#কুহকিনী
#হুমায়রা_শাম্মী
পর্ব সংখ্যা —৪
রাত তখন দশটা বাজে।নয়িম বিছানায় বসে ল্যাপটপ টাইপিং করছে।কলিংবেল বেজে উঠে।কে হবে ভেবে নয়িম উঠে দাঁড়ায়।দরজা খুলে জাবিনকে দেখতে পায়।আজ তাকে সুন্দর লাগছে।জাবিন বলল” আপনার রুমে কিছুক্ষণ থাকতে পারি।”
“রাত তো অনেক হয়েছে।”
“একটু সময় থাকব।আপু তার ফ্রেন্ডের নিয়ে পার্টি দিচ্ছে।”
“আচ্ছা ভিতরে আসো।”
জাবিন ভিতরে ঢুকে।খাটে গিয়ে বসে।খাটের পাশে থাকা টেবিলে হেলান দেয়।নয়িম আবারো টাইপিং করতে থাকে।জাবিন কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে।কি বলবে বুঝতে পারছে না।হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়।নয়িম ফোন খুঁজে টর্চ অন করে।জাবিন চুপচাপ বসে আছে।নয়িম উঠে দাঁড়ায়।মোমবাতি জ্বালানোর জন্য কিচেনে যাচ্ছে। জাবিন পিছন থেকে বলল, “কোথায় যাচ্ছেন?”
“তুমি বসো আমি মোমবাতি জ্বালিয়ে আনি।”
“আচ্ছা। ”
নয়িম কিচেনে যায়।জাবিন ভয় পায়।অন্ধকার রুম তার ভয় লাগে।তবে যদি সেই রুম অন্যের হয় তাহলে ভয়ের মাত্রা আরো বাড়ে।নয়িম আসতে দেরি হচ্ছে। জাবিন উঠে দাঁড়ায়।সে কিচেনের দিকে যাচ্ছে।নয়িমের পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়।নয়িম তার উপস্থিতি বুঝতে পারেনি।সে মোমবাতি না পেয়ে যখন পিছনে ফিরবে তখন তার ওষ্ঠ জাবিনের ওষ্ঠের সাথে লাগে।নয়িমের শরীর তখন বিদ্যুৎময়ী ঝাঁকি দিয়ে উঠে।হাতের মোবাইল ফ্লোরে পড়ে যায়।ঠাস শব্দ করে মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়।চারপাশ আবারো অন্ধকার বিরাজ করতে থাকে।জাবিন অজানা আবেশের ঘোরে একি জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।নয়িম তার হাত জাবিনের কাঁধে রাখে।আলতো করে তাকে সরিয়ে নেয়।নিচু হয়ে নিজের ফোন খুঁজতে থাকে।জাবিন তার হাত নিজ ঠোঁটে স্হাপন করে।মনের ভিতর নানান রংয়ের প্রজাপতি উঠতে থাকে।নয়িম ফোন খুঁজে পায়।টর্চ অন করে জাবিনের মুখের দিকে ধরে।শুভ্র আলোতে জাবিন চোখ বন্ধ করে নেয়।নয়িম অন্যদিকে ফিরে বলল,” স্যরি,এটা দূর্ঘটনা ছিলো।ভুলে যাও।”
নয়িম তাকের উপর থেকে মোমবাতি পায়।সেটা জ্বালিয়ে চলে আসে।জাবিন এখনো সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।অনুচ্চস্বরে বলল, “ভুলে যাবো?এটা কি ভুলে যাওয়ার ঘটনা!”
নয়িম মোমবাতি টেবিলের উপর রাখে।দরজার দিকে তাকায়।জাবিন এখনো আসছে না।সে একটু চিন্তিত হয়।সে জাবিনের কাজকর্মে বহু আগে বুঝেছে জাবিন তার প্রতি দূর্বল।এই দূর্বলতার পরিধি যদি আরো বাড়ে?এই ঘটনা জাবিনের মনে একটু হলেও আছর ফেলবে।জাবিন ধীরে পায়ে রুমে আসে।খাটে গিয়ে বসে।নয়িমের দিকে তাকাচ্ছে না।কেমন লজ্জা লাগছে।যেমন লজ্জা পেয়ে থাকে নববধূরা।নয়িম সেটা বুঝতে পারে।তাই সে বলল, “তুমি বসে থাকো।আমি তোমার জন্য কিছু রান্না করে নিয়ে আসি।”
নয়িম দ্রুত কিচেনে চলে আসে।জাবিনের জন্য কিছু রান্না করতে থাকে।রান্না শেষে যখন নিজ রুমে আসে তখন তাকে ঘুমন্ত দেখতে পায়।বিছানায় গুটিশুটি হয়ে শোয়ে আছে।নয়িম তার মাথার নিচে বালিশ দেয়।নয়িম ফ্ল্যাটের বাহিরে আসে।মনিরাকে দেখতে পায়।সে তার ফ্রেন্ডের বিদায় জানাতে তাদের এগিয়ে দিয়ে আসছে।নয়িম আবারো রুমে আসে।জাবিনকে কোলে নেয়।দ্রুত তাকে তার ফ্ল্যাটে নিয়ে আসে।সে তাকে খাটে শোয়ে দেয়।চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে আবারো পিছনে ফিরে তার গায়ে কাঁথা দিয়ে চলে যায়।
___________________________
সকাল তখন নয়টা বাজে।জাবিন স্কুলে যাচ্ছে।স্কুলের গেইটে তানিমকে দেখতে পায়।সাথে তার লোকেরা।জাবিন ভয় পায়।তাকে কিছু বলবে না তো?মনের ভয় প্রকাশ না করে সে গেইটের সামনে আসে।ঢুকতে চাইলে তানিম তার সামনে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “তুমি তাহলে সেই জাবিন?”
“জ্বী, কোনো দরকার? ”
“দরকার তো আছে।স্কুল কয়টায় ছুটি দিবে?”
“চারটায়।”
“আজ তো বৃহস্পতিবার। ”
“বৃহস্পতিবার থাকলেও আজ বিকাল চারটায় আমার ছুটি।”
তানিম সন্দিহান দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়।জাবিন ব্যাগ চেপে ধরে বলল,” যদি দরকার থাকে তাহলে চারটায় আসবেন।”
জাবিন গেইটের ভিতরে ঢুকে।তানিম পিছন থেকে বলে উঠল, “নয়িমের ব্যাপারে কথা ছিলো।তুমি নাকি তাকে ভালো করে চিনো।”
জাবিন জবাব দিলো না।সে দ্রুত স্কুলে ঢুকে।বিকাল চারটার কথা বলেছে এটা তানিম বিশ্বাস নাও করতে পারে।জাবিন পেরেশানি হয়।সে নতুন কোনো বিপদে পড়ল না তো?
তুবা ইমতিয়াজের রুমে ঢুকে।ইমতিয়াজকে নাস্তার জন্য ডাকতে এসেছে।সে ইমতিয়াজের কাছে আসে।ইমতিয়াজ জ্বরের ঘোরে সাইমা করছে।পায়ের ব্যথায় ইমতিয়াজের অনেক জ্বর এসেছে। তুবা তার কপালে হাত রাখে।জ্বরের তাপে তার হাত সহ্য করতে পারে নি।সে তৎক্ষনাৎ হাত সরিয়ে নেয়।ভাইকে ডাকতে যায়।খায়ের রুমে আসে।তুবাকে পানি আনতে বলে।তুবা বালতি ভরে পানি আনে।খায়ের তার মাথায় পানি ঢেলে দিচ্ছে।খায়ের হাতঘড়িতে সময় দেখে বলল, “তুবা তুই পানি ঢেলে দেয়।পরে কিছু খায়িয়ে ঔষধ খায়িয়ে দিবি।আজ অফিসে মিটিং আছে।তাই যেতেই হবে।”
—আচ্ছা।
খায়ের চলে যায়।তুবা মগ নিয়ে পানি ঢালতে থাকে।সে ইমতিয়াজের দিকে তাকায়।সে ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলছে।তুবা বুঝতে পায় না।কিছুক্ষণ পানি ঢেলে তুবা তার মাথা মুছে দেয়।গায়ে আরো একটা কাঁথা দেয়।যখন কাঁথা দিয়ে উঠতে যাবে তখন ইমতিয়াজ তার হাত ধরে।তুবা অবাক হয়।ইমতিয়াজের দিকে তাকায়।সে চোখ বন্ধ করে আছে।তুবা হাত ছাড়াতে চাইলে ইমতিয়াজ বলল, “সাইমা প্লিজ যেয়ো না।তুমি কেনো আমাকে বুঝো না।”
তুবা তার মাথায় হাত চাপড়ে বলল,” সে তো আমাকে অন্য মেয়ে ভাবছে।’
তুবা তার হাত ছাড়িয়ে নেয়।খাবার নিয়ে আবারো রুমে ঢুকে।কানের কাছে মুখ এনে বলল, “আপনার জন্য খাবার এনেছি।খেয়ে নিন।”
ইমতিয়াজ চোখ খুলে না।অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর চোখ খুলে। আস্তে ধীরে উঠে বসে।তুবার আনা খাবারগুলো অল্প খায়।ঔষধ যখন খেতে যাবে তখন ওয়াক করে পেটের ভিতরে সবকিছু বের করে দেয়।তুবা এটা দেখে অন্যদিকে ফিরে।ইমতিয়াজ কুলি করে কোনো মত ঔষধ খেয়ে শোয়ে পড়ে।তুবা বমি দেখে প্রথম নাক মুখ ঘৃণায় কুঁচকি নেয়।পরে সব পরিষ্কার করতে থাকে।সে সব পরিষ্কার করে যখন চলে যেতে নিবে তখন সে ইমতিয়াজের শার্টের গায়ে বমি দেখতে পায়।সে ইমতিয়াজকে ডেকে বলল,” আপনি শার্ট খুলে দেন।আমি এটা পরিষ্কার করে দিবো।”
ইমতিয়াজ উঠে।গায়ের শার্ট খুলতে থাকে।তুবা অন্যদিকে তাকায়।ইমতিয়াজ শার্ট খুলে তাকে দেয়।তুবা তার শার্টলেস গায়ের দিকে তাকায়।ইমতিয়াজের শরীর চেহারা থেকে আরো ফর্সা।যা তুবার মনে ঝড় তুলে।
_______________________
দুপুর দুইটায় জাবিনের স্কুল ছুটি হয়।সে স্কুল থেকে বের হয়।তার যাওয়ার রাস্তায় তানিমকে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িঁয়ে থাকতে দেখে।জাবিন তৎক্ষণাৎ অন্যদিকে ফিরে।সে অন্য রাস্তা ধরে।তানিম স্কুলের মেয়েদের মাঝে জাবিনকে খুঁজতে থাকে।
জাবিন দুই মিনিটের মতো হাঁটে। একটু দূরে নয়িমকে দেখতে পায়।সে দোকান থেকে কিছু কিনছে।সে কিনে যখন সামনে তাকায় তখন জাবিনকে দেখতে পায়।একটু বিস্ময় হয়ে বলল, “তুমি এদিকে কেনো?বাসা তো অন্যদিকে।”
জাবিন উত্তর দিলো না।সে ক্লান্ত হওয়া ছেলেটার মুখের দিকে তাকায়।জাবিনের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি আসে।সে একটু দূরে দৌড়ে যায়।নয়িম তার দিকে কয়েক কদম এসে বলল, “জাবিন কি হলো?এমন করছ কেনো?”
জাবিন উত্তর দিলো না।সে আরো একটু দূরে যায়।
জাবিন ব্যস্ত শহরে দৌড় দেয়।নয়িম বিস্ময় হয়।কিছু বুঝতে পারছে না।তবে তার মন বলছে রাতের ঘটনায় জাবিন হয়তো তার সাথে রেগে আছে। সেও তার পিছনে দৌড় দিয়ে বলল,” জাবিন দাঁড়াও।কেনো এভাবে ছুটছো।”
জাবিন দৌড়ছে।ব্যস্ত শহরের লোকেরা তাদের অধিক ব্যস্ততায় মগ্ন থাকায় তাদের দু’জনের দিকে লক্ষ্য করছে না।জাবিন দৌড়ের গতি বাড়ায়।পিছন ফিরে একটু পরপর নয়িমকে দেখছে।নয়িমের মুখে চিন্তিত,বিস্ময় দেখে সে হাসে।তার ভালো লাগছে।এভাবে সে আরো ছুটে।ব্রিজের নিচে গিয়ে দাঁড়ায়।বক্ষে হাত দিয়ে হাঁপাতে থাকে।আশপাশে নয়িমকে খুঁজে।তাকে পায় না।জাবিন বোতল নিয়ে পানি পান করে।ব্যাগে বোতল রাখার সময় নয়িম তার পাশে এসে বলল, “অবশেষে তোমাকে পেলাম।”
অকস্মাৎ নয়িমকে দেখে জাবিন ভয় পেয়ে যায়।পা পিছলে যায়।নদীর পানি গিয়ে পড়ে।নয়িম হাঁটু গেঁড়ে বসে নদীর পানির দিকে তাকায়।জাবিন পানি থেকে মুখ তুলে।নয়িম হেসে বলল,” উঠে আসো।”
নয়িম তার দিকে হাত বাড়ায়।জাবিন তার হাতে হাত রাখে।নয়িম তাকে টান দেয়।কিন্তু জাবিন তাকে টান দিয়ে নদীতে ফেলে দেয়।নয়িম ক্ষিপ্ত হয়ে তার দিকে তাকায়।জাবিন মুখে হাসি নিয়ে বলল, “এটা আপনার হাসার ফল।”
জাবিন উঠে আসে।নয়িম নদী থেকে উঠে।ব্রিজের নিচে গিয়ে দু’জনে বসে।নয়িম শার্ট খুলে পানি ঝাঁড়তে নেয়।জাবিন লজ্জায় অন্যদিকে ফিরে।নয়িম বলল, “শরীরে গেঞ্জি আছে।তাই এত লজ্জা পাওয়ার কিছু নেয়।জাবিন আমার খুব রাগ উঠছে।তোমাকে কি যে করতে মন চাচ্ছে। ”
চলবে,,,,,