গোধুলির শেষ বিকেলে তুমি আমি পর্ব-৩০

0
199

#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব৩০
#Raiha_Zubair_Ripti

পার্লারের লোকেরা এসে সাজিয়ে দিয়ে গেছে সানজিদা কে। সানজিদা এখন নিজের রুমে বসে আছে। সানজিদার রুমে রুয়াত রজনী ও আছে। আজ সকালে আবার জবা ও এসেছে। রুয়াতের দেখতে ইচ্ছে করে না জবা কে। ইচ্ছে করে জবা গাছের সাথে ম্যাজিক করে ফুল বানিয়ে আটকে রাখুক। আসার পর থেকেই ঢং করছে। পুরো বাড়ি টইটই করছে কোমড় দুলিয়ে দুলিয়ে। ভীষণ বিরক্ত এতে রুয়াত।
-“ বর এসে গেছে সানজিদা কে নিয়ে আসো।

রুমে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা জবা বলে। পড়নে তার লাল টুকটুকে পাতলা শাড়ি। শরীরের ভাজ স্পষ্ট। রুয়াত পারছে না এই শরীরে কেরোসিন তেল ঢেলে দিতে। সব কিছু করছে ছেলেদের ইমপ্রেস করতে। বেহায়া মেয়ে বিয়ে ঠিক হবার পরও এমন বেহায়াপনা করছে ছিঃ।
রুয়াত রজনী সানজিদা কে নিয়ে গেলো স্টেজে। নাইমুর এর পাশে বসিয়ে দিলো। নাইমুর মুগ্ধ চোখে দেখলো তার প্রিয়তমা কে। সবার অগোচরে সানজিদা হাতখানা হাল্কা চেপে ধরলো। ফিসফিস করে বলল-
-“ অসম সুন্দর লাগছে তোমায় সানজু,মাশা-আল্লাহ।
সানজিদা লজ্জার ন্যায় নুইয়ে গেলো। কাজি এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। শারমিন বেগম এসে মেয়ের পাশে দাঁড়ালো। কবুল বলার সময় মেয়েদের পাশে কারো থাকাটা ভীষণ দরকার। কাজি কবুল বলতে বললে সানজিদার মুখ দিয়ে কবুল বের হয় না। মনে হয় কেউ আঁটকে রেখেছে কণ্ঠনালী। শারমিন বেগম মেয়েকে ভরসা দিলেন। সানজিদা খানিক ভরসা পেলো। আর একটু সময় নিয়ে কবুল বললো। নাইমুর কে বলতে বললে নাইমুর সানজিদার দিকে তাকিয়ে কবুল বলে দেয়। সকলে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে। কিছুটা দূরেই নির্নিমেষ চোখে চেয়ে আছে শাফায়াত। আদরের বোন টা আজ থেকে অন্যের অর্ধাঙ্গিনী। আজ থেকে অন্যের বাড়ি থাকবে। ভাই ভাই বলে ডাকার সময় ক্ষনিকের হয়ে গেলো।

রুয়াত শাফায়াত কে এমন নির্নিমেষ চোখে চেয়ে থাকতে দেখে বাহু জড়িয়ে ধরলো। মাথাটা উঁচু করে মুখের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ কষ্ট পাচ্ছেন? সব মেয়েকেই এভাবে চলে যেতে হয়। কষ্ট না পেয়ে শুধু দোয়ায় রাখবেন ওদের। যেনো ওদের সংসারে কোনো দিন ঝুটঝামেলা না লাগে। সব সময় হাসি খুশি শান্তিতে থাকে।
-“ হ্যাঁ পৃথিবীর সব সুখ আমার বোনের জীবনে আসুক। কোনো দুঃখ রা যেনো আমার বোন কে স্পর্শ করতে না পারে।

রুয়াত মুচকি হাসলো। নাইমুর আর সানজিদার বিদায় বেলা ঘনিয়ে আসলো। সানজিদা কেঁদে ফেললো মা,ভাই, ভাবি কে জড়িয়ে ধরে । রুয়াতের ও কান্না পেলো। তার বিদায় বেলার কথা মনে পড়লো। শাফায়াত বোনকে ধরে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। তারপর নাইমুর এর দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আগলে রাখিস আমার বোন কে ইয়ার।
নাইমুর মুচকি হাসলো। শাফায়াত এর হাত জোড়া ধরে বলল-
-“ টেনশন মুক্ত থাক শাফু। কোনো অযত্ন হবে না সানজুর।
শাফায়াত নিজেও জানে নাঈমুর তার বোনের অযত্ন হতে দিবে না। নাইমুর গাড়িতে উঠে চলে গেলো। সকলে তাকিয়ে রইলো চলন্ত গাড়িটার দিকে। যতক্ষণ চোখ যায়। রুয়াত শ্বাশুড়ি কে ধরে নিয়ে যায় রুমে।
সাদমান নিজের রুমে ফিরে সোজা তার মা বাবাকে ফোন করে। সাদমান এর মা সাইফা বেগম ছেলের ফোন পেয়ে হাতের কাজ থামিয়ে ফোন টা রিসিভ করে। পাশেই বসে আছে সাদমানের বাবা সাইদুল ইসলাম।
-“ হাউ আর ইউ মম?
সাইফা বেগম মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে-
-“ অ্যা’ম ফাইন বেটা। তুমি কেমন আছো?
-“ এখনও পুরোপুরি ভালো হই নি মম। আমার ভালো থাকা খানিকটা তোমাদের উপর নির্ভর করছে।
সাইফা বেগম ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ মানে?
-“ মানে টা হচ্ছে আমি বিয়ে করতে চাই ভেরি সুন। মেয়েও পছন্দ, মেয়েও রাজি। এখন তোমরা বিডি এসে কথাবার্তা বলো মেয়ের পরিবারের সাথে।
সাইদুল ইসলাম চকিতে চমকালো ছেলের এহেন কথায়। তার ছেলে বিডির এক মেয়েকে বিয়ে করতে চায়! স্ত্রীর থেকে ফোন টা নিয়ে ছেলেকে বলল-
-“ মেয়েটা কে সাদু?
-“ ব্রো এর বউয়ের বড় বোন রজনী। মেয়েটা ভীষণ লক্ষী ড্যাড। এন্ড মোস্ট বিউটিফুল । তোমাদের পছন্দ হবে ট্রাস্ট মি।
-“ আচ্ছা ছবি পাঠাও তো।
সাদমান ফোন টা হোল্ড করে রজনীর ছবি পাঠিয়ে দিলো। সাইদুল ইসলাম আর সাইফা বেগম রজনীর ছবি টা দেখলো। পছন্দ হলো। সাদমান জিজ্ঞেস করলো-
-“ কেমন দেখলে?
-“ হ্যাঁ চলে…
-“ তাহলে আর কি কালই চলে এসো বিডি। সামনা-সামনি দেখলে বুঝতে পারবে মিস রজনী কতটা মিষ্টি একটা মেয়ে। কাল দেখা হচ্ছে তাহলে।

সাদমান ফোন কেটে দিলো। সে এখনই তার বাবা মা কে রজনীর অতীত টা বলবে না। এসব ফোনে বলার মতো বিষয় না। ঠান্ডা মাথায় বসে সামনা-সামনি বুঝিয়ে বলতে হবে। সাদমান এর বিশ্বাস তার বাবা মা বুঝবে বিষয়টা।

রজনী রুয়াত এখনও শারমিন বেগমের রুমে। অতিরিক্ত কান্না করায় শরীর নেতিয়ে গেছে। রজনী রুয়াত কে নিজের রুমে চলে যেতে বলে। রজনী নিজে থাকবে আজ শারমিন বেগমের কাছে। রুয়াত চলে আসে। শাফায়াত বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। রুয়াত রুমে ঢুকে বিছানায় বসে বলল-
-“ রুমে আসুন শাফু।
শাফায়াত রুয়াত এর আওয়াজ পেয়ে রুমে আসলো।
-“ মন খারাপ এখনও?
শাফায়াত রুয়াতের পাশে বসে বলে-
-“ না।
-“ তাহলে লাইট বন্ধ করে আসুন তো। একটা ঘুম দিব আপনার বুকে মাথা রেখে।
বিছানায় শুয়ে বলে রুয়াত। শাফায়াত রুমের লাইট বন্ধ করে বিছানায় আসে। শাফায়াত শুতেই রুয়াত শাফায়াত এর বুকে মাথা রাখে। শাফায়াত বা হাত রুয়াতের মাথায় আলতো করে রাখে।
-“ মা ঘুমিয়েছে রুয়াত?
-“ হ্যাঁ, আপু আছে রুমে।
-“ ওহ্। ঘুমিয়ে পড়ো তুমিও। কাল তো ওদের বাড়ি যেতে হবে।
-“ হু। আপনিও ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

সকাল এগারোটার দিকে রোহান ঘুম থেকে উঠে। কাজের বুয়া রান্না বান্না করে রেখে চলে গেছে। রোহান ব্রাশ করে খাবার টেবিলে আসে খাবার খেতে। এরমধ্যে পকেটে থাকা ফোন বেজে ওঠে। রোহান চেয়ার টেনে বসে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে নীতি ফোন করেছে। রোহান প্লেটে রুটি নিতে নিতে ফোনটা রিসিভ করে কানে নেয়।
-“ বল নীতি।
নীতি তার হলের রুমের করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে। আজ সকাল থেকেই আকাশ টা মেঘলা। একদল বাউণ্ডুলে মেঘ ঘুরাঘুরি করছে আকাশে। সেই সাথে আজ নীতির মন ও ভীষণ খারাপ। আসার পর থেকে কথা হয় নি রোহানের সাথে। তার উপর ভার্সিটির এক ছেলে আজ কাল বেশ বিরক্ত করছে নীতি কে। এর আগেও করেছে তবে কথা বলার চেষ্টা করে নি। এমনি শুধু তাকিয়ে থাকতো। কিন্তু এখন কথা বলা থেকে শুরু করে হুটহাট হাত ধরে বসে। নীতি মানাও করেছে ছেলেটাকে। তবে ছেলেটা শুনতে নারাজ। তার নীতি কে পছন্দ হয়েছে। ফোন দিয়ে বিরক্ত করে। ক্লাস ফ্রেন্ড দের থেকে নীতির নম্বর ও সংগ্রহ করছে। ছেলেটা আবার ভার্সিটিতে পলিটিক্স করে বেড়ায়। বেশ পাওয়ার ফুল ব্যক্তি। নীতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই ভার্সিটি তে আর পড়বে না। খুব শীগ্রই ঢাকা চলে যাবে। ইয়ার লস হলে হবে।
-“ কেমন আছেন?
রোহান মুখে রুটি নিতে নিতে বলল-
-“ ভালো আছি। তুই?
-“ ভালো নেই।
রোহানের ভ্রু কুঁচকে আসলো।
-“ কেনো ভালো নেই?
-“ আমি আর ফেনি থাকবো না।
-“ কেনো?
-“ এই শহর টা আরো ভালো লাগছে না। আমি ঢাকায় পড়বো। আপনাদের আশেপাশে থাকবো। এখানে একা একা ভালো লাগে না।
-“ ওহ্ তোর ভাইকে বল আমায় না বলে।
-“ হু ভাইয়াকে বলবো। আপনাকেও জানিয়ে রাখলাম।
-“ আচ্ছা। খেয়েছিস?
-“ না। আপনি?
-“ খাচ্ছি। খাস নি কেনো এখনও? তাড়াতাড়ি খেয়ে নে।
-“ আচ্ছা রাখছি তাহলে।
নীতি ফোন কেটে দিলো। হলের নিচে তাকাতেই দেখলো গেটের বাহিরে নীলয় দাঁড়িয়ে আছে। নীতির বিরক্ত লাগছে। এই ছেলেকে বললেও তো শুনছে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যেতে হবে। এই ছেলের স্বভাব ও ভালো না। একশো একটা প্রেম করে আবার শারীরিক সম্পর্ক ও করে মেয়েদের সাথে। যার উপর নজর পড়ে তাকেই জোর করে এদিনের জন্য হলেও বেডে নেয়। তারপর টিস্যুর মতো ছুড়ে ফেলে দেয়। নীতি নেহাল কে ফোন দিয়ে সব বললো। নেহাল বলল ছেলেটার ফোন নম্বর টা দিতে। নীতি ফোন নম্বর টা দিলো। নেহাল নীলয় কে দেখে নিবে বলল। আর এ-ও বলল যে পড়তে না চাইলে জোর করবে না। ওদিকের নীতির ভার্সিটির সব কাজ টাজ শেষ হলে নেহাল আসবে নীতি কে নিতে।

নীতি কিছুটা রিলিফ পেলো। নেহাল দুপুরের দিকে রোহান এর বাসায় আসলো। রোহান তখন বেডে শুয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যাচ দেখছিল। নেহাল বিছানায় বসলো।
-“ রোহান একটা ঝামেলা হচ্ছে।
রোহান ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কিসের ঝামেলা?
-“ নীতি কে ঢাকায় নিয়ে আসবো।
-“ হ্যাঁ নীতি বলল তো ও চলে আসবে।
-“ নীলয় নামের ছেলেটা বেশ বিরক্ত করছে নীতি কে। আমি আজ কথা বলেছি নম্বর নিয়ে নীলয় ছেলেটার সাথে। ওর ইতিহাস ও জেনেছি লোক লাগিয়ে। ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো না। পলিটিক্স করে,নেশাখোর, হাজার টা মেয়ের সাথে শারিরীক সম্পর্ক করে। এখন বলছে ওর নীতি কে পছন্দ নীতি কে ওর চাই।
রোহান শোয়া থেকে উঠে বসলো৷
-“ কবে থেকে বিরক্ত করছে?
-“ মাস দুয়েক।
-“ আর আমাকে আজ বলছিস? পলিটিক্স আমরাও করি। নীতি ভয় পেয়ে চলে আসতে চাইছে তাই বলে?
-“ বুজছিস না ব্যাপার টা। ফেনি শহরে আমাদের পাওয়ার নেই। তারচেয়ে নীতি চলে আসুক।
-“ নীলয় এর এ টু জেট সব হিস্ট্রি আমাকে দিস তো৷ ফেনি শহরের পাওয়ার ওর পা’ছা দিয়ে ভরে দিয়ে আসবো। আর তোর বোন রে ঠাটিয়ে চ’ড় মেরে আসবো। ছেলেটা বিরক্ত করছে কই আগে বলবে তা না করে এখন বলতেছে।
-“ আমি সপ্তাহ খানের পর ফেনি যাব নীতি কে আনতে। আমি কোনো রিক্স নিতে চাই না ইয়ার আমার বোন কে নিয়ে।
-“ আচ্ছা নীতি কে নিয়ে আয় তারপর দেখছি শালার বেটা কে।

সাদমান,রজনী, রুয়াত শাফায়াত এসেছে নাঈমুর দের বাড়ি। রজনী আজ হোয়াইট কালারের শাড়ি পড়েছে। সাদমান ম্যাচিং করে সাদা পাঞ্জাবি। রুয়াত পার্পল কালারের কুর্তি পড়েছে আর শাফায়াত পার্পল কালারের শার্ট। সাদমান রজনীর হাত ধরে ঘুরছে বাড়ির বাগান টা। বউ ভাত বলে কথা আনাচে কানাচে লোকজনের সমাগম। অনেক মানুষ এসেছে বউ ভাতে। সাদমান রজনী কে বলেছে তার বাবা বিডি আসছে ভেরি সুন। তার আর রজনীর বিয়ের কথাবার্তা বলবে। রজনী চুপচাপ শুনেছে শুধু কথা গুলো। নাইমুর দের বাড়ির বাগানের এক পাশে হরেক রকমের ফুলের বাহার৷ সাদমান লাল টুকটুকে একটা গোলাপ ছিড়ে রজনীর কানে গুঁজে দিয়ে বলল-
-“ এটারই কমতি ছিলো রজনী। এখন পরিপূর্ণ দেখাচ্ছে।
রজনী আলতো হাতে ফুলটাকে ছুঁইয়ে দিয়ে মুচকি হাসলো৷ আকস্মিক শাড়ির আঁচলে টান পড়ায় পিছু ফিরলো রজনী। আড়াই বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে রজনীর আঁচল ধরেছে। পড়নে লাল টুকটুকে ফ্রক। চুল গুলো দু’পাশে ঝুটি করা। রজনী নিচু হলো। আশেপাশে কাউকে না দেখে বলল-
-“ কি হয়েছে বাচ্চা? মাম্মা পাপা কোথায় তোমার?
কোলে তুলে নিলো বাচ্চা টাকে। সাদমান মেয়েটার শরীরে আলতো হাত রেখে বলল-
-“ কার বাচ্চা এটা? আশেপাশে তো কাউকে দেখছি না।
-“ হু সেটাই। বাচ্চা টা কি কিউট,গুলুমুলু তাই না?
-“ হু।
বাচ্চা মেয়েটা রজনীর কানে থাকা ফুল টার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে-
-“ পুল.. আমি পুল নিবো।
বাচ্চাটা তার নিজের কানে হাত দিয়ে বলে। রজনী মেয়েটার গালে চুমু খেয়ে বলে-
-“ ওলে বাচ্চা টা। তুমি ফুল নিবে?
মেয়েটে উপর নিচ মাথা ঝাকালো। রজনী কান থেকে ফুল টা নিয়ে বাচ্চার কানে দিয়ে বলে-
-“ এতো তো বাচ্চা৷ তোমার কানে ফুল দিয়েছি। কি সুন্দর দেখাচ্ছে বাচ্চা তোমাকে।
বাচ্চা টা হেসে উঠলো। হাত তালি দিয়ে বলল-
-“ তুন্দল দেকাচ্চে?
-“ হ্যাঁ বাবু সুন্দর দেখাচ্ছে। তোমার নাম কি বাচ্চা?
-“ নলিন।
সাদমান হেসে উঠলো নাম টা শুনে। বাচ্চা টাকে নিজের কোলে নিয়ে বলল-
-“ এটা আবার কি নাম বাচ্চা? নলিন কারো নাম হয় নাকি?
সাইড থেকে রুয়াতের কন্ঠস্বর ভেসে আসলো। রজনী কে ডাকছে। রজনী সাদমান কে আসছি বলে চলে গেলো। সাদমান একাই বাচ্চা টাকে কোলে নিয়ে বাগান টা ঘুরতে লাগলো। একা রেখে চলে যাবে যদি হারিয়ে যায়। বাগানের এ ফুল ও ফুল দেখাচ্ছে । বিশ মিনিট পাড় হয়ে গেলো বাচ্চার বাপ মায়ের কোন খোজ নেই। কেমন ইররেসপন্সিবেলের মতো বাচ্চা টাকে ছেড়েছে এখনও খুঁজতে আসে নি। সাদমান বাচ্চা টাকে জিজ্ঞেস করলো-
-“ তোমার মাম্মাম পাপা কোথায় বাচ্চা?
-“ পাপা?
-“ হ্যাঁ।
-“ কাচ্চে গুত্ত।
-“ তোমার মাম্মাম?
বাচ্চাটা চুপ। সে ফুল নিয়ে খেলতে ব্যস্ত। সাদমান বসলো বাচ্চা টাকে নিয়ে দোলনায়। কিছুক্ষণ পর এক ভরাট কন্ঠ শুনতে পেলো সাদমান।
-“ নওরিন তুমি এখানে৷ তোমাকে যে পাপা খুঁজছে মা। এদিকে আসছো কেনো?
সাদমান মাথা তুলে তাকালো। স্যুট পরিহিত এক লোক। অতি সুদর্শন বলা চলে। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। এগিয়ে এসে বাচ্চা টাকে কোলে নিয়ে বলল-
-“ সরি মিস্টার। বিরক্ত করে নি তো নওরিন আপনায়?
সাদমান মুচকি হেঁসে বলল-
-“ না না বিরক্ত করে নি। ভীষণ মিষ্টি বাচ্চা টা। তবে খেয়াল রাখা উচিত। বাচ্চা তো হারিয়ে যাবে।
-“ পাশেই বসিয়েছিলাম চেয়ারে। কখন যে দুষ্ট মেয়েটা চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে আসলো বুঝতেই পারি নি৷ থ্যাংকস আপনাকে মিস্টার..
-“ সাদমান।
-“ থ্যাংকস মিস্টার সাদমান। আমি নওফিল। আর এটা আমার মেয়ে নওরিন।

সাদমান চমকালো নওফিল নাম টা শুনে। ঐ নওফিল এখানে আসবেই বা কি করে। এই নামে তো অনেক মানুষই থাকে।
-“ আসছি৷ মাম্মা আঙ্কেল কে টাটা দাও।
নওরিন হাত নাড়িয়ে বলল-
-“ তাতা আঙ্কেল।
নওফিল চলে গেলো মেয়েকে নিয়ে৷ সাদমান ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে আসলো।

#চলবে?