#খুশবু🌼
#অন্তিম
#লিখনিতেঃঅনামিকা_রহমান।
খুশবু বিছানা ঠিক করছে।
ক্ষনিকসময় যেতেই ইমতিয়াজ রুপি মুরতাকিব কক্ষে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে পায়ে এগোয় খুশবু নিকট।
পিছন থেকে মুরতাকিব খুশবুকে জড়িয়ে ধরে তড়িৎ, খুশবুর কাধে মুরতাকিব মাথা গুজে,এমন অবস্থায় খুশবুর শিরদাঁড়া কেপে উঠে।
নেশায় মত্ত হয়ে মুরতাকিব বলে ওঠে,
” বহুবছর পর তোমায় ছোয়ার আশা পূরণ হবে। ”
কথাটা শুনে খুশবু বিভ্রান্ত হয়।
সে কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকায়, ইমতিয়াজ রুপি মুরতাকিবকে প্রশ্ন ছুরে,
“এর মানে ? ”
মুরতাকিবের কথা ঘুরানোর চেষ্টা,
” না মানে বহুদিন পর বলতে,বিয়ে তো কম দিন হলো না, আমার কাছে এক একটা দিন যেনো বছরের মতন লাগছে। ”
মুরতাকিব হেসেই খুশবুর ঘারে অধর ছোঁয়াতে গেলেই, ওমনি পাশের কক্ষ থেকে কিছু পড়ে গিয়ে ভেঙে যাওয়ার আওয়াজ হয়।
মুরতাকিব রেগে ওঠে। তার চোখ লাল হয়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে,
“এই মহিলার মত খারাপ মহিলা আমি জীবনেও দেখিনি, এই শয়তান মহিলাকে আজ আমি শেষ করে ফেলব। ”
মুরতাকিব হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে হয় কক্ষ থেকে। হাজির হয় ইমতিয়াজের মায়ের কক্ষে ।
এদিকে খুশবু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই ইমতিয়াজকে অচেনা মনে হয় তার কাছে। ইমতিয়াজ তো তার মাকে খুব ভালোবাসে। এই ইমতিয়াজের আচরণ অজানা খুশবুর কাছে।এই ভেবে খুশবু মন খারাপ করে কিছুক্ষণ বসে রইল।
“তোর মাথা ফাটিয়ে যদি মগজ না বের করি, তুই ঠিক হবি না।”
” আমি কি করেছি বাবা, বিড়াল ছিল।মাত্রই তো বিড়ালটাকে তাড়ালাম। আমি কিছু করিনি বিশ্বাস কর বাবা। ”
“মানুষের তো কোন সাধ্য নাই আমায় আটকায়,ও তো সামান্য বিড়াল। ”
কথাটা শেষ করে মুরতাকিব কক্ষ ত্যাগ করে।
ইমতিয়াজের মায়ের আজব লাগতে থাকে। এ কি সত্যি তার ছেলে নাকি অন্য কেউ।
.
.
খুশবু শুয়ে শুয়ে নানান কথা ভাবছে, তার ইমতিয়াজ তার কাছে আসতে চাইলেও তার কাছে অনুমতি চায়। ইমতিয়াজ খুশবুকে ছুয়ে দিলে অন্যরকম অনুভূতি হতো।কিন্তু এখন এই ইমতিয়াজ যেন তার খুব আজব লাগে নাকি খুশবুর মনের ভুল. খুশবু আবার ঘুমনোর জন্য পাশ ফিরে।
এর মাঝে মুরতাকিব দরজার ছিটকানি আটকায়।
বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে খুশবুকে নরম গলায় ডাকতে থাকে।
খুশবু চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরে যাতে, ইমতিয়াজ কাছে আসতে চাইলে না আসতে পারে । তার বিশ্বাস তার ইমতিয়াজ খুশবুতে জাগাবে না,
কিন্তু খুশবুর বিশ্বাস ভঙ্গ করে ইমতিয়াজ রুপি মুরতাকিব খুশবুকে জাগিয়ে তুলল, খুশবু দ্বিধায় পড়ে গেল। যা ঘটার কোনদিন কথা ছিল না তাই ঘটে গেল খুশবুর সাথে। খুশবুকে ভোগ করার আনন্দে মেতে উঠল মুরতাকীব।খুশবু আটকাতে পারলো না তাকে। ইসলামের বিধিমালায় লেখা আছে স্বামী যখনই চাইবে তার স্ত্রীকে ভোগ করতে পারবে। তাই খুশবু মুরতাকিবকে স্বামী ভেবেই সায় দিলো। কিন্তু খুশবুর মনে সন্দেহ শুরু হলো,তার বিশ্বাস এ তার ইমতিয়াজ হতেই পারে না। তাই মনে মনে পণ করলো, এর থেকে দূরে দূরে থাকার।
___
বেশ কিছুদিন কেটে গিয়েছে ইমতিয়াজ রাজধানীতে এসেছে।
ইমতিয়াজের রাজধানীতে কাটানো সময় গুলো কাটতে লাগলো যন্ত্রণাময় হয়ে।মুরতাকিব যেন ইমতিয়াজকে সব জায়গায় প্রেশানি করতে লাগলো। উঠতে বসতে যেখানে খুশি সেখানে বসে ইমতিয়াজ আতঙ্কিত হয়ে পড়ল এমন অবস্থার জন্য।
মেট্রোরেলে দাঁড়িয়ে আছে ইমতিয়াজ, হঠাৎ তার চোখ পড়লো এক বাচ্চার দিকে। বাচ্চাটা বসেছিল তার মায়ের কোলে।
মুরতাকিব তার যাদুশক্তি দিয়ে বশ করল মহিলাকে, হিংস্র হয়ে নিজ বাচ্চার কাঁধে বসিয়ে দিলো এক কামড়। এমনটা ইমতিয়াজ দেখে বাচ্চাটাকে বাঁচাতে গেলেই, মহিলা চিৎকার করে উঠলো,
“লোকটাকে কেউ ধরো। আমার বাচ্চাকে নিয়ে যাচ্ছে। ”
এমন অবস্থায় পাবলিকেরা ঘিরে ধরলো ইমতিয়াজকে। বাচ্চাটাকে তার মায়ের কাছে দিয়ে ইমতিয়াজকে ছাপা মারধর করা হলো।
পাবলিক মারধর খাওয়ার পর ইমতিয়াজ এসে ওয়াশরুমে ঢুকলো, বেসিনের কল ছেড়ে মুখে পানি দিতে লাগলো অবিরাম। কিন্ত পানিটা ক্ষণিকের মধ্যে যেন রক্তে পরিনত হলো। এমন সব অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকল আরো কিছুদিন যাবত ইমতিয়াজের সাথে।
এমন অবস্থায় পড়ে ইমতিয়াজ তার বন্ধুকে সব ঘটনা খুলে বলল ইমতিয়াজ। সবটা শুনে ইমতিয়াজকে তার বন্ধু বলল,
” আমার পরিচিত এক মৌলভী হুজুর আছে,আমাদের উচিত তার সাথে একবার দেখা করা।”
ইমতিয়াজ আর দেড়ি করলো না, পরের দিন ইমতিয়াজ আর তার বন্ধু সেই মৌলভীর সাথে দেখা করল। এতদিন যাবৎ যা যা ঘটেছে ইমতিয়াজের সাথে সবকিছু খুলে বলে ইমতিয়াজ।
অতঃপর মৌলভী ইমতিয়াজের কাছে তার ব্যবহার করা এক টুকরো কাগজ চাইলো।ইমতিয়াজ কাগজ বাড়িয়ে দিলেন মৌলভীর হাতে। আরবি হরফে কিছু একটা লিখলেন হুজুর। এরপর ইমতিয়াজের সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,এটা আগুন দিয়ে জ্বালাও।ইমতিয়াজ টি টেবিলে থাকা লাইটার দিয়ে কাগজটা জ্বালিয়ে দিল। এরপর আধপড়া কাগজটা মৌলভীর হাতে দিল ইমতিয়াজ।
মৌলভী কাগজটাকে হাতে নিয়ে আবলোকন করতেই, হাতের ঘর্ষণে কালী মেখে নিলেন নিজ হাতে। চোখ স্থির করলেন নিজ হাতে।
” ইমতিয়াজ সাহেব আপনার স্ত্রীর সাথে এক আশিক জ্বীনর ছায়া আছে। আপনি আপনার স্ত্রীর রক্ষাকবচ খুলে ফেলার কারণে সে আপনার রুপ ধরে আপনার স্ত্রীর সাথে সংসার করছে। আর আপনাকে এখানে তার শক্তি দিয়ে হয়রানি করছে। ”
ইমতিয়াজের বন্ধু মৌলভীকে বলে উঠলো,
” তাহলে এই জ্বীনকে কিভাবে নিশ্চিহ্ন করা যাবে।”
“আমাদের এখনই উচিত ওখানে যাওয়া আর খুশবুকে জানিয়ে দেওয়া, নাহলে এর পরিনাম অনেক খারাপ হয়ে যাবে।যত দ্রুত সম্ভব সেখানে গিয়ে খুশবুকে রক্ষাকবচ দিতে হবে।”
কেউ আর দেড়ি করলো না। ইমতিয়াজ ও তার বন্ধু মৌলভীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন বাড়ির উদ্দেশ্যে।
ইতোমধ্যে মুরতাকিব টের পেয়ে গেছে, যে ইমতিয়াজ ফিরে আসেছে, ইমতিয়াজ ফিরে আসলেই তো খুশবু সবকিছু জানতে পেরে যাবে,কিন্তু মুরতাকিব তো তা হতে দিবে না, তাই তার জ্বিন শক্তি দিয়ে রাস্তায় ইমতিয়াজদের গাড়ির ব্রেক নষ্ট করে, ব্রেকফেল করিয়ে দিল মুরতাকিব।
রাস্তায় ঝড় সৃষ্টি করলো, ব্রেক ফেল হওয়ার কারণে গাড়ি গিয়ে ধাক্কা লাগলো গাছের সাথে।
মৌলভী ইমতিয়াজকে বলতে থাকল,
“যতই যা হয়ে যাক, যতই বাধা আসুক, তোমায় যেতেই হবে ইমতিয়াজ। না হলে খুশবুর অনেক বড় বিপদ হবে। ”
ইমতিয়াজ নিজের মনে সাহস যোগায়, ফের ছুটে চলে বাড়ির উদ্দেশ্য।
বাড়ি আসতে আসতে সন্ধ্যা নেমে আসে।
ওদিকে সন্ধ্যা নেমে আসার পর পরেই একলা মনে ছাদে তারা দেখছে খুশবু।মনের মধ্যে কু ডাক ডাকছে। মনে হচ্ছে বড় কোন বিপদ হতে চলছে। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছে না খুশবু।এরমধ্যে ইমতিয়াজ রুপি মুরতাকিব খুশবুর কাছে এসে দাঁড়ালো। হাত দিয়ে খুশবুকে নিজের দিকে ফিরালো।
” কি হয়েছে জান। এমন মন খারাপ করে আছো কেন?”
” জানিনা কেন জানি আজ আমার মনটা খুব খারাপ লাগছে ।”
” আমি আছি তো সব ঠিক হয়ে যাবে।”
ওদিকে ইমতিয়াজ প্রবেশ করে বাড়ির রাস্তায়। যন্ত্রণা নিয়ে ইমতিয়াজ ধীরে ধীরে চলে আসছে বাড়ির নিকট।
এই দৃশ্য এর মুরতাকিব দেখতে পেয়েই মুরতাকিব নিজ শক্তি দিয়ে মাটি ফাকা করে, মাটির মধ্যে ধীরে ধীরে ইমতিয়াজকে টেনে পুতে দিতে থাকে। ইমতিয়াজ ক্লান্ত মুখে খুশবু বলে চিৎকার করতে চায়, কিন্তু পারে না।অনেক কষ্টে ইমতিয়াজ খুশবুকে ডাকতে সফল হয়।
” খুশবু-বু-বু।”
খুশবু পিছন ফিরে তাকায়। অর্ধ মাটিতে ডুকে যাওয়া ইমতিয়াজকে দেখে খুশবু ফের সামনে ফেরে। দেখতে পায় মুরতাকিবের আসল চেহারা। ইমতিয়াজের চিৎকারে খুশবু ও তার মা ছুটে আসে ইমতিয়াজের কাছে। প্রতিবেশীকে জড়ো করে ইমতিয়াজকে উদ্ধার করে।
ইমতিয়াজ কক্ষে রেখেই,
খুশবু চোখের পানি মুছে। দৌড়ে চলে যায় রান্না ঘরে। খুশবুর এমন ছুটে যাওয়া দেখে ইমতিয়াজ আর তার মা পিছন পিছন যেতে থাকে।
“কোথায় আপনি, আমার সামনে আসুন।” চেচানোর সুরে মুরতাকিবকে ডাকতে থাকে খুশবু।
কিছুক্ষনের মাঝেই মুরতাকিব হাজির হয় খুশবুর সামনে। খুশবু হন্তদন্ত হয়ে খুজতে থেকে ক্যারোসিনের বোতল। খুশবু ক্যারোসিনের বোতলটা পেয়ে মুখ খোলে বোতলের। নিজের শরীরে ঢালতে ঢালতে বলতে থাকে মুরতাকিবকে,
” এর জন্যই আপনি আমায় পছন্দ করেন তাই না, আমার চোখ সুন্দর, আমার চুল সুন্দর, আমার শরীরের ঘ্রাণ সুন্দর, আমার ঠোঁট সুন্দর, আপনি আমার স্বামিকেও মার’তে চেয়েছেন শুধু আমাকে পাওয়ার জন্য তাই না।”
হাত থেকে ক্যারোসিনের বোতলটা ফিক্কা মেরে ফেলে খুশবু। হাতে দিয়াশলাই নেয় খুশবু, কাঠি বের করে জ্বালায়। তাচ্ছিল্যের সুরে বলতে থাকে,
“আমি যদি না থাকি তাহলে সব সমাধান হয়ে যাবে। ”
মুরতাকিব কাদো চোখে খুশবুর পানে চায়। দৌড়ে গিয়ে খুশবুর হাত থেকে দিয়াশলাই এর কাঠিটা নিয়ে নেয়। খুশবুর পিছনে পা পিছায়।
” আমি তোমায় খুব ভালোবাসি খুশবু, এমনটা করো না। ”
মুরতাকিব বলতে থাকে।
খুশবু জবাব দেয়,
“আমি এমনটাই করবো যদি কোনোদিন আমার আশেপাশে বা আমার স্বামির ক্ষতি করেন তাহলে। আমি আপনার থেকে মুক্তি চাই। শুধু মাত্র আপনার জন্য আমি সেই ছোট বেলা থেকে এখন পর্যন্ত মানুষের কাছে তাচ্ছিল্যের বস্তু হয়ে এসেছি, সবাই আমায় নিয়ে মজা করেছে, আমি মুক্তি চাই, আপনার থেকে মুক্তি চাই। চলে যান এখান থেকে, আর আসবেন না, কোনোদিন না, যেদিন আবার ফিরে আসবেন সেদিন আমি নিজের শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিবো। ”
মুরতাকিব দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়ে। সে বলে ওঠে খুশবুকে,
“সেই ছোট বেলা থেকে ভালোবেসে এসেছি, আমি চাইনা আমার জন্য তুমি তোমার নিজের ক্ষতি করো। আমি চলে যাচ্ছি। ”
চোখের পানি মোছে মুরতাকিব। হাওয়ার বেগে অদৃশ্য হয়ে যায় মুরতাকিব।
মুরতাকিব চলে যাওয়ার পর ইমতিয়াজ আর তার মা খুশবুর কাছে ছুটে আসে। খুশবু কে বুকে টেনে নেয় ইমতিয়াজের মা। মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে থাকে,
“সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
এরপর আবার খুশবু আর ইমতিয়াজের সংসারে সুখ নেমে আসে। প্রেমালিঙ্গণে পাড় করতে থাকে বিবাহিত জীবন।
~সমাপ্ত