#গল্পটা_তোমারই
[৬ষ্ঠ পর্ব]
|১৭|
– অহমি তুই কি সেহরিশকে বিয়ে করবি!(নির্লিপ্ত গলায়)
আচমকা মিসেস রিহিয়ার এমন কথায় চমকে উঠলো অহমি।কখনো ভাবেনি মিসেস রিহিয়া এমন কথা বলে উঠবেন।অহমি কখনো ইফাজকে ছাড়া অন্যকাউকে নিয়ে ভাবেনি কখনোই ভাবেনি ইফাজের বদলে জীবনে দ্বিতীয় কারো কথা।সেখানে সে কিভাবে সেহরিশকে বিয়ে করবে।
অহমি আমতা আমতা করে বলে উঠলো।
– ম মনিমা ক্ কি বলছো!আম আমি সে সে সেহরিশ ওনাকে বিয়ে ক্ ক্ করবো?(আমতা আমতা করে)
মিসেস রিহিয়া খানিকটা হাসলেন।
– ঠিকই তো বলছি এই দেখ তুই কত ভালো সবসময় আমার এত খেয়াল রাখিস এত ভালো আচরন করিস।জানিস তোর প্রতি আমার আলাদাই একটা মায়া জমেছে তাই আমি তোকে আমার সেহরিশের বউ বানিয়ে এবাড়িতে রাখতে চাই!(মুচকি হেসে)
অহমি মিসেস রিহিয়ার কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেলল।কি উত্তর দিবে সেটা বুঝতে পারছে না।আপাতত এখানে সামাল দিতে পারলেই ভালো।অহমি আমতা আমতা করে কম্পিত গলায় বলল।
– ম ম্ মনিমা আমার ব বি,,(কম্পিত গলায়)
অহমি কথাটা বলতে না বলতে তার চোখে গেলো দরজার দিকে।দরজা সেহরিশ দাড়িয়ে আছে আর তাকে তার বিয়ের কথাটা বলতে না না ইশারা করছে।
অহমি আজ দ্বিতীয় বারের মতো নিজের বিয়ের কথাটা মিসেস রিহিয়াকে বলতে ব্যার্থ হলো।মিসেস রিহিয়া অহমির হাবভাব দেখে মুচকি হাসলেন।একটু গলা উচিয়ে বলে উঠলেন।
– লালী,লালী!(সামান্য গলা উচিঁয়ে)
মুহুর্তেই হম্বিতম্বি করতে করতে নতুন কাজের মেয়ে লালী ছুটে আসলো।এসেই তার আঞ্চলিক ভাষায় বলা শুরু করলো।
– মাঝি আমাকে কুছু বলিয়েথে!
মিসেস রিহিয়া ভ্রু কুচকে বলে উঠলেন।
– এই লালী তুই শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারিস না তোর এই মাঝি,মাঝি বন্ধ কর আমি কি নৌকা চড়াই নাকি যে বলিস মাঝি!(ভ্রু কুচকে গম্ভীর গলায়)
মিসেস রিহিয়ার কথা শুনে ভিষম খেলো অহমি।দম ফাটানো হাসি দমিয়ে মিটমিট করে হাসতে হাসতে বলে উঠলো।
– মনিমা ও বলতে চাইছে মা,,মাঝি নয়।আর ও বলতে চাইছে মা আমাকে কিছু বলেছেন!(বলেই মিটমিটিয়ে হেসে উঠলো অহমি)
অহমির কথা শুনে মুখ কালো করে মিসেস রিহিয়া লালীকে বলে উঠলেন।
– লালী আমাকে আমার ঘরে নিয়ে যা!(মুখ কালো করে)
লালী মাথা চুলকে মিসেস রিহিয়াকে নিয়ে যেতে লাগলো।
|১৮|
– অহমি আপনি মনিমাকে আপনার বিয়ের আর ডিভোর্সের বিষয়ে কেন বলতে যাচ্ছিলেন!(ভ্রু কুচকে)
অহমি বিস্ফোরিত চোখে সেহরিশের দিকে তাকালো এরপর কম্পিত গলায় বলল।
– ম মনিমাকে এ বিষয়ে ব বললেই ভালো হতো!আপ আপনি জানেন মনিমা আপনার আর আমার ব বিয়ে নিয়ে কথা বলছিলো!(কথাটা বলেই মাথা নিচু করে নিলো অহমি)
– আপনাকে একটা কথা বলি অহমি। একদিন একটা ছেলে তার ভালোবাসার মানুষটিকে একটা গুন্ডার হাত থেকে বাচাতে গেলো কিন্তু একটা মেয়ের জন্য তা পারলো না ছেলেটার ভালোবাসার মানুষটির বিয়ে একটা গুন্ডার সাথে হয়ে গেলো। কিন্তু পর মুহুর্তেই সেই ছেলেটা একটা মেয়েকে ভালোবেসে ফেলে এতে বোঝা যায় সময় কখনো কারো জন্য থেমে থাকেনা তার আপন গতিতেই চলতে থাকে।আপনি কিন্তু চাইলেই আপনার জীবন উপভোগ করতে পারেন একটা ঠকবাজ লোকের জন্য আপনি শুধু কষ্ট পাচ্ছেন।
সেহরিশের কথা শুনে অহমির চোখে জল চলে আসলো কিভাবে সে ইফাজকে ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করবে তার প্রথম ভালোবাসা তো ইফাজই ছিলো।
– ই ইফাজ!(কাঁপা কাঁপা গলায়)
সেহরিশ ঠোঁট কামড়ে খানিকটা হাসলো এরপর ফোন বের করে একটা ভিডিও ক্লিপ বের করলো।
– অহমি এই ভিডিওটা সম্পূর্ণ দেখবেন আর জীবনের সিদ্ধান্ত আপনার।(বলেই সেহরিশ বেরিয়ে গেলো অহমির রুম থেকে)
সেহরিশের কথামতো অহমি ভিডিওটা ওন করলো।ভিডিওটা সম্পূর্ণ দেখে অহমির মাথায় যেনো আকাশ ভেংগে পড়লো।
কারন ভিডিওতে ইফাজ,রোদেলার ক্লাবের সব কথাগুলো স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।
মুখে হাত দিয়ে বিস্ফোরিত চক্ষু নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে অহমি।যাকে জীবনের সবচেয় বেশি ভালোবাসতো যাকে সে নিজের মন-প্রাণ উজার করে ভালোবেসেছিলো যাকে নিজের জীবন -মৃত্যু ভেবেনিয়েছিলো সেই কিনা তাকে এভাবে ঠকালো।
আর রোদেলা তাকে সে নিজের বোনের মতো ভালোবাসতো সেও তাকে এভাবে ঠকালো।অহমি ঠিকঠাক মতো দাড়িয়ে থাকতে পারছে না চারদিক কেমন অন্ধকার লাগছে তার কাছে।
অহমি’র মাথা ঘুড়ে উঠলো “ইফাজ” বলেই ফ্লোরে পরে গেলো।অহমির রুমের বাহিরেই অন্যমনস্ক হয়ে দাড়িয়ে ছিলো সেহরিশ।হঠাৎ ভারী কিছু শব্দ করে পড়ে যাওয়ায় দ্রুত অহমির রুমের সামনে গেলো দেখলো অহমি ফ্লোরে সেন্সলেস অবস্থায় পড়ে আছে।সেহরিশ হন্তদন্ত হয়ে অহমির কাছে গেলো।অহমিকে ফ্লোর থেকে উঠিয়ে দ্রুত গলায় হাত ধরে বলে উঠলো।
– অহমি অহমি!আপনি ঠিক আছেন!অহমি প্লিজ ওপেন ইউর আইস?
ওহ্ নো উনি তো সেন্সলেস হয়ে পড়েছেন।
(চিন্তিত স্বরে)
|১৯|
চোখে সামান্য জলের ছিটে পেতেই সেন্স ফিরে আসলো অহমির।মাথা ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে।মাথা ধরে উঠে বসতে নিলেই দেখলো সেহরিশ তার সামনে চিন্তিত মুখ করে বসে আছে।তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে অহমির জন্য চিন্তা করছিলো।
অহমিকে উঠে বসতে দেখে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলো সেহরিশ। চিন্তিত গলায় বলে উঠলো।
– অহমি আপ আপনি ঠিক আছেন তোহ্?(চিন্তিত গলায়)
অহমির মনে পড়ে গেলো ইফাজ আর রোদেলা বলা সেই কথাগুলো।মুহুর্তেই হু হু করে কেদেঁ দিলো অহমি।ওদের প্রতিটা আলাপের কথা শুনে অহমির হৃদয়টা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেলো।
সেহরিশ হতভম্বের মতো অহমির দিকে তাকিয়ে আছে।অহমি কান্না করতে করতে হেচকি তুলে বলে উঠলো।
– ই ইফাজ আমায় ঠকিয়েছে সেহরিশ রোদেলাও আমায় ঠকিয়েছে!আমার ভাগ্য এতটাই খারাপ যে সবসময় লোকজন আমায় নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে মশকরা করে।আর নিয়তির কি পরিহাস শেষে আমারই বোনের রুপের বেষ্টফ্রেন্ড আমায় ঠকিয়েছে?(কান্নার বেগ বাড়িয়ে)
সেহরিশ বুঝতে পারলো ভিডিওটা দেখে অহমির মনের মাঝে গভীর দাগ পড়েছে।অহমির কান্না সেহরিশ আর নিতে পারছে না দ্রুত অহমিকে কাছে টেনে অহমির মাথা বুকের সাথে মিশিয়ে উত্তেজিত গলায় বলে উঠলো।
– অহমি,অহমি প্লিজ কান্না বন্ধ করুন আ আ আমার আর আপনার কান্না সহ্য হচ্ছে না!(উত্তেজিত গলায়)
অহমির চারিপাশ আবারো ঘুড়তে লাগলো সব কেমন ধোঁয়াশা লাগছে তার কাছে।মুহুর্তেই আবারো সেন্সলেস হয়ে পড়লো অহমি।
|২০|
সকালের মিষ্টি উষ্ণ রোদে জানালার পর্দা ভেদ করে অহমির চোখে এসে বিধঁলো।হাজারো বিরক্তি নিয়ে চোখে মেলে তাকালো অহমি।মাথাটা কেমন ভার ভার লাগছে তার কাছে।আড়মোড়া ভেংগে উঠতে বসলো।
শরীরটা তার বেশ ক্লান্ত।অহমির মনে পড়লো কাল রাতের সব ঘটনা গুলো অহমির চোখের কিনারায় পুনরায় জল জমে এলো।
মানুষ এতটা কিভাবে ঠকবাজ হতে পারে ঘরে বউ থাকতেও বউয়ের বেষ্টফ্রেন্ডের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়।
অহমি নিজের মনকে শান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে।চোখের কিনারার জল মুছে নিয়ে নিজেকে শান্ত করলো।
যেই না বিছানা ছেড়ে উঠে যেতে নিবে ওমনি বিছানায় পূনরায় নজর পড়লো দেখলো তার পাশেই সেহরিশ আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে।চোখ বড় বড় করে সেহরিশের দিকে তাকালো যেনো ভূত দেখার মতো চমকে উঠেছে।রোদের হালকা আভাতে সেহরিশকে বেশ কিউট,স্নিগ্ধ লাগছে।
চোখের মধ্যে রোদ পড়তেই চোখ মেলে তাকালো সেহরিশ।বিরক্ত হয়ে পাশেই তাকাতেই ভরকে গেলো।পাশেই অহমি তাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে হা হয়ে দাড়িয়ে আছে।তা দেখে সেহরিশকে বিষয়টা বুঝতে বেগ পেতে হলো।এরপর রুমের আশে-পাশে তাকিয়ে চমকে উঠলো
– ওহ্ শিট কাল রাতে অহমির চক্কর তো নিজের রুমেই গেলাম না।চোখটা ধরে এসেছিলো তাই অহমি ওনার পাশেই,,(মনে মনে বলল সেহরিশ)
অহমি হা হয়ে সেহরিশের দিকে তাকিয়ে আছে।এটা দেখে সেহরিশ কি রিয়্যাক্ট করবে বুঝতে পারলো না শেষে উপায় না পেয়ে বিরক্তিমাখা গলায় বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো।
– আমি কিউট,হ্যান্ডসাম সুন্দর তা আমি জানি তার জন্য এভাবে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে হবে না ওকে!(বিরক্তি নিয়ে)
চলবে,,