ঝলসে যাব জানি পর্ব-১০

0
165

#ঝলসে_যাব_জানি
#Part_10
#ইয়াসমিন_খন্দকার

রূপকথার ওড়না ধরে টান দিলো বাপ্পী। রূপকথা অনেক চেষ্টা করেও ধরে রাখতে পারল না। ভয়ে ছিটিয়ে গেল মেয়েটা। চারপাশে থাকা পুরুষদের লোলুপ দৃষ্টি তার উপর স্থিত। রূপকথা তাদের সবার মাঝে যেন এক একটা জানোয়ারকে দেখতে পারছে। ধীরে ধীরে বাপ্পী রূপকথার কাছে আসতে লাগল। বাপ্পীর চেহারায় হিংস্রতা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে রূপকথা। রূপকথা বলতে থাকে,”প্লিজ ভাইয়া..আপনি আমার ভাইয়ের মতো। দয়া করে আমার সাথে এমন নোংরা কাজ করবেন না।”

বাপ্পী শয়তানের মতো হেসে বলে,”আমার বোনের দরকার নাই..আমার তো শয্যাসঙ্গী দরকার।”

বলেই একটানে রূপকথার সালোয়ারের কিছু অংশ ছিড়ে ফেলল। রূপকথা কাঁদতে লাগলো ভীষণ জোরে। কান্নার গতি বাড়লো অনেক বেশি৷ এরইমধ্যে বাপ্পীর দূরত্ব ঘুছিয়ে কাছে আসার চেষ্টা চালিয়ে গেলো। রূপকথার কাছে এসে বলল,”তৈরি হয়ে নে আমার কাছে আসার জন্য..”

রূপকথার কাছে এসে বাপ্পী আরো কিছু করতে যাবে তার আগেই সেখানে চলে আসলো আহনাফ। এরকম কিছু ঘটতে পারে সেটা সে বুঝতেই পারে নি। তার মনে পড়লো কিছু সময় আগের কথা। যখন সে রূপকথাকে কল করেছিল তখন রূপকথা ফোনটা রিসিভ করে বলে,
“সাভারের মেইন রোডের দিকে যেই পরিত্যক্ত বাড়িটা আছে সেখানে চলে এলো প্লিজ। এখন আর কিছু জানাতে পারব না।”

তখন রূপকথার কন্ঠ শুনেই সে বুঝেছিল নিশ্চয়ই কোন বিপদে পড়েছে রূপকথা। কিন্তু সেই বিপদটা যে এমন কিছু হতে পারে সেটা মাথাতেও আসেনি৷ রূপকথার কাছে এগিয়ে আসার চেষ্টা করছিল তখন বাপ্পী৷ আহনাফের মাথায় রাগ চড়ে বসে। সে হুংকার দিয়ে বলে ওঠে,”এখনই থেমে যা বাপ্পী। আমার রূপের দিকে আর এক পা এগোলে আমি তোকে শেষ করে দিব।”

বাপ্পীর কানে যায় আহনাফের করা হুংকার। সে পিছনে ফিরে বলে,”বাহ, তাহলে তুই চলে এসেছিস। ভালোই হলো, নিজের চোখের সামনে দেখ আমি তোর প্রেমিকার কি অবস্থা করি।”

আহনাফকে দেখে রূপকথা আশার আলো খুঁজে পায়। কাতর কন্ঠে বলে,”আমাকে বাঁচাও আহনাফ। এই নোংরা লোক গুলো আমায়…”

রূপকথা তার কথা সম্পূর্ণ করার আগেই বাপ্পী তার মুখ চেপে ধরে বলে,”চুপ কর মা**। নোংরা ছোয়ার এখনো কিছু দেখিস নি তুই। আহনাফ তোকে কি সুখ দেয় আজ তার থেকে অনেক বেশি সুখ আমি তোকে দেব।”

আহনাফ এগিয়ে এসে বাপ্পীর থেকে রূপকথাকে আলাদা করতে চায় কিন্তু বাপ্পীর লোকেরা তাকে আটকে রাখে। রূপকথা সমানে চিৎকার করতে থাকে। এদিকে বাপ্পী নিজের পোশাক খুলতে আরম্ভ করে। আহনাফ নিজের সর্বশক্তি দিয়ে সবাইকে সরিয়ে রূপকথার কাছে গিয়ে বাপ্পীকে ঠেলে দূরে সরিয়ে রূপকথাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”তুমি চিন্তা করো না রূপ। আমি আছি তোমার কাছে। আমি জীবিত থাকতে কেউ তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।”

রূপকথা সমানে কেঁদে চলেছে৷ একটা নারীর কাছে সব থেকে দামী হলো তার সম্মান। আর এই লোক গুলো আজ তার সেই সম্মানের দিকেই হাত বাড়িয়েছে। এটা মেনে নেওয়া কঠিন তার জন্য। আহনাফ শক্ত মুখে বলে,”যারা তোমার সাথে এমন নোংরা কাজ করতে চেয়েছে তাদের কাউকে আমি ছাড়ব না।”

রূপকথা আহনাফকে আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। বাপ্পী এসে রূপকথাকে নিজের কাছে টেনে নেয়ার চেষ্টা করে। তার সাগরেদরাও একই চেষ্টা করে। আহনাফ বলে ওঠে,”আমার জান থাকতে আমার রূপকে তোদের নোংরামোর স্বীকার হতে দেব না।”

বাপ্পী হাতে একটা রড তুলে নিয়ে বলে,”তাহলে মর…”

বলেই জোরে আঘাত করে আহনাফের শরীরে। একে একে তার সব সাগরেদরাও হাতে রড তুলে নেয়। প্রত্যেকে সমানে আঘাত করতে থাকে আহনাফের শরীরে। আহনাফ এত আঘাত সহ্য করেও রূপকথাকে ছেড়ে দেয়না। বরং আরো বেশি করে আগলে রেখে বলে,”একদম চিন্তা করো না রূপ। আমি আছি…”

রূপকথা কান্না করে বলে,”ওরা তোমায় মারছে আহনাফ..”

“হুস, আমার লাগছে না। নিজের উপর সব আঘাত আমি সইতে পারবো কিন্তু তোমার অসম্মান আমি সইতে পারবো না।”

হঠাৎ করেই বাপ্পী আঘাত করে বসে আহনাফের মাথায়। পরপর তিন বার আঘাত করতেই আহনাফ মাটিতে পড়ে যায়। রূপকথা আহনাফের পাশে বসে বলে,”আহনাফ..”

কিন্তু সে কোন সাড়া দেয় না। রূপকথা আবারো তার নাম ধরে ডাকে। আহনাফের একটু চেতনা ফেরে। তার মাথা চুইয়ে রক্ত পড়ছে। রূপকথা এই দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে কাঁদতে থাকে। আহনাফ মৃদু হেসে বলে,”তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারি না রূপ..তোমায় সবসময় হাসতে দেখতে চাই..তোমার হাসি যে আমার বড্ড প্রিয়..আমি থাকি বা না থাকি তোমার মুখে এই হাসি যেন সবসময় থাকে…”

বলেই সে হাল ছেড়ে দেয়। রূপ চিৎকার করে বলে,”আহনাফ..এই আহনাফ..কথা বলো আমার সাথে..আমি তোমার কিছু হতে দিবো না।”

মান্না ভীত গলায় বাপ্পীকে বলে,”এটা কি হলো বস? শেষ পর্যন্ত কি মাডার কেসে ফেসে যাব?”

বাপ্পী নিজেও ভীষণ ভয় পেয়েছে। সে বুঝতে পারল না হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেল। তবুও সাহস নিয়ে বলে,”এমন কিছু হবে না। মামা, সব ম্যানেজ করে নিতে পারবে। কিন্তু এই মেয়েটাকে এভাবে ছেড়ে দিলে চলবে না৷ এটাকেও খতম করে দিতে হবে।”

বলেই রড নিয়ে এগিয়ে যায় রূপকথার দিকে। আঘাত করতেই যাবে এমন সময় পুলিশের গাড়ির সাইরেন শুনতে পেয়ে যায়৷ বাপ্পী ভয় পেয়ে যায়। মান্না বলে,”বস, মনে হয় পুলিশ এসে গেছে…”

বাপ্পী বলে,”বাঁচতে চাইলে পালা..আর এই মেয়েটাকেও সাথে নে।”

মান্না রূপকথাকে তুলে নেয়। সবাই মিলে একসাথে পালানোর চেষ্টা করতেই রূপকথা তাদের হাত ছেড়ে পালায়। পুলিশকে আসতে দেখে তারাও আর না থেমে সামনের দিকে পা বাড়ায়।

এদিকে রূপকথা আহনাফের কাছে এসে বসতেই দৌড়ে সেখানে প্রবেশ করে দূর্জয় এবং সাগর। আহনাফ তাদের ফোন করে এখানে আসতে বলেছিল এবং সম্ভাব্য বিপদের কথা জানিয়েছিল। তাই তারা পুলিশের গাড়ির সাইরেন বাজিয়েছিল। কিন্তু আসলে পুলিশ আসে নি। তারা কাছে আসতেই রূপকথাকে আহনাফের কাছে এভাবে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে যায়। দূর্জয় বলে ওঠে,”কি হয়েছে ওর?”

আহনাফের মাথা থেকে পড়া তরল রক্তের স্রোত দেখে তারা ভীত। রূপকথা বলে,”আমি সব পরে বলছি৷ আগে আপনারা প্লিজ ওকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।”

~~~~~~~~~~
ওটির বাইরে বসে আছে দূর্জয়, সাগর এবং রূপকথা। রূপকথার কাছে সব ঘটনা শুনে দূর্জয় রীতিমতো কাপছে। প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে এখন তার মনে। সে বলে ওঠে,”ঐ বাপ্পীকে তো আমি দেখে নিবো।”

সাগর বলে,”তুই শান্ত হ বাপ্পী। এমনি আহনাফের সাথে এমন একটা অঘটন ঘটে গেছে এখন আমাদের শান্ত থাকতে হবে।”

“কিভাবে শান্ত থাকব? ওরা আমার বন্ধুর এই অবস্থা করছে..আজ যদি আহনাফের কিছু হয়ে যায়…তাহলে ট্রাস্ট মি..আমি ওদের সবার কলিজা বের করে আনব।”

এমন সময় কর্তব্যরত ডাক্তার বাইরে বের হয়ে আসে। তাকে দেখেই রূপকথা এগিয়ে গিয়ে বলে,”আহনাফ..আমার আহনাফ এখন কেমন আছে?”

সাগর, দূর্জয়ও তার পিছন পিছন যায়। ডাক্তার মলিন স্বরে বলে,”সরি, আমরা নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি কিন্তু ওনাকে বাঁচাতে পারিনি। ওনার ব্রেইনে ইন্টারনাল হ্যামারেজ হয়েছিল..সবকিছু হাতের বাইরে ছিল..”

রূপকথা এই ধাক্কাটা মেনে নিতে পারে। তার সামনে ভেসে ওঠে আহনাফের মুখশ্রী এবং তার বলা শেষ কথা। সে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যেতে নেয়, সাগর তাকে আগলে নেয়। এদিকে দূর্জয় প্রবল আক্রোশ নিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে। আজ সে ঐ বাপ্পীকে চরম শিক্ষা দেবে। বন্ধুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবেই।

to be continue…..