#ঝলসে_যাব_জানি
#Part_13(ধামাকা)
#ইয়াসমিন_খন্দকার
বিলাসবহুল একটি রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে শুভ্র এবং আমিয়া। শুভ্রই মূলত আমিয়াকে এখানে আসতে বলেছিল কিছু প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য। আমিয়ারও কিছু জানানোর ছিল। এই কারণে সেও চলে এসেছে শুভ্রর সাথে সেই জরুরি কথাগুলো বলতে।
দীর্ঘ ক্ষণের নীরবতা ভেঙে শুভ্র কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে,”আমার তোমার থেকে কিছু জানার আছে।”
“আমারও আপনাকে কিছু বলার আছে।”
“আগে আমি বলব না তুমি?”
“আপনার যা জানার তা জেনে নিন।”
“এই বিয়েতে কি তোমার মত আছে? তুমি কি নিজে থেকে রাজি হয়েছ নাকি তোমাকে জোর করে রাজি করানো হয়েছে?”
শুভ্রর এই প্রশ্নের জবাবে আমিয়া কোন ভনিতা ছাড়াই বলে ফেলে,”আমি মন থেকে রাজি নই। পরিস্থিতির চাপে পড়ে রাজি হয়েছি।”
শুভ্র যেই ভয়টা পাচ্ছিল সেটাই হলো। সে মলিন হেসে বলে,”তুমি যা বলতে চাইছ..বলতে পারো।”
আমিয়া বলতে শুরু করে,”আমি আমাদের ভার্সিটির দূর্জয়কে পছন্দ করি। আমার সব অনুভূতি শুধু ওর জন্য। আমি আপনাকে মিথ্যা আশা দিতে চাইনি। এই এনগেজমেন্টটাও বাবা আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে করিয়েছে। আমার মত ছিল না। আমি আপনাকে অনেকবার এটা বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু বলার সুযোগ পাইনি।”
শুভ্র জানতে চায়,”দূর্জয়ও কি তোমাকে পছন্দ করে?”
“না। তবে আমি আশাবাদী একসময় উনি আমায় ঠিকই পছন্দ করবেন।”
শুভ্র আবারো মলিন হাসে। এই ক’দিনে আমিয়াকে নিয়ে সে মনে মনে অনেক স্বপ্ন সাজিয়েছিল। আজ তার সব স্বপ্ন যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে। মন ভার হয়ে আসছে। হৃদয় ভঙ্গ হচ্ছে বারংবার। শুভ্র একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”তুমি আমাকে সবটা আগেই জানাতে পারতে। তাহলে বিষয়টা এতদূর গড়াতো না।”
আমিয়া বলে,”আমি আজ অনেক আশা নিয়ে আপনার কাছে এসেছি। আমি জানি,আমার বাবা কিছুতেই আমার কথার গুরুত্ব দেবেন না। আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে উনি দমিয়ে রাখবেন। আর বাবার শারীরিক অবস্থাও ভালো না তাই আমি তার বিরুদ্ধেও যেতে পারবো না। তাই আপনি যদি আপনার পরিবারের সাথে কথা বলে কোন অজুহাতে বিয়েটা ভাঙতে পারেন তো ভালো হয়৷ এতে বিয়েটাও হবে না, বাবাও ঠিক থাকবে।”
শুভ্র চুপ থাকে। আমিয়া বলে,”আপনার হয়তো এখন আমাকে খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি যা করছি নিজের ভালোবাসাকে বাচানোর জন্য। এই বিয়েটা যদি হয় তাহলে আমি বা আপনি কেউ সুখী হবো না। আপনিও নিশ্চয়ই এমন কাউকে বিয়ে করতে চাইবেন না যার মনে অন্য কেউ আছে?”
শুভ্রর ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। সে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই আমিয়াকে মন দিয়ে ফেলেছিল। চারিপাশ থেকে বিষাক্ত অনুভূতি তাকে ঘিরে ধরছিল। কথা বলতেও ভালো লাগছিল না। আমিয়ার কাছাকাছি আর এক পলও সে থাকতে চায় না। তাই জোরপূর্বক হেসে বলে,”আমি ব্যাপারটা ম্যানেজ করব। তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।”
“আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ প্রফেসর শুভ্র। আপনার এই উপকার আমি আজীবন মনে রাখবো।”
বলেই সে খুশিমনে বেরিয়ে যায়। শুভ্র আমিয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”নিজের মন ভেঙে আজ আমি তোমার মনকে জুড়ে দিলাম।”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
শুনশান রাত্রি বিরাজ করছে ধরনী তটে। এই রাতের গভীরে ঢাকা শহর থেকে দূরে মফস্বল অঞ্চলে চলছে এক অলিখিত অভিযান। দূর্জয় অনেকদিন থেকেই বাপ্পীকে খোঁজার জন্য চারিদিকে লোক লাগিয়ে রেখেছিল। বাপ্পীর খোঁজ না পেলেও আজ সকালেই খবর পেয়েছে উক্ত এলাকায় বাপ্পীর চেলা মান্নার দেখা পাওয়া গেছে৷ এরপর দূর্জয় লোক লাগিয়ে পুরো এলাকা চষে বেড়ায়। অবশেষে মান্নার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই আজ সে চলে এসেছে। মান্নাকে ধরতে পারলে বাপ্পীর খোঁজও পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই। তবে এই মান্না কম ধুরন্ধর হয়। ঠিকই সবটা বুঝতে পেরে পালিয়ে যাওয়ার পায়তারা করছিল। কিন্তু নিজের দূর্ভাগ্যক্রমে দৌড়াতে গিয়ে মুখোমুখি হয় দূর্জয়ের। তারপর প্রাণপণে ছুটছে। দূর্জয় ছুটছে তার পিছন পিছন।
একসময় দূর্জয় নিজের সাথে আনা গু*লিটা চালায় মান্নার দিকে। কিন্তু সেটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। কিন্তু কিছুক্ষণের মাঝেই সামনে থেকে কেউ গু**লি চালায় মান্নার পায়ে। সাথে সাথেই মান্না মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। দূর্জয় কিছু বুঝে উঠতে পারে না। মান্নার কাছে যেতে নিবে তার আগেই অন্ধকারে একটা নারীমূর্তি এগিয়ে আসে। দূর্জয় সজাগ হয়ে সেই নারীমূর্তির দিকে বন্দুক তাক করে। আধার থেকে বের হয়ে সামনে আসতেই পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় সেই নারীর মুখশ্রী দেখতে পায় দূর্জয়। পুরোপুরি হতবাক বনে যায়। বিস্ময়ের সাথে বলে ওঠে,”তুমি!”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মান্নাকে সাথে নিয়ে সেই পরিত্যক্ত বাংলোয় চলে আসে দূর্জয়, যেখানে তারা আহনাফকে খু**ন করেছে। এনে মান্নাকে একটা চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছে।
মান্নার জ্ঞান ছিল না তখনো। দূর্জয় মান্নার মুখে পানির ছিটা দিতেই তার জ্ঞান ফিরে। জ্ঞান ফিরতেই ভয়ার্ত চোখে দূর্জয় এর দিকে তাকায় মান্না। দূর্জয় মান্নার হাটুর উপর পা তুলে দিয়ে তার গলা চেপে ধরে বলে,”যদি নিজে বাঁচতে চাস তো ভালোয় ভালোয় বল তোর বস বাপ্পী কোথায় আছে..নাহলে তোর এমন অবস্থা করব যেটা তুই ভাবতে পারছিস না। শিয়াল, কুকুরকে দিয়ে তোর লা*শ খাওয়াবো।”
মান্না ভয়ে ভয়ে বলে,”বিশ্বাস করুন..আমি জানি না বস কোথায়। ওনার সাথে সর্বশেষ আমার দেখা হয়েছিল সেই রাত্রিতে যেদিন আহনাফ মারা যায়। সেদিন উনি আমাদের সবাইকে টাকা বুঝিয়ে দিয়ে বলেন যে যার মতো আত্মগোপনে চলে যেতে।”
দূর্জয় মান্নাকে আরো জোরে চেপে ধরে বলে,”চুপ..একটাও মিথ্যা না। আমি জানি তুই সব জানিস। তুই হলি বাপ্পীর ডান হাত।”
“আমি তেমন কিছু জানি না। শুধু এতটুকু মনে আছে যে,বস শেষবার ওনার মামার সাথে কথা বলছিলেন। ওনার মামাকে বলছিলেন আপাতত কিছুদিনের জন্য ওনাকে বর্ডার পার করে ইন্ডিয়া পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করে দিতে। হয়তো এতদিনে উনি ইন্ডিয়া পৌঁছেও গেছেন।”
এটুকু শুনেই দূর্জয় নিষ্ঠুরের মতো মান্নাকে মা*রতে শুরু করে। মান্নার আর্তনাদে চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে আসছিল। দূর্জয় বলতে থাকে,”তোরা সবাই মিলে আমার বন্ধু আহনাফকে যতটা কষ্ট দিয়েছি তার থেকে হাজার গুণ বেশি কষ্টের মৃত্যু দেব তোদেরকে।”
বলেই দূর্জয় একটি কাঠ কাটার ধারালো অস্ত্র নিয়ে আসে। নিয়ে এগোতে থাকে মান্নার দিকে। মান্না বলতে থাকে,”না, না…”
কিন্তু দূর্জয় সেসবকে পাত্তা না দিয়ে মান্নার হাত-পা সব কে*টে আলাদা করে দেয়। অতঃপর মান্নার গলায় কোপ বসাতে যাবে এমন সময় সেই নারীটি এসে দূর্জয়কে থামিয়ে দেয়। দূর্জয় সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকাতেই মেয়েটি বলে,”আপনি যতদূর করেছ ঠিক আছে। কিন্তু ওকে মারার অধিকার শুধু আমার। ”
বলেই অস্ত্রটা কেড়ে নিয়ে মান্নার গলায় কোপ বসিয়ে তার ধর হতে মু-*ণ্ডুটা আলাদা করে দেয়। রক্ত ছিটকে আসে তার মুখে। অথচ সে বিন্দুমাত্র ভয় পায়না। বরঞ্চ পাগলের মতো হাসতে থাকে। দূর্জয় চরম বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে থাকে। দূর্জয়কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেই নারী বলে,”সবাইকে নিজ হাতে শাস্তি দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়েছি আমি। তাই তো এই মাসে একে একে নিজেকে প্রস্তুত করেছি। কালো বাজার থেকে বন্দুক কিনেছি ..অতঃপর বন্দুক চালানো শিখেছি। নিজের ভয়কেও জয় করেছি। এবার শুরু হয়েছে প্রতিশোধের খেলা। আমি সেই খেয়াল নিজের হাত রক্তে রঞ্জিত করতে রাজি। কিন্তু আমি সবকিছুর শেষ দেখে ছাড়ব।”
একটু থেমে,
“আপনি চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আপনি না বলেছিলেন নিজের বন্ধুর খু*নিদের রক্তে তার কবর রঞ্জিত করবেন৷ তো দাঁড়িয়ে না থেকে এর তরল রক্ত সংগ্রহ করুন। প্রতিশ্রুতি পালন করতে হবে যে!”
এই নারীর হিংস্রতা দূর্জয়কে অবাক করে। কোমলমতি ক্ষ্যাত নারীদের এই রূপও যে কখনো দেখতে হবে সেটা ভাবেনি সে।
to be continue…..