কারণ আমি মেয়ে পর্ব-০১

0
54

সূচনা পর্ব (পর্ব ১)
#কারণ_আমি_মেয়ে
#সমুদ্রিত_সুমি

দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে চাকরি করছে সুমন রহমান। কিন্তু তার এই দীর্ঘ চাকরির জীবনে কখনো তিনি দেখেননি কোন জুনিয়র তার সিনিয়র সহকারীকে বেশি কথা বলেছে। কখনো তিনি এটাও দেখেননি একটা পিয়ন একজন অফিস কর্মচারীকে বকাঝাকা করেছে। তিনি ভাবেন রাবেয়া মানুষটা কি দিয়ে তৈরি। কিন্তু এতো কিছুর মাঝেও আজকে যে ঘটনা ঘটে গেছে সেটা যেন কোন মতেই সুমন রহমান ভুলতে পারছেন না। প্রায় ছয় মাস হয়েছে রাবেয়া নামের একটি মেয়ে তাদের অফিসে জয়েন হয়েছে। কিন্তু কখনো এই মেয়েটাকে কারো সাথে একটু উচ্চস্বরে কথা বলা তো দূর একটু হাসতেও দেখেননি। কিন্তু আজ সেই মেয়ে পিয়নের সামান্য একটা কথা শুনে উচ্চস্বরে হেসে দিয়েছে। যে হাসি কিনা পুরো দুই তলা ফ্লোর কাঁপিয়ে দিয়েছে। আর সব থেকে বড় বিষয় হচ্ছে সে যে কথায় হেসেছিলো তা হলো –

“বড়লোক মানুষ কখনো গরীবদের দুঃখ বোঝে না। তার একমাত্র গরীবের রক্ত চুষতে জানে।”

এই কথাটায় কোথাও হাসি লুকিয়ে আছে কিনা সেটা বুঝতে পারছেন না সুমন রহমান। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, আজ এই রাবেয়া নামের মেয়ের সাথে কথা বলবেন। অদ্ভুত মেয়েটা, না হাসিখুশি না গম্ভীর। সে কি সেটা আজ জেনেই ছাড়বেন সুমন রহমান। আজ বৃহস্পতিবার তাই হাফ ডে। এই দিনটাকেই কাজে লাগাতে হবে। তাই অফিসের ফাঁকে তিনি রাবেয়াকে বলে এলেন রাবেয়া যেন অফিস শেষে তার সাথে অফিসের পাশের রেস্টুরেন্টে দেখা করে। রাবেয়া উত্তরে শুধু হু বলেছিলো।

সামনাসামনি বসে আছেন রাবেয়া এবং সুমন রহমান। টেবিলে ধোঁয়া উঠা কফি। কিন্তু সে দিকে কারোর কোন খেয়াল নেই। সুমন রহমান ভাবছেন এই অদ্ভুত মেয়েটার ভেতরে কি আছে। আর সুমন রহমানের এমন চাওনি দেখে রাবেয়ার অস্বস্তি লাগছে।

“আচ্ছা রাবেয়া, তুমি এমন কেন?”

“কেমন স্যার?”

“একটু অদ্ভুত।”

“তেমন কিছু না স্যার।”

“রাবেয়া, আজ তোমার জীবন গল্পটা একটু বলোতো শুনি।”

“আমার জীবন গল্পে কিছু নেই স্যার।”

“সেই নেই কিছুটাই বলো সেটাই শুনবো।”

“কিন্তু…”

“প্লিজ এটা বলো না তোমার জীবনটা একদম স্বাভাবিক। আর একদম সাদামাটা।”

“না স্যার, সেটা বলবো কেন?”

“তাহলে বলো।”

“স্যার আপনি বললেন না আমি একটু অদ্ভুত। আসলে আমি না, আমার জীবনটা অদ্ভুত।”

“সেই অদ্ভুত জীবনটাই বলো আমি শুনবো। তোমার জীবনটা যে আর সবার মতো স্বাভাবিক নয় বা তোমার এই পর্যন্ত পৌঁছাতে যে কম কষ্ট হয়নি সেটাও আমি বুঝতে পেরেছি।”

রাবেয়া কফির মগে একটা চুমুক দিয়ে বলতে শুরু করলো।

“আমার বাবা একজন রিক্সা চালক। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। আমি তাদের বড় মেয়ে। আমার আরো একটি বোন আছে তার নাম ফাতেমা। আমাদের সংসারটা খুব ছোট, মাত্র চারজন মানুষ। আমরা ভাড়াটিয়া, নিজেদের নিজেস্ব কোন জমি নেই। অবশ্য এটা নিয়ে আমাদের আফসোস নেই। অভাব কাকে বলে তা আমি জানি এবং জীবনের যুদ্ধ কতটা কঠিন সেটারও অভিজ্ঞতা আছে আমার।”

একটু বিরতি নিয়ে আবার বলতে শুরু করলো রাবেয়া-
“পাশের বাড়ির কাকিমা, যখন গরুর গোশত রান্না করতেন, আমাদের ঘরে সেদিন একশো বিশ টাকা কেজি বয়লার মুরগিও রান্না হতো না। এটা নিয়ে আমাদের কোন খারাপ লাগা ছিলো না। কিন্তু ছোট বোনটা মাঝে মাঝেই বায়না করতো, তাই ওকে বলতাম সামনের শুক্রবার আমরাও গোশত রান্না করবো। আর আমার পাগল বোনটা, সেটা বিশ্বাস করে নিতো।

আমার মা অন্যের বাড়িতে একবেলা করে কাজ করতো। আর বাবা দিনের বারো ঘন্টাই রিক্সা চালাতো। কখনো কখনো বাবা অনেক রাত করেও বাড়ি ফিরতো। তারপর রাতে একসাথে গল্প খাওয়া দাওয়া করে ঘুম। পরের দিন রুটিন মতো আবার যে যার কাজে চলে যেতো। আমার বাবা-মায়ের সব স্বপ্ন আমাদের দুই বোনকে নিয়ে। আমি লেখাপড়া করে অনেক বড় হবো। ভালো একটা চাকরি করবো। তখন আমার বাবা-মায়ের সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে।
আমি জীবনে অনেক কিছু দেখেছি, অনেক কিছু শিখেছি। এক সাথে অনেক কিছুর সম্মুখীন হয়েছি। তাই কেউ যদি বলে কষ্ট কাকে বলে বুঝি কিনা? তখন অনেক হাসি পায়।

মা যে বাড়ি কাজ করতো সে বাড়ি থেকে কোন ভালো খাবার দিলে মা সেটা আঁচলে করে বাড়িতে নিয়ে আসতো এবং সেটা আমাকে, বাবাকে আর ফাতেমাকে ভাগ করে দিতো। মা’কে নিয়ে সাধলে তিনি বলতেন তিনি খেয়েছেন। আর এগুলো আমাকে, বাবাকে আর ফাতেমাকে দিয়েছে। আমি সেটা শুনে নিজের অংশ খেয়ে নিতাম। ফাতেমাও নিজের অংশ খেয়ে নিতো। কিন্তু বাবা সেটা খেতেন না, রেখে দিতেন। জানতে চাইলে বলতেন, তিনি প্রায়শো রাস্তায় এটা ওটা কিনে খায়, আমি বা ফাতেমা তো খাই না। তাই আমাদের জন্য এগুলো রেখে দিতেন। যাতে করে আমরা পরে সেটা খেতে পারি। যেদিন ঘরে ভর্তা ভাত হতো সেদিন একটা ডিম ভাজতেন মা ঝাল পেঁয়াজ দিয়ে। তাতে নাকি ডিমের স্বাদ বাড়বে। কিন্তু আমি তো জানি মা এটা করে, কারণ পেঁয়াজ মরিচ দিলে ডিমটা একটু বড় হবে এবং সবাই ভাগ করে খেতে পারবো। কিন্তু বোকা বোনটা মাঝে মাঝেই জেদ ধরতো একা একটি ডিম খাবে। মা তখন অনেক রাগ করতেন, তাতেও কাজ না হলে তো দু-একটা থাপ্পড় ও মারতেন। কখনো কখনো রাতে বাবা-মা না খেয়েই বলতো তারা খেয়েছে। আমি বলতাম কখন খেলে? তখন বাবা বলতেন তিনি রাস্তা থেকে পুড়ি কিনে খেয়েছে সাথে দুই গ্লাস পানি। এতে নাকি বাবার পেট ভরে গেছে। আর মা বলতেন তার খিদে নেই। কিন্তু আমি তো সব বুঝতাম। ফাতেমা ছোট ছিলো তাই ও ওতটা বুঝতো না। তারা কেন এমন করে, কারণ আমি বা ফাতেমা যেন কখনো না খেয়ে না ঘুমাই।

আমার স্কুলে তেমন কোন বন্ধু বান্ধব ছিলো না। তার একটাই কারণ আমি গরীব। আর আমি ইচ্ছে করেই কারো সাথে মিশতাম না। কারণ, আমি সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারি না। তারা বড় পরিবারের বড় মানুষ, রোজ বিশ ত্রিশ টাকা নিয়ে স্কুলে আসতো। আর আমি পাঁচ টাকাও নিয়ে যেতে পারতাম না। তারা বছরে বছরে স্কুলের ড্রেস চেঞ্জ করতো, আর আমি দুই তিন বছর পর পর। তবুও আমি দিন শেষে সুখি কারণ আমার বাবা-মা আমাকে তাদের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

বার্ষিক পরীক্ষার সময় যখন সবাই ব্যস্ত পরিক্ষা শেষে কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবে, ভালো রেজাল্ট করলে বাবা-মায়ের থেকে কি কি গিফট নিবে, তখন আমি ভাবতাম পরীক্ষা শেষে ঘরের সব কাজ আমি করবো। মা একটু বিশ্রাম নিবে। আর একটু আফসোস করতাম ইস যদি ছেলে হতাম! বাবাকেও একটু সাহায্য করতে পরতাম। কিন্তু আমি তো মেয়ে। আবার ভাবতাম যদি ভালো রেজাল্ট করতে পারি তাহলে এ বছরও আমি উপবৃত্তির টাকাটা পাবো। উপবৃত্তিটা পেলে, এক বছরের অন্তত গাইড কিনতে পারবো। নতুন বছরে স্কুলে এসে যখন সবাই তার বাবা-মায়ের দেওয়া উপহার তাদের বন্ধুদেরকে দেখাতে ব্যস্ত, তখন আমি এক কোণে বসে ভাবতাম, গেছে বছর তো কোন টিউশনি ছাড়াই পাশ করলাম। এবারও কি পারবো? এখন তো বোনটা ছোট। সামনে বছর বোন কেও স্কুলে ভর্তি করতে হবে। তখন কি দুজনের লেখাপড়ার খরচ বাবা-মা বহন করতে পারবে?

সবাই যখন টিফিনবক্স ভরে জ্যাম পাউরুটি, নুডলস, বা ডিম পরোটা অনতো তখন আমি খুঁদ ফুটানো ভাত আনতাম, সাথে একটু আলু ভর্তা।
এভাবে দিন গড়িয়ে মাস এবং বছরও চলে গেলো। কিন্তু আমাদের অবস্থা ঠিক আগের মতোই রইলো। এর মধ্যে ঘটে গেলো আমাদের জীবনে সব থেকে বড় অঘটন। বাবা এক্সিডেন্ট করলো এবং হারিয়ে গেলো বাবার এক পা। পঙ্গু হয়ে গেলো বাবা। বাবার রিক্সার সাথে এক প্রাইভেট কারের ধাক্কা লেগে বাবা ছিটকে পড়ে গেলে অন্য এক গাড়ির সামনে, বাবার পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়৷সেদিন নাকি বাবা আল্লাহ বলে চিৎকার দিয়েছিলো। যে চিৎকার কারো হৃদয় কাঁপিয়ে দিতে সক্ষম। বাবার সেই চিৎকার আমি শুনতে পাইনি, কিন্তু অদৃশ্য এক হাওয়া সেই চিৎকার ভাসিয়ে নিয়ে যেতো রোজ আমার কানের কাছে। যে চিৎকার শুনলে আমার ভেতর বাহির পুড়ে যেতো দগ্ধ আগুনে। আমি তখন নিঃশব্দে কাঁদতাম। যে কান্না কারো কান অবধি যেতো না। চিৎকার করে কান্নার মাঝে এক শান্তি কিন্তু নিরবে কাঁদার অনেক যন্ত্রণা। শুরু হলো আমাদের কঠিন থেকে কঠিন জীবনের লড়াই। মা এখন এক বাড়ির সাথে সাথে আরো দুই বাড়ির কাজ নিলো। তখন আমাদের পরিস্থিতি কোন উপন্যাসের চিত্ররূপ হয়ে দাঁড়ালো। এক সময় বিশাল এক সমস্যা এসে দাঁড় হলো আমাদের ঘরের দুয়ারে। আমার SSC পরিক্ষার রেজিষ্ট্রেশনের টাকা, বাবার ঔষধ, চার মাসের ঘর ভাড়া, আর বোনের টিউশনির টাকা। একসাথে এতো সমস্যা, মা কি করবে যেন বুঝতে পারলেন না। তাই তিনি বাড়ির আশেপাশে সবার কাছেই ধার চাইলেন। কিন্তু কেউ দিতে রাজি নন। তারপর মা লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে যে যে বাড়িতে কাজ করতেন, সব বাড়িতেই সমস্যার কথা খুলে বললেন। দুই বাড়ি থেকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এক বাড়ি থেকে টাকা দিতে চাইলো, কিন্তু শর্তে দিলেন। আর শর্ত দিলো বাড়ির কর্তা। রাতে বাড়ির কর্তী বাড়ি থাকবে না তাই মা যেন ওই রাতটা ওই বাড়ির কর্তাকে সঙ্গ দেয়। মা এই কথা শোনার সাথে সাথেই বাড়িতে এসে কান্নায় ভেঙে পরে। এটাই বুঝি শোনার বাকি ছিলো জীবনে। মায়ের কান্নার কারণ জানতে চাইলে মা এড়িয়ে গেলো। কিন্তু আমি তখন অনেকটাই বড়। তাই মা’কে একটু চাপ দিয়ে কথা বের করতেই এগুলো জানতে পারলাম। সব শুনে, আমি বাক্যহীন একটা মানুষে পরিণত হলাম। এতটা জঘন্য মানুষ কি করে হয়! তারপর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এবছর আমি পরীক্ষা দিবো না। এটা শুনে মা আরো ভেঙে পরলেন। আমি মা’কে শান্তনা দিলাম, ভাগ্যে যা আছে তাই হবে এটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। পরদিন থেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম।

হঠাৎ একদিন আমাদের স্কুলের এক ম্যাম আমাদের বাড়িতে এলেন। রেজিষ্ট্রেশনের দিন শেষ হতে আর একদিন বাকি আমি কেন এখনো রেজিষ্ট্রেশন করিনি, সেটা জানতেই এলেন। আমি বললাম এই বছর পরীক্ষা দিবো না। তিনি কারণ জানতে চাইলে সব খুলে বললাম। তিনি সব শুনে বললেন, কাল যেন আমি স্কুলে যাই। পরের দিন স্কুলে গেলে সেই ম্যাম নিজের থেকে আমার রেজিষ্ট্রেশনের টাকাটা দিয়ে লিস্টে আমার নাম তুলে দিলেন। সেদিন তার সেই প্রতিদান দেখে আমি তার পা জড়িয়ে কেঁদে দিয়েছিলাম। আজও তার মতো মানুষ আছে বলেই হয়তো এখনো পৃথিবীটা এতো সুন্দর। কিন্তু পৃথিবীতে যে ভালো মানুষের চাইতে, জঘন্য মানুষ বেশি তা আমি আস্তে আস্তে জানলাম। তিনি আমাকে বুকে তুলে নিয়ে বললেন। রাবেয়া, তোমাকে দেখিয়ে দিতে হবে তুমি পারো। তোমার বাবা-মায়ের কষ্টের, পরিশ্রমের মূল্য দিতে হবে তোমায়। তোমাকে প্রমাণ করতে হবে, চাইলে তুমিও অনেক কিছু করতে পারো। আজ যারা তোমাদের ফিরিয়ে দিয়েছে, কাল যেন তারা তোমার কাছে আসে। আর তুমি যদি একটা ভালো রেজাল্ট আমাদের দিতে পারো, আমি আমাদের স্কুল থেকে তোমাকে সরকারি কলেজে কি করে এডমিশন পেতে হয় তা ব্যবস্থা করে দিবো। কথা দিলাম।

সেদিন থেকে আমার শুরু হলো আরো এক নতুন যুদ্ধ। দিনরাত এক করে পড়তে শুরু করলাম। কোন কিছুর প্রয়োজন হলে বেহায়ার মতো চলে যেতাম কোন এক স্টুডেন্টের বাড়ি। সেই বাড়ি থেকেও শুনতে হতো হাজার কথা। কিছু নেই তা পড়ালেখার শখ কেন এতো? বাবার নেই তাহলে এতো লেখাপড়া করতে হয় কেন? দেখতে তো খারাপ নই বাবা মা বিয়ে দিলেই তো পারে। মেয়ে মানুষ এতো পড়ালেখা করে কি করবে? সেই তো বাসনপত্র মাজতে হবে, চুলা ঠেলতে হবে। সবাইকে কেন এতো জ্বালাই আরো কত কি! কিন্তু কোন কিছুই তোয়াক্কা না করে আমি এগিয়ে গেলাম আমার লক্ষ্যে। দেড়মাস ব্যাপি পরীক্ষা দিয়ে একটু যখন অবসর হলাম তখন শুরু করলাম ছোট্ট বাচ্চা পড়ানো। জীবনের আরো একটা লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা, কিন্তু পেরেও যেন কিছু পারছি না। কিছু দিন পর রেজাল্ট পেলাম। জিপিএ ফাইভ পেয়েছি। এতো ভালো রেজাল্ট দেখে মনে হলো এই তো আমার কষ্টের পারিশ্রমিক। বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল, শিক্ষকের মান সবই একসাথে রাখতে পেরেছি।

সেদিন আমার চাইতে তিনজন মানুষ বেশি খুশি হয়েছিলো, আমার বাবা-মা এবং আমার শিক্ষক। বোনটা তো সবে মাত্র ক্লাস ফোরে ও কি বুঝবে।! তবুও যেন ওর চোখেমুখে খুশি ধরছিলো না। ও খুশিতে ওর সব বন্ধুদের বলে আমার আপু জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। অথচ ও জিপিএ ফাইভ মানেই বোঝে না। তারপর ম্যাম তার কথা রাখলো। একটি সরকারি কলেজে আমার ভর্তি করার ব্যবস্থা করে দিলেন। এরপর স্কুল লাইফ থেকে কলেজ লাইফ। কিন্তু স্কুল লাইফের থেকে কঠিন হয়ে গেলো কলেজের জীবন। কারণ স্কুলেতো বই ফ্রি দিতো, কিন্তু কলেজে তো বই নিজেদের কিনতে হবে। আরো এক যুদ্ধ সামনে এলো।
এবার মায়ের সাথে সাথে আমিও কাজ করতে শুরু করলাম। হাতের কাজ। বাহিরে তো চাইলেই কোন কাজ করতে পারবো না। কারণ আমি মেয়ে। বাড়িতে বসে হাতের কাজ শুরু করলাম, নিজের সমস্ত নিষ্ঠা দিয়ে কাজ করতে শুরু করলাম এবং সফলও হতে থাকলাম আস্তে আস্তে। কিন্তু কথায় আছে অভাগী যেখানে যায় নদীর জল সেখানেই শুকায়। আমার সময়েও তেমন হলো। বাবা হার্টঅ্যাটাক করলেন। সেটা বুঝতে আমাদের দেরি হয়ে যায়। যার ফলাফল বাবা প্যারালাইজ হয়ে যায়। এর মধ্যে আমার ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের পরিক্ষা শুরু হয়। কি করবো কিছুই বুঝে উঠার আগেই ঘটে যায় আরেক ঘটনা, আমার ছোট্ট বোনের সাথে।

চলবে।