ক্ষেত ছেলে পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0
490

গল্প ঃ ক্ষেত _ছেলে
পর্ব ঃ _ ১৬ (শেষ পর্ব)
লেখক ঃ অভ্র নীল

আজ থেকে বাসায় জোর দিয়ে কাজ শুরু হয়ছে। কারণ, আর মাত্র দুইদিন পর সানজিদার বিয়ে। দূরদূরান্তের আত্মীয়রা আসতে শুরু করেছে। বাসায় এক অন্যরকম খুশির রোল পড়ে গিয়েছে।
শুধু ২ জন লোকের মুখেই হাসি নেই। একজন হলো সানজিদা আর একজন হলো অভ্র আমি নিজেই। তারপরেও আমি যতটা সম্ভব মুখে হাসি রাখার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ওহ হে একটা কথা,, সানজিদার বিয়ের সকল দ্বায়িত্ব আমি নিজেই পালন করছি।

এই দূনিয়ার নিয়ম কী আজব তাই না,, যে যাকে চায় তাকে পাই না। দেখেন আমি সানজিদা কে এতটা ভালোবাসি কিন্তু আমি তাকে হারিয়ে ফেলছি।
যে যাকে চাই তাকেই যদি সে পাইতো তাহলে কতই না ভালো হতো।

যাইহোক, আমি এসব উল্টা পাল্টা কথা ভাবছি। তখন আন্টি শরবত হাতে আমায় বললেন–

আন্টি– অভ্র ! এই নাও শরবত। অনেক সময় ধরে কাজ করছো। নাও এইটুকু খেয়ে নাও!

আমি কিছু না বলে, মুচকি একটা হাসি দিয়ে ট্রে থেকে গ্লাসটা উঠিয়ে নিলাম। আর খেয়ে গ্লাসটা দিয়ে দিলাম। তখন আন্টি বললেন–

আন্টি– বাবা তোমার কী মন খারাপ?

আমি একটু অবাক হয়ে আন্টিকে বললাম–

অভ্র — না তো!

আন্টি– তাহলে মুখটা এইরকম করে আছো কেন?

অভ্র — আরে আন্টি সারাদিন এতো কাজ করছি, তাই হয়তো মুখটা একটু অন্যরকম দেখাচ্ছে। আমার কিছু হয় নি, আমি ঠিক আছি। এখন আপনি এখান থেকে যান, আর গিয়ে ওইদিকটা সামলান।

আমি হাসিমুখে কথাটা বললাম। আমার হাসি মুখ দেখে আন্টিও একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন।
আমি আবারও সবকিছু দেখাশোনা করতে লাগলাম।

এইভাবে সারাদিন কেটে গেল। এর ভিতরে সানজিদা আমার সাথে কথা বলার অনেক বার ট্রায় করেছে। কিন্তু আমি সুযোগ দেই নি। কারণ আমি তার মায়ায় নিজেকে আরও বেশি আসক্ত করতে চায় না। তাকে ছাড়া থাকতে আমার হয়তো কষ্ট হবে। কিন্তু সমস্যা নাই! সেটা আমি সহ্য করে নিবো। এতে করে সে তো অন্তত সুখে থাকবে। আমি না হয় সেটাতেই নিজের সুখ খুজে নিবো।
★★★★★★★
আজকে অনেক সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলাম। উঠে নামাজ পড়ে নিলাম। তারপর কাজে লেগে পড়লাম। কারণ যেইটুকু কাজ বাকি রয়েছে, সেইটুকু আজ দুপুরের মধ্যে শেষ করতে হবে। এটারও একটা কারণ রয়েছে। আর সেটা হলো,,, আজ সানজিদার গায়ে হলুদ তাই! আমরা সবাই মিলে দুপুরের আগেই সকল কাজ সেরে ফেললাম।
★★★★★★
বিকেলে,, আমি…… সানজিদা, লিজা আর তাদের কিছু পুরোনো বান্ধবীদের নিয়ে পার্লারে চলে আসলাম৷ আমি আজকে সানজিদা কে খুব ভালো করে দেখলাম। আমি তাকে দেখে অবশ্য কিছু ভয় পেয়েছি সাথে কিছুটা অবাকও হয়েছি।
কারণ, মেয়েটার অবস্থা একদম অন্যরকম হয়ে গিয়েছে। সে অনেকটা শুঁকিয়ে গিয়েছে। সাথে তার চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গিয়েছে। আমি যেই সানজিদা কে ভালো বাসতাম এতো সে না! কারণ আমার সানজিদা ছিল,,, গোছালো,, সে সবসময় হাসিখুশি থাকতো, সে আমায় সবসময় জ্বালাতন করতো। আর এই সানজিদা মনে হয় হাসতেই ভুলে গিয়েছে৷

সানজিদা কে দেখে সত্যি আমার খুব খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি তার দুষ্টু মিষ্টি রাগ, অভিমান, কান্না, হুটহাট করে এসে আমার বুকে শুয়ে থাকা, সত্যিই আমি এসবকে খুব খুব মিস করছি।
আমার যদি সাধ্য থাকতো তাহলে আমি সানজিদা কে নিয়ে এক অন্য জগতে পারি দিতাম। সেখানে কেও থাকবে না! থাকবো শুধু আমি আর সানজিদা থাকবো! কিন্তু আমি যে এটা কখনোই করতে পারবো না। এই দূনিয়ায় কী সত্যিকারের ভালো বাসার কোনো মূল্য নেই? সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো কী এই ভাবে অপূর্ণই থেকে যাই! আমি কী তাকে আপন করে পাবো না।

আমি গাড়িতে হেলান দিয়ে এসব হাজারো কথা ভাবছি। তখন লিজা আমার পাশে এসে দাঁড়ালো আর বলল–

লিজা– দোস্ত এসব কী হচ্ছে?

আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম–

অভ্র — যা দেখছিস!

লিজা– মানে কী? তুই কী সানজিদা কে ভালোবাসিস না? তুই কী তাকে নিজের করে পেতে চাস না?

অভ্র — চাইলেই তো আর সব সম্ভব না রে!

লিজা– তুই কী ওকে ছাড়া থাকতে পারবি?

অভ্র — চেষ্টা করবো.!

এবার লিজা একটু রাগান্বিত কন্ঠে বলল–

লিজা– তুকে আর কিছু করতে হবে না! এবার যা করার আমিই করবো।

অভ্র — মানে?

লিজা– মানে,, আমি গিয়ে আঙ্কেলকে সবকিছু বলে দিবো। কারণ, তুই থাকতে পারলেও আমার পাগলি বান্ধবীটা তুকে ছাড়া থাকতে পারবে না।

এটা বলে লিজা যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। তখন আমি তার হাত পিছন থেকে টেনে ধরে বললাম–

অভ্র — লিজা প্লিজ এটা করিস না! আঙ্কেল এটা শুনলে কষ্ট পাবে।

লিজা– না আঙ্কেল কষ্ট পাবে না। আর তুই একটা কথা ভেবে দেখ, ধর এই বিয়েটা হয়ে গেল। সানজিদা যে ধরনের একটা মেয়ে তুই তো ওকে মাত্র কয়দিন হলো চিনিস। আমি তাকে সেই ছোট্ট বেলা থেকে চিনি। আমি নিশ্চিত ও যদি তুকে না পায় তাহলে সে কিছু একটা করবেই করবে! এখন তুই ভাব আঙ্কেল তুর এই কথা শুনে বেশি কষ্ট পাবে না কী সানজিদার মৃত্যুর খবর শুনে বেশি কষ্ট পাবে।
নিশ্চয়ই সানজিদার মৃত্যুর খবর শুনে বেশি কষ্ট পাবে। তাই আমি গিয়ো আঙ্কেলকে সবকিছু বুঝিয়ে বলবো। আমি জানি আঙ্কেলকে ভালো করে বোঝালে তিনি মানবেন। তাই তুই এখন থাক আর আমি গিয়ে আঙ্কেলকে বলি!

এটা বলে লিজা একটা রিকশা নিয়ে চলে গেল। আর আমি সেখানে দাড়িয়েই রইলাম। আর ভাবতে লাগলাম,,, লিজা এতক্ষণ যেসব কথাগুলো বললো সে ঠিকই বলেছে। আমিতো এটা ভেবেই দেখি নি। আচ্ছা আঙ্কেল কী আমাদের এ সম্পর্কটা মেনে নিবেন। আমার ভেতরে একটা অজানা ভয় কাজ করতে শুরু করলো। তখন পিছন থেকে সানজিদা বললো–

সানজিদা — তুমি এখানে একা কেন? লিজা কোথায়?

সানজিদার কথা শুনে আমার ঘোর ভেঙে গেল। আমি বললাম–

অভ্র — সে বাসায় চলে গিয়েছে। তার কী যেন একটা জরুরি কাজের কথা মনে পরে গিয়েছে। তোমাদের কী সাজা হয়ছে?

সানজিদা — কেন দেখতে পাচ্ছো না?

আমি তখন সানজিদার দিকে ভালে করে তাকালাম।
এমনিতেই মেকআপ ছাড়া মেয়েটাকে ভিষণ সুন্দর দেখায়। তার উপর আবার সে সেজেছে। কী বলবো, এক কথায় অসাধারণ!
আমি বললাম–

অভ্র — আচ্ছা চলো!

এটা বলে আমরা সবাই বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।

বাসায় এসে আমি রুমে শুয়ে ছিলাম। আমার মনে এক অজানা ভয়। তখন লিজা এসে আমায় ডাকছে। আমি দরজা খুলে বললাম–

অভ্র — হুম বলো!

দেখলাম লিজার মুখে কেমন যানি একটুকরো ভয়ের ছাপ। সে বলল–

লিজা– চলো তোমায় আঙ্কেল ডাকে!

এটা বলেই লিজা আর দেরি করলো না। সে সোজা চলে গেল। আমার মনে তো আগের থেকেই ভয় আছে। তার উপর আবার লিজা এইরকম ব্যবহার। কে যানে কী হবে?

আমিও আর সেখানে দেরি করলাম না। তাড়াতাড়ি করে আঙ্কেলের রুমে চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি,, আঙ্কেল খাটে বসে রয়েছে। আন্টি তার পাশে দাড়িয়ে আছে। সানজিদা সোফায় বসে কান্না করছে। আর লিজা তার পাশে।

আমি রুমে যেতেই আঙ্কেল এসে আমায় দিলো একটা থাপ্পড়। আমি মাথাটা নিচু করে রইলাম। আর বললাম—

অভ্র — সরি আঙ্কেল! আসলে আমি যে কখন এসব বিষয়ে জরিয়ে পরেছি। বুঝতেই পারি নি। সরি আঙ্কেল!

আঙ্কেল– আর একবার যদি আমায় আঙ্কেল বলো! তাহলে কিন্তু তোমার খবর আছে।
আমি তখন আঙ্কেলের দিকে মাথা তুলে তাকালাম। আর বললাম—

অভ্র — মানে?

আঙ্কেল– মানে হলো যে! আমার মেয়ে যদি তোমার বউ হয়! তাহলে আমি তোমার আঙ্কেল হই কীভাবে?

আমি কিছু বলার আগেই সানজিদা সোফা থেকে লাফ মেরে উঠে বললো–

সানজিদা — তার মানে!

আঙ্কেল– হুম! আমি তোদের সম্পর্কে রাজি। অভ্রর মতো ছেলে আমি কই পাবো বলো!

আঙ্কেল আমাদের সম্পর্কে রাজি দেখে সানজিদা দৌড়ে এসে আঙ্কেলকে জড়িয়ে ধরলো।

একটু পর সে আমার দিকে তাকালো। আর আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আমিও তাকে জড়িয়ে ধরলাম।

আমাদের আশেপাশে যে কেও আছে আমরা দুজন সেটা যেন ভুলেই গেছলাম। তখন লিজা এসে আমাদের কানে কানে বলল–

লিজা– এই তোরা কী করছিস? ছাড় একে অপরকে! এখানে আঙ্কেল আন্টি আছে ছাড়!

লিজার এমন কথা শুনে আমরা হকচকিয়ে একে অপরকে ছেড়ে দিলাম। আর লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলাম। সানজিদা তো আর সেখানে আর দেরিই করলো না, সে দিলো এক দৌড়। আমিও তার পেছন পেছন ছুটলাম…………
★★★★★
বাসর ঘরের সামনে দাড়িয়ে আছি। এসব কিছু কেন জানি সপ্নের মতো লাগছে। কেন জানি কিছু বিশ্বাস হচ্ছে না। আজ আমার মনে এক অন্যরকম খুশির ঢেউ দিচ্ছে। আমি খুশি মনে বাসর ঘরে ঢুকলাম।
দেখি আমার বউ খাটে নেই। সেটা দেখে আমি একটু অবাক হলাম। আমার সদ্য বিয়ে করা বউ গেল কই? তখন পেছন থেকে কে যেন জড়িয়ে ধরলো। আমি পেছন ফিরে দেখি সানজিদা। আমি তার কপালে ভালেবাসার একটা পরশ একে দিলাম।

সেই রাতে আমরা বসে অনেক অনেক গল্প করলাম। আর শেষ রাতে যা হবার সেটাই হয়ছে। সেটা আপনাদের না জানলেও চলবে!

আমার গল্প তো শেষ হয়ে গেল। আর হে আমি কিছু কথা বলে যাই। আমি হয়তো এই গল্পটা শেষ করতাম না। কিন্তু কিছু মানুষদের জন্য আমার এই গল্পটা শেষ করতে হলো। সত্যি আমি ভাবতেও পারি নি যে আমার গল্পকে কেও এতো পছন্দ করে।😅

সত্যি বলতে আমার নিজের গল্প নিজে পড়তেই কেমন যানি লাগে। আপনাদের ভালো লাগে কেমন করে আমি বুঝি না!

আর এই গল্পের শেষ পর্যন্ত যারা যারা ছিলেন তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তাদের প্রতি আমার রইলো প্রচুর পরিমানে ভালোবাসা!

সবাই ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।

ভুলত্রুটি মার্জনীয়…! 🙂

________আল্লাহ হাফেজ🥰 _________