#ঝলসে_যাব_জানি
#Part_17
#ইয়াসমিন_খন্দকার
দূর্জয় বাপ্পীর খোঁজে সিলেটের দিকে রওনা দিয়েছে। তার সাথে সাগর ও মুন্না আসতে চাইলেও সে তাদেরকে নিজের সাথে নেয়নি। এক প্রকার জেদ করেই সে একা চলে এসেছে৷ কারণ দূর্জয় আন্দাজ করতে পারে বাপ্পীর কেসটা এতটাও সহজ হবে না। বাপ্পীর মামা যথেষ্ট প্রভাবশালী একজন লোক। তিনি নিশ্চয়ই এর শেষ দেখে ছাড়বেন। এছাড়া বাপ্পীও যথেষ্ট ধুরন্ধর। তাই দূর্জয় কাউকে বিপদে ফেলতে চায়নি। তার নিজের এমনিতেও জীবনের মায়া বলতে কিছু নেই। তাই নিজেই ঝুঁকি নিয়ে চলে এসেছে।
দূর্জয় বর্তমানে সিলেটের সীমান্তবর্তী অঞ্চল তামাবিলের কাছে অবস্থান করছে। সে যতদূর শুনেছে বাপ্পী এখানেই কোথাও ঘাপটি মে*রে আছে। তামাবিল একটি দর্শনীয় স্থানও বটে। তবে দূর্জয়ের এসব ব্যাপারে কোন আগ্রহ নেই।
সে চারিদিকে চোখ লাগিয়ে খুঁজে চলেছে বাপ্পীকে। হঠাৎ করে কারো পায়ের শব্দে ফিরে চকিতে ফিরে তাকাতেই কেউ দূর্জয়ের মাথায় বন্দুক তাক করে। হতবিহ্বল দূর্জয় বলে ওঠে,”তুমি!”
“হাউ ডেয়ার ইউ?! আমাদের মধ্যে কি কথা হয়েছিল দূর্জয়? আপনি আমায় এই মিশনে নিজের সাথে নিবেন। কিন্তু আমাকে না বলেই এখানে চলে এলেন! ভাগ্য ভালো, আমি আপনার উপর নজর রেখেছিলাম। নাহলে তো কিছু জানতেই পারতাম না।”
“তুমি এখানে এসে ঠিক করো নি। এই যায়গাটা নিরাপদ নয়। তুমি ফিরে যাও এখান থেকে।”
“প্রতিশোধ নে নেওয়া অব্দি আমি এক পাও নড়ব না।”
রূপকথার শক্ত জবাব। দূর্জয় রূপকথাকে আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই রূপকথা বলে,”তুমি কেন ভুলে যাচ্ছ..ঐ আহনাফ শুধু আমার আহনাফকেই আমার থেকে কেড়ে নেয়নি..আমার সম্মানের দিকে হাত বাড়িয়েছে। একটা নারীর জীবনে সবথেকে মূল্যবান হচ্ছে তার সম্মান ও ভালোবাসা। এই দুটোর দিকেই ঐ শয়তানটা হাত বাড়িয়েছিল। ওকে আমি নিজের হাতে শাস্তি দিব।”
“তুমি কেন শুধু শুধু নিজের হাত ময়লা করবে?!”
“নোংরা-আবর্জনা পরিস্কার করতে গেলে যেমন হাতে ময়লা লেগে যায়..সমাজ থেকে এমন শয়তানদের উৎখাত করতেও তেমনি হাতে ময়লা লাগেই। আর আপনি আমাকে বলছেন..নিজেও তো অপরাধীদের মা*রার মিশনে যোগ দিয়েছেন। আপনিও তো পারতেন আইনের সাহায্য নিতে।”
দূর্জয় অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।
“কিসের কথা বলছ আইন?! এই দেশে কোন আইন আছে নাকি। যদি থাকত, তাহলে আমি এতবার জেলে যাবার পরেও নিজের শিল্পপতি বাবার ইনফ্লুয়েন্সে বেরিয়ে আসতে পারতাম না। আর বাপ্পীর মামার তো ক্ষমতা আরো বিশাল। আজকাল টাকা ও ক্ষমতা দিয়ে তুড়ি মে*রে আইনকে কিনে নেওয়া যায়। তাই আমি এসব আইনের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চাই না।”
রূপকথা শক্ত গলায় বলে,”তাহলে আমাকেও নিজের পথ বেছে নিতে দিন। আমি আমার আহনাফের খু*নিকে নিজের হাতে শেষ করব।”
দূর্জয় আর কথা বাড়ায় না। রূপকথা হঠাৎ কিছু একটা খেয়াল করে বলে,”আমার মনে হয়, কেউ আমাদের দিকে নজর রাখছে।”
“কে হতে পারে?!”
“সেটা আমার জানা নেই। কিন্তু কেউ তো আছেই অবশ্যই।”
দূর্জয় আশেপাশে তাকিয়ে দেখে দূর দূরান্ত পর্যন্ত একদম ফাকা। মানুষ তো দূরের কথা কাকপক্ষীও নেই। এসব দেখে দূর্জয় বলে,”আমার মনে হয়, তোমার বুঝতে কোথাও ভুল হচ্ছে। এখানে কেউ নেই।”
রূপকথা কিছু বলে না আর। দূর্জয় সামনে এগোতে এগোতে রূপকথাকে বলে,”এখানে যখন এসেই পড়েছ তখন আমার সাথে সাথে আসো। তাহলে অন্তত নিরাপদ থাকবে।”
রূপকথা আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ করে সামনে এগোতে থাকে দূর্জয়ের পিছু পিছু। কিছুদূর এগোতেই হঠাৎ কয়েকজন এসে তাদের উপর অতর্কিতে হামলা চালায়। দূর্জয় ও রূপকথা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের কাছে ধরাশায়ী হয়ে ওঠে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
জ্ঞান ফিরতেই নিজের চোখের সম্মুখে বিদঘুটে হাসির সহিত বাপ্পীকে দেখতে পায় রূপকথা। বাপ্পীকে দেখতেই তার মাথায় রাগ উঠে যায়। বাপ্পী রূপকথার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”কেমন আছ সুন্দরী?! শেষপর্যন্ত আবার আমার কাছে এসে তোমায় ধরা দিতেই হলো।”
রূপকথা ওঠার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখতে পায় তাকে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। পাশেই দূর্জয়কে বেঁধে রাখা। রূপকথা দূর্জয়কে আলতো স্বরে ডাকতে থাকে। বাপ্পী বলে ওঠে,”বাহ! আহনাফ মরতে না মরতেই নতুন নাগর যোগাড় করে নিলে! তাহলে আমি কি দোষ করেছিলাম!”
বলেই গা জ্বালানী হাসি দেয়। আর রূপকথা রাগে কাপতে থাকে। এরমধ্যে দূর্জয় জেগে উঠে। বাপ্পীকে দেখেই সে হিংস্র হয়ে ওঠে কিন্তু কিছু করতে পারে না। বাপ্পী বলে,”আমাকে মা*রতে এসেছিলি না! আজ দেখ তোদের দুজনের আমি কি অবস্থা করি।”
বলেই সে হাতে একটা চাবুক তুলে নেয়। তাই চাবুক দিয়ে বাপ্পী দূর্জয়কে নির্দয়ভাবে মা*রতে থাকে। রূপকথা এহেন নিষ্ঠুরতা সহ্য করতে পারে না।
বাপ্পী হাফিয়ে গিয়ে থেমে যায়। ততক্ষণে দূর্জয়ের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। পুরো শরীর রক্তাক্ত।
বাপ্পী এবার রূপকথার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,”এবার সেদিনকার অসম্পূর্ণ কাজটা সম্পূর্ণ করে ফেলি।”
রূপকথার হাতের বাঁধন খুলে তাকে নিজের কাছে টানতে থাকে। তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত বোলাতে থাকে। রূপকথার পরনের সালোয়ার কামিজের হাতা টেনে ছিড়ে ফেলে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঁচড় কাটতে থাকে। রূপকথা আর সহ্য করতে পারে না। সে প্রতিজ্ঞা করে এর শেষ দেখে ছাড়বে। তাই নিজের শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে বাপ্পীকে ঠেলে দূর করে দেয়। আর বাপ্পী পড়ে যেতেই এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দূর্জয়ের বাঁধন খুলে দেয়।
দূর্জয় তখনো অনেক দূর্বল ছিল। রূপকথা নিজেকে বাঁচানোর জন্য নিজের সাথে লুকিয়ে আনা একটা ছু*রি বের করে নেয়। বাপ্পী পুনরায় উঠে তার দিকে এগোতে নিতেই রূপকথা ছু*রিকাঘাত করতে শুরু দেয়। পেট, পিঠ, হাত-পা কোন স্থানই বাকি রাখে না। একসময় প্রবল কোধে বাপ্পীর পুরুষাঙ্গে ছু*রি দিয়ে আঘাত হানে। ব্যস, বাপ্পী সাথে সাথেই চিৎকার করে সেখানে পড়ে যায়।
দূর্জয় এই দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আর রূপকথা সেখানেই বসে কাঁদতে শুরু করে। আজ আবারো তার সম্মানের দিকে হাত বাড়িয়েছিল এই শয়তানটা। আগের ক্রোধ তো ছিলই। সাথে আজকের ঘটনা। সব মিলিয়ে রূপকথা আর নিজেকে সামলাতে পারে না। নিজের সব ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় এই ভাবে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পাহাড়ের চূড়ায় উঠে বাপ্পীর লাশটা দূরে ছু*ড়ে ফেলে দূর্জয়। এখন সে অনেকটাই স্বাভাবিক। যদিও শরীরের আঘাতগুলোর জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে।
রূপকথা তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। দূর্জয় রূপকথার কাছে আসতেই রূপকথা ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে। দূর্জয় রূপকথাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য তাকে জড়িয়ে ধরে। আলতো স্বরে বলে,”চিন্তা করো না, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
রূপকথা কাঁদতে কাঁদতে বলে,”আমার সাথেই কেন বারবার এমন হয়?! কেন বারবার আমার সম্মানের দিকে এভাবে হাত বাড়ানো হয়।”
বলতে বলতেই দূর্জয়ের বুকে আঘাত করতে শুরু করে দেয়। বুকে অজস্র কিল ঘুষি মে*রে বলে,”সবকিছু আপনার জন্য হয়েছে। আপনি এইসব শুরু করেছেন। আপনি যদি সেদিন বাপ্পীর সাথে ঐ বাজিটা না ধরতেন তাহলে এসব কিছুই হতো না। আজ আমি আমার আহনাফকেও এভাবে হারাতাম না। আমি ঘৃণা করি আপনাকে। আপনাকেও এভাবে মা*রতে পারলে আমার শান্তি হতো।”
দূর্জয় একদম পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে দাঁড়ায়। এক এক পা পিছালেই সে পড়ে যাবে এমন অবস্থায় আছে। অতঃপর রূপকথার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”ঠিক আছে, তুমি এসে নিজের শান্তির ব্যবস্থা করো। আমি এমনিতেও বাঁচতে চাই না। আমায় শেষ করে দাও। ফেলে দাও এখান থেকে।”
রূপকথা এক পা, এক পা করে এগিয়ে যায়। দূর্জয়ের একদম সামনে এসে বলে,”আই হেট ইউ টু মাচ।”
বলেই ধাক্কা দেয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়।
to be continue…..