#জায়া_ও_পতি
#পর্ব_১৩
#ইসরাত_ইতি
মাথাটা ভার হয়ে আছে তখনও, সম্পূর্ণ মস্তক যন্ত্রণায় ফুটছে।গায়ে জ্বর আছে বেশ। এমন অসহ্য জ্বর তার হয়েছিলো এস.এস.সিতে রসায়ন পরিক্ষার আগের দিন, এ কারণেই জিপিএ ফাইভ ছুটে গিয়েছিলো তার।
জান্নাত অনুভব করলো,কেউ তাকে দু’হাতে শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে, দু’টো শক্ত হাত, অতি পরিচিত ঘ্রাণ। মানুষটার সাথে যে তার বহুদিনের বাস।
অকস্মাৎ চোখ মেলে তাকায় জান্নাত, মনে পরে লাগাতার গতকালের ঘটনা গুলো ক্রমান্বয়ে। একটা মহিলা, শামিরের ফোন রিসিভ করেছে, তার স্বামী একটা মেয়ের কাছে গিয়েছে। আবারও ধড়ফড় করে ওঠে বুক, কান্না পায় তার। নড়েচড়ে উঠে দেখে শামির ঘুমিয়ে আছে, তার অতি কাছে, টের পায় তার গায়ে পোশাকের পরিমাণ খুবই অল্প, তেমনি ঐ লোকটার গায়েও। রাগ চাপে জান্নাতের, রাগ আর ক্ষোভে মাথা দপদপ করে, দুপুরে এই লোক একটা মেয়ের কাছে ছিলো, সেই মেয়ের সাথে কি করেছে? কতদূর গড়িয়েছে সব?
ভাবতে ভাবতেই হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে সে। এই লোকটাকে সে ভয় পায়,তবে কৈফিয়ত জান্নাত চাইবেই। চাইবেই চাইবে। এতো বড় সর্বনাশ করে জবাবদিহিতা দিতেই হবে,তবে কথা হচ্ছে জান্নাত কিভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে? কলার ধরে চেচাবে এই লোকের? নাকি থাপ্পড় মারবে?
আজ বোকা,ভীতু জান্নাত বুকে সাহস সঞ্চয় করে, থাপ্পড় মারার সাহস অবশ্য নেই, লোকটার কলার ধরবে বলে ঠিক করলো সে, কিন্তু লোকটার গা তো খালি, তাহলে ধরবে কি? আগে বরং লোকটাকে ঘুম থেকে তোলা যাক…
জান্নাত দু’চোখ মুছে হাত দু’টো এগিয়ে নেয় শামিরের দিকে, ঠিক তখনই শামির চোখ মেলে তাকায়।
সারারাত না ঘুমানোর ফলে চোখদুটো টকটকে লাল হয়ে আছে, জান্নাত ঐ চোখ দু’টো ভয় পায়, আজ হয়ে আছে লাল, চোখ দু’টো দেখেই তার কলজে শুকিয়ে আসে, ঢোক গেলে জান্নাত। মুহুর্তেই সমস্ত ক্রোধ মিইয়ে যায়, নিজের অবস্থান ভেবে দু চোখে পানি আসে তার, ফিরিয়ে নেয় চোখ। শামির উঠে বসে তৎক্ষণাৎ, দেখলো জান্নাত কম্ফোর্টার পেঁচিয়ে বসে আছে,চোখে পানি।
সেসব পাত্তা না দিয়ে শামির জান্নাতের কপাল চেক করে,“জ্বর তো এখনও আছে। শাড়ি পরবে? শাড়ি এনে দেবো?”
জান্নাত চুপ থাকে,ফোটায় ফোটায় গড়িয়ে পড়ছে জল। শামির দেখে ওকে কিছুসময়, ঐ নিশ্চুপতা আর চোখের পানির অর্থ বোঝা খুব কঠিন নয়, শামির উঠে আগে নিজে একটা টিশার্ট পরলো, তারপর আলমারি থেকে শাড়ি সায়া ব্লাউজ এনে দিলো জান্নাতের। জান্নাত সেসব নেয়না হাতে, শুধু কেঁদে যাচ্ছে।
শামির এসে ওর পাশে বসলো, দেখতে থাকলো জান্নাতকে, জান্নাত আর নিজেকে সামলাতে না পেরে ফুঁপিয়ে উঠলো, কিছুক্ষণ ফুঁপিয়ে বলে,“ঐ মেয়েটা কে।”
শামিরের ঠোঁটের কোণে বক্র হাসির রেখা, উঠে গিয়ে নিজের ফোনটা এনে অফিশিয়াল নাম্বারে ফোন করে, ওপাশ থেকে অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট কলটা রিসিভ করেই বলে,“গুড মর্নিং স্যার।”
_রিতা আপা গতকাল বেলা তিনটা নাগাদ আমার ওয়াইফ অফিসে কল করেছিলো, আপনি রিসিভ করেছিলেন?
_জি স্যার বাট স্যরি সামহাউ কলটা কেটে যায় এবং পরে দু তিনবার চেষ্টা করেও ভাবীকে ধরাতে পারিনি।
শামির কল কেটে জান্নাতের চোখে চোখ রাখে,অবাক চোখে জান্নাত শামিরের ফোনটা দেখছে শুধু। তর্জনী দিয়ে জান্নাতের মুখের ওপর আলগোছে পরে থাকা চুল সরিয়ে শামির বলতে থাকে,“কান নিয়েছে চিলে?”
কিছুই বলে না জান্নাত,তখনও কাঁদে,শামির এবার মেয়েটাকে কাছে টানে, ডানহাতে দু চোখের পানি মুছিয়ে দিতে দিতে বলে,“ওটা আমার অফিশিয়াল নাম্বার, কপাল ঠোকাঠুকি করার আগে এটা দেখা উচিত ছিলো না?”
এইবার,দীর্ঘ সময় পর,দু’চোখ বন্ধ করে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে জান্নাত, কম্পিত স্বরে বলে,“গতকাল লাঞ্চে আসেননি কেন? আমি ভেবেছি পথে আটকা পরেছেন হয়তো। হরতাল সবখানে।”
শামির মেয়েটাকে কাছে টানলো, দু গালে দু’টো চুমু খেলো, জান্নাত তখন আবারও কেঁদে দিয়ে বললো,“আমি আর ও বাড়িতে যাবো না। সত্যি বলছি।”
_জ্বর তোমার গায়ে। উঠে শাড়িটা পরে নাও,কিছু খেয়ে ওষুধ খাবে।
জান্নাত মাথা নাড়ায় চুপচাপ, শামির বিছানা গোছাচ্ছে। জান্নাত দুর্বল শরীরে উঠে দাঁড়িয়ে শাড়িটাকে কোন মতে পরে নেয়। তারপর বিছানার একপাশে জড়োসড়ো হয়ে বসে। শামির ওকে বিছানার হেডসাইডে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিয়ে দরজার বাইরে গিয়ে রেনুকে ডেকে কিছু খাবার দিতে বলে ঘরে আসে।
এসে জান্নাতের মুখোমুখি বসে, জান্নাত নামিয়ে নেয় চোখ। শামির জান্নাতের একটা গালে আলতো হাত ছুঁয়ে বলে,“জিহাদ কে জান্নাতুল?”
জান্নাত চোখ তুলে তাকায়, ক্লান্ত স্বরে বলে,“আমার ছোটো ভাই?”
হাঁফ ছাড়ল শামির, গতকাল রাত থেকে এই ব্যাপারটাই মাথায় ঘুরেছে তার। তার বৌ জ্বরের ঘোরে অন্য পুরুষের নাম জপবে, বিষয় টা পীড়া দিয়েছে শামিরকে। একটা লম্বা শ্বাস ফেলে শামির বলে,“স্যরি ভুলে গিয়েছিলাম। আসলে গতকাল জ্বরের ঘোরে ওর নাম ডাকছিলে বারবার তাই। আচ্ছা, থাকো তবে, সকাল এগারোটার কাছাকাছি,আমি অফিসে যাই, তুমিও খেয়ে ওষুধ খাও, দুপুরে রেনু মাথায় পানি দিয়ে দেবে। বিকেলের আগে একটু ধাতস্থ হলে তোমাকে নিয়ে এক যায়গায় বেরুবো।”
_কোথায়?
_রেস্টুরেন্টে যাবো।
_রেস্টুরেন্ট?
উঠে দাঁড়ায় শামির, রেডি হতে হতে গম্ভীর হয়ে বলে,“হু।”
এরপর আর কোনো কথা হয়না। শামির রেডি হয় নিচে নেমে নাস্তা সেরে অফিসে যায়। জান্নাত সামান্য একটু দই চিড়া খেয়ে ওষুধটা খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘরে ঢোকে রিজিয়া।
এসে জান্নাতের কপালে হাত দেয়, জান্নাত উঠে বসে। ওর পাশে বসে কিছুক্ষণ জান্নাতের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে রিজিয়া বলে ওঠে,“আমার ছেলেটা এতো খারাপ না বৌমা, তুমি মন ভারী করে রেখো না।”
জান্নাত শাশুড়ির কথার জবাব না দিয়ে বলে,“আম্মা! একটা সত্যি কথা বলবেন?”
_কি?
_ওনার কি মাথায় কোনো সমস্যা ছিল? ধরুন ছোটোবেলায় কখনও মাথায় বড় কোনো আঘাত পেয়েছিল?
ফ্যাকাশে হয়ে যায় রিজিয়ার মুখ, নিমিষেই জান্নাতকে ধমকে বলে,“এসব কেমন কথা বৌমা? এসব কথা বলবে না, খবরদার ।একটু রাগী ছেলেটা। একটু জেদী। তাই বলে মানসিক সমস্যা হতে যাবে কেন? একটা অফিস চালায়, ব্যবসা সামলায়, সব দায়িত্ব পালন করে। এভাবে মানসিক রোগী বানিয়ে দিলে স্বামীকে? তুমি বৌ হয়ে যদি এসব বলো, বাইরের মানুষ কি বলবে?”
শাশুড়ির ধমকে জান্নাত মিইয়ে যায়। যতই হোক শামির তার ছেলে, ছেলের টানে মা এভাবে বলবেই। জান্নাত শাশুড়িকে ঠান্ডা করতে নিচু গলায় বলে,“আমি সেভাবে বলতে চাইনি আম্মা।”
রিজিয়া শান্ত হলো, নিজেকে সামলে নিয়ে নরম গলায় ছেলের বৌকে বলে,“একটা কথা বলো বৌমা, শামির কি তোমাকে সবসময় বকে?”
_সবসময় বকে না আম্মা।
_আমার ছেলে তোমাকে ভালোবেসে কাছে টানে তো?
_জী!
_তোমার কি লাগবে না লাগবে সবকিছুর খেয়াল রাখে?
_জী।
_তাহলে মানসিক রোগী কি করে হয়? বৌমা কিছু মানুষ থাকেই এমন, একটু খুঁতখুঁতে, শামির তেমন। একটু মানিয়ে চলো মা।
জান্নাত সাথে সাথে জবাব দেয়,“জি আচ্ছা আম্মা।”
সেদিন বিকেলে জান্নাতের জ্বর কমেনি। মাথাটা যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছিলো, শামিরও অফিস থেকে আসতে পারেনি ব্যস্ততায় , রেস্তোরাঁয় যাওয়া হয়নি তাই।
বিকেলটা জান্নাত ঘরময় পায়চারী করে কাটিয়েছে। শুয়ে থাকলে গা ভারী লাগে খুব, বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফুরফুরে বাতাস শরীরে মাখিয়েছে।
মাইমুনার ঘরে সুহানা আর রুহি লুডু খেলছিলো। শামা নিজের ঘরে পড়ছে,সামনে টেস্ট পরীক্ষা তার।
জান্নাত গিয়ে মাই মুনার পাশে বসে, মাইমুনা নিজের জন্য পান ছেচঁছিলো, জান্নাতকে দেখে পান খাওয়া লাল দাঁত বের করে বলে,“পান খাবি মাগী?”
জান্নাত মাথা নাড়ায়। মাইমুনা বলে,“হোনলাম তোর ভাতার নাকি আরেকটা বিয়া করছে,হেই কষ্টে তুই জ্বর উডাইয়া হালাইছো।”
বলতে বলতে মাইমুনা খিকখিক করে হাসে। হেসে ফেলে জান্নাতও। রুহি আর সুহানাও হাসে।
মাইমুনা পান মুখে পুরে বলতে থাকে,“তয় পুরুষ মানুষ বিশ্বাস নাই, কইরা হালাইতে সময় নেবে না । তোর দাদাহৌরের কেচ্ছা হুনবি? হের প্রতিদিন রাইতে লাগতো বৌরে, মোর মাসিকের পাঁচদিন যাতে হের ভুখা থাকা না লাগে হেইর পিকনে আরেকটা বিয়া করছেলে। হেই বৌ অবশ্য নিউমোনিয়ায় মারা গেছিলো, বাচ্চা হয়নায় হেই ঘরে।”
রুহি হতবাক হয়ে দাদীর কথা শুনে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, তার দাদু এমন লোক ছিলো?
মাইমুনা হা করে থাকা জান্নাত আর সুহানার দিকে তাকিয়ে বলে,“নাতবৌরা। মোরে তোরা খারাপ ভাবতে পারোস, তবে বুদ্ধি যা দিমু হেইগুলান খারাপ না। এই পুরুষ জাতটা, এক্কেবারে নেমকহারাম। মাসিকের পাঁচদিন চোখ কান খোলা রাখপি, দেখপি কোন চিপায় যায়।”
রুহি দাদীকে চুপ করতে বলে দৌড়ে ঘর থেকে বেরোয়, তার গা গুলাচ্ছে মাইমুনার কথা শুনে।
বসে থাকে সুহানা আর জান্নাত। মাইমুনা তার জ্ঞান বিতরণ করে প্রসঙ্গ পাল্টে দুই নাতি বৌকে বলে,“স্বামীর লগে শোয়ার আগে একটা দোয়া পড়বি। আমি আইজ শিখাইয়া দিতেছি, এই দোয়াটা পইরা স্বামীর লগে শুইলে তোগো স্বামী তোগো কাছেই বান্ধা থাকবো।”
_____
বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত। জান্নাতের জ্বর কমে নি, জ্বরের ওষুধ খেয়ে খুব সকাল সকাল শুয়ে পরলেও ঘুমোয়নি জান্নাত, মানুষটা বাইরে, রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো না খবরে দেখছে সে, প্রচুর গাড়ি ভাঙচুর হয়, দুশ্চিন্তায় ঘুম আসে না জান্নাতের। শামির আজ তাড়াতাড়ি ফেরে, রাত নটার দিকেই বাড়িতে ফিরে খেয়ে দেয়ে ওপরে ওঠে, সরাসরি রুমে না গিয়ে উত্তর পাশের বারান্দায় যায়, ওখান থেকে কিছুক্ষণ আগে চাপা হাসির শব্দ শুনতে পেয়েছে সে।
শামিরকে দেখতে পেয়েই রুহি হাত থেকে ফোন ফেলে দেয়। শামির একপলক রুহির ফোন আর রুহিকে দেখে, জলদগম্ভীর স্বরে বলে,“কি হয়েছে? এখানে কি?”
_ভাইয়া অরুনিমার ফোন,ঘরে নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলাম না তাই এখানে এসেছি।
রুহি মেঝে থেকে ফোনটা উঠিয়ে নিতে নিতে বলল।
শামিরের মাথায় জান্নাতের কথা ঘুরছিল তখন,তাই অত ঘাটাল না বিষয়টাকে, শুধু কর্কশ গলায় বললো,“হু। আচ্ছা শোন, তন্ময় এসেছে ও বাড়িতে। বেয়াদবটা যদি সামনে পরে তবে কথা বলবি না ভুলেও।”
রুহি একটা ফাঁকা ঢোক গিলে বলে,“পরেছিলো তো ভাইয়া, আমি কথা বলিনি।”
_হুম গুড।
শামির চলে গেলে রুহি বুকে হাত রেখে একটা লম্বা শ্বাস ফেলে ফোনটা কানে চেপে ধরতেই ওপাশ থেকে তন্ময় বলে,“এই সম্বন্ধির ব্যাটাকে একটু আদব শেখাতে বলো তো জান্নাতুল ভাবীকে। দুনিয়ার সবাই ওনার কাছে বেয়াদব,আর উনি শেখ সাদী।”
রুহি চুপ করে আছে,তন্ময় বলে,“জান্নাতুল ভাবীর জ্বর কমেছে?”
_হু,একটু।
_একটা পিচ্চি মেয়ে, শামার বয়সী, অতটুকু মেয়েকে কোন আক্কেলে ঐ শামিরের গলায় ঝোলালে বলো তো?
_যে আক্কেলে তুমি আমার পেছনে পরেছিলে। রাখছি আমি। গুড নাইট।
______
ঘরে ঢুকে দরজা লাগায় শামির,শব্দ পেয়ে জান্নাত উঠে বসে।
“ঘুমাওনি? জ্বর বেশি?”
_না কমেছে, পথে ঝামেলা হয়নি তো?
_নাহ,সদর রোড হয়ে আসিনি।
জান্নাত তার আয়ত চোখে অনিমেষ চেয়ে আছে, শামির ঐ মাসুম চেহারার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে, তার বৌ তার জন্য কতটা উদ্বিগ্ন হয়ে থাকে এই বিষয়টা শামির বোঝে, শামিরের বুক সগর্বে ফুলে ফেঁপে ওঠে এমন একজন মেয়েকে বৌ হিসেবে পেয়ে। অল্পবয়সী মেয়ে বিয়ে করার এই এক সুবিধা, এদের মনটা থাকে স্বচ্ছ,নির্বিষ। হয় কোমল। যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে গড়ে নেয়া যায়,আর শামির গড়বেও নিজের মনের মতো করে।
ফ্রেশ হয়ে জান্নাতের কাছে গিয়ে বসল শামির, এরপর বিছানার পাশের ড্রয়ার খুলে কন্ট্রাসেপটিভ পিলের পাতা বের করে দেখে, খানিক বাদে সেখান থেকে একটা পিল বের করে গ্লাস আর পিলটা জান্নাতের হাতে দেয়,“আজ খাওনি দেখছি, এটা মিস দিও না।”
জান্নাত ওষুধটা খায়, শামির ওর হাত থেকে গ্লাসটা সরিয়ে আবারও টেবিলে রাখবে তখন একটা ছোটো কাগজ নজরে পরে তার। কাগজটাতে একটা আরবি লেখা।
কাগজটা হাতে তুলে নিয়ে শামির জান্নাতের কাছে জানতে চায়,“এটা কি?”
জান্নাত ইতস্তত করে বলে,“এটা একটা দোয়া।”
_কিসের দোয়া?
বিকালে জান্নাতকে দিয়ে মাইমুনা দোয়াটা লিখিয়েছে, এটা মুখস্থ করতে বলেছে, রাতে স্বামীর সাথে মিলিত হবার পূর্বে দোয়াটা পাঠ করলে স্বামীর তার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা বাড়ে,অন্য নারীর দিকে তাকায় না। জোর করে কাগজটা জান্নাতের হাতে গুজে দিয়েছে মাইমুনা।
_বললে না কিসের দোয়া?
_জানিনা, দাদী বলেছে ঘুমানোর আগে পড়ে নিতে।
_ওহ।
শামির কাগজটা যথাস্থানে রেখে শুয়ে পরে,জান্নাতকে টেনে বুকে নিয়ে বাতি নিভিয়ে দেয়।
রাত বাড়তে থাকে, জান্নাতের জ্বর ওঠানামার মধ্যে আছে। দু’জনের কেউই ঘুমায়নি, হঠাৎ জান্নাতুল বলে ওঠে,“শুনছেন।”
_হু।
_পরশী আসবে আগামী পরশু।
_ভালো কথা।
_আমি ওর সাথে রুপাতলী যাবো এবার?
_আমরা সিলেট যাবো জান্নাতুল। রুপাতলী সামনের মাসে নিয়ে যাবো তোমায় কতবার বলবো? ওখানে কি আছে কি? ঐ তো এক খিটখিটে মামী আর পঁচা কাদা। এতলা উতলা থাকো কেন ওখানে যাওয়ার জন্য?
জান্নাত সুপ্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলল। শামিরের মৃদু ধমকে চুপ হয়ে যায়। রুপাতলী যাওয়া তার কোন জন্মে হয় তা একমাত্র বিধাতাই বলতে পারেন আর পারেন তার পতি! তবে ওখানে জান্নাতের কি আছে এই উত্তরটা জান্নাত মনে মনেই দেয়,ওখানে তার গোটা একটা কৈশোর পরে আছে, যেটাকে জোর করে নষ্ট করে দেয়া হয়েছে তিন কবুল বলিয়ে। কিছু যে নেই,এমনটা তো নয়। ওখানে আর কিছু না থাকলেও স্বপ্ন দেখার স্বাধীনতা ছিলো জান্নাতের,যেটা এই কমলা রঙের রোদের চার দেয়ালে নেই।
______
আজ সতের ঘন্টা পেরিয়েছে গায়ে জ্বর ওঠেনি জান্নাতের, তবে শরীর অতিশয় ক্লান্ত।
জান্নাতের শশুর আর ভাসুর ঢাকা থেকে ফিরেছেন,খুলনা থেকে শায়নও এসেছে ভার্সিটি বন্ধ তাই। বাড়িতে দৈনিক সন্ধ্যা নাস্তা বানাতে শাশুড়িকে সাহায্য করবে তাই জান্নাত উঁকি দিলো রান্নাঘরে।
শামির লাঞ্চে বাড়িতে আসেনি, সন্ধ্যায় এসেই জান্নাতকে দ্রুত রেডি হতে বলায় অবাক হয় রিজিয়া,“মেয়েটা জ্বর থেকে উঠলো, এর মাঝে কোথায় যাবি?”
_রেস্তোরায়।
শান্ত স্বরে জবাব দিলো শামির।
_কেন?
শামির এইবার ইতস্তত করছিল,“সেদিন জ্বরের ঘোরে এটা সেটা খেতে চেয়েছিল। আর অসুস্থ শরীরে একটু ফ্রেশ হাওয়া দরকার,তাই ভাবলাম রিভারপিচে নিয়ে যাই। ফর ডিনার।”
বাড়ির সকলে হা করে শামিরের মুখ দেখে। রিজিয়া ছেলের পা থেকে মাথা দেখছে অবিশ্বাস্য নজরে। পরমুহূর্তেই মুখটা উজ্জ্বল হয় তার। ঘুরে জান্নাতের চোখে চোখ রাখে, চোখের দৃষ্টি দিয়ে জান্নাতকে তিনি বলতে চায়,“দেখেছো? আমার ছেলে মানসিক রোগী না।”
খুশিতে গদগদ হয় তিনি। ছেলেকে ফিসফিসিয়ে বলে,“বেশ ভালো সিদ্ধান্ত। মেয়েটার মনটা ভালো হয়ে যাবে।”
শামির কপাল কুঁ’চ’কে মা’কে বলে,“মন ভালো হবার কি আছে? ও কি খারাপ আছে? অসুস্থ শরীর, ফ্রেশ বাতাসের প্রয়োজন, তাই নিয়ে যাচ্ছি। আর শোনো, এতো গদগদ হতে হবে না, আমার বৌয়ের কখন কি দরকার সেটা আমি বুঝি, প্রয়োজনে ঘুরতে নিয়ে যাবো, তবে অযথা লাই দিয়ে মাথায় তোলার মতো বান্দা আমি নই। ঠিকাছে?”
রুহি খুশিতে লাফাচ্ছে,এর মাঝে তন্ময় কল দিলে উত্তেজিত গলায় বলে,“আরে এখন কথা বলতে পারবো না আমি।”
_কেন?
_মেজো ভাবীকে সাজাবো,ভাইয়া ভাবীকে ডিনারে নিয়ে যাবে।
_বাপরে! সূর্য কোন দিকে উঠলো?
_চুপ করো, আমার মেজো ভাইয়া এতোটাও আনরোমান্টিক নয়।
কল কেটে রুহি জান্নাতকে সাজাতে বসলো, আলমারি থেকে শাড়ি, ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে সাজগোজের জিনিসপত্র নামিয়ে বিছানায় ছড়িয়ে হুলুস্থুল কাণ্ড বাঁধিয়ে দিয়েছে, জান্নাতের এই উত্তেজনায় হাশফাশ লাগছে, আবার খুশিও লাগছে। লোকটা সত্যিই তাকে নিয়ে ঘুরতে বেরোবে?
অনেক বাছাবাছি এবং আলোচনা শেষ করে জান্নাতের জা এবং ননদ তাকে ঘিয়ে রঙা একটা সিল্কের শাড়ি পরিয়েছে, রঙটা জান্নাতের শরীরের সাথে মিলে গিয়েছে, দেখতে বেশ মোহনীয় লাগছে। গলায় সাদা পাথরের একটা চোকার, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগিয়ে ঘোমটা টেনে মাথা ঢেকেই রুহি পেছন থেকে ভাবীকে জরিয়ে ধরে গালে গাল লাগিয়ে চেঁচায়,“মাশাল্লাহ ভাবীইই। তোমাকে পুতুল লাগছে পুতুল। জ্বর থেকে যদি দারুণ কিছু হয় তবে তো জ্বরই ভালো। তোমার প্রতি সপ্তাহে জ্বর হোক মেজো ভাবী, ভাইয়া তোমাকে প্রতি সপ্তাহে ফ্রেশ বাতাস খাওয়াতে নিয়ে যাক।”
সুহানা ধমকে ওঠে রুহিকে,“এসব কেমন ফাজলামি রুহি অসুখ বিসুখ নিয়ে?”
রুহি হাসে। জান্নাত নিজেকে আয়নায় দেখে ,তাকে সত্যিই অপূর্ব সুন্দরী লাগছে। ঠোঁটের ঐ টকটকে লাল লিপস্টিকে নজরে পরতেই জান্নাতের চোখে একটা দৃশ্য ভেসে ওঠে, শামির এই লিপস্টিক দেখে বলছে,“এসব কেন মেখেছো আবার? রাস্তার পুরুষদের জন্য? একটু লাই দিলাম আর অমনি আকাশে উঠে বারোয়ারি মেয়েদের মতো লিপস্টিক মাখতে শুরু করলে চড়া করে?”
সে এক ভয়াবহ দৃশ্য। কল্পনা থেকে টুপ করে জান্নাত মাটিতে পরে,ঘাবড়ে গিয়ে রুহিকে বলে,“লিপস্টিকটা মুছে দাওনা আপু, এটা নিয়ে বকবে আবার।”
_যখন বকবে তখন মুছে ফেলো,এখন চলো।
শামা গাল ফুলিয়ে আছে, সেও মেজো ভাইয়া আর ভাবীর সাথে ডিনারে যেতে চায়। রিজিয়া মুখ ঝামটা দিয়েছে ছোটো মেয়ের এই অবুঝপনা দেখে। শায়ন মেরেছে মাথায় গাট্টা,“আহাম্মক। ভাবীর এই দিনটা নষ্ট হবে। বিয়ের পর প্রথম ভাবী ভাইয়ার সাথে ঘুরতে যাচ্ছে পাবলিক প্লেসে। তুই আরেকদিন যাস।”
রুহি দু’হাতে আগলে ধরে তার মেজো ভাবীকে নিয়ে নিচে নামলো, শামির ফোনে কিছু একটা করছিলো তখন, হঠাৎ মাথা তুলে তাকাতেই তার দৃষ্টি স্থির হয়। ছোটো খাটো, গোলগাল মুখটা থেকে আর নজর সরলো না তার। জান্নাত শামিরের দৃষ্টি পড়তে পারছে না, লোকটা কি রাগ করেছে? এভাবে এতো সাজাতে? অস্বস্তি নিয়ে সে ঘোমটা টানতে ব্যস্ত।
রুহি তখন জোর গলায় বলে,“ও ভাইয়া। ভাবীকে আমি সাজিয়ে দিলাম। দু’জনে ছবি টবি তুলো, আমরা দেখবো। না সাজলে ছবি ভালো আসবে না।”
শামির জান্নাতের মুখ থেকে দৃষ্টি ফেরায় না তখনও। রিজিয়া এসে জান্নাতের হাতে একটা রসুন দিয়ে দেয়, স্নেহের স্বরে বলল,“রাত বিরেতে বাইরে যাচ্ছো,এটা হাত থেকে ফেলো না। ঘোমটা তো সামলাতে পারছো না, হিজাব বাঁধবে নাকি?”
রুহি মায়ের দিকে কপাল কুঁ’চ’কে তাকায়। পুরোটা সাজ নষ্ট করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে ভদ্রমহিলা। মেজাজ টা রুহির পুরোটা খারাপ হলো যখন দেখলো জান্নাত শাশুড়ির কথায় বাধ্য বৌয়ের মতো রাজি হয়, কিন্তু রুহির মেজাজটা ঠান্ডা বানিয়ে দেয় তার মেজো ভাই।
শামির তাড়া দিচ্ছিল জান্নাতকে, বলছিলো,“দেরি হয়ে যাচ্ছে। চলো।”
গাড়িতে দু’জনে চুপচাপ, জান্নাত চোখ বড় বড় করে জানালা দিয়ে রাতের বরিশাল নগর দেখছে। একেবারে সদররোড হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে গাড়ি নদীর পাড়ে। হঠাৎ তার হাতের ওপর হাত রাখে শামির। জান্নাত তাকাতেই বলে,“শীত লাগছে? চাদর বের করো।”
জান্নাতের শীত লাগছে,চাদরটা জরিয়ে নেয় ভালো করে, এরপর দেখতে থাকে শামিরকে। লোকটার মনোযোগ ড্রাইভিংয়ে। আজ এই লোকের কি হলো? প্রশ্নটি শুধু ঘুরপাক খাচ্ছিল জান্নাতের অতটুকু মাথায়।
নদীর পাড়ে দোতলা রেস্তোরা এটি, ছাটকাট চোখ ধাঁধানো, সবটুকুতে শৈল্পিক একটা ব্যাপার রয়েছে। শামিরের পিছু পিছু জান্নাত দোতলায় উঠলো, এখান থেকে নদীটা চমৎকার লাগছে।
ওরা টেবিল বুক করেছে একেবারে এক কোণে, বাহারি রঙের পর্দাঘেরা নিড়িবিলি ঐ কোণটা। জান্নাতের নরম হাতটাকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে এগিয়ে চলছে শামির। জান্নাত চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শুধু চারপাশটাই দেখছিলো মনোযোগী ভঙ্গিতে, এ ধরণের পরিবেশের সাথে তার এই প্রথম পরিচিতি।
হঠাৎ পা থামে শামিরের,জান্নাতও দাঁড়িয়ে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে সামনে তাকাল , ওদের মুখোমুখি একটা জুটি দাঁড়িয়ে পরেছে, তাঁরাও চোখ বড় বড় করে ওদের দেখছে।
শামির একপলক তার সামনে দাঁড়িয়ে পরা মেয়েটিকে দেখে জান্নাতকে বলে,“গিয়ে বসো জান্নাতুল।”
জান্নাত চুপচাপ এগিয়ে যায়। আগন্তুক মেয়েটিও তার পার্টনারকে নিজেদের টেবিলে বসতে বলে শামিরের দিকে তাকায় নিরুদ্বেগ ভঙ্গিতে, ঘুরে একপলক জান্নাতকেও দেখে, তারপর বলে,“এই তোমার মুরগি। পিচ্চি খুব। বয়স কত?”
_মাইন্ড ইয়র ল্যাঙ্গুয়েজ।
_মুরগি বলেছি দেখে রেগে গিয়েছো? ওহহ স্যরি। তবে মুরগিই তো।
শামির এবার দাঁতে দাঁত চেপে বলে,“আর ঐ বুঝি তোমার বলদ? ইউ আর সো ফাস্ট!”
_কেন? তোমরা ছেলেরা ডিভোর্সের দুই মাসের মাথায় মেয়ে জুটিয়ে বিয়ে করতে পারো, মেয়েরা কি করবে? ডিভোর্সের পর বিধবার বেশে ঘুরে বেড়াবে? ইদ্দত পালন করবে?
_না না, তা কেন? তা তোমার এই বলদ মানতে পারে তুমি সপ্তাহে ছয়দিন নাইট ডিউটি করো?
_সে আমাকে বোঝে। সে ভদ্রলোক, শিক্ষিত!
_গ্লাড টু নো দ্যাট, আমি অত শিক্ষিত নই। বাই দ্য ওয়ে, শি ইজ জান্নাতুল, মাই ওয়াইফ। হ্যা একটু পিচ্চিই।
মেয়েটি আরো একপলক জান্নাতকে দেখে মুখ ভেঙচিয়ে শামিরকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়, শামির অস্ফুটে একটা গালি দিয়ে সোজা গিয়ে বসে পরে জান্নাতুলের পাশে। জান্নাতুল এতক্ষণ শামির আর মেয়েটাকেই দেখছিলো, শামির গিয়ে পাশে বসাতে বলে,“কে উনি?”
গভীর মনোযোগে মেন্যু কার্ড দেখছিলো শামির,চোখ না তুলেই জবাব দেয়,“ও ফারিন। তুমি জানো ও কে জান্নাতুল।”
জান্নাত আবারও তাকায় দূরে একটা টেবিলে অন্য একটি ছেলের সাথে বসে থাকা মেয়েটির দিকে। আচমকা মনটা হুহু করে ওঠে জান্নাতের। এই মেয়েটা, তার স্বামীর সাথে ঘনিষ্ঠ হয়েছে। তাকে যেভাবে শামির ছোঁয়,এই মেয়েটাকেও ওভাবে একদিন ছুঁয়েছে। এগুলো ভেবে ভেবে একা একাই অতটুকু মনটা কাঁদতে থাকে তার। বিয়ের সময় এসব নিয়ে ভাবেনি, অথবা এই জটিল বিষয় নিয়ে ভাবার মতো মানসিকতা তার তৈরিই হয়নি তখন। তবে আজ হঠাৎ মন খারাপ হয়। কিন্তু ডিভোর্সী পুরুষ তো সে জেনেই বিয়ে করেছে,এখন এসব নিয়ে ভেবে কি হবে? জান্নাত নিজেকে নিজে বোঝায়।
খাবার আসে পৌনে এক ঘণ্টায়। ততক্ষণ জান্নাত আর শামির নদী দেখেছে,নদী দেখার নামে শামির তার বায়ার্সদের সাথে কথা বলেছে ফোনে, জান্নাতের কাঁধে হাত রেখে। আর জান্নাত ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ফারিনকে দেখেছে।
মেয়েটা সুন্দরী। আচ্ছা শামির কি এখনও এই মেয়েটার কথা মনে করে? এসব ভেবে ভেবে জান্নাতের মাথা খারাপ হচ্ছে। আজ এখানে না আসলেই বুঝি তার ভালো হতো।
খাবার সামনে নিয়ে বসে থাকতে দেখে শামির বললো,“কি হয়েছে? সবসময় তো এখানে যাবো,ওখানে যাবো করো। আজ তো ঘুরতে এলে, ভালো লাগছে না?”
_ওয়াশরুমে যাবো।
_ওদিকটায়। যাও।
জান্নাত একটু হালকা হতে ওয়াশ রুমে যায়, মাথা থেকে ঐ মেয়েটাকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। পুরোপুরি। কিন্তু বিধিবাম,ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়েই করিডোরে দেখা হয় ফারিনের সাথে। জান্নাত অতিশয় বিব্রত হয়ে ফারিনকে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে ফারিন ওর পথ আটকায়,“দাড়াও।”
জান্নাত দাঁড়ায় চমকে উঠে। ফারিন ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলে,“বয়স কত?”
_সতের।
ফারিন তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে,“সতের? কোন ক্লাস?”
_এস.এস.সি. ২০২৩।
_এখন কোন কলেজে পড়ছো?
_পড়ছি না।
_কেন?
জান্নাত কথা বলে না, ফারিন এবার হেসে ফেলে, পরপর হাসি থামিয়ে রাগে ফেটে পরে,“ঐ উন্মাদটা তোমার পড়াশোনা থামিয়ে দিয়েছে তাইনা? ও গড, আচ্ছা ওকে অ্যাসাইলামে পাঠাও না কেন? মাই গুডনেস ওর থেকে ছুটে এসেছি আমি নয়তো লাইফটা আমার শেষ হতো।”
জান্নাত বিব্রতস্বরে বলে,“আপনি পথ ছাড়ুন আমার।”
ফারিন ছাড়ে না, তার কৌতুহলী নজরে জান্নাতকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বলে ওঠে,“নিশ্চয়ই গ্রামের মেয়ে?”
_জি।
ফিচেল হাসলো ফারিন,“হুম। ঠিক ধরেছি, অ্যাজ ইউজুয়াল গ্রামের মেয়েদের মেরুদন্ড থাকে না, কুমারী হয়েও ডিভোর্সী পুরুষ বিয়ে করে নির্দ্বিধায়, বড়লোক পেলেই হলো আরকি! এনি ওয়ে! খুব টাফ হচ্ছে না অতবড় লোকটাকে সামলানো? ঐ পাগল বেডেও ডমিনেটিং,সাচ আ ইনসেন! শুধু নিজেরটা বোঝে! আফসোস হচ্ছে তোমার জন্য!”
জান্নাতের মনে হচ্ছিল সে কেঁদেই ফেলবে। ঠিক তখনই শামির আসে। ফারিনকে দেখে ধমকে বলে,“কি করছো তুমি ওর সাথে?”
ফারিন হাসে, পরপর তাচ্ছিল্য করে বলে,“তোমার বৌকে দেখছিলাম। অসুস্থ লাগছে তোমার বৌকে। বাচ্চা হবে নাকি? আমার কাছে নিয়ে এসো তবে। আমি চেম্বার নিয়ে বসেছি পপুলারে। গাইনোকলজিস্ট ফারিন রহমান। তোমার বৌকে দেখে দেবো।”
চলমান……