চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব-১৯+২০

0
610

#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_১৯
#লেখনীতে_নন্দিনী_নীলা

পরদিন যখন আমরা সবাই চলে আসব। সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠতে যাব কিন্তু সকাল থেকে আমি জারাকে দেখতে পাচ্ছি না। আমি এদিক ওদিক উঁকি ঝুঁকি দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কোথাও নাই গাড়িতে উঠে গিয়ে উঠলাম না। জারার সাথে শেষ একটা দেখা না করে শান্তি লাগছে না। আমি গাড়িতে না উঠে আবার বাসার ভেতরে চলে গেলাম। আর সোজা জারার রুমে গেলাম। জারা বিছানার ওপর বসে কাঁদছিল। আমি বিস্মিত হয়ে জারার কাছে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম,

‘ জারা কি হয়েছে তোমার কাঁদছো কেন? সকাল থেকে তোমাকে খুঁজছি তুমি রুমের ভেতর বসে আছো কেন একা?’

জারা অশ্রুসিক্ত নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে আবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠলো। আর বলল,

‘ আমাকে স্পর্শ ভাইয়া দুইটা থাপ্পড় মেরেছে।’

আমি অবাক গলায় বললাম, ‘কেন?’

‘ জানি না শুধু বলেছে, ‘ এই বয়সে এতো উদ্দক্ত ভালো না।’

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। স্পর্শ হঠাৎ জারাকে মারলো কেন?

আমি চিন্তা ভাবনা করছি জারা আমাকে আবার বলল, ‘ তুমি তাই ভাইয়া কে সব বলে দিলে। আমার জানি তুমি সব বলেছো না হলে স্পর্শ ভাইয়া এসব জানলো কি করে আমি তাকে পছন্দ করি আর তোমাকে দেখতে পারিনা।’

আমি কপাল কুঁচকে বললাম, ‘ কি? আমি আবার কি বললাম। আমি তো আরো মিথ্যা বলে তোমাকে বাঁচিয়ে দিলাম।’

জারা চোখ মুছতে মুছতে বলল, ‘ আমাকে ক্ষমা করে দাও। স্পর্শ ভাইয়াকে আমায় বাবাকে এসব বলতে দিও না তাহলে আমি মরেই যাব। আমাকে আর মা কে খুব বকবে বাবা। আমি আর কখনো তোমার সাথে খারাপ বিহেভ করবো না। স্পর্শ ভাইয়াকে নিয়ে আর বাজে চিন্তা ও করবো না তিনি আমার ভাই ই‌’

‘ আরে শান্ত হ‌ও‌। আমি স্পর্শ কে বুঝাবো। তিনি আমার কথা শুনবে কিনা জানি না।’

‘ তোমাকে ভাইয়া খুব ভালোবাসে তোমার কথা শুনবে তুমি বাঁচাও আমাকে।’

‘ওকে চেষ্টা করবো। আমাকে আর হিংসা করবে না কিন্তু।’

‘ ওকে ভাবি।’

জারার মুখে ভাবি ডাক শুনে আমি তো চোখ দুটো বড় বড় করে ফেললাম।

‘এই দিনে ভাবি হয়ে গেলাম! বাব্বাহ!’

‘ কাল ভাইয়া বলে দিয়েছে। তোমাকে ভাবি সম্বোধন না করলে আমার খবর আছে। এতদিন যে আমি তোমার সাথে কথা বলিনি কি কারণে। ভাই ওসব ধরে ফেলেছে আমাকে খুব শাসন করেছে।’

‘ ভালোই তোমার মাথার ভূত তো নেমেছে।’

জারা মাথা নিচু করে রইল। আমি ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বেরিয়ে এলাম মনে মনে খুব হাসছে। কাল স্পর্শ ও কে থাপ্পর মেরেছে বকেছে আমি সব দেখেছি। স্পর্শ সব ধরে ফেলেছে টের ও পেয়েছি কিন্তু আমি তবু ও জারাকে দোষী করিনি নিজে থেকে বাঁচিয়েছি। আমি জানি তো স্পর্শ নিজেই সব ধরে ফেলবে আর যা করার নিজেই করবে। আমার বলার দরকার নাই।

গাড়িতে স্পর্শর পাশেই বসলাম। স্পর্শ আমাকে মিটিমিটি হাসতে দেখে ভ্রু কুটি করে জিজ্ঞেস করল,

‘ কি হয়েছে? একা একা হাসছো কেন?’

আমি হাসি মুখেই স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ এমনিই। আচ্ছা একটা কথা বলি?’

স্পর্শ বলল, ‘ কি কথা?’

আমি বললাম, ‘ আপনি কি আমাকে খুব বেশি ভালোবাসেন?’

স্পর্শ আমার কথা শুনে বিশ্মিত নয়নে তাকালো।

‘হঠাৎ এই কথা কেন?’

‘বলেন না!’

‘তুমি কি এতদিনে ও বুঝতে পারোনি?’

‘পেরেছি আবার পারিনি।’

‘ নিজে থেকে সবটা বুঝো। আমি আমার ভালোবাসাটা তোমাকে বোঝাতে পারবো না সেটা তোমাকে অনুভব করে বুঝে নিতে হবে।’

‘ তাও মুখে বলবেন না ভালোবাসি?’

‘ বললাম তো তুমি বুঝে নাও। মনের গহীনে কতটা ভালোবাসা লুকানো আছে তা বুঝিয়ে দিতে পারব না। বের করতে হবে তোমায় আমি আর প্রকাশ করতে পারব না। কাল ও কিন্তু তুমি আমাকে মিথ্যা কথা বলেছ আর যেটা আমি সবসময় অপছন্দ করি। সে কাজটা তুমি করেছ আমার থেকে অনেক কথা লুকিয়ে গেছে সহ্য করেছে একা একা।প্রথমে তোমাকে জানিয়ে দিয়েছিলাম সবকিছু আমার সাথে শেয়ার করবে সব কথা সবার আগে আমাকে জানাবে। কখনো মিথ্যে বলবে না কিন্তু সেই সবই তুমি করেছ। তবু কিন্তু আমি শান্ত আছি নিজেকে কন্ট্রোল রেখেছি।’

‘আমি একা সব সামলাতে পারবো ভেবে আপনাকে জানাই নি!আর আমি জানতাম আমার বলতে হয়না আমার সমস্ত সমস্যা সবকিছু আপনি ধরে ফেলবেন‌ই। আমি কিছু আপনার থেকে লুকাতে পারবো না সবকিছু আপনিই ধরে ফেলবেন‌ই। আমার বিশ্বাস তো সত্যি হলোই আমার না বলতেও আপনি সব জেনে গেলেন।’

‘ এতো কনফিডেন্স!’

‘হুম অনেক।’

স্পর্শ আমার কথায় হাসলো। আমি ও হাসলাম। রাস্তা পেরিয়ে আসতে গল্প ঘুম সব‌ই হলো। অনেকদিন পর নিজের বাড়ি ফিরে এসে স্বস্তি পেলাম। আসার আগে শশুর বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে এসেছি। ভাইয়া আর আপুরা চলে গেছে নিজেদের শশুর বাড়ি। আমি আব্বু আম্মু বাড়ি এসেছি।‌ অনেকদিন পর একটা শান্তির ঘুম দিলাম। কিন্তু স্পর্শ কে খুব বেশি মিস করলাম। এতো দিন লোকটার সাথে এক সাথে ছিলাম আজ তিনি আমার পাশে নাই কষ্ট তো হবেই। তাই মিসটাও বেশি করলাম। তবু ও কল করলাম না। ঘুম ভাঙলো স্পর্শের কলে।

‘হ্যালো আসসালামু আলাইকুম!’ ঘুম ঘুম কন্ঠে বললাম।

স্পর্শ বলল, ‘ওয়ালাইকুম আসসালাম। কি করতেছ? ঘুমিয়ে ছিলা?’

‘ হুম। আপনি কি করছেন?’

‘ কাজ করছি।’

‘এক জায়গা থেকে এসে কাজ শুরু করে দিয়েছেন আপনার ক্লান্ত লাগছে না?’

‘ নাহ। আমি এত সহজে ক্লান্ত হই না।’

‘ ওহ ভালো।’

‘ অনেক তো বেড়ানো হলো এবার একটু লেখাপড়া শুরু করো তোমার তো এক্সাম চলে এসেছে।’

‘সে তো দেরি আছে আরও কয়েকমাস মাস!’

‘চোখের নিমিষেই এই কয় মাস শেষ হয়ে যাবে। ঘুমানো বাদ দিয়ে বই খুলে বস। কাল থেকে তো কলেজ খোলা আসছো তো?’

‘ হুম আসবো। কিন্তু আমি এখন পরতে পারবো না। আমি এখন রেস্ট করবো।’

‘ পাক্কা তিন ঘন্টা ঘুমিয়েছো তাও তোমার রেস্ট করা হয় নাই? আরো করতে হবে! কেমন জার্নি করেছ! তোমাকে তো আর মাটি কাটতে নিয়ে যায় নাই ঘুরেছ, বেরিয়েছো তবু এত ক্লান্তি কোথা থেকে আসে।’

‘ কোথায় ভেবেছিলাম আপনি বোধহয় আমাকে মিস করছেন। তাই কল করছেন। কিছু আবেগ মাখা রোমান্টিক কথা বলবেন তা না ফোন করেই টিচার দের মত ধমকানো শুরু করে দিয়েছেন।’

‘ আমি তো তোমার টিচার ই।’

‘ টিচার হওয়ার আগে কিন্তু আপনি আমার বর। আগে হবু বর ছিলেন এখন শুধু হাজবেন্ড আমার তিন বার কবুল বলা হাজবেন্ড। আপনি আমাকে হাজবেন্ডের মত কেয়ার ভালোবাসার না দিয়ে বারবার টিচার দের মত শাসন করতে পারেন না।’

‘ এখন আমি তোমাকে টিচার হয়েই কল করেছি তাই আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলো‌।’

‘ ধুর দুনিয়ায় এত চাকরি থাকতে এই টিচার হওয়ার ভূত আপনাকে কে দিয়েছিল বলেন তো? আমার এমন সর্বনাশ কে করল আমি জানতে চাই।’

‘ আমি স্পর্শ কারো কথায় কান দেয় না নিজেই যা ভাল লাগে তাই করি। অবশ্যই এটা আমার‌ই সিদ্ধান্ত।’

‘আপনি নিজে আমার এত বড় সর্বনাশ করেছেন! আপনাকে আমি এর জন্য শাস্তি দিয়েই ছাড়বো হু।’

‘ ওকে দেখা যাবে তারাতাড়ি উঠে পড়ো বাই।’

রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে গেলাম।

.
পরদিন অনেক দিন পর কলেজে এসেছি।
কিন্তু এসেই মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেল। স্পর্শ একটা মেয়ের সাথে সারা কলেজ ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি আর মিষ্টি দু’জন কে আগাগোড়া দেখছি।

#চলবে….

#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_২০
#লেখনীতে_নন্দিনী_নীলা

স্পর্শ আমাদের ম্যাথ ক্লাস নেয়। কিন্তু আজকে স্পর্শের বদলে অন্য একজন আসলো। আমি শুধু স্পর্শের ক্লাসে আসার ওয়েট করছিলাম কিন্তু স্পর্শের বদলে আমাদের শাহরুখ স্যার কে আসতে দেখে আমার সমস্ত আশায় জল পড়ে গেল। আমি ঘাড় এলিয়ে দিলাম নিঝুম এর কাঁধে আর বললাম,

‘ দেখছিস উনি ক্লাসেও আসলো না ওই মেয়েটার সাথেই চিপকে আছে। আমার না হয় সংসার বুঝি হওয়ার আগেই ভেঙে গেল রে।’

আমার কথা শুনে মিষ্টি আর নিঝুম খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। আমি দুঃখি মুখ করে বসে আছি।
আমরা তিনজন নিজেদের আড্ডা দেওয়ায় এতোই মশগুল ছিলাম যে ক্লাসে স্যার আছে সেটা ভুলে গিয়েছি। আমরা স্যারকে ভুলে গেলেও স্যার আমাদের খেয়াল করতে বলেনি। তাইতো আমার দুঃখ প্রকাশ করার আগেই স্যারের ককর্শ আওয়াজ শুনে তিনজনকেই দাড়িয়ে পড়তে হলো।

‘ এই মেয়েরা তোমরা কি কথা বলছ? এতো কথা কিসের?’

আমরা তিনজন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। মিষ্টি আমার বাহুতে খোঁচা মেরে বলে,

‘ শয়তানি মাইয়া তোর জন্য এখন আমাদের না ক্লাস থেকে বের করে দেয়।’

‘ আমার এতো বড় সর্বনাশ হচ্ছে সেসব নিয়ে তোর চিন্তা নাই। তুই চিন্তা করছিস বের করে দেওয়া নিয়ে। ‘

‘ তোর কিছু হচ্ছে না। স্পর্শ স্যার এত খারাপ না সে তোকে যথেষ্ঠ ভালোবাসে তুই বিশ্বাস করছিস না কেন? ওই মেয়েটা তার পরিচিত কেউ হতে পারে হয়ত কলেজ ঘুরে দেখতে এসেছে।’

‘ হতেই পারে কিন্তু তিনি তো আমাকে এসব বিষয়ে কিছু জানালেন না।’

‘হয়তো তিনি ও কিছু জানতো না মেয়েটা এসে তাকে সারপ্রাইজ দিয়েছে।’

‘ওই মাইয়াটা কেন তাকে সারপ্রাইজ?’

‘তুই আসলেই একটা…

‘তোমরা আবার নিজেদের মধ্য গুজুরগুজুর করে যাচ্ছ দাঁড়িয়ে থেকেও! খুব বেয়াদব তো তোমরা তিনজন যাও বেরিয়ে যাও ক্লাস রুম থেকে। আমার ক্লাস চলাকালীন আর ক্লাসে আসবেনা।’রাগান্বিত স্বরে চিৎকার করে বলল স্যার।

আমরা তিনজনই ভয়ে চুপ মেরে গেলাম। নিচু স্বরে সরি স্যার বলতে লাগলাম। কিন্তু স্যারের মন নরম হলো না। তিনি খুব রেগে আছেন। তার এই ভয়ঙ্কর রাগ দেখে তিনজনেই সুড়সুড় করে বেরিয়ে গেলাম ক্লাস রুম থেকে।

তিনজনে ক্লাসের বাইরে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। ক্লাস গুল্লায় যাক।
আমিতো ক্লাস থেকে বেরিয়ে স্পর্শকের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখলাম। ওই মেয়েটার সাথে যাচ্ছে!
কোথায় যাচ্ছে?আমার কাছে তো ফোনও নাই এখন একটা ফোন থাকলে জিজ্ঞেস করতে পারতাম। মাঠে তিনজন গালে হাত দিয়ে বসে রইলাম তারপর স্যার ক্লাস থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত বাইরে বসে রইলাম। স্যার চলে যাওয়ার পর ক্লাসে গেলাম। আজকে আর স্পর্শ কলেজে আসলো না। মলিন মুখে আমার ক্লাস সম্পুর্ন করতে হলো।

সারা রাস্তা আসতে আসতে ভেবেছি বাসায় এসেই স্পর্শ কে কল করবো। কিন্তু বাড়ি এসে আর কল করতে পারলাম না। আমার ফোনে ব্যালেন্স নাই। আম্মুর ফোন দিয়ে ও দিতে পারছি না। লজ্জার একটা ব্যাপার আছে না।

রাতে স্পর্শ নিজেই আমাকে কল করলো।
আমি ফোন ধরতে যাওয়ার ফোন অফ হয়ে গেল। স্পর্শ কে কল করতে না পেরে খালি ফোন চালিয়েছি চার্জ কোথা দিয়ে শেষ হয়ে গেছে খেয়াল ই করিনি। মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেল‌। চার্জ বসিয়ে ফোন অপেন করলাম। কিন্তু স্পর্শের কল আসা বন্ধ হয়ে গেছে।রাতটা আমার যন্ত্রণায় ছটফট করে কাটাতে হলো স্পর্শের সাথে কথা বলা হলো না, রাগ দেখানো হলো না, অভিমান করা হলো না, অভিযোগ করা হলো না। এই এত এত মন খারাপ নিয়ে আমি ঘুমাতে ও পারলাম না। কিভাবে যে রাত পার করলাম শুধু আমি জানি।
পরদিন,
সকালবেলা আমার জন্য একটা চমক অপেক্ষা করছিল। আমি ঘুম থেকে উঠে চমকটা দেখতে পাই। স্পর্শ আমার পড়ার টেবিলে বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে পায়ের উপর পা তুলে। আমি চোখ বড়বড় করে স্পর্শর দিকে হা করে তাকিয়ে আছি ঘুম ঘুম চোখে।
তারপর ফট করে বিছানার উপর উঠে বসলাম আর চোখ কচলে কচলে দেখতে লাগলাম সত্যি স্পর্শ বসে আছে নাকি আমি ভুল দেখছি ঘুমের ঘোরে।

স্পর্শের আওয়াজ শুনতেই আমার ঘুমের রেশ কেটে গেল।

স্পর্শ গম্ভীর গলায় বলল, ‘ পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে আসো। এতো বেলা অব্দি কেউ ঘুমায়? লেখাপড়া, কলেজ কোন কিছুর চিন্তায় তো তোমার নাই দেখছি।’

আমি তারাতাড়ি ওরনা খুঁজে গায়ে জরিয়ে বিছানায় থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরলাম। আর তোতলানো গলায় বলতে লাগলাম,

‘ আ–প–নি? এখানে আসলেন কখন?’

স্পর্শ বলল, ‘ কলেজের আর আধা ঘন্টা সময় আছে। তাই তোমার প্রশ্নসব জমিয়ে রাখ। পরে উত্তর দেবো। আগে ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হও!’

‘ কিন্তু আপনি….

‘ কথা নয়। যাও!’

স্পর্শের মুখের উপর আর আমি কথা বলতে পারলাম না। স্পর্শের সামনে থেকে সরে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে কলেজ ড্রেস পরে রেডি হয়ে এলাম। স্পর্শের সামনে মুখে চোখে কিছু দিতেও পারলাম না। কোন রকম স্কাপ বেঁধে বললাম,

‘ চলুন। আমি রেডি!’

ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে স্পর্শের সামনে এসে দাড়িয়ে বললাম।

স্পর্শ উঠে বলল, ‘ না খেয়েই যাবে?’

আমি অভিমানী গলাতে বললাম, ‘ হ্যা আমার খিদে নেই।’

আমার কথা শুনে স্পর্শ আমার দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলল, ‘ মেয়েরা এতো ছিদ কাঁদুনি হতে পারে। একটুতেই কান্না এনে ঠেকায়।’

‘ আমি কাদলাম কোথায়?’ অবাক গলায় বললাম।

‘ সামনে কাঁদো নি কিন্তু মনে মনে কেঁদে ভাসাচ্ছো।’

‘ কখনোই না।’

স্পর্শ আমার গালে নিজের এক হাত ডুবিয়ে দিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল,

‘ তাই?’

আমি চোখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলাম। স্পর্শের চোখের দিকে তাকাতে পারবো না। তাহলে আমার চোখের জল দেখে ফেলবে।

স্পর্শ আমার মুখ ফিরিয়ে নেওয়া দেখে আরেক হাত দিকে নিজের দিকে টেনে নিলো। মুখ ঘুরানোর সুযোগ রাখলো না। আমি চোখ নিচের দিকে নামিয়ে রেখেছি। স্পর্শ আমার মুখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

‘ আমার চোখের দিকে তাকাও।’

আমি বললাম, ‘ নাহ। ছারুন। কলেজের লেট হয়ে যাচ্ছে।’

‘এতো অভিমানী কেন তুমি? আমার জীবন তো তোমার অভিমান ভাঙাতে ভাঙাতেই শেষ হয়ে যাবে।’

‘ ফালতু কথা কেন বলছেন? ছাড়ুন।’

‘ আবার অভিমান করেছো কেন? কাল ফোন ও ধরলে না আবার অফ করে রাখলে! সমস্যা কি?’

‘ দুইবার কল করেই তো কল করা অফ করে দিয়েছেন।’

‘ পাগল তুমি আমি সারা রাত তোমায় কল করেছি কিন্তু নাম্বার অফ ছিল। মেজাজ টা এতো খারাপ হয়েছিল মনে চাইছিল তখনি এখানে এসে পরি।’

‘ আমি নাম্বার অফ করিনি। আটটায় একবার কল দিয়েছিলেন। তখন আমার ফোনে চার্জ না থাকায় অফ হয়ে যায়। আমি চার্জ বসিয়ে আপনার কলের অপেক্ষা করছিলাম কিন্তু আপনি আর কল করেন নি। তারপর ফোন হাতে রেখেই ঘুমিয়ে পরেছি। কল আর আসেনি ওয়েট দেখাচ্ছি। ‘

আমি বিছানায় থেকে ফোন এনে দেখাতে গিয়ে দেখি ফোন সত্যি অফ। স্পর্শ রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ঢোক গিলে স্পর্শের দিকে তাকালাম।

‘কি হলো?’

‘ আমি সত্যি ইচ্ছে করে এটা করিনি। কীভাবে অফ হয়ে গেল? আমি নিজেই জানি না।’

‘ ওকে।’

স্পর্শ আমার থেকে সরে এসে হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে এলো।
আম্মু খাবার বেড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের জন্য। আমার দিকে স্পর্শ তাকিয়ে বলল,

‘ কিছু খাবে নাকি চলে যাবে?’

‘খাবো। আপনিও তো খাননি মনে হয়।’

‘ আমার চিন্তা করতে হবে না। তোমার কি ইচ্ছে তাই বলো।’

‘ খাব।’

আমি রাগ আর খাওয়ার উপর দেখাতে পারলাম না। কারণ আমি জানি আমি না খেলে স্পর্শ ও খাবে না। আর আম্মু যদি জানে আমার জন্য স্পর্শ না খেয়ে চলে যাবে তাহলে আমায় যে কি করবে তিনিই জানে।

কলেজ আসার পাঁচ মিনিট আগেই আমাকে নামিয়ে দিল গাড়ি থেকে তারপর বাকি রাস্তা পায়ে হেঁটে যেতে বলে গাড়ি নিয়ে চলে গেল স্পর্শ।

আমি দাঁত কিড়মিড় করে গাড়ির দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম। গাড়িটা চোখের আড়াল হতেই আমি রাস্তাতেই লাথি মেরে হাঁটতে লাগলাম।

#চলবে……