#খুশবু🌼।৩।
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
“খুশবু আমার উপর তোমার বিশ্বাস নেই। আমি রক্ষা করবো তোমায়।আমার প্রাণ দিয়ে হলেও তোমায় আগলে রাখবো।”
আমার উপর….. খুশবু কথা শেষ করতে পারলো না। ইমতিয়াজ খুশবুকে আটকায় অধরে আঙুল ছুয়ে। অতঃপর ইমতিয়াজ খুশবুর গলায় হাত বাড়িয়ে তাবিজটা খুলে ফেলে দিলো।
তাবিজটা খুলে যাওয়ার দৃশ্য মুরতাকিব অবোলকন করে দূর থেকেই।তারপর ১ সেকেন্ড বাদেই মুরতাকিব তার জ্বীন শক্তি দিয়ে ইলেকট্রিসিটি বন্ধ করে দিলো তড়িৎ। যার ফলে শয়নকক্ষে অন্ধকার নেমে আসলো।
ইমতিয়াজ খুশবুকে বসিয়ে রেখে আলো জ্বালাতে কক্ষের বাইরে চলে গেলো।ক্ষনিক সময় যেতেই ইমতিয়াজ হাতে করে মোমবাতি নিয়ে চলে আসলো কক্ষে।নিভু নিভু আলোয় খুজতে থাকল তার খুশবুকে।কিন্তু খুশবুকে কোথাও পাওয়া গেলো না। সারা বাড়ি খুজে তন্ন তন্ন করলো ইমতিয়াজ। তারপর চিলেকোঠার পা বাড়ালো খুশবুকে খুজতে ইমতিয়াজ।
“খুশবু, খুশবু তুমি কোথায়?”
ডাকতে ডাকতে ইমতিয়াজ পা থামিয়ে দেয়।নিভু নিভু আলোয় চিলেকোঠার ভেতরে খুশবুকে দেখতে পায়।
ইমতিয়াজ হতচকিত হয়ে শুকনা ঢোক গেলে।খুশবুর ভয়ংকর রুপ দেখে ইমতিয়াজের শরীর থেকে ঘাম ঝড়ে পড়ে।চোখগুলো লাল হয়ে আছে খুশবুর। বেগতিক হারে খুশবু কাঁপছে,খুশবুর মাঝে যে মুরতাকিব বর করেছে।
হঠাৎ মুরতাকিব খুশবুর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসার ফলে খুশবু মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। ইমতিয়াজ দৌড়ে খুশবু কাছে গিয়ে খুশবুকে বুকে টেনে নেয় , কোলে তুলে খুশবুকে বিছানায় শুয়ে দেয় ইমতিয়াজ। খুশবুর গালে হাত দিয়ে হালকা চাপড় দিতে থাকে ইমতিয়াজ কিন্তু খুশবুর জ্ঞান ফেরে না। তাই বাধ্য হয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায় ইমতিয়াজ।
ওদিকে মুরতাকিব অট্টহাসিতে মেতে উঠে, এত অপেক্ষার পর খুশবু কে সে ছুঁতে পেরেছে। বহুদিন পর কামনা খায়েশ পূরণ হলো মুরতাকিবের।এখন আর কোন শক্তিই খুশবুকে মুরতাকিবের কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না।
“খুশবু আমি তোমায় সত্যিই খুব ভালোবাসি, তোমায় আমি ছাড়া কেউ ছুঁতে পারবে না, কেউ না।”
মুরতাকিব বাতাসের বেগে কক্ষ ত্যাগ করে।
আর ইমতিয়াজ ছোটে ডাক্তারের নিকট।
_____
“ওয়াইফের দিকে খেয়াল রাখবেন, যে লক্ষন দেখা যাচ্ছে তাতে কোন কিছুই তেমন বোঝা যাচ্ছে না। ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি আধা ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরবে ইনশাল্লাহ।এরপর নিয়ে যেতে পারবেন আপনার ওয়াইফকে।”
ডাক্তারের কথায় যেনো ইমতিয়াজ চিন্তামুক্ত হয়। কিছুক্ষনবাদেই খুশবুর জ্ঞান ফেরার সাথে সাথেই খুশবুকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে ইমতিয়াজ।
খুশবু ইমতিয়াজের জামা কাপড় প্যাকিং করতে করতে বলল,
“আমাকে আপনার সাথে নিয়ে যাবেন ইমতিয়াজ।”
“হঠাৎ করেই তো আর নিয়ে যাওয়া যায় না। আমি আগে যাই,সব ঠিক করি, তারপর নাহয় এসে তোমায় নিয়ে যাবো।দেখো মন খারাপ করোনা আমি দুমাস পরেই চলে আসবো।আমায় যেতে তো হবেই, আমি বসের আন্ডারে কাজ করি খুশবু,কথার খেলাপ হলে ব্যাপারটা খারাপ হয়ে যাবে।”
এই বলে ইমতিয়াজ খুশবুকে বুকে টেনে নিলো। পরম যত্নে মাথায় হাত বুলালো ইমতিয়াজ। খুশবুর কপালে অধর ছুয়ে ইমতিয়াজ বলল,
“সহি-সালামতে থাকবে। আমি যতই তোমার থেকে দূরে যাই না কেন,মন পড়ে থাকবে তোমার কাছে খুশবু। ”
স্বামী স্ত্রীর কথপোকথনের মাঝে শোনা গেলো ঠক ঠক শব্দ।
দরজার ওপাশে ইমতিয়াজের মা চেচিয়ে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে।কান্নায় জরজরিত তার অবয়ব। কিছুক্ষণ আগের ঘটনায় সে ভয় পেয়েছে।
ইয়ানা রহমান মানে ইমতিয়াজের আম্মা রান্না ঘরে কাজ করছিলেন।খুশবুর কপালে যখন ইমতিয়াজ অধর ছুঁয়ে ছিলো, তখনই মুরতাকিব ক্রোধান্বিত হয়ে ইমতিয়াজের মায়ের পায়ে গরম পানি ঢেলে দিয়েছিল। যার কারনে ইমতিয়াজের আম্মা কান্না করতে করতে ইমতিয়াজের কক্ষে আসে।
ইমতিয়াজ দরজা খুলতেই ইয়ানা রহমান কান্নারত কন্ঠে শুধায়,
“বাবা তুই এই মেয়ের থেকে দূরে থাক,ওর উপর জ্বীনের ছায়া আছে এই মেয়ের কারণে আজ আমার এই অবস্থা হয়েছে। ”
তৎক্ষণাৎ ইমতিয়াজ তার মাকে তার মায়ের কক্ষে নিয়ে যায়। মায়ের পায়ে মলম লাগাতে লাগাতে ইমতিয়াজ তার মাকে জবাব দেয়, “সব ঠিক হয়ে যাবে।”
ভয় মিশ্রিত গলায় ইমতিয়াজের মা আবার বলে ,
” বাবা আমার খুব ভয় করছে,আমাকে ছেড়ে যাস না। ”
ইমতিয়াজ মায়ের কথা ফেলতে পারে না,
সারারাত ইমতিয়াজ তার মায়ের পায়ের জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।
ওদিকে খুশবু ইমতিয়াজের অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে যায়।
অতঃপর দূর থেকে মুরতাকিব খুশবুকে অবলোকন করতে লাগলো , খুশবুর বিছানার কাছে গিয়ে বসল মুরতাকিব, খুশবুর মুখে লেপ্টে থাকা অগোছালো চুল গুলো, আঙুল দিয়ে ঠিক করে মুরতাকিব। সে হেসেই নিজ ভাবনায় মগ্ন হয়।
“আমি এভাবেই তোমার থেকে ইমতিয়াজকে দূরে রাখবো খুশবু, তোমাদের মধ্যে আমি কখনই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তৈরি হতে দিবো না। ইমতিয়াজ তুমি নিজে খুলে দিয়েছো আমার পথ, খুশবুর কাছে যাওয়ার পথ।সেই ৭বছরের খুশবুকে দেখে আমি পাগল হয়েছি, ছোট্টবেলা থেকে ভালোবেসে এসেছি, ছায়ার মতো ঘিরে থেকেছি। কিন্তু রক্ষাকবচ দিয়ে আমার থেকে দূরে রেখেছে।”
আশিক মুরতাকিব সারারাত খুশবুর পাশে বসে থাকে। খুশবুর নিষ্পাপ মুখটা দেখতে থাকে বিভর হয়ে।
_____
“আচ্ছা আম্মু আমি যাচ্ছি। সাবধানে থাকবে।”
ইমতিয়াজের মা করুন কন্ঠে বলে উঠল,
” বাবা তুই আমায় একলা রেখে যাস না,খুশবুর জ্বীন যদি আবার চলে আসে। ”
“মা শুধু শুধু ফালতু কথা বলো না, তোমায় কে বলেছে খুশবুর সাথে জ্বীনের ছায়া আছে। কোরআন আছে ঘরে, কিচ্ছু হবে না।”
ইমতিয়াজ সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো কিছুক্ষন বাদেই। খুশবু কক্ষে যাওয়ার জন্য ধীর পায়ে হাটছে।যেতে যেতে হঠাৎ খুশবুর খুলে যাওয়া তাবিজটা দেখতে পায় খুশবু। তড়িৎ দেখা মাত্রই হাত দিয়ে তুলে নেয় তাবিজটা খুশবু।হুজুরের কথা মনে পড়ে যায় খুশবু আবার।তারপর খুশবু পড়ে নেয় গলায় তাবিজটাকে। কিন্তু তাবিজ পড়ে খুশবু নিজেকে নিরাপদ মনে করতে পারলো না।
তার শুধু মনে হতে লাগলো তাবিজের শক্তি শেষ হয়ে গেছে। তবুও বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তাবিজটাকে পড়ে নেয় খুশবু।
.
.
খুশবু বারান্দায় জামা-কাপড় শুকো দিতে দিতে নিচের তলার মেঝের দিকে তাকালো, হঠাৎ সদর দরজায় পায়ের আওয়াজে পেতেই খুশবু স্থির হয়ে দাঁড়ায় কে এসেছে তা দেখার জন্য।
অতঃপর সদর গেটে দেখতে পায় ইমতিয়াজকে। ইমতিয়াজকে দেখা মাত্রই যেনো খুশবুর মুখে হাসি ফুটে উঠে।
খুশবু ও তার শাশুড়ি নিচে চলে আসে।
“আরে আম্মা আর বইলো না,যাওয়ার পথে বস ফোন করেছিলো। আরো কিছু দিন ছুটি বাড়িয়ে দিয়েছে আমার বিয়ের কথা শুনে, তাই আবার চলে আসলাম।”
ইমতিয়াজের আম্মা ইমতিয়াজের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
” বউ যাও গিয়ে আমার জন্য পানি নিয়ে আসো।”
“নিয়ে আসছি।”
খুশবুর প্রস্থান হলে ইমতিয়াজের মা ইমতিয়াজকে শুধালো,
” ভালো করেছিস বাবা ফিরে এসেছিস,নাহলে এই ডাইনি খুশবুর মুখ দেখতে দেখতে না যেনো মরেই যেতাম।”
ইয়ানা রহমানের মুখে এমন কথা শুনে যেন,ইমতিয়াজের চেহারা বদলে গেল, বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো ইমতিয়াজ। মুখের ভাষা মুহূর্তেই যেন বদলে গেল। রাগন্বিত গলায় ইমতিয়াজ বলে উঠল, তাও তুই সম্বোধন করে,
” বন্ধ কর এসব!
দিন রাত শুধু বকবক করতেই থাকো তুই। ”
ইমতিয়াজের মা হতভম্ব দৃষ্টিতে চাইলো ইমতিয়াজের দিকে।
“কি সব বলছিস ইমতিয়াজ বাবা। কি হয়েছে তোর, তুই আমার সাথে এভাবে কেন কথা বলছিস।”
এর মাঝে খুশবু পানি নিয়ে আসলো। আবার যেনো ইমতিয়াজের রুপ বদলে গেলো মূহুর্তেই। ইমতিয়াজ দৃষ্টি স্থির করলো খুশবুর পানে ।
ইমতিয়াজের মা ফের কলকল করে বলতে লাগলেন,
“এই ডাইনির জন্যই সব হচ্ছে। তোর মাথা খারাপ করে দিয়েছে এই ডাইনি।”
ইমতিয়াজ আবার ইয়ানা রহমানের দিকে চোখ স্থির করে আবার চেচিয়ে বলল,
“বললাম না চুপ কর। ”
রাগন্বিত চেহারা রূপ বদলে ইমতিয়াজের চেহারা নরম করে নিলো।ধীর পায়ে খুশবুর নিকট এসে দাঁড়ালো ইমতিয়াজ। খুশবুর চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে বলল ইমতিয়াজ,
” জান,তোমায় এই খোলা চুলে সুন্দর লাগছে, এভাবেই সব সময় তোমার ওই চুল খুলে রাখবে।”
এইসব দেখে ইয়ানা রহমান একরকম রেগে গিয়ে কিছু বিশ্রী ভাষার প্রয়োগ করে বৈঠক ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
খুশবু ইমতিয়াজের হাতটা নিজের কাধ থেকে সরিয়ে বলল,
“আপনি ঠিক আছেন তো আপনার এভাবে মায়ের সাথে কথা বলা উচিত হয়নি।”
” ওনার সাথে এমন করব না তাহলে কেমন ব্যবহার করব। সবসময় এমনই করতে থাকে তোমার সাথে।”
দুজনের কথা বলার মাঝেই যেনো হঠাৎ টেলিফোন বেজে উঠে। খুশবু টেলিফোন এর কাছে গিয়েও কি যেনো মনে করে কলটা না তুলেই বেড়িয়ে গেলো কক্ষ থেকে।
ইমতিয়াজ টেলিফোন এর কাছে গিয়ে ফোনটা তুলে কানে ধরলো, ওপাশ থেকে শোনা গেল ইমতিয়াজের গলা,
“মা আমি এসে পৌছে গেছি কিছুক্ষন বাদেই। হ্যালো হ্যালো, কেউ শুনছো আমার কথা।”
এপাশ থেকে মুহূর্তেই গলা বদলে খুশবুর গলা ধারণ করলো এই ইমতিয়াজের রুপ ধরে আসা লোকটা।
” আমি খুশবু বলছি , মা উপরে গিয়েছে, আপনি সাবধানে থাকবেন কেমন?নিজের দিকে খেয়াল রাখবেন।”
এই বলেই কলটা কেটে দিলো ইমতিয়াজ রুপে এই বহুরুপী।
তাহলে ইমতিয়াজ যদি রাজধানীতেই চলে যায়, তাহলে বাড়িতে ফিরে আসা এই ইমতিয়াজ কে?মুরতাকিব নয়তো?
~চলবে