না। তৃপ্ত হেসে বললেন, “আসলে আমার বউমা একটু চুপচাপ শান্তশিষ্ট স্বভাবের। একটু লাজুকও বটে। সবসময় একা একা থেকেছে তো, তাই হুট করে সবার সাথে মানিয়ে নিতে পারে না। কিন্তু ও আমার সোনার টুকরো মেয়ে। এত আদরের, কেউ না মিশলে বুঝবে না।”
প্রশান্তি মন ছেয়ে গেল পুষ্পির। এই মানুষটা সবসময় সকলে কাছে তাকে এভাবেই মহৎ হিসেবে উপস্থাপন করে। এমন করে উপস্থাপন করে যে কেউ আর কিচ্ছুটি বলার সুযোগই পায় না।
আসমার দুই পুত্রবধু অন্যত্র কাজ করছিল। তারা একে অপরকে বলল, “আম্মাকে দেখছো এরম কইরা সুনাম করতে জিন্দেগীতে?”
অপরজন বলল, “পারে তো খালি দোষ ধরতে।”
পুষ্পি বড়োদের ভেতর আর না থেকে শাফিনের এই দুই ভাবির কাছে গেল। প্রথমে ভাব আদান-প্রদান করল। একে অন্যের নাম জানল। ওরা তখন রান্নার কাটাকুটি করছিল। পুষ্পি জিজ্ঞেস করল, “ভাবি? আমি আপনাদের কোনো কাজে সহায়তা করি, আমায় বলুন কি করতে হবে? শুধুশুধু বসে থাকতে ইচ্ছে করে না।”
মেজোজন ঘুটঘুট করে বলে, “লোক দেহানো আহ্লাদ! ঢংয়ের কথা।”
বড়োজন হাতের ইশারায় চুপ থাকতে বলে মেজোজনকে। তারপর পুষ্পিকে বলে, “তোমার কিছু করন লাগবো না। বেড়াইতে আইছ, আমোদপ্রমোদ কইরা বেড়াও। আমরা তোমগো বাড়িত গেলে নাহয় যা করনের কইরো।”
পুষ্পি মৃদু হেসে সায় জানায়। ঠিক তখনই একটা ভারী সুন্দর দেখতে মেয়ে আসে বৈঠকে। এত সুন্দর যে একবার তাকালে দ্বিতীয়বার তাকানোর সাধ জাগে। কে এই মেয়ে?
সাবেরী খাতুন দেখে আহ্লদে আটখানা হয়ে ওঠে৷ উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “আরে চারু! আমার আম্মা! কেমন আছিস তুই?”
মেয়েটা হাস্যোজ্জ্বল মুখে জবাব দেয়, “খালা! আলহামদুলিল্লাহ। আমি ভালো আছি৷ তুমি কেমন আছো? কবে আসছো তুমি? তোমরা সবাই আসছো?”
নাম শুনে পুষ্পির মনে ধুরুধুরু কম্পন হয়। চারু! কোন চারু?
সাবেরী খাতুন চারুর কথার জবাব দেয়, “আজ ভোরেই এলাম। হ্যাঁ সবাই আসছি। এবার অনেকদিন থাকবোরে মা। শাহরিয়ার মাসখানেক ছুটি নিছে। বউমারে নিয়া প্রথম এলাম, সব ঘুরে যাব ভাবছি।”
চারু খানিক বিস্ময় নিয়েই যেন জানতে চাইল, “তোমার ছেলে বিয়ে করেছে খালা? ইশ! জানাইলা না!”
সাবেরী খাতুন উল্টো অভিযোগ করে বলে, “বেয়াদব মেয়ে! বিয়েটিয়ে করে এমন উধাও হলি, তোরে খুঁজে পাই কেমনে? তুই কবে এলি বাড়ি?”
চারু জবাব দেয়, “দশ-বারোদিন হবে খালা। চলে যাব। বেশি দিন থাকা হবে না আর।”
একটু থেমে বলে, “তোমার বউমারে দেখাবা না খালা?”
সাবেরী খাতুন ডাকে, “পুষ্পি, মা? এদিকে আসো।”
পুষ্পি কাছে যায়। অজানা অস্বস্তিতে হাত কাঁপে, বুক কাঁপে। কন্ঠ রোধ হয়ে আসে। চারুর মুখের হাসির রেখা পূর্বের ন্যায় বিরাজমান। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “মাশাআল্লাহ খালা। তোমার পুত্রের জন্য যথার্থ পুত্রবধূ এনেছ দেখি।”
এটুকু বলে পুষ্পির দিকে চেয়ে বলে, “আমি চারু…চারুলতা।”
পুষ্পিও প্রতিত্তুর করে, “আমি পুষ্পি, মুশফিরাত আনজুম পুষ্পি।”
চারুর হাসির রেখা প্রশস্ত হয়। কি যেন ভেবেচিন্তে বলে, “বাহ! মিফতাহুল শাহরিয়ার, মুশফিরাত আনজুম পুষ্পি! সুন্দর তো। তোমার মতোই সুন্দর তোমার নাম।”
ব্রাশ হাতে নিয়ে টিশার্ট আর টাউজার পরিহিত শাহরিয়ার ঠিক তখনই সেখানে এসে উপস্থিত হয়। ঘুমুঘুমু চোখ, অগোছালো ড্রেসআপ, এলোমেলো চুল কপাল জুড়ে, নিজের এই ছন্নছাড়া অবস্থা নিয়ে ড্যাম কেয়ার সে। গ্রামের এই দশবারোজন মিলে অযথা গসিপিং, অন্যদের নিয়ে সমালোচনা একদমই পছন্দ না তার। চেনা পরিচিত খালা-চাচিদের এভোয়েডও করা যায় না। সম্মানসূচক সালাম দিয়ে, দরজায় দাঁড়িয়েই পুষ্পিকে ডাকে, “এই পুষ্প….শোনো!”
শাহরিয়ারের কন্ঠ শুনে পুষ্পি আর চারু দুজনই পেছন ফিরে তাকায়।
(চলবে)……