এখানে সুখ ছোঁয়া যায় পর্ব-০৪

0
129

‘এখানে সুখ ছোঁয়া যায়’ পর্ব-৪

রিনিঝিনি বসার ঘরে এসে পরিবেশ দেখে বুঝল অনিরুদ্ধকে এখানে বসানো ঠিক হবে না। তাই সে সোজা অনিরুদ্ধকে নিয়ে গেল তাহমীদের রুমে। তাহমীদ রুমে ছিল না তখন। রিনিঝিনি আশপাশটা ভালো করে দেখে নিয়ে অনিরুদ্ধকে বলল,

-‘শুনুন! কেউ এসে যদি কিছু জিজ্ঞেস করে বা নাম পরিচয় জানতে চায় আপনি দয়া করে এখনই আসল পরিচয় দিবেন না। বলবেন, “তাহমীদের কাছে এসেছি” তাহমীদ হলো আমার বড় ভাই। এটা তারই রুম। আপনি অপেক্ষা করুন আমি দেখি বড় মা কে নিয়ে আসতে পারি কিনা। আসলে এখন সবাই তাকে এমন ভাবে ঘিরে রেখেছে যে সেখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসাটা একটু টাফ হয়ে যাবে আর কী!’

অনিরুদ্ধ কিছু বলল না। মাথা নাড়ল আলগা ভাবে। রিনিঝিনি রুম থেকে বের হয়ে হাঁফ ছাড়ে। তার এতক্ষণ দ’ম বন্ধ হয়ে আসছিল বারবার। এত বুক দুরুদুরু অনুভূতি তার এই প্রথমই হলো বোধহয়। জরিনাকে ডেকে রিনিঝিনি অনিরুদ্ধর জন্য নাশতা পানি নিয়ে যেতে বলল। তারপর ছুটল দাদীর ঘরে। সেখানেই বড় মা আছেন। যিনি অনিরুদ্ধের মা!

_________________________________

ঈশান বার কয়েক রুমঝুমের রুমের সামনে দিয়ে পায়চারি করেও রুমঝুমের এক ঝলক দেখা পেল না। তার একটু রা’গ হচ্ছে। মেয়েটা কিছুটা সময় চাইলেই কি পারত না একটু অপেক্ষা করতে! ফট করে চলে এলো!

ঊষান আছে মহা মুসিবতে। একটু পর তার অনলাইন ক্লাস আছে। এদিকে এক ফোঁটা নেট নেই। থাকবে কী করে? এতগুলো মানুষ কোথা থেকে উড়ে এসে আনলিমিটেড বাড়ির ওয়াইফাই চালাচ্ছে। এখন এমবি কিনতে হবে। আগে মোবাইল রিচার্জ করতে হবে। এদিকে বিকাশে নেই টাকা। ঈশানকে সেই কখন থেকে খুঁজছে একটু ফ্লেক্সি করে দিতে। অথচ ঈশান সব কিছু ভুলে তো রুমঝুমের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে।

নিচ তলায় আসতেই ছোট চাচার সাথে দেখা হলো তার। তিনি তাকে দেখে হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন।

-‘তোর ভাই কোথায়?’

-‘জানি না চাচা। ভাইকে আমিও খুঁজছি।’

-‘এত বড় হয়েছিস তোরা অথচ তোদের আক্কেল জ্ঞান হচ্ছে না কারোরই। তোরা কি আমাদের মুখ ডোবাতে চাইছিস নাকি?’

ঊষান অবাক হয়ে বলল,

-‘আশ্চর্য! তা কেন চাইব?’

-‘তাহলে দাঁড়িয়ে আছিস কেন! যা মজিদের সাথে যা। বড় ঘাট থেকে গলদা চিংড়ী গুলো জলদি নিয়ে আয়।’

একপ্রকার জোর জবরদস্তি করেই ছোট চাচা ঊষানকে মজিদের সাথে পাঠিয়ে দিলো ঘাটে। বেচারা ঊষান যেখানে ক্লাসের একটু দেরি হয়ে যাবে এই নিয়েই যা হাইপার ছিল সেখানে তার ক্লাসই করতে দিলো না আর ছোট চাচা। স্টুডেন্টস্ গুলো নিশ্চয়ই এখন সুযোগ পেয়ে ডিটার্জেন্ট ছাড়া ধুঁয়ে দিচ্ছে তাকে।

রুমঝুমকে এদিক ওদিক ঘুরঘুর করতে দেখে বেশ কয়েকটা মহিলা নিজেদের মধ্যে ফুসুর ফাসুর করছিল যে মেয়েটা কে! তখন তাদের কাছে এসে তখনকার মহিলাটা যিনি রুমঝুমকে তাহমীদের বউ কিনা জিজ্ঞেস করেছিলেন তিনি এসে বললেন,

-‘আরে ওটা বাড়ির বড় ছেলে তাহমীদের বউ। বলছে না আর কি কাউকে। আমি তো বুঝেই গেছি। এটা তাহমীদের বউই। তখন ওদিক দিয়ে যেতে দেখি জাপটা জাপটি করে দাঁড়িয়ে আছে দুজনে। চৌধুরীদের যা দেখছি বোঝা গেছে বিয়ে গো’প’ন করা বোধ হয় এদের কাজ। দাওয়াত দিয়ে মানুষ খাওয়ানোতে এদের ভারি চু’ল’কা’নি আছে।’

অন্য মহিলা গুলো তা শুনে চোখ কপালে তুলল। এত বড় একটা ব্যাপার চৌধুরী বাড়ির মানুষরা কীভাবে চুপচাপ ঘটিয়ে ফেলল! একজন বলে উঠল,

-‘হায় রে! এরা তো দেখছি পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন কাউকে গণাতেই ধরছে না।’

মহিলা গুলোর মধ্যে একজন ছিলেন তাহমীদের মায়ের বান্ধবী। তিনি বান্ধবীর উপর ভীষণ চটে গেলেন। কথা ছিল তার মেয়েটাকে তাহমীদের সাথে বিয়ে দিবেন। এখন সেই কথার খিলাফ করে ফেলল তার সই!
_______________________________
অনিরুদ্ধ বেশ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও মায়ের দেখা পেল না। রিনিঝিনি খুব চেষ্টা করেছে। বাইরের মানুষ বেশি থাকায় সেখান থেকে বড় মাকে নিয়ে আসতে পারেনি সে। তবে ঔষধ রেখে দিয়েছে সে। সময় করে বড় মাকে দিয়ে আসবে। নিজেই খাইয়ে দিবে দরকার হলে।

অনিরুদ্ধ চলে যাওয়ার সময় রিনিঝিনি তাকে এগিয়ে দিতে নিচে যায়। অনিরুদ্ধকে এত খাবার সাজিয়ে দেওয়া হয়েছিল খাওয়ার জন্য অথচ সে একটু কিছুও মুখে দেয়নি দেখে রিনিঝিনির মন খা’রা’প। এতবার সেধেও কোনো লাভ করতে পারেনি সে। তবে তার অনিরুদ্ধের জন্যে মায়াও হয়। বেচারা মাকে দেখতে চেয়েছিল। দেখা হলো না!

অনিরুদ্ধ চলেই গিয়েছিল। রিনিঝিনি কি মনে করে যেন গেইটের কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। একটু পর রিনিঝিনিকে চমকে দিয়ে অনিরুদ্ধ ফিরে আসে।

-‘যদি কিছু মনে না করেন, আপনার কন্টাক্ট নাম্বারটা পাওয়া যাবে?’

রিনিঝিনি কি বলবে বুঝতে পারল না। তবে মাথা নাড়ল। অনিরুদ্ধ ফোন হাতে নাম্বার তোলার জন্য দাঁড়াল। রিনিঝিনির কি যে হলো! নিজের ফোন নাম্বারটা ভুলেই গেল। অনিরুদ্ধ তাড়া দিলো। কিছুতেই নাম্বারটা মনে পড়ল না তার। অসহায়ের মতো মুখ করে বলল,

-‘নাম্বার তো ভুলে গেছি।’

অনিরুদ্ধ ভাবল রিনিঝিনি ইচ্ছে করেই দিতে চাইছে না। তাই এখন এমনটা বলছে। মেয়েরা তো এমনই! নাম্বার দেওয়াটা সহজ ভাবে নিতে পারে না। সবাইকে স’ন্দে’হ করে।

-‘আচ্ছা। তাহলে আমি আসি।’

অনিরুদ্ধ পা বাড়াতে নিলেই তড়িগড়ি করে রিনিঝিনি বলে উঠল,

-‘আপনার নাম্বারটা দিয়ে যান, আমি কল করব সময় করে।’

অনিরুদ্ধ ভিজিটিং কার্ড সাথে আনেনি। মুখে বলাটা তো আর সম্ভব না। মেয়েটার সাথে ফোন নেই। মুখস্থ করবে? নিজেরটাই তো বলছে ভুলে গেছে। ওরটা মনে রাখবে কী করে? হাতড়ে দেখল প্যান্টের পকেটে একটা কলম আছে। কলমটা হাতে নিয়ে সে বলল,

-‘হাতটা যদি বাড়িয়ে দিতেন!’

রিনিঝিনির হাত এত বেশি ঠান্ডা হয়ে পড়েছিল তখন! হাত ধরে চমকে উঠল অনিরুদ্ধ। এত শীতল স্পর্শে তার কেমন যেন লাগল! তবে বেশি কিছু না ভেবে দ্রুত নাম্বারটা লিখে দিয়ে সে চলে গেল। সে চলে যাওয়ার পর রিনিঝিনি তার ধরে রাখা সেই হাতটার দিকে তাকিয়ে ল’জ্জায় লা’ল হলো। একটু পর খেয়াল হতে দৌঁড়ে নিজের রুমে গেল আর নাম্বারটা ফোনে সেভ করে নিলো। ভাবল তখনই কল করবে কিন্তু বাহির থেকে ডাক পড়ায় আর সেটা করতে পারল না।

_________________________
রুমঝুমের দু চোখে ভীষণ ঘুম। এমন অবস্থা তার কোথাও বিছানা পেলেই ঠুস করে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। জরিনার থেকে খবর পেয়েছে তার সেই গেস্ট রুমটা ফাঁকা হয়েছে। তাই এতসময় পর ছাদ থেকে সে নিচে নামল। দোতলায় আসতেই হঠাৎ একদল মহিলা কোথা থেকে এসে তাকে ঘিরে ধরল। আর একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগল। সেই সব প্রশ্নে তার মাথা ঘুরে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো। মহিলাদের প্রশ্নগুলো এমন,

“কতদিন হলো তোমাদের বিয়ের?প্রেমের বিয়ে নাকি? অনুষ্ঠান কেন করলে না? এত দূরে দূরে আছো কেন? আমরা কি তোমাদের আলাদা করব নাকি? আমাদের দেখেই এত দূরে দূরে থাকছ নাকি ঝগড়া হয়েছে?”

রুমঝুম পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে পড়ল। কার সাথে বিয়ের কথা বলছে এরা! হঠাৎ একটা মহিলা তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল সামনের দিকে। আর বলতে লাগল,

-‘এরা পা’গ’ল। এদের কথা ধরো না মেয়ে। তুমি ঘরে যাও তো। এদের সব ব্যাপারেই বেশি বেশি। ঝগড়া হলে হবে। মিটমাটও করে নিবে। এদের এতো সুযোগ দিও না কথা শোনানোর।’

ধুপ করে একটা ঘরের দরজা খুলে মৃদু ধা’ক্কা দিয়ে রুমঝুমকে ভেতরে ঠেলে দিয়ে ধরাম করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো মহিলাটি। আ’ত’ঙ্কি’ত রুমঝুম দরজা খুলতে গিয়ে দেখল বাহির থেকে বন্ধ করে দিয়েছে দরজা। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিলো এই বদ্ধ ঘরে আরো একজন আছে তার সাথে। পেছন ফিরে দেখল সত্যিই! ল্যাপটপ হাতে বিছানায় হেলান দিয়ে তাহমীদ বসে আছে। তাকে দেখেই মনে হচ্ছে আকস্মিক এমন ঘটনা ঘটে যাওয়ায় সেও চমকে গেছে। একটু আগেও কী বোর্ডের উপর তার অনবরত ছুটতে থাকা আঙুল গুলো এখন থেমে আছে।

#চলবে।

ইনশিয়াহ্ ইসলাম।