#কুহকিনী
#হুমায়রা_শাম্মী
সূচনা পর্ব
বধূকে কিড*ন্যাপ করতে হলুদ সন্ধ্যায় নয়িম আর ইমতিয়াজ এসেছে।তারা বধূর সামনে দাঁড়ায়।বধূ সাইমা সামনে তাকায়।মাক্সের আড়ালে থাকা দু’জনের দু’টি চোখ চিনতে পায়।সে ভয় পায়।হৃদপিণ্ড অস্বাভাবিক ভাবে ধুপধাপ করতে থাকে।সাইমা ভয়ার্ত হয়ে আশপাশে নিজের পরিচিতদের খুঁজে। একটু দূরে তার নিজ ভাই।তার আশপাশে যারা আছে সবাই আত্মীয়। এতটা ঘনিষ্ঠ না যেটা তা বলতে পারবে।সাইমা আবারো সামনে তাকায়।এবার কাউকে দেখতে পায় না।এটাকে নিজের ভুলও বলতে পারছে না।সাইমা উঠে দাঁড়ায়।এখনি ভাইকে বলতে হবে।সাইমা বুঝতে পারছে না এত এত কড়া গার্ডের মাঝেও তারা আসল কি করে!গেইটে আলাদা গার্ড রাখা হয়েছে যেনো অপরিচিত কেউ না আসতে পারে।তবুও তারা আসলো কি করে!সাইমা তার ভাইয়ের কাছে আসে।পাশে দাঁড়িয়ে বলল,” ভাইয়া কিছু কথা বলব।”
তানিম বোনের দিকে ফিরে।বোনের বিয়েতে দৌড়ঝাঁপে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। তানিম বলল, “একটু পরে বল।এখন এদিকের দিকটা দেখতে হবে।”
–আচ্ছা।
সাইমা ফিরে আসছে।তখনি তার সামনে পাচঁ বছরের এক বাচ্চা এসে বলল,” আপু তোমার ফ্রেন্ড এসেছে।”
–কে?
“নাম বলল তনিয়া।”
সাইমা খুশি হয়।তনিমার সাথে বহুদিন ধরে দেখা হয় না।সে বলল, “কোথায় সে?”
“পুকুর পাড়ে।”
সাইমা সেদিকে যাচ্ছে। পুকুর পাড়ের পাশে অতিথিদের বসার আয়োজন করানো হয়েছে।পুকুর পাড়ে যেতে তাদের বাড়ির ছোট বাগান অতিক্রম করে যেতে হয়।এই জায়গাটা একটু নিরিবিলি।সাইমা দ্রুত পুকুর পাড়ের দিকে যাচ্ছে। তখনি গাছের আড়াল থেকে নয়িম বের হয়।সাইমা চিৎকার করতে যায় কিন্তু তার আগে ইমতিয়াজ পিছন থেকে তার মুখ রুমাল চেপে ধরে।সাইমা ছুটার জন্য চেষ্টা করে।আশপাশে সবাইকে খুঁজছে।সাইমা চোখে অন্ধকার দেখতে পায়।অজ্ঞান হয়ে ইমতিয়াজের বুকে ঢলে পড়ে।ইমতিয়াজ তৎক্ষনাৎ তাকে কোলে নেয়।
ঘন্টার মত হলো সাইমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।সারা বাড়ি হইচই পড়ে যায়।সাইমার ভাই তানিম মাথা চেপে আছে।একটু আগেই তো তার বোন তার কাছে এসেছিল।তানিম রাগে সামনের চেয়ারে লাথি দিয়ে বলল,” এত এত মানুষের মাঝে সাইমা গায়েব হলো কি করে?”
সাইমার সৎ মা রেবেকা তার সামনে এসে বলল, “তুমি চিন্তিত হবে না।তাকে পাওয়া যাবে।”
তানিম তার সামনে আসে।ক্ষুদ্ধ হয়ে বলল, “এটাতে আপনার দোষ আছে।আপনি তো চাইতেন এই বিয়েটা না হোক।”
“এটা কেমন কথা!আমি চাইবো না কেনো?”
“কারণ আপনি সাইমার সুখ সহ্য করতে পারেন না।নিজের সন্তানদের জন্য সব চান।সাইমার গায়েব হওয়ার দোষ আমি আপনাকেই দিবো।”
তানিম রাগান্বিত হয়ে চলে যায়।সাইমাকে খুঁজতে নিজের লোকদের নিযুক্ত করে।আগে নিজে চেষ্টা করবে।পরে পুলিশে যাবে।
_______________________
নয়িম সিগারেটে টান দিয়ে বলল,” ইমতিয়াজ গাড়ির ভিতরে আসব?”
ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসল না।নয়িম গাড়িতে হেলান দেয়।ইমতিয়াজ ভিতরে সাইমার সাথে কি করছে তা সে জানে না।কিন্তু যায় করুক তাতে তার যায় আসে না।সে আপন মনে সিগারেট ফুকঁছে।
ইমতিয়াজ সাইমার দিকে তাকিয়ে আছে।সাইমার গালে হাত দেয়।তারপর তার ঠোঁটে নিজ ঠোঁট লাগিয়ে গাড়ির জানালা খুলে বলল, “নয়িম গাড়ি স্টার্ট দেয়।”
নয়িম ড্রাইভিং সিটে বসে।পিছনে ফিরে দেখে ইমতিয়াজ তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।ইমতিয়াজ নয়িমকে দেখে বলল,” পিছনে ফিরবি না।”
নয়িম গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল, “কেনো?অজ্ঞান মেয়ের সাথে কি করতে চাচ্ছিস?”
“কিছুই না।ফিরতে না করেছি তাই ফিরবি না।”
তাদের গাড়ি সাত তলা বিল্ডিংয়ের সামনে থামে।রাত অনেক হয়েছে তাই আশপাশে কেউ নেয়।ইমতিয়াজ সাইমাকে কোলে নেয়।দ্রুত লিফটে উঠে।কেউ দেখে ফেললে সমস্যায় পড়তে পারে।লিফট এসে চার তলায় থামে।ইমতিয়াজ তাকে নিয়ে দ্রুত ফ্ল্যাটে ঢুকে।নয়িম পিছনে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলল, “তাহলে আজ থেকে আমি অন্য ফ্ল্যাটে থাকব?”
“কাল থেকে থাক।এত রাতে তোর রুমের জিনিসপত্র নেওয়ার দরকার নেয়।”
ইমতিয়াজ সাইমাকে নিয়ে নিজ রুমে যায়।সাইমাকে খাটে শোয়ে দেয়।তখনি কলিংবেল বাজল।নয়িম দরজা খুলে।ওপাশে জাবিন দাঁড়িয়ে আছে।ঠোঁটে কড়া লিপস্টিক, চোখে কাজল।শরীর থেকে কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ আসছে।নয়িম দরজায় হেলান দিয়ে বলল, “কাকে চায়?”
জাবিনের ঠোঁটে লাজুক হাসি।সে বলল, “আপনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন?”
“কাজে,এত রাতে খুঁজ নিতে আসলে যে?”
“আমি পড়ছিলাম।আপনার আসার শব্দ পেয়ে জানতে আসছি।”
“আমাদের আসার শব্দ ফ্ল্যাটের ভিতর থেকে শুনলে!!তোমার শ্রবণশক্তির প্রশংসা করতে হয়।এখন তো জানলে যাও শোয়ে পড়ো।”
জাবিন মনঃক্ষুণ্ন হয়।সে কিছুক্ষণ থাকতে চেয়েছে।জাবিন ভিতরে উঁকি দিয়ে বলল,” ভিতরে ঢুকতে দিবেন না?”
“এত রাতে?”
“পড়তে পড়তে আমার খেয়াল ছিল না এত রাত হয়েছে। আসি তাহলে।”
জাবিন চলে যেতে নেয়।নয়িম বলল, “এত রাতে কোনো পুরুষের কাছে কড়া পারফিউম দিয়ে আসবে না।”
“কেনো?”
নয়িম দরজা বন্ধ করে দেয়।জাবিন উত্তর না পেয়ে চলে যায়।
সাইমার জ্ঞান ফিরে।আস্তে ধীরে উঠে বসে।আশপাশে থাকায়।কিন্তু কিছুই চিনতে পারছে না।তখন হাতে খাবার নিয়ে ইমতিয়াজ ঢুকে।সাইমার সামনে রেখে বলল,” জ্ঞান ফিরল তাহলে।ওয়াশরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নাও।”
সাইমা চিৎকার করে বলল,” আমি খাবো না।আপনি আমাকে কেনো কিড*ন্যাপ করেছেন।”
“আস্তে কথা বলো।”
“বলব না।বলেন কেনো করেছেন?”
“তুমি আগে থেকেই জানো।বলতে হবে না।খাবারগুলো খেয়ে নাও।”
সাইমা রাগে সব খাবার নিচে ফেলে দেয়।ইমতিয়াজ রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল,” সাইমা রাগ দেখাবে না।”
“আপনি আমাকে কিড*ন্যাপ করেছেন এখন বলছেন রাগ দেখাবো না!আমি এখনি চলে যাবো।”
সাইমা চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়।ইমতিয়াজ তার হাত চেপে ধরে।সাইমা নিজের হাত ছাড়াতে চায়।ইমতিয়াজ সাইমাকে জড়িয়ে ধরে।সাইমা ঘৃণায় কান্না করে দেয়।ইমতিয়াজ বলল,” কান্না করো না।আমি তোমাকে সুখে রাখব।”
সাইমা নিজেকে ছুটাতে চায়।যখন পারল না তখন ইমতিয়াজের কাঁধে জোরে কামড় দেয়।ইমতিয়াজ ব্যথায় তাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,” তুমি রাক্ষস! ”
সাইমা দ্রুত দরজা কাছে যায়।তার আগে ইমতিয়াজ দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলল,” তুমি কোথাও যেতে পারবে না।একবার যখন আমার কাছে এনেছি তাই মৃত্যু অব্দি আমার কাছে থাকবে।”
সাইমা বিছানায় বসে মুখ চেপে কান্না করে উঠে।সামনে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে তা সে জানে না।ইমতিয়াজ তার পাশে বসে বলল ,”কাল তোমার আমার বিয়ে হবে।কারণ আমি তোমাকে হারাম ভাবে ছুঁয়ে দিতে চাই না।তবে তুমি বিয়ে করতে না চাইলে আমি তোমাকে হারাম ভাবে স্পর্শ করতে বাধ্য হবো।”
সাইমা কান্নামাখা কণ্ঠে বলল, “আপনি খারাপ ছেলে।”
“তোমার মুখে এটা শুনতে ভালো লাগছে।আবার বলো।”
সাইমাকে রাগিয়ে ইমতিয়াজ আনন্দ পাচ্ছে।সে ওয়ারড্রব থেকে জামা বের করে বলল, “ফ্রেশ হয়ে এটা পড়ো।তোমার এলোমেলো শাড়িতে তোমার গায়ের অনেক অংশ দেখা যাচ্ছে। ”
সাইমা তৎক্ষনাৎ নিজের অজান্তে খুলে যাওয়া অংশ ঢাকতে থাকে।ইমতিয়াজ তা দেখে হেসে বলল,” কি লাভ ঢেকে।কাল তো আমিই তা দেখার হকদার হবো।”
“কখনো না।আমি আপনাকে মরে গেলেও বিয়ে করব না।”
“তা কালকে দেখা যাবে।”
সাইমা জামা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে।ইমতিয়াজ আবারো খাবার আনতে কিচেনে যায়।সোফায় নয়িমকে দেখে বলল,” কিছু খেয়েছিস?”
–না।
“কিছু খেয়ে নেয়।”
নয়িম সোফা থেকে উঠে। হাই তুলে নিজের রুমে যায়।কাল থেকে তার আলাদা ফ্ল্যাটে থাকতে হবে।এতদিন ধরে সে ইমতিয়াজের সাথে থেকে এসেছিলো। কিন্তু এখন ইমতিয়াজ বিয়ে করছে।তাই তার সাথে তো আগের মতো একি ফ্ল্যাটে থাকতে পারবে না।কাল থেকে এই ফ্ল্যাটের সামনের ফ্ল্যাটে সে থাকছে।নয়িম নিজ রুমে শোয়ে যায়।তার ফোনে মেসেজ আসে।জাবিন করেছে,”আপু বাসায় নেয়।”
নয়িম মেসেজ করল, “আমি কি করতে পারি।”
“আপনাকে এমনি বললাম।আপনি একটা কাজ করে দিবেন।”
“আমি বিনামূল্যে কাজ করি না।”
“আপনি যা চান তা পাবেন।প্লিজ করে দেন।আপনি একটু জানবেন আপু এতরাত অব্দি কোথায় থাকে।”
“আমি এটা জেনে কি করব!”
“আপনি আমাকে জানাবেন।”
“আমি পারব না।”
নয়িম মেসেজটা পাঠিঁয়ে ফোন রেখে চোখ বন্ধ করে।
ইমতিয়াজ খাবার নিয়ে আবারো রুমে আসে।সাইমা ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে না।অনেক সময় গত হলো।ইমতিয়াজ ওয়াশরুমের দরজার কাছে যায়।তখনি সাইমা বের হয়।চোখ মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে ভিতরে অনেক কান্না করেছে।
চলবে,,,,,