ওগো বিদেশিনী পর্ব-১২+১৩

0
134

#ওগো_বিদেশিনী
#পর্ব_১২
#সারিকা_হোসাইন
___________

“সরি ক্যাপ্টেন মাহাদ”
“আসলে রাতে যেই অফিসার ডিউটি তে ছিলেন উনি আপনার সম্পর্কে জানেন না।সে আট দশটা ক্যাপ্টেন এর মতো আপনাকেও সিম্পল ভেবেছে।

“আপনি তো জানেনই চাইলেই যখন তখন উপর মহল ছুটি মনজুর করেন না।তার মধ্যে আপনি অলরেডি সাত দিন ছুটি কাটিয়ে ফেলেছেন।

“আপনি প্লিজ রিজাইন দিবেন না।আপনি জাস্ট ইমেইল করে একটা শো কজ লিখে অফিসে সেন্ড করবেন।

“বাকী যা করা লাগে সব আমি করবো।

“আমার দুদিনের ইমারজেন্সি ছুটির খুব প্রয়োজন ছিলো বস।এজন্য আমি এইচ আর কে বিষয় টা জানিয়েছি।

উনি আমার সাথে প্রচুর রাফ বিহেভ করেছে ।

“উনার হয়ে আমি আপনার কাছে সরি বলছি।আমরা আপনাকে হারাতে চাইনা ক্যাপ্টেন মাহাদ।আর কাল ফ্লাইটের অনেক চাপ ছিল।
প্লিজ একটু কোঅপারেট করুন।

মাহাদ আর কোনো কথা বাড়ালো না।

শুধু বললো
“ঠিক আছে আমি ইমেইল এর মাধ্যমে শো কজ লিখে সেন্ড করে দেব।

আরো কিছু কথা বলে ওপাশের ব্যাক্তি ফোনের লাইন কেটে দিলো।

মাহাদ ঠোঁট গোল করে ফুঁস করে নিঃশাস ছাড়লো।

এরপর কাঁধে একটি সাদা রঙের টাওয়েল ঝুলিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
আজ তার বহু কাজ।

আজ রাত থেকে ক্যামেলিয়া দলিল সমেত তার হয়ে যাবে।
ক্যামেলিয়া কে হারানোর আর কোনো ভয় নেই।
চাইলেই যখন তখন ক্যামেলিয়া কে ছুঁয়ে দেয়া যাবে।
যেই ছুয়ার আকাঙ্ক্ষা মাহাদের দীর্ঘ আঠারো বছরের।

ভাবতেই মনের ভেতর সুখের প্রজাপতি উড়াউড়ি করতে লাগলো।
লজ্জায় মাহাদ ঠোঁট কামড়ে ধরে আনমনে হেসে উঠলো।

এদিকে টুসি,সুজানা,নাজনীন সুলতানা আর মিসেস মিতালি মিলে শপিং এ যাবার জন্য রেডি হচ্ছেন।
ক্যামেলিয়া কে বারবার অনুরোধ করেও ঘরের বাইরে বের করা যায়নি।
আর মেয়েটা বার বার হাঁচি কাশি দিচ্ছে এজন্য কেউ তাকে জোর করেনি।

মাহাদ সবাইকে পই পই করে বলে দিয়েছে যেটা ক্যামেলিয়া করতে অসম্মতি প্রকাশ করবে সেটাতে কেউ যেনো তাকে জোর না করে।

এদিকে ক্যামেলিয়ার আজ সাইকো থেরাপি ও রয়েছে।
বহু কষ্টে মাহাদ সাইকিয়াট্রিস্ট এর শিডিউল ম্যানেজ করে কনসাল্টিং এর ব্যাবস্থা করেছে।

রিজভী এসে সেই কখন থেকে গাড়ির হর্ন বাজিয়েই চলেছে।

মাহাদ নাকি আজ ক্যামেলিয়া কে নিয়ে যেতে পারবে না এজন্য রিজভী নিয়ে যাবে।

গাড়ির হর্নের শব্দ শুনে সুজানা দৌড়ে এলো।

রিজভী জানালা দিয়ে মাথা বের করে ডেকে উঠলো
“সুজু”

রিজভীর এই ডাকটা সুজানার হৃদয়ে চাকু হয়ে বিধলো।

সে কথা বলার ভাষা হারালো,
এই পুরুষটি তাকে যখন তখন এলোমেলো ভারসাম্য হীন করে দেয়।
এই পুরুষের জন্য সুজানার হৃদয়ে হাজারো অব্যাক্ত অনুভূতি রয়েছে।

কিন্তু শত চেষ্টা করেও সুজানা তা ব্যাক্ত করতে পারেনা।

যদি সুজানা কখনো তার ভালোবাসার আহ্বান রিজভী কে জানায় তখন দেখা যাবে রিজভী সুজানার গাল ই লাল করে ফেলবে চড়িয়ে।
এই লোককে ভরসা করা যায় না।

রিজভী আবার ডেকে উঠলো

“কি রে বয়রা মেয়ে ডাকি শুনতে পাস না?

“সরি ভাইয়া অন্য ধ্যানে চলে গিয়েছিলাম”

“পাঁচ মিনিট ধরে ভ্যাবলির মতো তাকিয়ে ছিলি তুই আমার দিকে।পাঁচ মিনিটে কতো কিছু হয় জানিস?

“সময় জ্ঞান বলতে কিচ্ছু নেই তোদের।
“যা ক্যামেলিয়া কে ডেকে আন, ডক্টর এর কাছে যাবো।

সুজানা কিছুক্ষন হাত কচলে বলে উঠলো

“আসলে ও আজ ঘর থেকে বের হতে চাচ্ছেনা।

“এমন সিরিয়াস কথা তোর নতুন বউয়ের মতো লজ্জা পেয়ে বলতে হচ্ছে কেনো?

রিজভীর এসব হেঁয়ালি শক্ত কথায় মাঝে মাঝেই সুজানার কান্না চলে আসে।
এই অসভ্য লোক কখনোই তাকে বুঝার চেষ্টা করেনা।
একটু খেয়াল করলেই রিজভী সুজানার চোখের ভাষা পড়তে পারে।
কিন্তু সে পড়তে নারাজ।
কঠিন হৃদয়ের পুরুষ একটা।

সুজানা রিজভীর কথার জবাব না দিয়ে স্থান ত্যাগ করে বলে উঠে

“তুমি গিয়ে ডেকে আনো।আমি পারবো না”

আজকালকার মেয়ে ছেলে গুলো সাংঘাতিক বেয়াদব হয়েছে বলে ভ্রূ কুচকালো রিজভী।

রোদ চশমাটা খুলে গাড়ির বক্স এ রেখে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো।

সুজানাকে শাসিয়ে বলে উঠলো
“তোকে পরে দেখে নিচ্ছি।আগে ডক্টর এর কাছ থেকে ফিরে আসি।

____
এদিকে ক্যামেলিয়া কাঁথা মুড়ি দিয়ে সটান হয়ে শুয়ে আছে।শরীর খুব টায়ার্ড আর ম্যাজম্যাজ করছে।
হাঁচির কারনে অস্বস্তি হচ্ছে সাথে মাথাব্যথা।
বাড়ির সকলে সকাল থেকে প্রচুর ব্যাস্ত এজন্য সে কারো কাছে হেল্প চাওয়ারও ফুসরত পাচ্ছে না।
এদিকে সকাল থেকে মাহাদের ও কোনো খবর নেই।

হঠাৎই রিজভী ক্যামেলিয়ার কক্ষে প্রবেশ করলো।

কাঁথা মোড়ানোর স্টাইল দেখেই বুঝে ফেললো ক্যামেলিয়া জেগে আছে।

রিজভী গলা খাকরি দিতেই ক্যামেলিয়া শুধু চোখ দুটো বের করলো।

রিজভী আদুরে স্বরে বলে উঠলো

―মাহাদের সাথে সুখী হতে চাস?

ক্যামেলিয়া বোকা বাচ্চার মতো মাথা উপর নিচ করলো শুধু।

রিজভী মুচকি হেসে বলে উঠলো।

“তাহলে চল আমার সাথে।আজ তোর থেরাপি আছে।

নিজের সুস্থতার জন্য ক্যামেলিয়া সব কিছু করতে রাজি।

“সে অবশ্যই মাহাদের সুখী সুন্দর একটা লাইফ লিড করতে চায়।
এই সুখে থাকার আকাঙ্খা তার বহু দিনের।

মাহাদ আর তার সুখের এক ফালি ছোট ঘর হবে।
যেখানে মাহাদ আর সে হেসে খেলে বেঁচে থাকবে।
যেখানে কোনো রোগ,ব্যাধি ,অপারগতা ,কালো ছায়া কিচ্ছু থাকবে না।

সকল ভাবনা ফেলে নিজের অসুস্থতা ভুলে রিজভীর সাথে কনসাল্টিং এ যাবার জন্য তৈরি হয়ে বেরিয়ে গেলো ক্যামেলিয়া।

ঘরোয়া অনুষ্ঠানে ছোট একটা বিয়ের আয়োজন।
টুসীদের বাড়ির মানুষ আর মাহাদের তিন ফুপুকে নিয়েই এই বিয়ের অনুষ্ঠান।

মাহতাব চৌধুরীর কথাতে মাহাদদের বাড়িতেই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে।

ক্যামেলিয়া মাহতাব চৌধুরীর কাছে নিজের বাকী দুই মেয়ের মতোই।

তার মেয়েকে তিনি অন্যের বাড়ি থেকে কেনো আনবেন?

মাহতাব চৌধুরীর ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে সকলেই খুশি মনে তাদের বাড়িতে চলে এসেছে।

মাহাদের বড় ফুপু” শাহানা “আর তার মেয়ে “কুহু” এসব দেখে খালি রাগে ফুঁসছেন।

এসব কিছুই তাদের কাছে অতিরিক্ত আদিখ্যাতা মনে হচ্ছে।

এদিকে মাহাদের বড় বোন হৃদি বিয়েতে আসতে না পারার আফসোসে একটু পর পর ফোন করে কেঁদে চলেছে শুধু।

তার একমাত্র ভাইয়ের বিয়েতে সে যেতে পারছেনা।
অথচ মাহাদের বিয়ে নিয়ে কতো স্বপ্ন ছিলো তার।

তবুও সে ইমারজেন্সি ফ্লাইটে আগামী সপ্তাহে দেশে ফিরবেন।
বিয়ে না দেখতে পারলেও বউ তো দেখতে পারবে।!

*******
দুপুর গড়াতে না গড়াতেই এক গাদা শপিং নিয়ে বাসায় ফিরলেন মিসেস মিতালি,টুসি,সুজানা আর নাজনীন।
যুগের আধুনিকতার কারনে তাদের শপিং করতে কোনো বেগ পোহাতে হয় নি।
রেডিমেড পোশাক পাবার কারণেও কোনো চিন্তা ভাবনা নেই।

বেনারসি পল্লী থেকে মিসেস মিতালি বেছে বেছে ময়ূরের পেখমের রঙের মতো এক ভারী বেনারসি কিনেছেন।
একমাত্র ছেলের বিয়েতে কোনো কমতি রাখবেন না তিনি।

ম্যাচিং ডায়মন্ড এর ছোট ছোট গলার পেনডেন্ট আর কানের দুল বের করলেন।
মেয়েটির নাক ফুরানো নয় বিধায় নাক ফুলের ঝামেলায় যেতে হয়নি।

বাকি আংটি সহ হাবিজাবি মাহাদ নিজে পছন্দ করে কিনবে বিধায় মিতালি সেসব কিনেন নি।

টুসি আর সুজানা নিজেদের ঘরে ক্যামেলিয়ার জন্য কেনা দুটো আন্ডার গার্মেন্টস নিয়ে হেসে কুটি কুটি হচ্ছে।

তারা শুধু ভেবে চলেছে মেয়েটা যেই গাঁধী।
না জানি কি দুর্ঘটনা ঘটে যায়।

শাড়ি গহনা আর সকলের খুশি দেখে শাহানা আর কুহু ফিসফিস করে নানান আজেবাজে কথা বলে যাচ্ছে।

হঠাতই শাহানা ভরা আসরে বলে উঠলো

“হুনলাম মাইয়া নাকি পাগল ছাগল?
“ভালা পোলাডার লগে এই মাইয়া কোন কারনে বানতাছো?

“আমার মাইয়া কি দোষ করছিলো?
“রূপে গুনে হাজারে একটা।

শাহানার কথা শুনে উপস্থিত সকলেই হা হয়ে গেলেন।
মাহতাব চৌধুরী বাসায় নেই।
শাহানার আচরণ গত কিছু সমস্যার কারনে কেউ মুখ ও খুলতে পারছেনা।

এদিকে মাহাদ কেবলই সারাদিনের কাজ শেষ করে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরছে।
নিজের হবু স্ত্রী সম্পর্কে এমন বীভৎস কথা শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে কপালের শিরা ফুলে উঠলো মাহাদের।

শাহানাকে জায়গার মধ্যে চুপ করানোর জন্য গমগমে কন্ঠে মাহাদ বলে উঠলো―

“ওই পাগল মেয়েকে বিয়ে করে আমিও পাগল হতে চাই ফুপি।তোমার কোনো সমস্যা আছে?

আর কুহুকে আমি ছোট বোনের নজরে দেখি,বউ আমি ছোট বেলা থেকে একজন কেই মানি।তাই বলছি, যা বলেছো আজই যেনো এর শেষ হয়।ভবিষ্যতে এমন কথা ভুলেও উচ্চারণ করবে না।
না হলে আমার চাইতে খারাপ আর কেউ হবে না।

শাহানা মিথ্যে কাঁদার ভান ধরে বলে উঠলো
“মামাদের মতো বেদ্দপ হইছস না?

মামাদের কেনো টানছ ফুপি?এটা আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপারে আমি কথা বলেছি।
মামারা কিছুই করেনি এখানে।

হঠাৎই রিজভী আর ক্যামেলিয়া ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করলো।
ক্যামেলিয়া কে দেখেই সকলেই চুপ হয়ে গেলো।

মাহাদ মিতালি কে চোখ ইশারা করতেই মিসেস মিতালি তড়িঘড়ি করে ক্যামেলিয়া কে দুতলায় টুসি আর সুজানার কাছে পাঠিয়ে দিলেন।

*******
বিয়ের আয়োজন অলরেডি শুরু হয়ে গিয়েছে।বাগানের সাইড টাতে মেহমান দের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।আর বাকি সব আয়োজন ঘরের ভেতর।

টুসি আর সুজানা বহু কষ্টে মেহেদী পড়ানোর জন্য রাজি করাতে পেরেছে ক্যামেলিয়া কে।
দুজনে দুই হাতে সুন্দর ভারী আলপনা একে ফাঁকা জায়গায় লিখে দিলো “মাহাদ”

মিসেস মিতালি ক্যামেলিয়াকে পড়ানোর জন্য নিজের পছন্দ কৃত শাড়ি বের করেই চিল্লিয়ে কেঁদে উঠলেন।

সুজানা আর মাহাদ দৌড়ে এসে হতভম্ব হয়ে গেলো।

পুরো শাড়ি ব্লেড এর আঁচড়ে কাটা আর দুমড়ানো মুচড়ানো।

এই বাড়িতে এতো বড় সাহস কার সেটাই ভেবে পেলো না মাহাদ!

মাহাদের আরো দুই ফুপু এগিয়ে এসে শাড়ির করুন অবস্থা দেখে নির্বাক হয়ে গেলেন।

কুহু আর শাহানা কীয়তক্ষন বাদে এসে হায় হায় করে উঠলো।

মিসেস মিতালি নিরুপায় হয়ে মাহাদকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলেন।

এ কোন নতুন বিপদ সামনে আসতে চলেছে?
বিয়ের দিন বিয়ের শাড়ি নষ্ট হওয়া কি ভালো?

মাহাদ মিসেস মিতালি কে আশ্বস্ত করে বলে উঠলো

―মা এসব কুসংস্কার।এসব বললে গুনাহ হবে।
আমার ঘরে নতুন একটা শাড়ি আছে।ওটা ক্যামেলিয়া কে পরিয়ে দাও।আর হ্যা সকলের উদ্দেশ্যে বলছি

“কোনোভাবেই যেনো ঘরের বাইরে এই কথা না যায়”

______
গাঢ় মেরুন রঙের জমিনে কালো পাড়ের জামদানিতে আসমানের হুর লাগছে ক্যামেলিয়া কে।
মাথায় মেরুন রঙের বড় ওড়না, ডায়মন্ড এর সিম্পল গহনা,হালকা প্রসাধনী,বাদামি কোঁকড়া চুলগুলো সুন্দর করে বাধা।
নীল চক্ষে মোটা কালো কাজলের প্রলেপ,বাঁকানো আইলাইনার।
ঠোঁটে শাড়ির সাথে ম্যাচিং লিপস্টিক।

কাজী আসা মাত্রই ড্রয়িং রুমে মাহাদের ডাক পড়লো।
সাদা রঙের সিম্পল একটা পাঞ্জাবি পরে,চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করে নিলো মাহাদ।হাতে রোলেক্স এর সিলভার চেইন এর ঘড়ি পরে নিলো।
ঘাড়ে আর হাতের কব্জিতে একটু পারফিউম লাগিয়ে পাঞ্জাবির হাত গুটাতে গুটাতে নেমে এলো মাহাদ।

কাজী সব কিছু বুঝিয়ে দিলো মাহাদকে।
মাহাদ কাজীর দেয়া নির্দেশ অনুযায়ী কাবিনের পেপারে স্বাক্ষর করে কাজীর দিকে এগিয়ে দিলো।

কাজীর সহকারী ক্যামেলিয়ার কক্ষে প্রবেশ করে মাহাদের বিবরণ দিয়ে বলে উঠলো

নগদ টাকা ও গহনার সহিত বারো লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য করে
মাহতাব চৌধুরীর দ্বিতীয় পুত্র মাহাদ চৌধুরীর সাথে আপনার বিবাহ সম্পন্ন করা হলো।

বলুন “আলহামদুলিল্লাহ কবুল”

মুসলিম মেয়েদের বিয়ে কিভাবে হয় তা ক্যামেলিয়া জানেও না।কখনো দেখেও নি।
তবুও আজ ভয়ে তার হাত পা বুক কেঁপে উঠলো।
হয়তো মা আর বাবা থাকলে বিষয় টা সহজ হতো।
টুসি,সুজানা আর নাজনীন বার বার ক্যামেলিয়া কে পিঠে হাত বুলিয়ে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
বৃদ্ধ আশফিক ক্যামেলিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলেন

“দাদুভাই কবুল বলে দাও।অযথা দেরি করোনা।

ক্যামেলিয়া তার এই জীবনে যতো দুয়া দুরূদ জানতো একে একে সব পড়লো।
এর পর মনে মনে আল্লাহর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো

“আমি কখনো কোনোদিন তোমার কাছে কিছু চাইনি”।

“আজ আমি আমার সারা জীবনের ভালো থাকার জন্য একটু সুস্থতা ভিক্ষা চাচ্ছি।”

আমাকে মাহাদের সাথে ভালো রেখো।
“আমার পক্ষ থেকে যেনো মাহাদ কোনো কষ্ট না পায়”

বলেই অশ্রুসিক্ত নয়নে ভেজা কন্ঠে অস্ফুট স্বরে
” আলহামদুলিল্লাহ কবুল বলে উঠলো।”

এদিকে মাহাদের ভয়ে কলিজা শুকিয়ে আসছে।
শেষ পর্যন্ত সব ঠিক থাকবে তো?
বারবার পিপাসায় মাহাদের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।
জিহবার সাহায্যে শুষ্ক ওষ্ঠদ্বয় ভিজিয়ে নিলো বার কয়েক।

খাতা হাতে কাজীর সহকারী কে ফিরতে দেখে মাহাদের ধুকপুকুনি আরো বেড়ে গেলো।

মাহতাব চৌধুরী মাথায় হাত বুলিয়ে ছেলেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলেন।
কাজীর সহকারীর কাছ থেকে পেপার নিয়ে কাজী বলে উঠলো

বাবা কবুল বলেন।

মাহাদ এক সেকেন্ড দেরি না করেই বলে ফেললো
“আলহামদুলিল্লাহ কবুল”

রিজভী আর মাহাদের কিছু বন্ধু আনন্দে হই হৈল্লোড় করে উঠলো।
সকলের খাওয়াদাওয়া কাজকর্ম সব কিছু শেষ করতে করতে রাত প্রায় বারোটার কাছাকাছি বেজে গেলো।

টুসি আর সুজানা মিলে কিছু ফল আর মধু মিশ্রিত দুধ দিয়ে গেলো মাহাদের কক্ষে।
একটু পর মিসেস মিতালি দুটো জায়নামাজ সহ ক্যামেলিয়া কে নিয়ে মাহাদের কক্ষে এনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে গেলেন।

মিতালি চলে যেতেই টুসি আর সুজানা এসে কানে কানে ক্যামেলিয়া কে কিছু বলতেই লজ্জায় অষ্টাদশীর কান গরম হয়ে গাল রক্তিম আভা ছড়ালো।

আধ ঘন্টা পর মাহাদ নিজের কক্ষে প্রবেশ করলো।
মাহাদ কে দেখেই লজ্জায় ,ভয়ে আড়ষ্ট হলো ক্যামেলিয়া।
নাজনীন সুলতানার কথা অনুযায়ী ক্যামেলিয়া লম্বা ঘোমটা আর শাড়ি কোনো মতে সামলিয়ে খাট থেকে নেমে এলো।

ঝুকে পা ছুয়ে মাহাদ কে সালাম করতে নিলেই মাহাদ ক্যামেলিয়া কে বুকে টেনে নিয়ে আদুরে কন্ঠে বলে উঠলো

―তোমার স্থান পায়ে নয় ক্যামেলিয়া।তুমি সবসময় আমার বুকের মধ্যখানে থাকবে।

#চলবে

#ওগো_বিদেশিনী
#পর্ব_১৩
#সারিকা_হোসাইন

সারা দিনের মেঘমেদুর দিনের অবসান ঘটিয়ে রাত বাড়তেই ঝুপঝুপিয়ে ভারী বর্ষনের শুরু হলো।
মাহাদের কক্ষের দক্ষিণের জানালার কারুকাজ খচিত পর্দা টা বাতাস আর বৃষ্টির দমকে তাল মিলিয়ে দুলছে।
অশান্ত গুমোট প্রকৃতি নিমিষেই শীতল রূপ ধারণ করলো।

মাহাদের প্রশস্ত বক্ষে ক্যামেলিয়া ছোট বিড়াল ছানার ন্যায় গুটিয়ে রয়েছে।
হঠাৎই অদূরে বিকট বজ্রপাতের শব্দে ভয়ে কেঁপে উঠলো ক্যামেলিয়া।
মাহাদ ক্যামেলিয়া কে আরো শক্ত করে চেপে ধরে ঘোমটার উপর দিয়েই মেয়েটির মাথায় গভীর চুমু খেলো।

ক্যামেলিয়ার মনে হচ্ছে এতো এতো শান্তি পৃথিবীর আর কোথাও নেই যেই শান্তি মাহাদের বুকে থেকে পাচ্ছে সে।
মাহাদের হার্টবিট রিদম আকারে মূর্ছনা তৈরি করছে ক্যামেলিয়ার কর্ণ কুহরে।

ধীরে ধীরে ক্যামেলিয়া কে বাধন মুক্ত করলো মাহাদ।
ক্যামেলিয়া ভয়ে,লজ্জায় মাথা নত করে মেঝের দিকে দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে রয়েছে।
টুসি আর সুজানার বলা কথা গুলো মনে পড়তেই ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে আর হাত পা কাঁপছে।
মুহূর্তেই মাহাদ ক্যামেলিয়ার বড় করে টানা ঘোমটা সরিয়ে চিবুক ধরে মুখ উপরে তুললো।
এরপর ঘোর লাগা চোখে ক্যামেলিয়ার অনিন্দ্য সৌন্দর্য উপভোগ করলো।

আবেশে আনন্দে মাহাদের কন্ঠস্বর রোধ হয়ে আসছে যেনো।
বুকের ধুকপুকুনি তে টিকতে পারছে না মাহাদ।
তার দীর্ঘ এক যুগের ও বেশি সময় ধরে দেখা স্বপ্ন আজ সত্যি হয়ে গেলো।
লজ্জা এবং অত্যাধিক উৎচ্ছাস এর কারনে মাহাদের হাসি যেনো ধরছেই না।
বহু কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে মাদকতা মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো

“অবশেষে আমি তোমাকে পেয়েছি ক্যামেলিয়া”

“আমি তোমাকে আর কোনোভাবেই ছাড়ছি না”

“তোমাকে অনেক সুন্দর পুতুলের মতো লাগছে।

“আসলে আমি আজকে এতো খুশি ক্যামেলিয়া যে,আমি আমার মনের আবেগ গুলো ঠিক মতো প্রকাশই করতে পারছি না।”

“মনে হচ্ছে সব কিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে”

মাহাদের এতো আনন্দ আর সুখ দেখে ক্যামেলিয়া অনিমেষ তাকিয়ে ভাবতে থাকলো

“কেউ কাউকে দূর থেকে না দেখেও এতোটা ভালো কিভাবে বাসতে পারে?

আজকে ক্যামেলিয়ার নিজেকে অনেক সুখী আর ভাগ্যবতী মনে হচ্চে।
মাহাদের সাথে হাজার বছর এভাবেই বাঁচতে বড্ড ইচ্ছে করছে তার।
কোনো ম্যাজিক বলে ক্যামেলিয়া যদি নিমিষেই সুস্থ হয়ে যেতে পারতো তবে মাহাদ কতই না খুশি হতো!

নিজের সুখের চাইতে শঙ্কা বেশি হচ্ছে ক্যামেলিয়ার।

“যদি সে সুস্থ না হয়?
“যদি সে মাহাদকে ভুলে যায়?

তবে কি মাহাদ ও তাকে ভুলে যাবে?

হঠাৎই ক্যামেলিয়া মাহাদের দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরলো।

মাহাদ উৎসুক হয়ে ক্যামেলিয়ার দিকে তাকাতেই ক্যামেলিয়া হুহু করে কেঁদে উঠলো।

মাহাদ বিচলিত হয়ে গেলো ক্যামেলিয়ার কান্নায়।
কোনো ভাবেই সে তার কান্না বন্ধ করতে পারছে না।

নিজের কান্না কোনো মতে কমিয়ে ক্যামেলিয়া ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বলে উঠলো

“সাইকিয়াট্রিস্ট বলেছে আমি যে কোনো সময় ডিসওর্ডার এর কারনে হ্যালুসিনেশন এর প্রভাবে পরিচিত মানুষের মুখ ভুলে যাবো।
আমার সকল কাজকর্ম,বন্ধু,সঙ্গী কিছুই মনে করতে পারবো না আমি।
এমন কোনো দিন আসলে প্লিজ মাহাদ ভাই আপনি আমাকে ছেড়ে যাবেন না।

“আমি আপনাকে ভুলে গেলেও আপনি আমাকে ভুলবেন না।”

“আমাকে কথা দিন মাহাদ ভাই।”

“আমি নিজে থেকে এই অসুখ বাঁধাই নি মাহাদ ভাই।”

“পরিস্থিতি আমাকে অন্ধকার জগতে নিয়ে চলে গিয়েছে।”

“আমি সুস্থ হয়ে আপনার সাথে বেঁচে থাকতে চাই মাহাদ ভাই।”

“আমি আপনাকে ভুলতে চাই না।”

ক্যামেলিয়ার আর্তনাদ ভরা কান্নায় মাহাদের বুকে চিনচিনে সূক্ষ ব্যাথার উপস্থিতি জানান দিলো।

মাহাদ ক্যামেলিয়ার হাত ধরে প্রতিশ্রুতি দিলো

“আমার ভেতর সামান্যতম জ্ঞান থাকতে আমি তোমাকে ভুলবো না ক্যামেলিয়া।

“মৃত্যুর দিন পর্যন্ত আমি তোমাকে মনে রাখবো।

মাহাদের বুকে আছড়ে পড়ে ক্যামেলিয়া কেঁদেই চলেছে।

মাহাদ ক্যামেলিয়ার চোখে মুখে অজস্র চুমু খেয়ে মাথায় হাত বুলালো।

ধীরে ধীরে বৃষ্টির বেগ বাড়তে থাকলো আর ক্যামেলিয়ার কান্নার গতি কমে এলো।

মাহাদ ক্যামেলিয়া কে পোশাক পাল্টে ওযু করতে বলে নিজেও ফ্রেস হতে চলে গেলো।

মাহাদ দ্রুত শাওয়ার নিয়ে গায়ে একটা কালো টিশার্ট জড়িয়ে সাথে গ্রে কালারের একটা ট্রাউজার পড়ে নিলো।

যেহেতু ক্যামেলিয়ার হাঁচি কাশির সমস্যা দেখা দিয়েছে তাই মাহাদ ঝটপট গিজারের সুইচ দিয়ে ক্যামেলিয়ার পিন আপ করা শাড়ি ঘোমটা,খুলতে সহায়তা করলো।

এরপর ক্যামেলিয়াকে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে অল্প পানি ঢেলে দ্রুত গোসল শেষ করার তাগাদা দিলো।

বিপত্তি বাধলো ক্যামেলিয়ার গোসলের শেষে।
তার সকল কাপড়চোপড় সুজানার রুমে।

এতো রাতে মাহাদ সুজানা কে কিভাবে ডেকে তুলবে?
সারা দিনের ধকল শেষ করে প্রত্যেকেই মাত্র ঘুমুতে গিয়েছে বোধ হয়।

আর দেখতেও তো খারাপ দেখা যাবে!
মাহাদ অনেক্ষন ভেবে চিন্তে
দরজায় নক করে ক্যামেলিয়া কে জিজ্ঞেস করে উঠলো

“শাড়ি পড়তে পারো?

“শাড়ীর কথা শুনে ক্যামেলিয়া ফাঁকা ঢোক গিললো।

এই ঝামেলাযুক্ত পোশাক সে আজই প্রথম পড়েছে এবং এটা হ্যান্ডেল করতে তাকে প্রচুর বেগ পোহাতে হয়েছে।

ক্যামেলিয়ার সাড়াশব্দ না পেয়ে মাহাদ আবার দরজায় নক করতেই লম্বা বড় একটি টাওয়েল শরীরে জড়িয়ে দরজার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে উঠলো

―পেটিকোট আর ব্লাউজ দিন মাহাদ ভাই ।

মাহাদ নিজের পছন্দ সই গুনে গুনে বারোটা জামদানি আর সুতি শাড়ি কিনেছে ক্যামেলিয়ার জন্য।
তার ধারণা শাড়িতে ক্যামেলিয়াকে বেহেস্তের হুরের চাইতে কম কিছু লাগবে না ।

মাহাদ কখনো ক্যামেলিয়া কে শাড়ি পড়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করবে না।
এগুলো মহাদ কিনেছে যদি কখনো ক্যামেলিয়ার মোড ভালো থাকে তখন হয়তো অনুরোধ করবে মাহাদ কে শাড়ি পরে ক্যামেলিয়ার মাদকতা যুক্ত সৌন্দর্য উপভোগ করাতে।

ক্যামেলিয়া আবার ডেকে উঠলো
“মাহাদ ভাই”!

মাহাদ হুশ ফিরে দ্রুত ল্যাভেন্ডার রঙের একটি জামদানি শাড়ি আর পেটিকোট ব্লাউজ ক্যামেলিয়ার হাতে এগিয়ে দিলো।

মিনিট বিশেক পরেও যখন ক্যামেলিয়া বের হচ্ছেনা তখন মাহাদ আবার দরজায় টোকা দিলো।

ক্যামেলিয়া এলোমেলো শাড়ি সমেত বেরিয়ে বলে উঠলো

“কোনোমতেই হচ্ছে না মাহাদ ভাই”

ক্যামেলিয়ার এলোমেলো সৌন্দর্যে বার বার বেসামাল হয়ে যাচ্ছে মাহাদ।
কোনো ভাবেই নিজেকে আয়ত্তে আনতে পারছে না সে।
নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় পুরুষ মনে হচ্ছে মাহাদের।

সামনে মিষ্টির প্যাকেট খোলা অথচ সে মিষ্টি খেতে পারছে না।
এর চাইতে দুঃখ ধরনীতে দ্বিতীয় কি বা আছে আর?

নিজেকে ধাতস্থ করে বহু কষ্টে মাহাদ ইউটিউব দেখে কোনোরকম করে কাঁপা কাঁপা হাতে শাড়িটা পরিয়ে বলে উঠলো
“চলো নামাজ পড়বো।”

দুজনের নামাজ শেষ করে আল্লাহর কাছে নিজেদের সুখী সমৃদ্ধ জীবনের প্রার্থনা করতে করতে রাত দুটো বেজে গেলো।

আজকে রাতের বর্ষনের ধারা দেখে মনে হচ্ছে আকাশ ফুটো হয়ে গিয়েছে।
বৃষ্টির শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না চার পাশের।

মাহাদ ক্যামেলিয়া কে ডেকে বললো
“এসো ঘুমুবে,অনেক রাত হয়েছে”

এলোমেলো শাড়ি সামলে বহু কষ্টে ক্যামেলিয়া বিছানা পর্যন্ত এলো।
এরপর মাহাদের বাম পাশের বালিশ টাতে সটান হয়ে শুয়ে পড়লো।

মাহাদ রুমের পাওয়ারফুল লাইট অফ করে মৃদু নীল রঙের ডিম লাইট জ্বালিয়ে দিলো ।

মাথার পেছনে হাত দিতে সটান চিৎ হয়ে শুয়ে মাহাদ ভেবে চলেছে সাইকিয়াট্রিস্ট এর কথা

“মিস্টার মাহাদ ,যদিও মেয়েটি আপনার বিয়ে করা স্ত্রী হতে যাচ্ছে।
আপনি তার মেন্টাল কন্ডিশন জানেন।
তাই আপনাকে আর ভেঙে বলার মতো কিছুই নেই।
তাই বলছি মেয়েটির সাথে ইন্টিমেট হবার জন্য কোনো তাড়াহুড়ো করবেন না।
মেয়েটিকে আরো স্পেস দিন,টাইম দিন।ধীরে ধীরে তার ভালো বন্ধু হোন।
সবার আগে আপনাকে বুঝতে হবে মেয়েটি ডিপ্রেসড তার মধ্যে সেক্সওয়াল হ্যারেসম্যান্ট এর শিকার।
যখন তখন মেয়েটি এমন সিচুয়েশন এ হাইপার হতে পারে।
তখন কিন্তু কোনো ভাবেই তাকে হ্যান্ডেল করা যাবেনা।

“সো বি কেয়ারফুল”

মাহাদের কাছে ক্যামেলিয়ার শরীর দখলের চাইতে ক্যামেলিয়া তার কাছে থাকবে ,তার সামনে ঘুরে বেড়াবে ,হেসে হেসে তার সাথে কথা বলবে এই অনেক।

প্রয়োজন পড়লে মাহাদ কোনো দিন ও ছুঁয়ে দেখবে না ক্যামেলিয়া কে।
তবুও ক্যামেলিয়া ভালো থাকুক,প্রাণবন্ত, সুস্থ থাকুক।

নির্জন কক্ষটিতে বৃষ্টির ঝরঝর শব্দ ছাড়া কেউ কারো কোনো সাড়া শব্দ পাচ্ছে না।দুজনেই দু দিকে ঘুরে নীরব হয়ে শুয়ে আছে।

ক্যামেলিয়া বাম কাত হয়ে শুয়ে ঘুমানোর বহু কসরত করছে তবুও অক্ষি পল্লবে ঘুম ধরা দিচ্ছে না।
সারাদিনের চাপে ডিপ্রেশনের মেডিসিন নিতেও ভুলে গিয়েছে ক্যামেলিয়া।
এপাশ ওপাশ করার দরুন এক পর্যায়ে লোজ করে বাধা পেটিকোট এর ভেতর থেকে শাড়ীর কুচি ছুটে গেলো।
লম্বা কাপড়ের প্যাচগোছে অতিষ্ট হয়ে উঠলো ক্যামেলিয়া।

সকাল কখন হবে সেই চিন্তায় বারবার অস্থির হয়ে যাচ্ছে সে।
এদিকে ক্যামেলিয়ার নড়াচড়ার শব্দে মাহাদ বারবার ঘুমানোর চেষ্টা করেও ব্যার্থ হচ্ছে।

অবশেষে মুখ খুললো মাহাদ

“এমন মোচড়ামুছড়ি করছো কেনো বউ”?

ক্যামেলিয়া কিছুক্ষন মৌন থেকে নিচু চিকন কন্ঠে বলে উঠলো
“শাড়ি খুলে গেছে মাহাদ ভাই”

“এভাবে আমাকে ভাই ,ভাই ডেকোনা ক্যামেলিয়া”
বুকের ছাতির ভেতর যেই হৃদযন্ত্রটা রয়েছে সেখানে ভীষন ব্যাথা করে!

“তাহলে কি ডাকবো আপনাকে?

“জামাই ডাকবে”
বলেই চট করে ঘুরে গেলো ক্যামেলিয়ার দিকে।

মাহাদের এমন কথায় লজ্জায় গরম ধরে গেলো ক্যামেলিয়ার।

এরপর মাহাদ নেশাক্ত নয়নে তাকিয়ে ক্যামেলিয়া কে বলে উঠলো

“কি ডাকতে বলেছি?

ক্যামেলিয়া মিনমিন করে বলে উঠলো

“মনে হয় পেটিকোট এর গিট খুলে গেছে মাহাদ ভাই”

এই মুহূর্তে নিজের মাথা নিজেরই ফাটাতে ইচ্ছে হলো মাহাদের।

শিখিয়ে,পড়িয়ে বউ মানুষ করে সংসার করার দিন কি তার আছে?

ঠিক সময়ে বিয়ে করলে এই মেয়ের সমান একটা মেয়ে তার নিজেরও থাকতো।

ইয়াহ আল্লাহ,কেনো আমাকে এতো অসহায় করে বুড়ো বানাচ্চো?

নিজের সকল অভিযোগ, অনুযোগ,আফসোস গিলে খেয়ে মাহাদ পটাপট বলে উঠলো

“আগের গিট টাই টাইট করে বেঁধে ঘুমিয়ে পড়ো।”

মাহাদ সারাদিনের ক্লান্তিতে আর পরিশ্রমের ফলে ওপর পাশ হয়ে খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়লো।

এদিকে ক্যামেলিয়া বহুক্ষণ চেষ্টার পর একটু চোখ লেগে আসার পরই দেখতে পেলো এক বিচ্ছিরি কালো ছায়া যার বড় বড় দাঁত আর নখ রক্তবর্ণ চক্ষু নিয়ে ক্যামেলিয়ার দিকে এগিয়ে আসছে আর বলছে

” তুই সুখে থাকতে চাস?নিঃসঙ্গ মানুষের আবার কিসের সুখ?মৃত্যুই আসল সুখ।চলে আয় আমার সাথে।
আলোতে কোনো সুখ নেই সব সুখ অন্ধকারে।
শিগ্গির আয় বোকা মেয়ে

বলেই ক্যামেলিয়ার দিকে হাত বাড়ালো।

ভয়ঙ্কর এর চিৎকার দিয়ে ক্যামেলিয়া মাহাদকে জাপ্টে ধরলো।

ক্যামেলিয়ার চিৎকারে মাহাদ লাফিয়ে উঠে লাইট অন করে ভয়ার্ত,কম্পনরত ক্যামেলিয়ার মুখশ্রী দেখতে পেলো।
তার সারা শরীর ঘামে ভিজে জপজপে অবস্থা।

গায়ের শাড়ি খুলে বিছানার এক পাশে পড়ে আছে।
মাহাদ উদ্বিগ্ন হয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে জানতে চাইলো

“কি হয়েছে বাবু?
“বাজে স্বপ্ন দেখেছো?

ক্যামেলিয়া ভয়ে আর কান্নার দমকে কথাই বলতে পারছে না।

মাহাদের গলা জড়িয়ে ধরে বহু কষ্টে ভাঙা ভাঙা শব্দে বলে উঠলো

“কেউ আমাকে মরার জন্য ধমকে যাচ্ছে সমানে।আমাকে ওই কালো ছায়াটা সাথে করে নিয়ে যেতে চায়।

কিন্তু আমি যেতে চাইনা মাহাদ ভাই।
প্লিজ আমাকে ওই বিশ্রী লোকের হাত থেকে বাঁচান।
আমি আপনার সাথে বেঁচে থাকতে চাই।
“আমি আপনাকে ভালোবাসি মাহাদ ভাই”
বলেই ঠোঁট উল্টে কেঁদে দিলো ক্যামেলিয়া।

ক্যামেলিয়ার কান্নায় মাহাদের চোখের কোনে অশ্রু জমা হলো।
কোনোমতে ক্যামেলিয়া কে সামলে মাহাদ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

“কেউ তোমাকে আমার থেকে নিয়ে যেতে পারবে না বউ।
আমি কাউকেই তোমার কাছে ঘেঁষতে দেবো না।

যতক্ষন তুমি আমার কাছে থাকবে ততোক্ষণ তুমি নিরাপদ
বলেই মাহাদ ক্যামেলিয়ার কপালে গভীর মমতায় চুম্বন একে দিলো।

সে রাতে আর মাহাদের ঘুম হলো না।

________
সকাল ছয়টা বেজে দশ মিনিট।
বাইরে আলো ফুটেছে আরো অনেক আগে।
কিচিরমিচির শব্দে পাখিরা ডেকে চলেছে।
সারা রাতের ভারী বর্ষনের পর ভোর রাতের দিকে বৃষ্টি থেমেছে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী যেকোনো মুহূর্তে ভারী বর্ষনের সাথে জোরালো বাতাস প্রবাহিত হতে পারে।
সেজন্য সকল রুটের ফ্লাইট আপাতত বন্ধ আছে।

এতে অবশ্য মাহাদের বেশ ভালোই হয়েছে।ছুটি কাটানোর জন্য উপর মহলে জবাবদিহিতা করার কোনো অপশন নেই।

মাহাদের বুকে লেপ্টে শুয়ে আছে ঘুমন্ত ক্যামেলিয়া।
ঘুমের মধ্যেই থেকে থেকে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টালো সে।
দু চোখের চোখের কালো কাজল লেপ্টে আছে মোটা হয়ে।
প্রসাধনী হীন তেল চকচকে ধবধবে সাদা মুখমন্ডল।
ঠোঁটের নিচের কালো তিলটা মাহাদ কে খুব টানছে।

ব্লাউজ আর পেটিকোট এর ফাঁক গলিয়ে ক্যামেলিয়ার তুলোর মতো তুলতুলে সাদা পেট দৃশ্যমান।
বহু কাঙ্খিত শখের বউয়ের এম আকর্ষণীয় রূপে বেসামাল হলো মাহাদ।

শরীরের রক্ত গরম হয়ে ভেতর থেকে বার বার পুরুষত্ব জাগ্রত হয়ে উঠছে।

তবুও বহু কষ্টে নিজের মনে লাগাম দিলো মাহাদ।
দ্রুত চোখ সরিয়ে ক্যামেলিয়া কে বালিশে শুইয়ে দিয়ে ঝট করে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।

মনে মনে নিয়ে নিলো এক কঠিন সিদ্ধান্ত।

আগুন থেকে যতো দূরে থাকা যায় ততোই উত্তম।

#চলবে