#জায়া_ও_পতি
#পর্ব_২২
#ইসরাত_ইতি
নাক থেকে রক্ত ঝরছে তন্ময়ের,শামিরের বাম হাতের অনামিকায় থাকা প্লাটিনামের আংটির আঘাতে কেটে গিয়েছে জায়গাটা । রুহী কাঁদছে। এক হাতে ওষুধে চুবানো তুলোটা ক্ষততে চেপে ধরে আরেক হাতে চোখ মোছে।
তন্ময় ম্লান হেসে ওকে কাছে টানলো, রুহী নাক টানলো,“প্লিজ আজ ছুটি নাও। এভাবে অফিসে যাবে? এভাবে অফিসে যেতে হবে না।”
_আরে বোকা কাদিস না তুই, আর অফিসে যাবো না এটা কেমন কথা? চাকরি থাকবে আমার?
_কিন্তু এই ক্ষত?
_ওতে কিচ্ছু হয়নি। তুই থাক,সাবধানে থাক দরজা আটকে। ওয়াইফাই কানেক্ট করে ফোন ঘাট। খবরদার সারাদিন কেঁদেছিস তো!
রুহী অকস্মাৎ জড়িয়ে ধরে তন্ময়কে, কেঁদে কেঁদে বুক ভাসায়। তন্ময় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বৌয়ের কপালে চুমু খেয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যায়।
তন্ময়ের অফিস নয়টা থেকে পাঁচটা। সংসার জীবনের পনের দিন যাবত অফিস থেকে বেড়িয়ে টুকটাক বাজার নিয়ে তবেই বাড়িতে ফেরে। আজো বাজারে ঢুকবে তাই রুহীকে কল করেছে লাগাতার। রুহী কলটা না ধরাতেই ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে নতুল্লাবাদ বাজারে ঢুকতে গিয়েও ঢুকলো না,বাইকের স্পিড বাড়িয়ে সোজা ছুটলো ফ্ল্যাটে। ভীষণ দুশ্চিন্তা হচ্ছিলো রুহীর জন্য।
বাইকটাকে কোনোমতে বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড় করিয়ে সিঁড়ির দিকে ছোটে। এই বিল্ডিংয়ে লিফট নেই কোনো। পাঁচতলা অবধি তন্ময় রুদ্ধশ্বাসে ছুটতে ছুটতে উঠে দেখলো ওদের ফ্ল্যাটের দরজা খোলা, শুধুমাত্র ভেজিয়ে রাখা।
নিমিষেই বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে তন্ময়ের, কাঁপা হাতে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই থমকাল।
গোটা ঘর অন্ধকার করে মোমবাতি ও ফুলের সমন্বয়ে সাজানো, সুগন্ধি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে পুরো ঘরটাতে। কিছু বুঝতে না পেরে তন্ময় ফাঁকা ঢোক গিলে রুহীর নাম ধরে ডাকলো। শোবার ঘর থেকে রুহী জবাব দিলো নিস্তেজ কন্ঠে,“আমি এখানে!”
সদর দরজা আটকে তন্ময় ধীরপায়ে এগিয়ে শোবার ঘরে ঢুকতেই থমকাল আবার যখন ওর চোখে পরলো রুহী।
একটা টকটকে লাল শিফনের ট্রান্সপারেন্ট শাড়ি জড়িয়েছে শরীরে। কোনো ধরনের প্রসাধনী নেই, অলংকার নেই তবুও ওকে দেখে মনে হচ্ছে ইন্দ্রানী নেমে দাঁড়িয়েছে,এমন লাগছে তন্ময়ের কাছে ওকে। চুল গুলো আঁচড়ে পিঠে ছড়িয়ে দিয়ে রুহী ঘুরে দাঁড়ায়, অভিব্যক্তি হীন মুখে। ওর পা-মাথা তন্ময় দেখে, দৃষ্টি এসে বারবার থামে রুহীর কোমরের কাছে ,ওর ফর্সা পেটে,ওর উন্মুক্ত গলায়। তন্ময় তৃষ্ণার্ত হয়,ঢোক গিলে সেই তৃষ্ণা আড়াল করে।
রুহী চুপচাপ কিছুক্ষণ দেখে তন্ময়ের নাকের ক্ষতটা, অতঃপর ধীরে ধীরে তন্ময়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর গলা আগলে ধরতেই বড় বড় শ্বাস ফেলে তন্ময় ছটফটিয়ে উঠে অস্ফুটে জিজ্ঞেস করে,“কি করছিস কি?”
রুহীর চোখে পানি। দু’হাতে ধাক্কা মেরে ফেললো তন্ময়কে বিছানায়। তন্ময় অবাক চোখে রুহীকে দেখছে। চোখের পানি হাতের আজলায় মুছে নিয়ে রুহী চড়াও হয় ওর বুকের ওপর। ধীরে ধীরে তন্ময়ের গলার টাই খুলে ছুড়ে ফেলে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে কেঁদে ফেলে শব্দ করে, কান্না চেপে বলে,“ভালো মেয়ে হইনি! ভালো বোনও হইনি। ভালো বৌ কেন হবো না? তুমি নাও তোমার অধিকার। আর কত ঘোরাবো!”
সাথে সাথে ওর হাত দু’টো আঁকড়ে ধরে তন্ময়,ধমকে বলে,“তোর মাথা গিয়েছে? একটা চড় খাবি!”
রুহী শোনে না, দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলে,“আমার সায় আছে।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে তন্ময়। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,“তুই সব ছেড়েছিস আমার জন্য, বিনিময়ে একটু ধৈর্য দিতে পারব না তোকে? আর এভাবে কাদিস না, সবাই মেনে নেবে আমি বলছি। একটু সময় দে তাদের! তোর ফ্যামিলি,আমার ফ্যামিলি। সবাই কি এতো সহজে ভুলবে আমাদের? এটা তোর মনে হয়?”
_________
শামিরের হাতে ম্যাগাজিন,ডক্টর তানিয়া রহমানের দেয়া ম্যাগাজিন বইটা। সকালের এই সময়টিতে রোজ একটু একটু করে পড়ে সে, খুবই সিরিয়াস ভঙ্গিতে। আজকাল খুব ব্যস্ত হয়ে পরেছে শামির,খুব একটা বেশি সময় থাকে না বাড়িতে।
সকাল বেলা একবার বমি হয়েছে জান্নাতের,চোখে মুখে পানি দিয়েই ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এসে একপলক শামিরের দিকে তাকায়। দেখে শামির মিটিমিটি হাসছে ম্যাগাজিন দেখে।
পাত্তা দেয়না জান্নাত, ইদানিং লোকটা এমন করছে, প্রেগন্যান্সির ব্যাপারে নতুন নতুন তথ্য জেনে একা একা হাসে। জান্নাতকে পড়ে পড়ে সেসব শোনায়।
“এই জান্নাতুল।”
পিঠ ছড়ানো চুলগুলোকে হাত খোপা করতে করতেই জান্নাত ঘুরে তাকায় শামিরের ডাকে। শামির ম্যাগাজিনে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই হাসতে হাসতে বলে,“এখানে লেখা মায়েদের এই সময়ে অনেক হাবিজাবি খাওয়ার ক্রেভিংস হয়। ভাতের মাড়,মাটি,ইটের টুকরা। রাবিশ! তুমি আবার এসব খেতে যেওনা।”
জান্নাত মলিন হাসে,তবে জবাবে কিছু বলে না। শামির ম্যাগাজিন রেখে উঠে দাঁড়িয়ে গলায় টাই বাঁধতে বাঁধতে বলে,“বইগুলো দেখো। সবগুলো মাইন্ড রিফ্রেশিং। মজা পাবে।”
মৃদু শ্বাস ফেলে জান্নাত কম্পিউটার টেবিলে সারি করে রাখা গল্পের বই গুলো দেখে। এগুলো শামির রকমারি থেকে অর্ডার করে এনেছে যখনই ম্যাগাজিনে পড়েছে প্রেগন্যান্সিতে বই পড়ার উপকারিতা।
জান্নাতের দৃষ্টি উদাস। শামির এগিয়ে এসে ওকে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। নরম দু’টো গাল দু’হাতে আগলে ধরে চুমু খেতে খেতে বলে,“ওহহ জান্নাতুল জান্নাতুল! কতদিন আদর করিনা তোমাকে।”
চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে জান্নাত, শামির ঝুকে বসে ওর পেটে মাথাটা ঠেকিয়ে দিয়ে বলে,“আমার সোনামনি তোমায় পুরোপুরি নিয়ে নিলো আমার থেকে। হিংসা হচ্ছে খুব।”
ইদানীং কেন জানি লোকটার এই অতি আহ্লাদ মাখা কথা জান্নাতকে আবেগী করে না,সে অনুভব করতে পারেনা এই আদর। সটান দাড়িয়ে থাকে, অনুভূতিশূন্য হয়ে। শামির উঠে দাঁড়িয়ে আবারো বলে,“বই গুলো পড়ো। আমি খুঁজে খুঁজে অর্ডার করেছি।”
_ওসব পড়লে কি হবে?
ম্লান কন্ঠে জান্নাত জিজ্ঞেস করে।
_কি হবে আবার! মন ফুরফুরে থাকবে। নামাজ পড়া, কোরআন পড়ার পাশাপাশি প্রেগন্যান্সিতে বই পড়ার অভ্যাস করা ভালো। মায়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে বেবি কতটা সুস্থ হয়ে আসবে দুনিয়াতে। আমি চাইনা আমার বেবি খিটখিটে হোক।
মৃদু শ্বাস ফেলে জান্নাত বিড়বিড় করে জানতে চায়,“ওসব পড়লে আমি নষ্ট হয়ে যাই যদি? যদি বেশি বুঝে ফেলি?”
শামির সম্ভবত সেকথা শোনেনি,একটা কল আসায় সে ফোন কানে চেপে ধরে বেরিয়ে যায়।
জান্নাত দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেখতে থাকে বইগুলোকে।
শামির অফিসে যাওয়ার পরের সময়গুলো জান্নাত বই পড়েই কাটিয়ে দেয়। আগে এই সময়টা শাশুড়ির কাছে গিয়ে বসে থাকতো, তবে তার শাশুড়ি মনমরা হয়ে পরে থাকে ইদানিং মেয়ের শোকে, খুব একটা যায়না জান্নাত তাই, কারো সঙ্গ পছন্দ করেন না রিজিয়া। বাড়ির ছেলেগুলো সাফসাফ জানিয়ে দিয়েছে রুহী এবাড়ির ত্রিসীমানায় আসতে পারবে না।
সুহানার ঘরের দরজা খোলাই ছিলো, সকাল সকাল জান্নাত অকারণেই ঢুকে দেখলো সুহানা কাঁদছে। জান্নাতকে দেখতে পেয়েই চোখ মুছে সামান্য হাসার চেষ্টা করলো।
_কাদছো কেনো ভাবী?
জান্নাত এগিয়ে যায় উদ্বিগ্ন হয়ে। গিয়ে ওর মাথায় একটা হাত রাখতেই সুহানা ফুঁপিয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে জান্নাতকে বলে তার মন খারাপের কারণ। রাজনের সাথে বিয়ের পাঁচ বছর চললো, দুই বছর ধরে বাচ্চার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে তারা, একটা বাচ্চা হলো না এখনো। এ নিয়ে রাজন নির্ঘুম রাত কাটায়। সমস্যাটা সুহানার নয় সুহানা জানে, পরিক্ষা করেছে, সমস্যাটা রাজনের কিনা সেটা পরিক্ষা করাতে নারাজ রাজন।
জান্নাত অবাক হয়ে জানতে চাইলো,“কেন ভাবী? ভাইয়া এমন করেন কেন?”
কাঁদে সুহানা, ছোটো বোনের মতো দেখে জান্নাতকে, অনেক কষ্টে কথা গুলো বলেই ফেলে,“কেন আবার। এটা যে একটা অসুখ এটা তো কিছু পুরুষ মানতেই পারেনা, তারা ভাবে এটা পুরুষত্বহীনতার লক্ষণ। যৌনমিলনে সম্পূর্ণ সক্ষম এক পুরুষ বাচ্চা হওয়াতে বারবার ডাক্তারের শরনাপন্ন হয় এটা লোক জানাজানি হলে তাদের মান থাকবে? ডাক্তারের কাছে গেলে তাদের অপমান হবে! বাচ্চা না হওয়ার পেছনে পৌরুষের কোনো সম্পর্ক আছে বলো? এটা ওকে ইনডিরেক্টলি বোঝাতে গিয়েছি বহুবার,ও বুঝতেই চায়না, এড়িয়ে যায়। ওর সাথে তো আমি সুখী! ও ভয় কেন পাচ্ছে জানি না। অথচ ডিপ্রেশনে ভোগে! তুমি বুঝবে না জান্নাত এসব তুমি বুঝবে না।”
জান্নাত বুঝবে না, পুরুষের এতো কাহিনী সে বুঝতেও চায়না। বৌ চোখে চোখ রাখলেই পৌরুষ কমে যায় যাদের,এদের এতো কেচ্ছাকাহিনী আর শুনতে চায়না জান্নাত। সুহানাকে সে ছোট হয়ে কি সান্ত্বনা দেবে? চুপচাপ বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।
ঘরে তার ফোনটা বাজছে। জান্নাত ধরতে চায়না ঐ ফোন, নিশ্চয়ই মামী কল করেছে,ধরলেই মাথা ধরিয়ে ফেলবে জান্নাতের,“হ্যারে জান্নাত জামাই তোর নামে ডিপোজিট করছে? এহনো করেনাই? ঐ গাধী,এখনই তো মোক্ষম সুযোগ, তুই তোর নামে একটা অ্যাকাউন্ট খুইলা নে। সবকিছুর নমিনি নিজের নামে নিয়া নে।”
এসব কথাই বলে মামী সারাদিন। শামির জান্নাতের নামে ডিপোজিট না করলেও অনেক কিছু করেছে গত কিছুদিনে। অনাগত বাচ্চার জন্য দুইটা অ্যাকাউন্ট খুলেছে ব্যাংকে। অতি উৎসাহী শামির চৌধুরী কয়েকদিন পর পর অতি উৎসাহ নিয়ে জান্নাতকে হিসেব দেখায়,“এই দেখো আজ পুবালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে পঞ্চাশ হাজার রেখেছি, এই দেখো আজ ইসলামী ব্যাংকে একলাখ বিশ রেখেছি। জমাতে হবে জান্নাতুল বুঝলে, জমাতে হবে। ব্যবসা করি,কখন লস খাই বলাতো যায়না , এগুলো আমার সোনামনির ফিউচারের জন্য। অনেক বড় করবো তাকে। জানো আমার স্বপ্ন ছিলো পাইলট হওয়ার। আমি হতে পারিনি টাকা থাকলেও। আমার ছেলেমেয়ে আমার স্বপ্ন পূরণ করবে।”
কথাগুলো বলতে বলতে শামির ভীষণ আবেগী হয়। জান্নাত কৌতুহলী হয়ে জানতে চেয়েছে,“মেয়েকেও পাইলট বানাবেন?”
শামির অফিসের ফাইল দেখতে দেখতে উচ্ছ্বসিত হয়ে জবাব দেয়,“হু তো। সব কটাকে এক লাইনে পড়াবো।”
শামিরকে তখন চেয়ে চেয়ে দেখেছে জান্নাত। তারপর সামান্য হেসে বলেওছে,“আপনি খুব ভালো বাবা হবেন।”
এসব কথা জান্নাত নিচুগলায় বলে, শামির শুনতে পায়না।
কলটা এসেছে একটা অচেনা নাম্বার থেকে, শামির নিষেধ করেছে জান্নাতকে বহু আগে জান্নাত যাতে কোনো অচেনা নাম্বার না ধরে। তবে নাম্বারটা লাগাতার কল দিচ্ছে দেখে জান্নাত রিসিভ করে। হ্যালো বলবে তার আগেই ওপাশ থেকে কেউ ডেকে ওঠে কান্না মিশ্রিত গলায়,“মেজো ভাবী!”
চমকে ওঠে জান্নাত, পরপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,“রুহী আপু! তুমি ভালো আছো রুহী আপু?”
_ভালো আছি,তুমি আমার ওপর রেগে আছো ভাবী? আমি ছলনা করেছি বলে?
_রেগে নেই,তুমি সত্যি করে বলো তুমি ভালো আছো তো?
_আছি। ভাবী বাবা কেমন আছে?
_বাবা ভালো নেই রুহী আপু….
আচমকা হাতে টান খায় জান্নাত,ঘুরতেই কেঁপে ওঠে। শামির ওর ফোনটা টেনে নিয়ে কানে চেপে ধরে চেঁচিয়ে ওঠে,“একদম কল করবি না তুই এ বাড়ির কাউকে বেইমান অজাত কোথাকার।”
জান্নাত গুটিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। শামির কল কেটে রুহীর নাম্বারটা ব্লক করে ফোনটা জান্নাতের হাতে দেয়। তারপর তার ফোন দু’টো নিয়ে বেরিয়ে যায় অফিসের উদ্দেশ্যে।
জান্নাত দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিচে নামে, শারাফাত চৌধুরীর শরীরটা আজ দু’দিন ধরে ভালো যাচ্ছেনা,কেমন ঝিমিয়ে থাকছেন। দরজায় দাঁড়িয়ে জান্নাত ডাকে,“বাবা চা খাবেন? চা বানিয়ে দেবো?”
নিষেধ করে দেয় শারাফাত। জান্নাত ঢোকে দাদী শাশুড়ির ঘরে, মাইমুনা আজ জান্নাতকে দেখেই খেকিয়ে ওঠে,“ঐ লাট সাহেবের বৌ মাগীর ঘরের মাগী! আইজকাইল তো এই ঘরে আইতেই চাওনা? সাপের পাঁচ পা দেখছো পেট বাজাইয়া?”
মাইমুনার পানদানিতে পান রাখতে রাখতে জান্নাত নির্বিকার চিত্তে জবাব দেয়,“এভাবে গালাগালি করলে যা আসি সেটুকুও আসবো না কিন্তু।”
_তুই আমারে হুমকি দ্যাস? তুই মা’রা মাগী। হ্যাতে মোর বালের উফরিদ্যা জোয়ার যায়! যা ভাগ!
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে জান্নাত বসে,তার হাতে একটা বই,কপট রাগ দেখিয়ে বলে,“চুপ করুন। এতো বাজে কথা বলে না। আল্লাহ পাপ দেবে। আজ আপনাকে পড়ে শোনাবো গালিবাজের সাথে মরণের পরে কি কি হয়।”
মাইমুনা বসে বসে হাদিস শুনলো। একপর্যায়ে তার চোখে পানি এলে সে তওবাও করে নিলো। জান্নাত বইটা রাখতেই মাইমুনা ওর হাত খপ করে ধরলো,সরু চোখে ওকে দেখতে দেখতে বলে,“তোর পোলা হইবে মাগী।”
_আবার গালী!
_আরে ভালোবাইসা মাগী ডাকি। তোরে আমি খুব পছন্দ করি জানোস? কারণ তুই আবুল। আমার আবার চালাক মানুষ পছন্দ না।
_আমার ছেলে হবে কি করে বুঝলেন?
_তোর গায়ের রঙ ময়লা হইতেছে। মাতারিগো পেটে পোলা আইলে চেহারা নষ্ট হয়,মাইয়া আইলে উজ্জ্বলতা বাড়ে। আচ্ছা হোন, তোর ভাতার তোর কাছে আসে রাইতে?
জান্নাত লজ্জা পেয়ে দুই পাশে মাথা নাড়ায়, মাইমুনা বলতে থাকে,“চোখ কান খোলা রাখপি এই সময়। বৌ পেট বাজাইলে এই পুরুষ জাতের খায়েশ ভাদ্র মাসের কুত্তার পাগলামির মতো তরতর কইরা বাইড়া যায়।”
_সব পুরুষ তো এক না দাদী,আর সব মেয়েও এক না।
_ব্যাবাক মাইয়া এক কিনা জানি না,তয় ব্যাবাক ব্যাডা মানুষই এক। এ্যাগো একটাই উদ্দেশ্য জীবনের আর হেইডা হইলো ফু…..
আর কিছু বলতে দিলো না দাদী শাশুড়িকে জান্নাত। মুখ চেপে ধরে বলল,“দোহাই। আমি কিন্তু বেড়িয়ে যাবো!”
মাইমুনা হাসছে, খিলখিল করে হাসছে। বাইরে তখন কলিং বেলের আওয়াজ। ঘোমটা টেনে জান্নাত এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো একটা বিশাল বক্স নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক পুরুষ লোক। জান্নাত গুটিয়ে যায়, লোকটা বলল,“ম্যাম পার্সেল। এই ঠিকানা থেকে শামির চৌধুরী পনের কেজি কাঁচা আম অর্ডার করেছিলেন ।”
চোখ বড় বড় করে জান্নাত বক্স দেখে। পনেরো কেজি! পনেরো কেজি দিয়ে কি হবে!
লোকটার থেকে পার্সেল রিসিভ করে জান্নাত শামিরকে কল করলো, ওপাশ থেকে শামিরের ব্যস্ত গলা,“সময় দিতে পারবো না জান্নাতুল, দ্রুত বলো।”
_পার্সেল এসেছে। পনেরো কেজি কাঁচা আম!
_হ্যা তো রিসিভ করে রেখে দাও।
_এতো আম কি করবো?
_আশ্চর্য ,খেতে চাইলে না?
_এতো আম?
_আস্তেধীরে খাও,আর শোনো। বেশি ঝাল খাবে না সাথে, আমার বেবির কষ্ট হবে।
কল কেটে জান্নাত মৃদু শ্বাস ফেলে। এই লোককে হয়তো জান্নাত বুঝতে পেরেও পারবে না কখনো।
চলমান……