#চোখের_তারা_তুই
#লেখিকাঃতাইয়েবা_বিন_কেয়া
#পর্ব ২০
ফুপির গলা শুনে বাড়ির সবাই ভয় পেয়ে যায় অনেক রাগী মহিলা। ফারিশের মা এগিয়ে গিয়ে বলে
” আরে ফরিদা আপা আপনি চলে আসলেন। দাঁড়িয়ে আছেন কোনো বসেন “।
ফরিদা অনেক দিন পরে এই বাড়িতে আসে যদিও এই বাড়ির কাউকে সে দেখতে পারে না। কারণ ও মনে করে এই বাড়ির সবাই শুধু ফারিশকে ভালোবাসা দেয় তার ছেলেকে কিছু দেয় না। আর এখন আঁধার এসেছে মানে এই পুরো সম্পত্তির উপর আরেকটা ভাগ বসবে ভাবতে রাগ হচ্ছে। ফারিদা রাগী কণ্ঠে বলে
” দেখো শাহানা তোমাকে বলে দিতে হবে না আমি কখন কোথায় বসবে। এইটা আমার বাবার বাড়ি তাই খুব ভালো করে জানি কখন কি করতে হবে “।
শাহানা কিছু বলে না আসলে শাহানা কতো ভালো আর শান্ত মানুষ সেটা সবাই জানে। আর ফরিদা বেগম অনেক রাগী বাড়ির কেউ ওনার মুখের উপর কথা বলার সাহস করতে পারে না। শাহানা একটু ভয় নিয়ে বলে
” আচ্ছা আপা রানেল কোথায় ওকে দেখছি না। ও আসে নাই “।
ফরিদা একটু রাগী চোখে তাকিয়ে বলে
” হুম রানেল এসেছে ওর একটু কাজ আছে সেটা শেষ করে আসবে। আর রানেল এই বাড়িতে না আসলে তোমরা অনেক খুশি হও কারণ সব তোমার ছেলে ফারিশ পেয়ে যাবে। রানেল না থাকলে ভালো “।
শাহানা বলে
” এইসব কি বলছেন আপা রানেল এই বাড়ির ছেলে ও আসলে সবাই খুশি হবে। আর ফারিশ কি সব পেয়ে যাবে কোনো আমাদের পরিবার সবার তাই সবার সমান অধিকার রয়েছে। রানেলকে নিজের ছেলের মতো দেখি আমি “।
ফারিদা একটা তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলে
” দোখো শাহানা তোমার নাটক দেখার কোনো ইচ্ছা আমার নাই। এই পরিবার রানেলকে কোন চোখে দেখে সেটা খুব ভালো করে জানি আমি। তাহ এই বাড়ির নতুন বউ কোথায় “।
শাহানা একটু ভয় পেয়ে যায় কারণ ফরিদা আঁধারের মাকে দেখতে পারতো না। তাই আঁধারের সাথে খারাপ ব্যাহার যদি করে সেই ভয় পায়
” আসলে আঁধার একটু অসুস্থ সেইজন্য উপরে রয়ছে। ওর শরীরে গুলি লেগেছে তাই নিচে নামে নাই ডাক্তার ওকে রেস্ট নিতে বলছে “।
ফরিদা বলে
” তাহলে তোমার ছেলের বউয়ের নাম ও সে শুধু এই বাড়ির বউ না এই বাড়ির মেয়ে। আমার ভাইয়ের মেয়ে “।
শাহানা একটু টেনশন হচ্ছে আর বাড়িতে ফারিশ আছে। ফারিশ তার ফুপিকে খুব বেশি দেখতে পারে না খুব বেশি মানে একদম দেখতে পারে না। এখন যদি কোনো কিছু হয় তাহলে ফারিশ যে কি করবে সেটা নিয়ে ভয় হচ্ছে। শাহানা বলে
” আসলে ভাইজান আঁধারের সাথে ফারিশের বিয়ে দিয়েছে মেয়েটা খুব ভালো। প্রতিদিন সকালের খাবার আর ঘরের বিভিন্ন কাজ ও করে কিন্তু এখন মেয়েটা অসুস্থ তাই নিচে নামতে পারে নাই “।
ফরিদা চোখ রাঙিয়ে শাহানার দিকে তাকিয়ে থাকে। আঁধারের নামে কোনো ভালো কথা শুনতে তার ভালো লাগে না। ফরিদা বলে
” হুম শাহানা তোমার কাছে সবাই খুব ভালো। আমার মা তোমার প্রশংসা করে মাথায় তুলছে এখন তুমি তোমার ছেলের বউয়ের প্রংশসা করে তাকে মাথায় তুলে ফেলো। শোনো কে ভালো কে খারাপ সেটা খুব ভালো করে জানি আমি তোমাকে শিখাতে হবে না। আমি গিয়ে মহারানীর সাথে দেখা করে আসছি “।
শাহানা দেখে ফরিদা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে এখন কি হবে সে জানে।
তুলি নিচে এতখন বসে ফুপির সব নাটক দেখছিলো। এই মহিলাকে তার একদম ভালো লাগে না কিন্তু সে কিছু বলতে পারবে না। ছোটো হয়ে বড়োদের কথার মধ্যে কথা বলা ঠিক নয় তার উপর মা একশো বার না করেছে ফুপির সামনে কোনো কথা না বলতে। কিন্তু ফুপি উপরে চলে গেছে বলে বলে
” এই হয়ে গেলো ফুপি ভাইয়ার রুমে যাচ্ছে এখন জানি না আবার কি করবে। এই মহিলা এতোদিন ছিলো না শান্তিতে ছিলাম এখন বাড়িতে প্রতিদিন এই মহিলার নাটক দেখতে হবে “।
শাহানা একটু ধমক দেয় তুলিকে
” কি হচ্ছে এইসব ওনি তোমার ফুপি হয় এইসব কি বলছো তুলি “।
তুলি হাসি দিয়ে বলে
” আম্মু আমাকে পরে বকা দিতে পারবে আগে ফুপিকে আটকানো দরকার। কারণ রুমে ভাইয়া আছে ফুপি গিয়ে যদি আঁধারকে কিছু বলে তাহলে ভাইয়া তাকে ছেড়ে দিবে না “।
শাহানা এবার তাড়াতাড়ি উপরে উঠে যায় আসলে ফরিদা কথায় ফারিশ আবার রেগে না যায়। ফারিশের যে রাগ কি হবে।
তুলি মনে মনে বলে
” না এখানে বসে থাকলে নাটক মিস করবে যায় উপরে যায় দেখি এই দরজাল ফুপি আবার কি করে। তবে ভাইয়ার যে রাগ আজ ফুপির একদিন না হলে ভাইয়ার একদিন হবে। এই নাটক স্টার জলসাকে হার মানিয়ে দিবে “।
আঁধারকে খাবার খায়িয়ে একটা কাপড় দিয়ে মুখ মুছে দিচ্ছে ফারিশ। এরকম সময় ফরিদা রুমে ঢুকে যায় ফরিদা এই দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে যায় যেই ফারিশ এতো রাগী ছিলো সে নাকি নিজের বউকে খাবার খায়িয়ে দেয়। ফরিদা বলে
” বাহ খুব ভালো ফারিশ এখন এমপি হয়ে বউকে খায়িয়ে দিতে হচ্ছে। তাহলে এমপি না হয়ে বউয়ের আঁচলের নিচে বসে থাকো “।
হঠাৎ কারো আওয়াজ শুনে ফারিশ আর আঁধার দুইজনে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে ফরিদা দাঁড়িয়ে আছে। ফরিদাকে দেখে আঁধার শাড়ীর আঁচল মাথায় দিয়ে উঠে যায় এসে ওকে সালাম করে কিন্তু ফারিশ সেখানে বসে থাকে। আঁধার বলে
” আরে ফুপি আপনি কখন আসলেন। আসুন দয়া করে এখানে বসে যান “।
ফুপির খুব ইচ্ছা ছিলো আঁধারকে দেখতে। ফুপি বলে
” বাহ আঁধার একদম নিজের শাশুড়ীর মতো হয়েছো কথায় সবার মন গলিয়ে ফেলো। কিন্তু ফরিদার সামনে এইসব নাটক চলবে না “।
আঁধার একটু অবাক হয়ে যায় সে নাটক কি করলো। মেহমানকে বসতে বলা সৌজন্যে বোধ। আঁধার বলে
” আসুন বসুন ফুপি “।
ফরিদা খেয়াল করলো ফারিশ বসে আছে কোনো কথা না বলে একবার সালাম করলো না। ফরিদা রাগ উঠে যায়। ফরিদা বলে
” বাহ ফারিশ তোমার বউ না হয় নাটক করে হলেও সালাম করেছে কিন্তু তুমি সেটা অবদি করলে না। গুরুজনের সাথে ব্যবহার করা কি ভুলে গেলে না তোমার মা শিক্ষা দেয় নাই “।
ফারিশ সব কথা শুনে এই ফুপির এইসব কথার জন্য তাকে দেখতে পারে না। কিন্তু ফারিশ চুপ থাকার মতো ছেলে না ফারিশ বলে
” ফুপি আসলে আমার নাটক করা একদম পছন্দ না। আমি যদি আপনাকে সালাম করি তাহলে আপনার নাটক মনে হবে। আর সালাম করলে আপনি দোয়া না দিয়ে বদদোয়া দিবেন সেই বিশ্বাস আমার আছে। আর কি বললেন আমি এমপি হয়ে বউয়ের সেবা করছি কোনো আসলে সেটা তুমি বুঝতে পারবে না “।
ফারিশের কথা শুনে ফরিদার রাগে শরীর জ্বলে যায় সাহস কি করে হয় এভাবে কথা বলার। ফরিদা বলে
” তোমার সাথে কি বলব আমি আগে একটু ভালো ছিলে এখন বউয়ের পুরো নিয়ন্ত্রণে এসে পড়ছো। এই মেয়ের মা আমার ভাইয়ের জীবন নষ্ট করেছে এখন তোমার জীবন নষ্ট করবে। আর আমি কিছু বলতে গেলে খারাপ হয়ে যায় সবার কাছে “।
ফারিশ একটু রাগ নিয়ন্ত্রণে করে বলে
” ফুপি আঁধারের যদি আমার জীবন নষ্ট করার হতো তাহলে আমাকে বাচাঁতে গুলি খেতো না “।
ফুপি বলে
” হুম গুলিতো খেয়েছে মারাতো যায় নাই। ওর মা আমার ভাইয়ের জীবন থেকে চলে গিয়ে মারা গেছে আপদ বিদায় হয়েছে এখন এই মেয়ে কবে মরবে কে জানে। এই বাড়ি থেকে থেকে কবে যাবে কে জানে “।
ফারিশরর রাগ বাঁধ ভেঙে যায় কিন্তু ফারিশ কিছু বলতে যাবে তার আগে আঁধার বলে
” ফুপি আপনার সাহস কি করে হয় আমার মাকে আপদ বলার। আর আমার মা মারা গেছে সেটা আপনার জন্য ভালো এই কথা কি করে বললেন আপনি “।
ফরিদা কথা শুনে কি রিয়েকশন দিবে সেটা পরের কথা কিন্তু ফারিশ রিয়েকশন দেওয়া ভুলে যায়। সত্যি এইটা রাতের বাচ্চা মেয়েটা এখন এতো সাহস দেখিয়ে কথা বলছে।
ফরিদা অবাক হয়ে যায় আঁধারের কথা শুনে কিন্তু সেও কম যায় না। ফরিদা বলে
” তোমার মা একটা আপদ ছিলো আমার কাছে তাই বলেছি। আর তুমি আমার সাহস দেখতে যায়ও না এই বাড়ি থেকে তোমাকে দুইমিনিটে বের করতে পারি “।
আঁধারের মায়ের নামে কথা বলে ফরিদা ভুল করর ফেলে। আঁধার বলে
” ফুপি আপনার সাহস বেশি সেটা ঠিক কিন্তু ভুলে যাবেন না আমার শরীরে কিন্তু এই চৌধুরী বাড়ির রক্ত বয়ছে সাহস আমারো আছে। আর এইটা আমার বাবার বাড়ি এবং শশুর বাড়ি এতো সহজে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবে না। মায়ের ডিভোর্স আসল কারণ জেনে তারপর যাবো “।
ফরিদা একটা হাসি দিয়ে বলে
” সেটা সময় বলে দিবে কে এই বাড়ি থেকে আগে যায়। আমি এখন আসি রুমে যায় “।
ফরিদা চলে যায় শাহানা রুমর দরজায় দাঁড়িয়ে সব কথা শুনে। শাহানা অবাক হয়ে যায় আর সাথে তুলি ও। তুলি বলে
” আরে ভাবী তুমি এইটা কি করলে পুরো দারুণ। এই দরজাল ফুপিকে কতো কথা শুনিয়ে দিলে দারুণ হয়েছে “।
শাহানা একটু ধমক দেয় তুলিকে।
” তুলি তুই চুপ থাক আর আঁধার তুমি আপাকে কথা তো বললে কিন্তু এর প্রতিশোধ কিন্তু ওনি নিবে “।
আঁধার এক হাত দিয়ে শাহানার হাত ধরে বলে
” টেনশন করবেন না আম্মু। ফুপির সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করতে চাই নাই আমি কিন্তু আমার মায়ের বিষয়ে কেউ খারাপ কথা বললে চুপচাপ সয্য করতে পারব না “।
শাহানা ওর মাথায় হাত রেখে বলে
” ঠিক আছে মা। আচ্ছা এখন নিচে যায় দুপুরের খাবারের মেনু ঠিক করতে হবে আর তুলি কলেজে যেতে হবে তাড়াতাড়ি নিচে আসো। “।
শাহানা চলে যায় তুলি বলে
” ওকে আমি যায় আর আঁধারের কানে বলে ভাইয়ার সাথে জুটিয়ে প্রেম করবে। কলেজ থেকে এসে সব শুনবো “।
আঁধার একটু হাসে তুলির কথা শুনে। ফারিশ এতখন কিছু বলে না কিন্তু এখন বলে
” এইযে ঔষধ খেতে হবে খেয়ে নেন। আচ্ছা ফুপিকে এতো কথা বললেন আপনি এই বাচ্চা মেয়ে এতো কথা শিখে ফেলছে “।
আঁধার এবার ফারিশের একটু কাছে এসে বলে
” শুনুন এমপি সাহেব এই বাচ্চা মেয়ে সবার সাথে বাচ্চামো করে না শুধু আপনার সাথে করে। কারণ আপনাকে এইসব সয্য করতে হবে আর এমপির বউ হয়েছি কথাতো শিখদে হবে “।
ফারিশ একটু হেসে পাশ কাটিয়ে ঔষধ নিয়ে আসে
” এই নেন ঔষধ খেয়ে নেন আমি আসা অবদি যদি সুন্দর করে থাকেন তাহলে বিকালে ঘুরতে নিয়ে যাবে “।
আঁধার খুশি হয়ে যায়
” সত্যি আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবেন। আপনি অনেক ভালো এমপি সাহেব কিন্তু মাঝে মধ্যে খারাপ হয়ে যান তবুও ভালো। ওহ আমার জামাই কতো কিউট পুরা কিউটের ডিব্বা “।
ফারিশ হাসে ওকে ঔষধ দেয় মনে মনে বলে
” না এই মেয়ে বড়ো হয়ে গেছে এইটা মনে করা তোর ভুল ফারিশ। তোর বউ সবসময় বাচ্চা থাকবে। বাচ্চা মেয়ে “।
#চলবে