চিত্রার্পিত প্রেম পর্ব-১৯

0
6

#চিত্রার্পিত_প্রেম
#সুমেধা_সরকার
|| ঊনবিংশ পর্ব ||

[অনুমতি ছাড়া কপি করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ।]

রুশিতা কাঁদতে কাঁদতে শ্রাবণের বুকের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। অনেকক্ষণ পর শ্রাবণ রুশিতাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। তারপর নিজের ফোনটা নিয়ে কল করলো ইন্সপেক্টর রুদ্র চৌধুরীকে। পুরো ঘটনাটা রূদ্র চৌধুরী বললেন,

“কি করবে বলে ভাবছো তুমি শ্রাবণ? রে’পি’স্টটাকে তো ধরা প্রয়োজন। হাতের নাগালে প্রায় পেয়েই গিয়েছি ওকে আমরা।”

“হ্যাঁ স্যার, ওর মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাক করেই কিন্তু ওকে ধরা যাবে। আর আমার মনে একটা সন্দেহ এসেছে যে এটা কে হতে পারে। আপনি সাইবার ডিপার্টমেন্টকে দিয়ে লোকেশন ট্র্যাক করান।”

“বেশ। কিন্তু তোমার কি মনে হয় ও এতো কাঁচা কাজ করবে যাতে করে ওকে সহজেই ধরা যায়?”

“SB ফোনটা করেছে আক্রোশ থেকে। আর রাগের মাথায় মানুষ অতো ভাবনা চিন্তা করে কাজ করেনা, সে যত বড় সাইকোই হোক না কেন। যদি SB সঠিক ভাবে ভাবার অবস্থায় থাকতো তাহলে ও ফোনই করতো না। আমাদের এই ট্রাইটা নিতেই হবে।”

এরপর বিস্তারিত ভাবে রুদ্র চৌধুরীর সাথে আগামী কালের কার্যক্রম আলোচনা করে নিলো শ্রাবণ। সকাল থেকে কি কি করতে হবে সেই বিষয়ে একটা প্ল্যান তৈরী করে নিলো ওরা দুজন। রুদ্র চৌধুরী ফোর্স রেডি রাখার কথাও বললেন শ্রাবণকে। এরপর শ্রাবণ ফোনটা রেখে দিলো।

বিছানায় উঠে রুশিতার পাশে বসলো শ্রাবণ। রুশিতার ঘুমন্ত মুখটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ও। ঘুমন্ত অবস্থায় কি মায়াবী লাগছে মেয়েটাকে। এই সুন্দর, মিষ্টি বউটাই কিনা শ্রাবণের বউ! ভাবনাটা মাথায় আসতেই সামান্য হাসি পেলো শ্রাবণের। দিনদিন কি তবে ও রুশিতার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে? হলেই বা ক্ষতি কোথায়? নিজের বউয়ের প্রতি দুর্বল হওয়ার অধিকার প্রতিটা পুরুষেরই আছে।

শ্রাবণ রুশিতার মুখের উপর পরে থাকা এলোমেলো চুলগুলোকে সরিয়ে দিলো। মাথায় হাত বোলালো কিছুক্ষণের জন্য। তারপর, আচমকাই, ওষ্ঠ ছোঁয়ালো রুশিতার কপালে। এরপর বিড়বিড় করে বললো,

“পৃথিবীতে অন্য কোনো পুরুষের তোমাকে স্পর্শ করারও ক্ষমতা নেই, মিসেস রুশিতা মল্লিক। তুমি শ্রাবণের সম্পত্তি, আর নিজের সম্পত্তির যত্ন করতে শ্রাবণ মল্লিক জানে। তোমার দিকে কুনজর দেওয়া প্রতিটা চোখ উপড়ে ফেলার দায়িত্ব আমার, বুঝলে বউ?”

আরও একবার রুশিতার কপালে ওষ্ঠ ছোঁয়ালো শ্রাবণ। তারপর রুশিতার পাশেই শুয়ে পড়লো। আপাতত একটু ঘুমানো প্রয়োজন। কাল সকালটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। কাল হয়তো গোটা কলকাতাবাসীর জন্য একটা খুশির দিন হতে পারে।

___________________________

সকালে উঠেই শ্রাবণ প্রথমে রুশিতাকে কিছু বললো না। স্বাভাবিক ভাবে ব্রেকফাস্ট করলো ওরা। নিজের খাওয়া শেষ করে উঠে শ্রাবণ রুশিতার দিকে তাকিয়ে বললো,

“একবার ঘরে আসো তো রুশিতা।”

রুশিতা তাকালো শ্রাবণের দিকে। সকাল থেকেই ও চুপচাপ হয়ে আছে। কাল রাতের ঘটনাটা ওকে ভাবাচ্ছে এখনও। ও শ্রাবণের কথার প্রত্যুত্তরে শুধু সামান্য ঘাড় নাড়লো। তারপর উঠে শ্রাবণের পিছন পিছন ঘরে গেলো। শ্রাবণ বললো,

“তোমার কি মন খারাপ রুশিতা?”

“আমার ভয় করছে শ্রাবণ।”

“ভয় পেতে বারণ করেছি না? ভয় পাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। ওই জানোয়ারটাকে আজকেই ক্যাপচার করবো আমরা। তোমার চিন্তা করার কোনো প্রয়োজন নেই।”

“চিন্তা না করে আমি থাকতে পারছি না। কিন্তু তোমরা আজকেই ওকে ক্যাপচার করবে মানে? কিভাবে ধরবে ওকে?”

“সে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। ক্যাপচার করবো যখন বলেছি তখন করবোই। আপাতত তোমাকে আমি কিছু কথা বলবো, মন দিয়ে শুনবে। ঠিক আছে?”

“হ্যাঁ, বলো কি বলবে।”

“আজ এখন থেকে তুমি সারাদিন ঘরের মধ্যেই থাকবে। বারান্দায়ও বেরোবে না। আমি বাড়ি না ফেরা অবধি দরজা আটকে রাখবে। আমি বাড়ির সবাইকে বলে যাবো যেন কেউ তোমাকে না ডাকে। ঘরের বাইরে এক পাও রাখবে না তুমি।”

“আচ্ছা, সে নাহয় বেরোবো না। কিন্তু কেন?”

“কারণ আছে রুশিতা। আমি আপাতত তোমার নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি, বাড়ির ভিতরেও। সেই নিরাপত্তা ফিরিয়ে না আনা অবধি এটুকু কষ্ট তোমায় করতে হবে।”

তারপর শ্রাবণ রুশিতার দুটো হাত নিজের দুহাতের মধ্যে নিয়ে বললো,

“ওই SB- র চূড়ান্ততম শাস্তি আমি নিশ্চিত করবো রুশিতা। ওর ফাঁসি পুরো রাজ্যবাসী লাইভ দেখবে টিভির পর্দায়। এতগুলো মেয়ের ক্ষতি করেছে ও। ওকে আমরা ছাড়বো না। তুমি নিশ্চিত থাকো, আজকেই SB- র সমস্ত কুকর্মের শেষ দিন হবে, আই প্রমিস।”

দৃপ্ত কণ্ঠে কথাগুলো বললো শ্রাবণ। রুশিতা তাকিয়ে রইলো শ্রাবণের মুখের দিকে। এই প্রথম ওর গর্ববোধ হলো, একজন পুলিশ অফিসারের স্ত্রী হতে পেরে। আজ যদি শ্রাবণ SB কে ধরতে পারে, তবে এই গর্বটা নিশ্চিত ভাবে আরও বাড়বে।

___________________________

থানায় এসেই রুদ্র চৌধুরীর সাথে দেখা হয়ে গেলো শ্রাবণের। রুদ্র চৌধুরী জানালেন, কলার আইডির লোকেশন ট্র্যাক করে দক্ষিণ কলকাতার একটি ফ্ল্যাটের ঠিকানা পাওয়া গিয়েছে। শ্রাবণের ধারণা যদি ঠিক হয় তবে সেখানেই SB কে পাওয়া যাবে।

দশ জন পুলিশের একটা ফোর্স নিয়ে রওনা দিলো শ্রাবণরা। SB একজন সাইকো কিলার। এমনিতে হয়তো এতজন পুলিশের প্রয়োজন নেই, কিন্তু SB কে ধরতে গেলে এক্সট্রা সিকিউরিটি নিয়ে যাওয়াই সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে হলো ওদের। কারণ SB-র মতো সাইকোকে কোনো বিশ্বাস নেই, সে যেকোনো সময় যা কিছু করে ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে রিস্ক নেওয়ার কোনো মানেই হয়না।

পুলিশের জিপ নিয়ে খুব শীঘ্রই ওরা পৌঁছে গেলো নির্দিষ্ট ঠিকানায়। কিন্তু ফ্ল্যাট বাইরে থেকে তালাবন্ধ। এবার কি করণীয় ওদের? রুদ্র চৌধুরী সিনিয়র হয়েও এই কেসে শ্রাবণের উপর ভরসা করছেন। উনি শ্রাবণকে প্রশ্ন করলেন,

“এবার কি করবে? ফ্ল্যাট তো তালাবন্ধ।”

“আমাদের সাথে মাস্টার কি আনা হয়েছে না স্যার? ওটা দিয়ে তালা খোলার ব্যবস্থা করুন।”

“তাতে লাভ? SB তো ভিতরে নেই।”

“জানি স্যার, কিন্তু লাভ আছে। আপনারা ভিতরে যান, আমি একবার বাইরে থেকে আসছি।”

শ্রাবণ দ্রুত লিফটে করে নেমে বিল্ডিং-এর বাইরে চলে এলো। বিল্ডিং এর বাইরে একটা ছোট মুদিখানার দোকান আছে। শ্রাবণ সেই দোকানের দোকানিকে গিয়ে প্রশ্ন করলো,

“আচ্ছা, এই বিল্ডিং-এ মাঝে মাঝে একজন লোক আসেন? একা আসেন, লম্বা, সুদর্শন চেহারা, তবে দেখে মনে হয় বেশ রাগী?”

দোকানি কিছুক্ষণ ভাবলো। তারপর বললো,

“হ্যাঁ, আসেন তো। প্রত্যেক রোববার আসেন। আজকেও আসবেন। কেন স্যার, কি দরকার ওনার সাথে?”

“না কিছুনা, এমনিই জিজ্ঞাসা করলাম।”

শ্রাবণ আবার বিল্ডিংএর ভিতরে আসলো। ফ্ল্যাটের সামনে এসে দেখলো ততক্ষণে সবাই ভিতরে চলে গিয়েছে। শ্রাবণও ভিতরে ঢুকলো। রুদ্র চৌধুরী ব্যস্তভাবে পায়চারি করছেন। শ্রাবণকে দেখে তিনি বললেন,

“আমরা কি করব শ্রাবণ? অপেক্ষা করবো?”

“হ্যাঁ স্যার, আপাতত অপেক্ষাই করতে হবে। SB আসবে আমি জানি। কিন্তু কখন আসবে জানিনা। তাই এখন আমাদের ধৈর্য্য ধরে বসে থাকতে হবে।”

একজন পুলিশকে দিয়ে বাইরে থেকে তালা আবার বন্ধ করিয়ে শ্রাবণ নিচে পাঠিয়ে দিলো। তারপর দরজার সামনেই ওরা বসে রইলো। পনেরো মিনিট, আধঘন্টা, এক ঘন্টা, SB- র কোনো দেখা নেই। রুদ্র চৌধুরী বিরক্ত হচ্ছেন শ্রাবণের প্রতি। কি যে করছে ছেলেটা! এখন উনি ধৈর্য্যহারা হয়ে পড়ছেন ধীরে ধীরে।

ঠিক দেড় ঘন্টার মাথায় দরজায় সামান্য আওয়াজ হলো। সবাই রাইফেল তাক করে পজিশন নিয়ে নিলো। একটুক্ষন পরেই দরজা খুলে গেলো। সামনে এতজন পুলিশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থমকে গেলো আগন্তুক। আর শ্রাবণ, মুখে একটা হাসি ঝুলিয়ে রেখে রাইফেল তাক করেই বললো,

“ইয়োর গেম ইস ওভার। ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট SB, ওরফে মিস্টার সুপ্রতিম ব্যানার্জী!”

পরের ঘটনাগুলো ঘটলো খুব দ্রুত। SB পালানোর শেষ চেষ্টা করেছিল বটে, কিন্তু ওর পায়ের গোড়ালিতে শুট করা হয়। এরপর হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে আসা হলো সাইকো কিলার + রেপিস্ট SB – কে। মিডিয়া ডেকে সাংবাদিক সম্মেলনও সেড়ে ফেললো ওরা। সব শেষে শ্রাবণ রুশিতাকে কল করলো,

“SB কে আমরা ধরে ফেলেছি রুশিতা। আর তার আসল পরিচয়টা জানলে তোমার ছোটোখাটো একটা হার্ট অ্যাটাক হবেই, আই অ্যাম শিওর।”

চলবে…….