ক্ষ্যাত ছেলে পর্ব-১০

0
240

গল্প ঃ ক্ষ্যাত_ ছেলে
পর্ব ঃ_ ১০
লেখক ঃ অভ্র নীল

আমি খাবার না খেয়েই শুয়ে রইলাম। আমার মাথায় নানা রকম কথা ঘুরছে।

যাইহোক, বিকেলে আমার একটা টিউশনি ছিল। আমি সেটা পড়াতে চলে গেলাম।
পড়ানো শেষে আমি বাসায় চলে আসলাম। তারপর সানজিদা আর সাদিয়াকে পড়াতে শুরু করলাম। সানজিদার চোখ একটু লাল হয়ে আছে।হয়তো কান্না করছে। কিন্তু এখানে তো আমার করার কিছু নাই। তখন সানজিদা বলল–

সানজিদা– আমার ভালো লাগছে না। আমি অন্য রুমে গেলাম।

এটা বলে সানজিদা চলে গেল। আমি তার দিকে বোকার মতো চেয়ে রইলাম। তখন সাদিয়া বলল–

সাদিয়া– স্যার সানজিদা আপুর মন খারাপ কেন সেটা আপনি জানেন!

অভ্র– নাহ! তুমি পড়ো.।

সাদিয়াকে পড়িয়ে আমি রুমে এসে শুয়ে আছি।
কিছুক্ষণ পর জান্নাত এসে আমায় খেতে ডেকে গেল। এতে আমি একটু অবাকই হলাম। কারণ প্রতিদিন সানজিদাই আমায় খেতে ডাকতে আসে। কিন্তু আজ আসলে না!

যাইহোক আমি খেতে চলে আসলাম। সবাই আছে শুধু সানজিদাই নাই। তখন আঙ্কেল বললেন–

আঙ্কেল– সানজিদার মা সানজিদা কই? খাবার খাবে না?

আন্টি– সে না কী খাবার খাবে না। বাসায় আসার পর থেকেই মেয়েটা মন খারাপ করে বসে আছে৷ কে জানি কী হয়ছে?
বাবা অভ্র তুমি কী কিছু জানো?

অভ্র– না আন্টি!

এটা বলে আমি খাবার রেখে উঠে পড়লাম। তখন আঙ্কেল বললেন–

আঙ্কেল– কী হলো খাবা না?

অভ্র– না আঙ্কেল খুদা লাগছে না। আর সরি খাবারগুলো নষ্ট করার জন্য!

আন্টি– আরে সমস্যা নাই! যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আর আমি সানজিদা কে খাওয়ানোর একটু চেষ্টা করি, দেখি খাই না কী?

আমি রুমে চলে আসলাম। আর ভাবতে লাগলাম,, সানজিদা মনে হয় আমার কথায় মন খারাপ করে আছে। কিন্তু আমার করার কিছু নাই। আমার থাকার তো নির্দিষ্ট কোনো জায়গাও নেই। আমি তাকে ভালোবাসলেও তার ভরণপোষণের দায়িত্ব তো আমি নিতে পারবো না।
আর আমার মনে হয় এটা তার ভালো-লাগা, হয়তো কিছুদিন এটা এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমার তো তার জন্য কষ্ট হচ্ছে। এখানে আমি কী করবো,,,,,,,,,

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারি নি।

যাইহোক রাত প্রায় ৩ টা ছুঁই ছুঁই, হঠাৎ আমি বুকে ভারি কিছু অনুভব করলাম। এই জন্য আমি চোখ খুললাম। আমার রুমে লাইট আগের থেকেই অন ছিল। তাই আমি স্পষ্ট দেখলাম সানজিদা আমার বুকে শুয়ে আছে। আর এমন ভাবে আমায় জরিয়ে ধরে আছে যে আমি নড়তেও পারছি না।
আমি ওঠার অনেক চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমি উঠতেই পারলাম না। এক পর্যায় সানজিদা ঘুম ঘুম চোখে বলল–

সানজিদা– এই এতো নড়তাছো কেন? ঘুমাতে দাও!

অভ্র– তুই কই শুয়ে আছে সেটা দেখেছো? আর তুমি এখানে কেন?

সানজিদা– রুমে ভালো লাগছিল না৷ মনটা শুধু তোমায় কাছে পেতে চাইছিল। তাই এখানে চলে আসছি। আর আমি একটু পর এমনিতেই উঠে চলে যাবো, এখন ঘুমাতে দাও।

এটা বলে সানজিদা আমায় আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো। আমি তার কথার উত্তর দিতে পারলাম না।

সানজিদা কে দেখতে মনে হচ্ছে সে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু আমার তো চোখে ঘুম নেই। এই প্রথম কোনো মেয়ে আমাকে এইভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। তাহলে মনে ফিলিংসটা কেমন হবে সেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না., আমি শুধু ছটফট করছি।
আমি খেয়াল করলাম সানজিদা তার কপাল কুচকে নিয়েছে। তার মানে আমার এই রকম ছটফটানিতে সে বিরক্ত বোধ করছে। একটা সময় সে চোখ খুলল। আর রাগি লুক নিয়ে বলল–

সানজিদা– এই তোমার সমস্যা কী হুম! এতো নড়ো কেন? ঘুমাতে পারছো না?

অভ্র– আমার ঘুম ধরতাছে না। তুমি এইখান থেকে যাও প্লিজ!

আমি এটা বলতেই সানজিদা আমাকে কিস করে বসলো। আমি কিছু বুঝতেই পারলাম না। সে পাগলের মতো কিস করে যাচ্ছে। আমিও কিস করছি। একটা সময় আমি নিজের থেকে প্রায় কন্ট্রোল হারাতে শুরু করছি। তখন আমি নিজেকে সামলিয়ে সানজিদা কে ছেড়ে দিলাম। তখন সানজিদা বলল–

সানজিদা — কী হলো ছাড়লে কেন? ভালোই তো লাগছিল।

অভ্র– আর না, প্লিজ তুমি এখান থেকে চলে যাও। জান্নাত একাই আছে।

সানজিদা– আচ্ছা যাচ্ছি।

এটা বলে সানজিদা আমার গালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেল। আর আমি শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম,,, এটা আমি কী করতে যাচ্ছিলাম? ভাগ্যিস নিজেকে কন্ট্রোল করছিলাম।
**********

সকালে উঠলাম তারপর ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম৷ তারপর হালকা একটু নাস্তা করে ভাসিটির উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। আজকে আমি ইচ্ছে করেই সানজিদার সাথে নেই নি। করণ সে যে ধরনের মেয়ে কখন যে কী করে বসে আল্লাহই যানে।

এইভাবে আমাদের দিন চলছে। আমি সানজিদার প্রতি আরও দূর্বল হয়ে পড়তাছি। কিন্তু তাকে কিছু বুঝতে দেই না। সে যদি বোঝে তাহলে আমি শেষ।
যাইহোক, আর কয়েকটা দিন পর লিজার বিয়ে। তাই আমি, সানজিদা আর জান্নাত তার বাসায় চলে আসলাম। তাদের বাসাতে আজ প্রথম আসলাম। লিজাদেট বাসাটা অনেক বড় তাই বিয়ের সকল কাজ তাদের বাসায় করা হয়ছে।

লিজাদের বাসায় গিয়ে তাদের সাথে ভালোমন্দ কথা বলে আমি বাসাটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।

ঘুরে দেখা শেষ আমি এক জায়গায় বসে পড়লাম। আর মোবাইলটা বের করে টিপতে লাগলাম। তখন একটা মেয়ে এসে বলল–

মেয়েটি– হাই! আমি রিমা!

এটা বলে মেয়েটি হাত বাড়িয়ে দিলো। আমি তখন মাথা তুলে বললাম–

অভ্র– হ্যালো! আমার নাম অভ্র।

এটা বলে আমি মেয়েটার সাথে হাত মিলাইলাম। তখন মেয়েটি মানে রিমা বলল–

রিমা– বাহ আপনার আর আমার নামের মাঝে ত মিল রয়েছে।

অভ্র– মানে?

রিমা– মানে আপনার নামের শুরুতে A আমার নামের শুরুতেও R এইটা!

অভ্র– ওহ হুম তা অবশ্য ঠিক।

রিমা– আচ্ছা আমি কী আপনাকে তুমি করে বলতে পারি?

অভ্র– হুম সমস্যা নাই।

রিমা– আচ্ছা তুমি কী পড়াশোনা করো না কী জব করো?

অভ্র– বলতে গেলে দুটোই। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি পড়াই।

রিমা– ওহ! আচ্ছা তুমি কী কাওকে ভালেবাসো? বা এই কোনো মানুষ আছে?

অভ্র– হুম বাসি তবে বলতে পারি না। তুমি কী কাওকে ভালেবাসো?

রিমা তখন ডেভিল মার্কা একটা হাসি দিয়ে বলল–

রিমা– অলরেডি ৫ টা লাইনে আছে। হি হি হি!

অভ্র– কীহ! বলো কী? তা কে কী করে বলবে?

আমি এইভাবে রিমার সাথে হেসে হেসে গল্প করতে লাগলাম। আর এটা দূর থেকে সানজিদা দেখছিল। সেটা আমি জানি না!
সানজিদা প্রচন্ড পরিমানে রেগে আছে। তাই আর তার রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে সোজা এসে আমার কলার ধরলো। আমি তার ব্যবহার দেখে অনেকটাই অবাক হলাম।

সে সোজা আমাকে ফাকা একটা রুমে নিয়ে আসলে। আমি তার চোখে স্পষ্ট পানি দেখতে পাচ্ছি। তখন সানজিদা বলতে লাগল,,,,,,,,,,,

চলবে……?

ভুলত্রুটি মার্জনীয়🙂।