#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব২৪
#Raiha_Zubair_Ripti
নতুন এক সকাল৷ পাখির কিচিরমিচির শব্দে ভরে উঠেছে চারিপাশ। সূর্যের রশ্মি চোখে পড়তেই রুয়াত চোখ খিঁচে ধরে। বা হাত মুখের উপর দিয়ে সূর্যের রশ্মি কে আড়াল করতে চাইলে আকস্মিক ঘাড়ে গরম অনুভব হলে ফট করে চোখ মেলে তাকায় রুয়াত। শাফায়াত তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। রুয়াত চুখ কচলে ভালো করে তাকালো। মাথা ঝিমঝিম করছে সাথে শরীর টাও ব্যথাও করছে। ঘুমন্ত শাফায়াত কে কি সুন্দর ই না লাগছে। রুয়াত আলতো করে শাফায়াত এর চুলে হাত বুলিয়ে মাথায় চুমু খেয়ে গলার কাছ থেকে শাফায়াত এর মাথা টা সরিয়ে শোয়া থেকে উঠতেই নিজেকে অদ্ভুত রকমের লাগলো। নিজের দিকে ভালো করে তাকাতেই চোখ কপালে উঠে গেলো। তড়িঘড়ি করে চাদর টেনে জড়িয়ে নিলো শরীরে। ফ্লোরে চোখ যেতেই দেখে জামাকাপড় গুলো এলোমেলো ভাবে পড়ে আছে। রুয়াত চোখ বন্ধ করে মনে করতে চাইলো রাতে কি হয়েছিলো তার সাথে। কিন্তু মনে করতে পারছে না। তার আবছা আবছা মনে আছে সে শাফায়াত কে মহুয়ার জন্য রুম থেকে বের করে দিয়েছিল। শাফায়াত মহুয়া নিয়ে ফিরেছিল। রুয়াত খেয়েছিল মহুয়া টা। তারপর কি হয়েছে? রুয়াত ভাবতে শুরু করলো।
এদিকে শাফায়াত এর ঘুম ভেঙে গেছে রুয়াতের চাদর টান দেওয়ার সময়ই। চোখ মেলে তাকিয়ে রুয়াত কে চাদর জড়িয়ে আকাশকুসুম ভাবতে দেখে শোয়া থেকে উঠে বসলো। রুয়াতের কানের কাছে মুখ টা নিয়ে কানের ললিতে হাল্কা করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বলে-
-“ বসে বসে কি ভাবছো?
রুয়াত চমকে উঠলো। ফ্লোরে থাকা কাপড় গুলোর দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ আমাদের মধ্যে কি সব হয়ে গেছে?
শাফায়াত বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। প্যান্টের চেইন লাগাতে লাগাতে বলল-
-“ কেনো মনে নেই?
-“ না।
শাফায়াত হাফ ছাড়লো। বিরবির করে বলল-“ থ্যাংক গড মনে নেই। তা না হলে বারবার মনে পড়তো ঐ সময়ের ঘটা ঘটনা গুলো।
-“ আমাদের মধ্যে সব হয়ে গেছে রুয়াত। গোসল করা উচিত এখন। যেতে পারবা নাকি কোলে করে নিয়ে যাব?
রুয়াত ভ্যাবলা কান্তর মতো বলল-
-“ যদি হয়েই থাকে সব কিছু তাহলে আমার মনে পড়ছে না কেনো?
শাফায়াত রুয়াতের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে-
-“ আমার ভুল হয়ে গেছে। তোমাকে মনে করানোর জন্য ভিডিও করে রাখা উচিত ছিলো। নেক্সট টাইম ক্যামেরা অন করে তারপর কাছে আসবো।
-“ না থাক। আপনি যখন বলেছেন তখনই হয়তো সত্যি ই হয়েছে আমাদের মধ্যে সেসব।
শাফায়াত উল্টো ঘুরে পিঠ টা দেখিয়ে বলে-
-“ সি রুয়াত। কি করেছো রাতে খামচি দিয়ে দেখো।
রুয়াত তাকালো। পুরো পিঠে খামচির দাগে লাল হয়ে আছে। রুয়াত কাচুমাচু হয়ে বলে-
-“ খুব ব্যথা লাগছে?
-“ তোমার ব্যথার থেকে নেহাতই কম। এখনও কি ব্যথা করছে শরীর?
রুয়াত উপর নিচ মাথা ঝাকালো।
-“ ওসবের জন্য ই আমার শরীর এতো খারাপ করছে?
-“ শুধু ওসব না। মহুয়ার ও ইফেক্ট আছে। এখন চলো গোসল করবে।
-“ এক সাথে?
শাফায়াত দুষ্ট হাসি দিয়ে চোখ টিপে বলে-
-“ তুমি চাইলে আমার কোনো সমস্যা নেই।
রুয়াত ত্বরিত গতিতে বলে উঠল-
-“ না না আমি একাই গোসল করবো। আপনি জাস্ট জামাকাপড় ওয়াশরুমে রেখে আসেন।
শাফায়াত আলমারি খুলতে খুলতে বলে-
-“ কি রেখে আসবো? ইনার নাকি টি-শার্ট?
রুয়াত ছিঃ করে উঠলো। শাফায়াত ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
-“ ছিঃ করছো কেনো?
-“ আপনি এসব বলছেন কেনো?
-“ ওমা কাল রাতে না তুমি এসব পড়ে নায়েকা সেজেছিলে।
-“ আমি নায়েকা সেজেছিলাম! অবাক হয়ে বলল।
-“ হ্যাঁ। আমি কি মিথ্যা বলছি নাকি?
-“ সত্যি?
-“ হ্যাঁ। যাই বলো না কেনো তোমাকে মারাত্মক হ*ট লাগছিলো। মাথা আউলিয়ে দিয়েছিলা। হলিউড হলিউড ফিল আসছিলো। ইচ্ছে করছিলো আরো..
-“ হয়েছে এখন সেলোয়ার-কামিজ রেখে আসেন ওয়াশরুমে। বকবক না করে।
রুয়াত শাফায়াত কে সম্পূর্ণ কথাটা শেষ ও করতে দিলো না। শাফায়াত সেলোয়ার-কামিজ ওয়াশরুমে রেখে আসে। রুয়াত চাদর সহকারে ওয়াশরুমে ঢুকে তারপর শরীর থেকে চাদর টা খুলে দরজা একটু ফাঁকা করে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
-“ চাদর টা ধরুন।
শাফায়াত এগিয়ে আসলো। চাদর সহকারে রুয়াতের হাত হাল্কা টান দিলে রুয়াত শক্ত করে ওয়াশরুমের দরজা চেপে ধরে বলে-
-“ এই একদম টান দিবেন না হাত ধরে। হাত ছাড়েন।
শাফায়াত হাত ছাড়লো না। বরং মাথাটা রুয়াতের মুখে কাছে এনে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বলে-
-“ এখন বুঝি লজ্জা পাচ্ছো?
রুয়াত দরজা আটকাতে আটকাতে বলে-
-“ তো পাবো না?
শাফায়াত বাহির থেকে বলল-
-“ রাতে কোথায় ছিলো এই লজ্জা টা?
-“ মহুয়ার ভেতর।
শাফায়াত হেঁসে ফেললো। মিনিট বিশেক পর রুয়াত বের হলো টাওয়াল মাথায় করে। শাফায়াত বিছানায় বসে ছিলো। সদ্য গোসল করে আসা রুয়াত কে দেখে দু ঢোক গিললো। তার অনুভূতি গুলো আবার জেগে উঠছে। পরপর জোরে শ্বাস নিলো শাফায়াত। এরজন্য ই কাছে তেমন আসতে চায় নি শাফায়াত। একবার কাছে আসলেই এরপর শুধু শরীর জুড়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। রুয়াত টাওয়াল টা বেলকনিতে মেলে দিয়ে রুমে এসে শাফায়াত কে থম মেরে বসে থাকতে দেখে রুয়াত বলে উঠল-
-“ বসে আছেন কেনো? যান গোসল করে আসেন।
শাফায়াত রুয়াত কে টেনে নিজের কোলে বসালো। ঘাড়ে থুতনি ঠেকিয়ে আলতো করে গলায় চুমু খেলো। ডান হাত চলে গেলো রুয়াতের কামিজ ভেদ করে উন্মুক্ত পেটে। রুয়াত চোখ বন্ধ করে ফেললো। শাফায়াত ঘোর লাগা কন্ঠে মাদকতা মিশিয়ে বলল-
-“ আমাকে তো কন্ট্রোল লেস করে ফেলছো রুয়াত। এখন কি হবে আমার? দিন-রাত শুধু এখন তোমাকে কাছে পাওয়ার বাহানা ঘুরপাক খাবে।
রুয়াত ফট করে চোখ খুলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। কোমড়ে হাত দিয়ে বলল-
-“ আপনার ভাবসাব ভালো ঠেকছে না শাফু। যান গোসল করে আসেন।
শাফায়াত উঠে দাঁড়ালো। তারপর ওয়াশরুমে যেতে যেতে বলল-
-“ বিকেলে কিন্তু ঢাকা ব্যাক করবো রুয়াত। জামাকাপড় গুলো তাড়াতাড়ি ওয়াশ করে রোদে শুকাতে দাও।
রুয়াত কথাটা শুনে মাথায় ওড়না দিয়ে বাহিরে চলে আসলো। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই দেখে জবা উঠানে বসে আছে। দৃষ্টি তার তাদের রুমের বেলকনির দিকে। রুয়াতের মনে শয়তানি বুদ্ধি উদয় হলো। আশেপাশে কেউ আছে কি না দেখে নিলো। নাহ্ কেউ নেই। রুয়াত মুচকি হাসতে হাসতে এগিয়ে আসলো। জবার পাশে দাঁড়িয়ে মাথা থেকে ওড়না টা খুলে চুল গুলো কে ঝাড়তে লাগলো। আকস্মিক শরীরে পানি ছিটে আসায় জবা ঘাড় বেঁকিয়ে তাকালো। রুয়াত কে দেখে রাগ সপ্তম আকাশে। বসা থেকে লাফ দিয়ে উঠে রেগে বলল-
-“ এই কানা নাকি তুমি। দেখছো না আমি বসে আছি। আমার মুখের সামনে এসেই তোমাকে চুল ঝাড়তে হবে?
রুয়াত অপরাধীর মতো মুখ করে বলল-
-“ ওপস সরি আপু। খেয়াল করি নি তোমায়।
-“ চোখ কি ভ্যান্টি ব্যাগে করে রেখে আসছো নাকি রুমে যত্তসব।
-“ ভ্যান্টি ব্যাগে তো রাখি নি আপু। তবে শাফুর বুক পকেটে রেখে আসছি। তা না হলে আস্ত তুমি টাকে কি করে নজরো আসলো না আমার!
জবা মুখ হা করে কিছু বলতে নিবে আর তখনই বেলকনি চোখ যায়। শাফায়াত খালি গায়ে টাওজার পড়ে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছে বেলকনি তে মেলে দিচ্ছে। রুয়াত জবা কে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে দৃষ্টি অনুসরণ করে বেলকনি তে তাকাতেই চোখ তার কপালে। তার জামাই খালি গায়ে রয়েছে। আর এই মেয়ে হা করে তাকিয়ে আছে! রুয়াতের ইচ্ছে করলো শাফায়াত কে আস্ত চিবিয়ে খেতে। আর এই মেয়েকো ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে। রাগ আর সামলে রাখতে না পেরে জবার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে-
-“ অন্যের জামাই এভাবে হা করে তাকিয়ে দেখতে লজ্জা করে না?
জবা দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। তবে দমো গেলো না।
-“ আমার চোখ আমি যেখানে ইচ্ছে সেখানে তাকাবো। তোমার কি?
-“ আমার কি মানে? আমার জামাই এর দিকে তাকাবা কেনো? তোমার জামাই নাই? তোমার জামাই কে ভিডিও কল দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখো।
-“ এতো সমস্যা হলে জামাই কে পর্দায় রাখো। তাহলে আমার চোখ যাবে না যত্তসব।
জবা চলে গেলো। রুয়াত রাগে ফুঁসতে লাগলো। এতো সুন্দর দিনটার মুডের ১২ টা বাজিয়ে দিলো।
সাদমান নিচে নেমে রুয়াত কে এমন ফুঁসতে দেখে বেলি গাছের নিচে বসে বলে-
-“ আরে রুয়াত রেগে আছো কেনো? মহুয়ার রেশ এখনও কাটে নি?
রুয়াত তাকালো।
-“ মহুয়ার রেশ কেটে গেছে ভাইয়া তবে জবার রেশ এখনও যাচ্ছে না জীবন থেকে। মেয়েটা এতো বেয়াদব কেনো? শাফুর দিকে হা করে তাকায় থাকে বেয়াদব মেয়েটা।
-“ ও ওমনি। বাদ দাও ওর কথা। আর কাল রাতের জন্য সরি রুয়াত।
রুয়াত ভ্রু কুঁচকালো।
-“ সরি কেনো?
-“ আমার আনা মহুয়া খেয়ে তুমি পাগলামি করেছো।
-“ আরে ধূর বাদ দেন তো। ভাগ্যিস মহুয়া খাইছিলাম। তা না হলে কি আর ও….
রুয়াত চুপ হয়ে গেলো। কি রেখে কি বলে ফেলছিলো এখনই।
-“ এই মহুয়া কই পাওয়া যায় সাদমান ভাইয়া?
-“ কেনো?
-“ আসলে অনেক টেস্ট তো তাই।
-“ না না বলা যাবে না। ব্রো ওটার নাম ও মুখে আনতে নিষেধ করছে।
-“ আরে বলেন আপনার ব্রো জানতে পারবে না।
-“ ঐ তো…
-“ সাদমান।
গম্ভীর কন্ঠে ডেকে উঠলো শাফায়াত। রুয়াত সাদমান দু’জনেই তাকালো। সাদমান বসা থেকে উঠে বলে-
-“ ব্রো আমি বলতে চাই নি। আর বলবো না। আসছি কেমন?
সাদমান চলে গেলো। রুয়াত মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো। কথাই বলবে না এই পুরুষের সাথে।
সাদমান উপরে এসে নিজের রুমের দিকে যেতে নেওয়ার সময় দেখে রজনীর রুমের দরজা খোলা। ফোনে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে। সাদমান এগিয়ে আসলো। রজনী ফোন টা মুখের সামনে ধরে ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দিয়ে বলছে-
-“ আই লাভ ইউ। খুব তাড়াতাড়ি আমাদের দেখা হবে।
ব্যাস আর শুনতে পারলো না সাদমান। কেমন পা দুটো অসার হয়ে আসলো। রজনী কাউকে ভালোবাসি বলছে! হৃৎস্পন্দন কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেলো। রজনী কি তার ভাগ্যে নেই? এতো করে চেয়েও কি সে রজনী কে পাবে না? আচ্ছা রজনী কাকে ভালোবাসি বললো? নওফিল নাকি ডক্টর উমর কে?
#চলবে?
#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব২৫
#Raiha_Zubair_Ripti
বিকেলের দিকে ঢাকার দিকে রওনা দিলো শাফায়াত রা। সাদমান এর আনা একটা গাড়িতেই সকলে উঠে বসেছে। সামনের সিটে রুয়াত,শাফায়াত। আর পেছনের সিটে সাদমান, রজনী, সানজিদা, নাইমুর। রুয়াত সেই যে সকাল থেকে গম্ভীর হয়ে আছে তো আছেই। শাফায়াত কথা বলতে আসলে এমন ভাবে কথা বলছে মনে হচ্ছে রুয়াত শাফায়াত কে ঠিকমতো চিনে না। আসার পথেও জবা চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিল শাফায়াত কে। রুয়াত পারছিলো না জবা কে তুলে আ,ছাড় দিতে। আশেপাশে লোকজন থাকায় শুধু দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে গেছে।
শাফায়াত গাড়ি চালানোর সময় বারবার আড়চোখে রুয়াত কে দেখছে। শাফায়াত বুঝতে পারছে না রুয়াতের এমন বিহেভিয়ার এর মানে। রেগে থাকার মতো কি সে কিছু করেছে? কই মনে তো পরছে না। আর যদি অজান্তে কিছু করেও থাকে তাহলে রেগে থাকার কি মানে? রাগ ঝাড়বার জন্য কথা তো বলবে! কিন্তু নাহ্ এই মেয়ে কে কিছু বলাও যাচ্ছে না। কিছু ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলেই এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেনো মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই শাফায়াত কে সে ভস্ম করে ফেলবে। শাফায়াত সারা রাস্তা চুপ করে রইলো। এখন আর কিছু বলবে না। বাসায় ফিরে জিজ্ঞেস করবে এই মেয়ের সমস্যা টা কি। তাই গাড়ি চালানো তে মনোযোগ দিলো।
রজনী জানালার দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে। সাদমান তাকাবে না ভেবেও বারবার মনের ভুল করে তাকাচ্ছে। যতবারই তাকাচ্ছে ততবারই তার সেই কথা টা স্মৃতিচারণ হচ্ছে। রজনী কাউকে ভালোবাসি বলছে কাউকে মিস করছে সে।
আচ্ছা রজনী কাকে বলেছে এটা? রজনী কে কি জিজ্ঞেস করবে সাদমান? নাহ্ বিষয় টা খারাপ দেখায়। সাদমান আঁড়চোখেই দেখতে লাগলো রজনী কে।
শাফায়াত নাইমুরের বাসার রোডের সামনে আসতেই নাইমুর নেমে যায়। সানজিদার দিকে তাকিয়ে ইশারায় বলে বসায় পৌঁছে কল দিতে। তারপর চলে যায়।
শাফায়াত আধঘন্টার মধ্যে নিজের বাসার সামনে চলে আসে। রজনী কেও নিয়ে আসে। রাত হয়ে যাওয়া আর রজনী কে দিয়ে আসে নি তার বাসায়। কাল দিয়ে আসবে।
রুয়াত গাড়ি থেকে নেমেই হনহন করে বাড়ির মধ্যে ঢুকে যায়। সাদমান নামে গাড়ি থেকে। সানজিদা রজনী কে নিয়ে চলে গেছে। শাফায়াত রুয়াতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গাড়ি থেকে ল্যাগেজ নামাতে নামাতে বলে-
-“ রুয়াতের কি হয়েছে সাদমান? ওর শরীর দিয়ে আগুনের এতো ফুলকি ঝড়ছে কেনো?
সাদমান নিজের ল্যাগেজ টা বের করতে করতে বলে-
-“ বউ কে গিয়ে জিজ্ঞেস করো আমাকে না করে।
সাদমান চলে গেলো। শাফায়াত বুঝলো না এর আবার কি হলো?
রুয়াত বাসার ভেতরে ঢুকে শারমিন বেগম এর সাথে দেখা করে নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকে। শাফায়াত রুমে বিছানায় বসতেই ওয়াশরুম থেকে পানি পরার শব্দ শুনে বুঝতে পারে রুয়াত ওয়াশরুমে।
অপেক্ষা করতে লাগলো রুয়াতের বের হবার। রুয়াত ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে শাফায়াত কে টোটালি ইগনোর করে বেলকনিতে চলে গেলো ভেজা জামাকাপড় মেলতে। শাফায়াত উঠে বেলকনিতে আসতেই রুয়াত পাশ কাটিয়ে চলে গেলো নিচে। শাফায়াত বেকুব হয়ে গেলো। এমন ইগনোর করার মানে কি?
খাবার টেবিলে বসে সবাই রাতের ডিনার করছে। টেবিলে শুধু মুখ টাকে গম্ভীর করে গপাগপ খাবার খাচ্ছে সাদমান আর রুয়াত। শাফায়াত রুয়াত আর সাদমান কে পর্যবেক্ষণ করে চলছে। এবার তার ভীষণ রাগ হলো। ইচ্ছে করলো দুটো কে সামনে দাঁড় করিয়ে ঠাস ঠাস কয়েক টা বসিয়ে দিতে। রুয়াতের পাশে রজনী বসায় রজনী বলে উঠল-
-“ রুয়াত কাল ডক্টর উমরের বাসায় যেতে হবে আমার।
রুয়াত খেতে খেতে বলে-
-“ কেনো কাল কি?
-“ কাল ২৬ তারিখ রুয়াত।
রুয়াত ঘাড় বেঁকিয়ে তাকালো। বিস্ময়ের সাথে বলল –
-“ কাল ২৬ তারিখ!
-“ হু।
-“ ওহ্ আচ্ছা। যাইয়ো ভালো লাগবে।
সাদমানের গলা দিয়ে আর খাবার ঢুকলো না। হাত ধুয়ে চলে গেলো। রুয়াত, রজনী, সানজিদার খাওয়া শেষ। সানজিদা রজনী কে নিজের রুমে নিয়ে গেলো। শারমিন বেগমের খাওয়া শেষ হতেই রুয়াত তাকে রুমে চলে যেতে বলে। সে এঁটো থালাবাসন ধুয়ে রাখবে। শারমিন বেগম চলে গেলেন। টেবিলে পড়ে রইলো শাফায়াত। যে কি না পিঁপড়ার মতো করে খাবার খাচ্ছে। রুয়াত এক এক করে থালাবাসন বেসিনে নিয়ে গেলো। শাফায়াত কে এখনও খাওয়া শেষ করতে না দেখে চেয়ার টান দিয়ে বসলো। শাফায়াত সে নিজের মতো একটু একটু করে খাচ্ছে আর ফোন স্ক্রোল করছে। দশ মিনিট হয়ে গেলো এভাবে। এখন খাবার টা শেষ করতে না দেখে রুয়াত এবার রেগে এক ঝটকায় ফোন টা কেঁড়ে নিলো।
শাফায়াত ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ আশ্চর্য ফোন নিলে কেনো?
-“ খাওয়ার সময় ফোন কি হ্যাঁ? আর এইটুকু খাবার খেতে এতো সময় লাগে?
-“ আমার ইচ্ছে।
-“ তাহলে খাওয়া শেষে ভদ্রলোকের মতো প্লেট খানা ধুয়ে রাখবেন।
-“ পারবো না।
-“ তাহলে চুপচাপ খাবার খেয়ে প্লেট দিন।
শাফায়াত খাবার সহকারে প্লেট টা এগিয়ে দিলো।
-“ খাবেন না?
শাফায়াত বেসিনে গিয়ে হাত ধুতে ধুতে বলে-
-“ না।
রুয়াত কথা না বাড়িয়ে থালাবাসন ধুতে লাগলো। শাফায়াত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো। রুয়াত থালাবাসন গুলো ধুয়ে টেবিলে উপর করে রাখতেই আকস্মিক হাতে হেঁচকা টান লাগায় পড়ে যেতে নিলে শাফায়াত ধরে নেয়। রুয়াত রেগে বলে উঠে –
-“ এমন ভাবে টানেন কেনো। পড়ে গেলে তার দায় কে নিতো?
শাফায়াত রুয়াতের কোমড় চেপে ধরে বলে-
-“ আমিই নিতাম।
রুয়াত ছাড়া পাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করতে করতে বলে-
-“ ছাড়ুন।
শাফায়াত এর কাটকাট জবাব-
-“ না।
-“ না মানে কি? ছাড়ুন বলছি।
-“ না ছাড়বো না। আগে বলো রেগে আছো কেনো?
-“ কারন আছে সেজন্য।
-“ কারন টা বলো।
-“ খুঁজে নিন। এতো ঠেকা পড়ে নি বলে দেওয়ার।
-“ আমার তো জানামতে রেগে থাকার মতো কিছু করি নি।
-“ করেছেন অবশ্যই।
-“ বলো কি করেছি।
-“ আগে ছাড়েন। কেউ দেখে ফেলবে তো।
-“ কেউ দেখবে না। বলো।
-“ আমি দেখে ফেলেছি ব্রো। রুমে গিয়ে রোমান্স করো।
রুয়াত চোখ বড় বড় করে তাকালো৷ ওরা কি রোমান্স করছে নাকি? শাফায়াত বিরক্ত নিয়েই বলল-
-“ আমার বাড়ি আমার বউ আমি যেখানে খুশি সেখানেই রোমান্স করবো তোর কি।
সাদমান পাশ কাটিয়ে বাহিরে যেতে যেতে বলল-
-“ আচ্ছা করো তাহলে রোমান্স বসার ঘরেই।
-“ তুই বাহিরে যাচ্ছিস কেনো?
-“ হাওয়া খেতে।
সাদমান চলে গেলো। রুয়াত জোর করেই নিজেকে এবার ছাড়িয়ে নিলো। তর্জনী উঁচু করে বলল-
-“ লজ্জা শরম কি পকেটে ঢুকায় রাখছেন? ছোট ভাইয়ের সামনে এসব কি বলছেন হ্যাঁ?
শাফায়াত ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল-
-“ লজ্জা শরম গত কালই ভেঙে গেছে। তাই আর অবশিষ্ট নেই।
রুয়াত চলে গেলো। শাফায়াত শিষ বাজাতে বাজাতে বউয়ের পেছন পেছন আসতে নিলে হুট করে ফোনে মেসেজ আসে। সাদমান পাঠিয়েছে। ওপেন করে দেখতেই দেখে তাতে লেখা আছে,,
-“ তোমার বউ জবার জন্য রেগে আছে। জবা তোমাকে গিলে গিলে খাচ্ছিলো দেখে। কারন জিজ্ঞেস না করে বউ কে সরি বলে মানাও৷ যদিও তোমার দোষ নেই। তবুও দোষী সাজো।
শাফায়াত সরু চোখে তাকিয়ে রইলো মেসেজের দিকে। বিয়ে করলে এই এক সমস্যা। দোষ না করেও দোষী সাজতে হয়।
রুয়াত রুমে এসে সোজা বিছানায় শুয়ে পড়ে। শাফায়াত লাইট টা বন্ধ করে বিছানায় এসে রুয়াত কে জড়িয়ে ধরে। রুয়াত সরিয়ে দেয় শাফায়াত কে। শাফায়াত টেনে কাছে নিয়ে আসে রুয়াত কে। তারপর আলতো করে গালে হাত রাখে। ঢঙ্গি বউ তার। নরম কন্ঠে বলল-
-“ রেগে থাকলে চলবে বলো? আমরা তো ঢাকায় চলেই আসছি। জবা কি আর আসতে পারবে আমাদের মাঝে? আমি তোমার আছি তোমারই তো থাকবো।
রুয়াত এখন একটু নরম হলো। বুকের শার্ট টা চেপে ধরে বলল-
-“ ও এতো বেহায়া কেনো? না করার পরও কেনো আপনার দিকে তাকায়? ওর লজ্জা নেই?
-“ ওর এসব একটু কমই। ওর কথা বাদ দাও। শুনো ও যা ইচ্ছে করুক। তুমি রাগবা না। ও তোমায় রাগানোর জন্য ই বেশি বেশি এসব করে।
-“ আর যাব না আমি আর ঐ বাড়ি জবা থাকাকালীন।
-“ আচ্ছা যেতে হবে না আর। এবার ঘুমাও। আর রেগে থাকবা না কেমন? কারন বলবে তৎক্ষনাৎ ই। মনে থাকবে?
-“ হু। সরি।
শাফায়াত আলতো করে কপালে চুমে খেয়ে জড়িয়ে ঘুম দিলো।
রজনী দাঁড়িয়ে আছে বেলকনিতে। একটু ভ্যাঁপসা গরম লাগায় বেলকনিতে এসেছে শরীর ঠান্ডা করার জন্য। অথচ তার চোখ জোড়া আটকে আছে বাগনের বেঞ্চে বসে থাকা সাদমান এর দিকে। এতো রাতে একা বাগানে বসে কেনো? মন খারাপ ওর? নাকি গরম লাগছে কোনটা?
রজনী ডেকে উঠলো সাদমান কে।
-“ সাদমান।
সাদমান ডাক টা শুনে চোখ বন্ধ করে ফেললো। ডাকটা এতো সুন্দর লাগছে কেনো? সাদমান পেছন ফিরলো। বলল-
-“ হু বলুন।
-“ এতো রাতে বাগানে কেনো আপনি?
-“ গরম লাগছিলো সেজন্য। আপনি কেনো বেলকনি তে?
-“ আমার ও গরম লাগছিলো।
-“ ওহ্ আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়ুন।
সাদমান চলে গেলো। রজনীর কাছে কেমন যেনো লাগলো সাদমান কে। কেমন ইগনোর ইগনোর করছে।
—————-
নতুন আরেক সকালের আগমন। সূর্যের দাবদাহে পুড়ছে নগরবাসী। কোথাও শীতল বাতাসের ছিটেফোঁটা ও নেই। শাফায়াত রুয়াত ব্রেকফাস্ট করেই বের হয়েছে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। এক সাথে ভেতরে ঢুকতেই সর্বপ্রথম রুয়াতের চোখ আঁটকে যায় দূরে বসে থাকা রোহানের দিকে। কেমন হাসিতে চোখ মুখ জ্বলে উঠছে। উঠেছিলো বসা থেকে। হয়তো এগিয়ে আসতে চাইছিলো কিন্তু পারে নি শাফায়াত কে দেখে। বসে পড়ে বেঞ্চে। নেহাল কাঁধে হাত রাখে। এই কয়দিন রুয়াত কে একটু দেখার জন্য ভার্সিটি তে ছুটে আসতো। আজ দেখতে পেলো। চোখ জোড়া জুড়িয়ে আসলো তার।
রুয়াত দৃষ্টি সরিয়ে চলে গেলো ক্লাসে। নেহাল রোহানের দেবদাস মার্কা চেহারা দেখে বলে উঠল-
-“ তোর এই দেবদাস মার্কা চেহারা কবে পাল্টাবে বলতে পারবি? তাহলে সেদিন রোজা রেখে একটা ইফতার পার্টির আয়োজন করতাম। কাইন্ডলি জানিয়ে দিস সেই দিন টা?
রোহান আজ আর চেতলো না। সব সময় কি আর চেতা যায়? যার মনে বয়ে ঝড় সে বুঝে তার বেগ কতটা মারাত্মক। নেহাল তো আর হারায় নি। সে তো পেয়ে যাবার পথে সুইটি কে। সে কি করে বুঝবে না পাওয়ার ব্যথা।
রোহান বসা থেকে উঠে চলে যেতে নিলে নেহাল হাত টা ধরে ফেলে। টেনে ধরে বসিয়ে বলে-
-“ তোর এমন নিস্তব্ধতা ভালো লাগছে না রোহিঙ্গা। তুই থাকবি ছন্নছাড়া রাজনীতি করে বেড়ানো বাউন্ডুলে টাইপের। তা না ছ্যাকা খোর দের মতো এমন আচারণ করছিস যেনো মনে হচ্ছে তোর কপালে আর কোনো মেয়ে জুটবে না। তুই রুয়াতের থেকেও বেস্ট কাউকে পাবি দেখে নিস।
-“ আমি তো বেস্ট কাউকে চাই নি জীবনে।
-“ তুই চাস নি তো কি হয়েছে। পৃথিবী নিজ থেকে দিবে সেই বেস্ট টা তোকে। তাই ভক্কর চক্কর বাদ দিয়ে নিজের ফর্মে ফির। ছাত্র লীগের নেতা এমন নেতিয়ে থাকলে দল তো এমনিতেই হাল্কা বাতাসে এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়বে।
রোহান উঠে দাঁড়ালো।
-“ চল ক্লাবে যাব।
-“ কেনো? ওসব গিলতে?
-“ হু। গেলে আয় না গেলে থাক। আমি চললাম।
নেহাল রোহানের পেছন পেছন হাঁটা ধরলো।
দুপুর হতেই রজনী রেডি হয়ে নেয়। রুয়াত বেগুনি রঙের শাড়ি বের করে দিয়ে গিয়েছিল। রজনী সেটাই পড়ে নেয়। চুল গুলো হাত খোপা করে কানের পাশে গোলাপ ফুল লাগায়। আয়নায় একবার নিজেকে দেখে তারপর রুম থেকে বের হয়ে বসার রুমে আসলো। সোফায় বসে ছিলো সাদমান আর শারমিন বেগম। রজনী শারমিন বেগমের থেকে বিদায় নেয়। সাদমান একবার তাকিয়েই দ্বিতীয় বার আর তাকানোর সাহস পায় নি। শারমিন বেগম সাদমানের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ সাদমান ওরে একটু পৌঁছে দিয়ে আয়।
সাদমান ভেবেছিলাম না করবে। কিন্তু কেনো যেনো না বলার জন্য মুখ খুলতেই আচ্ছা বলে ফেললো। নিজের কাণ্ডে নিজেকেই শ’খানেক বকাবকি দিলো। তারপর বসা থেকে উঠে রুম থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে বলল-
-“ চলুন।
রজনী সাদমান এর পেছন পেছন এসে গাড়িতে উঠে বসলো।
সাদমান গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল-
-“ ডক্টর উমর এর বাসায় যাবেন?
-“ হ্যাঁ। আগে একটু মার্কেটের সামনে থামিয়েন তো গাড়ি।
-“ কেনো?
-“ কিছু কিনবো।
সাদমান গাড়িটা মার্কেটের সামনে এনে থামালো। রজনী মার্কেটে গিয়ে মিনিট দশেক পর আসলো কিছু প্যাকেট নিয়ে। সাদমান আড়চোখে দেখলো। তারপর স্টার্ট দিলো৷ রজনী লোকেশন টা বলে বলে দিলো।
দু তালা ডুপ্লেক্স এর সামনে এসে থামলো। রজনী গাড়ি থেকে নেমে সাদমান এর দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ আপনিও আসুন না সাথে। ওর ভালো লাগবে।
সাদমানের রাগ হলো এই কথাটা শুনে। ওর ভালো লাগবে মানে কি? উমর এর ভালো লাগবে সেজন্য তাকে নিয়ে যাবে! কাটকাট গলায় বলল-
-“ যাব না। আপনি যান। আমি কি চলে যাব গাড়ি নিয়ে নাকি চলে আসবেন?
-“ আধঘন্টা অপেক্ষা করতে পারবেন?
-“ হু।
-“ তাহলে অপেক্ষা করুন আমি দেখা করেই চলে আসবো।
রজনী চলে গেলো। সাদমান গাড়ির ভেতরই বসে সাপের মতো ফুঁসতে লাগলো।
#চলবে?