চোখের তারা তুই পর্ব-২৩+২৪ এবং শেষ পর্ব

0
316

#চোখের_তারা_তুই
#লেখিকাঃতাইয়েবা_বিন_কেয়া
#পর্ব :২৩+২৪(শেষ পর্ব).

#পর্ব ২৩

রাতে রানেল বাড়ি ফিরে আসে ফরিদা ওর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে অনেক সময় ধরে। ফরিদা শরীরে রাগ নিয়ে ওর কাছে গিয়ে বলে

” তোর এতো কি কাজ ছিলো রানেল। সারাদিন বাহিরে থাকতে হয়েছে এইদিকে এই আঁধার আর ফারিশ আমাকে কতো অপমান করেছে তার কোনো ঠিক আছে “।

রানেল মাকে শান্ত করতে বলে

“- আরে মম এতো টেনশন কোনো করছো একটা কাজ ছিলো সেটা করে এসেছি। আর আঁধার আর ফারিশের টেনশন করতে হবে না এবার নির্বাচনে ফারিশ ফারহান চৌধুরী কখনো জিততে পারবে না

ফরিদার নিজের ছেলের উপর বিশ্বাস কিন্তু ফারিশ আর আঁধার সবসময় বেঁচে যায় তাই ও সিউর হতে জিজ্ঞেস করলো।

” সত্যি কিন্তু কি এমন করবি যাতে ফারিশ কখনো মুখ দেখাতে না পারে। আজকে আমি আঁধার যখন ছাঁদে কথা বলছে তখন সিঁড়িতে তেল দিয়ে এসেছি পিছলে পড়ে ওর হাতে ব্যাথা পেয়েছে “.

ফরিদা এখন শান্ত লাগছে এই ফারিশ ছোট থেকে ওর ছেলের সব জিনিস কেঁড়ে নিয়েছে।এখন এই ব্যবসা সম্পত্তির মালিক শুধু হবে ওরা কারণ এই বাড়ির আর কোনো মালিক থাকবে না। ফরিদা বলে

“- এবারে বুদ্ধি আগের মতো খারাপ হয়ে যাবে না তো “।

“- আরে মম ফারিশকে মারার সব বুদ্ধি ওই আঁধার শেষ করে দিয়েছে তাই এবার আঁধারকে ফারিশের থেকে দূরে সরিয়ে দিতে হবে। এমন কিছু করব যাতে ফারিশকে মারতে না হয় সে আত্মাহত্যা করতে বাধ্য হবে। মানে সাপ ও মরবে আর লাঠিও ভাঙবে না “।

রাতে ফারিশ আর আঁধার এক বেডে ঘুমিয়ে পড়ে আঁধারের মাথা একটু ব্যাথা করছে। ফারিশ সেটা নোটিশ করে

” আঁধার এখানে আসেন মাথা টিপে দেয় “।

আঁধার খুশি হয়ে ওর কাছে যায়।

” আপনাকে একটা কথা বলি এমপি সাহেব “।

” যদি অনুমতি না দেয় তাহলে কি বলবেন না। বলেন কি বলবেন “।

” যানেন ছোটবেলা যখন মায়ের সাথে থাকতাম সবাই আমার বাবার নাম জিজ্ঞেস করতো কিন্তু কাউকে বলতে পারতাম না আমার বাবা কে। সমাজের সবাই অনেক খারাপ কথা বলতো সব সয্য করে নিয়েই চলেছি। কিন্তু যখন হাতে গুলি লেগেছে তখন মনে হয়েছে তার বেঁচে থাকতে পারব না তখন খুব ইচ্ছা করছে সবাই যাতে জানে আমার কোনো পরিচয় আছে। আপনাকে বলেছি সমাজের মানুষের কথায় আমার কোনো যায় আসে না কিন্তু সত্যি হলো এইসব কথা শুনে আমি বিরক্ত এখন আমার কোনো পরিচয় চাই। আচ্ছা যদি এই আসল অপরাধী সামনে চলে আসে তখন সবার সামনে আমি আমাকে বউ হিসাবে মেনে নিবেন। সবাই জানবে আমি এমপির বউ ছিলাম “।

ফারিশ এর মাথা নিজের বুকে নিয়ে আসে আর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আর বলে

” হুম একবার শুধু এইসব শেষ হতে দেন পরে একটা বড়ো অনুষ্ঠান করে এই পুরো শহরকে বলবো। আপনি ফারিশ ফারহান চৌধুরী বউ আর এই বাড়ির মেয়ে”।

আঁধার ওর মুখে মাথা রেখে শান্তি পেয়েছে। আঁধার বলে

“- যদি এর আগে আমি মারা যায় তখন কি হবে। আমার কোনো পরিচয় থাকবে না কারো কাছে “।

ফারিশ যানে না ওকে কি বলা উচিত মেয়েটা যতো বাচ্চাদের ব্যবহার করুক ওর জীবনে অনেক কষ্ট। ফারিশ বলে

“- ঘুমিয়ে পড়ুন আঁধার কালকে সকালে যেতে হবে কলেজে। আর আপনার আশেপাশে গার্ড হিসাবে অনেক লোক থাকবে কিন্তু কেউ বুঝতে পারবে না “।

সকাল হয়ে গেছে আঁধার ঘুম থেকে উঠে পড়ে রেডি হতে ওয়াশরুমে চলে যায় হাতের ব্যাথা করছে। কিন্তু ফারিশকে বললে যেতে দিবে না তাই বলে নাই।

ফারিশ ঘুম থেকে উঠে দেখে আঁধারকে রেডি হয়ে গেছে ফারিশ উঠে রেডি হয়।

আঁধার বলে

” আচ্ছা আপনি কি আমার সাথে কলেজে যাবেন মানে আজকে ওখানে যেতে হবে “।

ফারিশ একটু আয়নার কাছে গিয়ে ওর চুল ঠিক করে দিয়ে বলতে থাকে।

” না আমরা একসাথে কলেজে যেতে পারব না কারণ আপনাকে আগে যেতে হবে আর আমি দলীয় নেতাদের সাথে যাবে “।

আঁধারের একটু মন খারাপ হয়ে গেলো আসলে এখন ফারিশের থেকে দূরে থাকতে ওর ভালো লাগে না। আঁধার বলে

” হুম ঠিক আছে এমপি বলে কথা আপনি আমার মতো সাধারণ মেয়ের সাথে কোনো যাবেন। এই জন্য আমি চাই আপনি নির্বাচনে ফেল করেন পরে একদম সাধারণ মানুষ হয়ে যাবে পরে যেখানে ইচ্ছা সেখানে নিয়ে যেতে পারব “।

ফারিশ একটু মুচকি হাসি দেয় মেয়েটা সবসময় বাচ্চা থাকবে। ওরা সবাই খাওয়া শেষ করে কলেজে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠে পড়েছে এবং অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে গেছে। তুলি নেমে পড়েছে কিন্তু আঁধার নামে নাই।

ফারিশ বলে

“- কি হলো গাড়ি থেকে নেমে যান “।

আঁধার মাথায় এখন অন্য কিছু চলছে কারণ এই কলেজের মেয়েরা যদি ফারিশের দিকে নজর দেয় তাহলে কি হবে। আঁধার বলে

“- শুনুন কলেজ যখন যাবেন মুখোশ পড়ে যাবেন যাতে আমার বন্ধুরা আপনাকে নজর দিতে না পারে।

” ঠিক আছে যাবো এখন যান গাড়ি থেকে নেমে যান “।

“- গাড়ি থেকে কেমন করে নামিয়ে দিলেন তাই না এমপির গাড়ি বলে এমন করছেন। আমার জামাইয়ের এর চেয়ে সুন্দর গাড়ি আছে কালকে থেকে সেই গাড়ি করে কলেজে যাবে তখন বুঝতে পারবেন “।

আঁধার গাড়ি থেকে নেমে যায় ফারিশ একটা হাসি দিয়ে চলে যায়। আঁধার কলেজে সবার সাথে কথা বলে তবে এতো নড়াচড়া করে না কারণ ফারিশ বারণ করে দিয়েছে।কলেজে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায় সবাই এমপির জন্য অপেক্ষা করে।

” এই এমপি এসে গেছে। এমপি এসেছে “।

পুরো কলেজ একটা আওয়াজ শুনা যাচ্ছে আঁধার একটু দূর থেকে এমপি সাহবকে দেখছে তার এমপি ভাবতে খুশি লাগছে। ফারিশ একটু ওর দিকে তাকিয়ে দেখে তারপর কলেজ ভিতরে চলে যায়।

সবাই ভাষণ দিচ্ছে আঁধারের এইসব বোরিং লাগছে কখন পুরস্কার দিবে কে যানে।

#চলবে

#পর্ব ২৪ (শেষ পর্ব).

” সবাই দেখুক তাতে কি হয়েছে আমার বউয়ের সমস্যা হবে আমি আসবো না। আর কাল রাতে পরিচয় চেয়েছেন না আপনি এখন পরিচয় দিচ্ছি “।

আঁধার অবাক হয়ে গেছে ফারিশ ওর জুতার ফিতে ঠিক করে স্টেজ উঠে যায়। আঁধার সবার রিয়েকশন দেখে মনে হচ্ছে কোন কারণে যে কালকে রাতে এইসব বলতে গেছে কে জানে “।

সবাই বক্তব্য কি দিবে দলের লোকেরা ফারিশকে জিজ্ঞেস করে।

” এমপি স্যার মেয়েটা কে হয় আপনার “।

” আমার ওয়াইফ”।

সবাই অবাক হয়ে যায় ফারিশ ফারহান চৌধুরী কখন বিয়ে করছে আর সে তার বউয়ের জুতার ফিতে বেঁধে দিচ্ছে। অনুষ্ঠান শেষ হয় আঁধার বাড়ি ফিরে যায় ফারিশ দলের লোকদের সাথে গাড়িতে উঠে পড়ে সবাই এক গাড়িতে যাবে সো বড়ো গাড়ি ঠিক করা হয়েছে। ফারিশ একটু আঁধারের শরীরের কথা জানতে চাই তাই ওকে কল দেয়।

” হ্যালো ফারিশ বলেন “।

” আপনি কি বাসায় চলে গেছেন “।

” হুম চলে এসেছি কিন্তু আপনি কখন আসবেন “।

” আমার আসতে একটু দেরি হবে শুনুন খাবার খাওয়ার আগে চলে আসবো। আর পাকামো করে হাত দিয়ে খেতে যাবেন না ব্যাথা পাবেন আমি এসে খায়িয়ে দিবো আর চুল নিজে ঠিক করবেন না আমি এসে বেনি করে দিবো। ঠিক আছে “।

” হুম ঠিক আছে “।

গাড়িতে শুধু ফারিশ ছিলো না দলের সবাই ছিলো সবাই রীতিমতো অবাক মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলছে। এই রাগী এমপি ফারিশ ফারহান চৌধুরী নিজের বউয়ের চুলের বেনি করবে তাকে খায়িয়ে দিবে ভাবা যায়।

সময় চলে যায় আঁধার আর ফারিশের দিন খুব ভালো কাটে কিন্তু নির্বাচন কালকে। ফারিশ বাড়ি ফিরে আসে

” কি হলো পড়াশোনা শেষ চলেন খাবার খেয়ে নেয় “।

” হুম অনেক খিদে পেয়েছে “।

আঁধার নিচ থেকে খাবার নিয়ে আসে কিন্তু সে খেতে যাবে ফারিশ তার হাত ধরে ফেলে।

” কি হয়েছে খাবার খেতে দেন “।

” না আমার বউ এতো কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে রান্না করেছে তাই ওকে নিজ হাতে খায়িয়ে দিতে হবে। আসলে আমার বউ অনেক বাচ্চা তো তাই “।

” নির্বাচনের সময় অনেক এমপি তার বউয়ের খেয়াল রাখতে পারে না কিন্তু আপনি একদম আলাদা। আপনি বেস্ট ফারিশ “।

” আই লাভ ইউ আঁধার “।

” আই লাভ ইউ টু এমপি সাহেব”।

রাতে ঘুমিয়ে পড়ে রানেল শুধু সকালের অপেক্ষা করে কারণ রাতে যা করার সে করেছে সব ভোট টাকা দিয়ে কিনেছে। এতো টাকা দিয়েছে সবাই ভোট দিতে বাধ্য হবে।

সকাল হয়ে যায় ভোট শুরু হয় ফারিশ আর রানেল দুইজনে সেখানে দাঁড়িয়ে কিন্তু হঠাৎ পুলিশ এসে রানেলকে এরেস্ট করেছে।

রানেল বলে

” আরে কি হচ্ছে এইসব পুলিশ কোনো আমাকে এরেস্ট করছে। কি করেছি আমি “।

পুলিশ বলে

” আপনি সবার কাছে টাকা দিয়েছেন যাতে সবাই ফারিশ ফারহান চৌধুরীকে ভোট দেয় “।

রানেল অবাক হয়ে যায় সে টাকা দিয়েছে কিন্তু সেটা পুলিশ কি করে জানলো আর ফারিশের নামে টাকা দিয়েছে মানে। তখন ফারিশ ওর কাছে

” আমার প্রিয় রানেল রাজনীতি তোকে দিয়ে হবে না রে। তুই কালকে সবাইকে টাকা দিয়ে ভোট কিনে নিবি চিন্তা করলি কিন্তু আমি কি করেছি তোর লোকে কিনে নিয়েছি। সেখানে সবাই যানে তুই না বরং ফারিশ ফারহান চৌধুরী সবাইকে টাকা দিয়েছে কিন্তু তোকে জেলে পাঠানো দরকার ছিলো তাই আমি লোক দিয়ে পুলিশকে খবর দিয়েছি। পরে পুলিশ আমাকে ফোন করে

” হ্যালো এমপি স্যার আপনি কি জানেন আপনার ফুপাতে ভাই রানেল টাকা দিয়ে ভোট কিনছে “।

” কি সত্যি ও এইসব করছে “।

” হুম এইসব করছে। আমাদের ওকে এরেস্ট করা দরকার”।

” দেখেন অন্যায় করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। আপনারা ওকে শাস্তি দেন “।

ফারিশ এখন হেসে রানেলকে বলে

“- এইটা হলো আসল খেলা। এখন সবাইকে টাকা দিয়ে ভোট কিনে নেওযার অপরাধে তোকে জেলে যেতে হবে আর এমপি নিজে তার লোকে ধরিয়ে দিয়েছে তাই তাকে সবাই পছন্দ করবে। আর ভোটের জন্য কালকে টাকা যা দিয়েছিলি ফেল করার কোনো চান্স নাই। একে বলে সাপ মরলো ও লাঠি ভাঙলো না “।

আঁধার একটা ডায়েরি নিয়ে বড় আব্বুর রুমে ঢুকে।

” আব্বু রুমে আসতে পারি “।

নিলয় চৌধুরী হঠাৎ কারো মুখে আব্বু ডাক শুনে অবাক হয়ে যায় আঁধার তাকে আববু ডাকছে। নিলয় বলে

” ভিতরে আয় কিছু কি বলবি “।

আঁধার গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরে আর কান্না করে বলে

“- সরি আব্বু ছোটবেলা থেকে তোমাকে ভুল বুঝার জন্য আমারা যেই বাসায় ভাড়া থাকতাম সেখানে গিয়েছি অনেক কষ্ট করে এই ডায়েরি খুঁজে পেয়েছি। এখানে মা লিখে গিয়েছে আসলে সব কিছু ফুপি করেছে সে তোমার আর মায়ের মধ্যে অন্য একটা মহিলাকে নিয়ে এসেছে। যার কারণে মা তোমাকে ভুল বুঝতে বাধ্য হয়েছে মা মারা যাওয়ার আগে সব ডায়েরি লিখে গিয়েছে “।

নিলয় খুশি হয়ে ওর মেয়েকে জড়িয়ে ধরে

” তুই আর তোর মা সবসময় আমার খুব কাছের। তোর মুখ থেকে আব্বু ডাক শুনে সব রাগ শেষ হয়ে গেছে। এখন আমি চাই তুই আর ফারিশ সুখে সংসার করবি “।

” হুম ফারিশ খুব ভালো মানুষ ওনাকে আমি অনেক ভালোবাসি “।

” একটা কথা মনে রাখবি আমার আর তোর মায়ের চোখের তারায় তুই থাকবি
সমাপ্ত