#গোধূলী_আকাশ_লাজুক_লাজুক (পর্ব-১)
সিজন টু
মেহজার মন ভীষণ খারাপ। নতুন বাসায় এসেছে সবে মাত্র চারদিন। এরই মাঝে তার বাবা আনোয়ার হোসেন তার টিউশন ঠিক করে দিয়েছে। তাও আবার তাদের কলেজেরই ম্যামের কাছে। ইমা ম্যাম! কলেজের সবচেয়ে রাগী আর শক্ত শিক্ষিকা! তার ক্লাসে ছাত্রীদের সবসময় কড়া রুলস্ ফলো করতে হয়। সৌভাগ্যক্রমে মেহজাদের সেকশনে তিনি পড়েন নি তবে দূর্ভাগ্যক্রমে মেহজার টিউশনি করাবেন তিনি। মেহজার নিজের উপর রাগ লাগছে। ক্লাসে আরেকটু মনোযোগ দিলে কী হতো! একটু ভালো করে পড়লে এখন তার ফিজিক্সে ফেইল আসতো না! আর না পড়তে যেতে হতো ম্যামের কাছে। অবশ্য এখানেও একটা ব্যাপার আছে। ইমা ম্যামদের বাসা তাদেরই উপর তলায়। সেদিন সিঁড়িতে নাকি মেহজার বাবার সাথে তার দেখা হয়, নানান কথায় তার বাবা তার খারাপ ফলাফলের কথা জানান। তখনই তিনি বলেন মেহজাকে এই সাবজেক্টটা তিনি দেখিয়ে দিবেন। আর কোনো টাকা নিবেন না। এখানে তিনি কেবল ছাত্রী আর শিক্ষিকা সম্পর্ক দেখছেন না। এখানে প্রতিবেশীর আন্তরিকতার একটি ব্যাপারও আছে। আল প্রতিদিন পড়তে হবে না ম্যাম বলেছেন এই মাস পুরোটা তিনি এখানে আছেন অর্থাৎ তার বাবার বাসায়। তাই এই পুরোটা মাস তিনি মেহজাকে গাইড করবেন। এর পরে যখনিই আসবে টুকটাক পড়া দেখিয়ে দিবেন। মেহজার বাবা বাসায় এসে ইমা ম্যামের প্রশংসা করলেন খুব। অত্যন্ত ভদ্র, সুশীল মেয়ে ইমা ম্যাম। সবদিকে দিয়ে মেয়েটি ভালো। অবশ্য মেহজারও মনে হয় ঐ রাগী ভাবটা ছাড়া তিনি সবদিক দিয়েই ঠিক আছেন। তার সেকশনে ফিজিক্সে একজনও ফেইল করেনি। দারুন ব্যাপার!
মেহজা চা খাচ্ছে আয়েশ করে। তার মা সাবিনা সেই কখন থেকে চেঁচিয়ে যাচ্ছে সমান তালে। বলছেন,
-‘তার প্রাইভেট পাঁচটায় আর তিনি এখন সাঁড়ে পাঁচটায় বসেও চা খাচ্ছে। হায়রে! এমন চললে পড়ালেখা হবে? উন্নতি আর কী হবে! কলেজ আসা যাওয়া ছাড়া আর করে বা কী এই মেয়ে! এখনও বসে আছে! এই মেয়ে যাবে কখন?’
রাফসান সোফায় বসে টিভি দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে। তার কাছে মজা লাগে যখন সাবিনা বেগম মেহজাকে এমন ধুমধাম বকা দেন, কথা শোনান। সাবিনা বেগম চলে যেতেই সে সবসময়ের মতোন এবারও বলল,
-‘শরম শরম!’
মেহজা দাঁত কিড়মিড় করে তাকালো রাফসানের দিকে। এই ছেলেটাকে তার একটুও সহ্য হয়না। আস্ত বেয়াদব! এই বদমাইশ তার জন্মদিনটাতেও ভাগ বসিয়েছে। সে যেই তারিখে জন্ম গ্রহণ করেছে সেই তারিখে এই বিটলাও জন্মেছে তবে তিন বছর পরে। ধুর! এমনিতেই সারাদিন ইমা ম্যামের কথা চিন্তা করে কাহিল আর এখন মায়ের বকা সাথেই বদ রাফসানের গা জ্বালানো হাসি! উফফফ অসহ্য!
টেবিল থেকে নতুন একটি খাতা, কলম আর বড় বড় অক্ষরে লিখা পদার্থ বিজ্ঞান বইটি নিয়ে ছুটলো উপর তলায়। বের হওয়ার সময় কাউকে বলে বের হলো না। মনটা ভীষণ খারাপ। বকা খেয়ে আরো খারাপ। ইমা ম্যামের ধমকানিতে হয়তো হবে আরো বেশি খারাপ।
লিফটে বিশ সংখ্যায় চাপ দিলো যদিও সংখ্যায় বিশ তবে ফ্ল্যাট অনুযায়ী সেটা ঊনিশ। মেহজারা আঠারো তলায় ইমা ম্যামদের বাসা ঊনিশ তলায়।
মেহজা প্রথম এসেছে এই ফ্লোরে। এর আগে সোজা লিফটে ছাদে গিয়েছে। তবুও একবার। এই ফ্লোরে মেহজাদের মতো তিনটা বাসার দরজা নেই। এইখানে একটিই বড় দরজা। বাসা বাড়িতে যেমন বাড়িওয়ালাদের থাকে তেমন। তবে এখানে বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া নেই। যার যার নিজস্ব কেনা ফ্ল্যাট। কেউ কেউ নিজের মতো ডিজাইন করে নিয়েছে। বাবার মুখে শুনেছে এই ঊনিশ-বিশ, একুশ-বাইশ, তেইশ-চব্বিশ এই গুলো ডুপ্লেক্স। মেহজা এক দিক দিয়ে খুব চাইছিল এই ডুপ্লেক্স গুলো দেখবে। যদিও তার মন খারাপ পড়তে আসার জন্য তবে একটা ফিলিংস কাজ করছে ম্যামদের বাসাটা দেখার জন্যও।
কলিংবেল এক বার বাজানোর পর যখন খুলল না তখন মেহজা অনিচ্ছাকৃত ভাবে আরেকবার দিতে গেলেই দরজা খুলে যায়। বয়স্ক করে একটা মোটা সোটা এক মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন দরজার ওপাশে। পোশাক দেখেই বোঝা যাচ্ছেন বাসার কর্তৃ টাইপ কিছু! ইমা ম্যামের মা ও হতে পারেন। মেহজা চট করে সালাম দিলো,
-‘আসসালামু আলাইকুম আন্টি।’
-‘ওয়ালাইকুমুস সালাম। কে তুমি মামণি?’
ভদ্র মহিলার সুন্দর ডাকে মেহজা যেন গলে গেল। মৃদু হেসে বলল,
-‘আপনাদের নিচের ফ্লোরে আমাদের বাসা আন্টি। আমার নাম মেহজা। ইমা ম্যামের স্টুডেন্ট। ম্যাম আসতে বলেছিলেন।’
ইমার কথা শুনতেই তার মা মাহিমা বেগম পথ ছেড়ে দাঁড়ালেন। আফসোসের সুরে বললেন,
-‘আরে আরে! আমি তো ভুলেই গিয়েছি ওর একটা স্টুডেন্ট আসবে! দেখো কী কান্ড! তুমি আসো।’
মেহজা ভেতরে ঢুকল। একটু হেঁটে সামনে গেলেই পুরো ঘর দৃশ্যমাণ! দুই তলা বাড়ি। মনেই হচ্ছেনা পঁচিশ তলা একটি বিল্ডিংয়ের অংশ এই বাড়ি। একদম আলাদা একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি। কী সুন্দর সাজানো গোঁছানো। চারিদিক ঝকঝক করছে, চকচক করছে। চোখ ধাঁধানো সুন্দর। হোয়াইট, অফ হোয়াইট, ডার্ক রেড, বটল গ্রীণের ছোঁয়া এদিক সেদিক। মার্ভেল টাইলস্,বড় বড় ঝারবাতি, দামি ফার্ণিচার। এক অসাধারণ কম্বিনেশন! মেহজা কিছুক্ষণ শুধু চেয়ে থেকেই পেট ভরিয়ে নিল। তখনিই হাই হিলের খটখট শব্দ শুনতে পেল। কেউ সিঁড়ি ডিঙিয়ে নামছে। মেহজা তাঁকালো সেদিকে। এক অপরূপ সুন্দরী কন্যা নেমে আসছে। মার্জিত শাড়ি পরণে তার। চুল খোঁপা করে রাখা। হাতে থাকা ঘড়িতে চোখ বুলাচ্ছে বারবার। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তাড়াহুড়োয় আছে বেশ। মেহজা সেদিকেই এক পলক তাকিয়ে আছে। মেয়েটি হঠাৎ তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করল মেহজার পেছনে থাকা মাহিমা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-‘মা ইটস্ এন ইমার্জেন্সী। দশটার আগেই ফিরে আসছি ইন শা আল্লাহ্।’
-‘সাবধানে যাস। ফি আমানিল্লাহ্!’
মেয়েটি ব্যস্ত পায়েই হেঁটে চলে গেল। মেহজার সাথে সৌজন্যতার কথাও বলা হলো না। মাহিমা বেগম সেটা খেয়াল করে বললেন,
-‘ডাক্তার মানুষ। অনেক ব্যস্ত থাকে। হুটহাট ইমার্জেন্সী কল এসে যায়। তাই সময় পায়না কারো সাথে দু দন্ড বসে কথা বলার।’
মেহজার সেদিকে মাথা ব্যাথা নেই। সে তার সাথে কথা না বলায় কিছু মনে করেনি। ব্যস্ততা ছিল বলেই তো কথা বলতে পারেনি বোঝা যাচ্ছিল। তবে যখন শুনলো ডাক্তার তখন মেহজা বিষম খেল। বাবা আর মা যদি জানে এই বাসায় ডাক্তার আছে তবে আরো কথা শোনাবে। বলবে ‘দ্যাখ দ্যাখ! ঐ বাসায় সব শিক্ষিত লোকের বাস। আর তুই একটা অশিক্ষিত মানুষ। রাদিফটাও ইঞ্জিনিয়ার আর তুই! তুই হবি মেথর। গু সাফ করবি মানুষের বাসার। পড়ালেখার ধারে কাছেও তো যাস না। সারাক্ষণ শুধু মোবাইল, ফেসবুক আর টইটই করে ঘুরে বেড়ানো!’
মেহজাকে ভাবনায় মশগুল দেখে মাহিমা বেগম বললেন,
-‘আসো মা। ইমার রুম দেখিয়ে দেই।’
উপরের দুই তিনটা সিঁড়ি ভাঙতেই মহিলাটির বড় বড় শ্বাস পড়তে দেখে মেহজা বুঝল ইনি সচরাচর সিঁড়ি ডিঙিয়ে যাওয়া মানুষ নন। শারীরিক অক্ষমতা আছে। তার কষ্ট হচ্ছে দেখে মেহজা বলল,
-‘আন্টি আপনি কষ্ট করবেন না। আমাকে বলুন ম্যামের রুম কোনটা আমিই যাচ্ছি।’
মাহিমা বেগমের স্বস্তি এলো বোধ হয় তবে ইতস্তত করে বলল,
-‘পারবে তো? অনেক গুলো রুম আছে। চিনে যেতে পারলে সহজই।’
-‘হ্যাঁ আন্টি পারব। আপনি বলুন!’
-‘উপরের একদম কর্ণারের আগেরটা।’
-‘আচ্ছা আন্টি ধন্যবাদ।’
মেহজা মুহূর্তেই বড় বড় পা ফেলে উপরে চলে গেল। মাহিমা বেগম হাঁফ ছাড়লেন। মেয়েটা ভীষণ মিষ্টি। কথাও সুন্দর। বেশ ভালো লাগলো মেয়েটিকে।
মেহজা ভুলবেনা ভুলবেনা উত্তেজনায় ভুলেই বসেছে যে কোন রুম! শুধু মনে পড়ল কর্ণার। একদম শেষ কোণায় যে রুমটি! মেহজা গুড়িগুড়ি পায়ে সেদিকে গেল। দরজাটা হালকা খোলা। ভেতরে লাইট জ্বলছে। মেহজা দুইবার নক করল। সারা শব্দ পেল না। পরবর্তীতে দরজাটা আরেকটু মেলে এদিক ওদিক চোখ ফেলতেই দেখে বাম দিকে বড় একটি বিছানায় কেউ উপর হয়ে শুয়ে আছে। দুই হাত বালিশের উপর ছড়ানো। পেশিবহুল হাত আর সুঠাম চওড়া কাঁধ দেখে মেহজা চোখ বড় বড় করে ফেলল। গায়ে জামা নেই বলে ফর্সা উন্মুক্ত পিঠটা দেখা যাচ্ছে। একেবারে জামা নেই তা নয় কালো লং ট্রাউজার পরণে। এতটুকু দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীষণ লম্বা এবং সুঠাম দেহের অধিকারী এই লোক। মেহজা সরে এলো সেখান থেকে। তখনিই পাশের রুমের দরজা খোলার শব্দ শোনা গেল। মেহজা সেদিকে তাঁকাতেই দেখে ইমা দাঁড়িয়ে। মেহজার গলা শুকিয়ে গেল। নিশ্চয়ই এখন বকা দিবে! মেহজা সালাম দিল কাঁপা গলায়। ইমা সালামের জবাব দিয়ে বলল,
-‘ওখানে কী করছ? আর দরজায় নক করো নি কেন? কখন এসেছ?’
-‘ম্যাম মাত্রই এলাম। আসলে রুম গুলিয়ে ফেলেছি।’
-‘আচ্ছা প্রথম দিন বলে কিছু বললাম না। আগামীকাল থেকে যাতে এমন দেরিও না হয় রুম ভুলও না হয়। ঠিক আছে?’
-‘জ্বি ম্যাম।’
-‘ভেতরে এসো।’
মেহজা ভেতরে ঢুকল। এই রুমটিও সাজানো গোঁছানো পরিপাটি। বিছানায় ইমার দুই বছরের মেয়েটি ঘুমিয়ে আছে পরম শান্তিতে। মেহজার ও ইচ্ছা করছে এখন গিয়ে ওর পাশে এমন আরামে শুয়ে থাকতে। তবে তা আর হওয়ার নয়!
২.
টানা এক ঘন্টা বিশ মিনিট পড়ানোর পর মেহজাকে ইমা ছুটি দিল। এরই মাঝে মাহিমা বেগম কাজের লোক দিয়ে হরেক রকম খাবারও পাঠিয়েছেন। মেহজা শুধু দুইটা ব্রাউনি খেল। আর কিছু খেল না। এত কিছু পড়তে পড়তে তার পেটও ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল যে! ইমা অনেকগুলো পড়া দিয়েছে তারই সাথে বলেছে,
-‘আজ কম পড়ালাম কারণ দেরিতে এসেছ। কাল থেকে দুই ঘন্টা পড়াবো। কোনো ফাঁকিবাজি চলবেনা। আর হ্যাঁ হোমওয়ার্ক মাস্ট করবা নাহলে পানিশমেন্ট আছে।’
মেহজা এত বড় শক্ খেয়েছিল। এতক্ষণ এত পড়িয়েও বলে কীনা কম! আবার বলে হোমওয়ার্ক না করলে পানিশমেন্ট! সব দোষ এই বাসার। এখানে আসতো না তাহলে এই টিউশন ও থাকত না।
আসার সময় মাহিমা বেগমকে বলে আসলো মেহজা। তার মতে ইমা ম্যামের মা খুবই ভালো, অমায়িক এক মহিলা। তবে বাসায় আসতে আসতে আরেকটি কথাও ভাবল। তখনকার সেই লোক কে ছিল?
——————
আজ বুধবার। আইসিটি স্যারও আজ টিউশন পড়িয়েছিল। তাই আজ মেহজার আসতে আসতে পাঁচটা বিশের মতো বেজে গেল। লিফটে উঠতেই আরো কেউ একজন লিফটে ঢোকে। কড়া পারফিউমর ঘ্রাণে মেহজার চোখ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে এলো। আড়চোখে মেহজা তাকাতেই দেখে এক সুন্দর যুবা পুরুষ তার বামপাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সন্দর লম্বা, চওড়া চওড়া কাঁধ, পেটানো শরীরের এই পুরুষ নিঃসন্দেহে দেখতে আকর্ষণীয়। মেহজা চোখ ফিরিয়ে নিল বিশের সংখ্যায় চাপ দিতে গেলে লোকটিও সেখানেই চাপ দিল। মেহজা ভাবলো ভালো হলো। পরক্ষণেই মনে হলো এই লোক ইমা ম্যামদের ফ্লোরে কেন যাবে? মেহজার হঠাৎ করেই মনে পড়ল সেদিন ইমা ম্যামের পাশের রুমে দেখা উন্মুক্ত সেই পিঠ হাত সেই ঘুমন্ত মানুষ! লোকটি সেই লোক নয় তো! সেই লোকটিই বা কে ছিল? আজ তিন দিনেও সে জানতে পারল না। স্বাভাবিক ভাবেই বিশ তলায় উঠতে সময় লাগে একটু। এই এত সময়ে আড়চোখে অনেকবার সৌমদর্শন পুরুষটিকে সে দেখে নিল। তবে একটা জিনিস পছন্দ হলো না। এই লোকের ভীষণ ভাব। পাশে কেউ যে দাঁড়িয়ে আছে সেটা বোধ হয় জানেই না। একটু খেয়ালও করছেনা। মেহজাও তাই আর তাঁকালো না। ভাব সেও ধরতে জানে।
লিফট থামতেই মেহজা আগে নেমে আসে। লোকটিও পেছন পেছন এসে দাঁড়ায়। এবারও লোকটি আগে খলিংবেল দিল। রোজকার মতোন মাহিমা বেগম দরজা খুললেন। এটা বোধ হয় তার ডিউটি! তবে আজ দরজা খুলে মাহিমা বেগম ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুইজনকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করল কিছুক্ষণ। তারপর বলল,
-‘আজ এত দেরি কেন বাবু?’
মেহজা লোকটির দিকে তাকালো। এতক্ষণের কাঠিন্যু মুখে একটু অস্বস্তি দেখা গেল। মেহজার বুঝতে অসুবিধা হলো না। নিশ্চয়ই তার সামনে বাবু বলায় এমন চেহারা হয়ে গেছে। মেহজা কোনোমতে ঠোঁট টিপে হাসি আটকায়। মাহিমা বেগমকে সালাম দিয়ে ভেতরে চলে গেল। পেছনে দুই জন মানুষ তার দিকেই তাকিয়ে ছিল। তা সে তখন সামনে থাকা বিরাট আয়নায় দেখে ফেলে।
#চলবে।
#গোধূলী_আকাশ_লাজুক_লাজুক (পর্ব-২)
সিজন ২
লেখক— ইনশিয়াহ্ ইসলাম।
৩.
‘ম্যাম ওই যে সুন্দর দেখতে একজন লোক আছে আপনাদের বাড়িতে উনি কে?’
মেহজার কথায় ইমা ভ্রু কুঁচকে ফেলে। মেহজাকে কাঠকাঠ গলায় বলল,
-‘কে আবার! আমার বাবা!’
মেহজা বড় শড় শক্ খেল। আদৌ এমনটা হতে পারে? এত সুন্দর, জোয়ান পুরুষ ইমা ম্যামের বাবা? মেহজার বিশ্বাস করতে ভারী কষ্ট হলো। এই বুড়ো বয়সে এত সুদর্শন? মেহজা চোখ মুখ বাঁকিয়ে ফেলে। পরক্ষণেই মনে হলো তবে ম্যামের মা তো বাবু বলেছেন। মেহজা ইমাকে আবারও জিজ্ঞেস করল,
-‘এত ইয়াং বাবা? আমাদের বাবা খুব অল্ড। আপনারা তো আরো বড় বড় আপনাদের বাবার তো আরো বুড়ো হওয়ার কথা ছিল।’
-‘বাবাকে দেখলে বোঝা যায়না। তিনি রোজ নিয়ম করে হাঁটতে বের হোন। জীমেও যান মাঝে মধ্যে। খাবারও খুব ম্যাইনটেইন করে চলেন।’
মেহজা রীতিমত ভাষাহারা হয়ে পড়ছে! তবে তার বাবাও কী এমন রুটিনে চললে ইয়াং হবে? না না। এটা অসম্ভব। মেহজার মনে হচ্ছে ইমা ভুল বুঝছে। সে আর কিছু বলতে যাবে ইমা চোখ রাঙানি দিল। মেহজা পড়ায় মন দিলো তবে চোখ আর কান সেখানে থাকলেও মস্তিষ্কে শুধু ওই লোকটাই ঘুরছে। আস্ত জ্বালা!
আজকে মেহজাকে পাক্কা দুই ঘন্টা পড়ানো হলো। তার অবস্থা এখন এমন এই ফ্লোরেই বালিশ ছাড়া শুয়ে পড়বে। আর শরীরে কুলোচ্ছে না। সিঁড়ি বেয়ে নামতেই সেই লোকের সাথে আবার দেখা। মেহজার মন মানতেই চাইছেনা এই লোক ইমা ম্যামের বাবা! কী মুসিবত!
আনমনে নিচে নামতে নামতে হঠাৎই পা ফসকে পড়ে গেল! ধরাম করে তাও আবার লোকটার সামনেই। মেহজাকে পড়ে যেতে দেখে সে নিচের সিঁড়ি পার করে ছুটে এলো। হাত বাড়িয়ে দিলে মেহজা ধীরে সুস্থে তার হাত ধরে উঠে। তারপর সৌজন্যতার খাতিরে বলল,
-‘থ্যাঙ্কিউ আঙ্কেল।’
ইরফান তব্দা খেয়ে গেল। আঙ্কেল? সত্যিই আঙ্কেল বলল? মেয়েটা কলেজ পড়ুয়া তাই তার থেকে বেশ ছোট তা বোঝা যায়। তবে এতটাও ছোট নয় যে সে আঙ্কেল ডাকবে! তার বয়স বেশি হলে ঊনত্রিশ! ভাইয়া ডাকা যায়। আঙ্কেল কেন?
রাগে, বিরক্তিতে সে চলে গেল সোজা নিজের রুমে। মেহজা আকস্মিক ঠাস করে দরজা লাগানোর শব্দে চমকে ওঠে। তারপর আবার সারা বাসায় চোখ বুলিয়ে চলে যায় নিজের বাসায়।
৪.
কলেজে এখন প্রচুর পড়ার চাপ। সামনেই এইচ এসসি অনুষ্ঠিত হবে। তাই প্রস্তুতি মূলক পরীক্ষা, বাছাই করার জন্য টেস্ট পরীক্ষা ও হবে। এর মধ্যে ফেইল করলেই আর পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না। মেহজার জন্য এই টেস্ট খুবই চাপের। তার প্রস্তুতি সব বিষয়ে ভালো তবে ফিজিক্সে ফেইল করার পর থেকেই এই বিষয়ের প্রতি তার ভয় জন্মেছে। বুঝছে, করছে তবুও ভয় থেকেই যাচ্ছে। ইমা বলেছে ভয়ের কিছু নেই। সে পারবে, শুধু একটু নিজেকে যাচাই করে নিতে হবে। তাই আজ ইমা একটা টেস্ট নিবে এক ঘন্টার। মেহজার এতেও প্রচুর ভয়। সেই সকাল থেকে চারবার বাথরুমে গিয়েছে। টেনশনে সে বাথরুমে যায় বেশি।
পড়ার টেবিলে বসে বারবার নোট খাতায় চোখ বুলাচ্ছে। একবার মনে হচ্ছে পারবে আবার মনে হচ্ছে পারবেনা। এই অযথা চিন্তা গুলো তাকে বেশি অস্থির করে তুলছে। মেহজা তৈরি হয়ে নিল। তারপর রুম থেকে বের হতেই দেখে তার বড় ভাই রাদিফ সোফায় বসে ক্রিকেট ম্যাচ দেখছে। মেহজাকে দেখে বলল,
-‘খুঁকি কই যাস?’
-‘ইমা ম্যামের কাছে পড়তে যাই।’
-‘ওহ। ইরফান ভাইয়ের বোন না?’
-‘ইরফান কে?’
-‘চিনস না? উপর তলারই তো। তোর ইমা ম্যামের ছোট ভাই।’
-‘ওহ। দেখি নি আমি। শুধু ওনার বাবাকে দেখেছি।’
-‘আচ্ছা।’
-‘ভাইয়া? তোমার কী মনে হয় না ইমা ম্যামের বাবা খুব ইয়াং?’
-‘না। সেটা কেন মনে হবে?’
-‘আর ইউ সিরিয়াস? এত টল, হ্যান্ডসাম, গুড লুকিং একজন কারো বাবা? তাও আবার তাদের থেকেও ছোট লাগে দেখতে!’
-‘আরে যাহ। আঙ্কেল ও সুন্দর লম্বা চওড়া তাই বলে ইয়াং সেরকম না। আমি তো সকালেও দেখেছি। জগিং করে তো তাই একটু ফিট এমনটা মনে হয়েছে।’
-‘ম্যাম তো বলল ওনার বাবা।’
-‘কী জানি! তবে তোর বর্ণনা শুনে তো ইরফান ভাইয়ের কথা মাথায় এলো।’
-‘আচ্ছা বাদ দাও। আমি যাচ্ছি মা’কে বলবে আজ দেরি হবে। কারণ আমার টেস্ট আছে একটা।’
-‘আচ্ছা। ভালো করে দিস।’
-‘দোয়া করো।’
মেহজা চলে এলো। গুনগুনিয়ে গান গাইছে আর সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। গত দুইদিন সে সিঁড়ি দিয়েই উপরে যায়। ভালোই লাগে। দরজায় কলিংবেল দিল। খুলল তাদের কাজের মহিলা হাসনা। মেহজাকে দেখলেই মহিলাটি দাঁত কেলিয়ে রাখে। মেহজার একটু নয় খুবই বিরক্ত লাগে এই মহিলাকে। ইদানিং তাদের বাসায়ও এই মহিলার আনাগোনা চলে। যা মোটেও মেহজার পছন্দ না। কথা বার্তা গুলোও কেমন বাজে। এর গীবত ওর কাছে ওর টা এর কাছে। পুরো ফালতু মহিলা।
মেহজা লিভিং রুমের কাছে আসতেই মাহিমা বেগমের সাথে দেখা। তিনি চা’য়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন। মেহজাকে দেখে হাসলেন। বললেন,
-‘আজ তো একটা অন্যরকম ব্যাপার ঘটতে যাচ্ছে মেহজা।’
-‘কী ব্যাপার আন্টি?’
-‘তোমার ম্যাম তো বাসায় নেই। জরুরী ভিত্তিতে মানে তার শ্বশুরবাড়ির একটা ফাংশন এটেন্ড করতে গিয়েছে। তাই আজ তোমার..’
-‘বন্ধ?’ মেহজা উচ্ছাসিত গলায় বলল।
তবে মাহিমা বেগম হেসে দিলেন। বললেন,
-‘না না তা হবে কেন। তোমার নাকি কীসের টেস্ট নিবে। সেইটা আমার ছেলেকে বলেছে নিতে। প্রশ্ন করার সময়ও পায়নি। তাই ইয়াজ তোমাকে আজ গাইড করবে। সে ও বিজ্ঞান বিভাগের ছিল। খুব ভালো ছাত্র ছিল সে।’
-‘ইয়াজ কে?’
-‘ওমা! চিনো না? আমার ছেলে।’
-‘আসলে চিনি না আন্টি।’
মাহিমা বেগম মেহজার মুখের দিকে তাঁকিয়ে রইলেন। বললেন,
-‘সমস্যা নেই। আজ চিনে যাবে।’
মেহজার কেমন যেন লাগলো! ম্যামের ভাই এর কাছে পড়বে? না না এক্সাম দিবে? এটা কেমন না? ছুটি দিলে কী হতো! আর ম্যামের ভাই কয়টা? ইরফান, ইয়াজ! সব কয়টার নাম ‘ই’ দিয়ে। দারুন মিলিয়েছে।
মাহিমা বেগম বললেন,
-‘আসো আমি তোমাকে ইয়াজের স্টাডিরুম দেখিয়ে দেই।’
-‘উপরেই?’
-‘হ্যাঁ।’
-‘আন্টি তাহলে আপনি বসেন। কষ্ট করা লাগবেনা।’
-‘আরে কষ্ট কীসের? লিফট্ আছে তো।’
-‘লিফট্ আছে?’
-‘হ্যাঁ। এতদিন উঠিনাই কারণ লাইট সিস্টেম নষ্ট ছিল। এখন ঠিক করেছে। অন্ধকারে আমার দম বন্ধ লাগে বুঝছ!’
-‘জ্বি।’
মেহজার লিফট্ দেখে থ। লাক্সারিয়াস ভাইব আছে অনেক এই লিফট্ এ। যদিও বিল্ডিংয়ের কমন লিফট্ গুলোও অনেক উন্নত তবে এটা যেহেতু কারো পার্সোনাল তাই ডেকোরেশন টা ভিন্ন আর সাজানো চকচকে, ঝকঝকে।
সেদিনের সেই রুমের সামনে আসাতে মেহজার ভ্রু কুঁচকে এলো। এই রুমেই তো ওই লোকটা ছিল। যাকে সে ইমা ম্যামের বাবা বলে চিনেন। ভেতর থেকে লক করা ছিল না। নব ঘুরাতেই দরজা খুলে গেল। ভেতরে ঢুকেই মাহিমা বেগম হাঁক ছাড়লেন।
-‘ইয়াজ? বাবা!’
মেহজা ভড়কে গেল। বাবা? ম্যামের মায়েরও বাবা! এবার আর মেহজা বোকামি করল না। তার মস্তিষ্ক বলছে এই লোক ইমা ম্যামের বাবা নয় ভাই। তার বোঝানোতে ভুল হয়েছে নয়তো ইমা ম্যামের বুঝতে ভুল হয়েছে। ছিঃ ছিঃ সে কী ভাবলো আরো!
চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে ইরফান বেরিয়ে এলো। দেখে তার মা দাঁড়িয়ে আছে আর পাশেই সেদিনের সেই আঙ্কেল ডাকা মেয়েটি। ইরফান জানে এই মেয়েটিকে এখন তার গাইড করতে হবে। তাই সোজা স্ট্যান্ডে তোয়ালে রেখে স্টাডি রুমে ঢোকে। মাহিমা বেগমকে বলে,
-‘ভেতরে আসতে বলো মা।’
মেহজা এবার পুরোপুরি বুঝল পুরোটা সত্যিই ভুল বোঝাবুঝি ছিল। মেহজা মাহিমা বেগমের দিকে তাকালো। উনি চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করলেন। বললেন,
-‘যাও ভয় পেও না। আমার ছেলেটা খুব ভালো। অস্বস্তিবোধ করার কিছু নেই। আমি আসছি একটু পর। ঠিক আছে?’
-‘জ্বি আন্টি।’
মাহিমা বেগম চলে গেলেন। মেহজা মৃদু পায়ে সামনে আগায়। ভেতরে ঢুকতেই ইরফানের চোখে চোখ পড়ে। ইরফানের দৃষ্টি বোধ হয় নাড়িয়ে দিল মেহজাকে। তার ইচ্ছা করছিল ছুটে চলে যেতে। কেমন কেমন অনুভূতি হচ্ছে! ইরফান মেহজাকে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,
-‘দাঁড়িয়ে কেন? চেয়ারে বসো।’
মেহজা চেয়ারে বসে। ইরফানও সামনের চেয়ারে বসে। সামনা সামনি দু’জন! ইরফান বলল,
-‘পেপারস এনেছ নাকি দেওয়া লাগবে?’
-‘এনেছি।’
-‘সব ঠিকঠাক করে নাও। আমি কোশ্চেন রেডি করছি।’
মেহজার বইটি হাতে নিল ইরফান। প্রথম পৃষ্ঠা খুলতেই মেহজার নামটা বিড়বিড় করে পড়ল ‘মেহজা নাযাল’। ইরফান বলল,
-‘কোন টপিকের উপর?’
মেহজা দেখিয়ে দিল আঙুল দিয়ে। ইরফান দশ মিনিটের মধ্যেই প্রশ্ন সাজিয়ে ফেলে। কম্পিউটারে খুব দ্রুত টাইপিং করে প্রিন্টারে প্রশ্ন বের করে নেয়। গরম গরম কাগজটি দেখে মেহজা চোখমুখে খালি পাঁতিহাঁস দেখে। এটা প্রশ্ন? এত কঠিন? ইরফান বলল,
-‘কোনো সমস্যা?’
-‘জ্বি হ্যাঁ।’
-‘বলো কী সমস্যা।!’
-‘এসি বন্ধ করুন।’
-‘গরম লাগবে।’
-‘ফ্যান চালু করুন।’
-‘তোমার খোলা চুল উড়বে। পরে লিখতে ডিস্টার্ব করবে।’
-‘সমস্যা নেই। ক্লিপ এনেছি সাথে চুল বেধে নিব। এসির গন্ধ আমার সহ্য হয়না।’
ইরফান এসি বন্ধ করল। ফ্যান চালু করল, জানালার কাঁচ খুলে দিল। দমকা হাওয়া সব উলোট পালোট হওয়ার জোগাড়। মেহজার চুলটাই বেশি উড়ছে। সারা মুখে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাঝে অবস্থা। সে কোনো মতে চুল বেঁধে নিল। ইরফান সবটা দেখল। মেহজাকে বলল,
-‘এখন পরীক্ষা শুরু করা যাক?’
-‘জ্বি।’
মেহজা প্রশ্ন ভালো করে বুঝে উত্তর লিখছে। না প্রশ্ন কঠিন নয়। বুঝতে পারলে সবই সহজ। সে ধীরে সুস্থে ঠান্ডা মাথায় লিখছে। ইরফান ও একদম ভালো ভাবে গার্ড দিচ্ছে। মূলত সে মেহজার পড়া লেখার সিরিয়াস নেস কতটুকু তা বোঝার চেষ্টা করছে। মেহজার বুঝে শুনে লেখার ধরণ পরখ করে বুঝলো মেয়েটির মেধা আছে। এই সময় সে একটি কলও ধরেনি। কম করে হলেও সাত টা কল এসেছে তার ফোনে। সে মিউট করে রেখেছে। লেখা শেষ হতেই মেহজা চোখ তুলে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান নিজেই বলল,
-‘ডান?’
-‘জ্বি।’
ইরফান খাতা নিল। এতক্ষণ সে উত্তর গুলো দেখেছে। সে ভুল ধরেওছে। সবগুলো ম্যাথ সলভ্ হয়েছে ভালো। তবে একটা ব্যাপার আছে। মেহজার টু দুই এর মতো। এটা ঠিক করতে হবে।
-‘তোমার সব ঠিক আছে তবে টু আর দুই, দুইটা সংখ্যা গুলিয়ে ফেলো না। তোমার টু টা দুই হয়ে যাচ্ছে এ দিকে নজর দিবে একটু। আর তোমার নাম্বার তোমার ম্যামই দিবে। আমি খাতাটা রেখে দিচ্ছি।’
-‘আচ্ছা। তাহলে আমি আসি?’
-‘কোথায়?’
-‘ কোথায় আসবে?’
-‘না আমি বলছিলাম আমি যাই। বাসায় যাই?’
-‘যাও।’
মেহজা উঠতে নিলেই ইরফানের ঘড়িটা তার বইয়ের সাথে লেগে নিচে পড়ে যায়। ইরফানের খুব পছন্দের ঘড়ি। ইরফান আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ভেঙে গেল কীনা এই ভেবে। সে দ্রুত বসা থেকে উঠে মেহজার উপর দিয়েই নিচে তাঁকায়। তখন মেহজার গলার কাছটায় তার মুখ। ইরফানের পারফিউমের স্মেলে মেহজা কেমন দিশেহারা হয়ে যায়। ইরফান দেখল ঘড়িটা কার্পেটে পড়েছে। সে সরে আসে। মেহজাও উঠে আসে। নিচ থেকে ঘড়িটা তুলে দেয়। বলে,
-‘স্যরি ভাইয়া। আমি বুঝিনি এটা যে পড়ে যাবে।’
ইরফান ঘড়ি হাতে নিয়ে দেখে ঘড়ি ঠিক আছে। তারপর মেহজার দিকে তাকায়। ভ্রু কুঁচকে বলে,
-‘আগে ঠিক কর আমাকে ডাকবে কী? আঙ্কেল নাকি ভাইয়া?’
-‘জ্বি?’
-‘জ্বি জ্বি করছ কেন এত? ওইদিন আঙ্কেল ডাকলে আজ ডাকছ ভাইয়া? ব্যাপার কী!’
মেহজা থতমত খেয়ে যায়। বলে,
-‘স্যরি আসলে সেদিন ভুল হয়ে গেছিল।’
-‘এমন ভুল?’
-‘স্যরি আর হবে না।’
-‘আচ্ছা।’
মেহজা চলে যায়। পেছন থেকে ইরফান ডাকে,
-‘শোনো!’
-‘জ্বি?’
-‘এবার চুল খোলা রাখতেই পারো।’
-‘না না এখন আর..
-‘দেখতে ভালো লাগবে।’
মেহজার বুকটা কেমন কাঁমড় দিয়ে ওঠে। কী বলল? সুন্দর লাগবে! দেখতে ভালো লাগা মানে কী সুন্দর লাগা নয়! মেহজা ওই ছোট্টখানি হৃদয় নিয়ে কোনো রকমে ছুটে এলো। তার বুক কেমন কেমন করছে। অজানা সব অনুভূতি!
#চলবে।