#গল্প_কাব্য_কথা
#পর্ব_৬
#লেখনীতে_ওয়াসেনাথ_আসফি
তোমার ঘাড়ে এটা কিসের দাগ তেমন বুঝা যাচ্ছে না কিন্তু লাল হয়ে আছে।
আমি ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলতে লাগলাম,,,,, কাব্য ভাইয়া আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই
আচ্ছা পরে বললো এখন আমার সাথে এসো।
কোথায়?
তোমার গলাটা লাল হয়ে আছে একটু মলম লাগিয়ে দেই ঠিক হয়ে যাবে।
কথাটা বলেই আমার গলায় তার হাত দিয়ে মলম লাগিয়ে দিতে লাগল। আমি চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছি। কাব্য ভাইয়ার হাতের ছোঁয়ায় আমি বারবার কেপে উঠছি আর এটা দেখে কাব্য ভাইয়া বললে উঠলো,,,,, এতো কাপাকাপির কি আছে। আজকেই তো প্রথমবার নয় যে তোমাকে আমি টাচ্ করছি।
কি?( অবাক হয়ে)
না মানে প্রথমবার তুমি আমার হাত ধরছো, তারপর আমার ওপর পারে গেছো, আমার বুকের উপর হাত রাখছো আবার একটু আগেই আমার কোলে উঠলে এতো কিছুর পরও তোমার কাপাকাপি ( একটু দুষ্টু হাসি দিয়ে)
উনার এমন কথা শুনে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। হইছে আমি এখন বাসায় যাবো। কথাটা বলেই আবার হাটা দিলাম কিন্তু এক কদম যেতেই হাতে টান পড়ল। পিছনে ফিরে দেখি কাব্য আমার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু আমার কেমন যেনো লাগছিলো এই হাতের ছোঁয়া আমি আগেও পেয়েছি আর কিছুক্ষণ আগেও পেয়েছি তাই চিনতে দেরি হলো না কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম না তাই মুখে কিছু বললাম না। কি হইসে আবার আটকালেন কেনো?
একটা কথা ছিল?
কি কথা?
কালকে ইতির জন্মদিন। আমি ওকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চাই তুমি কী আমাকে একটু হেল্প করবে?
আমি কিছু বলবো তার আগেই ইতি দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে গেল আর খুব তাড়াহুড়া করে বলতে লাগল,,,,,,,,,,
ভাইয়া আমি এখন কথাকে নিয়ে যাচ্ছি তোমার যা বলার তুমি পরে বলো।
কথাটা বলেই আমাকে টানতে টানতে নিয়ে গেলো ভার্সিটির বাইরে।
আধা ঘণ্টা ধরে বসে আছি লেকের ধারে কিন্তু এই লম্বু কিছুই বলছে না। বিরক্ত হয়ে বললাম,,,,,,,
তুই কি আমারে এইখানে পানি দেখাইতে নিয়া আইছস ?
দোস্ত তুই রাগ করিস না আমি চিন্তা করছি কিভাবে তোরে কথা টা বলমু যদি তুই রাগ করস যদি তুই আমারে ভূল বোঝোছ,,,,,,,
কি কথা বলবি তো আগে।
দোস্ত আমি ইনান ভাইকে ভালোবাসি! সেই কলেজে পড়ার সময় থেকে। প্রথম প্রথম বুঝি নাই কিন্তু কিছু দিন যাওয়ার পর আমি বুঝতে পারছি আমি ইনান ভাইকে ভালোবাসি অনেক ভালোবাসি দোস্ত। আমি চাইছি আমার জন্মদিনের দিন ইনান ভাইকে প্রোপোজ করমু কিন্তু এখন মনে হইতাছে আমি আমার ভালোবাসা হারায় ফেলমু দোস্ত।( কান্না করতে করতে কথা গুলো বললো)
তুই আমার ভাইকে ভালবাসিস আর আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না কেমন বান্ধুবি তুই আমার?
বিশ্বাস কর জান আমি অনেক বার চেষ্টা করছি কিন্তু পারিনাই।
তাইলে আজকে কেমনে পারলি?
আম্মু কিছুক্ষন আগে আমারে ফোন দিছিলো আর বললো ভাইয়া আর আমি যেনো তাড়াতাড়ি বাসায় আসি তারপর বললো আমাকে নাকি দেখতে আসবে আজকে। জান আমি মরে গেলেও অন্য কাউকে বিয়ে করবো না প্লিজ দোস্ত তুই আমার বিয়েটা ভেঙ্গে দে।
আচ্ছা শোন কান্না থামা দেখি কি করা যায় আর তুই এখন বাসায় যা। আর এতো চিন্তা করিস না বউ তো তুই আমার ভাইয়েরই হবি। আর কালকের জন্য প্রস্তুতি নে। যা এখন বাসায় যা।
পাত্র পক্ষের সামনে বসে আছে ইতি আর একপাশে দাড়িয়ে আছে ইতির মা আর অন্য পাশে দাড়িয়ে আছি আমি। একপাশের সোফায় বসে আছে কাব্য এবং অন্য পাশের টায় ইতির বাবা আর সামনের বড়ো সোফায় বসে আছে পাত্র পক্ষ । ইতিকে দেখে তাদের পছন্দ হয় তাই তারা আজকেই বিয়ের কথা বার্তা ঠিক করতে চায় ,,,,,,,,!
আমি আর ইতি দুজনেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি কাব্য ভাইয়ার দিকে। ভাইয়া আমাদের চোখের ইশারায় শান্ত হতে বলল ,,,,,,,,,,,,,,!
এর পর কাব্য ভাইয়া বলে উঠলো,,,,,,, আমি একটা কথা বলতে চাই দেখেন বিষয়টা বিয়ের তাই আমি মেয়ের বড় ভাই হিসেবে আগে আমার বোনের মতামত জানবো তারপর আমার পরিবারের তাই আপনাদের কাছে আমি একটু সময় চাইছি। আশা করি আপনারা বিষয়টা বুঝতে পারছেন।
আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু আপনারা আপনাদের মতামত একটু তাড়াতাড়ি জানাবেন।
ঠিক আছে। আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ।
একটু পর পাত্র চলে যায়। আমি আর লম্বু রুমের ভেতর বসে গল্প করছি
দোস্ত তুই এটা কিভাবে করলি? আর ভাইয়াকে কিভাবে রাজি করলি?
এটা নাহয় আমি বলি ( দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে কথাটা বললো কাব্য)
২ঘন্টা আগে,,,,,,,।
আমি দৌড়াচ্ছি আর কাব্য ভাইয়াকে খুঁজছি কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না তাই বাধ্য হয়ে তাকে ফোন দিলাম 2বার রিং হওয়ার পর রিসিভ করল উনি কিছু বলার আগেই আমি বললাম,,,,,,,,,, যেখানেই থাকেন না কেনো 2মিনিটের মধ্যে আমার সাথে দেখা করেন আমি আপনার অফিস রুমে আছি। বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।
আমাকে অবাক করে দিয়ে ফোনটা কাটার সাথে সাথে সে দৌড়ে অফিস রুমে ঢুকলো আর আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আর বলতে লাগলো,,,,,,, কি হয়েছে তোমার, কেউ কিচ্ছু বলছে, কেউ কিচ্ছু করছে, কোথাও ব্যাথা পাইছ? অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে কথা গুলো বলছিল সে। আমি তার ভয়টা বুঝতে পারছি আর তার হার্টবিট গুলো শুনতে পাচ্ছিলাম আর সেই বডি স্মেল আমার আর বুঝতে বাকি রইল না সেই লোকটা কাব্য ভাইয়া ছিলো। আমি আনমনে একটু হেসে তাকে ছাড়িয়ে বললাম,,,,,,,, দেখেন আমি একদম ঠিক আছি কিচ্ছু হয়নি আমার। আমার কথায় হুস ফিরল তার আর দ্রুত আমার কাছ থেকে দূরে সরে দাঁড়ালো। আর বললো,,,,,,,,,
এইভাবে কেউ ফোন দিয়ে আসতে বলে হুম।
আমি বুঝতে পারিনি সরি।
ঠিক আছে,, এখন বলো কি জন্যে এতো জরুরি তলব দিসো।
আজকে ইতিকে দেখতে আসবে। আর আপনাকে এই বিয়ের কথাবার্তা বন্ধ করতে হবে।
কেনো?( অবাক হয়ে)
কারন ইতি আমার ভাইকে ভালোবাসে।
আর তোমার ভাইয়া?(শান্ত সরে)
জানি না? কিন্তু আমার ভাইয়া আমার কথা ফেলবে না।
তোমার ভাইয়া যদি আমার বোনকে পারে ভালো না বাসে তখন তো আমার বোন আরো বেশি কষ্ট পাবে।
আমার ওপর আপনি বিশ্বাস রাখেন আর আমি আমার ভাইয়ার ওপর। আমি যত দুর জানি আমার ভাইয়ার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই। ইতির সাথে বিয়ে হলে ইতির যত্ন আর ভালোবাসা পেয়ে আমার ভাইও ওকে ভালোবাসতে শুরু করবে আর এটা আমার বিশ্বাস। প্লিজ আপনিই না করিয়েন না একটা বার আমার কথা শুনেন।
আচ্ছা ঠিকাছে।
খুশিতে আমি কাব্য ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরলাম আর তার গালে টুপ করে একটা চুমু দিলাম আমার এমন কাজে যে কাব্য ভাইয়া বোকা বনে চলে গেছে তা আমি বেশ বুঝতে পারছি তাই আমি তাড়াতাড়ি তাকে ছেড়ে দিয়ে বললাম তাড়াতাড়ি আসেন বাসায় যেতে হবে।
বর্তমান,,,,,,,,,,,,,,!
ইতিকে সবটা বললো শুধু জড়িয়ে ধরা আর চুমুর কথা টা বাদ দিয়ে।
অনেক্ষন হলো কাব্য বাসায় নেই যাওয়ার আগে বলে গেছে অবশ্য সে তার ফ্রেন্ড এর বাসায় যাচ্ছে। তাই আমি ও এই সুযোগে তার ঘরটা দেখায় জন্য চলে গেলাম তার ঘরে। ঘরটা খুব পরিপাটি করে গুছানো বেশির ভাগ জিনিস পত্রই সাদা। খাটের পাশে একটা ছোট্ট টেবিল আছে ওটার ওপর সাদা একটা ফুলদানি আছে। হঠাৎ করেই চোখ গেলো টেবিলের উপর রাখা ডায়রিটার দিকে। আমি ও সুন্দর করে পড়তে লাগলাম। কয়েকটা পাতা পড়ার পর আমার চোখ আটকে গেল পরের পাতার লেখার ওপর আমার চোখ যেনো বের হয়ে যাচ্ছে এটা আমি কি দেখলাম…..!
অন্য কারো বউ হয়ে বসে আছি বাসর ঘরে………….!
#চলবে………….