#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৪৫
_________________
সকালের ঘুরাঘুরি শেষে বাড়ি ফেরার পর আহির সঙ্গে আর কথা হয়নি হ্যাভেনের। বিয়ের অনুষ্ঠান চলাকালীন দু’একবার দেখা হয়েছে তবে কোন বাক্য বিনিময় হয়নি। সন্ধ্যার পর কনে বিদায়ের ক্ষণে দূর থেকে সকলের পাশাপাশি আহিকেও অশ্রুপাত করতে দেখলো হ্যাভেন। এ বাড়ির সকলকে খুব তাড়াতাড়িই আপন করে নিয়েছে আহি। নিজেকে যতোই কঠোর প্রমাণ করার জন্য ওঠে পড়ে লাগুক না কেনো মেয়েটার মন ভীষণ নরম। সকলেই ভীষণ কান্নাকাটি করছে। রিদির মা জ্ঞান হারিয়েছে তাই সকলে তাকে ধরাধরি করে ভিতরে নিয়ে গেছে। একে একে সকলেই ভিতরে যাচ্ছে। হ্যাভেন আহিকেও ব্যস্ত ভঙ্গিতে ভিতরে যেতে দেখলো। ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে সেও হ্যারিকে কল করে ছাদের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।
.
রাত আট টা। বাড়ির মুরব্বিরা বসে গল্প গুজব করছে। যাদের খাওয়া প্রয়োজন তারা খেয়ে নিচ্ছে। আত্মীয় স্বজনরা যে রুম ফাঁকা পেয়েছে সে রুমেই শুয়ে বসে রেষ্ট করছে। শাড়ি পাল্টানোর জন্য
কোন রুম ফাঁকা না পেয়ে নিরাশ হয়ে নানুমনির রুমে গেলো আহি। সেখানেও একি অবস্থা। রুবিনা,রত্না আরো ক’জন মহিলা মিলে আজ কে কোন রুমে শুবে তা নিয়ে আলোচনা করছে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নানুমনির রুমের সামনে থেকেও সরে গেলো সে। আর বুঝলো আজ রাতে শোয়া নিয়ে বেশ ঝামেলা পোহাতে হবে। না জানি কতোজনকে গাদাগাদি করে ঘুমাতে হবে। ভাবতেই অস্থির হয়ে ওঠান পেরিয়ে চাপকলের কাছে এসে কল চেপে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিলো। শাড়ি চেঞ্জ করতে না পারলেও মুখের মেক-আপ সহ লিপস্টিক কাজল ওঠাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। পাশের বাথরুম থেকে ফ্রেশ ওয়াশ বের করে সেটি দিয়ে ভালো ভাবে মুখ ধুয়ে নানুমনির রুমে গিয়ে টিস্যু পেপার দিয়ে মুখ মুছে নিলো। ভাবলো এবার নানুমনির কাছে একটু বসবে। কিন্তু চেয়ে দেখলো এতো মানুষের মাঝে একটু বসার জায়গাও নেই। গাদাগাদি করে বসা গেলেও এদের ভীরে প্রচন্ড অস্বস্তি লাগবে। তখনি মনে পড়লো হিয়া,শশীদের কথা। আর এও মনে পড়লো তারা সকলে মিলে ছাদে ছোট খাটো পার্টির আয়োজন করেছে। কি সব ছাইপাসও নাকি গিলবে ভাবতে ভাবতে সেও ছাদে চলে গেলো। এবং দেখতে পেলো সকলে মিলে বেশ আড্ডার আসর জমিয়েছে। তাদের থেকে বেশ দূরে বর্ডার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফোঁকছে হ্যাভেন। পড়নে আঠারো,ঊনিশ বছরের যুবকদের মতো সাদা একটি শর্ট প্যান্ট, কালো পাতলা একটি টিশার্ট। চোখ, মুখ কুঁচকে হ্যাভেন থেকে চোখ সরিয়ে হিয়া,হ্যারি,হিরা,শিফা,শশী,রিমনের দিকে তাকালো। তারা কোন একটা খেলা খেলছে। কিছু সময় খেয়াল করতেই বুঝলো তারা ট্রুথ এন্ড ডিয়ার খেলছে। মৃদু হেসে তাদের দিকে এগিয়ে গেলো সে। তাকে দেখে সকলেই হৈহৈ করে ওঠলো তখনি পিছন তাকালো হ্যাভেন। আহি’কে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো এবং উৎকন্ঠা হয়ে বললো,
-‘তুমি এখানে কেনো যাও নিচে যাও। ঘুমিয়ে পড়ো গিয়ে ‘।
আশ্চর্যান্বিত হয়ে হ্যাভেনের দিকে তাকালো আহি। তারপর হিয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো,
-‘ এখানে আমার আসা নিষেধ কেউ বলোনি তো ‘?
শিফা বাদে প্রায় সকলেই কাচুমাচু হয়ে বসে রইলো। হিয়া ইশারায় ইঙ্গিতে বোঝালো তারা একটুআধটু ড্রিংক করবে আজ। আহি কিছুটা বুঝলেও ক্লিয়ার ভাবে জানতে চাইলো। তাই হিয়া ওঠে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বললো,
-‘ ভাবি অনেক কষ্টে দাদানকে রাজি করিয়েছে। বিয়ারের ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু দাদানের শর্ত ছিলো তোমাকে এসবে নেওয়া যাবে না ‘।
কথাটা শুনে আহি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে হ্যাভেনের দিকে তাকিয়ে হিয়া’কে বললো,
-‘ আচ্ছা তোমরা এনজয় করো আমি তোমার দাদানের সঙ্গে কিছু জরুরি কথা বলেই চলে যাবো ‘।
সারাদিনে আহি বেশ খেয়াল করেছে হ্যাভেন এবং রিজভীকে। দুজনেই দুজনকে এড়িয়ে চলেছে কেউ কারো সঙ্গে কথা বলেনি। হিয়ার সঙ্গে স্বাভাবিক হতে পেরেছে অথচ রিজভীর সঙ্গে হতে পারেনি। তাই আহি ভেবেছিলো এ বিষয়ে হ্যাভেনের সঙ্গে কথা বলবে। হ্যাভেনকে এক পাশে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এ সুযোগ টা’কেই কাজে লাগালো৷ গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে হ্যাভেনের ডান পাশে দাঁড়ালো সে। হ্যাভেন সিগারেটে শেষ কয়েক টান দিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে বাম পাশে মুখ ঘুরিয়ে ওষ্ঠজোরা একবার চৌকা করে ধোঁয়া ছাড়লো তো আরেকবার সম্পূর্ণ হা করে ধোঁয়া ছেড়ে ডানপাশে আহির দিকে চেয়ে মুচকি হাসি দিলো। আহি শাড়ির আঁচলে মুখ চেপে চোখ কটমট করে চেয়ে দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
-‘ আহা মনে হয় বিশ্বজয় করলেন এমনভাবে হাসছেন ‘?
হ্যাভেন ভ্রু নাচিয়ে ওষ্ঠ কোণে দুর্বৃত্ত হাসি ফুটিয়ে উত্তর দিলো,
-‘ বলতে পারো বিষয়টা তেমনই। বউয়ের সামনে মাথা উঁচু করে বুক ফুলিয়ে ক’জন এভাবে সিগারেট ফোঁকতে পারে ‘?
হাসলো আহি। হাসিটায় কতোটা অপমান মিশানো ছিলো তা শুধু হ্যাভেনই জানে। তবুও আহির তিক্ত বুলি শোনার অপেক্ষাতে ছিলো৷ তার অপেক্ষাটি খুব বেশী দীর্ঘ করলো না আহি। দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বললো,
-‘ হ্যাঁ… বুক ফুলিয়ে, মাথা উঁচু করে দুনিয়ার যতো অপকর্ম আছে তা কেবল আপনার দ্বারাই সম্ভব ‘।
-‘এই শোনো ঝগড়া করার মুড নেই। তোমরা মেয়ে’রা প্রচন্ড ঝগরাটে হও। নিচে যাও আর ঘুমিয়ে পড়ো সারাদিন বসার জন্য তেমন সুযোগ পেয়েছো বলে মনে হচ্ছে না। সো রেষ্ট করো গো ‘।
-‘এই আপনার সমস্যা কি এমনিতে তো গা ঘেঁষে থাকার চেষ্টা করেন এখন তাড়িয়ে দিচ্ছেন কেন? আমি আপনার সঙ্গে খোশগল্প করার জন্য আসিনি বরং প্রয়োজনেই এসেছি। আর শুনুন এখানে কি হচ্ছে সেটাও আমি জানি তাই অপকর্ম নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই ‘।
মুখের ওপর থেকে আঁচল সরিয়ে বেশ মেজাজ দেখিয়ে এক দমে কথাটা বললো আহি। হ্যাভেন তার দিকে ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আহির নজরও তার দিকে তীক্ষ্ণ। এক ঢোক গিলে দৃষ্টিতে শীতলতা মিশিয়ে মাতাল করা কন্ঠে হ্যাভেন প্রশ্ন করলো,
-‘কি বলবে বলো ‘?
হ্যাভেনের কন্ঠস্বর শুনে বুকটা কেঁপে ওঠলো আহির। দৃষ্টির প্রখরতা কমিয়ে সচকিত হয়ে প্রশ্ন করলো,
-‘ নেশা করেছেন ‘?
বাঁকা হাসলো হ্যাভেন দৃঢ় দৃষ্টি তে তাকিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বললো,
-‘ করতে তো চাই নেশা তো ধরা দেয় না ‘।
-‘ মানে ‘?
-‘ কিছুনা তুমি কিছু বলতে এসেছো সো সেটা বলো আমাতে হারাতে নিশ্চয়ই আসোনি তাহলে কেনো হারাচ্ছো ‘?
-‘ আশ্চর্য! আপনি নিজেকে কি মনে করেন ‘?
-‘ আরে রেগে যাচ্ছো কেন তুমি কি বলতে এসেছো সেটা বলো ‘।
চরম অস্বস্তি নিয়ে তীক্ষ্ণ কন্ঠে আহি বললো,
-‘ সারাদিন খেয়াল করলাম আপনি এবং রিজভী ভাইয়া দুজন দুজনকে এড়িয়ে চলছেন৷ কেউ কারো সঙ্গে কথা বলছেন না এটা কি ঠিক? হিয়ার সঙ্গে যখন স্বাভাবিক হয়েছেন রিজভী ভাইয়ার সঙ্গেও স্বাভাবিক হয়ে যান ‘।
চোখে, মুখে গম্ভীরতা টেনে এনে আহির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে হ্যাভেন বললো,
-‘ এসব বিষয়ে এতো মাথা ঘামাচ্ছো কেন আহি? সব ঠিক হয়ে যাবে পরিস্থিতি’টা এমন তৈরি করেছে ওরা যে স্বাভাবিক হতে টাইম লাগবে। যাই হোক না কেনো হিয়া আমার ছোট বোন। আমি রিজভী’কে ক্ষমা করতে পারছিনা ওর উচিত হয়নি বিয়ের আগেই এভাবে আমার বোনকে স্পর্শ করা ‘।
-‘ হ্যাভেন… হিয়া আপনার বোন তাই মেনে নিতে পারছেন না অথচ হিরা অসংখ্য মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জরিয়ে ডেটে যাচ্ছে। আপনি একবার নিষেধ অবদি করেন নি কখনো। ও যেসব মেয়েদের সঙ্গে জড়াচ্ছে তারা আপনার বোন না কিন্তু তারা আপনার মতোই কারো না করো বোন এটা কেন ভাবেন না’।
-‘ তুমি ঐসব মেয়েদের সঙ্গে হিয়ার তুলনা করতে পারোনা। তাছাড়া হিরার সঙ্গে যাদের রিলেশনশিপ আছে তাদের ক্যারেক্টার সম্পর্কে বেশ ধারণা রয়েছে আমার৷ যদি অন্যায় দেখি অবশ্যই নিষেধ করবো। যতোক্ষণ মেয়ে রাজি ততোক্ষণ আমি কিছু বলতে পারিনা। সবারই ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা রয়েছে সেখানে আমি হস্তক্ষেপ করতে পারিনা। যতোটুকু পারি শাসন করি। গোপনে কার সঙ্গে কি করে বেড়াচ্ছে এসব কানে এলেও সরাসরি এট্যাক করতে পারিনা ‘।
হ্যাভেনের কথাটি পছন্দ হলো না আহির। তাই ক্ষুব্ধ হয়ে বললো,
-‘ আমি কারো সঙ্গে তুলনা করছি না৷ আর আপনি এসব কি বলছেন হিরা যাদের সঙ্গে মিশে তাদের ক্যারেক্টার ভালো না তাহলে আপনার ভাইও ক্যারাক্টার লেস ‘।
-‘ উত্তেজিত হচ্ছো কেনো আহি? আমি তো বলিনি হিরা গুড ও যেমন যাদের সঙ্গে মিশে তারাও তেমন ‘।
-‘ আপনি এসব জেনে বুঝেও চুপ থাকবেন ‘?
-‘ আরে অদ্ভুত ওরা ওপেনলি কিছু করছে? নাকি দিন-রাত আমার বাড়িতে বসে আমার সমানে এসব করে বেড়াচ্ছে? এ দুনিয়াতে ক’জনের খবর রাখো ক’জনের ব্যপারে জানো তুমি? হিরা আমার ভাই তার দশটা গার্লফ্রেন্ড আছে তাদের সঙ্গে সে কতটা ঘনিষ্ঠ তা শুধু সে আর তার গার্লফ্রেন্ডরাই জানে। আমরা দূর থেকে শুনি সে হিসেবে শাসন যা করা লাগে করি। এর বাইরে আর কি করবো ‘।
বেশ অনেকটাই রেগে গেছে হ্যাভেন৷ আহি নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে। সত্যি সে কি বলতে এসে কোন টপিকে চলে গেছে। এতো ঘাটাঘাটি উচিত হয়নি তার। বর্তমান যুগটাই এমন তারওপর যারা এসব রাজনীতিতে জরিয়ে আছে তাদের ক্যারেক্টারের কোন ঠিক নেই। শুধু শুধু কথা বাড়ালো সে। মনটা খারাপ হয়ে গেলো আহির৷ অনেকদিন পর হ্যাভেন তার ওপর এভাবে সিরিয়াস রাগ দেখালো। বুকটা কেমন কাঁপছে তার। তাই সিদ্ধান্ত নিলো চলে যাবে ছাদ থেকে। এক পা পিছিয়ে নিজেও ঘুরতে যাবে তখনি হাত চেপে ধরলো হ্যাভেন। চমকে তাকালো আহি। হ্যাভেনও তার চিকচিক করে ওঠা দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলালো। নরম কন্ঠে বললো,
-‘ আহি…যাদের চরিত্রহীন থাকে তাদের চরিত্র নিয়ে এতো ঘাটাঘাটি করে কি লাভ? যেসব মেয়েরা রাত নেই দিন নেই ক্লাবে যায় এক ঝাঁক ছেলেদের সঙ্গে পার্টি করে। সেসব মেয়েদের চরিত্র কতোটা ভালো হতে পারো বলো? হিরা অমন মেয়েদের সঙ্গেই সম্পর্কে জরায়। কোন মেয়ের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলা খেলে না। জানো তো কাকি নেই কাকা কাছে থাকে না। বেপরোয়া ভাবে চলা ফেরা করে। আমার জীবনে যেমন তোমাকে পেয়েছি ওর জীবনেও এমন একজন শুভাকাঙ্ক্ষী এলে সবটা ঠিক হয়ে যাবে ‘।
কিছু বললো না আহি শুধু হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। হ্যাভেন কপাল কুঁচকে চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো,
-‘ রাগ করছো কেনো ‘?
-‘ রাগ করিনি ছাড়ুন আপনারা আপনাদের কাজ করুন আমি যাই ‘।
-‘ আচ্ছা গিয়ে শুয়ে পড়ো সারাদিন বেশ ধকল গেছে এখন ঘুমানো উচিত’।
-‘ হ্যাঁ চৌদ্দ জন গাদাগাদি করে শুয়ে ঘুমাই গিয়ে ‘। বলেই এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে দিলো আহি। সঙ্গে সঙ্গে আবারো হাত টেনে বর্ডার ঘেঁষে দাঁড় করালো হ্যাভেন। আহির দু’পাশে হাত দিয়ে বর্ডার চেপে ধরলো। যাতে আহি যেতে না পারে। আহি এতে রেগে গিয়ে বললো,
-‘ এসব কি হচ্ছে ‘?
-‘ আমারও কিছু জরুরি কথা আছে সুন্দরী ওয়েট ওয়েট ‘।
হ্যাভেনের মুখের গরম শ্বাস আহির মুখে পড়তেই চোখ, মুখ কুঁচকে ফেললো আহি বললো,
-‘ ইশ সরুন যা বলার সরে বলুন ‘।
মৃদু হেসে সরে দাঁড়ালো হ্যাভেন আহিও সোজা হয়ে স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়ালো।
আজ যে শোয়া নিয়ে ভেজাল হবে। এ বিষয়টা আগে ভেবে দেখেনি হ্যাভেন। তবে এ বাড়িতে ঘর তো কম নেই আবার মেহমানও কম নেই। এক বিছানাতে কমপক্ষে তিন,চারজন করে শুতেই হবে। নিচেও বিছানা পাততে হবে হয়তো৷ সে থাকতে আহিকে রাতে শোয়া নিয়ে প্রবলেম ফেস করতে হবে? তারপরই মনে পড়লো চিলেকোঠার ঘরটির কথা। নিচে সবাই যেভাবে খুশি থাকুক সে আর আহি না হয় আজ রাতটা ছাদে দাঁড়িয়ে খোলা আকাশ,প্রকৃতির নির্মল বাতাস উপভোগ করবে। প্রকৃতির সকল স্নিগ্ধতা ফুরিয়ে যখন দুচোখে ক্লান্তি নামবে তখন না হয় চিলেকোঠার ছোট্ট ঘরটিতে একজোরা চড়ুই পাখির মতোন স্থান দখল করে নেবে।
খানিকটা বিচলিত হয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে হ্যারিকে ম্যাসেজ করলো হ্যাভেন। ম্যাসেজটা ছিলো এমন –
-‘ ব্রাদার সকলকে নিয়ে নিচের কোন ঘরে বা প্যান্ডেলের ভিতর চলে যা। আর হ্যাঁ যাওয়ার আগে অবশ্যই ছাদের দরজাটা বাইরে থেকে লাগিয়ে যাবি পারলে তালা মেরে দিয়ে যাস। সময় দশ মিনিট। দশমিনিটের এক সেকেণ্ড সময়ও যদি পাস হয় তাহলে শশীর সঙ্গে তোর বিয়ের উদ্যেগটা এবার আমিই নেবো ‘।
হ্যারি ম্যাসেজটা পাওয়ার ঠিক দশমিনিটের মধ্যেই পুরো ছাদ খালি হয়ে গেলো। সেই সাথে ছাদের দরজা লাগিয়ে দিয়েও গেলো। আর যাই হোক বিয়ে সাদির প্রতি তার কোন ইন্টারেস্ট নাই। তাছাড়া শশীর প্রতি তার ফিলিংসের ‘ফ’ ও কাজ করেনা৷ হ্যাভেনের কপালে শিফা যেমন শনি তার কপালে শশী তেমন রবি’র মতোন। তবে এই দু’বোনের যদি আর একটা ছোট বোন থাকতো সেটা অবশ্যই হিরার জন্য মঙ্গল হতো।
যদিও এমন জঘন্য থ্রেট না দিলেও ভাইয়ের কাজ সে করে দিতো হ্যারি তবুও থ্রেট দেওয়ার কারণে প্রচন্ড সিরিয়াস হয়ে কাজটা কমপ্লিট করলো। এই নিয়ে শিফার প্রশ্নের শেষ ছিলো না। সবাইকে ম্যানেজ করলেও এই একটা লেডিকে ম্যানেজ করতে তার বেশ বেগ পেতে হয়েছে।
.
এতো কিছু ঘটে গেলো। অথচ এর কানাকড়িও টের পেলো না আহি। সে রাতের আঁধারে প্রকৃতির নির্মল বাতাসের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে হ্যাভেনের পাশেই ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে আছে। অপেক্ষা করছে হ্যাভেনের থেকে জরুরি কথা শোনার জন্য৷ আর হ্যাভেন উদ্বিগ্ন মনে ভেবে যাচ্ছে ঠিক কোন টপিক নিয়ে কথা শুরু করবে।
চলবে…
#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৪৫ (বর্ধিতাংশ)
_________________
-‘তুমি গাইতে পারো আগে কখনো বলোনিতো ‘?
-‘আপনি বুঝি জানতে চেয়েছেন খুব ‘?
ভর্ৎসনা করে কথাটি বলেই হ্যাভেনের দিকে আড় চোখে তাকালো আহি। হ্যাভেন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বর্ডারের ওপর বসে দুপাশে দুহাত রাখলো। ইদানীং হ্যাভেনের চাহনী বড্ড অসহনীয় লাগে আহির। এই অসহনীয়তা আগেও হতো কিন্তু তা সহনশীল করে নিয়েছিলো। যেদিন থেকে সে ও বাড়ি ত্যাগ করেছে, হ্যাভেনকে ত্যাগ করেছে সেদিনের পর থেকে হ্যাভেনের দৃষ্টিজোড়ায় খুঁজে পায় গভীরতা। যে গভীরতার অন্ত তার জানা নেই।
-‘ এখন জানতে চাই বলো আর কি পারো তুমি? আর কি করতে ভালো লাগে তোমার ‘?
-‘ এটাই আপনার জরুরি কথা ‘?
প্রশ্নটি করেই পিছনে তাকালো আহি। দেখলো পুরো ছাদটাই ফাঁকা। নিচে বিছানো পাটি টা নেই এমনকি একটা চেয়ার অবদিও নেই। ভ্রু কুঁচকে সচকিত হয়ে আহি বললো,
-‘ একি! ওরা সব কোথায়? আল্লাহ আমি কথার তালে এতো সময় পার করে দিয়েছি। আর আপনি তো ভারি অসভ্য এতো সময় ধরে বকবক করছেন একটা বার বলবেন তো ওরা চলে যাচ্ছে। আর ওরাও বা কি আমায় একা ফেলে চলে গেলো ‘?
-‘ একা কোথায় আমি আছি তো ‘?
-‘ আপনি আছেন কই আমি তো দেখতে পাচ্ছি না ‘।বলেই এদিক সেদিক তাকিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো আহি। হ্যাভেন হুড়মুড়িয়ে ওঠে আহির সামনে দাঁড়ালো। বললো,
-‘ ওরা নিচে আড্ডা দিচ্ছে হয়তো, তুমি কিছু সময় এখানে থেকে যাও প্লিজ। আমার সঙ্গে একটু সময় কাটাও ভালো লাগবে। আমার অনেক কথা আছে থেকে যাও প্লিজ ‘।
হ্যাভেনের অমন কাতর আবেদনে নম্র হলো আহি। বললো,
-‘ আচ্ছা তবে বেশী সময় কিন্তু থাকবো না ‘।
-‘ ওকে ‘।
বলেই মৃদু হাসলো হ্যাভেন অথচ মনে তার তীব্র উত্তেজনা কাজ করছে। আহি নম্র ভণিতায় আবারো বর্ডারের কাছ ঘেষে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে চেয়ে বললো,
-‘বোধহয় বৃষ্টি হবে আজ আকাশে চাঁদ নেই মেঘে ঢাকা পড়ে গেছে। বাতাসেও কেমন হিম অনুভূত হচ্ছে ‘।
আহির কথায় পাত্তা না দিয়ে তার অতি নিকটে পাশে দাঁড়িয়ে হ্যাভেন বললো,
-‘ তোমায় পারপেল কালারে অসাধারণ লাগে। অনলাইন থেকে নিজে পছন্দ করে কিনেছি সবটা। ফার্স্ট বেশ চিন্তিত ছিলাম তুমি একসেপ্ট করবে কিনা। কিন্তু নানুমনি ইজ গ্রেট!
-‘ নানুমনি না বললে কিছুই একসেপ্ট করতাম না ‘।
-‘ একসেপ্ট করেছেন বলে ধন্যবাদ আপনাকে ‘।
-‘ আপনাকে ধন্যবাদ দিব এজন্যই যে দুবছর একসাথে থাকার মান রেখেছেন আমার পরিহিত পোশাকের মাপ জেনে এবং মনে রেখে ‘।
-‘ হাজব্যান্ড আমি তোমার। তোমার ছোট খাটো বিষয় থেকে শুরু করে সব বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আমার কর্তব্য ‘।
ঘাড় ঘুরিয়ে হ্যাভেনের দিকে দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকালো আহি এবং দৃঢ় কন্ঠে বললো,
-‘ এতো গর্বিত হচ্ছেন কেনো আপনি? এখানে গর্বিত হওয়ার কিছু দেখতে পারছিনা৷ দু’টো বছর আমাকে ব্যবহার করেছেন। অথচ আমার ব্যবহৃত বড় কাপড় থেকে শুরু করে ছোট কাপড়গুলোরও সাইজ জানবেন না? নারীর অন্তর্বাসের সাইজ জানাটা গর্বের বিষয় নয় বরং নারীর মনের প্রগাঢ়তা বোঝাই গর্বের বিষয় ‘।
খানিকটা বিরক্ত হলো হ্যাভেন। দীর্ঘ এক শ্বাস ছেড়ে বললো,
-‘ একটু মিষ্টি করে কথা বলতে পারো না ‘?
-‘ ইচ্ছে করে না ‘।
-‘ ওকে ফাইন তুমি চুপ থাকো আমি বলি ‘।
-‘ ওওও আচ্ছা তাই… তা আমি জেগে স্বপ্ন দেখবো না ঘুমিয়ে ‘?
-‘ মানে ‘?
-‘ মানে হলো দ্যা গ্রেট হ্যাভেন তালুকদার! মিষ্টি ভাষায় কথা বলবে তা আমায় বিশ্বাস করতে হবে ‘?
-‘ ইয়েসস করতে হবে ‘।
আহির দিকে খানিকটা ঝুঁকে কথাটি বললো হ্যাভেন৷ আহি পিছিয়ে গেলো হ্যাভেনও সরে গিয়ে বর্ডারে দুহাত ঠেকিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
-‘ হ্যাভেন নামের অর্থ’টা সবাই জানে তুমিও জানো। কিন্তু আহি নামের অর্থ টা তুমি কি জানো সুন্দরী ‘?
কৌতুহলোদ্দীপক হয়ে হ্যাভেনের পাশে দাঁড়ালো আহি উদবিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করলো,
-‘ আহি নামের অর্থ আপনি জানেন ‘?
-‘ হুম জানি হ্যাভেন অর্থ স্বর্গ, আকাশ। আর আহি অর্থ আকাশ এবং পৃথিবীর সংযোগ ‘।
বিস্ময়ান্বিত হয়ে তাকিয়ে রইলো আহি। হ্যাভেন মাথা দুলিয়ে হাসলো বললো,
-‘ সারপ্রাইজড হলে? আমাদের দুজনের নামের মধ্যেই একটা ইউনিক ব্যাপার রয়েছে সেই সাথে রয়েছে আমাদের মধ্যকার গভীর সংযোগ। তোমার আমার মিলন উপর থেকেই ধার্য করা সুন্দরী ‘।
-‘ বাজে কথা এসব ‘।
-‘ উমহ… বাচ্চা দের মতো ত্যাড়ামি করবে না ইটস ট্রু বিলিভ না হলে ইউটিউব ঘেঁটে দেখতে পারো ‘।
-‘ প্রয়োজন নেই ‘।
-‘ ওকে ফাইন এবার একটি প্রশ্ন করবো উত্তরটি বহুবাক্যে শুনতে চাই ‘।
-‘ বহুবাক্যে ‘?
-‘ হ্যাঁ। করবো ‘?
-‘ হুমহ’।
-‘ ধরো তুমি আমাকে ভালোবাসো আমি তোমায় প্রশ্ন করলাম তুমি আমায় কেমন ভালোবাসো? মানুষ বলে ভালোবাসা’কে নাকি পরিমাণ নির্ধারণ করে ব্যাখ্যা করা যায় না। ভালোবাসার পরিমাণ বিপরীত মানুষ টা’কে কখনো বলে কয়ে বোঝানো সম্ভব হয় না ৷ তবে আমি বলবো এ পৃথিবীতে সবই সম্ভব। এ পৃথিবীতে অচেনা, অজানা একজন মানুষকে ভালোবেসে হাজারো প্রতিশ্রুতি দিয়ে সারাটা জীবন একসঙ্গে কাটিয়ে দেওয়া যেমন সম্ভব। তেমনি অসংখ্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করে হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে চলে যাওয়াও সম্ভব। আবার প্রতিশ্রুতি বিহীন আমৃত্যু একে অপরের পাশে থাকাও সম্ভব। এতো সম্ভবের মাঝে সামান্য ভালোবাসার পরিমাণ, পরিমাপ বোঝানো কেন সম্ভব নয় সুন্দরী… ‘?
হ্যাভেনের বলা প্রতিটি শব্দে, প্রতিটি বাক্যে স্তব্ধ হয়ে গেলো আহি। প্রহত হলো তার হৃদয়। আচ্ছন্ন দৃষ্টিতে অপলক চেয়ে রইলো কয়েক সেকেন্ড। হ্যাভেনও তার দৃষ্টিতে নিজের দৃষ্টি স্থির রাখলো। একজোড়া হৃদয়ে বয়ে গেলো চঞ্চলতা। তাদের হৃদয়ে বয়ে চলা তাণ্ডব যেনো ধীরে ধীরে আছড়ে পরতে চাইছে প্রকৃতি’তে। তারই পূর্বাভাস পেলো দুজন মেঘের গর্জনে। হৃদয়ের গর্জনে হৃদয় কাঁপলেও আকাশে মেঘের গর্জনে শরীর কেঁপে ওঠলো আহির। হ্যাভেন আকাশের দিকে চেয়ে আহির পাশে ঘেঁষে দাঁড়ালো। আহির হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
-‘ ভয় নেই আমি আছি তো ‘।
আঁতকে ওঠে নিজের অপর হাত’টা বুকে চেপে ধরলো আহি৷ বললো,
-‘ আপনি এমন করবেন না প্লিজ হাত ছাড়ুন আমি নিচে যাবো ‘।
-‘ উহুম আগে প্রশ্নের উত্তর চাই ‘।
-‘ জানিনা আমি ‘।
-‘ তা বললে চলবে না তুমি আমায় কেমন ভালোবাসো উত্তর চাই ‘।
-‘ উত্তর একটাই ভালোবাসিনা ‘।
-‘ চুপপ। ভালোবাসো তা ধরে নিয়ে উত্তর দিতে বলেছি’।
-‘ হ্যাঁ ধরে নিয়েই উত্তর দিলাম আমি সত্যি জানিনা। প্রশ্নটির পাল্টা প্রশ্ন আপনাকে করা হলে উত্তর কি হতো’?
হাসলো হ্যাভেন। প্রকৃতির দমকা হাওয়ায় তার কপালের এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চুল গুলো হালকা নড়ছে। আহির শাড়ির আঁচলটাও বাতাসের বেগে উড়ে যেতে চাইছে। গা শিরশিরে বাতাসকে সুক্ষ্ম ভাবে অনুভব করলো হ্যাভন সেই সাথে আহিকে একদম নিজের সম্মুখে দাঁড় করিয়ে উত্তর দিলো,
-‘ আমাকে যদি তুমি ভালোবাসার ব্যাখ্যা দিতে বলো তবে আমি বলবো ভালোবাসি। আমাকে যদি তুমি ভালোবাসার ব্যাখ্যা দিতে বলো তবে আমি বলবো তোমায় ভালোবাসি। আমাকে যদি তুমি ভালোবাসার ব্যাখা দিতে বলো তবে আমি বলবো ভালোবাসি ‘।
চরম বিরক্ত হলো আহি এক ঝটকায় হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বৃথা হলো। তাই হাত মোচড়াতে মোচড়াতে বললো,
-‘ ছাড়ুন বলছি মাতাল একটা! আপনি কোন দিন শোধরাবেন না ‘।
আচমকাই এক আঙুলে আহির ওষ্ঠজোড়া চেপে ধরলো হ্যাভেন। মাতাল করা চাহনীতে চেয়ে মাতাল করা কন্ঠে বললো,
-‘ মদহীন মাতাল আমি সুন্দরী যা নিজে স্বীকার করি তা তুমি বললে কখনোই রাগবো না। এবার সিরিয়াস উত্তরটি শুনে যাও বউ…
“আমি তোমায় এক গুচ্ছ গোলাপের ভালোবাসা দিব না। সেখানে তুমি মুগ্ধতা পাবে, পাবে হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতি। পাবেনা শুভ্রতা,পাবে না স্নিগ্ধ অনুভূতিদের নির্মল ভালোবাসা’কে। আমি তোমায় এক গুচ্ছ কদম ফুলের ভালোবাসা দিতে চাইনা। কারণ সেখানে তুমি শুভ্রতাকে অনুভব করতে পারবে। পাবে কিছুটা স্নিগ্ধতা… কিন্তু মুগ্ধতা তোমায় ঘিরে রাখতে পারবে না। মুগ্ধতার ছোঁয়া পেতে ভালোবাসার লাল গোলাপকে তোমায় মনে পড়বেই, ইচ্ছে করবে শত কাঁটার আঘাত পেয়ে হলেও মুগ্ধতায় ডুবে থাকতে।আমি তোমায় সমুদ্র সমান ভালোবাসতে চাইনা। কারণ কি জানো? সমুদ্রের শেষ সীমানায় পৌঁছানো সম্ভব। অসম্ভব পরিমাণ ভালোবাসায় সম্ভব জিনিস টা যে বড়ই তুচ্ছ। এই তুচ্ছমান ভালোবাসা কি আমি তোমায় দিতে পারি? আমি তোমায় আকাশ সমান ভালোবাসি এবং আকাশ সমান ভালোবাসা দিতে চাই। এর কারণ কি জানো? বিশাল ঐ আকাশের শেষ ঠিকানা আমার জানা নেই। ভালোবাসা জানা হীন ঐ আকাশটার মতোনই। যেখানে তুমি খুঁজে পাবে রঙধনুর সাত রঙকে। যেখানে তুমি খুঁজে পাবে শুভ্রতা,স্নিগ্ধতা,মুগ্ধতাকে। ঐ আকাশটা তোমায় রোদের প্রয়োজনে উত্তাপে পুড়িয়ে দেবে। ঐ আকাশটা তোমায় বৃষ্টির প্রয়োজনে ভাসিয়ে দেবে। ঐ আকাশটা তোমায় যেমন সূর্যদয়ের সাক্ষি করবে তেমনি সূযাস্তের সাক্ষ্যও দেবে। রাতের বিদঘুটে অন্ধকারে বিষাদীয় প্রকৃতিতে একটুখানি আলোর ঝাপটা পাই ঐ আকাশ চন্দ্রিমাকে ঠাঁই দেয় বলেই। কখনো ভেবে দেখেছো রাতের পর দিনকে যদি আমরা না পেতাম? সৃষ্টিকর্তার নিয়মানুসারে ঐ আকাশে সূর্য স্থান না পেতো? কেমন হতো আমাদের জীবনের ধারাগুলো?
আমাদের হাসি,কান্না,মান-অভিমান,ঘৃনা,ভালোলাগা, ভালোবাসা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ সবটাই যেনো ঐ আকাশে বিদ্যমান। তাহলে আমার ভালোবাসাটা কেন হবে দুনিয়া জুরে বিষয় বস্তুকে ঘিরে? আমি একবার বলবো, হাজার বার বলবো,চিৎকার করে বলবো আমি তোমায় ঐ আকাশ সমান ভালোবাসি সুন্দরী ‘।
আহির ওষ্ঠে চেপে রাখা আঙুলটি সরিয়ে নিয়েছে অনেক ক্ষণ হলো। হ্যাভেন অনেকটা চিৎকার করেই শেষ বাক্য গুলো জ্ঞাপন করলো। আহির পুরো শরীর কম্পনরত অবস্থায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। কাঁপছে তার হার্ট শেপড কোমল ওষ্ঠজোড়াও। হ্যাভেন আহির সে ওষ্ঠজোড়ায় তাকিয়ে কাটিয়ে দিলো কয়েক পল।তারপর আবারো আহির সম্মুখে দাঁড়িয়ে আহির চোয়াল জোড়া দুহাতের আঁজলে নিয়ে মোহনীয় কন্ঠে বললো,
-‘ কাঁদছো কেন সুন্দরী? ভালোবাসো আমায়’।
ফুপিয়ে কেঁদে ওঠলো আহি। বললো,
-‘ আপনি খুব খারাপ হ্যাভেন আপনি শুধু কাঁদাতেই পারেন। আপনি আমার জীবনের রিয়েল ভিলেন। হিরো হওয়ার চেষ্টা করলেও কাঁদিয়ে ফেলেন আমায়। ভিলেনরা কখনো হিরো হতে পারেনা ‘।
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইলো হ্যাভেন। আহি দৃষ্টি নত করে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে ঝাপসা দৃষ্টিতে তাকালো হ্যাভেনের দিকে। নিচের ওষ্ঠ ফুলিয়ে আবারো বললো,
-‘ এভাবে তাকাবেন না৷ আপনি ভালোবাসার ব্যাখ্যা যাই দিন না কেনো সবটাই আমার থেকে ধার করে নিয়েছেন ‘।
-‘ হোয়াট!
-‘ হুম আপনি যখন আমাকে প্রশ্ন করলেন কেমন ভালোবাসি আমি বললাম জানিনা আর আপনি দুনিয়াজুড়ে বিশ্লেষণ করে শেষ উত্তর জানিনাই দিলেন। আকাশের শেষ ঠিকানা আপনি জানেন না। জানা হীন আকাশটার মতোন ভালোবাসি বলেছেন৷ অর্থাৎ উত্তর একি আপনি শুধু ঘুরিয়েছেন, প্যাচিয়েছেন৷ তাই আমি সঠিক এবং আমিই জিতেছি ‘।
দুহাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে অশ্রুসিক্ত চোয়াল মুছতে মুছতে মুচকি হাসলো হ্যাভেন৷ বললো,
-‘ হুম তুমি সূত্র দিয়েছো আর আমি প্রমাণ করেছি। একে অপরের পাশে থেকে একে অপরকে সাহায্য করাই স্বামী-স্ত্রীর ধর্ম ‘।
দু’জনের কথোপকথনের মাঝেই ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি নামতে শুরু করলো সেই সাথে বাতাসে প্রবল বেগ। আহি সচকিত হয়ে বললো,
-‘ বৃষ্টি পড়ছে চলুন নিচে যাই উফফ ভিজে যাচ্ছি ‘। বলেই হ্যাভেনের হাত ছাড়িয়ে ছুটে দরজার কাছে গিয়ে দরজা টানতে শুরু করলো। এবং উচ্চকন্ঠে বলতে শুরু করলো,
-‘দরজা তো খুলছে না হ্যাভেন… এখন কি হবে কে লাগালো আল্লাহ! আপনি প্লিজ এদিকে আসুন, প্লিজ কাউকে ফোন করুন ‘।
গুটি গুটি পায়ে হ্যাভেন এগিয়ে গেলো আহির দিকে। সেসময়ই পকেটে থাকা ফোনটা কৌশলে অফ করে দিলো। আহির পাশে দাঁড়িয়ে সেও দরজা টান দিয়ে বললো,
-‘ কাজটা নিশ্চয়ই ঐ বিচ্ছুদের, ভিজে যাচ্ছো আহি এদিকে এসো আমার সঙ্গে ‘।
-‘কি বলছেন আপনি হ্যারি কে ফোন দিন প্লিজ ‘।
ওকে বলেই হ্যাভেন ফোন বের করে আহির সামনে ধরে বললো,
-‘ আহি… ফোনের চার্জ নেই অফ হয়ে গেছে ‘।
-‘ আল্লাহ মাবুদ এখন কি করবো আমরা ‘।
আহি কথাটা বলতেই বিকট শব্দে বজ্রপাত ঘটলো৷ হয়তো খুব কাছেই বজ্রপাতটি হয়েছে। ভয়ে আহি দুকান চেপে ধরেছে। বুক,হাত,পা কাঁপছে অনবরত।
হ্যাভেন তৎক্ষণাৎ আহিকে জরিয়ে ধরে তাকে নিয়েই এক পা এক পা করে চিলেকোঠার ঘরে ঢুকে পড়লো। কারেন্ট চলে যাওয়াতে পুরো ছাদ সহ চিলেকোঠার ঘর অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে।
কোনমতে হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে আহিকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে হ্যাভেন৷ আহি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে কাঁপা গলায় প্রশ্ন করলো,
-‘ কোথায় যাচ্ছেন এমন অন্ধকার কেনো ছাড়ুন আমায়’।
ঝুম বৃষ্টির শব্দের পাশাপাশি দুজন নর নারীর ঘন নিঃশ্বাসের তীব্র শব্দে চিলেকোঠার ছোট্ট ঘরটি মুখরিত হয়ে ওঠলো৷ জোর পূর্বক হ্যাভেন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো আহি। অন্ধকারে আশেপাশে হাত দিয়ে নিজেদের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করার ক্ষণেই মাগো বলে চিৎকার করে ওঠলো। আঁতকে ওঠলো হ্যাভেন সেই সাথে মেজাজ বিগড়ে গেলো তার। ‘ আলগা মাতব্বরি দেখিয়ে বড়সড় আঘাত পেয়ে মা মা করবে তবুও ত্যাজ কমবে না’ বিরবির করে কথাটি বলেই আহির মৃদু আর্তনাদ কান পেতে শুনে তার দিকে হাত বাড়িয়ে সর্বস্ব শক্তি খাঁটিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিজের কাছে জব্দ করে মেঝেতে বসে পড়লো।
চলবে…