#ওগো_বিদেশিনী
#পর্ব_১৪
#সারিকা_হোসাইন
______\\_____
[১৮+ এলার্ট,প্রাপ্তবয়স্ক উন্মুক্ত চেতনার পাঠক পাঠিকার জন্য]
হৈচৈ আর চিৎকার চেঁচামেচি কোলাহলের শব্দে ঘুম ভেঙে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো ক্যামেলিয়া।
কিছুক্ষন মোচড়ামুছড়ি করে আড়মোড়া ভেঙে চট করে বিছানায় উঠে বসলো।
দেয়ালে থাকা ঘড়ির দিকে ঝাপসা দৃষ্টি প্রয়োগ করতেই দৃষ্টি বিস্ফারিত হলো।
সকাল এগারোটা বেজে কুড়ি মিনিট।গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আর কালো মেঘাচ্ছন্ন আকাশের জন্য ক্যামেলিয়া ঠাহর ই করতে পারেনি যে,
বেলা কতো হয়েছে?
নিজের শরীরের অর্ধ বস্ত্র অবস্থা দেখে লজ্জান্নত বদনে দ্রুত পায়ের কাছের শাড়ি টেনে নিজেকে কোনো মতে আবৃত করে কক্ষের চারপাশে দৃষ্টি বুলালো।
প্রথমে কিছু ঠাহর করতে না পারলেও মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োগ করতেই গত রাতের কথা মনে পড়তেই লাজুক হেসে মেঝেতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো ক্যামেলিয়া।
মাহাদের কক্ষের দক্ষিণের জানালার পর্দা সরাতেই অনিন্দ্য হাসি ফুটে উঠলো ক্যামেলিয়ার মুখে।
মাহাদের এই জানালা দিয়ে বাইরের সুইমিং পুলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
এছাড়াও রাতের বেলা কালারফুল নিয়ন বাতির আলোতে খুব সুন্দর লাগে দেখতে।
এই বৃষ্টির মধ্যে মাহাদ,রিজভী,টুসি,সুজানা সুইমিং পুলের পানিতে ঝাপাচ্ছে,সাঁতার কাটছে,একজন আরেকজনকে পানিতে চুবাচ্ছে।
ঘুম থেকে উঠেই এতোগুলো হাসি খুশি মুখ দেখে মন ভরে গেলো ক্যামেলিয়ার।
নিজেকে ওদের দলে সামিল করার জন্য দৌড়ে দ্রুত নিজের রুমে চলে গেলো।
এরপর ফ্রেস হয়ে শাড়ি পাল্টে ফ্লোরাল প্রিন্টের জর্জেট ছোট টপস আর একটা লোজ জিন্স পরে দৌড়ে চলে গেলো ড্রয়িং রুমে।
হঠাৎই শাহানা বেগমের সাথে ধাক্কা লেগে গেলো ক্যামেলিয়ার।
শাহানা বেগম নাক চোখ কুঁচকে বলে উঠলো
“এই লাফাঙ্গা মাইয়া চোখে দেহনা কিছু?”
লজ্জায় ক্যামেলিয়া বার কয়েক শাহানার উদ্দেশ্যে সরি ,সরি বলে উঠলো।
এরপর শাহানা ক্যামেলিয়ার দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলে উঠলো
“ছে ছে।এসব দেহাইয়া আমার ভাতিজার মাথা খাইছো?
ক্যামেলিয়া শাহানার কথার আগা মাথা না বুঝে বাইরের দিকে যেতে নিলেই আবার শাহানা বলে উঠে
“হুনলাম বিদেশ নাকি বিয়া ছাড়াই পোলা মাইয়া এক লগে ঘুমায়।
তা বৈদেশী,তুমিও কি ঘুমাইতা?
এই ধরনের বিদঘুটে প্রশ্নে ক্যামেলিয়ার পায়ের তলার মাটি সরে গেলো।
দু চোখ ভর্তি হয়ে জ্বলের ফোয়ারা নেমে এলো।
সেটা দেখে শাহানা বলে উঠলো
“হাজী বড় পাজি,যেই উচিত কথা খান কৈছি অমনি ঢঙে তার কান্দা আইয়া গেছে গা।
ক্যামেলিয়া কিছু না বলে চুপচাপ চোখের জল মুছে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নিলেই মাহাদের মেজো ফুপুর তেরো বছরের ছোট মেয়ে তুলি এসে ক্যামেলিয়ার হাত খামচে ধরে।
ক্যামেলিয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তুলির দিকে তাকালে তুলি বলে উঠে
“ভাবি টুসি আর সুজানা আপু আপনাকে ডাকছে।আমার সাথে আসুন।
বলেই তুলি একপ্রকার জোর করেই টেনে ক্যামেলিয়া কে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো।
********
সুইমিং পুলে মাহাদ রিজভীর হাফপ্যান্ট খুলে নিয়েছে।
বেচারা রিজভী ছোট একটা যাঙ্গু পড়ে মাহাদকে কাকুতি মিনতি করেই যাচ্ছে।
কিন্তু মাহাদ সাঁতরে পুলের শেষ কিনারায় চলে গিয়ে পতাকার মতো রিজভীর হাফপ্যান্ট মাথার উপর তুলে উড়াচ্ছে।
এই দৃশ্য দেখে ছোট বড় সকলে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে।
মাহাদের প্রাণবন্ত হাসি দেখে নিমিষেই ক্যামেলিয়ার মন ভালো হয়ে গেলো।
পূর্বের কষ্ট ভুলে ক্যামেলিয়া হা হা করে জোরে হেসে উঠলো।
সেই হাসির শব্দে চারপাশ ঝংকৃত হলো।
মাহাদ সব ভুলে নির্মিশেষ ক্যামেলিয়ার পানে নেশাতুর চোখে তাকিয়ে থাকলো।
ওই ধবধবে মায়াবী মুখশ্রী হাজারো চুম্বনে ভরিয়ে দেবার জন্য মাহাদের শূন্য হৃদয় খাঁ খাঁ করে উঠলো।
এদিকে রিজভী সুযোগ বুঝে মাহাদের হাত থেকে কৌশলে তার হাফপ্যান্ট ছিনিয়ে নিয়ে মাহাদকে কাঁচকলা দেখালো।
এটা দেখে ক্যামেলিয়া আরো জোরে জোরে হেসে হেসে গড়াগড়ি খাবার উপক্রম।
রিজভীর প্রতি,আশেপাশের মানুষের প্রতি মাহাদের কোনো খেয়াল নেই।
সে কেবল ক্যামেলিয়ার সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে গিয়েছে।
এই সৌন্দর্য সারা পৃথিবীতে খুঁজলেও পাওয়া যাবে না।
এই হাসি দেখেই মাহাদ কাটিয়ে দিতে পারবে হাজার বছর।
এই দুনিয়ায় মাহাদের আর কিচ্ছুটির প্রয়োজন নেই।
শুধু ক্যামেলিয়া প্রাণ ভরে হাসুক।ভালো ভাবে বেঁচে থাকুক।
হঠাৎই টুসি ডেকে উঠলো
“এই ক্যামু আয় ভিজি”
“এসো ক্যামেলিয়া ভাবি,বৃষ্টির মধ্যে পানিতে ভেজার একটা আলাদা মজা আছে
বলেই সুজানা হাত দিয়ে পানি ছিটিয়ে দিলো ক্যামেলিয়ার পানে ।
ক্যামেলিয়ার পানিতে নামতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে।কিন্তু সে সাঁতার জানে না।
কিছুক্ষন মৌন থেকে ক্যামেলিয়া আমতা আমতা করে বলে উঠলো
“আসলে আমি না, সাঁতার জানিনা!
“সাঁতার জানোনা তো কি হয়েছে?তোমার ছয়ফুট লম্বা স্বামী তো আছে
বলেই ধাক্কা মেরে ক্যামেলিয়া কে পানিতে ফেলে দিলো কুহু।
আচানক ধাক্কায় ভয় পেয়ে গেলো ক্যামেলিয়া।
বেশি পানি না থাকায় পায়ে একটু ব্যাথাও পেলো তবুও সে তা প্রকাশ করল না।
এদিকে কুহুর এমন অভদ্র আচরণে মাহাদ ক্ষেপে গিয়ে ফুঁসে উঠা সাপের মতো বলে উঠলো
“ওকে ধাক্কা মারলি কোন সাহসে?
কুহু কিছু বলার আগেই মাহাদ সাঁতরে ক্যামেলিয়ার কাছে এসে ক্যামেলিয়া কে সোজা করে ধরে উদ্বিগ্ন স্বরে বলে উঠলো
“ব্যাথা পেয়েছো তুমি?
কোথায় লেগেছে দেখি?
মাহাদের রাগী চেহারা আর উদ্বিগ্নতা দেখে ভীত হলো ক্যামেলিয়া।
ব্যাথা লুকিয়ে মিথ্যে হাসির ভান করে বলে উঠলো
“না লাগেনি ,আমি ঠিক আছি।
কুহু কপাল কুঁচকে বলে উঠলো
“আমি কি ব্যাথা দেবার জন্য ধাক্কা দিয়েছি নাকি?
আমি তো জাস্ট মজা করে,,,,,
মাহাদ ধমকে বলে উঠলো
“তোর কাছে কোনো এক্সপ্লেনেশন চাইনি আমি।
কিন্তু তুই যেটা করেছিস ওটা আমার মাথায় থাকলো।
তোকে পরে দেখে নিচ্ছি।
এরপর মাহাদ ক্যামেলিয়া কে ধরে বেশি পানিতে নিয়ে যেতে যেতে বললো
“চলো মজা দেখাই তোমাকে”
মাহাদের অতি পিরিত দেখে কুহুর মনে আগুন ধরে গেলো।
মনে মনে ক্যামেলিয়া কে বহু গালিগালাজ করে ধপ ধপ পা ফেলে বাড়ির ভেতরে চলে এলো।
এদিকে হাটতে হাটতে অথাও পানিতে আসতেই ভয়ে মাহাদের হাত খামচে ধরলো ক্যামেলিয়া।
মাহাদ ক্যামেলিয়া কে আশস্ত করে বলে উঠলো
“আরে পাগলী আমি থাকতে ভয় কিসের?
“তুমি রাজি থাকলে আমি তোমাকে আটলান্টিক মহা সাগরের তলদেশ থেকেও অক্ষত অবস্থায় ঘুরিয়ে আনতে পারবো।
এতটুকু ভরসা নিজের স্বামীর উপর রাখো।
মাহাদের ভরসায় ক্যামেলিয়া একটু ইজি হতেই মাহাদ ক্যামেলিয়ার কোমর চেপে ধরলো।
নিমিষেই অষ্টাদশীর শরীরে বৈদ্যুতিক শক খেলে গেলো।
নাকের ডগা আর গাল রক্তিম আভা ছড়ালো।
নীল চোখের মনি চকচকে হয়ে উঠলো।
বশীভূত মন্ত্রের ন্যায় মাহাদের গলা জড়িয়ে ধরলো।
হঠাৎই রিজভী,সুজানা,আর টুসি বেশি বেশি পানি ছিটিয়ে দিতেই ধ্যান ভেঙে গেলো ক্যামেলিয়ার।
দৃষ্টি ফিরিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে উঠলো
“আমাকে সাঁতার সেখান মাহাদ ভাই।”
ক্যামেলিয়ার আদেশ জো হুকুম মহারানী ভেবে মাহাদ সাঁতার শেখার বেসিক গুলো ক্যামেলিয়া কে বাতলে দিলো।
মিনিট পনেরোর চেষ্টায় ক্যামেলিয়া একটু ভেসে থাকতে পেরেই খুশিতে মাহাদের শার্টের কলার ধরে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।
ক্যামেলিয়ার এহেন আবেদন ময়ী ভেজা স্নিগ্ধ রূপে মাহাদের জান যায় যায় অবস্থা।
*********
আরো কিছু আনন্দ ফুর্তি করে সবাই ভেজা শরীরে পানি থেকে উঠে দাঁড়ালো।
কাপড় বদলানোর উদ্দেশ্যে বাড়ি ফিরতেই ক্যামেলিয়া আর হাটতে পারছে না।
আবার মাহাদের কাছে বলতেও পারছে না।
সবাই ক্যামেলিয়া আর মাহাদ কে ফেলে যার যার মতো বাড়িতে ঢুকে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়েছে।
ক্যামেলিয়া কে এবনর্মাল হাটতে দেখে মাহাদ ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইলো
“তোমার পায়ে কি হয়েছে?
ক্যামেলিয়া দ্রুত স্বাভাবিক হাঁটার চেষ্টা করে বলে উঠলো
“ও কিছুনা,আপনি চিন্তা করবেন না আমার কিছুই হয়নি।
বলেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাহাদের আগে আগে হাঁটা ধরলো।
ধূর্ত বাজ পাখির ন্যায় ক্যামেলিয়া কে ছো মেরে নিজের কাঁধে তুলে বাড়ির দিকে রওনা দিলো মাহাদ।
বাড়ির সকলের সামনে মাহাদ ক্যামেলিয়া কে কাঁধে নিয়েই গটগট পায়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে নিজের রুমে চলে এলো।
মিসেস মিতালি আর মাহতাব চৌধুরী দুজন দুজনের চোখ চাওয়া চাওয়ি করলো।
কুহুকে ভীত সন্ত্রস্ত মনে হলো।
হঠাৎই শাহানা মেয়েকে খোঁচা দিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো
“বৈদেশীর ঘটনা কি?
“কুহু ফিসফিস করে বলে উঠলো―
“মা আমি ওকে ধাক্কা মেরে সুইমিং পুলের কম পানিতে ফেলে দিয়েছিলাম।”
“ওখানে টাইলসে হাটু মুড়ে পরে গিয়েছিলো এই মেয়ে।”
মাহাদ ভাই তখনই আমাকে প্রচুর শাসিয়েছে।
মেয়ের কথা শুনে রেগে গেলেন শাহানা বেগম।
মেয়েকে পিঠে দু ঘা দিয়ে বলে উঠলেন
“অকাজের পরমান রাহস কেন?
কুহু পিঠ হাতড়াতে হাতড়াতে বলে উঠে
“ওকে আমার একদম সহ্য হয় না মা।”
এজন্য জেদের বসে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে এই কাজ করে ফেলেছি।
ওই দর্জাল মাহাদ ভাই এর হাত থেকে আমাকে বাঁচানোর দায়িত্ব তোমার মা!
শাহানা বেগম মেয়ের দিকে রাগী দৃষ্টি দিয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে পরিবেশ বুঝার চেষ্টা করলেন।
———
এদিকে নিজের কক্ষে এসে মাহাদ ক্যামেলিয়া কে ওয়াশরুমে নিয়ে বাথটাবের বেদিতে বসিয়ে বলে উঠলো
“দেখাও দেখি কোথায় ব্যাথা লাগছে।
বহু সময় কাচুমাচু করে টাওয়েল হ্যাঙ্গার থেকে একটা টাওয়েল নিয়ে মাহাদ কে পিছন ঘুরতে বললো ক্যামেলিয়া।
এরপর বহু কষ্টে শরীরের সাথে সেটে থাকা ভেজা প্যান্ট,টপস খুলে বড় একটি টাওয়েল দিয়ে বুক থেকে পা পর্যন্ত পেঁচিয়ে নিলো।
এরপর মাহাদ কে লজ্জা জড়ানো কন্ঠে ডেকে উঠলো অস্ফুট স্বরে
“মাহাদ ভাই”
মাহাদ ক্যামেলিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে ক্যামেলিয়ার দিকে ঘুরে আবারো উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইলো
“কোথায় ব্যাথা লেগেছে বউ”?
ক্যামেলিয়া ধীরে ধীরে লজ্জা অবনত মুখে টাওয়েল হাটু পর্যন্ত তুললো।
ধবধবে সাদা হাঁটুর চামড়া ফেটে র*ক্ত বের হয়ে জমা ধরে রয়েছে।
আর হাঁটুর পুরো ঘুটনী টা টকটকে লাল বর্ন ধারণ করেছে।
মুহূর্তেই মাহাদের রাগ সপ্তম আকাশে পৌঁছে গেলো।
রক্ত চক্ষু নিয়ে ক্যামেলিয়ার দিকে দৃষ্টি প্রয়োগ করে বলে উঠলো
“কুহুর ঠ্যাঙ আমি ভে*ঙে ফেলবো বউ!
তুমি খালি অপেক্ষা করো।
********
টাওয়েল জড়ানো অর্ধ নগ্ন শরীরে ভেজা চুলে ক্যামেলিয়া কে ভীষন আবেদনময়ী মনে হচ্ছে মাহাদের কাছে।
মাহাদের খুব ইচ্ছে জাগলো ক্যামেলিয়ার ব্যাথার্ত স্থানে আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দিতে।
সবকিছু ভুলে মাহাদ ক্যামেলিয়ার দিকে আহত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হাটু মুড়ে বসে ধীরে ধীরে ক্যামেলিয়ার পায়ের পাতা থেকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে হাঁটু পর্যন্ত ছুঁয়ে দিলো।
অষ্টাদশী ক্যামেলিয়া আবেশে শিহরনে চক্ষু মুদে মাহাদের হাত চেপে ধরলো।
পথভ্রষ্টের ন্যায় দুনিয়াবী ভুলে ক্যামেলিয়ার রক্তিম হাঁটুতে গভীর চুম্বন একে দিলো মাহাদ।
সইতে না পেরে মাহাদের পিছনের চুল খামচে ধরলো ক্যামেলিয়া।
হাঁটু ছেড়ে ধীরে ধীরে ক্যামেলিয়ার দিকে এগিয়ে এলো মাহাদ।
মাদকতা মিশ্রিত কন্ঠে ডেকে উঠলো
“ক্যামেলিয়া”
হিপ্নোটিক মানুষের মতো মাহাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ক্যামেলিয়া মাহাদের একদম নিকটে চলে এলো।
আবেশ জড়ানো অস্থির কন্ঠে মাহাদ বলে উঠলো
“তুমি কি পুরোপুরি আমার হতে চাও ক্যামেলিয়া?”
মাহাদের চাওয়া ক্যামেলিয়া বুঝতে পারলো।
একজন আঠারো বছরের মেয়ের কাছে একজন পুরুষের কামুক আহ্বান না বোঝার মতো কঠিন কিছুই না।
যদি মানুষটি হয় বৈধ,পবিত্র তাহলে তো আরো কথা নেই।
মুহূর্তেই ক্যামেলিয়া ঝাঁপিয়ে পড়লো মাহাদের র বুকে।
এরপর লম্বা সরু তুলতুলে আঙ্গুল দিয়ে মাহাদের গাল, নাকের ডগা স্লাইড করতে করতে মাহাদের ভেজা ঠোঁট টিপে ধরলো ক্যামেলিয়া।
এই মুহূর্তে মাহাদের নিজেকে বদ্ধ উন্মাদ লাগছে।
কোনো ভাবেই পুরুষ সত্ত্বাকে শিকল পরিয়ে আটকে রাখা যাচ্ছে না।
ক্যামেলিয়ার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
শরীরের র*ক্ত যেনো টগবগিয়ে ফুটছে।
সকল লাজ লজ্জা ভুলে মনের চাহিদার উপর ভিত্তি করে মাহাদের গলা জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো ক্যামেলিয়া।
মাহাদ সাইকিয়াট্রিস্ট এর নিষেধ ভুলে শরীরের কথা শুনে ক্যামেলিয়ার দখল নিতে উন্মাদ হয়ে উঠলো।
নিজের গায়ের শার্ট সজোড়ে টেনে খুলে ফেললো মাহাদ।
শার্টের বাটন গুলো ছিড়ে ঝরঝর শব্দে বৃহতকার ওয়াশরুমের টাইলসে পড়ে ঘুরতে ঘুরতে স্থির হয়ে গেলো।
মানব মানবী কারোর সেসবে হুশ নেই।
ক্যামেলিয়ার গলার ভাঁজে মাহাদ মুখ ডুবালো।
অনিন্দ্য শিহরনে মাহাদের উন্মুক্ত পিঠে নখের আচর বসিয়ে দিলো ক্যামেলিয়া।
ক্যামেলিয়ার গায়ে জড়ানো বড় টাওয়েল ছুড়ে ফেলে দিলো মাহাদ।
এক ঝটকায় ক্যামেলিয়া কে কোলে তুলে ফিরে এলো নিজের বেডরুমে।
ক্যামেলিয়ার নীল মনির মাদকতা পুরো দমে গ্রাস করলো মাহাদ কে।
লাজুক নীল চোখের বড় বড় পাপড়ির ঝাপ্টানীতে হৃদ গতি তেজ হলো মাহাদের।
অবাধ্য হাতের বিচরণে আর অজস্র দীর্ঘ চুমুর আদরে
দুজন দুজনের শরীরের উষ্ণতা বিনিময়ের পর ডুব দিলো ভালোবাসার উষ্ণ সাগরে।
ক্যামেলিয়ার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া অশ্রু কণা শুষে নিলো মাহাদ।
মাহাদের কাছে নিজেকে আজ পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে।
ক্যামেলিয়া কে পেয়ে তার জীবন সার্থক।
এজিবনে চাওয়ার মতো আর কিছুই নেই তার।
ক্লান্ত ক্যামেলিয়া মাহাদের নগ্ন পিঠ জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।
নিজেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নেশাখোর মনে হচ্ছে।
শরীর যেনো হাওয়ায় ভাসছে।
মাহাদকে আরো বেশি বেশি ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে তার।
মাহাদ কে পেয়ে ক্যামেলিয়ার নিজের জীবনকে সত্যি ধন্য মনে হচ্ছে।
তার বাবা মৃত্যুর আগে ওয়ার্ল্ড এর বেস্ট গিফটাই তার জন্য রেখে গিয়েছে।
মাহাদের প্রতি মুগ্ধতা স্বরূপ মাহাদকে আরো বেশি ভালোবাসার জন্য ক্যামেলিয়ার মন আকুলিবিকুলি করতে লাগলো।
মাহাদের কানের লতিতে আস্তে চুমু খেয়ে সামনের দাঁত দিয়ে মৃদু কামড়ে ধরলো ক্যামেলিয়া।
আহত বাঘের ন্যায় হিংস্র হয়ে উঠলো মাহাদ।
ক্যামেলিয়ার মেদহীন পেটে চুমু খেয়ে আদুরে স্বরে বলে উঠলো মাহাদ
“আবার চাই?
লজ্জায় ঠোঁট কামড়ে চোখ বন্ধ করে বালিশে মুখ লুকালো ক্যামেলিয়া।
মাহাদ যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেলো।
#চলবে
#ওগো_বিদেশিনী
#পর্ব_১৫
#সারিকা_হোসাইন
______★______
সাংঘাতিক জ্বরে ক্যামেলিয়ার সারা শরীর পুড়ে যাচ্ছে এমন অবস্থা।বিকেলের পর থেকেই শরীর ব্যাথায় কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছে ক্যামেলিয়ার।
সারা সন্ধ্যা মেয়েটি কাঁথা মুড়ি দিয়ে মাহাদ কে জড়িয়ে কুঁকড়ে শুয়ে ছিলো ।
মিসেস মিতালি এসে সামান্য খাবার খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে জ্বলপট্টি দিয়ে গেছেন রাত আটটার দিকে।
এদিকে মাহাদ বিচলিত ভঙ্গিতে চেয়ার টেবিলে বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ সাড়ছে।
অফিস থেকে তার ডিউটির লিস্ট পাঠানো হয়েছে।সেটার শিডিউল সেটিং আর ক্যামেলিয়ার ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর প্রেসেসিং নিয়েই কাজ করছে মাহাদ।অনেক গুলো ছুটি সে কাটিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে।
অফিস কোনো ভাবেই আর তাকে ছুটি দিবে না।
এদিকে ক্যামেলিয়ার সময় ও ফুরিয়ে আসছে।
মাহাদ কি করবে না করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।
এই অবস্থায় কোনো মতেই সে ক্যামেলিয়া কে যেতে দিতে পারবেনা।
ক্যামেলিয়া চলে গেলে মাহাদ নিজেই মরে যাবে।
আর ভিসা জটিলতায় মেয়াদ না বাড়াতে পারলে ক্যামেলিয়াকে আটকে রাখার সাধ্যও থাকবে না মাহাদের।
সকল কিছুর চিন্তায় মাহাদের গলা শুকিয়ে কান্না এসে যাচ্ছে।
নিজের চুল নিজেরই ছিড়তে ইচ্ছে করছে।
এদিকে ক্যামেলিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লো।
মেয়েটির মলিন নেতিয়ে যাওয়া মুখশ্রী দেখে কষ্টে মাহাদের কলিজা ফেটে যাচ্ছে।সব কিছুর জন্য নিজেকে দায়ী মনে হচ্ছে।
এপাশ ওপাশ মুরামুড়ি করে কোনো মতে চোখ মেলে তাকালো ক্যামেলিয়া।
বিছানা হাতড়ে মাহাদ কে খুজলো সে।
এরপর খুঁজে না পেয়ে সারা রুমে চোখ বুলাতেই মাহাদের বিচলিত মুখশ্রী নজরে এলো।
কোনো মতে উঠে বসে এলোমেলো পায়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাহাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
মলিন ক্যামেলিয়ার দিকে দৃষ্টি দিয়ে কাজ ফেলে তড়িঘড়ি করে উদ্বিগ্ন ভঙ্গিতে মাহাদ বলে উঠলো―
“আরে বাবু তুমি কেনো উঠেছো?আমাকে ডাকলেই তো আমি চলে আসতাম!
দুই পাশে পা দিয়ে মাহাদের কোলে বসে গলা জড়িয়ে ধরলো ক্যামেলিয়া।
এরপর মাহাদের কাঁধে থুতনি রেখে চিকন ভাঙা স্বরে বলে উঠলো
“সব সময় ডাকতে ভালো লাগে না।
“মাঝে মাঝে আপনার কাছে আসার জন্য মন উত্তাল হয়।
বলেই মাহাদের কাঁধে আবার থুতনি রেখে ক্যামেলিয়া চোখ বুঝে ঘাপটি মেরে পড়ে রইলো।
ক্যামেলিয়ার গায়ের উত্তাপে মাহাদের শরীর ঝলসে যাচ্ছে।
মাহাদের নিজের কাছে নিজেকেই প্রচন্ড অপরাধী মনে হলো।
“সে কি মেয়েটাকে বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে?
ক্যামেলিয়ার পিঠ হাতড়ে আদুরে পরশ বুলিয়ে গালে টুপ করে একটু চুমু খেলো মাহাদ
এরপর তার কাজগুলো দ্রুততার সাথে কমপ্লিট করলো।
মাহাদ তার কাজ শেষ করে ক্যামেলিয়া কে ঐভাবেই কোলে তুলে দাঁড়িয়ে বিছানার দিকে এগিয়ে এসে বিছানায় বসিয়ে দিলো।
ক্যামেলিয়ার পা থেকে হাটু পর্যন্ত কাপড় তুলে জখম হওয়া অংশটা দেখে নিলো।
জায়গাটা কালো নীলচে বর্ণ ধারণ করে আছে।
হঠাৎই মাহাদের মনে এক দুস্টু বুদ্ধি খেলে গেলো।
ক্যামেলিয়ার দিকে আহত দৃষ্টি প্রয়োগ করে বলে উঠলো
“কাল আমরা একটা মজার জিনিস দেখবো ঠিক আছে?
“কি জিনিস?
“সময় হলে দেখবে”
“আমার এখনই শুনতে ইচ্ছে করছে”
তাই নাকি?
বলেই ক্যামেলিয়ার গাল টিপে ধরলো মাহাদ।
ক্যামেলিয়া ছোট বাচ্চার ন্যায় মাথা উপর নিচ করতেই মাহাদ বলে উঠলো
“তোমার শরীর এখন খারাপ,তুমি শুয়ে পড়ো বউ।সকালে নিজ চক্ষেই দেখতে পারবে কি করেছে তোমার পাগল বর।
বলেই ক্যামেলিয়া কে ভালোমতো শুইয়ে দিয়ে মাহাদ ও শুয়ে পড়লো।
*********
রাত এগারোটা বেজে পঁচিশ মিনিট।
নগরের সারা দিনের কোলাহল যুক্ত পরিবেশ ধীরে ধীরে শুনশান হয়ে আসছে।
মেঘ মুক্ত আকাশে ঝলমলে রুপালি চাঁদ পরিলক্ষিত।
―সারাদিনের আনন্দ মজা শেষে রিজভীরা তাদের বাসায় ফিরে এসেছে।
মিসেস নাজনীন সুলতানা বিছানা পত্র গুছিয়ে নাবিল হাসানের শোবার ব্যাবস্থা করলেন।
“মেয়েটা এতোদিনে একটা ভালোবাসময় পরিবার পেলো।
মাহাদ ছেলেটাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়।এ যুগে এসেও এমন ছেলে পাবো ভাবতেই পারিনি।
নাফিজ মেয়ের জামাই চুজ করতে ভুল করেনি নাজু।
বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নাবিল হাসান।
মিসেস নাজনীন মুখে কিঞ্চিৎ হাসি এনে বলে উঠলেন
“মেয়েটার মায়াভরা মুখশ্রী দেখে যে কারো হৃদয় মুষড়ে উঠবে।
এটুকুন বয়সে যেই চাপ সামলেছে!
সকল কষ্ট ভুলে,সুস্থ সুন্দর ভাবে যেনো জীবন যাপন করতে পারে সেই দুয়াই করি।
“কিন্তু বিশাল বড় সমস্যা যে একটা রয়েই গেছে টুসীর মা!
“কিসের শঙ্কা করছো তুমি?”
“ক্যামেলিয়া আদৌ কি সুস্থ হবে?
“এতো গভীরে চিন্তা না করে ওদের সুখী জীবনের কামনা করো।
ঘুমিয়ে পড়ো।অনেক রাত হয়েছে।”
“ঘুম কি আর সহজে আসে নাজু?
মেয়েটা যদি সব ভুলে আরো বেশি ডিসওর্ডার এ আক্রান্ত হয় তখন কি মাহাদ বাঁচবে?
তাড়াহুড়ো করে কোনো ভুল করে ফেললাম নাতো?
“মাহাদ ওকে যেকোনো পরিস্থিতিতে গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিলো।
তুমি চিন্তা করো না টুসীর বাবা।সব ঠিক হয়ে যাবে তুমি দেখে নিও।
“তাই যেনো হয় নাজু।
দুটি জীবন তো ঝড়েই গিয়েছে অবেলায়।
আর যেনো কোনো ঝড় ঝাপটা ওদের জীবনে না আসে।
ইজি চেয়ার থেকে নেমে ছোট ভাই আর বোনের মতো এমিলির স্মৃতি চারণ করতে করতে বিছানায় এসে সটান হয়ে শুয়ে পড়লেন নাবিল হাসান।
**********
রিজভীর দামি মোবাইল নামক যন্ত্রটি হঠাৎই ভো ভো শব্দ তুলে কাঁপতে শুরু করলো।
রিজভী কেবলই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অসময়ে ফোন কখনোই রিজভীর পছন্দ নয়।
এতো রাতের বেলায় কার বা প্রয়োজন পড়লো?
বেড সাইড টেবিলের উপর থেকে ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনে অপরিচিত নম্বর দেখে মুহূর্তেই ভ্রু কুচকালো রিজভী।
নম্বরটি কার হতে পারে সে চিন্তায় মগ্ন হতেই কল কেটে গেলো।
দ্বিতীয় বার আর কোনো কল এলো না।
অপরিচিত নম্বর থেকে কল করার মতো কেউ রিজভীর এই নম্বর জানেনা।
ব্যাবসায়িক কাজকর্মের জন্য আলাদা ফোন রয়েছে।
“তাহলে এটা কার নম্বর?
কৌতূহল দমাতে না পেরে ঘুম বাদ দিয়ে রিজভী সেই নম্বরে কল দিলো।
রিং বাজার সাথে সাথে ওপাশের মানুষটি ফোন রিসিভ করলো কিন্তু কথা বললো না।
মিনিট দুয়েক চুপ করে থেকে রিজভী শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো
“এতো রাতে কেনো ফোন করেছিস সুজানা?”
সুজানা রিজভীর শান্ত কন্ঠে নিজের নাম শুনে ভয় পেয়ে গেলো।
মনের ভেতরে সব কথা তালগোল পাকিয়ে কন্ঠনালীতে এসে আটকে রইলো।
হাত পা অবশ হয়ে মাথা ঘুরে উঠলো।
মনে হচ্ছে হৃদযন্ত্রটা লাফাতে লাফাতে বাইরে বেরিয়ে আসবে।
এবার রিজভীর রাগ সপ্তম আকাশ ছুলো।
“কানে শুনতে পাস না তুই?কি জন্য এতো রাতে ফোন করেছিস?
“তুমি কি করে জানলে এটা আমার নম্বর?
মিনমিন করে সুমিষ্ট স্বরে জিজ্ঞেস করলো সুজানা।
“প্রথমে চিনতে পারিনি,কিন্তু তোর নিঃশ্বাসের শব্দে টের পেয়েছি এটা তুই”!
লির্লিপ্ত উত্তর রিজভীর।
“আমার নিঃশ্বাসের শব্দও তোমার চেনা রিজভী ভাই?
অবাক হয়ে জানতে চাইলো সুজানা।
“শুধু নিঃশাস না আরো অনেক কিছুই চেনা।সেগুলো এখন বলতে ইচ্ছে করছে না।
এতো রাতে না ঘুমিয়ে আমার মাথা খাচ্ছিস কেনো?
“আসলে একটা কথা বলার জন্য ফোন করেছি।
আমতা আমতা করে মিনমিন স্বরে বলে উঠলো সুজানা।
“কি কথা বলতে চাস তুই এই রাত বারোটায়?এখন রাখ খুব ঘুম পাচ্ছে।কাল বলিস!
“এখনই বলতে হবে রিজভী ভাই।না হলে হৃদয় দহনে ম*রে যাচ্ছি।
“আমিও ঘুমে ম*রে যাচ্ছি।
বলেই খট করে লাইন কেটে দিয়ে সাইলেন্ট মোডে ফোন রেখে ঘুমিয়ে পড়লো রিজভী।
রিজভীর এমন আচরণে সুজানার মোটা বিন্দু বিন্দু চোখের জল গাল বেয়ে ঝরে পড়লো।
কাঁপা কাঁপা হাতে আঙুলের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের জল মুছে সুজানা ভেজা কন্ঠে বলে উঠলো―
“তুমি খুব নি*ষ্ঠু*র রিজভী ভাই।”
*********
পুব আকাশে ভোরের সূর্য টকটকে লাল আলো জ্বেলে জানান দিলো সকাল হয়েছে।
নীড় ছেড়ে পাখি গুলো খাবারের সন্ধানে কিচিরমিচির শব্দে চারিদিক মুখরিত করে তুলেছে।
সকালের স্নিগ্ধ ঠান্ডা বাতাসে ক্যামেলিয়ার শরীর কাটা দিয়ে উঠলো।
সারা রাত ক্যামেলিয়ার মাথায় জ্বলপট্টি দিতে দিতে মাহাদ ফ্লোরে বসেই ক্যামেলিয়ার হাতের উপর মাথা রেখে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছে নিজেই জানেনা।
পিটপিট করে ক্যামেলিয়া পেলব আখি পল্লব মেলে আবার বন্ধ করে ফেললো।
বার কয়েক পাপড়ি ঝাপটানোর পর ভালোভাবে চোখ মেলে তাকালো ক্যামেলিয়া।
নিজের হাতের উপর ভারী কিছুর অস্তিত্ব টের পেতেই মাহাদের ক্লান্ত মায়াবী মুখ খানা দৃষ্টি গত হলো।
“তার মানে মানুষটা সারা রাত না ঘুমিয়ে এভাবেই ছিলো?
কষ্ট আর অনুশোচনায় দগ্ধ হলো ক্যামেলিয়া।
ক্ষমতা থাকলে ক্যামেলিয়া মাহাদ কে কোলে তুলে কোনো প্রকার টের না পেতে দিয়ে বিছানায় তুলে ঘুম পাড়িয়ে দিতো।
কিন্তু তার এই শীর্ন শরীরে এতো শক্তি কি আর আছে?
সকল নিস্তব্ধতা ভেঙে হঠাৎই কক্ষের ময়না পাখিটি ডেকে উঠলো
“ক্যামেলিয়া, ক্যামেলিয়া”!
নিমিষেই ঘুম ছুটে গেলো মাহাদের।ধড়ফড় করে উঠে দাঁড়ালো।
পরিস্থিতি ঠাহর করার আগেই ক্যামেলিয়া মাহাদের হাত টেনে ধরে তার পাশে শোবার আহ্বান জানালো।
মাহাদ হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ক্যামেলিয়ার কপালের তাপমাত্রা দেখে কিছু বুঝতে না পেরে থার্মোমিটার পুরে দিলো ক্যামেলিয়ার মুখে।
মিনিট দুয়েক পর সেটা বের করে অভিজ্ঞের ন্যায় পর্যবেক্ষণ করে বলে উঠলো
“জ্বর নেই।”
জ্বলপট্টির টাওয়েল,পানি সব কিছু সরিয়ে মাহাদ ক্যামেলিয়াকে জড়িয়ে ধরে কপালে গভীর চুম্বন একে শুয়ে পড়লো।
ক্যামেলিয়ার মরুভূমির ন্যায় শুষ্ক ঠোঁটে ঠোঁট ছোয়ালো মাহাদ।
একটু আদরের লোভে মাহাদের বুকে গুটিসুটি মেরে চুপটি করে শুয়ে মাহাদের উপর পা তুলে দিলো ক্যামেলিয়া।
মাহাদের ইচ্ছে করছে এক্ষুনি ক্যামেলিয়াকে দুমড়েমুচড়ে ফেলতে।
কিন্তু সকল দিক বিবেচনা করে মনের ইচ্ছেকে মাটিচাপা দিয়ে কিঞ্চিৎ ঘুমানোর চেষ্টা চালালো।
********
মাহাদের বাকি দুই ফুপু বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হতেই নিজেদের কর্ম ব্যাস্তায় তাদের বাসায় ফিরে গিয়েছে।
এমনিতেও তারা যেহেতু ঢাকার মধ্যেই থাকে তাই তারা চাইলেই যখন তখন এ বাসায় আসতে পারে।
মিসেস মিতালি আর মাহতাব চৌধুরী সেজন্য থাকার জন্য এতো জুরাজুরি করেন নি তাদের।
এদিকে মিসেস শাহানা সকলের বড় বিধায় উনার অনেক আগে গ্রামে বিয়ে হয়েছে।
উনি আর কখন না কখন আসতে পারবে আর হৃদিতার সাথে বহু দিনের সাক্ষাৎ নেই সেই বাহানায় রয়ে গিয়েছেন।
হৃদিতা আর পাঁচ দিন পর আসবে।উনি দেখা করেই চলে যাবেন।
উনার আচরণ মাহাদদের বাড়ির কারোর পছন্দ নয় বলে শাহানা থেকে যাওয়াতে কারো মধ্যেই সেরকম খুশি দেখা গেল না।
এসব বুঝেও শাহানা গায়ে মাখলেন না।
তিনি যেই উদ্দেশ্য নিয়ে এবাড়িতে এসেছেন সেই উদ্দেশ্যে সফল হয়ে তবেই তিনি গ্রামে ফিরবেন।
সে জন্য যা যা করতে হয় সব তিনি করতে রাজি।
মাহাদ কতোদিন ওই বৈদেশী কে আগলে রাখতে পারে সেটা শাহানা দেখে ছাড়বেন।
*******
সকালের খাবার শেষ করতে করতে সকলের প্রায় দশটার মতো বেজে গেলো।
মেঘের কোলে রোদ হেসেছে চারপাশে এমন অবস্থা।
আসলে বর্ষাকালে প্রকৃতি কখন কি রূপ ধারণ করে বলা মুশকিল।
এই বৃষ্টি মেঘ তো এই রোদ্দুর।
ক্যামেলিয়াকে নিয়ে মাহাদ লিভিং রুমের সোফায় বসে বসে মোবাইলে কিছু একটা দেখাচ্ছে।সেটা দেখে ক্যামেলিয়া হেসে কুটি কুটি হয়ে মাহাদের গায়ে ঢলে পড়ছে ।
ক্যামেলিয়া মোবাইলে মগ্ন হলেও মাহাদের মাথায় খেলে যাচ্ছে নানান ক্রিটিক্যাল ভাবনা।
শিকার কে কোন দিক দিয়ে ঘায়েল করবে সেটার স্কোপ খুঁজে চলেছে মাহাদ।
এদিকে কুহু মুখে ক্রুর হাসি নিয়ে এক কাপ গরম ফুটানো পানিতে কফি ঢেলে মাহাদের আড্ডায় শামিল হবার জন্য এগুতে লাগলো।
“ক্যামেলিয়ার হাসি কান্নায় পরিণত করাই তার একমাত্র মুখ্য কাজ।”
চোখের সামনে শিকার কে এগিয়ে আসতে দেখে ধূর্ত শেয়ালের মতো উৎ পেতে রইলো মাহাদ।
কুহু এগিয়ে আসতেই মাহাদ তার লম্বা পা বাড়িয়ে ল্যাঙ মারতেই গরম কফির মগ সহ পা মচকে পড়ে গেলো কুহু।
নিমিষেই কুহুর আর্তনাদে লিভিং রুম ভারী হয়ে উঠলো।
ভদ্র বাচ্চার ন্যায় মাহাদ চুপ করে ক্যামেলিয়ার দিকে তাকিয়ে কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো।
অবাক ক্যামেলিয়ার বুঝতে পিকো সেকেন্ড সময় ও লাগলো না যে,ঘটনা টা কে ঘটিয়েছে।
মেয়ের আর্তনাদে শাহানা দৌড়ে এসে পরিবেশ আরো উত্তপ্ত করে ফেললেন।
মিসেস মিতালি,আর মাহতাব চৌধুরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন
“এই শুকনো খোলামেলা মেঝেতে তুমি পড়লে কি করে কুহু?
এক দিকে পায়ের ব্যাথা অন্য দিকে গরম কফি শরীরে পরে বিভিন্ন জায়গায় জ্বলে যাচ্ছে।
কুহু মুখে কিছুই প্রকাশ করতে পারলো না।
শুধু কেঁদেই চললো।
মাহাদের দিকে কুটিল দৃষ্টি প্রয়োগ করে শাহানা যা বুঝার তা বুঝে গেলেন।
মনে মনে বলে উঠলেন
“এর চাইতে বেশি কষ্ট তোকে আমি দেবো মাহাদ।
“শরীরের ব্যাথার চাইতে মনের ব্যাথা বেশি দীর্ঘস্থায়ী এটা আমি তোকে হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দেবো।
#চলবে।