#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
[ দ্বিতীয় পরিচ্ছদ ]
। পর্ব ২৮।
ঘুমের কারণে বেশি সময় ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিলো ট্রেনে রিধিশা আর নিশাদ বেচারার ঘুম না ধরায় বসে বসে গেইম খেলেই কাটিয়েছে। রিধিশা ঘুম থেকে উঠে হাই তুলে। নিশাদ গেইম খেলতে খেলতে বললো
” এতো বোরিং ট্রেন জার্নি করতে হবে জানলে আমি তো আসতামই না। ট্রেনে ঘুমায় কি করে সবাই? আমার তো ঘুমই আসে না।” রিধিশা তাচ্ছিল্য স্বরে বললো
” এলিয়েনের ঘুম পায় নাকি?”
নিশাদ কোণা চোখে তাকিয়ে বললো
” না ঘুমানোর জন্য এলিয়েন হওয়া লাগেনা। ট্রেন জার্নি প্রেমি হলেই চলে। আর রাতের ট্রেন জার্নি তো আরো সুন্দর।” রিধিশা হাই তুলে বললো
” রাতের ট্রেন জার্নি করিনি তাই বলতে পারছি না। একদিন জার্নি করে এক্সপেরিমেন্ট করে দেখে অনুভূতি জানাবো।”
নিশাদ গেইম খেলা রেখে ব্যাগ থেকে বাদামের প্যাকেট খুলে বাদাম খেতে থাকে। রিধিশার মুখের সামনে ফু দিয়ে বাদামের ময়লা গুলো সরাচ্ছে। রিধিশা মুখ কুঁচকে বললো
” কি করছেন এসব? অসভ্য ছেলে একটা। ময়লা ফেলার জায়গার কি অভাব পড়লো?”
” জানলা দিয়েই তো ময়লা ফেলবো নাকি? জানলাটা তোমার পাশে এখন আমার কি করার আছে?”
রিধিশা নিশাদের হাত সরিয়ে উল্টো পাশে দিয়ে রাগি গলায় বললো
” এখানে ফালান। একদম আমার দিকে আসবেন না। জানলায় ফেলছেন নাকি আমার উপর ফেলছেন ভালো করেই বুঝি।”
নিশাদ বাদামের ময়লা ছাড়িয়ে রিধিশার হাত দিয়ে বললো
” ধরো খাও। আমি একা একা খেতে পারি না। এখন যদি ঢং করে বলো খাবো না মুখ চেপে খাওয়াবো।”
রিধিশা মুখ ফুলিয়ে বাদাম খেতে থাকে। নিশাদ সব বাদাম রিধিশার হাতে রেখে রেখে নিজেও খাচ্ছে।
ঘন্টা খানেক পর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন থামে। নিশাদ নিয়েই দিক বেদিক না তাকিয়ে রিধিশার হাত ধরে বেরিয়ে গেলো। বাইরে বেরিয়ে শ্বাস ছাড়ে দুজন।
নিশাদ রিধিশাকে নিয়ে হোটেলে ঢুকে পড়লো। রিধিশা অবাক হয়ে বললো
” এখানে এসেছেন কেনো আবার? বাসায় চলুন!”
নিশাদ শান্ত ভাবে বললো
” চুপচাপ বসে থাকো। খিধে পেয়েছে আমার। আর এখন কি তুমি বাসায় গিয়ে রাঁধবে নাকি? এতো জার্নি করে যাচ্ছো আগে রেস্ট করবে।”
রিধিশা কপাল কুঁচকে বললো
” রেস্ট করতে করতেই তো আসলাম। আপনি ঝগড়াও করবেন আবার কেয়ারও করেন!” নিশাদ ভ্রু কুঁচকে বললো
” কেনো আমি অমানুষ নাকি? মানুষের কিসে সুবিধা অসুবিধা সবই বুঝে নিতে হয়। এবার মুখ বন্ধ রাখো!”
রিধিশা আর নিশাদ খাওয়ার পর্ব শেষ করে বেরিয়ে পড়লো সেখান থেকে। গাড়ি ডেকে তাদের গন্তব্যে রওনা দেয়।
গাড়ি নিশাদদের বিল্ডিং এর সামনে রাখে। নিশাদ তখম ফোনে বাবার সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত। বেচারা খেয়াল করেনি গাড়ি থেমে। রিধিশা নেমে চুপচাপ দুজনের ভাড়া মিটিয়ে বাসায় ঢুকে পড়লো। গাড়ির ড্রাইভার নিশাদকে নামতে বলে। নিশাদ কথা বলতে বলতে নেমে পড়লো। ভাড়া দেওয়া জন্য উদ্যোগ হতেই ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। নিশাদ গাড়ি ডাকতে থাকে কিন্তু গাড়ি থামেনি।
নিশাদ রিধিশাকে খোঁজার জন্য আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারে গাড়ি চলে যাওয়ার কারণ। নিশাদ নিশ্বাস ফেলে বাসায় চলে গেলো।
.
ভার্সিটিতে আসতেই জোতি হামলে পড়ে রিধিশার উপর। রিধিশা রাগি গলায় বললো
” এতোদিনে একবারও ফোন করে খোঁজ নিলি না আর এখন ঘাড়ে উঠে পড়ছিস?” জোতি ভারাক্রান্ত গলায় বললো
” তুই তো আর জানিস না কি প্যাড়ার মধ্যে ছিলাম আমি। মা, বাবার কাছে গিয়েছিলাম ঈদ কাটাতে। গিয়ে আমার বারোটা বেজে গিয়েছে। ভাইয়া আমাকে রেহানের সাথে কথা বলতে শুনে ফেলেছিলো একদিন। তারপর আমাকে চোখে চোখে রাখতে থাকে। এমনকি একা ঘুমাতেও দেয়নি মা’কে আমার সাথে ঘুমাতে হয়েছে। তাই ভয়ে ফোন অফ করে রেখে দিয়েছিলাম। ভাইয়া বাইরে গেলেই রেহানের সাথে কথা বলতে পারতাম একটু সময়ের জন্য।”
রিধিশা হেসে বললো
” ইশশ! আজকে ভাইয়া এখানে নেই দেখেই তুই ভয় ছাড়া প্রেম করছিস। ভাইয়া থাকলে প্রেম তো দূড়ে থাক রেহানের চেহারাও দেখতে দিতো না তোকে।
জোতি হতাশার নিশ্বাস ফেলে বললো
” আর ভয় ছাড়া! আমি তো ভাইয়ার ভয়ে থাকি। শেষ পর্যন্ত কি হবে জানি না। তবে রেহানকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব।”
” ছাড় এতো ভাবিস না। যা হবার সময় হলেই দেখা যাবে।” জোতি আর রিধিশার কথার মাঝে মিলি ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়।
দুজন কথা থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকায় মিলির দিকে। মিলি হাসতে হাসতে বললো
” কেমন আছো তোমরা? তোমাদের একটা গুড নিউজ দিতে আসলাম। আমার আর নিশাদের বিয়ে ঠিক হচ্ছে।” রিধিশার বুকের ভেতর কেঁপে উঠে মিলির কথা শুনে। রিধিশা আর জোতি একে অপরের দিকে তাকায়। মিলি ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বললো
” কি রিধিশা! নিশাদকে নিজের কাছে রাখতে পারলে না তো! শেষ পর্যন্ত নিশাদ তো আমারই হবে।” মিলি হাসতে হাসতে চলে যায়।
জোতি অবাক গলায় বললো
” কিরে রিধি! কি বলছে এসব? এই শাঁকচুন্নি কে বিয়ে করবে নিশাদ ভাইয়া?” রিধিশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো
” উনার জীবন এটা, যাকে যোগ্য মনে করবে তাকেই তো বিয়ে করবে।” জোতি রিধিশার দিকে তাকায়।
ভার্সিটিতে ঢুকতেই নিশাদের কান খাড়া হয়ে গেলো। মিলি সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে তাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে শুধু বিয়ের ডেট ফিক্সড করাটাই বাকি। নিশাদ রেগে ফায়ার হয়ে মিলিকে খুঁজছে। পেয়েও গেলো মিলিকে তার ফ্রেন্ডদের সাথে। নিশাদ দাঁতে দাঁত চেপে মিলিকে বললো
” তুমি পুরো ক্যাম্পাসে কি বলে বেড়াচ্ছ এসব? তোমার আর আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে অথচ আমিই জানি না!”
মিলি হেসে বললো
” ঠিক হয়নি হয়ে যাবে। আমি পাপাকে বলেছি বিয়ের কথা। পাপা খুব খুশি আর পাপা বলেছে তোমার বাবার সাথে কথা বলে যেভাবেই হোক আমাদের বিয়ে দেবে।” নিশাদ রেগে চেঁচিয়ে বললো
” তোমার ইচ্ছেতেই আমাদের বিয়ে হবে না মিলি। বারবার বলছি আমার থেকে দূড়ে থাকবে কানে যায় না এসব কথা? তোমাকে কতোবার বলবো তোমাকে ভালবাসি না আমি? ক্যাম্পাসে যেসব কথা ছড়িয়েছো তুমি। সময় থাকতে সাবধান করছি তোমাকে। ১ঘন্টার মধ্যে সবাইকে গিয়ে বলবে তুমি যা বলেছো সব মিথ্যা। নাহলে আমি কি কি করতে পারি সব ধারণা আছে তোমার। আজকের পর থেকে আমার সামনে যেনো না দেখি তোমাকে। এতোদিন তোমার ভালোবাসাকে রেসপেক্ট করে চুপ ছিলাম এবার আর থাকবো না। আমার লাইফ নষ্ট করতে দেবো না কাউকে আমি।”
মিলি ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মিলির ফ্রেন্ডরা তাকে টেনে নিয়ে যায়। নিশাদ কোমড়ে হাত দিয়ে বড় বড় নিশ্বাস ফেলতে থাকে। রাগে তার মাথার রগ ছিড়ে যাচ্ছে। রেহান নিশাদকে ক্লাসে নিয়ে যায়। ক্লাসে ১০ মিনিট বসতেই একেকজন এসে কংগ্রেস জানিয়ে যাচ্ছে। নিশাদ রেগে বেঞ্চে লাথি মেরে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়। বাইক নিয়ে সোজা বাসায় চলে যায়।
.
রান্না শেষ করে খাওয়ার জন্য বসবে তখন নিশাদের ফোন আসে। রিধিশা ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে নিশাদের নাম্বারটা দেখে বুক ভারি হয়ে আসে। অনেক ভেবে কল রিসিভ করে। নিশাদ ঠাণ্ডা গলায় বললো
” নিচে এসো এখনই।” কথা শেষ করে কেটে দিলো। রিধিশা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ফোনের দিকে। মাথায় ওড়না দিয়ে বেরিয়ে গেলো রিধিশা।
বাড়ির গেট থেকে বের হতেই নিশাদকে দেখতে পায়। এক হাতে জ্বলন্ত সিগারেট আর চোখে মুখে বিরক্তির আভাস ছড়িয়ে আছে।
রিধিশা নিশাদের কাছে এগিয়ে বললো
” এই সময় কিসের জন্য ডেকেছেন?”
নিশাদ রিধিশার চোখের দিকে তাকায়। রিধিশার চোখের অতল গভীরে হারিয়ে যেতে থাকে। রিধিশা তাকে ডাকতেই নিশাদ রিধিশার চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশান্তির নিশ্বাস নিয়ে নিশাদ মাথা নেড়ে বললো
” এমনই ভালো লাগছিলো না তাই।” রিধিশা তাচ্ছিল্য স্বরে বললো
” ভালো লাগছে না তাহলে মিলির কাছে যাওয়া দরকার। আপনাদের তো বিয়েও ঠিক হয়ে গিয়েছে।” নিশাদ অগ্নিদৃষ্টিতে রিধিশার দিকে তাকায়। রিধিশা ভয় পেয়ে যায় নিশাদের ভয়ংকর চাহনি দেখে। ঢোক গিলে বললো
” ক..কি এভাবে তাকান কেনো? সত্যি কথাই তো বলেছি। এখন যার তার বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে থাকাটা সোভা পায় না আপনাকে।”
নিশাদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো
” একটা কথা যদি মুখ থেকে বের করেছো! তাহলে সত্যি বলছি আজকে তোমাকে ছাড়বো না। মিলি, মিলি, মিলি! আরে কিসের মিলি বারবার? মিলি আমার জীবনটা তেজপাতা বানিয়ে দিচ্ছে। ওর কথা শুনেই বিশ্বাস করে নিলে আমাদের বিয়ে? ওই মিলির জন্য আজকে আমার পুরো দিনটাই খারাপ গেলো। অসভ্য মেয়ে’কে কিভাবে শায়েস্তা করবো বুঝতে পারছি না। ভার্সিটিতে ওর জন্য একদিন শান্তির নিশ্বাস নিতে পারি না।” রিধিশা অবাক গলায় বললো
” আপনাদের বিয়ে ঠিক হয় নি?”
নিশাদ সিগারেটের ধোয়া ছেড়ে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো
” না।”
চলবে……..
#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
[ দ্বিতীয় পরিচ্ছদ ]
। পর্ব ২৯।
নিশাদের কথা শুনে রিধিশার বুকের ভেতরে উথালপাতাল করতে থাকা মনটা শান্ত হয়ে যায়। রিধিশা ঠোঁট কামড়ে বললো
” আমি কি করবো এখন?” নিশাদ গম্ভীর চাহনি নিক্ষেপ করে আদেশ স্বরে বললো
” আমার সাথে দাঁড়িয়ে থাকবে আর একটাও কথা বলবে না।” রিধিশা রাস্তার দিকে তাকিয়ে বললো
” এতোরাতে ছেলে মানুষের সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে মানুষ খারাপ ভাববে। আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।”
নিশাদ গম্ভীর গলায় বললো
” এতোটাও রাত হয়নি মাত্র ৭টা বাজে। যাও তৈরি হয়ে এসো ঘুরতে যাবো।” রিধিশা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো
” কি! এখন ঘুরতে যাবেন? আমি যেতে পারবো না। রেহান ভাইয়া, সূর্য ভাইয়া, সাদি ভাইয়া ওদের কাউকে নিয়ে যান।”
” ওরা বাসায় নেই। ওদের কাজে পাঠিয়েছি আমি। তোমাকে বলেছি মানে তোমাকেই যেতে হবে আর নাহলে আমি এখন তোমার বাসায় গিয়ে ঢুকে বসে থাকবো। সাজেদা আন্টিকে যদি আমাকে তোমার ঘরে দেখে নেয় তারপর কি হবে?” নিশাদ কথা বলতে বলতে রিধিশার দিকে ঝুকে যায় অনেকটা।
রিধিশা রেগে নিশাদের বুকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে বললো
” আপনি ব্ল্যাকমেইল করছেন আমাকে? বদ লোক।” রিধিশা হনহন পায়ে চলে গেলো বাড়ির ভেতরে। নিশাদ দাঁড়িয়ে থেকে আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে ফুঁকতে থাকে। রিধিশা আসবে ভালো করেই জানে নিশাদ।
কিছুক্ষণ পর রিধিশা সত্যি সত্যি আসলো। এসেই সোজা হাটা ধরলো। নিশাদ সাথে হাটতে হাটতে বললো
” একদম এভাবে ভাব দেখিয়ে হাটবে না রিধিশা। তুমি না আসলে কি আমি ছেড়ে দিতাম তোমাকে! সুন্দর করে হাটো। আমাকে পেছনে রেখে না পাশে রেখে হাটো বেয়াদব মেয়ে।”
রিধিশা হতাশার শ্বাস ফেলে ধীরে ধীরে নিশাদের সাথে হাটতে থাকে। নিশাদের সিগারেট এর গন্ধ বারবার নাকে বাজতে থাকে রিধিশা। রিধিশা মুখ কুঁচকে থাকে। সুযোগ পেয়ে নিশাদ হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ফেলে দেয়। নিশাদ হাটা থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে রাগি গলায় বললো
” তোমার সাহস তো কম না! আমার সিগারেট ফেললে কেনো?”
রিধিশা আড়চোখে তাকিয়ে বললো
” আমাকে সাথে নিয়ে হাটতে হলে এসব ছাই পাশ খাওয়া যাবে না।” নিশাদ চোখ ছোট করে তাকিয়ে হাটা শুরু করে আবারও। রিধিশা হাটতে হাটতে বললো
” যাবেন কোথায় এখন?” নিশাদ বড় একটা নিশ্বাস ফেলে বললো
” গন্তব্যহীন জায়গায় যাবো। আর তুমি আমার গন্তব্যহীন পথ যাত্রার সঙ্গি।” রিধিশা নিশাদের দিকে তাকিয়ে বললো
” আজকে হলো কি আপনার?”
নিরবতা পালন করে কিছুক্ষণ পর উত্তরে বললো
” মায়ের কথা মনে পরছে খুব বেশি।”
” আপনার মা কোথায় থাকে?” নিশাদ শান্ত ভঙ্গিতে উত্তর দিলো
” ১৫ বছর আগে এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে।” রিধিশা অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো নিশাদের দিকে। ধীর গলায় বলে
” সরি, বুঝতে পারিনি আমি।”
” ইটস ওকে। কেউ আরো সম্পর্কে না জানলে বুঝবে কি করে?” রিধিশা চুপ করে গেলো।
নিশাদ রিধিশার দিকে তাকাচ্ছে বারবার। কিছুক্ষণ পর পর রাস্তার লাল সাদা লাইট গুলোতে রিধিশাকে দেখতে খুব ভালো লাগছে। তবে এই ভালো লাগার মাঝেও একটু কমতি লাগছে নিশাদের কাছে।
নিশাদ রিধিশার দিকে তাকিয়ে বললো
” তুমি কি হাসতে পারো না ?” রিধিশা বিরক্তি গলায় বললো
” পৃথিবীতে সব মানুষই হাসতে পারে। কি অদ্ভুত প্রশ্ন করেন আপনি।” নিশাদ মিহি হেসে বললো
” একটা কথা বলো তোমার ভয় করছে না আমার সাথে? এখন যদি তোমাকে আমি কিডন্যাপ করে নেই?” রিধিশা নিশাদের দিকে তাকিয়ে বললো
” ঝগড়া করলেও এতোদিনে তো এইটুকু চিনতে পেরেছি। আপনি আমার কিছুই করবেন না। করতে চাইলে অনেক আগেই করতেন।”
” তারমানে আমি তোমার বিশ্বাসযোগ্য মানুষ তাই তো!” রিধিশা মুখ বাঁকিয়ে বললো
” বুঝেন না নাকি?” নিশাদ মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।
হাটতে হাটতে দুজন অনেক দূড়ে এসে পড়েছে। ক্যাম্পাসের আগে থাকা লেকে এসেছে। রিধিশা চোখ বন্ধ করে হাসলো। আজকে আসা হয়নি ছুটির পর। নিশাদ রিধিশার দিকে তাকিয়ে হাসলো। রিধিশার হঠাৎ কাঠগোলাপ গাছটার দিকে চোখ পড়তেই যেনো মাথায় বাজ পড়েছে। রিধিশা হতবাক গলায় বললো
” গাছ কে কেটেছে?” নিশাদ তাকিয়ে দেখে কাঠগোলাপে বড় গাছটা কেটে ছোট করে ফেলেছে। রিধিশার চোখ ছলছল করে উঠে। নিশাদ এগিয়ে গিয়ে কিছু দেখে এসে বললো
” উপরে কারন্টের তার ছিলো তাই কেটে ফেলেছে হয়তো। মন খারাপ করো না আবার নতুন করে উঠবে গাছ।” রিধিশার মন বিষণ্ণ হয়ে যায়। রিধিশা কৃষ্ণচূড়া গাছের কাছে গিয়ে দেখে সেটা কাটা হয়নি কারণ এই গাছে উপর তার পড়েনি কোনো। গাছিটা তারের পাশেই।
নিশাদ বললো
” একটা গাছ আছে কেঁদো না আর।” রিধিশা ক্ষিপ্ত গলায় বললো
” কোথায় কাঁদলাম আমি?” নিশাদ মেকি হেসে বললো
” তোমাকে দেখেই মনে হচ্ছে কেঁদে দেবে। চলো সামনে গিয়ে বসি।”
নিশাদ লেকের পানির আগে থাকা বেঞ্চিতে গিয়ে বসলো। রিধিশা গুটিশুটি পায়ে পাশে গিয়ে বসলো।
পানির উপর গোল আলোহীন মিষ্টি চাঁদটা দেখা যাচ্ছে জ্বলজ্বল করছে। পানির ছোট ছোট ঢেউও উঠছে।
নিশাদ হঠাৎ বলে উঠলো
” আচ্ছা তোমার জীবন সঙ্গি চাই?” রিধিশা স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো
” এসব নিয়ে ভাবিনি কখনো।” নিশাদ বিরক্ত গলায় বলায় বললো
” এত্তো নিরামিষ কেনো তুমি? প্রত্যেকটা মেয়ের তার জীবন সঙ্গি’কে নিয়ে স্বপ্ন থাকে। হয়তো অনেকের পূরণ হয় আবার অনেকের হয়না কিন্তু সংসার নিয়ে স্বপ্ন সবারই থাকে। এখনই ভেবে বলো তোমার কি কি চাই।”
রিধিশা নির্বিঘ্ন ভাবে চাঁদের দিকে তাকালো। নিশাদ রিধিশার দিকে তাকিয়ে থাকে। আলোহীন চাঁদ’টাও তার উজ্জ্বলতা ছড়াচ্ছে। রিধিশার উপরও চাঁদের আলোর রশ্মিজাল পড়ছে। নিশাদের চোখ জুড়িয়ে যেতে থাকে। নিরবতা ভেঙ্গে রিধিশা বলে উঠলো
” আমার অমূল্য কিছু চাই। যার একটুকরো হৃদয়ে আমার জন্য ভরপুর ভালোবাসা থাকবে। সেই ভালোবাসা দিয়ে আমরা ছোট কুঁড়েঘর তৈরি করতে পারবো। এক ফালি চাঁদের আলোয় কুঁড়েঘরে সুখের
সংসার করবো। দিন শেষে যেনো ভালোবাসাটা থাকে দুজন ব্যাক্তির মাঝে।” নিশাদ আলতো হাসলো। রিধিশা কোণা চোখে তাকিয়ে বললো
” হাসেন কেনো?”
” এমনি। চলো ফুচকা খাই।” রিধিশা মাথা নেড়ে বললো
” নাহ খাবো না বাসায় চলুন।”
” ধুর বাচ্চাদের মতো একই কথা শুধু। চলো চুপচাপ আমার সাথে।”
নিশাদ রিধিশাকে নিয়ে গেলো ফুচকা খেতে। ফুচকা খেয়ে বেল পুরিও খেলো দুজন। রিধিশা খেতে না চাইলে নিশাদ জোড় করে খাইয়েছে। আরো কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে দুজন আবার বাসায় আসার জন্য পথ দেয়।
রিধিশা কথা বলতে বলতে মাঝে মাঝে হাসছে। নিশাদ হা করে তাকিয়ে দেখছে রিধিশাকে। হঠাৎ রিধিশার একটা দেয়ালে পোস্টারের দিকে চোখ যায়। রিধিশা পোস্টারের কাছে চলে যায় পড়ার জন্য নিশাদ থতমত খেয়ে বললো
” আরো এদিকে কোথায় যাও?” রিধিশা পোস্টার পড়ে দেখে চাকরির পোস্টার। রিধিশা ছবি তুলে নেয়।
নিশাদ ভ্রু কুঁচকে বললো
” কি করবে এটা দিয়ে?”
” কিছু না চলুন!” নিশাদ হাটতে হাটতে বললো
” তুমি যে টিউশনি পড়াও তোমার কষ্ট হয়না?” রিধিশা হেসে বললো
” কষ্ট আবার কিসের। আমি নিজের ইচ্ছেতে করি। নিজে উপার্জন করে চলি। আমার কষ্ট হয়না তবে খুশি ঠিকই হয়। আমার মনে হয় নিজের উপার্জনে আলাদা খুশি থাকে।” নিশাদ বোকার মতো তাকিয়ে থাকে।
রিধিশা বাসায় চলে যায়। নিশাদও বাসায় এসে ভাবতে থাকে রিধিশার কথা।
বসে বসে কয়েক ঘন্টা ধরে ভেবে যাচ্ছে নিজেও জানে না। একসময় রেহান, সূর্য আর সাদি বাসায় ফিরে আসে। নিশাদের হাবভাব দেখে সাদি চিন্তিত হয়ে বললো
” নিশাস ব্রো! তুই কি অসুস্থ? এতো চুপচাপ কেনো?”
নিশাদ মাথা নেড়ে বললো
” ভাবছি জব করবো।” নিশাদের কথা শুনে রেহান, সাদি, সূর্য তিনজন চোখ বড় বড় করে তাকালো। নিশাদ তিনজনের চেহারা দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো
” কি এভাবে তাকাস কেনো? আমি জব করতে পাড়বো না নাকি? পার্ট টাইম জব হলেও তো পেতে পারি।”
সূর্য অবাক হয়ে বললো
” তুই পার্ট টাইম জব করবি কেনো? আর আংকেল কি করতে দিবে তোরে? হঠাৎ হঠাৎ কোন ভূতে ধরে তোকে?”
” আরে ভূতে ধরার কি আছে? জব করতে চাই আমি জব করবো শেষ আমার কথা। বাবাকে আজকেই বলবো আমার জন্য আর টাকা না পাঠাতে।”
রেহান হেসে বললো
” আংকেল বলবে তোর মদ খাওয়া বেড়ে গেছে তাই উল্টা পাল্টা কথা বলিস। আংকেল তো মাস্টার্স শেষ করার আগে তোকে জব করার জন্য পারমিশন দিবেই না।” নিশাদ ভাবলেশহীন ভাবে বললো
” তাহলে জব খুঁজে তারপরই বলবো বাবাকে। তবে জব তো করবোই।” সাদি নিশাদের পিঠ চাপড়ে বললো
” ভালো চিন্তা করছিস ভাই। চাকরি টা খুঁজে তাড়াতাড়ি গুড নিজের মিষ্টি খাওয়াবি।” রেহান মুখ কুঁচকে বললো
” তোর মিষ্টি খাওয়া শেষ হয় না ভাই। মিষ্টি খাওয়া কমা নাহলে তোর গার্লফ্রেন্ড আছে না? ওইটা কয়েকদিন পর এমনি ব্রেকাপ করে দিবে তবে সিগারেট খেয়ে দিন কাটাতে হবে পরে ছ্যাকা খাইয়া ব্যাকা কবি হইয়া ঘুরবা তুমি।” নিশাদ আর সূর্য হেসে দেয় রেহানের কথায়
চলবে….