গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব-৩৮+৩৯

0
347

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_আটত্রিশ

মেরুন রঙের গর্জিয়াস লেহেঙ্গা’র সাথে ম্যাচিং গহনা। চুলের সামনের দিকে স্টাইল করে বাঁধা আর পেছনের সব খোলা চুল। মাথায় মেরুন রঙের ব্রাইডাল-ওড়না। ফাইজা’র সৌন্দর্যের বর্ননা দেওয়ার ভাষা নেই হয়তো। কল্পনার চাইতে বেশি সুন্দর আর কিছু হতে পারেনা। কল্পনা বাস্তবতার চাইতেও ভয়ানক সুন্দর। ফারদিন আজ মেরুন রঙের শেরওয়ানি সাথে মেরুন করে পাগরি পড়েছে। শেরওয়ানির সাথে সানগ্লাস’টা বুকে ঝুলানো। হাতে কালো কালো ঘড়ি। আর মুখে সেই বিখ্যাত হাসি। জেহের আজ পড়েছে লাল শেরওয়ানি, পাগরি পড়েছে। হাতে ফারদিনের মতো সেম ঘড়ি। আরজা আজ লাল লেহেঙা আর সাথে ম্যাচিং গহনা পড়েছে। আরজা’র চুল গুলো সুন্দর করে খোঁপা করে সাদা রঙের গাজরা ফুল লাগানো। সব থেকে বেশি অবাক করার বিষয় আজ আরজা’র যেখানে অবাক হওয়ার কথা সেখানে আরজা আর অবাক না হয়ে সবার সাথে নেচে বেড়াচ্ছে৷ সাজানো হতে’ই ফোন নিয়ে বিভিন্ন স্টাইলে ছবি তুলে নিলো। মাঝে ফাইজা’র সাথেও কয়েক’টা ছবি তুলে নিলো। ফাইজা অবাক হয়ে তাঁকিয়ে আছে আরজা’র দিকে। পার্লারের লোকেরা চলে যেতে’ই ফাইজা আর কৌতূহল ধরে রাখতে না পেরে আরজা’র সামনে দাড়িয়ে অবাক স্বরে জিজ্ঞেস করে উঠলো……

–আজ তোর অবাক লাগছে না এইসবে? আজ তুই একবার ও প্রশ্ন করলি না তো তোকে কেনো বউ সাজানো হলো?

ফাইজার কথা শুনে আরজা মুখ টিপে হাসতে লাগলো। তা দেখে ফাইজা আরো বেশি অবাক হলো। এই মেয়ের হয়েছে কি? ফাইজা এইবার কিছু’টা ধমকের স্বরে বললো…..

–হেয়া’লি করবি না একদম। কি হয়েছে তোর বল?

আরজা উওর না দিয়ে ফাইজা’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে খুশিতে মেতে উঠে বলে উঠলো….

–এতদিন আমরা দুইজন বেস্টু ছিলাম। আর আজ থেকে ননদ-ভাবী।

আরজা’র কথা শুনে ফাইজা এইবার অবাকের শেষ সীমানায় পৌঁছে গেলো। আরজা সব’টা কি করে জানলো? কে বলেছে? এইসব প্রশ্ন মুহূর্তে’ই মাথায় উঁকি দিতে লাগলো। আরজা ফাইজা’কে ছেড়ে ঘুরে ঘুরে নাচতে নাচতে বলে উঠলো…..

–আজ আমার বিয়ে আর আমি যদি না নাঁচি তাহলে কি হয়? আয় আমার সাথে তুই ও নাঁচবি?

বলে ফাইজা’র হাত ধরে ঘুরতে লাগলো। আর ফাইজা “থম” মে’রে আছে। আরজা’র এত খুশি তো হওয়ার কথা ছিলোনা। অন্য কিছু ঘটবে না তো। মনের মধ্যে কেনো যেনো খটকা লাগতে শুরু করলো ফাইজা। তাই আরজা’কে থামিয়ে ওর দুই বাহু’তে ধরে কিছু’টা রাগ মিশ্রিত গলায় বললো…..

–তুই কি আমার সাথে মজা করছিস। দেখ আরজু আজকের দিনে অন্তত আমার সাথে অন্তত……

ফাইজা এইটুকু বলতে’ই আরজা শব্দ করে হেসে দিলো। আরজা’কে হাসতে দেখে ফাইজা বিস্মিত হয়ে আছে। আরজা হাসতে হাসতে ফাইজা’র নাক টেনে বলে উঠলো…..

–সারপ্রাইজ কি তোরা দুই ভাই-বোনে’ই দিতে পারস। আমি বুঝি পারি’না……

বলে চোখ টিপ মা’রলো। ফাইজা আরজার কথার একটা শব্দ ও বুঝে উঠতে পারছেনা। আরজা এইবার সব খুলে বললো ফাইজা’কে। আসলে মেহেন্দীর দিন যখন জেহের সবার সামনে নিজের বিয়ের এনাউন্সমেন্ট করলো। সেদিন আরজা’র কষ্ট’টা হয়তো সবাই বুঝতে পেরেও চুপ ছিলো বিয়ের দিনের অপেক্ষা। শুধুমাত্র একজন বাদে। সেই একজন হলো ফারদিন। সেদিন রাতে’ই ফারদিন আরজা’কে সব সত্যি’টা বলে দিয়েছিলো। আর সব শুনে আরজা’ খুশিতে সেদিন সারা রাত কান্না করেছিলো সবার চোখের আড়ালে। আর সেদিন রাতে ফারদিন আর আরজা মিলে উল্টো ওদের সবাই’কে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য প্লান করে। আরজা সব জেনেও না জানার ভান করে এতদিন কষ্ট পাওয়ার অভিনয় করে গেছে। যাতে সবাই বুঝে আরজা কত’টা কষ্টে আছে। কিন্তু আরজা’র কষ্টের পেছনে লুঁকিয়ে থাকা খুশি’টা কেউ দেখে’নি। সব শুনে ফাইজা মাথায় হাত দিয়ে খাটের উপর ধপ করে বসে পড়লো। একটা মানুষ এমন অভিনয় কিভাবে করতে পারে? ভেবেই ফাইজা ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে। আর আরজা ওর সামনে দাড়িয়ে বত্রিশ পাটি খুলে হাসচ্ছে। হাসতে হাসতে আরজা ভাব নিয়ে বললো…..

–কি ননদিনী। ভাবীর অভিনয় কেমন লাগলো বলো তো?

ফাইজা উওরে কি বলবে খুঁজে পেলো না। আরজা’র খুশি দেখে নিজের ভেতরের জমে থাকা অপরাধবোধ নিমিশেই কেটে গেলো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আরজা’কে। শান্ত কন্ঠে’ই বলে উঠলো……

–তোকে অভিনয়ে আমি একশো’র মধ্যে এক হাজার দিব….

বলে কেঁদে দিলো। ফাইজা’কে কান্না করতে দেখে আরজা টিস্যু দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিতে দিতে রাগী স্বরে বলে উঠলো…..

–এই এই একদম চোখের পানি ফেলবি না। খবর দার। সব মেকাপ ধুয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। কি ভেবেছিস তোর কান্না দেখে আমিও কান্না করে দিব। কাবি নেহি। আমার এত সুন্দর মেকাপ নষ্ট হয়ে যাবে তখন আমাকে দেখতে শেওড়া গাছের পে’ত্নী লাগবে। আর তখন আমার এক মাত্র জামাই’টা আমাকে দেখে দৌড়ে পালাবে। ইহা আমি কিছুতেই সহ্য করিবার পারিব না ননদিনী…….

অনেক অভিনয় করে এই কথাগুলো বলে উঠলো আরজা। আরজা’র অভিনয় দেখে ফাইজা না হেসে থাকতে পারলো না। পূর্নরায় আরজা’কে জড়িয়ে ধরে হেসে দিলো। এর মধ্যে’ই তনুজা আর আরজা’র মা দুজনে তাড়া দিতে দিতে রুমে ঢুকলো। রুমে ঢুঁকে’ই আরজা আর ফাইজা’কে দেখে উনারা দুজন ও অবাক হয়ে গেলো। ফাইজা উনাদের সব’টা বললো। আরজা’র মা আর তনুজা দুজনেই আরজা’কে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। আরজা’র মা’য়ের ও বুকের থেকে একটা পাথর নেমে গেলো। মেয়ে’টাকে কষ্ট পেতে দেখে নিজেই কষ্ট পাচ্ছিলো। এখন মেয়ে’টাকে হাসি-খুশি দেখে খুশিতে উনার চোখে পানি চলে এলো। আরজা’ কিছুক্ষন মা’কে জড়িয়ে ধরে রাখলো শক্ত করে। একদিকে ভালোবাসার মানুষ’টাকে নিজের করে পাওয়া আরেকদিকে বাবা-মাকে ছেড়ে দূরে আসা। একদিকে খুশি আরেকদিনে দুঃখ। দুইটার মাঝে রয়েছে আরজা। আরজা’র মাকে জড়িয়ে ধরা দেখে ফাইজা’র নিজের বাবা-মায়ের কথা মনে উঠলো। মুহূতে’ই চোখ বেয়ে নেমে আসলো অশ্রধারা। তনুজা ফাইজা’র দিকে খেয়াল করে ও’কে দুই হাতে আকড়ে ধরে বলে উঠলো…..

–আজকের এই খুশির দিনে একদম চোখের পানি ফেলবিনা। মনে করবি তোর সাথেই তোর মা-বাবা রয়েছে। ওরা দূর থেকে তোকে দেখছে। তুই খুশি আছিস দেখে ওরা ও খুশি থাকবে। তাই একদম চোখের পানি ফেলবি না। আমি আছি তো তোর পাশে সারাজীবন……

তনুজা’র কথা শুনে ফাইজা’ কান্না রত স্বরে বলে উঠলো….

–তুমি আছো বলে’ই আমি খুব তাড়াতাড়ি সব’টা মানিয়ে নিতে পেরেছি মনি। তুমি তো আমার দ্বিতীয় মা…..

এইটুকু বলে ফুঁপিয়ে কান্না করে দিলো। পরিস্থিতি সামলানোর জন্য আরজা জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো….

–শোনো শোনো শোনো সবাই….

আরজা’র চেঁচানো শুনে ফাইজা চোখের পানি টুকু মুছে নিয়ে ওর পিঠে একটা থা’প্প’ড় মে’রে বলে উঠলো….

–চেঁচাচ্ছিস কেনো?

আরজা এইবার একটা মেঁকি হাসি দিয়ে বললো….

–এতদিন তোমার ভাই আমাকে কষ্ট দিয়েছে। তাই এখন তোমার ভাই’কে কি শাস্তি দেওয়া যায় বলো তো ননদিনী……

আরজার কথা শুনে তনুজা আর আরজার মা দুজনে হেসে দিলো। আর ফাইজা কপট রাগ দেখিয়ে বললো….

–একদম আমার ভাই তোকে কষ্ট দেয়’নি বরং তুই কষ্ট পাচ্ছিস বলে আমার ভাই নিজে তোর থেকে দ্বিগুন কষ্ট পেয়েছে। তাই নো শাস্তি…..

আরজা ও কিছুটা ভাবলো। তারপর বললো….

–শাস্তি তো আমি দিব’ই। যদি আমার একমাত্র জিজু আমাকে সত্যি’টা না বলতো। তাহলে,তো আমি কষ্ট পেতাম তাইনা। তার শাস্তি’টা বরং আমি নিজে নিজে ঠিক করি। এখন চলো আমি বিয়ে করব তো দেরি হয়ে যাচ্ছে…..

বলে ফাইজা’র হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো একা একা’ই। তা দেখে তনুজা আর আরজা’র মা হেসে উঠলো।
____________________________________________
“Mujhe sajan ke ghar jana hai”

গান’টা হঠাৎ সাউন্ড বক্সে উচ্চ ভলিউমে বেজে উঠতে’ই ফারদিন আর জেহের দুজনে’ই হকচকিয়ে উঠলো। সবার হাত তালি শুনে সিড়ির দিকে নজর দিতে’ই দুজনে থমকে গেলো। চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো দুজনের। এক মুহূর্তে’র জন্য অন্য রাজ্যে চলে গেলো। সিড়ি দিয়ে আরজা আর ফাইজা দুজনে “mujhe sajan ke ghar jana hai” গান’টায় নাঁচতে নাঁচতে সিড়ি দিয়ে নামছে। ফারদিন আর জেহের দুজনে বোকার মতো হা করে তাঁকিয়ে আছে সেদিকে। ওদের চোখের পাতা পড়ছেনা। আরজা আর ফাইজা দুজনে পুরো’টা গানে খুব সুন্দর করে নাঁচ শেষ করলো। গান’টা শেষ হতে’ই ওরা দুজন ঘুরে ফারদিন আর জেহেরে’র সামনে এসে দাড়ালো। আরজা আর ফাইজা দুজনে একবার চোখাচোখি করলো। তারপর দুজনে’ই একসাথে আরজা জেহের’কে আর ফাইজা ফারদিন’কে হাতের তালু’তে ফ্লাইয়িং কিস ছুড়ে দিতে’ই ফারদিন আর জেহের একসাথে বুকের বা পাশে হাত রেখে……

–হ্যায় মা’রডালা…..

বলে পড়ে যেতে নিলে পেছনে ওদের ফ্রেন্ড সার্কেল যারা ছিলো সবাই ধরে ফেললো। তারপর পুরো বিয়ের আসরে হাসির রোল পড়ে গেলো।

#চলবে

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_উনচল্লিশ

বিয়ে শুরু হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে জেহের আরজা’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। উপস্থিত সবাই এক সাথে করোতালি দিয়ে উঠলো। এতক্ষন আরজা’কে খুশি দেখে জেহের অবাক হলে ফাইজা সব’টা বুঝিয়ে বলে। সব’টা শুনে জেহের মনে মনে একটা স্বস্তি পেলো। বিয়ে’টা রীতিমতো শুরু হলো। ফারদিন’কে কবুল বলতে বলা হলে ফারদিন ফাইজা’র দিকে তাঁকিয়ে একদমে তিন’বার কবুল বলে ফেলে। তা দেখে সবাই হাসি’তে ফেটে পড়ে। জেহের’কে কবুল বলতে বলা হলে জেহের ধীরে সুস্থে তিন’বার কবুল বললো আর আরজা ঠিক তার উল্টো ফারদিনের মতো আরজাও একনাগাড়ে তিন’বার কবুল বলে লাজুক হাসতে লাগলো। মেয়ে’টা পারেও বটে। সমস্ত নিয়ম মেনে বিয়ে’টা শেষ হলো। ফারদিন আর জেহের ফ্রেন্ড সার্কেল মিলে ওদের বাসর ঘর আগে’ই সাজিয়ে রেখেছিলো। সব অতিথি’রা চলে যেতে ফ্রেন্ড’দের সাথে ফারদিন আর জেহের সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে’ই ফাইজা আর আরজা দুজনে’ই সিড়ির সামনে বুকে হাত গুঁজে রাস্তা আটকে দাড়িয়ে পড়লো। ওদের দুজনের চোখে কালো সানগ্লাস পড়া। মুখে রয়েছে দুষ্টুমি হাসি। তা দেখেই ফারদিন আর জেহের বুঝে গেছে এদের মাথায় নিশ্চয়ই অন্য কিছু ঘুরছে। ফারদিন স্টাইল করে বুকের থেকে সানগ্লাস’টা নিয়ে ফুঁ দিয়ে চোখে পড়তে পড়তে বললো……

—আপনারা যদি একটু সরে দাড়াতেন তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। আসলে আমাদের নতুন বউ’য়েরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে…..
,
বলে জেহেরের দিকে তাঁকিয়ে সানগ্লাস’টা নাকের ডগায় এনে জেহের’কে ইশারা করতে জেহের ও বাঁকা হেসে ওর সানগ্লাস’টা পড়ে নিলো। তারপর জেহের আরজা’কে আর ফারদিন ফাইজা’কে ধাক্কা দিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলো…..

—সাইড প্লিজ…..

বলে ওরা দুজন স্টাইল মে’রে হেটে দুজন দুজনের রুমে’র দিকে এগিয়ে গেলো। আরজা আর ফাইজা হা করে কিছুক্ষন বোকার মতো তাঁকিয়ে থেকে দুজনেই এক সাথে চিৎকার করে উঠলো…..

—স্টপ……

ওদের চিৎকার শুনে ফারদিন্নার জেহের দুজনে থেমে গেলো। ফাইজা আর আরজা এইবার রেগে ওদের সামনে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাড়ালো। ফাইজা’র সানগ্লাস’টা খুলে নিয়ে ফারদিনের দিকে একটু ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে কিছু একটা বললো। তা জেহেরের কান অব্দি পৌঁছালো না। এইবার ফারদিন নিজের রুপ পরিবর্তন করে জেহেরের দিকে তাঁকিয়ে বললো…..

–আপনি হচ্ছেন আমার বড় ভাই। ইয়ে মানে আপনাকে ছেড়ে আমি আগে কি করে যাই বলুন তো????

ফারদিনের কথা শুনে জেহের পুরো বোকা বনে গেলো। এই ছেলে তো গিরগিটির থেকেও খারাপ। মুহূর্তে’ই কেমন রুপ বদল করে নিলো। জেহের কিছু বলতে চেয়েও পারলো না তার আগেই আরজা জেহেরের হাত ধরে সুর টেনে বলে উঠলো….

–ওগো চলো না ঘরে যাই। ওরা আমাদের জন্য ওয়েট করছে তো??

আরজার কথা শুনে জেহের হা করে তাঁকিয়ে বলে উঠলো…..

–কারা অপেক্ষা করছে গো?

আরজা এইবার লাজুক হেসে বললো…..

-আমাদের জন্য ফুল দিয়ে সাজানো বিছানা…..

এইটুকু বলে লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গি’তে দুইহাতে মুখ ঢেকে নিলো। আর জেহের চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে আছে। এই মেয়ের কি লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই। সবার সামনে কিসব বলছে? জেহের তব্দা খেয়ে দাড়িয়ে আছে। ফারদিনবার ফাইজা মুখ টিপে টিপে হাসচ্ছে। আরজা সেকেন্ড কয়েক পরে মুখ থেকে হাত সরিয়ে জেহেরের হাত ধরে টেনে রুমের দিকে পা বাড়ালো। ফারদিন আর ফাইজা ওদের আগে যেয়ে দরজা আটকে দাড়ালো। ফাইজা দরজায় দাঁড়িয়ে জেহেরের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে উঠলো……

—বেশি না অনলি টেন থাউজ্যান্ড……

জেহের জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো….

–হোয়াট? এই তুই না আমার বোন তুই আমার সাথে এমন করতে পারছিস?

ফাইজা ভাব নিয়ে হাত দিয়ে বাতাস করতে করতে বলে উঠলো….

–উহু ব্রো আজ আমি আপনাকে আমি চিনিনা। আজ তো আমি আমার বেস্টুর জামাই এর পকেট খালি করার ধান্দায় নেমেছি…..

ফাইজার সাথে তালে তাল মিলিয়ে ফারদিন ও বলে উঠলো….

–আজ আমি আমার শা’লিকার জামাই এর পকেট খালি করার ধান্দায় নেমেছি…..

বলে একটু হাসলো। আর জেহের ওদের কান্ড দেখে হা করে তাঁকিয়ে আছে। এরা দুজন কত তাড়াতাড়ি রুপ বদল করতে পারে তা দেখছে। এইবার আরজা ও ওদের সাথে তাল মিলিয়ে বললো….

–আরে এত কমে কি হয়? দশ হাজার খুব কম হয়ে যায়। আমার বি’শ হাজার লাগবে…….

বলে আরজা ও জেহেরের দিকে হাত বাড়ালো। জেহের সবার কান্ড দেখে মাথায় হাত দিয়ে নিচেই বসে পড়লো। তারপর হতাশ কন্ঠে বলে উঠলো……

–তোরা আমাকে বাঁচতে দিলিনা….

আরজা এইবার ভেংচি কে’টে বললো….

–আহ ম’রন টাকাই তো চেয়েছি তোমার জান তো চাই’নি। বেশি ফটফট করে না করে টাকা দাও। আমার ঘুম পেয়েছে ঘুমাব। থাক তোমার দেওয়া লাগবে না আমিই নিচ্চি…

বলেই জেহের কে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে টান দিয়ে ওর পকেট থেকে ওয়ালেট’টা বের করে টাকা বের করলো। গুনে দেখলো পনেরো হাজার টাকা আছে। তা দেখে আরজা মুখ’টা অন্য রকম করে বললো…..

–থাক পাঁচ হাজার টাকা মাফ করলাম…..

বলে ফাইজা’র দিকে টাকা গুলো এগিয়ে দিয়ে বললো….

–ননদিনী এইবার আমার জামাই’টাকে ছেড়ে দাও…..

জেহের বসা থেকে উঠে আরজার চুলে টান দিয়ে বললো…

–এহহ আমাকে নিঃস্ব করে দিয়ে এখন আইছে দরদ দেখাতে। লাগবে না তোর দরদ আমার……

জেহেরের কথা শুনে ফাইজা আর ফারদিন সশব্দে হেসে উঠলো। আর আরজা জেহেরের গলা জড়িয়ে আদর মাখা কন্ঠে বললো…..

—আহ বাবু রাগ করছো কেনো? তোমার মানেই তো আমার। আমার মানেই তো তোমার। আসো একটা চু’মু খাই তোমাকে……

বলে জেহের’কে চু’মু খাওয়ার জন্য তৈরি হতে’ই ফারদিন ফাইজা’র চোখে হাত দিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো…….

—আমরা এখানে আছিইইইই……

ফাইজা চোখ ছাড়াতে ছাড়াতে বললো….

–আরে চোখ ছাড়ুন আমি একটু দেখব….

বলে চোখ ছাড়িয়ে নিলো। জেহের এইবার আরজা’কে সরিয়ে ফাইজা’র সামনে গিয়ে ওর মাথায় গাট্টি মে’রে বললো….

—স্টুপিড আমি তোর বড় ভাই। লজ্জা করেনা তোর এইসব বলতে…..

ফাইজা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরজা এগিয়ে এসে বললো…..

–কি বলছো? লজ্জা করবে কেন? বেস্টুর রোমান্স দেখবে এতে লজ্জার কি আছে? তাইনা ননদিনী…..

বলে দুজনেই একসাথে হেসে দুজন’কে জড়িয়ে ধরলো। ফারদিন ফাইজার হাত ধরে অধৈর্য কন্ঠে ফাইজা’র কানে কানে বলে উঠলো…..

–জান আমরা কি এখানে দাড়িয়ে অন্যের বাসর দেখব। তাহলে, আমাদের’টা কি হবে?

ফারদিনের কথা শুনে ফাইজার হাসি মুখ’টা চুপসে গেলো। ভয়ে ঢোক গিললো বার কয়েক। ফারদিন জেহের আর আরজার উদ্দেশ্যে বললো…..

–আপনারা রোমান্স করুন আমরা যাই….

বলে ফাইজা’র হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। আর ফাইজা যেতে যেতে জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো……

—অল দ্যা বেস্ট ভাবি আর ভাইয়া…..

ফাইজার কথায় আরজা লাজুক হাসলেও জেহের রাগান্বিত হয়ে “ঢং” বলে রুমে ঢুকে গেলো। আর আরজা এইবার আরো জোরে হেসে দিয়ে নিজে নিজেই বলে উঠলো….

–আজকে দেখো চান্দু তোমার কি হাল করি। আমাকে কষ্ট দেওয়ার ফল এইবার হাড়ে হাড়ে টের পাইবা তুমি……
____________________________________________
ফারদিনের রুমের সামনে এসেই ফাইজা নিজের হাত’টা ছাড়িয়ে নিয়ে দরজা আগলে দাড়িয়ে বলে উঠলো……

–ভাই আপনি ব্যবসায়ী একজন মানুষ। সাথে আবার কলেজের শিক্ষক। আপনার থেকে তো আমার পঞ্চাশ হাজার দাবি করা। আমি আবার খুব দয়ালু মানুষ তাই বেশিনা মাত্র পঁচিশ হাজার চাচ্ছি…..

ফাইজা’র কথা শুনে ফারদিন চোখ বড় বড় করলো। পরক্ষনেই মুখে দুষ্টু এঁকে চারদিকে নজর বুলালো। তারপর ফাইজা’কে চমকে দিয়ে ফাইজা’র ঠোঁট জোড়া নিজের করে নিলো। সেকেন্ড কয়েকপর ঠোঁট জোড়া ছেড়ে ফাইজা’র একদম কাছে ঝুঁকে বলে উঠলো….

–দিয়ে দিলাম তোমার পঁচিশ হাজার। কিছুক্ষন পর পঞ্চাশ হাজারের খালি ঘর’টা পূরণ করে দিব জান…..

ফাইজা’কে ঘেষে ফারদিন ভেতরে ঢুকে গেলো। এদিকে ফারদিনের কথা শুনে ফাইজা’র অটোমেটিক হেচকি উঠে গেছে……

#চলবে