#কন্ট্রোললেস
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ৩৩ ]
” উর্মি আপা বাচ্চা নাও না কেন?”
” তুইও তো দেখি মুরব্বিদের মতো কথা শিখেছিস।”
” তো আমি কি মুরব্বি না?তোমার একমাত্র ভাইয়ের একমাত্র বউ তোমার ভাবী।আমি কিন্তু মুরব্বিদের কাতারে পড়ি বুঝলে?”
রুমুর কথা গাল টেনে দিল দিল উর্মি।বাবার বাড়িতে উর্মির আসা হয়েছে বেশ কয়েকমাস পর উজ্জ্বলের রেস্টুরেন্ট ওপেনিং এর দিনো তার আসা হয়নি কেননা তামিমের অফিসের কাজের জন্য বের হওয়ার সুযোগ পায়নি।এই বাড়িতে এসে যা বুঝলো বর্তমান মধ্যমনি হলো রুমু।এই মেয়েটা সারা বাড়ি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে যে কাজটা আগে উর্মি করতো। আসার পর আনিকার সংসারিক অবস্থা শুনে উর্মি নিজেই বাক্যহারা সাধাসিধা মেয়েটার কপালে এমন একটা জানোয়ার জুটলো!
” রাশেদ ভাই ছোট থেকেই গোঁয়ার প্রকৃতির ছিল চাচাজান যাও শাসনে রাখতো কিন্তু চাচি আম্মার জন্য তাও হতো না।আদরের ছেলেকে কেউ কিছু বললেই রেগে মেগে এক শেষ অবস্থা।”
” এখন তো আম্মার কথাই শুনে না।আম্মাকে পাত্তা দেয় না।”
” আনিকার কি হবে?মেয়েটার তো বাপের বাড়ির দিক দিয়েও কেউ নেই।”
” জানিনা কি হবে আব্বার সাথে এই ব্যাপারে কথা বলতে হবে।”
গরম গরম নকশি পিঠা ভেজে তুলল উর্মি সিরায় ঢালার সাথে সাথে পিঠাগুলো কেমন রসে মাখো মাখো অবস্থা।রুমু তৃপ্তি সহিত তাকিয়ে রইল নতুন অতিথির জন্য যে কত প্রকার পিঠার আয়োজন করা হয়েছে তা বলে বোঝানো যাবে না।রান্নার কাজ শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই।দুপুর পেরিয়ে গেছে রোদেরা পাতার ফাঁকে ঝিলিক দিয়ে রান্নাঘরের জানলা ছুঁয়েছে।রুমু এগিয়ে গেল নিজ কক্ষে উজ্জ্বল এসেছে আওয়াজ পাওয়া গেছে।
” উজ্জ্বল আপনার বন্ধুরা কতদূর?”
” আরে বলিস না ওরা নাকি গুগলে দেখে আসতে গিয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে এখন ফোনে বলে দিয়েছি শটকাট চলে আসবে।”
উজ্জ্বল আপাদমস্তক তাকাল রুমুর পানে।মেয়েটা আজ শাড়ি পরেছে হালকা সাজে দুর্দান্ত লাগছে মেয়েটাকে।গায়ের টি শার্টটা খুলতে খুলতে উজ্জ্বল বলে,
“শাড়িটা তো আমি দেইনি কোথায় পেলি?”
” উর্মি আপা এনেছে।আমাকে কেমন লাগছে?”
” লাল মরিচের মতো লাগছে।”
” কি!এটা কেমন কথা?”
” সত্যি কথা।চিকনাচাকনা শরীরটায় লাল শাড়ি জড়িয়েছিস তোকে আসলেই লাল মরিচের মতো লাগছে।”
” লাল মরিচের ঝাল নেবেন না উজ্জ্বল ভাই?”
উজ্জ্বল ‘ভাই’ শব্দটা শুনেই ধমকে উঠল,
” অব কে তোর ভাই?তাছাড়া এই মরিচে ঝাল নেই মিষ্টি মিষ্টি।”
রুমু ঠোঁট বাঁকালো এগিয়ে এসে কামড় বসাল উজ্জ্বলের বুকে।সে বুঝিয়ে দিতে চাইল তার ঝাল কিন্তু উজ্জ্বল কি কম যায়? রুমুকে সরিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে আরো কাছে টেনে নেয় এবং কামড়ে দেয় রুমুর ঘাড়ে।উজ্জ্বলের আক্রমণে রুমু ভড়কে যায় নিজেকে ছাড়াতে নিলেও ছাড়া পায় না।
রুমু ব্যথায় দাঁত খিঁচে বলে,
” ওরে রক্তচোষা বাদর ছাড় আমাকে।”
” চুমু বউ চুমু রেখে কামড়া কামড়ি করছো কেন?”
” উজ্জ্বল ছাড়েন শাড়ি এলোমেলো হচ্ছে আমার সাজ…”
” চুপ।কার জন্য সাজলি আমার জন্য না?আমি এলোমেলো করেছি কেউ তো করেনি।”
আঁচল আটকে থাকার জন্য কাধে লাগানো সেফটিফিনটা উজ্জ্বল খুলে দিল।মুহূর্তে ঝরঝরিয়ে জরজেট শাড়িটা মেঝেতে পতিত হলো রুমু উজ্জ্বলকে ছেড়ে নিজেকে আড়াল করতে চাইল কিন্তু তা কি আর হয়?প্রেমময় প্রহরটা যে উজ্জ্বল কিছুতেই হাত ছাড়া করবে না যখনি রুমুর দু’ঠোঁট নিজের আয়ত্তে আনল তখনি বাড়ির উঠনে বেজে উঠল গাড়ির হর্ন।উজ্জ্বল অতি সত্বর দূরে সরল এবং রুমুর হাতে পুরে দিল আঁচলের অংশটুকু।রুমু ঠোঁট টিপে হেসে বলে,
” আমি জানতাম এমনটাই হবে।”
” আমিও জানতাম।যখনি একটু মুডে আসি তখনি… যাই হোক শাড়ি ঠিক করে আয়।”
.
বেশ কয়েক বছরপর ইতালির কুয়োর ব্যাঙটা এবার দেশে ফিরেছে।সময় সুযোগ কোনটাই এই ব্যস্ত জীবনে হয়ে উঠছে না আসবে আসবে করেও যখন আসা হচ্ছে না ব্যস্ততা ক্রমশ ঘিরে ধরেছে তাই ব্যস্ততাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্লেনের টিকেট কেটে এনে নিজের স্ত্রীকে সারপ্রাইজ দিল।এই তো এবার যাচ্ছে তারা বাংলাদেশ।আরশাদের স্ত্রী খুশবু এমন সুংবাদ দেখে খুশির তালে মুর্ছা যায় যায় অবস্থা কত বছর পর ফিরছে নিজ দেশে।
আরশাদের পুরো নাম আরশার ইহসান তার জন্ম থাকা সবটাই ইতালিতে।ইতালির বাতাসে বেড়ে ওঠা ছেলেটা নিশ্চয়ই বিয়ে করবে ইতালির স্থানীয় কোন মেয়েকে কিন্তু না এই ছেলে ভালোবেসে ফেলল অতি সাধারণ বাঙালি এক মেয়েকে।এই মেয়েকে পাওয়া কি এতই সহজ ছিল?আরশার ইহসান নাকে দড়ি নিয়ে ঘুরেছে পথ হারিয়েছে ভ্রমে পড়েছে সব পেরিয়ে খুঁজে পেল তার ফ্লুজিকে।এখন আবার হয়তো ভাবছেন ফ্লুজি কে?সেই খুশবুই হলো আরশাদের ফ্লুজি।
আশেপাশে বৃহৎ গাছপালা এবং ফুল গাছে সুসজ্জিত মাঝ উঠনে গাড়ি থামাল আরশাদ।লোহার ভারি গেটটা খোলাই ছিল নিশ্চয়ই আরশাদের কথা ভেবেই পূর্বে খুলে রেখেছিল উজ্জ্বল।গাড়ি থেকে নেমেই মুলাকাত হলো উজ্জ্বলের সহিত।সামনা সামনি দুই বন্ধু একে অপরকে পেয়ে খুব বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে উঠেছে।সৈয়দ শামসুল এবং নার্গিসকে সালাম জানাল আরশাদ এবং খুশবু বাড়ির উঠনে বিদেশি লোকটাকে দেখে সবার মাঝেই চলছে নানা আগ্রহ।
রুমু দ্রুত শাড়ি গুছিয়ে সবার মাঝে উপস্থিত হলো আরশাদ কয়েকপল তাকে দেখে ভ্রু কুচকে অপরিপক্ব বাংলায় বলে বলে,
” এই বাচ্চা মেয়েটা তোমার বউ!”
শারিরীক গড়নে রুমুকে সবার মাঝে ছোটই মনে হয় তার মাঝে যখন শাড়ি পড়ে উপস্থিত হলো তখন বাচ্চা বাচ্চা ভাবটা কেটে গেলেও আরশাদের কাছে রুমুকে সেই ছোটই মনে হলো।রুমু আগ্রহ ভরা চোখে পরখ করল আরশাদকে ধবধবে ফর্সা চামড়া চোখ জোড়া বাদামী মণি’র অধিকারী এই মানুষটাকে নিয়ে তার কৌতূহল ক্রমশ বাড়ছে।এতকাল যাবৎ টিভিতেই দেখেছিল এমন বিদেশি নায়কদের আজ যেন চোখের সামনে একটা নায়ক দাঁড়িয়ে আছে।সব পছন্দ হলেও আরশাদের কথা মোটেও পছন্দ হলো না রুমুর।এ কেমন বাংলা বলা!ঘেটে ঘ করে দিচ্ছে মধুর বাংলাটাকে।
” আমি বাচ্চা নই।”
বেশ জোর নিয়ে বলল রুমু।তার প্রতিক্রিয়া দেখে হেসে ফেলল আরশাদ সেই সাথে হাসল বাকিরা।এত ঘন্টার জার্নি শেষে আরশাদ এবং খুশবুকে পাঠানো হয়েছে আলাদা একটি কক্ষে সুসজ্জিত কক্ষে প্রবেশ করতেই বিছানায় গা এলিয়ে দিল খুশবু।
” আরশাদ কতদিন পর নিজ শহর ছেড়ে অন্য শহরে এলাম।”
” অন্য কোথাও যাওয়ার নাম নিলে আমার ভয় করে তবুও যে সাহস করেছি এটাই অনেক।”
” কেন ভয় করে আরশাদ?”
” ভুলে গেলে?”
” মনে পড়ছে না।”
” গ্রামে আসব বলে আমাদের সেই বাস এক্সিডেন্টের কথা মনে নেই?অল্পের জন্য তোমাকে হারাতাম।”
খুশবু চুপসে যায়।চুপচাপ তাকিয়ে রয় আরশাদের পানে এই বীভৎস স্মৃতি সে ভুলে যেতে চায়।
” আমরা এখানে কয়দিন থাকব আরশাদ?”
” যতদিন না ব্যস্ত জীবনের তাড়া আসে।”
” আমার গোসল করা উচিত শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে।”
” ঠিক আছে যাও।”
জামা হাতে তুলে ওয়াশরুমে পা বাড়ল খুশবু।দুপুরের খাবার খেতে বসল সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে।সবাই মিলে জড়োসড়ো হয়ে আরশাদ এবং খুশবুকে আপ্যায়নে ব্যস্ত।উজ্জ্বল মুরগীর লেগ পিসটা আরশাদের প্লেটে দিতে আরশাদ তা তুলে দিল খুশবুর প্লেটে উজ্জ্বলের প্রশ্নবিদ্ধ চাহনির উত্তর সাজিয়ে বলে,
” ফ্লুজির এটা পছন্দ।”
” ভাবিরটাও তো আছে।আচ্ছা দাড়া মাছের ডিমের ভুনা দিচ্ছি ওটা ট্রাই কর।”
” ফ্লুজিকে দে ওর মাছের ডিম ভীষণ পছন্দ।”
আরশাদের একেরপর এক কান্ডে সবার মাঝে খুশবু বেশ বিব্রতবোধ করছে।এ আর নতুন কি?আরশাদের এসব অভ্যাস আজকালের নয় সেই শুরু থেকেই।রুমু আড় চোখে তাকাল উজ্জ্বলের পানে সে যেন কিছু ইঙ্গিত করছে যখনি উজ্জ্বল সরে দাঁড়াল তখনি গাল ফুলিয়ে রুমু বলে,
” কই এমন ভাবে কখনো আমার প্লেটে মোরগের রান মাছের ডিম তুলে দিয়েছ?”
” তুলে দিব কেন?বাটি থেকে সরাসরি তোর প্লেটেই পড়ে তাহলে তুলে দিব কেন?অন্যকে দেখে অনুকরন করা বন্ধ কর।”
” উহ।”
এত এত খাবার খেয়ে আরশাদের পেটটা যেন এক্ষুণি ফেটে যাবে।সবাই তাকে এতই ঠেসেঠুসে খাইয়ে ছেড়েছে এতদিনের ডায়েট চোখের পলকে জলে ভেসে গেল।আরশাদ বসার ঘরে সবার সহিত আড্ডা দিচ্ছিল অথচ খুশবু চুপসে আছে সহজে কারো সাথে মিশতে পারে না সে।কে কি বলছে করছে আপাতত এসব পরখ করাই তার একমাত্র কাজ।
আড্ডা শেষে বিশ্রামের জন্য আরশাদ নিজ কক্ষে ফিরল ইতোমধ্যে খুশবুর সাথে রুমুর বেশ ভাব হয়েছে দুজনে বেশ অনেকক্ষণ গল্পসল্প করল।তাদের কথার মাঝে আরশাদ উপস্থিত হলো রুমুকে আবদার সুরে তার অপরিপক্ব বাংলায় বলে,
” হামাকে টাল খাউয়াবে ওকে?”
” টাল!সেটা আবার কি?”
” আরেহ টাল।”
” টাল মানে?”
” টাল বুচো না?টাল টাল।”
রুমু ঢোক গিলল এই ইতালিয়ান বাদরটার বাংলা সে একটুও বুঝেনা এসব কি বলে?দূর ছাই।
” টাল মানে কি ভাইয়া?আপনি কি মদ চাইছেন?ইয়ে মানে মদ খেয়ে টাল মাটাল হতে চাইছেন?”
” উফফ সো সিলি গার্ল।”
খুশবু পাশে বসে হাসছিল।সে আরশাদের কথা বুঝতে পেরেও কিছুই বলল না রুমুকে একটু গোল খাওয়ানো যাক।
” সিলি টিলি বাদ দিন।এবার বলুন টাল কী?”
আরশাদ উঠে দাঁড়াল।এখানে কেউ তার বাংলা খুব বেশি বোঝেনা তার বাংলা বলাটা এত বিশ্রি কেন?চাইলেও সংশোধন হচ্ছে না।
রুমু ভ্রু কুচকে বলে,
” তোমার বর কি বলল?”
” তালের কথা বলেছে।তোমার গেটের বাইরে যে তাল গাছটা আছে ওটা দেখেই সে আমাকে বলেছিল এবার এসেছে যখন তাল খাবে।”
রুমুর মাথায় হাত পড়ল কি অদ্ভুত! তালকে কেউ টাল বলে?
.
ঘুমের ঘোরে স্বপ্নরা কেমন বাস্তব বাস্তব অনুভূত হয় মনে হয় যেন অন্য জগৎ-এ ছিটকে পড়েছি সুখের স্বপ্ন সুখানুভূতি তেমনি দুঃখের স্বপ্নে চোখ ভিজে একাকার।গভীর রাতে ভিজে আছে খুশবুর চোখ দুঃস্বপ্নে কাঁপছে সে
ঘুমের ঘোরেই হু হু শব্দ তুলে কেঁদে ফেলল, তার উথাল-পাথাল শ্বাসে বুকের অস্বাভাবিক ওঠা নামায় আচমকা কাঁচা ঘুম ভেঙে গেল আরশাদের।খুশবুর অস্বাভাবিক আচরণে খুশবুর বুক থেকে মাথা তুলে তাকাল।খুশবুর ভেজা গাল স্পর্শ করতে বুকের ভেতরটা মোচড় দিল।
আরশাদ ব্যতিব্যস্ত হয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,
“ফ্লুজি আমার জান ঠিক আছো?”
চলবে…
#কন্ট্রোললেস
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ৩৩ বাকি অংশ ]
নিজ বাড়ি থেকে ঝগড়ার শব্দে দাঁত মুখ খিঁচে বসে আছে রুমু রাশেদ কি নিয়ে ঝামেলা লেগে বিশ্রি বিশ্রি গালাগাল ছুড়ছে।দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে গালাগাল গুলো যে উজ্জ্বলের উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে তা বেশ ভালো ভাবেই বুঝল রুমু।সকালের নাস্তা শেষে এগারোটায় চায়ের আড্ডায় বসেছে সকলে।আরশাদ খুশবু রুমুর পাশেই বসে তারা কেউ কিছু না বললেও কান খাড়া করে সবটা শুনছে।এত এত বিশ্রি গালাগালিতে মাথা নত করে সকলেই বসে আছে আরশাদ কয়েকটা কথার অর্থ বুঝলেও বেশিরভাগ গালাগালির অর্থ সে বুঝেনি।
“রাশেদ ভাইপারটাকে রাগিয়ে দিয়েছে কে?এদিকে তেড়ে আসছে কেন?”
রুমুর পাশে বসে স্বগোতক্তি স্বরে বলল উজ্জ্বল।রুমু চুপ রয় মান সম্মানটা যেন মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
” তুই কি লজ্জায় নত হচ্ছিস?আরে প্যারা নাই তোর ভাই বলে তোর যতটা লজ্জা লাগছে রাশেদ কিন্তু আমারো ভাই আমরা একই বংশ একই রক্তের লোক।”
” তারপরেও…”
” চুপ থাক।”
রুমু কথা বাড়ায় না।চায়ের আড্ডা শেষে তারা সকলে রেডি হতে চলে যায়।আজকের দুপুরের খাবার সবাই উজ্জ্বলের রেস্টুরেন্টেই করবে।উর্মি তামিম,আরশাদ খুশবু, তাদের সাথে উজ্জ্বল রুমু তারা ছয় জনেই তৈরি হয়ে রওনা দিল রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে।বাড়ির গেট থেকে বের হতেই রুমুর মুখোমুখি হলো রাশেদ।রাশেদের রক্তিম চোখ রাগান্বিত চাহনি ভয়টা বাড়িয়ে দিল রুমুর। অতিথির সামনে আবার না কোন কাহিনী ঘটে যায়।রাশেদকে প্রথমে এড়িয়ে যেতে চাইল কিন্তু যে ভয়টা রুমু পেয়েছে ঠিক সেটাই হলো রাশেদ আজ হয়তো অগ্রীম প্রস্তুত ছিল আজ সে ঝামেলা করবেই।
” আড়ালে আয় কথা আছে।”
” ভাইয়া আমার কোন কথা নাই।পথ ছাড়ো।”
” রুমু তেজ দেখাবি না খবরদার।”
” তেজ দেখাচ্ছি না।”
রাশেদ পুনরায় ধমক দিল।উজ্জ্বল চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলেও এবার আর চুপ থাকতে পারল না।রুমুকে সরিয়ে এগিয়ে গেল সে।
” কি সমস্যা তোর?ঝামেলা করতে চাইছিস?”
” ঝামেলা তো তুই করছিস আমার বোনকে বিয়ে করে ঝামেলা কে বাড়াল?”
” যাকে বিয়ে করলাম তার মাথা ব্যথা নাই,যার মেয়েকে বিয়ে করলাম তারও মাথা ব্যথা নাই তুই কোন খেতের মুলা?”
“কথা বার্তা সাবধানে বল।নষ্ট কোথাকার তোর…”
রাশেদ কথা শেষ করার আগেই তার বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল রুমু।ঘটনাটা এতটাই তাড়াতাড়ি ঘটলো পাশে দাঁড়িয়ে থাকা উর্মি তামিম সহ অন্যরা বেশ অবাক চোখে তাকিয়ে।
” খবরদার আমার স্বামীকে নিয়ে বাজে কথা বলবে না।তোমার সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃণা হয়।চোখের সামনে থেকে সর।”
” তোর সাহস দেখি বেড়েছে।”
” হ্যাঁ বেড়েছে অনেকটা বেড়েছে আর প্রমাণ করতে চাই না।”
রুমু দ্রুত উজ্জ্বলের হাত টেনে নিয়ে গেল।সবার সামনে একটা বাজে পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগে এখন থেকে চলে যাওয়াই উত্তম।
সারাটা দিন তারা অনেক আনন্দে কাটাল আরশাদ এই শহরে নতুন তাই উজ্জ্বল তাকে সবটা দেখাচ্ছে বোঝাচ্ছে নতুন অতিথি নিয়ে তাদের সময়টা কাটছে ভীষণ ব্যস্তময়।
.
বৃষ্টির স্যাঁতসেঁতে ভাবটা কাটিয়ে দুইদিন রোদের দেখা মিললেও সন্ধ্যায় পুনরায় ঝরঝরিয়ে বৃষ্টি নামল চারিদিকের তপ্ত পরিবেশ মুহূর্তে শিতিল হলো গাছ পালায় ফিরে এলো স্বস্তি।রাশেদের গত দুইদিন ময়নার কাছে যাওয়া হয়নি বাড়িতে সবাই সন্দেহ করছে পরপর প্রতিটা রাতেই যদি সে নিখোঁজ থাকে সবাই নিশ্চিয়ই তাকে প্রশ্নের বানে ঘিরে ধরবে।এখন যে প্রশ্ন তুলে না তা কিন্তু নয় কিন্তু গলার জোর দেখিয়েও তো পাশ কাটানো যায়।বৃষ্টির দাপটে ছাতা উড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বেশ কসরতে ছাতাটা ধরে রাখলেও হঠাৎ এক দমকা বাতাসে ছাতা একপাশ উলটে ভেঙে যায়।কয়েক সেকেন্ডে তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে যায় রাশেদ তড়িঘড়ি ময়নার ঘরের সামনে এসে দরজায় টোকা দিয়ে ডাকল ময়নাকে।অতি সত্বর দরজা খুলল ময়না রাশেদকে দেখে তার দু’চোখে তারারা খেলা করছে তার চাহনিতেই বোঝা যায় সে কতটা খুশি।
” কেরে আইলো ময়না?”
বৃদ্ধার আওয়াজে দাঁত মুখ খিঁচে ফেলল রাশেদ ভেবেছিল আজ রাতটা সেদিনের মতো আনন্দে কাটাবে কিন্তু তা আর বোধহয় হবে না।পাশের রুম থেকে বৃদ্ধা এগিয়ে এলেন এবং পুনরায় বলেন,
” কিরে ময়না কে আইলো?”
” দাদি তোমার নাত জামাই।”
কথাটি বলেই লজ্জায় হাসলো ময়না।তার হাসিতে বাঁকা হাসলো রাশেদ অতি দ্রুত ঘরে প্রবেশ করে সালাম জানাল বৃদ্ধাকে।
” দাদি ভালো আছেন?”
” তোমারে না কইছি এবার আইলে বিয়ের কথা নিয়া আইবা।”
” রেগে যাচ্ছেন কেন দাদি?আমি তো ময়নারেই বিয়া করমু।”
” কবে করবা?সেই কবে থেকে হুনলাম বিয়া করবা।তোমার বউরে তালাক দাও নাই?”
” তালাক দিতে কি সময় লাগে?তিন তালাক দিলেই হইব ধৈর্য ধরেন দাদি।”
” হুনো তোমারে আর অল্প কয়ডা দিন সময় দিলাম এত মধ্যে ময়নারে বিয়া করলে করবা আর নইলে ময়নার লাইগা নতুন পোলা দেখমু।”
আজ সারাটা দিন রাশেদের মেজাজ এমনিতেই খারাপ ছিল তার উপর বৃদ্ধার কথায় তার মেজাজটা পুনরায় তপ্ত হলো।নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৃদ্ধার গলা চেপে ধরল ময়না ভীষণ ভয় পেল।শরীর কাঁপতে কাঁপতে রাশেদকে সরাতে উদ্যাত হলো,রাশেদের পেশিবহুল শক্তপোক্ত দেহের সাথে ময়না কি পারে?মোটেও না বরং রাশেদের ঝটকায় ছিটকে পড়ল বিছানায়।দাদির জিহ্বা বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে ময়না ভীষণ ভয় পেল রাশেদের পা জড়িয়ে বলে,
” কসম লাগে দাদিরে ছাইড়া দেন।”
” এই বুড়ি মরলেই আমার শান্তি।”
” রাশেদ আল্লার দোহাই দাদিরে ছাইড়া দেন।”
রাশেদ বৃদ্ধার গলা ছাড়ল রাগে থরথরে কাঁপছে তার শরীর।বৃদ্ধা মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই রাশেদ বলে,
” চুপ কর বুড়ি,ময়না আমার।ময়না কার?”
” তো…তোমার।”
” হুম।এখন চুপচাপ পাশের রুমে যাবেন কোন কথা যেন না শুনি আজ ময়না আমার কাছেই থাকবে।”
বৃদ্ধা চুপচাপ কাঁপতে কাঁপতে চলে গেল পাশের রুমে অপরদিকে রাশেদ বাঁকা হেসে জাড়িয়ে ধরল ময়নাকে।এই লালসার ছোঁয়ায় ময়না কি বাঁধা দিল?একদমি না বরং তীব্র আকাঙ্ক্ষা বাসনায় আঁকড়ে ধরল রাশেদের বাহু।
.
অনেকদিন পর বৃষ্টি পেয়ে ছাদে নিজের খুশি মতো ভিজেছে উর্মি সেই সাথে রুমু তো আছেই উজ্জ্বল বাড়িতে নেই বিধায় এই কাজ করার সাহস পেল সে।সবাইকে ভিজতে দেখে খুশবুর মনেও ইচ্ছেরা ডানা ঝাপটে ফেলল সেও ভিজবে।ছাদে পা বাড়াতেই আরশাদের কড়া নিষেধাজ্ঞা কিছুতেই ভেজা যাবে না এই একটা বিষয় নিয়ে তাদের মাঝে বেশ কথা কাটাকাটি হলো।খুশবু ভীষণ রেগে গেল রাগ দেখিয়ে আরশাদের সাথে আর একটুও কথা বলেনি।
ঝমঝম বৃষ্টি পড়ছে সেই সাথে বাতাসটা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।জানলার পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছে খুশবু।আরশাদ পেছন থেকে এসেই জড়িয়ে ধরল তাকে।
” ফ্লুজি আমার জান কী করছো?”
” ছাড়েন তো।”
” এখনো রেগে আছো।”
” আমি কারো উপর রেগে থাকি না।”
আরশাদ শ্লেষ হাসল খুশবুর অনিচ্ছা শর্তেও তাকে জড়িয়ে ধরল।এভাবে পেরিয়ে গেল অনেকটা সময় কিন্তু খুশবুর রাগ কমল না আরশাদ অতিদ্রুত কোলে তুলে নিল তার ফ্লুজিকে।ভালোবাসার ছোঁয়ায় খুশবুর ঠোঁট আঁকড়ে ধরতে হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠল খুশবু। আরশাদের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।আরশাদ কয়েক পলক তাকিয়ে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইল তবে মোটেও পারল না লাহমায় চেপে ধরল খুশবুর বাহু তীব্র রাগ দেখিয়ে বলে,
” তুমি জানো না তোমার এড়িয়ে যাওয়া আমি সহ্য করতে পারি না।এমন করছো কেন!”
” আরশাদ… ”
ভয়ে ঢোক গিলল খুশবু।আরশাদ থেমে গেল আচমকাই খুশবুর ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে উন্মাদ হয়ে পড়ল।খুশবু নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টাও করল না সে জানে এতে লাভ নেই বরং আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে ছেলেটা।রাত বাড়ল অথচ আরশাদ কিছুতেই ছাড়ল না তার ফ্লুজিকে মেয়েটা ঘুমের ঘোরে বারবার আরশাদকে সরাতে চাইছে,
” আরশাদ ঘুমাতে দিন,কি ভাবেন আমায়?”
” ডানোর ডিব্বা।”
চলবে…