ঝলসে যাব জানি পর্ব-১১

0
165

#ঝলসে_যাব_জানি
#Part_11
#ইয়াসমিন_খন্দকার

রূপকথার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সে নিজেকে বিছানায় শোয়া অবস্থায় আবিষ্কার করল। তার শিওরে বসে ছিল তার বান্ধবী আমিয়া। রূপকথা জ্ঞান থেকে উঠেই বলতে থাকে,”আমার আহনাফ কোথায়? আমাকে আহনাফের কাছে নিয়ে চল। ওর নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট হচ্ছে..ঐ নির্দয়রা ওকে কত বাজেভাবে মে*রেছে…”

আমিয়া বলে,”তুই শান্ত তো রূপ। আহনাফ ভাইয়া আর নেই..”

রূপকথা ক্ষেপে গিয়ে বলে,”চুপ..একদম চুপ..”

আমিয়া বুঝতে পারে না কিভাবে বোঝাবে রূপকথাকে। রূপকথা যে এখন কোন কিছুই বোঝার অবস্থায় নেই৷ তবুও আমিয়া বলল,”তুই নিজেকে প্লিজ সামলা।”

রূপকথা অস্থির হয়ে উঠতে লাগল। আমিয়া রূপকথাকে কিছুতেই সামলাতে পারল না।

বাইরে সাগর এবং মুন্না বসে আছে দূর্জয়ের অপেক্ষায়। ছেলেটা সেই যে বেড়িয়েছে এখনো আসার খোঁজ নেই৷ দুজনেই বেশ চিন্তিত তার জন্য। দূর্জয় যে রেগেমেগে বেড়িয়েছে তাতে বোঝাই যায় সে আজ দক্ষযজ্ঞ বাধিয়ে ছাড়বে। আহনাফের এই পরিণীতি তো বন্ধু হিসেবে তারাও মেনে নিতে পারছে না কিন্তু কিছু যে করার নেই। এই সময় মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। তারা এই ব্যাপারটাকে দূর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছে। কারণ আসল সত্য সামনে এলে তারা সবাই বিপদে পড়তে পারে এমনকি পুলিশ কেইসেও ফেসে যেতে পারে। তাদের এহেন ভাবনার মাঝেই দূর্জয় হন্তদন্ত পায়ে ফিরে এলো। তাকে আসতে দেখেই সাগর এগিয়ে এসে বলল,”ঐ বাপ্পীর কোন খোঁজ পেলি?”

দূর্জয় বলে,”না, ওর কোন খোঁজ আমি পাই নি। জানিনা শু*রের বাচ্চাটা কোথায় গিয়ে লুকাইছে। খুঁজে পেলে তো এক কোপে শেষ করে দিতাম।”

আহনাফের কথাও মনে পড়ে যায় তার। বন্ধুকে এভাবে হারানো তার জন্য কষ্টের। শেষবারের মতো কথাও বলার সুযোগ দিল না। ছেলেদের কাঁদতে নেই সেই নিয়ম আর মানতে পারলো না দূর্জয়। আহনাফের কথা ভেবে তার দু চোখ বেয়ে অশ্রু নামল। এরমধ্যে কয়েকজন অটি থেকে আহনাফের লাশ নিয়ে বাইরে এলো। উদ্দ্যেশ্য, এই লাশ মর্গে নিয়ে যাওয়া। দূর্জয় সেদিকে তাকালো। রূপকথা দৌড়ে ছুটে এসে আহনাফের লাশকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। উন্মাদের মতো বলতে লাগল,”এই আহনাফ..তাকাও আমার দিকে।”

আহনাফ কোন সাড়া দেয় না। কিভাবে সাড়া দেবে? সে যে আর সাড়া দেয়ার মতো অবস্থাতে নেই। রূপকথা বলতে লাগল,”ও বুঝেছি আমার উপর অভিমান করেছ, তাই না? আমি তোমাকে এত দিন এড়িয়ে চলেছি জন্য তার শোধ এভাবে তুলছ। সেদিন যে বলেছিলে নিজের জীবন দিয়ে হলেও ভালোবাসার প্রমাণ দেবে সেটাই করতে চাইছ? এভাবে প্রমাণ দিতে হবে না তোমায়। আমি জানি তুমি আমাকে কতোটা ভালোবাসো। প্লিজ আমার কাছে ফিরে আসো আহনাফ।”

আমিয়া রূপকথার কাছে এসে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে বলে,”এমন করিস না রূপ..শান্ত হ..”

দূর্জয়ের হঠাৎ ভীষণ রাগ হলো। সে এদিকে এগিয়ে এসে বলল,”তোমাদের নাটক শেষ হয়েছে?”

আমিয়া অবাক চোখে তাকায় দূর্জয় এর দিকে। রূপকথা তখনো তার পানে তাকায় নি। তার দৃষ্টি আহনাফের নিথর দেহের প্রতি নিমগ্ন। দূর্জয় রূপকথার দিকে আঙুল তুলে বলে,”আহনাফের মৃত্যুর জন্য তুমি দায়ী। আহনাফ তোমায় কত ভালোবাসত কিন্তু তুমি সেই ভালোবাসা বোঝো নি।”

আমিয়া বলে,”এর মানে কি দূর্জয়? আপনি কেন আমার বান্ধবীকে দোষ দিচ্ছেন? ওর কি দোষ এতে?”

“তোমরা মেয়ের জাত ভালোবাসার মূল্যই বোঝো না। ভালোবাসা তোমাদের কাছে ছেলে খেলা। আহনাফ রূপকথাকে কতই না ভালোবাসত। আর রূপকথা কি করলো? ওকে উপেক্ষা করল বারংবার। যার জন্য মৃত্যুর আগ অব্দি আহনাফ তড়পেছে।”

রূপকথা এতেক্ষণে কথা বলে,”আমি আহনাফকে ভালোবাসতাম। এখনো বাসি। আমার ভালোবাসাকে নাটক বলবেন না একদম। আপনার মুখে এই কথা মানায় না। আপনার জন্য আমার সাথে আহনাফের মনোমালিন্য হয়েছে।”

অবস্থা বেগতিক দেখে সাগর এগিয়ে এসে বলে,”এসব ঝামেলা বন্ধ করো তোমরা। আহনাফ আর আমাদের মাঝে নেই। আর তোমরা একে অপরের দিকে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করতে ব্যস্ত।”

রূপকথা চুপ থাকে। কিন্তু আমিয়া দূর্জয়ের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আপনার এই ভুল ধারণা আমি খুব শীঘ্রই ভেঙে দেব। আপনাকে বুঝিয়ে দেব মেয়েরাও ভালোবাসতে পারে। তারাও নিজের ভালোবাসার জন্য সব করতে পারে। মিলিয়ে নেবেন আপনি।”

দূর্জয় রক্তিম চোখে আমিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় তার চোখে অসীম জেদ৷ যা তাকে নাড়িয়ে দেয়। দ্রুতই সে নিজেকে সামলে নিয়ে স্বগোতক্তি করে বলে,”এই মেয়ে এক নাম্বার প্রতারক। এর কথা কিছুতেই শোনা যাবে না। ভুললে চলবে না এ আমায় কিভাবে বোকা বানিয়েছে।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আহনাফের লাশ তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে নিয়ে আসা হয়েছে। দূর্জয়, সাগর, মুন্না সবাই এখানে এসেছে। রূপকথা ভীষণ অসুস্থ হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যদিও দূর্জয় এর কাছে সবটাই নাটক মনে হয়েছে।

আহনাফের মা-বাবা, বড় ভাই, ভাবি আর একমাত্র বোন সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েছে। দূর্জয় নিজের কাধে নিজের বন্ধুর লাশ বহন করে আর প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হয় এর প্রতিশোধ সে নেবে। যারা আহনাফকে মে*রে ফেলেছে তাদের সবাইকে সে শেষ দেখে ছাড়বে। তাদের সবাইকে সে মৃত্যুর পথে পৌঁছে দেবে নিজ দায়িত্বে।

২ দিন পর,
রূপকথা আজ একটু সুস্থ বোধ করায় জেদ ধরে আহনাফের কবর দেখতে যাবে। তার জেদের কাছে পরাস্ত হয়ে আমিয়া তাকে নিয়ে এসেছে মানিকগঞ্জে। কবরস্থানে মেয়েদের প্রবেশের অনুমতি নেই। তাই রূপকথা বাইরে থেকেই দেখে চলেছে। কান্না পাচ্ছে ভীষণ তার। তবুও আজ সে কাঁদছে না। বরং সে শুধু আরক্তি নিয়ে দেখছে। রূপকথাও আজ এখান থেকে প্রতিজ্ঞা করে নেয়,”যারা তোমার থেকে আমাকে আলাদা করেছে তাদের সবাইকে আমি দেখে নেব।”

এদিকে দূর্জয় আহনাফের বড় ভাইয়ের সাথে কবর স্থানের সামনে উপস্থিত হয়ে তাদের দেখে ফেলে। আমিয়া দূর্জয়কে দেখে তার দিকে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকায়। দুদিনেই লোকটা কত শুকিয়ে গেছে। দূর্জয় এগিয়ে এসে বলে,”তোমরা আবার কোন নতুন নাটক করতে এসেছ?”

রূপকথা বলে,”নাটক করতে নয়..নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে শেষ বার দেখতে এলাম দূর থেকে। ও নিশ্চয়ই এখন খুব শান্তিতে ঘুমাচ্ছে..তাই না?”

দূর্জয় ঠেস মেরে বলে,”হ্যাঁ, বেচে থাকতে তো ওকে শান্তি দাও নি। তাই এখন ওকে মরে গিয়ে শান্তি খুঁজতে হচ্ছে।”

আমিয়া বলে ওঠে,”আপনি কথায় কথায় রূপকে অপমান করা বন্ধ করুন। আপনি বুঝবেন না, ভালোবাসা হারানোর কষ্ট কি। তবে দেখবেন, একসময় ঠিকই ভালোবাসার মূল্য বুঝতে পারবেন। সেদিন বুঝতে পারবেন রূপকথার উপর দিয়ে কি ঝড় বয়ে যাচ্ছে।”

দূর্জয় তার কথার কোন গুরুত্ব না দিয়ে কবরস্থানের ভেতরে প্রবেশ করে। আহনাফের কবরের সামনে গিয়ে বলে,”তোর খু**নিদের রক্তে আমি তোর কবর ভাসিয়ে দেব। কথা দিলাম। যারা যারা তোকে মে*রেছে তাদের সবার রক্তে তোর কবর ভিজে উঠবে।”

তার পাশে দাঁড়ানো আহনাফের ভাই একথা শুনে আতকে ওঠে৷ দূরে দাঁড়িয়ে আমিয়া বলে,”সবাই এখন প্রতিশোধের নেশায় আছন্ন। কিন্তু এরমধ্যে আমি এক নতুন নেশা ছড়াতে চাই..ভালোবাসার নেশা।”

to be continue…..