চোখের তারা তুই পর্ব-১৬

0
87

#চোখের_তারা_তুই
#লেখিকাঃতাইয়েবা_বিন_কেয়া
#পর্ব১৬

আঁধার হাসি দিয়ে ছাদে উঠে যায় কিন্তু নিরব স্যারকে দেখে অবাক হয়ে যায়। নিরব স্যার এখানে আসার পর থেকে স্যারকে দেখে নাই আঁধার সবাইকে জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু কেউ দেখে নাই। আঁধার জিজ্ঞেস করে

” স্যার আপনি এখানে। কোথায় ছিলেন আপনি স্যার। কালকে থেকে দেখা যাচ্ছে না আপনাকে “।

নিরব এতখন চুপচাপ আকাশ দেখছে বিয়ে বাড়িতে অনেক মানুষ রয়েছে কিন্তু সে চুপ করে রয়েছে। হঠাৎ কোনো পরিচিত মানুষের কণ্ঠ শুনে পিছনে ফিরে তাকায়। মনের নিরবতা হঠাৎ বিষণ্নতায় পরিনত হয়েছে। তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বলে

” ওহ তুমি আঁধার। তুমি ছাদে হঠাৎ “।

আঁধার একটু তাকিয়ে নিরবের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রতিদন যেই মানুষ হাসিখুশি থাকে আজ সে বিষণ্নতার সাগরে ডুবে রয়েছে। তার কারণ কি সেটা আঁধার জানে কিন্তু কিছু মন খারাপের কারণ থাকলেও তার সমাধার থাকে না।আঁধার হাসি দিয়ে বলে

” তেমন কিছু না স্যার আসলে সবাই বাহিরে অনেক মানুষ তাই ছাদে একটু সময় কাটাতে এসেছি। কিন্তু স্যার আপনাকে এরকম দেখাছে কেনো “।

নিরব হাসি দিয়ে বলে

” কেমন দেখাছে আমাকে। খুব খারাপ দেখতে আমি “।

” আরে না স্যার সেটা হবে কেনো। কিন্তু আপনি সবসময় অনেক পরিপাটি করে থাকেন আর আমার সাথে কথা বলেন কিন্তু আজ আপনি শান্ত। কোনো সমস্যা মানে অসুস্থ কি আপনি স্যার “।

নিরব শান্ত চোখে আঁধারের দিকে তাকিয়ে থাকে। আঁধার তুমি কি সত্যি বুঝতে পারো না আমার সব অসুখ তুমি। নিরব বলে

” এমন কিছু না সব ঠিক আছে। তুমি চিন্তা করবে না আমার কিছু হবে না। সো তুমি থাকো আমি যায় “।

নিরব স্যার চলে গেছে আঁধার একটু দাঁড়িয়ে আকাশ দেখতে থাকে।

ফারিশ সবার বকবক শুনে অনেক টায়ার্ড হয়ে যায় তাই ছাদে ঘুরতে আসে। কিন্তু নিরব আঁধারকে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখে ছাদে দাঁড়িয়ে যায়। ফারিশ কোনো কথা না বলে আঁধারের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকে।

আঁধার অনেক সময় আকাশ দেখছে কিন্তু পিছনে পরিচিত মানুষের গায়ের ঘ্রাণ পেয়ে যায়। আঁধার বলে

” আপনি এখানে কি করেন ফারিশ।কখন আসলেন “।

ফারিশ একটু অবাক হয় আঁধার কি করে জানলো সে এখানে আছে কারণ ফারিশ কোনাে শব্দ করে নাই তাহলে

“এখুনি এসেছি। কিন্তু আপনি কি করে জানলেন আমি এসেছি “।

আঁধার হেসে পিছনের দিকে তাকিয়ে বলে

” ফারিশ আপনার উপস্থিতি আমি বুঝতে পারি কারণ আপনার গায়ের ঘ্রাণের সাথে পরিচিত হয়ে গেছি। আর আপনি যেই পারফিউম ব্যবহার করেন সেটা আপনার পরিচিত “।

” আমি আপনার এতো পরিচিত হয়ে গেছি। তাহলে ছয়মাস পরে কি করে ছেড়ে চলে যাবেন পরিচিত মানুষকে “।

আঁধার বিষাদের সুর নিয়ে বলে

” হুম পরিচিত মানুষকে ছেড়ে যেতে কষ্ট হয়। কিন্তু পরিচিত মানুষ যদি না চাই আমি তার কাছে থাকি তাহলে কি করে থাকবো। আপনার কি মনে হয় পরিচিত মানুষ কি আমাকে রাখতে চাই “।

ফারিশ চুপ করে থাকে তার কাছে বলার মতো কিছু নাই। তবুও পরিস্থিতি ঠিক করতে বলে

“আচ্ছা আপনার বন্ধুরা কোথায়। যারা একটু আগে আমার রুমে এসেছিলো “।

আঁধার এবার একটু রেগে যায়। এই মেয়েদের খোঁজ করছে কোনো ফারিশ কোথাও ওদের মধ্যে কাউকে পছন্দ হয়ে গেছে সেইজন্য জিজ্ঞেস করছে।

” আমার বন্ধুরা কোথায় সেটা জেনে আপনি কি করবেন। ওদের সাথে কি কথা বলতে ইচ্ছা করছে ডেকে দিবো ওদের “।

” আরে না ওদের ডাকবেন না সবগুলো ফাযিল আমাকে বলে এমপি স্যার বিয়ের বয়স কতো। আপনার বিয়ের বয়স পার হয়ে গেছে তাহলেও আপনি বিয়ে করেন না কোনাে। এইসব কোনো কথা “।

আঁধার হেসে বলে

” ওরা সত্যি বলেছে আপনার বিয়ের বয়স পার হয়ে গেছে বিয়ে করতে হবে। ওহ আপনি আবার বিয়েতে বিশ্বাস করেন না। অন্য শহরের এমপিকে দেখেন তারা বিয়ে করে দুই বাচ্চার বাবা হয়ে গেছে কিন্তু আপনি”।

আপনি আমার সাথে অন্য শহরের এমপিদের কোনো তুলনা দেন ওদের বয়স আর আমার বয়স কি এক। ওদের বাচ্চার বাবা হওয়ার বয়স হয়েছে তাই হয়েছে কিন্তু আমার বয়স হয় নাই সেইজন্য বাচ্চার বাবা হয় নাই “।

” ওহ তাই তাহলে আপনার বয়স কখন হবে ফারিশ যখন মাথার সব চুল পেকে যাবে। মনে হয় সামনের কিছু চুল পেকে গেলে “।

এবার ফারিশ রাগ করে। চুল পেকে গেছে মানে আঁধার ওকে বুড়ো বললো। ফারিশ রাগ করে বলে

” শুনুন এখন চৌদ্দ বছর বয়সের মানুষের চুল পেকে যায়। এখন তাদের কি বাচ্চার বাবা হওয়ার বয়স হয়ে গেছে “।

” হুম বড় আব্বুর মাথায় চুল কয়েকটা পেকে গেছে কিন্তু আপনার মাথার চুল অনেক পেকে গেছে। তাহলে কি বড় আব্বুর বাবা হওয়ার বয়স হয় নাই। আর এমনি আপনার মতো আনরোমান্টিক মানুষ বাবা হওয়ার আগে বউ পালিয়ে যাব৷ “।

ফারিশকে কথা বলে আঁধার হাসতে হাসতে চলে যায়। কি বলে গেছে ফারিশ আনরোমান্টিক মানুষ। তার বউ পালিয়ে যাবে।

আঁধার হাসতে হাসতে রুমে গিয়ে অবাক হয়ে যায় সবাই এতো মেকাপ করছে। কোনটা মানুষ আর কোনটা বিড়াল সেটা বুঝতে পারছে না।

” এইসব কি সবাই এমন মেকআপ করেছে কোনো। আজকে কি টুনির বিয়ে না তোমাদের “।

” আরে আঁধার এতো মেকআপ করছি কারণ এমপি এসেছে যদি আমাদের দেখে এমপির পছন্দ হয়ে যায় তাহলে৷ এমপির বউ হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না “।

আঁধার ওদের কথা শুনে হাসে মনে মনে বলে

” যদি ফারিশকে মেকআপ করে পছন্দ করানে যেতো তাহলে এই বাজারের সব মেকআপ আমার থাকতো। কিন্তু এই এমপির কেমন মেয়ে পছন্দ সেটা এমপি নিজে যানে না “।

সারাদিন কেটে যায় বিয়ে বাড়িতে অনেক আনন্দ হয়। কিন্তু রাত হয়ে যায় আঁধারকে হোটেলে যেতে হবে আর ফারিশকে বাসায় ফিরতে হবে। সব মেয়েরা ফারিশের গাড়ির কাছে যায়।

” এমপি স্যার আপনি চলে যাচ্ছেন। আপনাকে অনেক মিস করব আমার আর আপনি সত্যি অনেক গুড লুকিন”।

আঁধার একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে সব মেয়ের কথা শুনছে যদিও বিরক্ত লাগছে। আর রাত হয়ে গেছে যেতে হবে কিন্তু এরা আসছে না।

” এই তোরা কি ফিরবি না। চল যেতে হবে।

ফারিশের মেয়েদের বিরক্ত লাগছে তবুও সে দুপুরের আঁধারের কথা ভুলে যায় নাই। আঁধার তাকে বুড়ো বলেছ৷ সেটা প্রতিশোধ নিতে হবে।

” আচ্ছা মেয়েরা তোমার আমাকে সুন্দর বললে তবে তোমরা অনেক সুন্দরী কিন্তু সবাই বলে আমি নাকি বুড়ো হয়ে গেছি। সেটা কি সত্যি “।

” আপনি কি বলেন আপনি বুড়ো হয়ে গেছেন কখনো সম্ভব না।আপনার মতো ইয়ওন আর গুড লুকিন লোকে যে বুড়ো বলবে সে নিশ্চিত অন্ধ “।

” ওহ তাই সবাই শুনছে আমি কিন্তু বুড়ো না “।

আঁধার বুঝতে পারছে ফারিশ তাকে বলছে সে কিছু বল৷ না। বাকি মেয়েরা বাসে উঠে পড়ে আঁধার উঠতে যাবে কিন্তু হঠাৎ খেয়াল করে একটা বন্ধুক নিয়ে কিছু লোক ময়লার মধ্যে দাঁড়িয়ে। আর বন্ধুক ফারিশের দডকে তাক করানে”।

গুডারা বলে

” এই শোট কর ফারিশ ফারহান চৌধুরীকে এখুনি সুযোগ আছে। শুট করে “।

আঁধার একটা চিৎকার করে দৌড়ে দেয় ফারিশকে বাঁচাতে

” ফারিশ ”

ফারিশ একটা চিৎকার করে পিছনে তাকিয়ে দেখে আঁধার দৌড়ে তার সামনে চলে আসে। আর আঁধার সামনে চলে আসার কারণ৷ গুলি ওর শরীরে লাগে সাথে রক্ত বের হতে থাকে দেহ লুটিয়ে পড়ে মাটিতে

#চলবে